অর্থনীতি
সামিট সিন্ডিকেটের কবজায় দেশের ইন্টারনেট খাত!

বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেওয়ার কারণে ইন্টারনেট সেবার একক কর্তৃত্ব হারিয়েছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস পিএলসি (বিএসসিপিএলসি)। একসময় একক নিয়ন্ত্রণ থাকলেও বর্তমানে দেশের চাহিদার অর্ধেকেরও কম ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। বাকি অর্ধেকের বেশি সরবরাহ করে বেসরকারি ৭টি কোম্পানি। যদিও দেশের চাহিদার চেয়ে বেশি সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটির।
জানা গেছে, দেশে বর্তমানে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৬ হাজার জিবিপিস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথের চাহিদা রয়েছে। আর বিএসসিপিএলসি দুটি সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার ৭০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করছে। অথচ কোম্পানিটির সক্ষমতা রয়েছে প্রায় ৭ হাজার ২০০ জিবিপিএস। অন্যদিকে, আইটিসির লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৭টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করছে ৩ হাজার ৩০০ জিবিপিএস। যার শুধু সামিটই সরবরাহ করে ৮০ শতাংশ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে বিএসসিপিএলসির অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে প্রায় ৫ হাজার জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ। সরকার হারাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব।
সক্ষমতা থাকার পরও কেন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যান্ডউইথ বিক্রি কমে যাচ্ছে—এর কারণ অনুসন্ধানে গিয়ে জানা গেছে, বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং ‘কাছের লোকদের’ মালিকানাধীন কোম্পানিকে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়। ফলে সরকারি কোম্পানিটির সরবরাহের পরিমাণ অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে সামিট। আমদানি থেকে শুরু করে গ্রাহক পর্যায় পর্যন্ত ইন্টারনেট সরবরাহের সব ধরনের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে আলোচিত এই কোম্পানিকে। সরকারি কর্মকর্তারাই এই সুযোগ করে দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ আমদানি করে ইন্টারনেট সেবা দিয়ে আসছিল বিএসসিপিএলসি। অন্যদিকে, ইন্টারন্যাশনাল টেরিসট্রিয়াল কেবল (আইটিসি) লাইসেন্স নিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ আমদানি করে। কোনো কারণে সাবমেরিন কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হলে শুধু এর বিকল্প হিসেবে সামিটসহ ৭টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আইটিসি লাইসেন্স দেওয়া হলেও বর্তমানে বেসরকারি কোম্পানিগুলোই নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের ইন্টারনেট ব্যবসা।
এমনকি লভ্যাংশ প্রদানেও বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বিটিআরসির রেভিনিউ শেয়ারিং নীতিমালায় সাবমেরিন কেবল লাইসেন্সের ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে লভ্যাংশের ৩ শতাংশ রাজস্ব দেওয়ার বিধান থাকলেও বেসরকারি আইটিসিদের জন্য সেটা মাত্র এক শতাংশ। দেশের বেশিরভাগ ব্যান্ডউইথ সরবরাহকারী সামিটকে বিশেষ সুবিধা দিতেই এটা করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দেশের ইন্টারনেট ব্যবসা মূলত সামিটের নেতৃত্বাধীন বেসরকারি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দখলে চলে যায়। এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএসসিপিএলসিকেও সামিটের ওপর নির্ভরশীল করা হয়েছে। এই নির্ভরশীলতা কমাতে গত বছর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের অনুপাত ৭০:৩০ নির্ধারণের অনুরোধ জানায় বিএসপিএলসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এ বিষয়ে এখানো কোনো অগ্রগতি হয়নি।
প্রয়োজন না থাকলেও বেসরকারি খাতে সাবমেরিনের লাইসেন্স: বিএসসিপিএলসির সক্ষমতা বাড়াতে নতুন করে হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করে তৃতীয় সাবমেরিন কেবল সিমিউই-৬ প্রকল্প চলমান রয়েছে, যা ২০২৫ সালে শেষ হবে। এর মধ্য দিয়ে বিএসসিপিএলসি প্রায় ১৩ হাজার ২০০ জিবিপিএস অতিরিক্ত ব্যান্ডউইথ সক্ষমতা অর্জন করবে। মোট ব্যান্ডউইথ ক্ষমতা দাঁড়াবে ২০ হাজার ৪২০ জিবিপিএসর বেশি, যা বর্তমান চাহিদার তিন গুণেরও বেশি।
