পুঁজিবাজার
বিএসইসির চেয়ারম্যানের অনৈতিক হস্তক্ষেপে অস্থির শেয়ারবাজার

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের অনৈতিক হস্তক্ষেপে অস্থির শেয়ারবাজার। ফলে বিনিয়োগকারীরা বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি তুলেছেন। গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের পুঁজিবাজারের নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। পুঁজিবাজার সংস্কার ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের বিভিন্ন পদে রদবদল করা হয়েছে। তবুও আশার আলো দেখা যায়নি, উল্টো অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে দেশের শেয়ারবাজারে। এজন্য স্বয়ং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের বারবার সিদ্ধান্তে পরিবর্তন, ভুল সিদ্ধান্ত ও অনৈতিক হস্তক্ষেপকে দায়ী করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। নতুন এ চেয়ারম্যানের পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট পূর্বের তেমন অভিজ্ঞতা নেই। একইসঙ্গে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পূর্বে যেসব ব্যাংকে প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানে চুক্তির মেয়াদপূর্তির আগেই চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে হয়েছে খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে। ফলে তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ দায়িত্বে এসে এ পর্যন্ত একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে সবগুলো সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে কয়েকবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন। এছাড়া আগের কমিশনের যোগ্য ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কমিশনার এ টি এম তারিকুজ্জামানকে দপ্তরবিহীন ও চাপ প্রয়োগ করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে খোদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। একইসঙ্গে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক (ইডি) সাইফুর রহমানকে কোন ধরণের তদন্ত ছাড়াই দপ্তরবিহীন বা একরকম ওএসডি করে অনৈতিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অভিযোগ উঠে রাশেদ মাকসুদের বিরুদ্ধে। ফলে পুঁজিবাজারে নতুন সংকট তৈরি হয়। যার কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কর্মকর্তাদের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়। একইসঙ্গে বিভিন্ন কোম্পানির বিষয়ে নতুন নতুন তদন্ত শুরু করে আরও আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছেন শেয়ারবাজারে। এ সংকট মুহূর্তে বিএসইসির নির্দেশে আজ নতুন করে একযোগে ২৭ কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠানো হয়েছে। এতো ভুল সিদ্ধান্তের মধ্যে এটি দেশের শেয়ারবাজারে আরও অস্থিরতা বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে ২৭টি কোম্পানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ডিএসইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। যেসব কোম্পানি নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম), লভ্যাংশ বিতরণে অনিয়ম ও উৎপাদন বন্ধ রয়েছে এ ধরণের কোম্পানিগুলোকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। যেখানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জে (ডিএসই) দীর্ঘদিন ধরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নেই। ডিএসইতে পূর্ণাঙ্গ পরিচালনা পর্ষদ নেই, ফলে চেয়ারম্যানও নেই, এছাড়াও ডিএসইতে দীর্ঘদিন এমডি পদ শূন্য রয়েছে। একজন ভারপ্রাপ্ত এমডি দিয়ে স্টক একচেঞ্জ পরিচালনা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে প্রধান টেকনোলজি অফিসার (সিটিও) ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) নেই। ফলে স্টক একচেঞ্জের কার্যকম ব্যাহত হচ্ছে। সেসব বিষয় নিয়েও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার নতুন এই চেয়ারম্যান। ফলে বিনিয়োগকারীরা নতুন এ চেয়ারম্যানকে অযোগ্য বলে আখ্যা দিয়েছে। একইসঙ্গে নতুন এ চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করছেন বিনিয়োগকারীরা।
জেড গ্রুপে পাঠানো ২৭টি কোম্পানির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর জনসংযোগ বিভাগের প্রধান ও ডিজিএম শফিকুর রহমান অর্থসংবাদকে বলেন, এ বিষয়ে তেমন কিছুই জানিনা। তাই কোন মন্তব্য করতে রাজি নই।
