অর্থনীতি
একনেকে চার প্রকল্প অনুমোদন, ব্যয় ২৪ হাজার কোটি টাকা
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভা (একনেক) অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সভায় ২৪ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সোমবার (৭ অক্টোবর) একনেক সভা শেষে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, একনেক সভায় ২৪ হাজার ৪১২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে অর্থায়ন হবে ৭ হাজার ৭৪৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আর বিদেশি ঋণ ও অনুদান ১৬ হাজার ১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৬৫৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
একনেকে প্রকল্পগুলো সময় বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, চলতি প্রকল্পগুলো সংশোধন করা হচ্ছে। তাই সময় লাগছে। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কম হয়, প্রকল্প ধীরগতিতে এগুলে অর্থ প্রবাহ বাড়বে না। অর্থ প্রবাহ বাড়াতে আগের প্রকল্পের কাজ এগোতে হবে, নতুন কিছু প্রকল্প হাতে নিতে হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন বলেন, সারাদেশে সরকারি গাড়ির হিসাব করা হবে। সরকারি গাড়ির উপযোগিতা ও জীবনকাল কম হয় কেন, তা খতিয়ে দেখা হবে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সাবেক আইনমন্ত্রীর দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক
দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ সোমবার (৭ অক্টোবর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম।
সূত্র জানায়, তাদের দুজনের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রকল্পে অনিয়মসহ দেশে-বিদেশে বিপুল অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের তথ্য আমলে নেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমের বিরদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। আনিসুল হক মন্ত্রী থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। নিজ নামে কসবা, ত্রিশাল এবং পূর্বাচলে ৬.৮০ একর জমি কিনেছেন। সিটিজেন ও এক্সিম ব্যাংকে তার শেয়ারের পরিমাণ ৪০ কোটি ১০ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্র, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা এবং অন্যান্য বিনিয়োগ ২৩ কোটি ২৬ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮৪ টাকা, এবং ৪টি গাড়ি ও একটি মোটরসাইকেল রয়েছে তার।
এছাড়া অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমের নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে অঢেল সম্পদ রয়েছে। তৌফিকা করিম সিটিজেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন বিধায় তার মাধ্যমে আনিসুল হক কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করতেন। তিনি নিম্ন আদালতের অধিকাংশ কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নিতেন। সাবেক আইনমন্ত্রীর সব দুর্নীতির সঙ্গে তৌফিকা করিমের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ১০ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির জন্য সারা দেশে টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। সোমবার (৭ অক্টোবর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রতি জেলায় টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও সদস্য হিসেবে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক দায়িত্ব পালন করবেন।
দশ সদস্যের টাস্কফোর্সের অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বা উপযুক্ত প্রতিনিধি, জেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা বা উপযুক্ত প্রতিনিধি, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বা উপযুক্ত প্রতিনিধি, কৃষি বিপণন কর্মকর্তা/সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা, ক্যাবের প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দুজন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর বাজার পরিস্থিতি ও সরবরাহ চেইন তদারক ও পর্যালোচনার জন্য জেলা পর্যায়ে এ ‘বিশেষ টাস্কফোর্স’ গঠন করা হলো।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তার স্ত্রী ও ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমীলা জামানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার (৭ অক্টোবর) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামস জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।
এ আবেদনে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সাবেক ভূমিমন্ত্রী তার ও তার পরিবারের নামে যুক্তরাজ্যে ৩৫০টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি ও যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট করেছেন।
আরও বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ দ্বারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও সম্পদ অর্জন করেছেন বলে রেকর্ডপত্রের আলোকে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয়। বিশ্বস্ত সূত্রের প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামান দেশ ত্যাগ করতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের বিদেশ গমন রহিত করা আবশ্যক।
