ধর্ম ও জীবন
শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু আজ
মহাষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে আজ বুধবার শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আগামী ১৩ অক্টোবর রোববার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে ৫ দিনব্যাপী এই উৎসবের।
লোকনাথ পঞ্জিকা অনুযায়ী, আজ ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী, ১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১১ অক্টোবর মহাষ্টমী ও ১২ অক্টোবর মহানবমী। এরপর ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটবে শারদীয় দুর্গোৎসবের।
দুর্গা শব্দের অর্থ হলো ব্যুহ বা আবদ্ধ স্থান। যা কিছু দুঃখ কষ্ট মানুষকে আবদ্ধ করে, যেমন বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ, শোক, জ্বালা, যন্ত্রণা এসব থেকে তিনি ভক্তকে রক্ষা করেন। শাস্ত্রকাররা দুর্গার নামের অন্য একটি অর্থ করেছেন। দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন।
মহা চণ্ডীতে উল্লেখ আছে, ত্রেতা যুগে ভগবান রাজা রাম চন্দ্র দশানন রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে রত হন। পাপের বিনাশের লক্ষ্যে দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়ার কাছে শক্তি বৃদ্ধির আশায় শরৎকালে তার পূজা করেছিলেন এবং যুদ্ধে জয়লাভ করে দেবী সীতাকে উদ্ধার করেন ও রাবণকে হত্যা করতে সক্ষম হন রাম চন্দ্র। সেই থেকে পৃথিবীতে প্রতি বছর শরৎকালে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দূর্গোৎসব পালন করে আসছেন।
এবছর দেবী দুর্গার আগমন হবে দোলায় বা পালকিতে। ওই পালকি বা দোলায় দেবীর আগমন বা গমন হলে ফলাফল হয় মড়ক। দেবী দুর্গার ২০২৪ সালে মর্ত্যে আগমন যেহেতু দোলায় হচ্ছে, তার ফলাফল হতে পারে মড়ক। যা শুভ ইঙ্গিত নয়। এছাড়াও দেবী স্বর্গে গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়।
শাস্ত্রমতে দেবীর গমন বা আগমন ঘোটকে হলে ফলাফল ছত্রভঙ্গ হয়। সেই নিরিখে ২০২৪ সালে দেবীর গমন ঘোড়ায় হওয়ার জেরে ফলাফল ছত্রভঙ্গ হতে পারে। শাস্ত্রমতে এই ঘোটকে গমনের ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক এলোমেলো অবস্থাকে ইঙ্গিত করে। এটি যুদ্ধ, বিগ্রহ, আশান্তি, বিপ্লবের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।
রামকৃষ্ণ মিশনের নির্ঘণ্টে বলা হয়েছে, বুধবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে সায়াংকালে দুর্গাদেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস। উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা বিকেল ৫টার পরে আরম্ভ হবে।
পূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে দেশজুড়ে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি প্রায়ই শেষ হয়েছে। সারাদেশে এখন বইছে উৎসবের আমেজ। ঢাক-ঢোল কাঁসা এবং শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মণ্ডপ।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা বুধবার থেকে শুরু, যা আগামী ১৩ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে এ বছর ৩২ হাজার ৬৬৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হবে।
রাজধানীতে কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মণ্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান, বস্ত্র বিতরণ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছা রক্তদান ও বিজয়া শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
দুর্গোৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিককে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
মুহাম্মাদ (সা.)-এর চার উপদেশ
সা‘দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দরবারে এসে বললেন, আল্লাহর রাসুল! আমাকে সংক্ষেপে কিছু উপদেশ দিন। নবিজি (সা.) বললেন, মানুষের হাতে যা আছে, তা থেকে নিরাশ হয়ে যান। লোভ করবেন না; লোভই হলো নগদ দারিদ্র্য। নামাজ এমনভাবে আদায় করবেন, যেন আপনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে যাচ্ছেন। এমন কথা ও এমন কাজ থেকে বিরত থাকবেন, যার জন্য পরে ক্ষমা চাইতে হয়। (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৭৯২৮)
এ হাদিসে নবিজি (সা.) যে চারটি উপদেশ দিয়েছেন:
১. মানুষের সম্পদে আশা বা লোভ রাখা যাবে না
নবিজি (সা.) বলেছেন, মানুষের হাতে যে সম্পদ আছে, তা নিয়ে আশা করো না। কার পকেটে কী আছে বা কে কত সম্পদশালী, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া যাবে না। এটি আমাদের অন্তরে অহেতুক আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে। আমাদের দৃষ্টি আল্লাহর রহমতের দিকে থাকতে হবে। তিনি যা দিয়েছেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