জানতে চাইলে ঢাকা স্টক একচেঞ্জের একজন সাবেক পরিচালক অর্থসংবাদকে বলেন, আমাদের দুঃখের কোন শেষ নেই, আমাদের দুঃখের কথা কার কাছে বলবো। বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্তগুলো কেমন যেন অগোছালো হয়েছে। একের পর এক ঘটনা ঘটছে, এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হচ্ছে। আমরা বাজারের পুরনো স্টক ব্রোকার। আমাদের দৃষ্টিতে কমিশন থেকে স্বল্পমেয়াদী যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেসব সিদ্ধান্তগুলোতে বাজারের আস্থা ফেরত আনার জন্য নেওয়া দরকার ছিল। বাজারের সব অংশীজনদের একটা প্ল্যাটফর্মে আনার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার ছিল। সেখানে আস্থা ফেরাতে যেসব সিদ্ধান্ত দরকার ছিল, তার কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে ব্যাপকভাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে যেভাবে ব্যাংকিং খাতের ভঙ্গুর অবস্থা থেকে এক ধরণের আস্থা ফেরাতে সক্ষম হয়েছেন, সেখানে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান হিসেবে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অবস্থা তার পুরো উল্টো। বিশেষ করে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ গঠনে কালক্ষেপন এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন নতুন চেয়ারম্যান। ফলে ডিএসইর প্রায় ২৪০ এর অধিক সদস্য প্রতিষ্ঠান ও নতুন ট্রেক হোল্ডাররা বিষয়গুলো ভালোভাবে নিচ্ছেন না। ফলে শেয়ারবাজারে অনিশ্চিত অবস্থা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম অর্থসংবাদকে বলেন, আমাদের সবার জায়গা থেকে বুঝা উচিত বাজারে কি আস্থা ফিরে আসছে কি-না? আমরা কি বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে আনতে পারছি কি-না? এ চিন্তাটা সবারই করা উচিত। এসইসি যেমন বাজারের স্টেকহোল্ডার, ব্রোকারেজ হাউজ, স্টক একচেঞ্জ ও মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও স্টেকহোল্ডার। সব স্টেকহোল্ডারদেরকেই এ বিষয়ে ভাবতে হবে। ঢাকা স্টক একচেঞ্জের পূর্ণাঙ্গ পরিচালনা পর্ষদ নেই প্রায় দেড় মাস সময় অতিবাহিত হচ্ছে। তাই ডিএসইর পূর্ণাঙ্গ বোর্ডের কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা দরকার।
সূত্রে মতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পুঁজিবাজার সংস্কার ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে বিএসইসি পুনর্গঠন করা হয়েছে। কিন্তু, বিএসইসির নতুন কমিশন ইতোমধ্যে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার একটিও সঠিক হয়নি, কোনো সুফলও দেখা যায়নি। বরং কমিশনের বেশকিছু ভুল সিদ্ধান্ত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যা দেশের শেয়ারবাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে। এমনকি, কমিশনে নিয়োগপ্রাপ্তদের দক্ষতা ও বিচক্ষণতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ফলে, পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরার পরিবর্তে বিএসইসির সঙ্গে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের অন্তর্দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে।
জানা গেছে, আগের কমিশনের যোগ্য ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কমিশনার এ টি এম তারিকুজ্জামান এবং মোহাম্মদ মহসিন চৌধুরীসহ দুজন নতুন কমিশনার পুনরায় নিয়োগ দিয়ে বিএসইসিকে ঢেলে সাজানো হয়। এই পাঁচ সদস্যের মধ্যে কেবল এ টি এম তারিকুজ্জামানের পুঁজিবাজারে সঙ্গে সরাসরি দীর্ঘ ২৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা ছিল। তবে, গত ১১ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তিন মাস বা ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়ে এ টি এম তারিকুজ্জামানকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়। সরকারের ওই আদেশ জারির চার দিন পর ১৫ সেপ্টেম্বর তাকে দপ্তরবিহীন করে আদেশ জারি করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ। পরবর্তীতে চাপ প্রয়োগ করে গত ১৭ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় এ টি এম তারিকুজ্জামানকে। নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে দপ্তরবিহীন বা ওএসডি করায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। যার ফলে বিএসইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে নতুন চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদের সঙ্গে অন্তর্দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।