দুদকের উপপরিচালক রাম প্রসাদ মণ্ডল তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। শুনানি করেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম। শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সোনালী লাইফের ৩৫৩ কোটি টাকা লুটপাটে শ্বশুর-জামাই, পাচার ৪৪ কোটি
দুর্নীতি, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের তহবিল থেকে তছরুপ হয়েছে ৩৫৩ কোটি টাকা। সোনালী লাইফের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও পেটি ক্যাশ (খুচরা নগদান বই) থেকে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক দুই চেয়ারম্যান তাদের পরিবার ও ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (সিইও) অন্যান্য কর্মকর্তা এই পরিমাণ কোটি টাকা তছরুপ করেছেন। এসব অর্থের মধ্যে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটিকে পারিবারিক সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করেছেন সাবেক চেয়ারম্যান নুর-ই-হাফসা, ভাগিনা মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তার জামাতা ভারপ্রাপ্ত সিইও মীর রাশেদ বিন আমান। আমানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান ফৌজিয়া কামরান তানিয়ার বিবাহবিচ্ছেদের পর তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরপর একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললে কয়েকটি সংস্থা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। এতে বেরিয়ে আসে সোনালী লাইফের সব অনিয়মের খবর। সর্বশেষ আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পরিদর্শন প্রতিবেদনেও প্রতিষ্ঠানটির লুটপাটে কুদ্দুস পরিবারের সংশ্লিষ্টতা উঠে আসে।
অর্থ তছরুপের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ। এ বিষয়ে নেওয়া ব্যবস্থার অগ্রগতি সম্পর্কেও সংস্থাটিকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।
বিএফআইইউর প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, সোনালী লাইফের ৩৫৩ কোটি টাকা তছরুপের সঙ্গে জড়িত কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ আট পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত সিইও ও অন্য দুই কর্মকর্তা। এ ছাড়া কোম্পানিটির ভারপ্রাপ্ত সিইওর এক ভাই ও ফুফুর নাম উঠে এসেছে।
গ্যালাক্সি হলিডেজের মাধ্যমে ৩৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা পাচার: বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্যালাক্সি হলিডেজ লিমিটেডকে বিভিন্ন দেশে ট্যুর, সেমিনার, ওমরাহ পালন ও অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা দেখার নামে ৩৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা দিয়েছে সোনালী লাইফ। এই লেনদেনের ভাউচার ছাড়া কোনো প্রকার সহায়ক দলিল প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা হিসাব বিভাগের কাছে রক্ষিত নেই মর্মে পরিদর্শন দলকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবহিত করেন। এই টাকা গ্যালাক্সি হলিডেজের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়ে থাকতে পারে এবং প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদ বিন আমানের ওপরই এর দায়ভার বর্তায়।
ক্রাউন মানি চেঞ্জারের মাধ্যমে পাচার ৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা: ক্রাউন মানি চেঞ্জার কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন সময় সোনালী লাইফের ৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে মনে করছে বিএফআইইউ। এসব টাকা দেওয়া হয়েছে বীমা কোম্পানিটির পেটি ক্যাশ ও বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে নগদে উত্তোলন করে। হুন্ডি অথবা বাহকের মাধ্যমে এই টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পাউন্ড কেনা, লন্ডনে অর্থ পাঠানো, লন্ডনে শপিং, দুবাই ট্যুর, লন্ডন কার্ড, সফটওয়্যার কেনা, পরিচালক সফিয়া সোবহান চৌধুরী ও মোস্তফা কামরুস সোবহানের কন্যা মাহেরাকে প্রদান, মুখ্য নির্বাহী রাশেদের মেডিকেল ব্যয়সহ অন্য বাবদ এসব টাকা দেওয়া হয়েছে ক্রাউন মানি চেঞ্জার কোম্পানিকে।
মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসে পকেটে ১৮৪ কোটি টাকা: সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস নিয়মবহির্ভূতভাবে সোনালী লাইফের তহবিল থেকে নিয়েছেন ১৮৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভবন বিক্রির নামে নিয়েছেন ১৩৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। বাকি ৪৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা তিনি নিয়েছেন নিজের ও তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে। এই টাকা তিনি নেন ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালে। সোনালী লাইফের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও পেটি ক্যাশ থেকে এসব অর্থ নিয়েছেন বলে বিএফআইইউর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
ভবন বিক্রির নামে ১৩৯ কোটি ১০ লাখ টাকা নিলেও এই ভবন কেনার বিষয়ে সোনালী লাইফের বোর্ড সভার কোনো অনুমোদন নেই। অনুমোদন নেই বীমা খাত নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর। এ ছাড়া ভবনটি ৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণের বিপরীতে যমুনা ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখায় বন্ধক রাখা।
