আন্তর্জাতিক
ভিসা কমিয়ে দেওয়ায় যেসব সমস্যার মুখোমুখি বাংলাদেশ-ভারত

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাস কিছুদিন ভিসা কার্যক্রম বন্ধ রেখে আবার চালু করলেও তা চলছে অত্যন্ত সীমিত আকারে। বর্তমানে শুধু শিক্ষা ও জরুরি চিকিৎসার জন্য ভিসার আবেদন করা যাচ্ছে। ভারতের ভিসা জটিলতার কারণে বাংলাদেশ থেকে ভারতগামী ফ্লাইটের সংখ্যাও কমে অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে ইউরোপের অনেক দেশের দূতাবাস ভারতে থাকায় সংকটে পড়ছেন ইউরোপে পড়তে যেতে আগ্রহী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।
এ ছাড়া চিকিৎসার জন্যও ভিসা পেতেও হিমশিম খাচ্ছেন আবেদনকারীরা। সীমিত ভিসা দেওয়ার প্রভাব পড়ছে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও।
ফ্লাইটসংখ্যা কমে অর্ধেক
ভিসা জটিলতার সম্ভবত সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে এয়ারলাইনস ব্যবসায়। বাংলাদেশের তিনটি বিমান সংস্থা নভোএয়ার, ইউএস বাংলা ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ভারতে ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।
ভিসা জটিলতায় যাত্রী যেতে না পারায় এদের মধ্যে দুইটি বিমান সংস্থার ফ্লাইট কমে অর্ধেকে নেমেছে, আর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে একটির।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে সবচেয়ে বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস। ৫ আগস্টের আগে ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-চেন্নাই ও চট্টগ্রাম-কলকাতা এই তিনটি রুটে সপ্তাহে মোট ৩২টি বিমান পরিচালনা করত সংস্থাটি। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে দুটি রুটে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১২-তে।
আর পুরোপুরি বন্ধ আছে চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে বিমান চলাচল।
একই অবস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের। আগে ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-চেন্নাই ও ঢাকা-দিল্লি রুটে সপ্তাহে ২৮টি ফ্লাইট পরিচালিত হলেও বর্তমানে চলছে মাত্র ১৩টি ফ্লাইট।
আর পুরোপুরি বন্ধ আছে শুধু ঢাকা-কলকাতা রুটে চলাচলকারী নভোএয়ারের ফ্লাইট। সংস্থাটির মার্কেটিং অ্যান্ড সেলসের প্রধান মেজবাউল ইসলাম জানান, আগে প্রতিদিন নভোএয়ারের একটি করে ফ্লাইট ঢাকা থেকে কলকাতায় গেলেও যাত্রী কমার পর তা কমিয়ে সপ্তাহে তিনটি করা হয়।
তবে ১৬ তারিখ থেকে ফ্লাইট চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে সংস্থাটি।
ভিসার কারণেই ফ্লাইটসংখ্যা কমে গেছে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘যারা এখনো ট্র্যাভেল করছেন তাদের আর্লিয়ার (আগের) ভিসা ছিল। হয়তো কিছুদিন পর সেই ভিসাগুলো শেষ হয়ে গেলে ফ্লাইটের সংখ্যা হয়তো আরো কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে, যদি ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা এর মধ্যে ক্লিয়ার না হয়।’
ভারত চিকিৎসা ভিসা দিলেও চেন্নাইগামী ফ্লাইটের সংখ্যাও ‘আপ টু দ্য মার্ক’ না বলে জানান এই কর্মকর্তা। এ ছাড়া ‘৫০ থেকে ৬০ শতাংশ লোড নিয়ে ফ্লাইটগুলো অপারেট করতে হচ্ছে’ বলেও জানান তিনি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বলেন, ‘যাত্রী যাওয়ার ফ্লো কমে গেছে। কমার ফলে দেখা যাচ্ছে অনেক ফ্লাইট আন্ডারলোড যাচ্ছে। তখন আমরা এটা কমিয়ে নিয়ে এসে এডজাস্ট করেছি যে এ রকম ফ্রিকোয়েন্সি থাকলে আমাদের মোটামুটি অপারেটিং কস্ট উঠে আসবে।’
তবে ভিসা আবার আগের মতো দেওয়া শুরু হলে এবং যাত্রী চাপ বাড়লে আবারও আগের মতো ফ্লাইট পরিচালনা করা যাবে বলে মনে করছেন এই খাতসংশ্লিষ্টরা।
সংকটে ইউরোপে পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা
