অর্থনীতি
শেয়ার কারসাজি: হিরুর পরিবারের ব্যাংক হিসাব তলব
পুঁজিবাজারের বহুল আলোচিত-সমালোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরু ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। যাদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, হিরুর বাবা আবুল কালাম মাদবর, ভাই মোহাম্মদ বাশার, বোন কনিকা আফরোজ ও হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান।
বুধবার (২ অক্টোবর) বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়ে ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য চেয়েছে। বিএফআইইউ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্টার আবুল খায়ের হিরুর বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে অসংখ্য কারসাজির অভিযোগ রয়েছে। কয়েকটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) একাধিক দফায় তাকে এবং তার পরিবারের সদস্যদেরকে জরিমানা করেছে।
সরকারি এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়েরও আভিযোগ আছে। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতেই তার নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বিএফআইইউ।
বিএফআইইউ’র চিঠিতে তলব করা ব্যক্তির নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেওয়া হয়েছে। লেনদেন তলব করার এ নির্দেশনার ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা সংশ্লিষ্ট ধারা প্রযোজ্য হবে বলে বিএফআইইউয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে।
বিএফআইইউয়ের নির্দেশনায় হিসাব তলব করা ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী চিঠি দেওয়ার তারিখ থেকে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউতে পাঠাতে বলা হয়েছে।
আবুল খায়ের হিরু ৩১তম বিসিএস সমবায়ের কর্মকর্তা। বছর পাঁচেক আগে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের কাছে খুব একটা পরিচিত ছিলেন না আবুল খায়ের হিরু। ২০২০ সালে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর মূলত তার প্রশ্রয়ে কারসাজিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন হিরু ও তার সহযোগীরা। তারা পুঁজিবাজার থেকে কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। হিরু শুধু নিজের বিনিয়োগ নয়, অনেক উর্ধতন সামরিক-বেসামরিক আমলা এবং রাজনৈতিক নেতার পোর্টফোলিও (তহবিল) পরিচালনা করতেন। ।
ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর কয়েকদিনের মধ্যে হিরুর প্রধান পৃষ্ঠপোষক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বিএসইসির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তার অন্য পৃষ্ঠপোষকদের কেউ কেউ আত্মগোপনে, কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
পাচার অর্থ উদ্ধারে নিয়োগ হচ্ছে আন্তর্জাতিক ল ফার্ম
দেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে আন্তর্জাতিক আইনি প্রতিষ্ঠান তথা ল ফার্ম নিয়োগ হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গতকাল এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। শিগগিরই ওই প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হবে। যোগ্য প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহায়তা নেবে বাংলাদেশ।
এদিকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার এবং অভিবাসন ব্যয় কমানোর জন্য সহায়তা চেয়ে সিঙ্গাপুরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বাংলাদেশে নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনার ডেরেক লো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রায় এক ঘণ্টার আলোচনায় অধ্যাপক ইউনূস রাষ্ট্রদূতকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশে প্রচুর অর্থ পাচার হয়েছে।
গতকাল গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে পর্ষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরানো ছাড়াও এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদে ফরেনসিক অডিটর নিয়োগের সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়েছে। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে বেক্সিমকো গ্রুপে রিসিভার নিয়োগ, ব্যাংকিং খাত সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্সের অনুমোদন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অডিট কমিটি পুনর্গঠনসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে অর্থনীতির সমসাময়িক বিষয়ের ওপর একটি উপস্থাপনা দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশ থেকে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশে। পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে এরই মধ্যে এসব দেশের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলমসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে তাদের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এখন সার্বিক সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ হবে। একই সঙ্গে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে আলাদা একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
প্রচলিত ব্যাংকে বন্ধ হচ্ছে ইসলামি ব্যাংকিং
খসড়া ‘ইসলামী ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ২০২৪’ অনুসারে—একটি ব্যাংক প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ইসলামি ব্যাংকিং চালিয়ে যেতে পারবে না। কেননা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক চায় প্রচলিত ও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর জন্য সমান ক্ষেত্র তৈরি হোক। গত জুন পর্যন্ত ৩০ প্রচলিত ব্যাংক তাদের ৩৩ শাখা ও ৬৮৮ উইন্ডোর মাধ্যমে ইসলামি ব্যাংকিং সেবা দিয়ে এসেছে।
আইন কার্যকর হলে ব্যাংকগুলোকে ব্যবসার ধরন পরিবর্তন করতে হবে অথবা ইসলামি ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার জন্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান গঠন করতে হবে।