এদিকে, সাবমেরিন কেবল পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণে বছরে ৫০-৬০ কোটি টাকা খরচ হয়। তৃতীয়টি চালু হলে খরচ হবে প্রায় শতকোটি টাকা। ব্যান্ডউইথ বিক্রি করে এই ব্যয় মেটানো হয়। ব্যান্ডউইথ বিক্রি না হলে পরিচালন ব্যয় উঠে আসাই চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
এর পরও সামিটসহ তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ব্যন্ডউইথ আমদানির জন্য সাবমেরিন কেবলের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। লাইসেন্স পাওয়া তিনটি কোম্পানি সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেড, সিডিনেট কমিউনিকেশন্স লিমিটেড ও মেটাকোর সাবকম লিমিটেড। তৃতীয় সাবমেরিন কেবল চালু হলে যেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদার প্রায় তিন গুণ সক্ষমতা বাড়বে, সেখানে বেসরকারি খাতে সাবমেরিন কেবলের লাইসেন্স দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
সাবমেরিন কেবলের লাইসেন্স পাওয়া কোম্পানির মধ্যে সামিট কমিউনিকেশন্সের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ফরিদ খান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের ছোট ভাই। মেটাকোর সাবকম কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক এবং সিডিনেটের পরিচালক হিসেবে আছেন চৌধুরী নাফিজ সারাফাত। বর্তমানে এই তিনটি কোম্পানির অনুকূলে বিএসসিপিএলসির কেপিআইভুক্ত নিজস্ব জমি এবং সাবমেরিন কেবলের পিভিসি ডাক্ট লিজ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বিএসসিপিএলসির সাবেক এবং বর্তমান কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
জানা গেছে, গত ২৪ জুলাই বিএসসিপিএলসির কক্সবাজার ল্যান্ডিং স্টেশনের জমি এবং সাবমেরিন কেবলের পিভিসি ডাক্ট লিজ নিতে আবদার করে চিঠি পাঠায় প্রাইভেট তিন সাবমেরিন কেবল কোম্পানি। কিন্তু কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই অনুমোদন করতে তড়িঘড়ি করে ৭ দিনের মধ্যে বিএসসিপিএলসির ২২৮তম পর্ষদ সভায় প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। যদিও সরকার পতনের পর সেটা আর সম্ভব হয়নি।
টেলিকম ও ইন্টারনেট খাতে সামিটের আধিপত্য
২০০৯ সালে আত্মপ্রকাশের পরে টেলিকম ও ইন্টারনেট অবকাঠামো খাতে দেশে সবচেয়ে বড় কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে সামিট কমিউনিকেশন। কোম্পানিটির হাতে রয়েছে টাওয়ারের ব্যবসা, আইআইজি, আইটিসি, এনটিটিএন আর সবশেষে সাবমেরিন কেবলের লাইসেন্স। সব ধরনের লাইসেন্স থাকায় সামিট গ্রাহককে আইটিসি থেকে ব্যান্ডউইথ কিনতে বাধ্য করছে। সামিট ব্যান্ডউইথ এবং অপটিক্যাল ফাইবারের মিশ্রণে প্যাকেজ সেবার সুযোগ নিচ্ছে। এনটিটিএন লাইসেন্স থাকায় আইটিসি থেকে আগত ব্যান্ডউইথ আইআইজি পর্যন্ত সামিট নিজেই নিয়ে যেতে পারে। বিএসসিপিএলসির এনটিটিএন লাইসেন্স না থাকার সুবিধা গ্রহণ করছে সামিট। এসবের মধ্য দিয়ে ইন্টারনেট সিস্টেমের প্রতিটি খাতের লাইসেন্স সামিটকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দিয়ে একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, গত নভেম্বরে বিএসসিপিএলসি পাওনা বকেয়া থাকার কারণে ১৯টি আইআইজি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যান্ডউইথ সীমিত করে। এ কারণে দেশের ব্যান্ডউইথের প্রায় ৫০ শতাংশ প্রভাবিত হয় এবং গ্রাহকদের প্রায় ৪ দিন সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আসলে এই পুরো বিষয়টি বিএসসিপিএলসি এবং বিটিআরসির যোগসাজশে ঘটানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আইআইজি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যান্ডউইথ সীমিত করার পেছনে যৌথভাবে কাজ করেছেন আইসিটি সচিব ও সামিট। সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান বিগত সময়ের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী আজিজ খান এবং সামিট কমিউনিকেশন্সের চেয়ারম্যান ফরিদ খানের নির্দেশনা এবং পরামর্শে সামিটের প্রতিযোগী আইআইজিদের একটি তালিকা তৈরি করে সচিব বরাবর পাঠানো হয়। এরপর বিএসসিপিএলসি বোর্ড সভায় নিজ ক্ষমতাবলে সব আইআইজির ব্যান্ডউইথ সীমিত করার আদেশ দেন আইসিটি সচিব। মূলত সামিটের রাজনৈতিক চাপে ব্যান্ডউইথ সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসসিপিএলসি। এ ছাড়া সরকারি তিনটি প্রতিষ্ঠানের এনটিটিএন লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও কার্যত অকেজো করে রাখা হয়েছে। যাতে এনটিটিএন ব্যবসা সামিট এবং আরেক আইটিসি লাইসেন্সধারী ফাইবার এট হোম নির্দ্বিধায় করতে পারে।