ইউরোপের বেশির ভাগ দেশের দূতাবাস বাংলাদেশে নেই। ফলে বাংলাদেশি কোনো শিক্ষার্থীকে ইউরোপের দেশগুলোতে পড়তে যেতে হলে, ভারতে গিয়ে সেই দেশের দূতাবাস থেকে দেশটির ভিসা সংগ্রহ করতে হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রথমে ভারতের ভিসা প্রয়োজন হয়। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ৫ আগস্টের দুই দিন পর থেকে ভারতীয় দূতাবাস ভিসা কার্যক্রম বন্ধ রাখে। প্রায় এক সপ্তাহ পর দেশটি ‘সীমিত আকারে’ ভিসার কাজ চালু করে।
সাধারণত কূটনৈতিক, ব্যবসায়ী ও ভ্রমণসহ ১৫টি ক্যাটাগরিতে ভারত বাংলাদেশকে ভিসা দিয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে শুধু শিক্ষা ও জরুরি চিকিৎসার জন্য ভিসা আবেদন করা যাচ্ছে। তবে সে ক্ষেত্রেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে ভিসা আবেদনকারীদের।
পর্যটন ব্যবসায় ধস
গত রবিবার রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে গিয়ে দেখা যায় ভারতীয় ভিসা আবেদনকারীদের ভিড়। কাগজ হাতে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর অপেক্ষা ভারতীয় ভিসার জন্য। কিন্তু সেখানকারই যে দোকানগুলো থেকে ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করা যায়, সেখানটা ছিল অনেকটাই ফাঁকা। বন্ধও ছিল কয়েকটি দোকান।
ব্যবসায়ীরা বলছিলেন, ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় ব্যবসার অবস্থা বেশ খারাপ। কারণ এসব দোকান থেকে যে দেশগুলোর ভিসার জন্য আবেদন করা হয়, তার বড় একটি অংশই ভারতের।
কথা হয় এশিয়া ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আগে যেখানে শুধু ভারতের জন্য মাসে বারো শ থেকে পনেরো শ ফাইল রেডি করা হতো, সেখানে গত এক মাসে ‘ইমার্জেন্সি কেসের’ মাত্র ১০০টি ফাইল রেডি করা গেছে।’
আর সাবমিট করতে পেরেছেন শুধু আট থেকে ১০টি ফাইল। একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্লট খোলার কারণে সবাই একসঙ্গে তাতে ঢোকার চেষ্টা করায় সার্ভার ডাউন থাকে বলেও জানান এই ব্যবসায়ী। তবে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার পাঁচ থেকে সাত দিন পর ডেলিভারি থাকলেও ১৫ দিন পরও তা হাতে না পাওয়ায় আরো বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
চার শয়ের বেশি বাংলাদেশি ভিসা রিভিউ
ভারত থেকে বাংলাদেশিদের যে সীমিতসংখ্যক ভিসা দেওয়া হচ্ছে সেগুলোও বিশেষভাবে খতিয়ে দেখছে ভারত সরকার। ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত একটি খবর বলছে, নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে করা আবেদনের মধ্যেও শুধু আগস্টেই ৪৩৪টি বাংলাদেশি ভিসা রিভিউ করেছে ভারত।
পিআরসি বা প্রায়োর রেফারেল চেকের এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত ভিসা দেওয়ার আগে গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো আবেদনকারীর ব্যাকগ্রাউন্ডের খোঁজ-খবর নেয়। একই মাসে পাকিস্তানের ৮৭৮টি ভিসা রিভিউ করা হয়েছে বলে খবরটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রভাব পড়েছে ভারতের স্থানীয় ব্যবসায়
ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশটিতে পর্যটন খাতে ভ্রমণের শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ, যা কিনা সে দেশে মোট বিদেশি পর্যটকের ২১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ফলে ভিসা না দেওয়ায় কেবল যে বাংলাদেশিরাই ভোগান্তিতে পড়ছে, তেমনও না। ভিসা কার্যক্রম সীমিত থাকায় সমস্যায় পড়েছেন ভারতের পর্যটন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও।
রাজেশ আহুজা নামের কলকাতার একজন ব্যবসায়ী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বাংলাদেশে যে ঘটনাটা ঘটল, শুরুতে তাতে একটা ধাক্কা লেগেছে। প্রথম কিছুদিন আমরা ক্লিয়ারলি দেখতে পাই, মানুষ আসা কমে যায়। মাস দুয়েক প্রভাব ছিল। কিন্তু পুরনো যাদের ভিসা ছিল তারা ফিরে আসছে।”