খসড়া আইন তৈরি কমিটির প্রধান বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রচলিত ব্যাংকগুলো যদি ইসলামি ব্যাংকিং সেবা দেয়, তাহলে প্রচলিত ও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর জন্য সমান সুযোগ থাকে না।’
বিশ্বব্যাপী এই প্রথা চললেও কয়েকটি দেশে ইসলামি ব্যাংকিং রাখার নিয়ম আছে।
প্রচলিত ও ইসলামি ব্যাংকিংয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য সুদ। প্রচলিত ব্যাংকগুলো সুদ দেয় বা নেয়। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো মুনাফা ভাগাভাগি করে।
১৯৮৩ সালে দেশে শুরু হওয়া শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং আইন বা কার্যকর দিকনির্দেশনা ছাড়াই দ্রুত জনপ্রিয় হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই খসড়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতের মোট সম্পদের ২৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ, আমানতের ২৬ দশমিক ২৩ শতাংশ ও বিনিয়োগের ২৮ দশমিক ২৪ শতাংশ ইসলামি ব্যাংকিংয়ের।
বর্তমানে শরিয়াহভিত্তিক ১০টি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক আছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি ব্যাংক সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অনিয়ম ও আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘খসড়া তৈরির কমিটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদ্যমান বিধান ও অন্যান্য দেশে ইসলামি ব্যাংকগুলোর আইন পর্যালোচনা করে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খসড়াটি তৈরি করছে।’
গত ৯ অক্টোবর গভর্নর অনুমোদিত খসড়াটির ওপর মতামত নিচ্ছে ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বর্তমানে যে ৩০ প্রচলিত ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে, আইন কার্যকর হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে সেগুলোকে লিখিতভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তাদের পছন্দের ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে জানাতে হবে।
এরপর ব্যাংকগুলো পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংক হতে অথবা শরিয়াহভিত্তিক কার্যক্রম বন্ধ করতে তিন বছর সময় পাবে। বিশেষ ক্ষেত্রে মেয়াদ এক বছর বাড়ানো যেতে পারে।
তবে দায় পরিশোধ না হওয়া বা আমানত ও ঋণের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকগুলো অন্য ধরনের ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালিয়ে যেতে পারবে।
এই আইনে নিবন্ধিত হওয়া ইসলামি ব্যাংকের নামে ‘ইসলাম’ শব্দটি ব্যবহার করতে হবে।
ইসলামি ব্যাংকিং সেবা দেওয়া ছাড়া অন্য উদ্দেশ্যে সহযোগী প্রতিষ্ঠান গঠন বা সহযোগী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের উদ্দেশ্যে ইসলামি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে থাকা শেয়ার কিনতে পারবে না।
আইনের অধীনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শরিয়াহ উপদেষ্টা পর্ষদ গঠন করবে।
যে ব্যবসায় শরিয়াহর অনুমতি নেই, সেখানে ইসলামি ব্যাংক জড়িত হবে না।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা আইনটিকে স্বাগত জানাই। এটি দরকার। তবে প্রচলিত ব্যাংকগুলোর ইসলামি ব্যাংকিংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার এটা সঠিক সময় নয়।’
দু-তিনটি ব্যাংক ছাড়া শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা ভালো নয়।
তিনি আরও বলেন, ‘এ অবস্থায় বিধিনিষেধ দেওয়া হলে প্রচলিত ব্যাংকের (শরিয়াহ শাখা বা উইন্ডো) গ্রাহকরা উপযুক্ত বিকল্প পাবেন না। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
এখন ইসলামি ব্যাংকিং শাখা ও উইন্ডো পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংকগুলোর চেয়ে ভালো করছে বলে মনে করেন তিনি।
তার ভাষ্য, ‘স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের মতো বিদেশি ব্যাংক প্রচলিত ও ইসলামি ব্যাংকিং দুটোই চালু রেখেছে। যদি আলাদাভাবে হিসাব রাখা যায় তাহলে ইসলামি ব্যাংকিংয়ে সমস্যা নেই।’
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বাধা দেওয়ার চেয়ে নির্দেশিকা ও তদারকি গুরুত্বপূর্ণ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘দেশে প্রচলিত ব্যাংকগুলো যখন দেখল বেশি মুনাফা ও গ্রাহক পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তখন তারা ইসলামি ব্যাংকিং শাখা ও উইন্ডো খুলে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব ধারাসহ আইন পাস হলে ব্যাংকগুলো বিশেষ দিকে মনোযোগ দেবে। তাদের বিনিয়োগও বাড়বে। প্রাথমিকভাবে তা ইতিবাচক।’
তার মতে, ‘দীর্ঘ সময় বাধা দেওয়া উচিত নয়। যখন বাধা থাকবে না তখন সেবার মান ও প্রতিযোগিতা বাড়বে।’
প্রতিযোগিতা না থাকলে সেবার মান খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
‘অর্থনীতির আকার বিবেচনায় দেশে অনেক ব্যাংক থাকায় কয়েকটি ব্যাংক একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ বা অবসায়ন প্রক্রিয়ার আওতায় আসতে পারে’ বলেও মনে করেন তিনি।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ই-রিটার্ন জমা আড়াই লাখ ছাড়ালো
২০২৪-২০২৫ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিল ও কর পরিশোধ পদ্ধতি সহজীকরণের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেম উন্মুক্ত করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা সহজে এবং দ্রুত তাদের রিটার্ন তৈরি করে অনলাইনে দাখিল করতে পারছেন।
রবিবার (১০ নভেম্বর) এনবিআরের জনসংযোগ দপ্তর জানিয়েছে করদাতাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এরই মধ্যেই ই-রিটার্ন ব্যবহার করে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের জন্য রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা ১০ লাখ ৫০ হাজার ও অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা দুই লাখ ৫০ হাজার অতিক্রম করেছে।
