অর্থনীতি
তিন মাসে রেমিট্যান্স এলো ৭৮ হাজার কোটি টাকা

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছে ৭৮ হাজার ২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাইয়ে প্রবাসী আয়ে বড় ধাক্কা লাগে, এ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২২ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। পরে আগস্ট থেকে রেমিট্যান্সে সুবাতাস বইতে শুরু করে, এ মাসে এসেছে ২৬ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা ও সেপ্টেম্বরে ২৮ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গত তিন মাসের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, জুলাই মাসে ১৯০ কোটি ডলার বা ১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ২২ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। এর আগের মাস জুনে এসেছিল ২৫৪১ মিলিয়ন বা ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় কমেছে ৬৩ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ৭ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা।
আগস্ট মাসের পুরো সময়ে দেশে বৈধপথে রেমিট্যান্স এসেছে ২২২ কোটি (২ দশমিক ২২ বিলিয়ন) ডলার। যা তার আগের বছরের (আগস্ট-২০২৩) একই সময়ের চেয়ে ৬২ কোটি ডলার বেশি। গত বছরের আগস্ট মাসে এসেছিল প্রায় ১৬০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে আগস্টের ধারাবাহিকতা রয়েছে সদ্য বিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসেও। সেপ্টেম্বরের পুরো সময়ে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার (২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন) পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে) ২৮ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকার বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, রেমিট্যান্স পাঠানোয় প্রধান দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবাসী আয় আসে ১০৩ কোটি ২২ লাখ ১০ হাজার ডলারের। এর মধ্যে জুলাই মাসে এসেছিল ৩৩ কোটি ২৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার। পরের মাস আগস্টে আসে ৩৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং সেপ্টেম্বরে আসে ৩৬ কোটি ১৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়।
রেমিট্যান্সের দ্বিতীয় দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবাসী আয় এসেছে ৯২ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার ডলারে। এর মধ্যে জুলাই মাসে আসে ২৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। পরের মাস আগস্টে আসে ২৯ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজারের ডলার এবং সেপ্টেম্বরে আসে ৩৮ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার।
একইভাবে সরকারের পতনের পর রেমিট্যান্স বেড়ে যায় সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া থেকে। সৌদি আরব থেকে জুলাই মাসে ২৪ কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসে। আগস্ট মাসে আসে ২৬ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার ডলারের প্রবাসী আয়। পরের মাসে সেপ্টেম্বরে আরও বেড়ে আসে ৩৪ কোটি ৫৪ লাখ ৬০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স।
অন্যদিকে, মালয়েশিয়া থেকে জুলাই মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৩ কোটি ৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। পরের মাস আগস্টে এসেছিল ২৫ কোটি ১৯ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসেছ। সেপ্টেম্বর মাসে আসে ২৩ কোটি ৭২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়।
এছাড়া চলতি মাস অক্টোবরেও রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের গতি উদ্ধমূখী রয়েছে। অক্টোবরের প্রথম ৫ দিনে ৪২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ কোটি ডলার বেশি। গত বছরের অক্টোবরের প্রথম ৫ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৩২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি মাস অক্টোবরের শুরুতেই প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এভাবে রেমিট্যান্স আসার ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে আড়াই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে প্রবাসী আয়।
সদ্য বিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসের পুরো সময়ে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার (২.৪০ বিলিয়ন) পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে) ২৮ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকার বেশি।
দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে। বছরওয়ারি হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে মোটি রেমিট্যান্স আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের জুন মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট ২৫৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স আসে। এছাড়া জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার। তার আগের মাস মে মাসে আসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এছাড়া এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ এবং জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ মার্কিন ডলার পাঠান প্রবাসীরা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
