অর্থনীতি
কর্ণফুলী টানেলে দৈনিক আয় ১০ লাখ, ব্যয় ৩৭ লাখ

গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন সংযোগ হিসেবে কাজে লাগানোর জন্য নির্মিত হয়েছিল কর্ণফুলী টানেল। কিন্তু প্রত্যাশিত মাত্রায় ব্যবহার না হওয়ায় এবং চড়া রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের কারণে টানেলটি বড় লোকসান দিচ্ছে। চালু হওয়ার প্রায় এক বছর পর বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে এই টানেল দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মূল কারণ হচ্ছে, আনোয়ারা প্রান্তে প্রত্যাশিত শিল্প উন্নয়ন এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
এ টানেল দিয়ে প্রতিদিন ২০ হাজারের বেশি গাড়ি চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা ছিল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু বর্তমানে টানেল দিয়ে দৈনিক গড়ে প্রায় ৪ হাজার যানবাহন চলাচল করেছে। এতে তৈরি হয়েছে বড় আর্থিক সংকট।
কর্তৃপক্ষের হিসাবমতে, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ১১ অক্টোবর পর্যন্ত কর্ণফুলী টানেল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার ৯৩৪টি গাড়ি চলাচল করেছে। এসব গাড়ি থেকে দৈনিক টোল আদায় হয়েছে গড়ে প্রায় ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
অথচ এই টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক কাজে প্রতিদিন ব্যয় হচ্ছে গড়ে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতিদিনের ব্যয়ের বিপরীতে টোল আদায় থেকে উঠে আসছে মাত্র ৩০ শতাংশ। সেই হিসাবে উদ্বোধনের পর থেকে এ পর্যন্ত ব্যয়ের তুলনায় টোল আদায় থেকে ৯০ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে। আর দৈনিক লোকসান হচ্ছে ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১০ হাজার ৬৯০ কোটি টাকায় নির্মিত টানেল প্রকল্পটি কেবল উচ্চাভিলাষীই নয়, বরং অদূরদর্শিতার প্রতিফলনও। টানেল নির্মানের পর এটি রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে কেমন খরচ হবে, নিয়ে কোনো অভিজ্ঞতাই ছিলো না সংশ্লিষ্টদের। দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রভাব পুরোপুরি বিবেচনা না করেই শুধু ‘স্ট্যাটাস সিম্বলের’ জন্য এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
এ প্রকল্প কতটুকু বাস্তবসম্মত, সে প্রশ্ন তুলে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে টানেল পার হয়ে আমরা আনোয়ারা প্রান্তে কেন যাব, সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আনোয়ারা, বাঁশখালীসহ সাগর উপকূলে শিল্পকারখানা গড়ে তোলার যে পরিল্পনা করা হচ্ছে, সেটি কত বছরের মধ্যে তার কোনো টাইম লাইন নেই।
‘এই প্রকল্প নির্মাণের আগে বিশেষজ্ঞ টিমকে একাধিকবার বলেছি, দক্ষিণ প্রান্তে কারখানা গড়ে উঠবে, তার ওপর অনুমান করে ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে টানেল নির্মাণ করে ফেলা হবে—এর কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না।’
এ প্রকল্প গ্রহণের আগে কেউ পরামর্শ দিলে বা সমালোচনা করলে, তাকে ‘উন্নয়নবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন সুভাষ চন্দ্র।
টানেল নির্মাণের আগে করা এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২৫ সাল নাগাদ ২৮ হাজার ৩০৫টি ও ২০৩০ সাল নাগাদ ৩৭ হাজার ৯৪৬টি যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা করা হয়েছিল।
কিন্তু ২০২৫ সালে টানেল দিয়ে ৫ হাজার গাড়িও চলাচল করবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের নাগরিকরা।