হঠাৎ কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে প্রথম কাজ হলো আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। সালাতুল হাজত পড়ে তার কাছে প্রার্থনা করা। এরপর বৈধ উপায়ে উপার্জনের বা নিজের প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা করা। এমনটি মনে করা বা আশা রাখা উচিত নয় যে, কেউ এসে আমাকে সাহায্য করবে। অমুক ব্যক্তি এসে আমাকে উদ্ধার করবে। মানুষের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা বাদ দিতে হবে। আশা-ভরসা থাকতে হবে শুধু আল্লাহর কাছে, মানুষের কাছে নয়।
২. লোভ এড়িয়ে চলতে হবে
নবিজি (সা.) উপদেশ দিয়েছেন, লোভ করা যাবে না। বলেছেন, লোভই হলো নগদ দারিদ্র্য। কারণ লোভের ফলে মানুষ নিজের অবস্থায় সন্তুষ্ট হতে পারে না। আল্লাহ যা দিয়েছেন, তার ওপর সন্তুষ্ট থাকা উচিত। নিজের অবস্থায় সন্তুষ্ট না হয়ে আরও বেশি পাওয়ার লোভ করতে থাকলে মানুষ কখনও অভাবমুক্ত হতে পারে না। আরেকটি হাদিসে নবিজি (সা.) বলেছেন, অভাবমুক্তি ও প্রাচুর্য সম্পদের আধিক্যের কারণে হয় না, বরং প্রকৃত প্রাচুর্য হলো অন্তরের প্রাচুর্য। (সহিহ বুখারি: ৬৪৪৬, সহিহ মুসলিম: ১০৫১)
যদি অন্তরে শান্তি থাকে, তবে সামান্য সম্পদেও সুখী হওয়া যায়। কিন্তু লোভ করলে যতই সম্পদ থাকুক, তাতে তৃপ্তি আসে না। এমনকি দুই উপত্যকা সম্পদ পেলেও তৃতীয়টি চায়। অভাব থেকে বাঁচতে আমাদের লোভ কমিয়ে আনতে হবে। লোভ থেকে মুক্ত থাকলেই প্রকৃত সুখ ও শান্তির সন্ধান পাওয়া যায়।
৩. নামাজ পড়তে হবে জীবনের শেষ নামাজ হিসেবে
নবিজি (সা.) এমনভাবে নামাজ আদায় করতে উপদেশ দিয়েছেন যেন এটি জীবনের শেষ নামাজ। এই নামাজ আদায় শেষ করেই আমি এই জীবন ছেড়ে আখেরাতে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর জন্য যাত্রা করবো। এই অনুভূতি নিয়ে নামাজ আদায় করলে স্বাভাবিকভাবেই নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং তা আমাদের অন্তরে আল্লাহর সঙ্গে গভীর সংযোগ তৈরি করবে।
দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়া, কবরের জীবন ও আখেরাতের চিন্তা যে কোনো ইবাদতকে শুদ্ধ ও ইখলাসপূর্ণ করে তোলে। এ কারণে নবিজি বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে বলেছেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা স্বাদ হরণকারী বিষয় অর্থাৎ মৃত্যুর আলোচনা বেশি বেশি কর। (সুনানে তিরমিজি: ২৩০৭)
৪. এমন কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে যে কারণে পরে ক্ষমা চাইতে হয়
নবিজির (সা.) আরেকটি উপদেশ হলো, এমন কথা বলা বা কাজ করা থেকে বিরত থাকুন যে জন্য পরে লজ্জিত হতে হয়, ক্ষমা চাইতে হয়। কোনো ভুল হয়ে গেলে অনুতপ্ত হওয়া, দুঃখ প্রকাশ করা ভালো গুণ। কিন্তু সতর্ক থাকা উচিত যেন এ রকম কোনো কথাই আমি না বলি, এমন কোনো কাজই না করি।
একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষ অযথা কটুকথা বলা, অপ্রয়োজনীয় দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলে। যে কাজের কারণে পরে অনুতপ্ত হতে হয় এমন কাজ এড়িয়ে চলে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
সারাদেশে আনন্দ-উৎসবে বড়দিন উদযাপিত
খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’ আজ। এই ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট ২৫ ডিসেম্বর বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা এ দিনটিকে ‘শুভ বড়দিন’ হিসেবে উদযাপন করে থাকেন।
দিনটি উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের খ্রিস্ট ধর্মের মানুষ আনন্দোৎসবের মধ্য দিয়ে দিনটি নানা আনুষ্ঠানিকতায় উদযাপন করছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন চার্চে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রার্থনা, মানবকল্যাণে যিশুর বাণী পড়ে শোনানো এবং ধর্মীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর প্রীতি ভোজ ও র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। চার্চের প্রীতিভোজে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোক ছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথি ও ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করা হয়।
দিনটি উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের নানা চার্চ ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সরকারি ছুটির দিন হওয়ার কারণে অনেকে বড়দিন উদযাপনে শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন।
রাজধানীতে বড়দিনের জাঁকালো অনুষ্ঠানটি হয় ফার্মগেটের হলি রোজারি চার্চে। এখানে বড়দিন উদযাপনে ঢাকার নানা প্রান্ত থেকে আসেন যিশু খ্রিস্টের অনুসারীরা। এছাড়া বিভিন্ন মহল্লায়ও বড় দিনের অনুষ্ঠান হয়।
বিভিন্ন এলাকার চার্চে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৫ ডিসেম্বরের পর থেকেই চার্চে প্রশাসনের নিয়মিত বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তৎপর হন। জোরদার করা হয় নিরাপত্তা। এছাড়া সেনাবাহিনীর গাড়িও টহল দেয়।
মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চের সাধারণ সম্পাদক বাবলু কুমার সিংহ, ঢাকা ইভানজেলিক্যাল রিভাইবেল চার্চের কর্মী সুনীল, গেৎশিমানী ব্যাপ্টিস্ট চার্চের ম্যানেজার সেনিস ওঝা জানান, প্রশাসনের নিবিড় তৎপরতার কারণে শতভাবে নিরাপত্তার সঙ্গে বড়দিনের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। কোনো নিরাপত্তাহীনতার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।
সকাল ১০টা থেকে মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে প্রার্থনা শুরু হয়। এতে প্রায় দেড় হাজারের মত পূণ্যার্থী অংশ নেন। দুপুরে হয় প্রীতিভোজ। এরপর বড়দিন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
চার্চটির আয়োজনে অংশ নেওয়া এলবার্ট সুনীল কুমার বিশ্বাস বলেন, সকাল থেকে সব ধরনের অনুষ্ঠানের সঙ্গে ছিলাম। ছেলে-মেয়েরা লটারির ড্র করছে, আনন্দ করছে। আজ যিশুকে স্মরণ আর আনন্দ ছাড়া আমাদের কোনো কাজ নেই।
রাজধানীর গেৎশীমানী ব্যাপ্টিস্ট চার্চে দুপুরের প্রীতিভোজ শেষ হলে প্রার্থনাকারীর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ চলে যান। তবে বিকেল পর্যন্ত কিশোর-কিশোরীরা ছবি তোলা ও গল্পে মশগুল হয়। কুশল বিনিময় করেন বয়স্করা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
টানা ৩ জুমা আদায় না করলে যে গুনাহ হবে
জুমার দিনের মর্যাদা ও সম্মান সপ্তাহের অন্য দিনের চেয়ে বেশি। এই দিনকে আল্লাহ তায়ালা সব দিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। কোরআন ও হাদিসে এই দিনের বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন , হে মুমিনগণ! জুমার দিন যখন নামাজের আহ্বান জানানো হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে (মসজিদে) এগিয়ে যাও এবং বেচা-কেনা (দুনিয়াবি যাবতীয় কাজকর্ম ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর; যদি তোমরা জানতে। (সূরা জুমা- ০৯)।
আল্লাহর রাসুল (সা.) একটি হাদিসে বলেছেন, মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন।(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৯৮)
জুমার দিনের অনেক আমলের কথা বিভিন্ন হাদিসে চমৎকারভাবে আলোচিত হয়েছে। আউস ইবনে আউস (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করাবে (জুমার নামাজের পূর্বে স্ত্রী-সহবাস করে তাকেও গোসল করাবে) এবং নিজেও গোসল করবে অথবা উত্তমরূপে গোসল করবে। এরপর ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে আসবে, আসার সময় হেঁটে আসবে, কোনো বাহনে চড়বে না, ইমামের কাছাকাছি বসবে, এরপর দুটি খুতবা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং (খুতবার সময়) কোনো অনর্থক কাজকর্ম করবে না, সে মসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপে একবছর নফল রোজা ও একবছর নফল নামাজের সওয়াব পাবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)
ফজিলতের পাশাপাশি জুমার নামাজ অনাদায়ে হাদিসে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। কেউ পর পর তিন জুমা আদায় না করলে তার জন্য সতর্কবাণী উল্লেখ করেছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত পর পর তিন জুমা পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তায়ালা তার অন্তরে মোহর এঁটে দেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১০৫২; তিরমিজি, হাদিস : ৫০২; মুসলিম, হাদিস : ১৯৯৯)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পর পর তিনটি জুমা পরিত্যাগ করবে, সে ইসলামকে পেছনের দিকে নিক্ষেপ করল। (মুসলিম)।
তবে অপর এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, চার শ্রেণির লোক ব্যতীত জুমার নামাজ ত্যাগ করা কবিরা গোনাহ। চার শ্রেণির লোক হলো- ক্রীতদাস, স্ত্রীলোক, অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক, মুসাফির ও রোগাক্রান্ত ব্যক্তি। (আবু দাউদ)।
এছাড়া নামাজ পড়া মুসলিমদের একটি নিদর্শন। তাই হজরত উমর (র.) বলতেন, ‘নামাজ ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফের’ (বায়হাকি: ১৫৫৯, ৬২৯১)। হজরত আলি (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে কাফের’ (বায়হাকি: ৬২৯১)। নামাজ পরিত্যাগকারীর ব্যাপারে কোরআন-সুন্নাহর দলিলগুলো প্রমাণ করে, বে-নামাজি ব্যক্তি ইসলাম নষ্টকারী বড় কুফরিতে লিপ্ত। তাই জুমা ও যেকোনো ওয়াক্তের ফরজ নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
জুমার নামাজ চার ধনের ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব নয়
ইয়াওমুল জুমা। সপ্তাহের সেরা মহিমান্বিত দিন। এ নামে আল্লাহ তাআলা একটি সুরা নাজিল করেছেন। সুরাটিতে জুমার পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ৪ শ্রেণির লোক এবং ওজর ছাড়া জুমা তরক করা কবিরা গুনাহ। তারা কারা যাদের জন্য জুমা আবশ্যক নয়?