জুনে ছাড় হতে পারে ঋণের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তি

আগামী ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বসন্তকালীন বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে ঋণ কিস্তির বিষয়ে একটি সমঝোতা হতে পারে জানিয়েছে আইএমএফের প্রতিনিধি দল। আর ঋণের অর্থ ছাড়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে আগামী জুনে আইএমএফের বোর্ড সভায়।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) আইএমএফ প্রতিনিধি দল ১২ দিন বাংলাদেশ সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে এমনই ইঙ্গিত দেন। আইএমএফের সফরের নেতৃত্বে ছিলেন সংস্থার কর্মকর্তা ক্রিস পাপাজর্জিও।
আইএমএফ বলছে, ২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৩.৩ শতাংশ, যেখানে আগের বছর একই সময়ে তা ছিল ৫.১ শতাংশ। ছাত্রজনতার আন্দোলনের কারণে অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, বিনিয়োগও কমেছে। এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতি এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, যা চলতি বছরের মার্চে কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে। তবে তা এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার (৫-৬ শতাংশ) অনেক বেশি।
ক্রিস পাপাজর্জিও বিবৃতিতে বলেন, বহিরাগত অর্থসংকট মোকাবিলা ও মূল্যস্ফীতি কমাতে এখনই নীতিগত কড়াকড়ি প্রয়োজন। কর ব্যবস্থায় সংস্কার এনে রাজস্ব বাড়ানো ও ভর্তুকি-ভিত্তিক করছাড় কমানো জরুরি।
বাংলাদেশের অর্থনীতি নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে আইএমএফ বলেছে, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে কর ব্যবস্থার সংস্কার, বিনিময় হারে নমনীয়তা এবং আর্থিক খাতে কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে। আর্থিক সংস্কারের বিষয় বাংলাদেশ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা সঠিক পথে রয়েছে বলে জানায় সংস্থাটি।
পাপাজর্জিও মনে করেন, বাংলাদেশের রিজার্ভের পাশাপাশি বিনিময় হারও স্থিতিশীল। রিজার্ভের পরিমাণ এমনকি তাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার আরও নমনীয় হলে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বাড়বে।
করব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আইএমএফ বলেছে, করনীতি ও প্রশাসনের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য থাকা উচিত। এ ছাড়া করছাড় কমাতে হবে, করনীতিকে সহজ করতে হবে এবং রাজস্ব বৃদ্ধির টেকসই পথ খুঁজে বের করতে হবে।
ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে আইনগত সংস্কার ও কার্যকর সম্পদ মান যাচাই এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও সুশাসন জোরদারের প্রতিও গুরুত্বারোপ করে আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার জোরালো অগ্রগতি দরকার।
২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় বাংলাদেশের। এরপর তিনটি কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। একই বছরের ডিসেম্বরে পেয়েছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর ২০২৪ এর জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে। তিন কিস্তিতে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পায় বাংলাদেশ। ঋণের অর্থছাড় বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার। চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ে দেরি হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও, সরকার আশা করছে আগামী জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাওয়া যাবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা থাকবে: অর্থ উপদেষ্টা

রপ্তানি বহুমুখীকরণ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার চেষ্টা থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা চাচ্ছি, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের যেন নরমাল ট্রেড হয়। বিশেষ করে জিএসপি (অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা) আবার চালু করা যায় কি না। কারণ জিএসপি আমেরিকার বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আগামী সপ্তাহে শুল্ক আরোপ নিয়ে আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে কী প্রস্তাব দেওয়া হবে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সেখানে আমাদের যাওয়ার প্রথম উদ্দেশ্য হলো বাজেট সাপোর্ট ও কতগুলো প্রজেক্ট ওরিয়েন্টেড বিষয়ে বিশ্বব্যাংক, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং ওপেক ফান্ড আছে, তাদের সঙ্গে আলাপ করব। অর্থায়ন নিয়ে সেখানে আমাদের বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দুটি চুক্তি হতে পারে এবং ওপেক ফান্ডের সঙ্গেও হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ওখানে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেশনের সঙ্গেও আলাপ করব। তারা কক্সবাজারে কাজ করছে। এ ছাড়া ইউএসএ ট্রেজারির সঙ্গে রূপপুর প্রকল্পে পেমেন্টের বিষয়ে আলোচনা হবে। এরইমধ্যে আমরা আলাপ করেছি। নিষেধাজ্ঞা আছে, তারপরও এ প্রকল্প নিয়ে বিশেষ কিছু করা যায় কি না সে বিষয়ে আলোচনা হবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা ইউএসএয়ের সঙ্গে যতটুকু সম্ভব সরকারের লেভেল, মাল্টিল্যাটারাল লেভেল বা বাইলেটারাল লেভেল ছাড়াও প্রাইভেট খাতের সঙ্গে যোগাযোগ করব। যেমন এনার্জি খাতের দু-একজন বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আলাপ হতে পারে। আমরা এনার্জি আনব কি না সে বিষয়ে। কারণ ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে তো আমাদের ইউএসএ থেকে আমদানির বিষয়ে একটু প্রণোদনা দিতে হবে। কারণ আমরা রপ্তানি যা করি তার থেকে কম আমদানি করি। এজন্য বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যদি তাদের কাছ থেকে এনার্জি, মেশিনারিজ আমদানি করি, আমদানি বেশি করলেই তো গ্যাপটা কমবে। আমরা বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে পারি, সেক্ষেত্রে আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ করে রপ্তানি করতে পারি। একই সঙ্গে তাদের দিক থেকেও যদি আমদানি করে, তবে গ্যাপ শূন্যের কোটায় আনা সম্ভব না।