টানেল সাইট অফিসের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আনোয়ারায় চায়না ইকোনমিক জোনসহ ওই অঞ্চলে প্রত্যাশিত বিকাশমান শিল্পকারখানার ওপর ভিত্তি করে টানেলে দৈনিক গাড়ি চলাচলের হিসাব ধরা হয়েছিল।
‘চায়না ইকোনোমিক জোন এবং শিল্পকারখানা এখনও সেই অনুযায়ী গড়ে ওঠেনি। এগুলো যখন গড়ে উঠবে, টানেলে যান চলাচল এবং টোল আদায় বাড়বে,’ বলেন তিনি।
যমুনা সেতুর প্রসঙ্গ টেনে আবুল কালাম আজাদ বলেন, সেখানে ইন্টারনাল রোড কানেক্টিভিটি তৈরি হয়ে গাড়ি চলাচল বাড়তে কয়েক বছর সময় লেগেছিল। কর্ণফুলী টানেলেও যান চলাচল বাড়তে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে।
অনুমানের ওপর ভিত্তি করে কর্ণফুলী টানেল
‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ ধারণায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত হয়েছিলে কর্ণফুলী টানেল। এ টানেল চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উপজেলাকে যুক্ত করেছে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ টানেল দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের মতো ‘লোকাল ট্রাফিক’ পারাপার হতে দেওয়া হচ্ছে না। আবার টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে এখনও তেমন কোনো শিল্পকারখানাই হয়নি। ফলে যান চলাচল বাড়ছে না।
এছাড়া পরিকল্পনাধীন বে টার্মিনালও নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল পুরোপুরি চালু হয়নি। যতদিন এসব অবকাঠামো না হবে, ততদিনে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প থেকে কোনো সুফল পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
২০১৪ সালে জাপান ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে দ্য বে অভ বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রায়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-বি) ধারণার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিগ-বির আলোকে এ অঞ্চলে গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি হাব, উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা ও শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
কক্সাবাজার জেলা ছাড়াও বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী ফেনীর সোনাগাজী, চট্টগ্রামের মিরসরাই-সীতাকুণ্ডের সমুদ্রপাড়ে ৩০ হাজার একর জায়গায় নির্মিত হচ্ছে বৃহৎ শিল্পনগর।
তবে নানা সংকটে এ প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত মাত্র ১০টির মতো কারখানা উৎপাদনে যেতে পেরেছে। বাঁশখালীর গন্ডামারা এলাকায় স্থাপিত হয়েছে এস আলম গ্রুপ ও চীনের সেপকো থ্রির যৌথ মালিকানাধীন ১,৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।
আনোয়ারায় ৭৭৮ একর এলাকাজুড়ে চাইনিজ ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন (সিইআইজেড) নির্মাণ এখনও প্রক্রিয়াধীন। তবে উপকূলবর্তী এলাকায় শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে না।
এমন পরিস্থিতিতে অনুমানের ওপর ভিত্তি করে টানেল নির্মাণ করা মোটেও উচিত হয়নি বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, এই টানেলের ব্যয় দিয়ে অন্তত ১০টি সেতু নির্মাণ করা যেত। তিনি বলেন, ‘মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে টাকা লুটপাটের জন্য। প্রকল্প নেওয়ার আগে এসব বিষয় বিবেচনায় আনা হয়নি। এখন প্রতিদিন যে লোকসান হচ্ছে, এর দায়ভার কে নেবে?