ব্যক্তিস্বার্থে প্রাইভেট কোম্পানিকে বিশেষ সুবিধা: বিএসসিপিএলসির এবং বিটিআরসি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিজেদের স্বার্থে বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানির কাছে স্পর্শকাতর তথ্য পাচার করে বলে অভিযোগ উঠেছে। তথ্য পাচারের বিপরীতে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে থাকে। বিএসসিপিএলসির এবং বিটিআরসি তথ্য পাচারের অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এবং বর্তমান এমডির বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সামিট সিন্ডিকেটকে সাবমেরিন লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে বিটিআরসির কর্মকর্তারাও জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। লাইসেন্স দেওয়ার পুরস্কার হিসেবে চলতি বছরের মার্চে বিটিআরসির চার কর্মকর্তা সামিট সিন্ডিকেটের অর্থে সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করেন।
জানা গেছে, গত ২৪ জুলাই বিএসসিপিএলসির কক্সবাজার ল্যান্ডিং স্টেশনের জমি এবং সাবমেরিন কেবলের পিভিসি ডাক্ট লিজ নিতে আবদার করে চিঠি পাঠায় প্রাইভেট তিন সাবমেরিন কেবল কোম্পানি। কালবেলার হাতে আসা নথি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ল্যান্ডিং স্টেশনের ৩০-৩৩ শতাংশ জমি এবং একটি চার ইঞ্চির পিভিসি ডাক্ট লিজ নিতে চায় কোম্পানি তিনটি। এজন্য সুনির্দিষ্ট করে পিভিসি ডাক্টের অব্যবহৃত দুটি ডাক্টের কথা উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু মাটির নিচে থাকা এই ডাক্টের কথা বিএসসিপিএলসি কর্তৃপক্ষ ছাড়া কেউ জানার কথা নয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, সাবমেরিনের লাইসেন্স পাওয়া সামিট সিন্ডিকেটের আরেক কোম্পানি সিডিনেট কমিউনিকেশনের সিইও মশিউর রহমান ছিলেন বিএসসিপিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। তা ছাড়া প্রাইভেট খাতে সাবমেরিন কেবলের লাইসেন্স দেওয়ার অন্যতম ক্রীড়ানকও ছিলেন তিনি। লিজ চাওয়া চিঠিতেও কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে তার নাম রয়েছে।
কোম্পানি সূত্র জানায়, প্রাইভেট কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দিতে মশিউর রহমান তার মেয়াদকালে সিমিউই-৪ প্রকল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি অনুমোদন করতে চাননি। শুধু তাই নয়, চার বছরেরও অধিক সময় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে থাকায় বিএসসিপিএলসির সব তথ্যই তিনি জানেন। যার পুরস্কার হিসেবে অবসর গ্রহণের পরপরই তাকে সাবমেরিন কেবলের লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সিডিনেটের সিইও পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক এমডি মশিউর রহমান বলেন, যখন বেসরকারি কোম্পানিকে সাবমেরিনের লাইসেন্স দেওয়া হয় তখন তিনি ছিলেন না, এর সঙ্গে তিনি জড়িত নন। তিনি বলেন, অবসর গ্রহণের পর সিডিনেটে তিনি নিয়োগ পান, তবে সেটা কোনো অনৈতিক সুবিধার কারণে নয়। বিএসসিপিএলসির জমি এবং ডাক্ট লিজে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন করে সাবমেরিন কেবল লাইন স্থাপনের জন্য অনেক টাকা খরচ হবে। সে ক্ষেত্রে আমরা সামিটের সঙ্গে মিশে বিএসসিপিএলসির জমি এবং ডাক্ট লিজ চেয়েছিলাম। যদিও এই প্রস্তাব ছিল সামিটের। সামিট তৎকালীন আইসিটি প্রতিমন্ত্রীকে দিয়ে এটা অনুমোদন করাতে চেয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।
নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করলেও সামিটের একক আধিপত্যের কথা স্বীকার করে সিডিনেটের এই সিইও বলেন, সামিট একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যাদের ইন্টারনেটের সব ধরনের লাইসেন্স রয়েছে। যে কারণে এ খাতে এখন আর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। সাবমেরিনেরও লাইসেন্স পাওয়ায় এখন তাদের আধিপত্য আরও বেড়ে গেছে। সব ধরনের লাইসেন্স থাকায় তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কেউ পারবে না। এটার দায় বিটিআরসিসিও এড়াতে পারে না।
ক্ষতির মুখে সরকারি প্রতিষ্ঠান
জানা গেছে, সিমিইউ-৪ এবং সিমিইউ-৫ এই দুই কেবলের বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকা। আর সিমিইউ-৬ চালু হলে এই ব্যয় বেড়ে হবে ৯০-১০০ কোটি টাকা, যা বিএসসিপিএলসি ব্যান্ডউইথ বিক্রির আয় থেকে পরিশোধ করে। ব্যান্ডউইথ অব্যবহৃত রয়ে গেলে পরিচালন ব্যয় উঠে আসাই চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। এ ছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত লাভজনক সরকারি প্রতিষ্ঠানটিতে শেয়ারের প্রায় ২৭ শতাংশের মালিকানায় রয়েছেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। ব্যবসা ক্রমাগত হারাতে থাকলে কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। লভ্যাংশ প্রদানের সক্ষমতা কমবে।
