অর্থনীতি
হামদর্দের বিরুদ্ধে প্রভিডেন্ট ফান্ড আত্মসাতের অভিযোগ

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও বড় আয়ুর্বেদিক প্রতিষ্ঠান হামদর্দ (ওয়াক্ফ) ল্যাবরেটরীজের বিরুদ্ধে প্রভিডেন্ট ফান্ড আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বিকালে রাজধানীর বাংলামোটরে হামদর্দের প্রধান কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রভিডেন্ট ফান্ড আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এ সময় প্রায় কয়েক শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। প্রভিডেন্ট ফান্ড আত্মসাত, গ্র্যাচুইটি ভাতা বৃদ্ধি, বিপণন পরিচালক শরিফুল ইসলামের পদত্যাগসহ মোট ১৯ দফা দাবিতে আন্দোলন করেন তারা।
আন্দোলেন আসা কর্মকর্তাদের ‘দফা এক দাবি এক, শরিফ স্যারের পতদ্যাগ’; ‘আমাদের দাবি, আমাদের দাবি, মানতে হবে, মানতে হবে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এতে অংশগ্রহণ করা এক কর্মকর্তা বলেন, হামদর্দে কর্মরত যেসব কর্তারা আছেন, তারা আমাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড অনেকটা খেয়ে (আত্মসাৎ) ফেলেছে। আগে আমাদের প্রভিডেন্ট দ্বিগুণ দেওয়া হলেও এখন তা দেওয়া হচ্ছে না। অর্থাৎ আমাদের সুযোগ-সুবিধা বর্তমানে নেই বললেই চলে।
তিনি বলেন, ২০১৯ সাল থেকে নিয়োগ পাওয়া কিছু কর্মকর্তা নিজেদের হর্তাকর্তা ভেবে হামদর্দের বাকি চাকুরিজীবীদের পথে বসিয়ে দিয়েছেন। তারা নানান অজুহাতে আমাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছেন।
উল্লেখ্য, কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সময় ব্যক্তির আয় থেকে প্রতি মাসে মূল বেতনের সাত থেকে ১০ শতাংশ কেটে একটি তহবিলে রাখা হয়। একই পরিমাণ অর্থ প্রতিষ্ঠানও ওই তহবিলে জমা রাখে। এর মাধ্যমে যে অর্থ জমা হয় তা কর্মী চাকরি শেষে পান। টাকা জমা রাখা এই তহবিলকেই বলা হয় প্রফিডেন্ট ফান্ড।
এ বিষয়ে জানতে হামদর্দের মুখপাত্র আমিরুল মোমেনীন মানিককে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়ে মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আন্দোলেন আসা এই কর্মকর্তা আরও জানান, হামদর্দ বহু আগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য যে যাতায়াত ভাতা নির্ধারণ করেছিলো, তা এখনো বহাল রয়েছে। অথচ নির্ধারিত ভাতার তুলনায় যাতায়াত খরচ ১২০ গুণ বাড়লেও তাদের যাতায়াত বিলের উন্নতি হয়নি। এতে তাদের নানান সংকটের সম্মুখীন হতে হয়।
বেতন নিয়ে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, আমরা এখন নিয়মিত বেতন পাচ্ছি না। আবার কর্তৃপক্ষ নানান অজুহাতে আমাদের বেতন কাটতে চায়। এতে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ও পরিবার আর্থিক হুমকির মুখে পড়ছে।
বিপণন পরিচালক শরিফুলের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে হামদর্দের এ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের প্রধান দাবি মার্কেটিং ডিরেক্টর শরিফুল স্যারের পদত্যাগ। তিনি আমাদের সব ধরণের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছেন। এছাড়া প্লাস্টিক কোম্পানির সাথে যোগসাজশে তিনি হামদর্দের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জোরপূর্বক কিছু ওষুধি পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য করেন। এতে তিনি প্লাস্টিক কোম্পানি থেকে কমিশন (অবৈধ উপার্জন) গ্রহণ করেন।
মেয়াদোর্ত্তীন পণ্য নিয়েও অভিযোগ তুলেছেন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, হামদর্দ মেয়াদোর্ত্তীন পণ্যের বিপরীতে কোন পণ্য পরিবর্তন করে দেয় না। কিন্তু বাকি কোম্পানিগুলো তা পরিবর্তন করে দেয়। এতে পণ্য বিক্রি করতে না পারার কারণে কোম্পানি বেতন কাটার সুযোগ খুঁজে।
উপমহাদেশের অন্যতম পরিচিত আয়ুর্বেদিক প্রতিষ্ঠান হামদর্দের অসাধু কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কোন সুনাম ক্ষুণ্ণ না হওয়ার দাবি জানান তিনি। এছাড়া তাদের গ্র্যাচুইটি বিল বৃদ্ধিসহ মোট ১৯ দফা দাবিতে তারা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হামদর্দের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অর্থসংবাদকে বলেন, প্রভিডেন্ট ফান্ড চলমান আছে। তবে এ নিয়ে কিছু বিভ্রান্তিও আছে। এসব নিয়ে তারা দাবি তুলেছেন। এ দাবির মধ্যে কিছু যৌক্তিক আবার কিছু বাড়তি দাবি আছে। যৌক্তিক দাবিগুলো খুব শিগগিরই ব্যবস্থাপনা পর্ষদ পর্যালোচনা করবেন।