‘টানেল নির্মাণ করে জনগণের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। এই টানেল এখন বিষফোঁড়া হয়ে ফাঁড়িয়েছে।’
টোলহার অনেক বেশি
সেতু বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, কর্ণফুলী টানেল অতিক্রম করতে যানবাহনের ধরনভেদে ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত টোল দিতে হয়। ‘টানেল নির্মাণ কতটা দূরদর্শী সিদ্ধান্ত’ শিরোনামে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক টানেল প্রকল্পটিকে অদূরদর্শী পরিকল্পনা হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এ গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, কর্ণফুলী টানেলের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে শাহ আমানত সেতু। এ সেতুর তুলনায় কর্ণফুলী টানেলের টোলহার যানবাহন ভেদে আড়াই থেকে ৬ গুণ পর্যন্ত বেশি। টোল হারের এ পার্থক্য টানেলে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর, সিইপিজেড, কেইপিজেড, নির্মাণাধীন বে-টার্মিনাল ও বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, চট্টগ্রাম মহানগরের অধিকাংশ অঞ্চল, চট্টগ্রাম জেলার উত্তর অংশ এবং রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের যানবাহন চলাচলে এই টানেল ব্যবহার হওয়ার কথা ছিল। আবার অপরপ্রান্তে, অর্থাৎ আনোয়ারা প্রান্তের টানেল মুখসংলগ্ন সিইউএফএল, কাফকো, কেইপিজেড, চায়না ইপিজেড, পারকি বিচ, কক্সবাজার জেলার মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি টার্মিনাল, কক্সবাজার-টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের পর্যটকসহ পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করার কথা ছিল।
তবে সরেজমিনে দেখা যায়, এ টানেল দিয়ে যাতায়াত করা যানবাহনের বেশিরভাগই কার, মাইক্রোবাস ও ট্যুরিস্ট বাস।
অর্থাৎ ঢাকা কিংবা সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দক্ষিণ চট্টগ্রাম অঞ্চলে বাণিজ্যিক যানবাহন ও ভারী পণ্যবাহী যানবাহনের পরিবর্তে টানেল দেখতে যাওয়া দর্শনার্থীর যানবাহনই টানেলে প্রবেশ করেছে সবচেয়ে বেশি।
এমআই

অর্থনীতি
ইউসিবির এটিএম বুথে মিলছে না টাকা, বিপাকে গ্রাহকরা

ঈদুল আযহার ছুটি শুরুর প্রথম দিনেই ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) গ্রাহকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। নেটওয়ার্ক সমস্যার অজুহাতে ব্যাংকের বেশিরভাগ এটিএম বুথ হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, ফলে নগদ টাকা উত্তোলনে ব্যর্থ হয়েছেন বহু গ্রাহক।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাতে রাজধানীর মতিঝিল-দিলকুশা সহ বিভিন্ন এলাকায় ইউসিবির এটিএম বুথে গিয়ে দেখা গেছে, বুথের দরজায় সাঁটানো রয়েছে “ছুটির কয়েকটা দিন এই এটিএম বন্ধ থাকবে” লেখা নোটিশ। এতে যাদের জরুরি নগদ টাকা প্রয়োজন ছিল, তারা চরম বিপাকে পড়েছেন।
ব্যাংকটির আরও একটি বুথের সামনে সাঁটানো এক নোটিশে লেখা রয়েছে, “পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে আগামী ৫ জুন, বৃহস্পতিবার থেকে ১২ জুন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ থাকবে। কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার আপগ্রেডেশনের জন্য আগামী ৯ জুন সোমবার থেকে ১৪ জুন শনিবার পর্যন্ত ইউসিবির সকল ব্যাংকিং সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে”। তবে আগামী ৯ জুন থেকে এটিএম বন্ধ রাখার কথা থাকলেও আজ ৫ জুন থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এসব বুথ।
অন্যদিকে ঈদের বন্ধে এটিএম বুথের নিরাপত্তা ও টাকা রাখার বিষয়ে আগাম সতর্কতা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ঈদের ছুটি শুরুর প্রথম দিনেই টাকা পাওয়া যাচ্ছে না ইউসিবির এটিএম বুথে। বেশির ভাগ ব্যাংক অন্য ব্যাংকের কার্ড দিয়ে টাকা উত্তোলন বন্ধ বা সীমিত করেছে। বিভিন্ন বুথ ঘুরে টাকা তুলতে না পেরে বিড়ম্বনায় পড়ছেন অনেকে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ঈদের বাজার ও ভ্রমণের ব্যস্ত সময়ে এমন ভোগান্তি তাদের পরিকল্পনা ব্যাহত করেছে। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগাম নোটিশ না দিয়ে এমন গুরুত্বপূর্ণ সময় বুথ বন্ধ রাখা গ্রাহকসেবার চরম ব্যর্থতা। এসব ছলচাতুরি ও প্রতারণার ছাড়া কিছুই না।
এ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন গ্রাহকরা। মতিঝিল এলাকায় একজন গ্রাহক বলেন, “ঈদের ছুটি শুরুর প্রথম দিনেই এমন সংকট মেনে নেওয়া যায় না। টাকা না থাকলে জরুরি কেনাকাটা, যাতায়াত-সব কিছুই বন্ধ হয়ে যায়।” এমন সময়ে এ ধরনের সিদ্ধান্তে ভোগান্তি চরমে উঠেছে। গ্রাহকরা দ্রুত বুথ সচল এবং বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার থেকে টানা ১০ দিনের ছুটি শুরু হয়েছে। বন্ধের মধ্যেও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সীমিত পরিসরে কয়েকদিন ব্যাংক চলবে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশের ১৮টি পশুর হাটসংলগ্ন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একটি হাটসংলগ্ন