এনবিআর জানায়, এ সিস্টেমের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কার্ড পেমেন্ট (ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড) ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করদাতারা কর পরিশোধ করতে পারছেন এবং দাখিলকৃত রিটার্নের কপি, প্রাপ্তি স্বীকারপত্র, আয়কর সনদ, টিআইএন সনদ ডাউনলোড ও প্রিন্টের সুবিধা পাচ্ছেন।
এছাড়া আগের বছরের দাখিলকৃত ই-রিটার্ন ডাউনলোড ও প্রিন্ট করতে পারছেন। এরই মধ্যেই সব মন্ত্রণালয়/বিভাগে কর্মরত কর্মচারীদের অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল কার্যক্রমে সার্বিক সহায়তা দেওয়ার জন্য সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ থেকে ২ জন করে আইটি দক্ষতাসম্পন্ন প্রতিনিধির প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
এছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উদ্যোগে সব তফশিলি ব্যাংক সব মোবাইল টেলিকম সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং কয়েকটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির প্রায় ১৬০০ জন প্রতিনিধিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার আয়োজন করা হয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বেক্সিমকো গ্রুপে রিসিভার নিয়োগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
বেক্সিমকো গ্রুপের সব সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রিসিভার হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. রুহুল আমিনকে নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রবিবার (১০ নভেম্বর) বেক্সিমকো গ্রুপের সব সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে আয়োজিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপের জন্য সহকারী রিসিভার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন- সিএফএ অতিরিক্ত পরিচালক ড. সুমন্ত সাহা, যুগ্ম পরিচালক মো. নাহিম উদ্দিন এবং উপ-পরিচালক মো. আতিউর রহমান।
এর আগে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর বেক্সিমকো গ্রুপ অব কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা এবং এর সব সম্পদ জব্দের (ক্রোক) জন্য রিসিভার নিয়োগ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, গ্রুপটির মালিক সালমান এফ রহমানের বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে ব্যাংকটিকে চার সপ্তাহের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
আইনি পরিভাষায়, রিসিভার হলেন একজন স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তি, যাকে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি, সাধারণ সম্পদ বা ব্যবসার কার্যক্রমের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আদালত, সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা অথবা ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান রিসিভার নিয়োগ দিতে পারে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
৯ দিনে রেমিট্যান্স এলো ৭ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরু থেকেই ধারাবাহিক বাড়ছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। প্রথম মাস জুলাইয়ে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তার পরের মাসগুলোতে কিছুটা করে বেড়েছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ। সেপ্টেম্বরের মতো সদস্য বিদায়ী অক্টোবর মাসেও প্রবাসী আয়ের গতি ঊর্ধ্বমুখী ছিল। অক্টোবরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২৪০ কোটি ডলার।
চলতি মাস নভেম্বরেও রেমিট্যান্সের গতি প্রবাহ ভালো। নভেম্বরের প্রথম ৯ দিনে এসেছে ৬৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে) এর পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। এ সময়ে প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৮৭৩ কোটি টাকার বেশি প্রবাসী আয়।
রবিবার (১০ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি মাস নভেম্বরের ৯ দিনে এসেছে ৬৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। এর মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে প্রায় ২০ কোটি ডলার। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩ কোট ১৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪২ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এছাড়া ১৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার এসেছে বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে।
তবে এ সময়ের মধ্যে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি এমন ব্যাংকের সংখ্যা ১১টি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাবাক)। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও সীমান্ত ব্যাংক। এছাড়া বিদেশি খাতের মধ্যে রয়েছে ব্যাংক আল-ফালাহ, হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
এর আগে আগের মাস সেপ্টেম্বরের পুরো সময়ে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার (২.৪০ বিলিয়ন) পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে) ২৮ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকার বেশি। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স আসে। এছাড়া জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার।
তার আগের মাস মে মাসে আসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এছাড়া এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ এবং জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ মার্কিন ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
এর আগে দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে। বছরওয়ারি হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ২০২০-২১ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার। এছাড়া চলতি বছরের জুন মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট ২৫৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।