এমআই

অর্থনীতি
অপ্রচলিত বাজারে বেড়েছে রপ্তানি, নতুন বাজারে নজর দেওয়ার পরামর্শ

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি খাতে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে এ খাতে দেশের মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশে অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যখন বিশাল চ্যালেঞ্জ তৈরি করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তখন বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে অপ্রচলিত বাজার। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বলছে, অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। অবশ্য সার্বিকভাবে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়লেও রাশিয়া, ইউএই, মালয়েশিয়ার মতো বাজারে কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ। আর তাই, নতুন বাজারে আরও মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা।
ইপিবির প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এখনও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে এই বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ১৯ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের মোট আরএমজি রপ্তানির ৫০ দশমিক ১০ শতাংশ।
অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রপ্তানির ১৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। কানাডা ও যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয়েছে যথাক্রমে ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার এবং ৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
আলাদাভাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ইইউ বাজারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং কানাডায় ১২ দশমিক ০৭ শতাংশ। এছাড়া যুক্তরাজ্যে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানি, যেখান থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। এরপর তালিকায় যথাক্রমে রয়েছে স্পেন (৩ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার), ফ্রান্স (২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার), নেদারল্যান্ডস (২ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার), পোল্যান্ড (১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার), ইতালি (১ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার) এবং ডেনমার্ক (১ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার)।
কিছু ইউরোপীয় দেশে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যেমন নেদারল্যান্ডসে ২১ দশমিক ২১ শতাংশ, সুইডেনে ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ, পোল্যান্ডে ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং জার্মানিতে ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
এদিকে নন-ট্র্যাডিশনাল বা অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের সার্বিক আরএমজি রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ; মোট রপ্তানি আয় এসেছে ৬ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এই বাজারে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত। এর মধ্যে তুরস্কে রপ্তানি বেড়েছে ২৫ দশমিক ৬২ শতাংশ, ভারতে রপ্তানি বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং জাপানে রপ্তানি বেড়েছে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।
তবে, উদ্বেগ তৈরি হয়েছে রাশিয়া, কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালয়েশিয়ায় বাজার ঘিরে। বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে এ বাজারগুলোতে। এর মধ্যে রাশিয়ায় রপ্তানি আয় ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১০ দশমিক ৯৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২৩২ মিলিয়ন ডলারে এবং মালয়েশিয়ায় ১১ দশমিক ২১ শতাংশ কমে ১৮৯ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে রপ্তানি আয়। তবে এসব অঞ্চলে আবারও প্রবেশের সুযোগ রয়েছে যদি বাংলাদেশ সুনির্দিষ্ট কৌশল গ্রহণ করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু কম দামে পোশাক সরবরাহ করে এ বাজারে টিকে থাকা যাবে না। বরং উচ্চ মানসম্পন্ন ও নতুন ডিজাইনের পোশাক, টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা এবং সাশ্রয়ী অথচ পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়া— এসবই হতে হবে ভবিষ্যতের মূল প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের চাহিদা ও বাস্তবতা দ্রুত বদলে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। ট্র্যাডিশনাল বাজারগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি এখনও শক্ত অবস্থানে রয়েছে, যেখানে মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ৮৪ শতাংশই এই বাজার থেকে আসে। তবে, নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারের অংশীদারিত্ব এখনো তুলনামূলক কম, যা মাত্র ১৬ শতাংশ।
ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের (আইটিসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক পোশাক বাজারের আকার ছিল প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারের আকার ছিল প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারে ৬ শতাংশ অংশীদারিত্ব ধরে রেখেছে, যেখানে আরও বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৪ সালে জাপানের মোট পোশাক আমদানির ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ার মোট আমদানির ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ হয়েছে বাংলাদেশ থেকে; যা ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক সম্ভাবনা নির্দেশ করে।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক বাজারে টিকে থাকতে হলে নতুন বাজার ও নতুন পণ্যের দিকে মনোযোগী হতে হবে। নতুন বাজারে প্রবেশ এবং উদ্ভাবন শুধু কৌশলগত বিষয় নয়, এটি বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একটি অপরিহার্যতা। আমাদের এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বাজার বৈচিত্র্য এবং সম্প্রসারণের দিকে এগোতে হবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, অগ্রগতি ধরে রাখতে আমাদের পণ্য উদ্ভাবন, বৈচিত্র্য ও চাহিদা অনুযায়ী বাজারভিত্তিক নতুন ডিজাইন এবং পণ্য উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে। এছাড়া অপ্রচলিত দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সুবিধা সম্প্রসারণে এফটিএ বা পিটিএ চুক্তি করা যেতে পারে। বাংলাদেশি পোশাককে ‘গুণগত মান ও ন্যায্যমূল্যের প্রতীক’ হিসেবে তুলে ধরতে হবে।
অর্থনীতি
ঘরে বসেই যেভাবে পাবেন টিআইএন সার্টিফিকেট

করদাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশের প্রথম ধাপ হচ্ছে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন। ই-টিআইএন সার্টিফিকেট (ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর) পাওয়ার পরপরই করদাতাকে সাধারণত প্রতি করবর্ষে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। যদিও ব্যতিক্রমও আছে।
শুধু ব্যবসা বা চাকরিজীবীদের জন্য নয়, অনেকগুলো কারণে ই-টিআইন সার্টিফিকেট প্রয়োজন রয়েছে। সরকারি-বেসকারি ৫০ এর বেশি সেবা বা কাজে টিআইএন প্রয়োজন রয়েছে।
যার মধ্যে রয়েছে- পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে যেমন- ঋণপত্র স্থাপন; রপ্তানি নিবন্ধন সনদ নেওয়া; সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া বা পুনর্নিবন্ধন; দরপত্র জমা; অভিজাত ক্লাবের সদস্যপদ গ্রহণ; বিমা জরিপ প্রতিষ্ঠান; জমি, ভবন ও ফ্ল্যাট নিবন্ধন; মোটরসাইকেল-বাস-ট্রাকের মালিকানা পরিবর্তন ও ফিটনেস নবায়ন; চিকিৎসক, প্রকৌশলী, হিসাববিদসহ বিভিন্ন ধরনের পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য; কোম্পানির পরিচালক ও স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার; বিবাহ নিবন্ধনকারী বা কাজি ও ড্রাগ লাইসেন্সধারী ইত্যাদি ক্ষেত্রে টিআইএন সার্টিফিকেট প্রয়োজন।
গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ নিতেও টিআইএন বাধ্যতামূলক, মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসা; মোবাইল ব্যাংকিং; পরিবেশক এজেন্সি; বিভিন্ন ধরনের পরামর্শক, ক্যাটারিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, জনবল সরবরাহ, সিকিউরিটি সার্ভিস। এমনকি আমদানি-রপ্তানির বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে হলেও টিআইএন প্রয়োজন।