এছাড়াও, নতুন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেড় মাস অতিবাহিত হলেও ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে এরই মধ্যে তিনবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে কমিশন। চতুর্থবারেও নিয়েছে ভুল সিদ্ধান্ত। সেখানেও বিদ্যমান আইনের লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে চারদিকে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যানসহ কমিশন সদস্যদের বাজার সম্পর্কে ধারণা না থাকায় বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এতে বাজারে কমিশনের অদক্ষতা ফুটে উঠছে। আর অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, একই ভুল বারবার করলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। এতে বিনিয়োগকারীরা দেশের পুঁজিবাজারের ওপর আস্থা হারাবেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শীর্ষ মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা অর্থসংবাদকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর আমরা যেভাবে বিএসইসির সংস্কার চেয়েছিলাম, তা মোটেও হয়নি। বিএসইসিতে পুঁজিবাজার বিষয়ে অভিজ্ঞ ও যোগ্যতাসম্পন্ন নীতিনির্ধারক নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এখন কমিশনে যারা নীতিনির্ধারক পদে দায়িত্ব পালন করছেন, তারা নিজেদেরকে এতটাই জ্ঞানী ভাবছেন যে, আমাদের সঙ্গে কথা বলা বা মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করছে না। এর মধ্যে আবার যে একজন মেধাবী ও যোগ্য কমিশনার ও নির্বাহী পরিচালকদেরকে ষড়যন্ত্র করে কোনঠাসা করা হয়েছে। তাই, এই কমিশনের কাছে ভালো কিছু প্রত্যাশা করতে পারছি না।
গত রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারিকুজ্জামানের পদত্যাগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর দায় চাপান। তিনি বলেন, কিছু কাজ মন্ত্রণালয়ের সাথে কো-অর্ডিনেটর হয়ে করতে হয়। এই বিষয়ে পাবলিকলি কিছু বলার নেই।
ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে বারবার ভুল এবং বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যান।
দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে সমালোচনা দীর্ঘদিনের। অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই খাতটি গত ১৫ বছরে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের পর এই খাতেও সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সরকার। বিএসইসির চেয়ারম্যান এবং আগের চারজন কমিশনারের মধ্যে তিনজনকে বাদ দিয়ে পুনর্গঠন হয় কমিশন। নতুন চেয়ারম্যান খোন্দকার রাশেদ মাকসুদ, অন্যান্য কমিশনারদের মধ্যে- মো. আলী আকবর এবং ফারজানা লালারুখ। এছাড়াও আগের কমিশনার হিসাবে রয়েছেন মো. মোহসিন চৌধুরী। নতুন কমিশন গঠনের পর মৌখিক নির্দেশ দিয়ে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়। পরে স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদ পুনর্গঠন নিয়ে বিতর্কের পাশাপাশি কমিশনের দুর্বলতা ও অদক্ষতা সামনে আসে।
গত ১ সেপ্টেম্বর ডিএসইর পর্ষদে ৭ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় বিএসইসি। এতে আইন লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে নিয়োগ পাওয়া দুজন পরিচালক নিজ থেকেই সরে দাঁড়ান। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর এ দুজনের স্থানে নতুন দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরা হলেন-হুদা ভাসী চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানির সিনিয়র পার্টনার এএফ নেসারউদ্দিন ও জেডএন কনসালট্যান্টের সিইও সৈয়দা জাকেরিন বখত নাসির।
নতুন নিয়োগেও আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে বিএসইসি। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠায় তারাও যোগ দেননি। পরে নিয়োগ দেওয়া ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোমিনুল ইসলাম এবং ওয়েলস ফার্গো ব্যাংকের সাবেক কান্ট্রি ম্যানেজার শাহনাজ সুলতানকে। এই সিদ্ধান্তেও আইন লঙ্ঘন করেছে বিএসইসি। কারণ স্টক ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩-এর ৫ ধারার ‘কে’ উপধারায় বলা আছে-কেউ তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালক এবং কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করে থাকলে তিনি স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। কিন্তু মোমিনুল ইসলাম এক বছর আগেও তালিকাভুক্ত কোম্পানি আইপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।