বিপণন পরিচালক শরিফুল নিয়ে তিনি বলেন, শরিফুলকে নিয়ে তাদের কিছু অভিযোগ রয়েছে। তারা লিখিত আকারে আজ প্রধান কার্যালয়ে তা জমা দিয়েছেন। তবে এসব অভিযোগ যৌক্তিক হলে ব্যবস্থাপনা পর্ষদ থেকে শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জানা যায়, হামদর্দ (ওয়াক্ফ) ল্যাবরেটরীজ বাংলাদেশের প্রশাসন ও বিধিবিধান (সংশোধিত ২০১৯) অনুযায়ী, হামদর্দে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণ প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী মোতাবেক অর্জিত নিট মুনাফার ৫ শতাংশ অর্থ লভ্যাংশ হিসেবে প্রাপ্য হবেন। যা লভ্যাংশ বন্টন তহবিলে জমা হবে এবং এ অর্থ হামদর্দ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে বন্টন বা প্রদান করা হবে।
এদিকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় জামালদীতে অবস্থিত হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদত্যাগ সম্প্রতি পদত্যাগ করায় তাকে সপদে বহলের দাবিতে সম্প্রতি বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী মেডিসিন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি, তাদের পক্ষে কথা বলায় হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. ফারুক উজ জামান চৌধুরীকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বগুড়া হামদর্দ ইউনানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অধ্যক্ষ নিয়োগসহ পাঁচ দফা দাবিতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর কমপ্লিট শাট ডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার ১৯ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে হামদর্দের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এমআই

অর্থনীতি
চাল-সবজির বাজার চড়া, কমেছে ডিম-মুরগির দাম

কোরবানির ঈদের পর থেকে বেড়েই চলেছে চালের দাম। এরপর সবজির দামও বেড়েছে গেলো সপ্তাহ থেকে। সব মিলিয়ে চড়া দামে চাল আর সবজি কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এদিকে, মুরগি ও ডিমের বাজারদর কিছুটা কম। এতে ক্রেতারা স্বস্তিতে থাকলেও খামারিদের জন্য লোকসান হচ্ছে।
শুক্রবার (৪ জুলাই) রাজধানীর মালিবাগ, শান্তিনগর ও সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মোকামগুলোতেই চালের দাম বেড়েছে। সেখানে চালকল মালিকরা ঈদের পর কারবার চাঙা হওয়ার সঙ্গে দাম বাড়িয়েছেন, যে কারণে চালের দাম বেশি এখন। ঈদের পর প্রতি বস্তা চালের দাম সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
যে কারণে ঈদের আগের চেয়ে এখন প্রতিকেজি চাল মানভেদে ২ থেকে ৮ টাকা টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এখন খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা দরে। সরু চালের মধ্যে জিরাশাইলের কেজি ৭৪ থেকে ৮০ টাকা এবং মিনিকেট ৭৬ থেকে ৮৪ টাকা। কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৬ টাকা কেজিতে।
মালিবাগের চাল বিক্রেতা আল্লাহর দান স্টোরের আবুল হোসেন বলেন, নাজিরশাইল ছাড়া পাইজাম, বিআর-২৮, মিনিকেটের দাম কেজিপ্রতি ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আগে ৬৮ টাকা কেজি দরে পাইকারিতে যে মিনিকেট চাল কিনতাম, গতকাল কিনেছি ৭৬ টাকা কেজি দরে।
এদিকে, ছোট বাজারে ও পাড়ার মুদি দোকানে দাম আরেকটু বেশি। রামপুরা বাজারের চাল বিক্রেতা জুবায়ের আলী বলেন, ঈদের পর থেকে দোকান খুলে যে চালই অর্ডার দিচ্ছি, তারই দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি। দিনাজপুর, নওগাঁ, কুষ্টিয়া সব মোকামে চালের দাম বাড়ছে।
ঢাকার বাজারে ঈদের পর থেকে নিম্নমুখী ছিল মুরগির দাম। কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সোনালি মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে প্রতি ডজন ডিমের দাম নেমেছে ১২০ টাকায়। বড় বড় বাজারে কিনলে ১১৫ টাকায়ও কেনা যাচ্ছে। তবে এ দাম ডিম উৎপাদনকারীর জন্য লোকসানের বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। বিপুল হোসেন নামের একজন বিক্রেতা বলেন, অন্তত ১৪০ টাকা ডজন ডিমের দাম হলে খামারিদের কিছু লাভ হয়, এবার দাম খুব কমে তাদের লোকসান হচ্ছে।
