জাতীয়
আট মাসে ধর্ষণের শিকার ২২৪ কন্যাশিশু

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত আট মাসে ২২৪ কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এছাড়া ৩২ কন্যাশিশু ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে। আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
‘কন্যাশিশুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন’ শিরোনামে এ সংবাদ সম্মেলনে কন্যাশিশুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির কোঅর্ডিনেটর সৈয়দা আহসানা জামান (এ্যানী)।
সৈয়দা আহসানা জামান বলেন, বর্তমানে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া সত্ত্বেও ধর্ষণ যেনো প্রতিযোগিতা করে বেড়েই চলেছে। গত ৮ মাসে মোট ২২৪ কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার ১৩৪ জন, গণধর্ষণের শিকার হয় ৩৩ জন কন্যাশিশু, প্রতিবন্ধী কন্যাশিশু রয়েছে ৯ জন। এছাড়া ৩২ কন্যাশিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠীভেদে কেউ বাদ যায়নি এই জঘন্যতম বর্বর আচরণ থেকে। প্রেমের অভিনয়ের ফাঁদে ফেলে ৩৫ কন্যাশিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ধর্ষণ ও গণধর্ষণের মতো জঘন্যতম অপরাধের শিকার হতে হচ্ছে এক বছর বয়সের শিশুদেরকেও, যারা যৌনতা বোঝাতো দূরের কথা, কথা বলতেও শিখেনি।
এসময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ডিএমপির পরিচালিত গবেষণায় অংশগ্রহণকারী শিশুদের মধ্যে প্রায় ২৪ শতাংশ কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
সৈয়দা আহসানা জামান আরও বলেন, গত ৮ মাসে ৮১ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এর অন্যতম কারণ ছিল পারিবারিক দ্বন্দ্ব, পারিবারিক শত্রুতার জের, ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন। পাশাপাশি ২০ জন কন্যাশিশুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কেন মৃত্যু হয়েছে এ সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো কারণ বা ব্যাখ্যা পাওয়া য়ায়নি।
আত্মহত্যার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, কন্যাশিশুরাই শুধু নয়, কোনো একজন শিশু আত্মহত্যার পথ বেছে নিবে এটি মোটেও কাম্য নয়। এর মাধ্যমে পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রের ওপরও দায়ভার এসে পড়ে। কিন্তু গত ৮ মাসে ১৩৩ জন কন্যাশিশু আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এর পেছনে মূলত যে কারণগুলো কাজ করেছে তা হলো হতাশা, পারিবারিক মতানৈক্য বা দ্বন্দ্ব, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়া এবং শারীরিকভাবে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ।
অন্যান্য নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরে সৈয়দা আহসানা জামান বলেন, এ বছরের প্রথম আট মাসে যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২৮ জন কন্যাশিশু। অপহরণ ও পাচার হয়েছে ১৯ জন, পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ১৮৭ জন কন্যাশিশুর। এছাড়া ১০ জন গৃহশ্রমিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে, একজনকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে এবং চারজন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
এসময় সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কন্যা শিশু বঞ্চনার শিকার হলে পুরো জাতিকে তার মাশুল দিতে হবে। আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রে ভালো করলেও পুষ্টির ক্ষেত্রে ভালো করতে পারিনি। কারণ হচ্ছে কন্যা শিশুদের প্রতি অবহেলা ও তাদের প্রতি যথাযথ বিনিয়োগ না করা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জন্মের পর থেকেই ছেলে শিশুদের তুলনায় কন্যা শিশুদের অপুষ্টির হার সব থেকে বেশি। এমনকি অতীতে কন্যা শিশুরাই স্কুলে যাওয়া থেকে বঞ্চিত হতো। এখন অনেক ক্ষেত্রে স্কুলে তাদের নাম লেখা থাকে, কিন্তু সত্যিকার অর্থে তারা স্কুলে যায় না। বিদ্যা অর্জন থেকে তারা বঞ্চিত হয়। পাশাপাশি কন্যা শিশুদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, জাতি হিসেবে উন্নত হতে হলে কন্যা শিশুদের প্রতি বঞ্চনা কমাতে হবে। তাদের প্রতি আমাদের যথাযথ বিনিয়োগ করার পাশাপাশি সুযোগ করে দিতে হবে। তা না হলে পুরো জাতি ভুগবে।
এসময় পরিবর্তিত ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ গড়তে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের পক্ষ থেকে ১১টি প্রত্যাশা ও দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-
যৌন হয়রানি, উত্ত্যক্তকরণ ও নিপীড়ন রোধে সর্বস্তরের জন্য ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ নামে একটি আইন জরুরি ভিত্তিতে প্রণয়ন করা। শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার সব ঘটনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা। ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ আসলে ধর্ষণের শিকার নারী ও কন্যার পরিবর্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিকেই প্রমাণ করতে হবে যে, সে এ ঘটনা ঘটায়নি, এ সম্পর্কিত প্রচলিত আইনের বিধান সংশোধন করা।
হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল গঠনের কঠোর নির্দেশনা মনিটরিংয়ের ভিত্তিতে নিশ্চিত করা, যাতে যৌন নিপীড়নের যেকোনো ঘটনার বিচার করা যায়। এ সংক্রান্ত জোরালো নির্দেশনা প্রতিটি অফিস-আদালতেও প্রণয়ন করা, যাতে একজন নারী বা কন্যাশিশু কোনোভাবেই যেন তার সহকর্মী, শিক্ষক বা বন্ধু কারও দ্বারা নিপীড়নের শিকার না হন।
কন্যাশিশু নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করা। শিশু সুরক্ষায় একটি পৃথক অধিদফতর গঠন করা। বাল্যবিবাহ বন্ধে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা।
বর্তমানে বেশিরভাগ শিশুই স্মার্টফোনের মতো ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে। তাই প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং প্রযুক্তির নেতিবাচক দিক থেকে তাদেরকে রক্ষার জন্য উচ্চপর্যায়ের আইসিটি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় সব ধরনের পর্নোগ্রাফিক সাইট বন্ধ করা। সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ বাস্তবায়ন করা এবং এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা, একজন কন্যাশিশুও যাতে পর্নোগ্রাফির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করা।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাজেট বৃদ্ধি করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কন্যাশিশু ও তাদের অভিভাবকদের এর আওতায় আনা। ক্রমবর্ধমান কন্যাশিশু ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নারী-পুরুষ, সরকার, প্রশাসন, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া, পরিবার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং তরুণ ও যুবসমাজকে সচেতনকরণ সাপেক্ষে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাদেরকে যুক্ত করা।
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডাবিট্রএলএ) নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট সালমা আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সহ-সভাপতি শাহীন আকতার ডলি, গুড নেইবারস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্ট মাঈনুদ্দিন মাইনুল, এডুকো বাংলাদেশের চাইল্ড রাইটস এন্ড প্রোটেকশনের স্পেশালিস্ট মো. শহীদুল ইসলাম, এডুকো বাংলাদেশের পলিসি এন্ড অ্যাডভোকেসির ম্যানেজার হালিমা আক্তার প্রমুখ।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয়
ঢাকায় ইইউভুক্ত দেশের জন্য ভিসা সেন্টার খোলার অনুরোধ

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) যেসব দেশের ভিসা ঢাকা থেকে ইস্যু করা হয় না, ইইউ রাষ্ট্রদূতকে সেসব দেশের জন্য ঢাকায় একটি ভিসা সেন্টার খোলার অনুরোধ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সোমবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার সাক্ষাৎ করতে গেলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ অনুরোধ জানান।
বৈঠকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা ইস্যু, অভিবাসন, মানবপাচার ও চোরাচালান প্রতিরোধ, বাংলাদেশের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
উপদেষ্টা বলেন, ইইউভুক্ত দেশসমূহে বাংলাদেশ অন্যতম জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশ। তাছাড়া ব্যাবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটন, চিকিৎসাসহ নানা কাজে প্রচুর বাংলাদেশি লোকজন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহে নিয়মিত যাতায়াত করে থাকে। বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হলেও জনসংখ্যা বিবেচনায় পৃথিবীর শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে অন্যতম। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে গিয়ে ইইউভুক্ত দেশের জন্য ভিসা সংগ্রহ সময়সাপেক্ষ, কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। তাই ইইউভুক্ত দেশসমূহের জন্য ঢাকায় একটি ভিসা সেন্টার খোলা অত্যাবশ্যক। রাষ্ট্রদূত, এ বিষয়ে ইইউভুক্ত দেশসমূহের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানান।
ইইউ রাষ্ট্রদূতকে উপদেষ্টা বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম বৃহৎ অংশীদার ও ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ইইউ বাংলাদেশের ব্যাবসা-বাণিজ্য ও অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়াকে ইইউ সমর্থন করে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ চাইলে ইইউ প্রয়োজনীয় দক্ষতা, সামর্থ্য, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা দিয়ে এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে পারে। বাংলাদেশে এ বিষয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবলের ঘাটতি রয়েছে বিধায় উপদেষ্টা সংশ্লিষ্টদের জন্য ইইউভুক্ত দেশে এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজনের অনুরোধ করেন। এ সময় উপদেষ্টা বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ বিষয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের আন্তরিকতা ও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হলে এটি ফলপ্রসূ হবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক। তবে ধীরে ধীরে এটির উন্নতি ঘটছে। এ সময় রাষ্ট্রদূত বলেন, ইইউ বাংলাদেশের নিরাপত্তা, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। রাষ্ট্রদূত, সংঘবদ্ধ মবসহ বাংলাদেশের সামগ্রিক অপরাধ পরিসংখ্যান সম্পর্কে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমছে। রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়াচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, যত বেশি সঠিক তথ্য জনগণকে সরবরাহ করা হবে, তত বেশি অপতথ্যের বিস্তার দূরীভূত হবে। এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের প্রতিবেশী একটি দেশ বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভিন্ন গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। আমি আমাদের মিডিয়াকে সবসময় সঠিক তথ্য পরিবেশনের জন্য অনুরোধ জানিয়ে আসছি।
রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, অফিসিয়ালি বাংলাদেশে ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর চেয়েও বেশি শরণার্থী কক্সবাজারে বসবাস করছে, যা ঐ অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য হুমকিস্বরূপ। সেখানে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে আমাদের বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থাও রোহিঙ্গাদের সার্বিক জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে।
মানবপাচার ও চোরাচালান প্রতিরোধে ইইউ বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায় উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রতিবছর প্রচুর বাংলাদেশি ইউরোপে অভিবাসনের উদ্দেশ্যে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়। দালাল ও মানবপাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে অনেকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অনেকের প্রাণহানি ঘটে।
তিনি বলেন, অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার রোধে বাংলাদেশ, লিবিয়া ও ইইউ এর মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় ডায়ালগ আয়োজন ও পরবর্তীতে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে। উপদেষ্টা এ বিষয়ে ইইউকে নেতৃত্ব প্রদান ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেন। বাংলাদেশ এ বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তায় আসছে ‘হটলাইন’

বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন থেকে পুলিশের নির্ধারিত জরুরি যোগাযোগ লাইনে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন। এ উদ্যোগের মাধ্যমে যে কোনো নিরাপত্তাজনিত ঘটনা তাৎক্ষণিক জানানো এবং দ্রুত সহায়তা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো।
সোমবার (২১ এপ্রিল) পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান থেকে এ ঘোষণা আসে। তারা সম্প্রতি গাজায় হামলা নিয়ে বিক্ষোভের সময় বিদেশি কোম্পানিগুলোর কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ছয়টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিল- নেসলে বাংলাদেশ, কোকা-কোলা বাংলাদেশ বেভারেজেস, ইউনিলিভার বাংলাদেশ, বাটা সু কোম্পানি বাংলাদেশ, রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ, পেপসিকো ও জুবিল্যান্ট ফুড ওয়ার্কস বাংলাদেশ।
জানানো হয়, ৭ ও ৮ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন শহরে এসব কোম্পানির কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় অন্তত ১৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং প্রায় এক ডজন মামলা হয়েছে।
বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, আইজিপি, সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা ও বিডার কর্মকর্তাদের একসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বসা শুধু সময়োপযোগী নয়, নজিরবিহীন। এটি কেবল একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়। এটি এক ধরনের বার্তা যে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের পাশে আছে, বিশেষ করে যখন চ্যালেঞ্জ আসে।
তিনি আরও বলেন, এ কোম্পানিগুলো হাজার হাজার কর্মজীবী ও তাদের পরিবারের জীবিকার উৎস। প্রতিবাদের অধিকার আছে, কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মসংস্থান, স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে, সেগুলো ধ্বংস করা কোনো সমাধান নয়।
বিডা চেয়ারম্যান পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতির জন্য প্রশংসা করেন।
প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা ভাঙচুর, ক্ষয়ক্ষতি ও কার্যক্রমে বিঘ্ন নিয়ে সরাসরি অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। এর প্রতিক্রিয়ায় আইজিপি কার্যালয় জানায়, ভুক্তভোগী কোম্পানিগুলোর জন্য নির্দিষ্ট জরুরি যোগাযোগ লাইন চালু করা হবে, যার মাধ্যমে তারা তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশি সহায়তা পাবে।