এছাড়াও ওই আইনের ৫’র ধারার ‘সি’ উপধারায় বলা আছে, গত তিন বছরের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পার্টনার হিসাবে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকলে তিনি স্বতন্ত্র পরিচালকের যোগ্য হবেন না। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বা যথেষ্ট শেয়ারধারীও স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। আইনের ‘(ডি)’ উপধারায় বলা হয়েছে, বিগত ৩ বছরের মধ্যে কেউ স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে কোনো সম্মানি নিয়ে থাকলে তিনিও স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়ার যোগ্য হবেন না। আগে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, এই ধারা বিবেচনায় তারা কাজে যোগদান করেনি। ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুসারে স্টক পর্ষদের সদস্য সংখ্যা ১৩ জন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র পরিচালক ৬ জন, সেনাবাহিনী মনোনীত ১ জন, ট্রেক হোল্ডারদের পক্ষ থেকে নির্বাচিত ৪ জন, কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধি ১ জন এবং ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদাধিকার বলে পর্ষদে পরিচালক থাকেন। বর্তমানে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়ে বিতর্ক চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. আল-আমিন অর্থসংবাদকে বলেন, বাজার নিয়ে বিচার করতে গেলে লম্বা সময়ের দরকার। কিন্তু নতুন কমিশন তো মাত্রই নিয়োগ পেলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে যেসব জায়গায় অন্যায়, অনিয়ম হয়েছে, সেগুলো প্রতিকার সবাই চায়। কিন্তু পুঁজিবাজার একটা স্পর্শকাতর জায়গা। যেমন- ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের বিষয়ে চারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে এখানে প্রশ্ন চলে আসে। তাই এখানে দূরদর্শীতাসম্পন্ন সিদ্ধান্ত প্রয়োজন ছিল। এসব সিদ্ধান্ত ভেবেচিন্তে নিলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হয়তো এতটা আতঙ্কিত হতো না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশিদ চৌধুরী বলেন, শেয়ারবাজারের অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে বিএসইসির কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন ছিল। তবে এখনো কয়েকটা সিদ্ধান্তের পদক্ষেপ এবং প্রতিফলন ঘটালে শেয়ারবাজারের সংকট কাটানো সম্ভব। এরমধ্যে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানির দর ইস্যু মূল্যের নিচে আছে, তাদের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কোম্পানি আইনের কোথাও ‘নো ডিভিডেন্ট’ শব্দ নেই। বাজারে গতি ফেরাতে এখান থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। বিনিয়োগকারীরা যদি রিটার্ন না পায়, তাহলে শেয়ারবাজারের ওপর আস্থা হারাবে এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নিলে পুঁজিবাজারে গতি ফেরানো সম্ভব।
এমআই

পুঁজিবাজার
‘পুঁজিবাজারবান্ধব বাজেট’, সরকারকে ধন্যবাদ জানাল ডিএসই

অন্তর্বর্তী সরকার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কর্তৃক প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে সহায়ক নীতিমালা গ্রহণ করায় অর্থ উপদেষ্টাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম।
সোমবার (০২ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই ধন্যবাদ জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকারের বিশেষ গুরুত্বারোপকে মমিনুল ইসলাম ধন্যবাদ জানান।
২০২৫-২৬ সালের বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করহারের ব্যবধান বৃদ্ধি, মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার হ্রাস এবং লেনদেনের ওপর উৎসে কর হ্রাস ইত্যাদি পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিনিয়োগকারীদের বিও অ্যাকাউন্টের ওপর ধার্য অ্যানুয়াল মেইনটেন্যান্স ফি ৪৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫০ টাকা করেছে এবং সিসি অ্যাকাউন্টে অর্জিত সুদের ২৫ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ব্যয়ের জন্য ইনভেস্টর্স প্রটেকশন ফান্ডে জমার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এছাড়া ২০১৪ সালের ৪ নভেম্বরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের তালিকাভুক্ত কোম্পানি হতে অর্জিত ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত মূলধনি আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত রাখার বিধান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ৫০ লাখ টাকার ওপরে মূলধনি আয়ের ওপর কর ১৫ শতাংশে কমিয়ে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন সহায়ক এসকল নীতিমালা পুঁজিবাজার উন্নয়নে সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির পরিচায়ক বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাজেট প্রস্তাবনায় সরকারের মালিকানা রয়েছে এমন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে সরকারের শেয়ার কমিয়ে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, লাভজনক সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তকরণ, বেসরকারি খাতের দেশীয় বড় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করতে