এদিকে এরমধ্যে মুদি পণ্যগুলো দাম তেমন হেরফের হয়নি। তেল, চিনি, ডাল, আটা, ময়দা, সুজি আগের দামে কেনা যাচ্ছে। কম দামে কেনা যাচ্ছে পেঁয়াজ, আলু, আদা, রসুনসহ অন্য নিত্যপণ্যও।
তবে বেড়েছে প্রায় অন্যান্য সব ধরনের সবজির দাম। সেগুনবাগিচায় সবজি বিক্রেতা তাকদির হোসেন বলেন, প্রায় সব ধরনের সবজির দাম গত সপ্তাহের চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা কেজিপ্রতি বেড়েছে।
কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখন বরবটি, কাকরোল, উস্তা কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পেঁপে, পটোল, ঢ্যাঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। আর ঝিঙা, চিচিঙার কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে চাইছেন বিক্রেতারা। তবে বড় বাজার, আবার ভ্রাম্যমাণ দোকানে দাম কিছুটা কম।
অর্থনীতি
বিকডার নতুন সভাপতি কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান। বিকডার সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে তিনি সংগঠনের সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
খলিলুর রহমান দেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি ডিপো কেডিএস লজিস্টিকস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
বুধবার (৩ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব। তিনি বলেন, সংগঠনের সাধারণ সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের উপস্থিতিতেই খলিলুর রহমান সভাপতির দায়িত্ব নেন।
বিকডা সূত্রে জানা যায়, বিকডার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন নুরুল কাইয়ুম খান। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি গত ১৫ জুন পদত্যাগ করেন। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি বিকডার নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। এছাড়া বিকডার পূর্ববর্তী সংগঠন প্রাইভেট ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো-ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (পিকডা) সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
অর্থনীতি
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ৩৫.৩১ শতাংশ ঋণই এখন খেলাপি

ব্যাংক–বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুরবস্থা কাটছে না। উপরন্তু দিন দিন খেলাপি ঋণ বাড়ছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিতরণ করা ঋণের ৩৫ দশমিক ৩১ শতাংশই খেলাপি হয়ে গেছে। টাকার অঙ্কে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা, যা তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ২ হাজার ১০০ কোটি এবং বছরে বেড়েছে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিনের অবলোপন, পুনঃতফসিল আর রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে খেলাপির প্রকৃত চিত্র আড়াল রাখা হয়েছিল। তবে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারিতে চেপে রাখা খেলাপি ঋণ এখন প্রকাশ পাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণের মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকায়। এর মধ্যে ২৭ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হয়েছে, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৩৫ দশমিক ৩১ শতাংশ।
এর আগে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে এই খাতের ঋণ স্থিতি ছিল ৭৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ছিল ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা বা ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
গত বছরের একই সময়ের তুলনায়ও ঋণ খেলাপি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৪ সালের মার্চে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণের স্থিতি ছিল ৭৪ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ছিল ২৩ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