ট্রাম্প প্রশাসন ৯০ দিনের জন্য শুল্ক আরোপ স্থগিত করেছে, এরপর আমরা ভালো কিছু প্রত্যাশা করতে পারি কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, নিশ্চয়ই আমরা আলাপ করব। তবে একসঙ্গে তো সব কিছু আসবে না। ইউএসএয়ের বাণিজ্য প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে আসছে। তারাও এসব বিষয়ে আলাপ করবেন। সব মিলিয়ে অর্থায়নসহ সবকিছু আমি আসার পর জানতে পারবেন।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বহু মিষ্টি কিনেছি, কোনো দোকানদার ভ্যাট চালান দেননি: এনবিআর চেয়ারম্যান

মিষ্টি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ তুলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, আমি নিজেও বহু মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনেছি। কোনো দোকানদার ভ্যাটের চালান দেননি। তারা ভ্যাট আদায়ের যন্ত্র ইএফডিও ব্যবহার করেন না।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব বোর্ড ভবনে অনুষ্ঠিত এনবিআরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব অভিযোগ করেন তিনি।
মিষ্টির ওপর ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব দিয়ে বাংলাদেশ সুইটস ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শ্রী ননী গোপাল ঘোষ বলেন, মিষ্টির ওপর যখন সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট ছিল তখন অনেক বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।
জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, আপনি বলছেন ফ্রি করে দিলে রাজস্ব বাড়বে। এটা একটা আজগুবি কথা। আপনি ১৫ শতাংশের ওপর অঙ্ক করে দেখলেন রাজস্ব আদায় কম, সাড়ে ৭ শতাংশ বেশি হয় এ রকম জাদুকরী দেশে বাস করলে তো হবে না।
তিনি আরও বলেন, আমি নিজেও বহু মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনেছি। কোনো দোকানদার ভ্যাটের রিসিট দেন না। ইএফডিও ব্যবহার করে না। এটা সমস্যা আছে। ভ্যাট দেয় জনগণ। আমি এ জীবনে যত মিষ্টি কিনেছি সব জায়গায় ভ্যাট দিয়েছি, কিন্তু আমার ভ্যাট সরকারের কোষাগারে আসে নাই। আমার তো বয়স হয়েছে। এ পর্যন্ত দেখলাম না কোনো মিষ্টি দোকানদার আমাকে ভ্যাটের রিসিট দিয়েছে।
মিষ্টিতে সুপারশপের মতো ভ্যাট ইনক্লুসিভ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, আমরা মিষ্টির দামে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করব। ইনক্লুসিভ করব। ভ্যাট আলাদা করে ধরা হবে না। ক্রেতা ভ্যাট দেখে চমকে উঠবে না। এমন একটা আদেশ প্রস্তুত করছি। টোটাল ভ্যালুর ওপর ভ্যাট ধরব। ক্রেতার জানার দরকার নাই যে তিনি কত টাকা ভ্যাট দিয়েছেন। এই একই জিনিস আমরা সুপারশপে করেছি।
যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্সের বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্স এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো তাদের টিকিটের মূল্যের সঙ্গে যোগ করে নিয়ে নেয়। এ ট্রাভেল ট্যাক্সের টাকা সরকারের টাকা কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এ টাকা সরকার পায় না। অনেক ক্ষেত্রেই এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো সরকারি কোষাগারে এটা জমা দেয় না বা কখনো কখনো কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যায়, তারা ব্যবসা বন্ধ করে চলে যান। সরকারের কোটি কোটি টাকা পাওনা থাকলে সেটা দেয় না।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাচ্ছি যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্স যাত্রী নিজে দেবে। তারা টাকা জমা দিয়ে চালান দেবে এবং সেটা দেখিয়ে চলে যাবে।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বাংলাদেশি পণ্যে বছরে ১ বিলিয়ন ডলার শুল্ক পায় যুক্তরাষ্ট্র: সিপিডি

যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর বাংলাদেশি পণ্যের ওপর এক বিলিয়ন ডলারের বেশি শুল্ক আদায় করে থাকে বলে জানিয়েছেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। অন্যদিকে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর প্রায় ১৮০ মিলিয়ন ডলার শুল্ক আদায় করে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে ‘ট্রাম্প রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ অ্যান্ড বাংলাদেশ ইমপ্লিকেশন অ্যান্ড রেসপন্স’ শীর্ষক ডায়ালগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে তিনি এসব তথ্য জানান।
এ সময় ট্রাম্পের শুল্কনীতি মোকাবিলায় মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তির পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতায় জোর দেওয়ার আহ্বান জানান বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। পাশাপাশি বাংলাদেশকে কৌশলগত বিকল্প অন্বেষণেরও সুপারিশ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ মার্কিন আমদানিতে গড়ে ৬.২ শতাংশ শুল্ক এবং অন্যান্য শুল্ক আরোপ করে। তবে যখন রিবেট বিবেচনা করা হয়, তখন গড় শুল্ক ২.২ শতাংশে নেমে আসে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে মার্কিন আমদানিতে গড় শুল্ক ১৫.১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
সিপিডির পরামর্শ, বাংলাদেশের উচিত মার্কিন শুল্কের প্রভাব তার রপ্তানি প্রতিযোগিতার ওপর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করা। সেই সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জড়িত থাকা।
ট্রাম্প প্রশাসনকে রোগের সঙ্গে তুলনা করে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক বলেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি পুরোটা অনিশ্চিত প্রক্রিয়া। তবে মোটা দাগে ধরা যেতে পারে এই শুল্ক নীতিতে চীন তাদের মূল টার্গেট।
তিনি আরও বলেন, নির্ধারিত সময় শেষে বাংলাদেশর মতো দরিদ্র দেশগুলোর ওপর শুল্ক কিছুটা কমাতে পারে। কিন্তু আমাদের মার্কেটের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে বায়ারদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের ৫০ শতাংশ নেগোসিয়েশন করতে হবে। এর জন্য কারখানাগুলোকে ব্যাংকের সাপোর্ট দিতে হবে। তবে এই কাজটা কেবল একটা পদ্ধতির মধ্যদিয়ে যাওয়া জরুরি, যা আগামী ৯০ দিনের জন্য কার্যকর হবে। তবে আগামীতে আমাদের রপ্তানি কিছুটা কমাতে পারে। এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তবে আগামী ৯০ দিন পরে পরিস্থিতি যাই হোক তাতে যেন সরকারের সহযোগিতা থাকে।
অন্য বক্তারা জানান, মার্কিন শুল্কনীতি শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্ব অর্থনীতিকে দুষ্টচক্রের মধ্যে ফেলবে। এটি শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যে নয়, শ্রমিকদের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ৯০ দিন পর যুক্তরাষ্ট্র কী করবে এটি কারও ধারণা নেই। তাই বিপদে পড়ার আগেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
এসময় বক্তারা অভিযোগ করেন, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থাকে (ডব্লিউটিও) কাজ করতে দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। তাই ডব্লিউটিও’র দিকে না তাকিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দিতে পরামর্শ দেন তারা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
শিল্পে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সংযোগের ঘোষণা

আগে আবেদন করলে আগে ভিত্তিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল, ইপিজেড, বিসিক শিল্পনগরীকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সংযোগ প্রদান করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান। গ্যাস পেলেই উৎপাদনে যেতে পারবে এমন শিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই লোডবৃদ্ধি করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
গতকাল বুধবার (১৬ এপ্রিল) সচিবালয়ে গ্যাসের সিস্টেম লস হ্রাস সংক্রান্ত এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব নির্দেশনা দেন।
বিইআরসি নির্ধারিত ট্যারিফে পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চলে অগ্রাধিকার এবং পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চলের বাইরের বিষয়ে রপ্তানিমুখী শিল্পে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদানের বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে নতুন পরিপত্র জারিকরার সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ফাওজুল কবির খান বলেন, গ্যাসের প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ সাপেক্ষে গ্রাহকের সংযোগ কার্যকর ও নতুন সংযোগের অনুমোদন দিতে হবে। রাজস্ব বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নতুন গ্যাস সংযোগ ও লোডবৃদ্ধির কার্যকর করতে হবে। এতে কি পরিমাণ রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে তার হিসাব নিরূপণ করারও নির্দেশ দেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, আগামী ৩১ মে তারিখের মধ্যে গ্যাস পাইপলাইনের সকল লিকেজ মেরামত নিশ্চিত করতে হবে।
সভায় উত্থাপিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে সিস্টেম লস ৪ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে।
বিইআরসির তথ্য অনুযায়ী, গত ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) গ্যাসের সামগ্রিক সিস্টেম লস আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেড়েছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাসের সিস্টেম লস ছিল ৮.৪৩ শতাংশ। যা চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে হয়েছে ১৩.৫৩ শতাংশ। বিশ্বজুড়ে ২ শতাংশের নিচে সিস্টেম লসকে আদর্শ বিবেচনা করা হয়। অনেক আগেই বিইআরসি সিস্টেম লস ২ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছে।
সভায় আরও বলা হয়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪ হাজার ৭০ কিলোমিটার পাইপলাইনে জরিপ পরিচালনা করা হয়। ওই জরিপে ৯ হাজার ৩৮৪টি ছিদ্র পাওয়া গেছে। একই সময়ে জালালাবাদে ১১৮টি, জিটিসিএল’ এ মাত্র ২টি লিকেজ, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি মাত্র ১১টি, বাখরাবাদে ৩টি, এবং পশ্চিমাঞ্চল গ্যাসে ১টি ছিদ্র চিহ্নিত ও মেরামত করা হয়েছে।