প্রণোদনাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এ বাজারের গভীরতা বৃদ্ধি পাবে বলে ডিএসই’র চেয়ারম্যান আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ সকল ইতিবাচক সিদ্ধান্তের জন্য ডিএসইর চেয়ারম্যান বিএসইসি এবং এনবিআরের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকল অংশীদারের প্রত্যাশাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সেগুলো বাস্তবায়নে প্রধান ভূমিকা রাখার জন্য ডিএসইর চেয়ারম্যান বিশেষ ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীকে। একই সঙ্গে দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সময়োপযোগী দিক নির্দেশনার জন্য ডিএসইর চেয়ারম্যান গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পুঁজিবাজারকে ঘিরে সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেশের ক্রমবিকাশমান পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদে শক্তিশালী ও টেকসই হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে বলে ডিএসই বিশ্বাস করে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ও দক্ষতাকে পুঁজি করে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই পুঁজিবাজার গড়ে ভোলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কাফি
পুঁজিবাজার
বাজেটে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা পায়নি কিছুই

চরম হতাশাজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে দেশের পুঁজিবাজারে। টানা দরপতনে লোকসানের ধাক্কা সামলাতে না পেরে বাজারবিমুখ হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমে পাঁচ বছর আগের স্থানে ফিরে গেছে। সেই সাথে কমেছে লেনদেনও। তবে বিক্ষুব্ধ ও হতাশাগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আশা নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন বাজেটের দিকে। কিন্তু বাজেট ঘিরে তাদের আশা ছিল যতটা প্রাপ্তি, সেই তুলনায় হতাশাজনক। কারণ, সরাসরি বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন- এমন কোনো প্রণোদনা নেই ঘোষিত বাজেটে। সর্বোপরি বাজেটে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা পায়নি কিছুই।
বর্তমানে বাজারের লেনদেন যে পর্যায়ে নেমেছে, তাতে বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারী সবারই কেবল লোকসানের অঙ্কই প্রতিদিন বাড়ছে। ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শেয়ারবাজার নিয়ে আশাবাদী হয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু সেই পরিবর্তনের মাস না ঘুরতেই শেয়ারবাজার আবারও দীর্ঘ মন্দার কবলে। এরই মধ্যে বিনিয়োগকারীরা রাজপথেও নেমেছেন প্রতিবাদে। এতে কোনো লাভ হয়নি বিনিয়োগকারীদের। তাদের হতাশই করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তবে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বাজেটে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়—এমন কোম্পানির মধ্যকার করপোরেট করহারের ব্যবধান বৃদ্ধি, ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেনের ওপর ধার্য কর কমানো এবং শেয়ারবাজারের মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট করহার হ্রাস। এসব প্রণোদনার সুবিধাভোগী শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সরাসরি বিনিয়োগকারীরা এর কোনো সুবিধা পাবেন না। যদিও বাজেটের আগে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ আয় থেকে শুরু করে মূলধনি মুনাফার ওপর থেকে কর প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছিল স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে।
বাজেট প্রস্তাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, শেয়ারবাজারে কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে শর্তসাপেক্ষে সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ শতাংশ করপোরেট কর ছাড় পাবেন। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে এ সুবিধা পাওয়া যাবে। এ জন্য তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়—এমন কোম্পানির করহারের ব্যবধান বাড়ানো হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, শর্তসাপেক্ষে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার হবে ২০ শতাংশ। আর তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করহার হবে সাড়ে ২৭ শতাংশ। তবে শর্তসাপেক্ষে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানিগুলোর করহার আরও আড়াই শতাংশ কম হবে। এই শর্তের মধ্যে রয়েছে নির্ধারিত করবর্ষে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সব আয় ও প্রাপ্তি ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে হবে। পাশাপাশি ৫ লাখ টাকার বেশি লেনদেন ও বার্ষিক ৩৬ লাখ টাকার বেশি সব ধরনের লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনের শর্ত পূরণ করলে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়—এমন করহারের ব্যবধান কমে ৫ শতাংশে নেমে আসবে।