তদন্তকারী প্রতিষ্ঠানটি বলছে, প্রতিবেদনটি প্রস্তুতের সময় মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মতামত নেওয়া হয়েছে। মতামতে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস জানিয়েছেন, তিনি ১৩৯ কোটি ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন ইম্পেরিয়াল ভবনের ভাড়া বাবদ। তবে এর পক্ষে তিনি কোনো দলিল দেখাতে পারেননি। সোনালী লাইফের ইআরপি সফটওয়্যার ও কোম্পানিটির বিভিন্ন ভাউচারের তথ্যানুসারে ইম্পেরিয়াল ভবনের ভাড়া বাবদ ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে বিএফআইইউ। বিএফআইইউ বলছে, পর্যাপ্ত দলিল না পাওয়ায় মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ভবনের ভাড়া বাবদ কত টাকা নিয়েছেন, তা তারা নিশ্চিত হতে পারেননি। এ বিষয়ে জানতে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে নগদে উত্তোলন ১৬৯ কোটি টাকা: ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সোনালী লাইফের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে নগদে উত্তোলন করা হয়েছে ১৬৯ কোটি ৯ লাখ টাকা। একক চেকের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নগদে উত্তোলন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ২৬ জুন কোম্পানিটির এসবিএসি ব্যাংক থেকে একক চেকে এ টাকা তোলা হয়েছে। এই বিশাল অঙ্কের টাকা নগদে উত্তোলন করায় তা তহবিল তছরুপের ইঙ্গিত বহন করে বলে মন্তব্য করা হয়েছে বিএফআইইউর তদন্ত প্রতিবেদনে।
রূপালী ইন্স্যুরেন্সকে দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা: ২০১৯, ২০২০ ও ২০২২ সালে রূপালী ইন্স্যুরেন্সকে দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ছয়টি ধাপে এসব টাকা দেওয়া হয়েছে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিটিকে। এ অর্থের প্রকৃত সুবিধাভোগী বলা হয়েছে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসকে।
ভারপ্রাপ্ত সিইও মীর রাশেদ বিন আমানের অনিয়ম: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল এই চার বছরে রাশেদ বিন আমান বেতনের বাইরে ৪ কোটি ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন সোনালী লাইফ থেকে। সোনালী লাইফের হিসাব থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে এই টাকা নগদে তুলেছেন রাশেদ। ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে রাশেদ তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছেন। এই গাড়িগুলোর মোট মূল্য ৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে মার্সিডিজ বেঞ্জ ই২০০কোপ ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি কিনেছেন ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকায়, মার্সিডিজ বেঞ্জ জিএলই৫৩ গাড়িটি কিনেছেন ২ কোটি ২০ লাখ টাকায় এবং সাড়ে ৩ কোটি টাকায় একটি ব্র্যান্ড নিউ পোরশে গাড়ি কেনেন। এসব গাড়ির মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে ঋণ নিয়ে এবং রাশেদের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে।
গাড়ির মূল্য ও গাড়ির বিপরীতে নেওয়া ঋণের টাকা রাশেদ সোনালী লাইফ থেকে বিধিসম্মতভাবে নিয়েছেন কি না, পরিদর্শন চলাকালে পরিদর্শন দলকে তা নিশ্চিত করতে পারেনি সোনালী লাইফ। এ ছাড়া গাড়ির বিপরীতে নেওয়া ঋণের কিস্তির টাকা সোনালী লাইফের অ্যাকাউন্ট থেকে পেটি ক্যাশের মাধ্যমে নগদে গ্রহণ করে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হয়ে থাকতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিএফআইইউর প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, গুলশানে বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস (বিটিআই) থেকে মীর রাশেদ বিন আমান ও ফৌজিয়া কামরুন তানিয়ার (কুদ্দুসের কন্যা) নামে ১৮ কোটি ৩৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা মূল্যের একটি অ্যাপার্টমেন্ট বুকিং দেওয়া হয়। এই অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য বাবদ ১৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয় ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট থেকে ঋণ নিয়ে। বাকি ৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা পরিশোধ করেন রাশেদ ও ফৌজিয়া। আর ঋণের ১৩ কোটি টাকার মধ্যে ৩ লাখ ২ হাজার টাকাও পরিশোধ করেন তারা।
বিটিআইকে সরাসরি পরিশোধ করা ৫ কোটি টাকার মধ্যে আড়াই কোটি টাকা পরিশোধ করা হয় রাশেদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে। যার মধ্যে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ২০২০ সালে ও ১ কোটি টাকা ২০২২ সালে পরিশোধ করা হয়। ২০২০ সালে পরিশোধ করা ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার মধ্যে ৫০ লাখ টাকা রাশেদ সোনালী লাইফ থেকে নিয়েছেন বলে মনে করছে বিএফআইইউ।
বাকি ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ২০২২ সালের ২৬ জুন ও ৫ জুলাই দুটি পে-অর্ডারে জমা করা হয় বিটিআইর অ্যাকাউন্টে। এই পে-অর্ডার দুটি করা হয় সোনালী লাইফের অ্যাকাউন্ট থেকে। দুটি পে-অর্ডারেরই ফরওয়ার্ডিং লেটারে স্বাক্ষর করেন সোনালী লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান নূর-ই-হাফজা ও ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া।