ব্যাংক শাখা গতকাল থেকে ঈদের আগের রাত পর্যন্ত খোলা থাকবে। এ ছাড়া আজ ৫ জুন ঢাকা মহানগর, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, ভালুকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের তৈরি পোশাক সংশ্লিষ্ট শাখা এবং ঈদের পর ১১ ও ১২ জুন ওষুধ শিল্পসহ আমদানি, রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকার বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী শাখা খোলা রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত সোমবার এটিএম বুথ, এমএফএস, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, পয়েন্ট অব সেলস, কিউআর কোড ও অনলাইন ই-পেমেন্ট গেটওয়েতে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
এবিষয়ে জানতে ইউসিবির ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) মোহাম্মদ মামদুদুর রশিদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান অর্থসংবাদ’কে বলেন, এটিএম বুথের নিরাপত্তা ও পর্যাপ্ত টাকা রাখার বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছে। তবে ইউসিবির বুথ বন্ধ থাকার নোটিশের বিষয়ে আমরা অবগত না। ব্যাংককে শাস্তি দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য না। আমাদের উদ্দেশ্য গ্রাহকের সেবা নিশ্চিত করা।
অর্থসংবাদ/কাফি
অর্থনীতি
ঈদের একদিন আগে ফের বাড়ল সোনার দাম

দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আবারও বাড়ানো হয়েছে। সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৪১৪ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৭২ হাজার ৩৩৫ টাকা।
স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। আগামী শুক্রবার (৬ জুন) থেকে নতুন দাম কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠকে করে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে সর্বশেষ ২২ মে সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৮২৩ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৬৯ হাজার ৯২১ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আজ আবারও দাম বাড়ানো হলো।
এর আগে গত সাড়ে চার মাসে ২৪ বার স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে। গত ২২, ১৮, ১৫, ৭, ৯ মে, ২৩, ২২, ২০, ১৭, ১৩, ১১ এপ্রিল, ২৮, ২৬, ১৯, ১৭, ৫ মার্চ ২, ৬, ১১, ১৮ ও ২১ ফেব্রুয়ারি এবং ১৬, ২৩ ও ৩০ জানুয়ারি স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। তবে দেশের ইতিহাসে ২৪ এপ্রিল সব চেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম পাঁচ হাজার ৩৪২ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৭২ হাজার ৫৪৫ টাকা। যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় উঠে স্বর্ণের দাম।
এ ছাড়া গত ১৬, ১৩ ১১, ৯, ৩ মে, ২৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২ ও ৯ মার্চ এবং ৮, ১৪, ২৩ এপ্রিল স্বর্ণের দাম কমানো হয়।
নতুন মূল্য অনুযায়ী, সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৪১৪ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৭২ হাজার ৩৩৫ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ২৯৮ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৬৪ হাজার ৪৯৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৯৭১ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৪০ হাজার ৯৯৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৬৯১ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ১৬ হাজার ৬৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রূপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম দুই হাজার ৮৪৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দুই হাজার ৭১৮ টাকা। এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম দুই হাজার ৩৩৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রূপার এক হাজার ৭৫০ টাকা।
এর আগে ২২ মে সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৮২৩ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৬৯ হাজার ৯২১ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৬৯৪ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৬২ হাজার ১৯৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৩০৯ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৩৯ হাজার ২৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৯৭২ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ১৪ হাজার ৯৪৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
কাফি
অর্থনীতি
টানা ১০ দিন বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আজ থেকে ১০ দিন বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে এসময়ে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত স্বাভাবিক থাকবে।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান।