এ ছাড়া ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেনের ওপর থেকে উৎসে কর কিছুটা কমানো হয়েছে। বর্তমানে প্রতি ১০০ টাকার লেনদেনে ৫ পয়সা কর আদায় করা হয়। আগামী বাজেটে এই কর কমিয়ে ৩ পয়সায় নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর শেয়ারবাজারের মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট কর ১০ শতাংশ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে শেয়ারবাজারের মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো সাড়ে ৩৭ শতাংশ হারে করপোরেট কর দেয়। আগামী অর্থবছরে তা কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি আনতে করপোরেট করহারের ব্যবধান বাড়ানো হয়েছে। তবে শর্তসাপেক্ষে এই ব্যবধান সাড়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও সাধারণভাবে এই ব্যবধান ৫ শতাংশ। যদিও ভালো কোম্পানিকে বাজারে আনতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির মধ্যে করহারের ব্যবধান ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু বিএসইসির সেই প্রস্তাব পুরোপুরি আমলে নেননি অর্থ উপদেষ্টা। তাই সাধারণভাবে ৫ শতাংশ করহারের সুবিধা নিতে ভালো কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে আসতে কতটা আগ্রহী হবে, তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে ভালো কোম্পানিগুলো বাজারে আসতে আগ্রহী না। কারণ, তালিকাভুক্ত হলে অনেক ধরনের নিয়মকানুন পরিপালন করতে হয় কোম্পানিগুলোকে। তালিকাভুক্তির জন্য বাড়তি অর্থও খরচ হয়। তাই ভালো সুবিধা না পেলে এসব কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে না।
এদিকে গত আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাজারের সংস্কারের নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন খুব ধীরগতিতে এগোচ্ছে। ফলে সংস্কারের সুফলও নেই বাজারে। এ কারণে তীব্র মন্দায় ভুগছে শেয়ারবাজার। বাজেট ঘিরে বিনিয়োগকারীদের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, সেটিরও খুব বেশি বাস্তবায়ন হয়নি। তাই বাজেট-পরবর্তী শেয়ারবাজারে তার কী প্রভাব পড়ে, সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা। বিনিয়োগকারীদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন—ঘোষিত বাজেট শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে পারবে কি?
কাফি
পুঁজিবাজার
করহার কমানোসহ বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য তিন খবর

বাংলাদেশের ৫৪তম জাতীয় বাজেট প্রস্তাব করছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। আজ সোমবার (২ জুন) ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের জন্য তিনি টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে প্রস্তাবিত বাজেট তুলে ধরেন। প্রস্তাবিত বাজেটে মার্চেন্ট ব্যাংকের ও ব্রোকারহাউজের লেনদেনর উপর উৎসে করের হার কমানোসহ পুঁজিবাজারের জন্য তিনটি খবর দিয়েছেন তিনি। তবে এখানে বিনিয়োগকারীদের সাথে সরাসরি কোন বিষয় সম্পৃক্ত নয়।
প্রস্তাবিত বাজেটে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকা-বহির্ভূত কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান ২.৫০ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তাতে এই ব্যবধান দাঁড়াবে ৭.৫০ শতাংশ। বর্তমানে এই দুই ধরনের কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান ৫ শতাংশ। এক সময় এটি ১০ শতাংশ ছিল। গত চলতি অর্থবছরের বাজেটে এটি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। তালিকাভুক্ত ও তালিকা-বহির্ভূত কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান বাড়লে ভাল কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে কিছুটা আগ্রহী হতে পারে।
অর্থ উপদেষ্টা এ বিষয়ে তার বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, দেশী-বিদেশী লাভজনক ও নামীদামি কোম্পানিসমূহকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে লিস্টেড এবং নন-লিস্টেড কোম্পানির করহারের ব্যবধান ৫ শতাংশ হতে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে।