ন্যাশনাল হাউজিং থেকে নেওয়া ঋণের ১৩ কোটি টাকার মধ্যে ২০২২ সালের ১০ আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে রাশেদ ও তানিয়ার মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের যৌথ অ্যাকাউন্ট থেকে। রাশেদ ও তানিয়ার যৌথ ওই অ্যাকাউন্টটিতে অধিকাংশ টাকাই জমা হয়েছে নগদে। বিএফআইইউ মনে করছে, সোনালী লাইফের পেটি ক্যাশের মাধ্যমে টাকা নিয়ে রাশেদ ও তানিয়া যৌথ অ্যাকাউন্টটিতে জমা করে থাকতে পারেন।
২০২০ থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দুই দফায় পেটি ক্যাশ থেকে ডেভেলপমেন্ট ইনসেনটিভ বাবদ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ও ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা (মোট ২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা) অনুমোদনবিহীনভাবে গ্রহণ করেছেন। এই টাকা রাশেদ তছরুপ করেছেন কি না—এমন কোনো মতামত দেয়নি বিএফআইইউ।
সোনালী লাইফের টাকায় শেয়ারের মালিক ১০ পরিচালক: ২০১৮ সালে সোনালী লাইফের পরিশোধিত মূলধন ১৮ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৮ কোটি টাকা করার অনুমোদন দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। উদ্যোক্তা পরিচালকদের এ টাকা পরিশোধ করার কথা থাকলেও তা না করে সোনালী লাইফের সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের এসওডি অ্যাকাউন্ট থেকে ৮ কোটি ৯৫ লাখ ও ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা নগদে উত্তোলন করে ১০ জন পরিচালকের নামে শেয়ারের মূল্য পরিশোধ বাবদ পে-অর্ডার ইস্যু করা হয়। মূলত সোনালী লাইফের অর্থ দিয়েই ১০ জন পরিচালক কোম্পানিটির মূলধন বৃদ্ধিজনিত শেয়ার কিনেছেন, যা জালিয়াতি। এ ছাড়া সোনালী লাইফের হিসাব থেকে ৭ কোটি ৬ লাখ টাকা স্থানান্তর করে শেয়ার কেনা হয়। এসব শেয়ার কেনা হয়েছে সাবেক মুখ্য নির্বাহী মীর রাশেদ বিন আমানের আত্মীয়স্বজনসহ সোনালী লাইফের বিভিন্ন কর্মকর্তা, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে। কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে এসব ব্যক্তির নামে খোলা বিভিন্ন বিও হিসাবে শেয়ার কেনা বাবদ এই টাকা স্থানান্তর করা হয়।
সাবেক চেয়ারম্যান ও তার পরিবার নিয়েছেন ২ কোটি টাকার আর্থিক সুবিধা: সোনালী লাইফের তহবিল থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রায় ২ কোটি টাকার আর্থিক সুবিধা নেন সাবেক চেয়ারম্যান নূর-ই-হাফজাসহ মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের পরিবারের সদস্যরা। এর মধ্যে নূর-ই-হাফসার অনিয়ম ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ভাইস চেয়ারম্যান ফৌজিয়া কামরুন তানিয়ার আত্মসাৎ ১১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। তাসনিয়া কামরুন আনিকার আত্মসাৎ ১১ লাখ ১২ হাজার টাকা। অবৈধভাবে শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল নিয়েছেন ৩০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। মোস্তফা কামরুস সোবহানের আত্মসাৎ ৪ লাখ ১৩ হাজার টাকা। ভ্রমণ ও বৈদেশিক মুদ্র কেনায় মোস্তফা কামরুস সোবহানের মেয়েকে দেওয়া হয় ২৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
কোম্পানিটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সিইও মীর রাশেদ বিন আমান দেশের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত
সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খানের সকল ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
রবিবার (৬ অক্টোবর) দেশের সব ব্যাংককে চিঠি দিয়ে এসব হিসাব স্থগিত করার নির্দেশ দেয় বিএফআইইউ।
বিএফআইইউ আজিজ খানের স্ত্রী-কন্যাসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক হিসাবের তথ্যও চেয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তবে আজিজ খান ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হলেও তাদের মালিকানাধীন সামিট গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির ব্যাংক হিসাব এখনো সচল আছে। এগুলো স্থগিত করা হয়নি।
আজিজ খান দেশের বিদ্যুৎ খাতের মাফিয়া হিসেবে পরিচিত। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ১৭ শতাংশ তার মালিকানাধীন সামিট গ্রুপ করে থাকে। আওয়ামীলীগ সরকারের গত ১৫ বছরের শাসনামলে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে এই গ্রুপের কোম্পানিগুলো শতশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
শুধু বিদ্যুৎ খাত নয়, দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থায়ও সামিটকে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিয়েছিল সরকার। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল পিএলসি দেশের ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথ চাহিদার পুরোটা মেটাতে সক্ষম হলেও সামিটসহ কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানিকে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে ভারত থেকে ব্যান্ডউইথ আমদানির সুযোগ করে দিয়েছিল সরকার।
আজিজ খান সিঙ্গাপুরের অন্যতম শীর্ষ ধনী। বাংলাদেশ থেকে তিনি বৈধভাবে কোনো অর্থ স্থানান্তরের অনুমতি নেননি। তাই মানিলন্ডারিং তথা অবৈধভাবে টাকা পাচার করেছেন এটা নিশ্চিত।