অন্যদিকে জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলেও টিআইএন বাধ্যতামূলক। এছাড়া রয়েছে বাণিজ্যিক ভবনের নকশা অনুমোদনে; বাণিজ্য সংগঠনের সদস্য; ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিলে; সঞ্চয়পত্র ক্রয়, ক্রেডিট কার্ড থাকলে; বাণিজ্যিক গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংযোগ চাইলে টিআইএন থাকতে হবে। আবার ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে চাইলে অভিভাবকের টিআইএন প্রয়োজন।
এছাড়া সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কিংবা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের যাদের মূল বেতন ১৬ হাজার টাকার বেশি তাদেরও কর শনাক্তকরণ সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের করযোগ্য আয়ধারী কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও টিআইএন বাধ্যতামূলক। যদিও তাদের শুধু টিআইএন নিলে হয় না, আয়কর রিটার্নও জমা দিতে হয়।
এছাড়া সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন নিতেও টিআইএন নিতে হয়। এমনকি রাইড শেয়ারিং যেমন- উবার বা পাঠাও অংশীদার হতে হলে কিংবা অনলাইনে ইনকাম, যেমন- ফেসবুক থেকে আয় করতে চাইলে, ইউটিউব থেকে ইনকাম করতে চাইলে, ফ্রিল্যান্সিং করতে চাইলেও ই-টিআইন সার্টিফিকেট প্রয়োজন রয়েছে বলে জানা গেছে।
বর্তমানে ঘরে বসে অনলাইনেই সহজে পাওয়া যাচ্ছে ই-টিআইএন সার্টিফিকেট। করদাতা নিবন্ধন পেতে আপনাকে কর অফিসে যেতে হবে না।
টিআইএন সার্টিফিকেট আবেদন করতে কী কী প্রয়োজন ও আবেদন করার ধাপ সমূহ হলো-
আবেদন করতে যা প্রয়োজন
টিআইএন সার্টিফিকেট আবেদন করতে একজন করদাতাকে জাতীয় পরিচয় পত্র, প্রবাসী হলে এনআইডি ও পাসপোর্ট, আবাসিক ঠিকানা, জেলা, বিভাগ, বায়োমেট্রিক করা মোবাইল নম্বর প্রয়োজন হবে। ওইসব তথ্য দিয়ে আবেদন করতে আপনাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের https://secure.incometax.gov.bd/TINHome এই ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে হবে।
আবেদন করার ধাপ সমূহ
ধাপ- ১:
যে কোনো করদাতাকে এনবিআরের ই-টিআইএন সার্ভারে প্রবেশ করার পর User ID এবং Password নিতে হয়। যা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ ওই আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে যে কোনো সময় ই-টিআইএন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন একজন করদাতা। User ID এবং Password নেওয়ার জন্য আবেদনকারীকে বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডের https://secure.incometax.gov.bd/TINHome সাইটে প্রবেশ করতে হবে। তারপর Register অপশনটিতে ক্লিক করলেই আপনাকে আবেদন করার পৃষ্ঠায় নিয়ে যাবে।
ধাপ-২:
এই পৃষ্ঠাতে আবেদনকারীকে অবশ্যই একটি একাউন্ট করে নিতে হবে। যা করদাতাকে ইংরেজি বর্ণমালায় টাইপ করতে হবে। শুরুতেই আপনাকে একটি ‘User Name’ দিতে হবে। এরপর পছন্দমতো পাসওয়ার্ড পাসওয়ার্ড দিতে হবে। এমন পাসওয়ার্ড দিবেন যেটা আপনার মনে রাখতে সুবিধা হয়। একইভাবে Retype Password এর যায়গায় একই পাসওয়ার্ড আবার লিখতে হবে।
এরপর Security Question এ কিছু অপশন আসবে যেমন আপনার জন্ম তারিখ কোথায়,আপনার জন্ম স্থান কোথায়, আপনার গ্রাম কোথায়, আপনার প্রিয় রং ইত্যাদি। আপনি এমন একটা অপশন নিবেন যাতে করে আপনার মনে থাকে। এটি পরবর্তী সময়ে লাগবে যখন আপনি User name কিংবা Password ভুলে যাবেন তখন এটি মনে রাখলে আপনি আপনার যাবতীয় ই-টিআইএন সম্পর্কিত তথ্য গুলো পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
ধাপ-৩
রেজিস্ট্রেশন হওয়ার পর https://secure.incometax.gov.bd/TINHome গিয়ে এবার লগইন (login) অপশনে প্রবেশ করে User name ও Password দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। এরপরই মূলত আবেদনকারীকে করদাতার ধরন, টিআইএন এর উদ্দেশ্য, আয়ের প্রধান উৎস, পেশার ধরন, পেশায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের লোকেশন ইত্যাদি পূরণ করতে হবে। নির্ভুলভাবে পূরণ করার পর পরবর্তী ধাপে যেতে হবে।
ধাপ-৪
ফরমপূরণের এই ধাপে একজন করদাতার ব্যক্তিগত সকল তথ্য দিতে হবে। যার মধ্যে রয়েছে করদাতার নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পিতা-মাতার নাম, মোবাইল নম্বর, স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা ইত্যাদি। পূরণকৃত তথ্য অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুরূপ হতে হবে। ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিলে ভবিষ্যতে হয়রানি শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর পরবর্তী ধাপে গেলে আপনার পূরণকৃত ফরমের একটি সামারি বা ছবি চলে আসবে। যেটা যাচাই করে সঠিক মনে হলে আবেদনকারীকে সাবমিট এপ্লিকেশন বোতামে ক্লিক করে টিআইএন সার্টিফিকেট সংগ্রহ বা প্রিন্ট করতে হবে। টিআইএন সার্টিফিকেট চাইলে সার্ভারে সেইফ বা সংরক্ষণ করতে পরবেন একজন করদাতা।