ঘোষিত বাজেটে মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ১০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো প্রকৃত অর্থে ব্যাংক না হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে ব্যাংকের সমান হারে অর্থাৎ ৩৭.৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। আগামী অর্থবছরে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ২৭.৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। টানা দর পতনে নাজুক পুঁজিবাজারে আর্থিক সংকটে পড়া মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো কর কমানোর কারণে একটু স্বস্তি পাবে।
বাজেটে স্টক ব্রোকারদের দাবির প্রেক্ষিতে লেনদেনর উপর উৎসে করের হার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাব অনুসারে, আগামী অর্থবছরে ব্রোকারহাউজগুলোকে ০.০৩ হারে এই কর দিতে হবে। বর্তমানে লেনদেনের উপর ০.০৫ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হয় এসব প্রতিষ্ঠানকে। নিম্ন লেনদেনের বাজারে এই কর বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় বোঝা হয়ে উঠেছিল।
পুঁজিবাজার
তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান বাড়ছে

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য রয়েছে বেশ কিছু সুখবর। এতে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি প্রস্তাব রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সকল স্টেকহোল্ডারের প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিয়ে তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান বাড়ানো হয়েছে।
সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে প্রস্তাবিত বাজেট তুলে ধরেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকা-বহির্ভূত কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান ২.৫০ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তাতে এই ব্যবধান দাঁড়াবে ৭.৫০ শতাংশ। বর্তমানে এই দুই ধরনের কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান ৫ শতাংশ। এক সময় এটি ১০ শতাংশ ছিল। গত চলতি অর্থবছরের বাজেটে এটি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। তালিকাভুক্ত ও তালিকা-বহির্ভূত কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান বাড়লে ভাল কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে কিছুটা আগ্রহী হতে পারে।
অর্থ উপদেষ্টা এ বিষয়ে তার বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, দেশী-বিদেশী লাভজনক ও নামীদামি কোম্পানিসমূহকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে লিস্টেড এবং নন-লিস্টেড কোম্পানির করহারের ব্যবধান ৫ শতাংশ হতে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে।
ঘোষিত বাজেটে মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ১০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো প্রকৃত অর্থে ব্যাংক না হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে ব্যাংকের সমান হারে অর্থাৎ ৩৭.৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। আগামী অর্থবছরে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ২৭.৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। টানা দর পতনে নাজুক পুঁজিবাজারে আর্থিক সংকটে পড়া মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো কর কমানোর কারণে একটু স্বস্তি পাবে।
বাজেটে স্টক ব্রোকারদের দাবির প্রেক্ষিতে লেনদেনর উপর উৎসে করের হার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাব অনুসারে, আগামী অর্থবছরে ব্রোকারহাউজগুলোকে ০.০৩ হারে এই কর দিতে হবে। বর্তমানে লেনদেনের উপর ০.০৫ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হয় এসব প্রতিষ্ঠানকে। নিম্ন লেনদেনের বাজারে এই কর বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় বোঝা হয়ে উঠেছিল।
এসএম
পুঁজিবাজার
ফার্স্ট ফাইন্যান্সের সর্বোচ্চ দরপতন

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৬ কোম্পানির মধ্যে ১০১টি কোম্পানির শেয়ার কমেছে। এদিন দরপতনের শীর্ষে উঠে এসেছে ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড।
ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, সোমবার (২ জুন) কোম্পানির শেয়ার দর আগের দিনের চেয়ে ৩০ পয়সা বা ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ কমেছে।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা সাফকো স্পিনিংয়ের শেয়ার দর আগের দিনের চেয়ে ৭ দশমিক ০৭ শতাংশ কমেছে। আর তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা রেনউইক যজ্ঞেশ্বরের দর কমেছে ৫ দশমিক ০৭ শতাংশ।
তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে- পিপলস লিজিং, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড, আনলিমা ইয়ার্ন, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেড।
এসএম