হোটেল ও ট্যুরিজম ব্যবসায়ী মনোতোষ সরকার বলেন, ‘এখন কিছুটা হলেও আমাদের ভাটা পড়েছে। কেননা ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ আছে, যারা মেডিক্যাল ভিসায় আসছে, তারা টুকটাক আসছে।’
ট্যুরিস্ট ভিসা না থাকায় ব্যবসায় প্রভাব পড়ছে বলে জানাচ্ছিলেন মো. কামরুদ্দিন মল্লিক। তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ ২০ পারসেন্ট আসছে এখন, ৮০ পারসেন্ট ট্যুরিস্ট নেই। যারা আসছে তারাও মেডিক্যালের কাজ করে চলে যাচ্ছে। ট্যুরিস্ট ভিসা হলে কেনাকাটা কিছুটা হয়।’
ভিসা না দেওয়ার কারণ কী?
‘সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপটে ভারত আশ্বস্ত হচ্ছে না বলেই হয়তো’ এখনো ভিসা নিয়ে এমন কড়াকড়ি করছে দেশটি, এমনটাই মনে করছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির।
কিন্তু কিন্তু ভিসা না দেওয়ায় ভারত ও বাংলাদেশের ওপর কী প্রভাব পড়ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রভাব তো নেতিবাচক বটেই। ভিসা যদি না দেওয়া হয় তাহলে যাতায়াত কমে যায়। যাতায়াত কমা মানে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ব্যক্তিগত জীবনে অনেকেই নানান জটিলতায় পড়েন। দুই দেশের পিপল টু পিপল কানেক্টিভিটি যেটা ব্যাহত হয় নিশ্চিভাবেই।’
আবার বাংলাদেশিরা দেশটিতে কম যাওয়ায় ভারতের স্থানীয় ব্যবসাও ক্ষতির মুখে পড়ে। হুমাউন কবির বলেন, ‘কলকাতায় বাংলাদেশি ভিজিটরস না থাকার ফলে ট্যুরিজম বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছে। কলকাতার বিপণীবিতানগুলোর অবস্থা একটু চাপের মুখে আছে। তাতে করে স্থানীয় অর্থনীতির ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এটাতে লাভ কারোই হচ্ছে না। দুই দেশের মানুষ এতে করে এফেক্টেড হয়ে যাচ্ছে।’
লাভ না হলেও ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের কঠোরতার কারণ কি শুধুই নিরাপত্তা, না এর পেছনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও আছে- উঠছে এমন প্রশ্নও। তবে এ ক্ষেত্রে যদি নিরাপত্তার প্রসঙ্গ মুখ্য হয়ে ওঠে, তবে কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে বলেই মত এই বিশ্লেষকের।
এমআই

আন্তর্জাতিক
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতি আলোচনায় সম্মত: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল শনিবার বলেছেন, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছেন। সীমান্তে তিন দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ট্রাম্প দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন।
থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, থাইল্যান্ড নীতিগতভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত তবে কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে সৎ অভিপ্রায় দেখতে চায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিকমাধ্যমে জানান, থাইল্যান্ড আর কম্বোডিয়া দুই দেশই শান্তি আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, তিনি কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত ও ফুমথামের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি সংঘাত বন্ধ না হয়, তাহলে কোনো দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি হবে না। উভয় পক্ষই তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি ও শান্তি চেয়েছে।