কাফি
অর্থনীতি
বিসিএমএ’র নতুন সভাপতি প্রিমিয়ার সিমেন্টের এমডি আমিরুল হক

দেশের সিমেন্টশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আমিরুল হক।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ঢাকায় বিসিএমএর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তাঁকে দুই বছরের জন্য সংগঠনটির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
এ ছাড়া সংগঠনের প্রথম সহসভাপতি হয়েছে কনফিডেন্স সিমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান মো. ইমরান করিম। সহসভাপতি হয়েছেন ইউনিক সিমেন্টের পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা।
বিসিএমএ জানায়, নবনির্বাচিত সভাপতি আমিরুল হক বিসিএমএর পাশাপাশি এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলওএবি) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চার দশক ধরে তিনি দেশে ব্যবসা–বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। পেট্রোকেমিক্যাল, শিপিং, বীজ প্রক্রিয়াকরণ ও ভোজ্যতেল শোধনাগার, আটার কল, চিংড়ি হ্যাচারি, ব্যাগ, স্যাক উৎপাদন, আবাসন খাতসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম চেম্বার ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন আমিরুল হক। দেশের শিল্প খাতে অবদানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তিনি একাধিকবার সিআইপিও নির্বাচিত হন।
সভাপতি, প্রথম সহসভাপতি ও সহসভাপতি ছাড়াও বিসিএমএর নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন সেভেন রিং সিমেন্টের তাহমিনা আহমেদ।
এ ছাড়া নির্বাহী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন হাইডেলবার্গ সিমেন্টের ট্যারেন্স ওএনজি, মীর সিমেন্টের শামা-ই-জহির, ডায়মন্ড সিমেন্টের আবদুল্লাহ ইফতেখার, এনজিএস সিমেন্টের অভিমুন্য সাহা ও আকিজ সিমেন্টের মো. মশিউর রহমান।
আমিরুল হকের আগে বিসিএমএর সভাপতি ছিলেন ক্রাউন সিমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলমগীর কবির। তিন দফায় দায়িত্ব পালনের পর নিয়ম অনুযায়ী নতুন সভাপতির হাতে সংগঠনের নেতৃত্ব তুলে দেন বিদায়ী সভাপতি।
অর্থনীতি
বাড়তি ব্রয়লার মুরগির দাম, মাছের বাজারে স্বস্তি

রাজধানীর কাঁচাবাজারে ফের বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। ঈদের পর দাম কমে গেলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এদিকে হঠাৎ করেই দামের এই ঊর্ধ্বগতিতে বিস্মিত হচ্ছেন ক্রেতারা। তবে মাছের বাজার কিছুটা স্থিতিশীল থাকায় সেখানেই কিছুটা স্বস্তি খুঁজছেন তারা। এদিকে গরু ও খাসির মাংসের দাম আগের মতোই রয়েছে, কিন্তু ঈদের রেশ না কাটায় সেখানে নেই তেমন বিক্রি।
শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে রাজধানীর রামপুরা-বনশ্রীসহ আশেপাশের একাধিক বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজারে এখন ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫–১৭০ টাকা কেজিতে। গত সপ্তাহেও সেটি ছিল ১৪৫–১৫০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ কেজিতে ১৫–২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সোনালি মুরগির দামও বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৮০ টাকা।
গত বছরের সেপ্টেম্বরেই কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ব্রয়লার মুরগির জন্য সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা দাম নির্ধারণ করেছিল। এক বছর না যেতেই আবার সেই দামের কাছাকাছি চলে এসেছে বাজার।
রামপুরা বাজার গিয়ে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগির দোকানে ভিড় অনেকটাই কম। মুরগির দোকানে দাঁড়িয়ে আছেন গৃহিণী হাসিনা আক্তার। পাশ থেকে হাঁক ডেকে বললেন, “ভাই, এই তো গত সপ্তাহে তো ১৫৫ টাকায় কিনেছি, আজকে হঠাৎ ১৭৫ বলছেন ক্যান? সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টাকা বাড়া কি স্বাভাবিক?” দোকানি মো. রিয়াজ উদ্দিন মুখে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে জবাব দিলেন, “ আমরা তো নিজেরা দাম বাড়াই না। ফার্ম থেকেই এখন ১৬০–১৬৫ টাকা পড়ছে। আমাদের যদি ১০ টাকা লাভ না থাকে, চলবে কীভাবে? আমরাও তো কষ্টে আছি।”
রেজাউল করিম নামের এক পোশাককর্মী বলেন, তিনদিন আগেও অফিসের পেছনের গলির দোকানে ১৫০ টাকা কেজি ছিল। আজ বলল ১৭০! বাসায় বাচ্চাদের জন্য কিনি, নিজেরা তো যা পাই তা দিয়েই চলে। এত দাম দিলে তো মুরগিও বাদ দিতে হবে!