পিপলস লিজিং, বিআইএফসি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্সসহ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপির হার সর্বাধিক। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক তারল্য ও ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে।
এদিকে মার্চ পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণও বেড়ে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ২৪ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আসল পরিস্থিতি সামলাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এখন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
অর্থনীতি
অফশোর ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা জামানত রেখে টাকায় মিলবে ঋণ

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন ঋণ সুবিধার অনুমোদন দিয়েছে। এখন থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে (ওবিইউ) রাখা বৈদেশিক মুদ্রা তহবিল জামানত হিসেবে ব্যবহার করে টাকায় ঋণ নেওয়া যাবে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) এক প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, অনিবাসী হিসাবধারীদের ওবিইউতে গচ্ছিত বৈদেশিক মুদ্রা জামানত হিসেবে ব্যবহার করে দেশে ব্যাংকের ডমেস্টিক ইউনিট থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকবে। একইভাবে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও ওবিইউতে তাদের রাখা বৈদেশিক মুদ্রা জামানত হিসেবে রেখে দেশে টাকায় ঋণ নিতে পারবেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঋণগ্রহীতা ও হিসাবধারীর মধ্যে যৌক্তিক সম্পর্ক থাকতে হবে। যেমন প্রবাসী বাংলাদেশি ও তাদের স্থানীয় সুবিধাভোগী, বিদেশি শেয়ারহোল্ডার, বিদেশি বিনিয়োগকারী বা বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানি- এ ধরনের সম্পর্ককে বৈধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
তবে এই জামানতের বিপরীতে কেবল স্বল্পমেয়াদী চলতি মূলধন ঋণ দেওয়া যাবে এবং জামানতের জন্য কোনো চার্জ বা ফি নেওয়া হবে না। প্রয়োজনে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের ঝুঁকি সামাল দিতে ব্যাংক জামানতের কিছু অংশ মার্জিন হিসেবে রাখতে পারবে।
ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জামানত নগদায়ন করে ঋণ সমন্বয়ের সুযোগ থাকবে বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়া প্রাইভেট ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট এবং নন-রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সও একইভাবে জামানত হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। তবে ওবিইউতে পরিচালিত আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং হিসাবের অর্থ জামানত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, দেশে স্থানীয়ভাবে জামানত প্রদানের প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় নতুন এই নিয়মের ফলে বৈদেশিক মুদ্রা জমা রেখে সহজেই টাকায় ঋণ নেওয়া যাবে। এতে বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়বে বলে তারা আশাবাদ প্রকাশ করেছেন।
অর্থনীতি
পাঁচদিন বন্ধ থাকবে এনসিসি ব্যাংকের কার্যক্রম

বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স (এনসিসি) ব্যাংকের কার্যক্রম পাঁচদিন বন্ধ থাকবে। ব্যাংকটি আগামী মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত থেকে রোববার (১৩ জুলাই) সকাল পর্যন্ত সব ধরনের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন মতে, বিদ্যমান কোর ব্যাংকিং সিস্টেম (সিবিএস) আপগ্রেডেশন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের উদ্দেশে ৮ জুলাই রাত ৮টা হতে ১৩ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত সব ব্যাংকিং (শাখা, উপশাখা, ডেবিট কার্ড, এটিএম, বিএসিপিএস, বিএফটিএন, আরটিজিএস, এনপিএসবি, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, সুইফট ইত্যাদি) কার্যক্রম সাময়িকভাবে বিরত থাকবে।
ব্যাংকের আবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক এ সাময়িক বন্ধের অনুমোদন দিয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে এ সম্মতি দেওয়া হয়েছে।