তিনি বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সরকারি ছুটি থাকায় দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। আগামী ১৫ জুন সকাল থেকে পুনরায় বন্দরের কার্যক্রম শুরু হবে।
এ বিষয়ে বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবির তরফদার জানান, মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ১০ দিন বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে ১৫ জুন সকাল থেকে পুনরায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম সচল হবে।
তিনি আরও বলেন, এই সময়ের মধ্যে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে লক্ষ্যে বন্দর এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কাফি
অর্থনীতি
যমুনা সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে তিন কোটি টাকা টোল আদায়

ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে নাড়ির টানে বাড়ি যাচ্ছেন মানুষ। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। একই সঙ্গে বাড়ছে যমুনা সেতুতে টোল আদায়ের পরিমাণও। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা সেতু থেকে ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা টোল আদায় করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এর বিপরীতে সেতু দিয়ে ৫১ হাজার ৮৪৯ টি যানবাহন পারাপার হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকালে যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত ৫১ হাজার ৮৪৯টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ৩০ হাজার ৮৪৫টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৯৭ হাজার ৩৫০ টাকা। অপরদিকে ঢাকাগামী ২১ হাজার ৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর বিপরীতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৬৫০ টাকা।
যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে জট নেই। যমুনা সেতু পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অংশে ৯টি করে ১৮টি টোল বুথ স্থাপনসহ মোটরসাইকেলের জন্য ৪টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। সেতুর ওপর কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেই জন্য দুইটি রেকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত অংশটি সার্বক্ষণিক সিসিটিভির মাধ্যমে মনিটরিং করা হচ্ছে।
অর্থনীতি
তিন দিনে রেমিট্যান্স এলো ৭ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা

চলতি জুন মাসের প্রথম তিন দিনে ৬০ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা ধরে) যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ হাজার ৪২৯ কোটি টাকার বেশি। বড় অঙ্কের এই রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং ঈদের বাজারকে করেছে চাঙা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদুল আজহা সামনে রেখে সাধারণত গরু, ছাগল ও অন্যান্য কোরবানির পশু কেনা, নতুন পোশাক, উপহার এবং পারিবারিক ব্যয়ের জন্য প্রবাসীরা দেশে বেশি বেশি অর্থ পাঠান। এই সময় রেমিট্যান্স প্রবাহে সাধারণত ঊর্ধ্বগতি দেখা যায় এবং এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ শুধু প্রবাসী পরিবারের আয় বাড়ায় না, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোরবানির ঈদের সময় গ্রামীণ অর্থনীতি যেমন চাঙা হয়, তেমনি নগদ অর্থের প্রবাহ বাড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনে।
এদিকে, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের বিভিন্ন প্রণোদনা প্রদান করছে। ডিজিটাল চ্যানেলে অর্থ পাঠানো সহজ হওয়ায় বর্তমানে অনেকেই হুন্ডি এড়িয়ে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করছেন।
এর আগে গেল মে মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৯৭ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাসিক প্রবাসী আয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ছিল ৩৬ হাজার ৫৩১ কোটি টাকারও বেশি।
২০২৪ সালের মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২২৫ কোটি ডলার, অর্থাৎ এক বছরে প্রবৃদ্ধি প্রায় ৩২ শতাংশ। এর আগে, চলতি বছর ঈদুল ফিতরের সময় মার্চ মাসে এসেছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। ঈদ কেন্দ্রিক খরচ ও প্রবাসীদের দেশে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহে এই ঊর্ধ্বগতি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল এবং আগস্টে আসে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার এবং নভেম্বর মাসে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ডলার এবং মে মাসে ২৯৭ কোটি রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। অর্থাৎ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর টানা ৮ মাস দুই বিলিয়ন এবং মার্চে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন ৩ পর্যন্ত প্রবাসীরা মোট ২ হাজার ৮১১ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৯ দশমিক ৮০ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরে একই সময় রেমিট্যান্স এসেছিল দুই হাজার ১৬৬ কোটি মার্কিন ডলার।