তিনি বলেন, এতদিন মুরগি ১৪০-১৫০ টাকার মধ্যে ছিল, আমার মতে এটাই ছিল ব্রয়লার মুরগির স্বাভাবিক দাম। এই দামে থাকলে গরিব ধনী সবাই নিজেদের চাহিদা মতো খেতে পারবে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই হঠাৎ করে দাম কেন জানি বেড়ে যায়।
বাজার পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করছেন, ফার্ম ও পরিবহনপর্যায়ে একটি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। যদিও খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন—বর্ষা মৌসুমে সরবরাহে কিছুটা বিঘ্ন এবং ফিডের মূল্যবৃদ্ধিই দাম বাড়ার পেছনে মূল কারণ। মুরগি বিক্রেতা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, “দাম বাড়ছে ফার্ম থেকে। আমরা আগে যেখানে ১৪৫–১৫০ টাকায় কিনতাম, এখন সেখানে কিনতে হচ্ছে ১৬০–১৬৫ টাকায়। আমাদের যে খরচ, তাতে অন্তত ১৫ টাকা লাভ না রাখলে ব্যবসা টিকবে না। এই দামে বিক্রি করতেই বাধ্য হচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, কোনো কোনো গ্রাহক ভাবছেন আমরা ইচ্ছে করে দাম বাড়িয়েছি। কিন্তু আমরাও বিপদে। পরিবহন খরচ, শ্রমিক, দোকান ভাড়া—সবমিলিয়ে ন্যূনতম লাভেই চলছি।
বনশ্রী এ ব্লক এলাকার বাজারে গিয়ে দেখা গেলো সকালের মাছের বাজার অনেকটাই জমজমাট। মাছের দোকানগুলোতে তাজা রুই, কাতল, পাবদা সাজানো। দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানান, বর্তমানে বাজারে রুই ও কাতল বিক্রি হচ্ছে ৩০০–৩৪০ টাকা কেজিতে। পাবদা ৩৫০–৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০–৭০০, টেংরা ৬০০–৭০০, শিং ৪০০–৪৫০, কৈ ২০০–২২০ এবং তেলাপিয়া–পাঙ্গাস পাওয়া যাচ্ছে ১৮০–২০০ টাকায়। দেশি শিং ও কৈ মাছের দাম অবশ্য এখনও অনেক বেশি—প্রতি কেজি যথাক্রমে ১২০০ ও ১০০০ টাকা।
বাজার করতে আসা শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বললেন, আজকের বাজারে মুরগির দাম একটু বেড়েছে। গরু-খাসির দাম তো অনেক বেশি। সেই তুলনায় আমার মত নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য মাছ এখন সবচেয়ে ব্যালান্সড অপশন।
মাছ বিক্রেতা হুমায়ুন কবির বললেন, “ঈদের পর এখন লোকজন মাংস থেকে সরে মাছেই ঝুঁকছে। দামও বাড়েনি, আবার ভালো মাছ মিলছে, তাই বিক্রিও ভালো।”
শ্যামল মিয়া নামক আরেক বিক্রেতা জানান, মাংস-মুরগির বাজারে দাম বাড়ছে, আর আমরা মাছওয়ালারা একটু স্বস্তিতে আছি। রুই কাতল আগের মতোই আছে, তাই মানুষ আসছে। পাবদা, তেলাপিয়া ভালো যাচ্ছে।
এদিকে ঈদের এক সপ্তাহ পেরোলেও এখনও রাজধানীর অধিকাংশ পরিবারে কোরবানির মাংস আছে। সেই কারণে গরু, খাসি ও ছাগলের মাংসের দোকানগুলোতে এখনো ক্রেতার অভাব। রামপুরা বাজারের মাংস ব্যবসায়ী মো. কবির হোসেন বলেন, “ঈদের পর এমনটা হতেই পারে, তবে এবার একটু বেশি সময় ধরে লোকজন মাংস কিনছে না। দাম কমেনি—গরু ৭৫০–৭৮০, খাসি ১১০০ আর ছাগল ১০০০ টাকায় বিক্রি করছি। কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে। যারা কোরবানি দেয়নি, তারাও মাছ-মুরগিতে চলে গেছে।
অর্থনীতি
আজ ও আগামীকাল কাস্টম হাউজ খোলা

আজ শুক্র ও আগামীকাল শনিবার (১১-১২ জুলাই) ছুটির দুই দিন দেশের সব কাস্টম হাউজ খোলা থাকবে। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) কাস্টমস নীতির প্রথম সচিব মু রইচ উদ্দিন খানের সই করা নির্দেশনা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এতে বলা হয়, ধীরগতির কারণে গত কয়েকদিন দেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্যচালান ছাড় প্রক্রিয়া কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়।
এ অবস্থায় দেশের আমদানি- রপ্তানি বাণিজ্য নিরবচ্ছিন্ন রাখার উদ্দেশ্যে ১১-১২ জুলাই, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত কার্যক্রম চলমান রাখার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।