যদিও ট্রাম্পের প্রস্তাবের আগে, কম্বোডিয়ার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিল থাইল্যান্ড। জাতিসংঘে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে ব্যাংককে শান্তির প্রস্তাব পাঠিয়েছে নমপেন। বলছে, সংঘর্ষের কোনো মানে নেই, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব। এ প্রস্তাবের জবাবে থাইল্যান্ড সাফ জানিয়ে দেয়, কম্বোডিয়ার আন্তরিকতা প্রমাণ করলেই হবে শান্তির আলোচনা।
এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই সংঘাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার ও আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন।
কাফি
আন্তর্জাতিক
ইতালির ব্যস্ত সড়কে বিমান বিধ্বস্ত, সব আরোহী নিহত

সড়কে ছুটছিল গাড়ি, ঠিক সে সময়ই আচমকাই মুখ থুবড়ে পড়ে ছোট আকারের একটি উড়োজাহাজ এবং সঙ্গে সঙ্গেই তাতে আগুন ধরে যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি এ দুর্ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবারের ওই দুর্ঘটনায় বিমানের চালক এবং তার সঙ্গিনী, অর্থাৎ একমাত্র যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। এ সময় ওই সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে আহত হয়েছেন দুটি গাড়ির চালকও। তবে তাদের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল।
উত্তর ইতালির লম্বার্দি প্রদেশের ব্রেসিয়া শহরের একটি হাইওয়েতে ঘটেছে এই কাণ্ড। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে ব্যস্ত সেই হাইওয়েতে প্রচণ্ড গতিতে আছড়ে পড়ে ইতালির একটি ফ্রেসিয়া আরজি আল্ট্রালাইট উড়োজাহাজ। ভিডিয়োতে দেখা গেছে যে রাস্তায় ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিমানটিতে আগুন ধরে গেছে।
বিমান বিধ্বস্তের পর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে বিমানের চালক সার্জিও রাভাগলিয়া (৭৫) এবং তার বান্ধবী অ্যান মারি ডি স্টেফানো’র (৬০)। সার্জিও পেশায় আইনজীবী এবং শৌখিন পাইলট ছিলেন। তিনি এবং অ্যান উভয়েই লম্বার্দির রাজধানী শহর মিলানের বাসিন্দা ছিলেন।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সড়কে বিমানটিকে জরুরিকালীন অবতরণ করানোর চেষ্টা করছিলেন পাইলট। কিন্তু তার পরিবর্তে বিমানটি ভেঙে পড়ে রাস্তায়। ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, দুর্ঘটনার মুহূর্তে জ্বলন্ত বিমানটির পাশ দিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে যাওয়া কয়েকটি গাড়ি। সেগুলোর মধ্যে দুটি গাড়ির চালক আহত হয়েছেন।
বিমান ভেঙে পড়ার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ এবং দমকলবাহিনী। যদিও ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বিমানটি। ব্রেসিয়া শহরের পাবলিক প্রসিকিউটর দপ্তর এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। বিমানটির রক্ষণাবেক্ষণের নথি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত জুন মাসে অহমদাবাদের লোকালয়ে ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। সেটির গন্তব্য ছিল লন্ডনের অদূরে গ্যাটউইক। ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ২৬০ জনের। নিহতদের মধ্যে বিমানটির যাত্রী ছিলেন ২৪১ জন।
আন্তর্জাতিক
গাজায় যুদ্ধবিরতি চাইছে না হামাস: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতি চাইছে না। তার মতে, হামাস আশঙ্কা করছে—যদি সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়, তবে এর পরিণতি তাদের জন্য ভয়াবহ হতে পারে।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প এ মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
ট্রাম্প বলেন, “আমরা শেষ কয়েকজন জিম্মির মুক্তি নিয়ে আলোচনা করছি। কিন্তু হামাস বুঝতে পারছে, সবাইকে ছেড়ে দিলে তাদের কী হবে। এ কারণেই তারা যুদ্ধবিরতিতে যেতে চাইছে না।”