জুমার নামাজ পড়া ফরজ। জুমার দিন দ্রুত প্রস্তুতি নিয়ে আগে আগে জুমা আদায় করতে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ। কোরআনে এসেছে-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ
‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে নামাজের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ৯)
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে জুমার দিন সেরা দিন ও আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম দিন। আল্লাহর কাছে তা ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়েও উত্তম।’ (ইবনে মাজাহ)
তবে ৪ শ্রেণির লোক ব্যতীত জুমার নামাজ ত্যাগ করা কবিরা গোনাহ। হাদিসে পাকে তাদের ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
হজরত ত্বারিক ইবনু শিহাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার নামাজ সত্য। যা প্রত্যেক মুসলিমের উপর জামাতের সাথে আদায় করা ফরজ। তবে চার শ্রেণীর লোকের জন্য তা ফরজ নয়। তারা হলেন-
১. ক্রীতদাস।
২. নারী।
৩. শিশু ও
৪. রোগী।’ (আবু দাউদ,)
জুমার নামাজ পরিত্যাগ করার পরিণাম খুবই ভয়াবহ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে এ ব্যাপারে সাবধান করেছেন। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা ওঠে এসেছে-
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পরপর তিন জুমা বিনা ওজরে ও ইচ্ছা করে ছেড়ে দেবে, আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির অন্তরে মোহর মেরে দেবেন।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘আর এরপর তারা (জুমা পরিত্যাগ কারীরা) আত্মভোলা হয়ে যাবে। এরপর তারা সংশোধন লাভের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়ে যাবে।’ (মুসলিম)।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পরপর তিন জুমা পরিত্যাগ করবে, সে ইসলামকে পেছনের দিকে নিক্ষেপ করলো। (মুসলিম)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নিয়মিত জুমা আদায় করা। হাদিসে উল্লেখিত ৪ শ্রেণির ব্যক্তি ছাড়া কারো জন্য জুমা থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। কেননা জুমা আদায় করা ফরজ। কেউ তা থেকে বিরত থাকলে ফরজ তরকের কবিরা গুনায় লিপ্ত হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমা আদায় করার তাওফিক দান করুন। জুমার গুরুত্ব ও ফজিলত পেতে জুমার দিনের যথাযথ হক আদায় করে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
নারী হজ যাত্রীদের নিয়ে সৌদি আরবের নতুন নির্দেশনা
মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ এবং মসজিদে নববী কর্তৃপক্ষ নারী হজ যাত্রীদের জন্য নয় নির্দেশনা জারি করেছে। ইনফোগ্রাফির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ এক্স পোস্টে এ নির্দেশনা শেয়ার করে। এসব নির্দেশনা নারীদের নামাজের স্থানগুলোতে মেনে চলতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যথাযথ ইসলামিক পোশাক পরিধান করা, দায়িত্বরত কর্মীদের সঙ্গে উত্তম আচারণ করা, ফ্লোরে ঘুমানো কিংবা বসা পরিহার করা এবং নামাজে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানো।
নির্দেশনায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের ওপর জোর দেয়া হয়েছে, বিশেষ করে নামাজের স্থানে খাওয়া বা পানি পান করা থেকে বিরত থাকা, হইচই না করা এবং জুতা পায়ে কার্পেটের ওপর না হাঁটা। এছাড়া নারীদের হজ যাত্রীদের ব্যক্তিগত মালামাল সাবধানে রাখতে বলা হয়েছে।