তার এই বক্তব্যকে ঘিরে ধারণা করা হচ্ছে—যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল গাজা যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি নয়, বরং কেবল জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে একটি স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতি চায়।
তিনি আরও বলেন, “হামাস আসলে কোনো চুক্তিতে যেতে চায় না। আমার মনে হয় তারা মৃত্যুকেই বেছে নিচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক।”
ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার দায় ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের ওপরই পড়ে। তিনি জানান, এই গোষ্ঠীটিকে শিগগিরই ‘শিকার’ বানানো হবে।
এর আগের দিন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ জানান, হামাসের পক্ষ থেকে আন্তরিকতা না পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এই আলোচনায় নিজেদের ভূমিকা সীমিত করছে। তার ভাষায়, “হামাস এখনো কোনো প্রকৃত আগ্রহ দেখায়নি।”
ইসরায়েলও অনাগ্রহ প্রকাশ করে জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি আলোচনা থেকে নিজেদের প্রতিনিধি দলকে কাতার থেকে ফিরিয়ে এনেছে।
তবে হামাস যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থানে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টা সফল করতে তারা সবসময়ই আন্তরিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। তারা আরও দাবি করে, তাদের গঠনমূলক অবস্থানকে কাতার ও মিশর ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে।
কাফি
আন্তর্জাতিক
আয়া সোফিয়ায় দর্শনার্থীদের জন্য এআই নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু

পনেরো শতাব্দীর ইতিহাসের সাক্ষী হায়া সোফিয়া আজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি দিয়ে সজ্জিত। এর মাধ্যমে দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতা যেমন সমৃদ্ধ হচ্ছে, তেমনি নিশ্চিত হচ্ছে পবিত্রতা ও ঐতিহাসিক স্বাতন্ত্র্যের সুরক্ষা। ইস্তাম্বুল বিজয়ের পর হায়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করা হয়।
১৯৩৪ সালে তুর্কি মন্ত্রিসভার আদেশে এটি জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়। এরপর দীর্ঘ ৮৬ বছর পর, ২০২০ সালের ১০ জুলাই রাষ্ট্রপতির আদেশে এটি পুনরায় মসজিদ হিসেবে ইবাদতের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই স্থাপত্য, ইতিহাস এবং নিরাপত্তা রক্ষায় প্রযুক্তিনির্ভর নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
তুরস্কের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ভাক্ফ অধিদপ্তর স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক দর্শনার্থীদের জন্য নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং মসজিদের কাঠামোগত অখণ্ডতা বজায় রাখতে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ইস্তাম্বুল ভাক্ফ প্রথম অঞ্চলের উপপরিচালক লেভেন্ট চেতিন জানান, “হায়া সোফিয়াকে ইবাদতের জন্য পুনরায় চালু করা হয়েছে পাঁচ বছর আগে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৩০০ জন কর্মী নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা ও দর্শনার্থী ব্যবস্থাপনায় কাজ করছেন।”
তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া পূর্ণাঙ্গ দর্শনার্থী ব্যবস্থাপনার আওতায় গ্যালারি ফ্লোর দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও স্থাপত্য, মোজাইক ও অন্যান্য ঐতিহাসিক নিদর্শন রক্ষায় উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছে। দর্শনার্থী ও নামাজিদের প্রবেশপথ পৃথক হওয়ায় আর দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না।
চেতিন যোগ করেন, “এখন মসজিদে প্রবেশ ও প্রস্থান আগের তুলনায় অনেক সহজ হয়েছে। দর্শনার্থীরাও গ্যালারির ঐতিহাসিক শিল্পকর্মগুলো আরও নিবিড়ভাবে উপভোগ করতে পারছেন।
২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি চালু হওয়া নতুন অডিও গাইড ব্যবস্থায় ২৩টি ভাষায় ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মোজাইক, উসমানীয় পাঠাগার ও মুয়াজ্জিন মিম্বারসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাদান সম্পর্কে দর্শনার্থীরা নিজেদের মোবাইল হেডফোন বা যেকোনো হেডফোনে তথ্য শুনতে পারছেন।”
এর ফলে দর্শনার্থীরা নিজেদের মাতৃভাষায় বিস্তারিত ও মানসম্মত তথ্য পেয়ে যেমন উপকৃত হচ্ছেন, তেমনি মুসল্লিরাও পাচ্ছেন এক মনোযোগী ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ইবাদতের সুযোগ।
চেতিনের ভাষায়, “দর্শনার্থীদের প্রতিক্রিয়াও অত্যন্ত ইতিবাচক। ভিড় কমে যাওয়ায় মসজিদের পরিবেশ আরও প্রশান্ত ও সম্মানজনক মনে হয়।” নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যুক্ত করা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সমর্থিত নতুন প্রযুক্তি।
তিনি জানান, “এই সিস্টেম সম্ভাব্য হুমকি শনাক্ত করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সতর্কবার্তা দিতে পারে এবং নিরাপত্তাকর্মীদের তাৎক্ষণিক সহায়তা করে। ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, ফলে আগেভাগেই যেকোনো ঝুঁকি শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “কেউ যদি মসজিদের নিষিদ্ধ অংশে প্রবেশের চেষ্টা করেন, তাহলে সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের স্ক্রিনে বার্তা পাঠায়। এতে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়, যা মসজিদের গঠন রক্ষায় অত্যন্ত কার্যকর।” পুনরুদ্ধার কার্যক্রম সম্পর্কেও বিস্তারিত তুলে ধরেন চেতিন।
তিনি জানান, “আমরা ইতোমধ্যে সমাধি, সিবিয়ান মক্তব (উসমানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়) এবং মুবাককিথানা (সময় পরিমাপক কক্ষ) পুনরুদ্ধার করেছি।” ডিজিটাল টুইন তৈরির অংশ হিসেবে বৈজ্ঞানিক পরিষদ মসজিদের মূল গম্বুজ ও পার্শ্ব গম্বুজের কাঠামোগত স্থিতিশীলতা নিয়ে হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তাঁর ভাষায়, “গম্বুজে এবং পার্শ্ব গম্বুজে কাজ শুরু হয়েছে। সুলতান দ্বিতীয় বায়েজিদের মিনার পুনরুদ্ধার প্রকল্প প্রায় শেষ পর্যায়ে। ধাপে ধাপে আমাদের সব পুনরুদ্ধার কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।”
কাফি
আন্তর্জাতিক
অর্ধশত আরোহী নিয়ে রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, সবাই নিহত

রাশিয়ায় নিখোঁজ হয়ে যাওয়া আন-২৪ মডেলের যাত্রীবাহী বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে ৪৯ জন আরোহী সবাই প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় জরুরি পরিস্থিতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাইবেরিয়াভিত্তিক বিমান সংস্থা আঙ্গারার এএন-২৪ বিমানটি চীন সীমান্তবর্তী আমুর অঞ্চলের শহর টাইন্ডায় যাওয়ার পথে রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে বিমানটি নিখোঁজ বলে জানানো হলেও রাশিয়ান সংবাদ সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, আমুর অঞ্চলে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
রাশিয়ার তাস নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, অবতরণের সময় বিমানের ক্রুদের ভুল এবং দৃশ্যমানতার অভাবকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
আঞ্চলিক গভর্নর ভ্যাসিলি অরলভ জানিয়েছেন, বিমানটিতে পাঁচ শিশুসহ ৪৩ জন যাত্রী এবং ৬ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। যদিও জরুরি পরিস্থিতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে আরোহীর সংখ্যা ছিল ৪০ জন।