আইজিপি বাহারুল আলম বিনিয়োগকারীদের পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, আমরা কেবল প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য এখানে আসিনি, বরং আস্থা গড়ে তুলতে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করতেই এসেছি।
এ আলোচনার ফলে বিডা, পুলিশ এবং ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে একটি প্রতিরোধ পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন নিরাপত্তা প্রটোকল, দ্রুত সাড়া দেওয়া ইউনিট এবং উন্নত সংকট যোগাযোগ চ্যানেল।
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, এ সংলাপ কেবল প্রতিক্রিয়ার জন্য নয়। এটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য। আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে, এটি সরকারের অঙ্গীকার প্রতিফলিত করে যে আমরা বিনিয়োগকারীদের পাশে থাকি শুধু ভালো সময়ে নয়, প্রতিকূল সময়েও।
কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা বিডা ও বাংলাদেশ পুলিশের উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ পরিকল্পনার প্রতি নতুন আস্থা ব্যক্ত করেন।
এ উদ্যোগ বিডার বৃহত্তর মিশনের অংশ, যার লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ, টেকসই ও বিনিয়োগবান্ধব গন্তব্য হিসেবে গড়ে তোলা, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
কাতারের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা

চার দিনের সরকারি সফরে কাতারের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে তিনি ‘আর্থনা সামিট ২০২৫’-এ অংশগ্রহণ করবেন।
সোমবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির আমন্ত্রণে এ সফরে যাচ্ছেন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে। সামিটে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি কাতারের আমিরের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
‘আমাদের উত্তরাধিকার গড়ে তোলা: স্থায়িত্ব, উদ্ভাবন ও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান’ প্রতিপাদ্যে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠেয় ‘আর্থনা সামিট’-এ কাতারের উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়ায় টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে দেশটির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও অনন্য প্রতিবেশগত বৈচিত্র্যকে কাজে লাগানোর প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হবে।
এই সামিট একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে যেখানে প্রথাগত জ্ঞান ও আধুনিক উদ্ভাবনের সমন্বয়ের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের নতুন দিক উন্মোচন করা এবং এক সমৃদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গঠনের উপায় নিয়ে আলোচনা হবে।
২২ ও ২৩ এপ্রিল সামিটে উপস্থাপনা, ইন্টারঅ্যাকটিভ প্যানেল আলোচনা, কর্মশালা ও গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম মনু গ্রেপ্তার

ঢাকা-৫ আসনের সাবেক এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনুকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। তবে তাকে কোন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেটি এখনও নিশ্চিত করা হয়নি।
সোমবার (২১ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর গুলশান গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
কাজী মনিরুল ইসলাম মনু ২০২০ সালে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
হাসিনাসহ শেখ পরিবারের ১০ জনের এনআইডি ‘লক’

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ শেখ পরিবারের ১০ সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ‘লক’ করেছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনস্ত জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ।
তারা হলেন- শেখ হাসিনা, সজীব আহমেদ ওয়াজেদ, সায়মা ওয়াজেদ, রেহানা সিদ্দিক (শেখ রেহানা), টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক, শাহিন সিদ্দিক, বুশরা সিদ্দিক, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও তারিক আহমেদ সিদ্দিক।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারিতে এক চিঠির মাধ্যমে তালিকাভুক্ত এই ১০ জনের এনআইডি লক করা হয়। দুই মাস আগের এই চিঠিটি আজ সোমবার প্রকাশ পায়।
চিঠিতে সই করেছেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর।
এতে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালকের মৌখিক নির্দেশে এই ১০ জনের এনআইডি লক করা হলো।
নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা জানান, এনআইডি লকের অর্থ হলো, এর তথ্য যাচাই, সংশোধন বা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। লক করা এনআইডি কার্যত আর ব্যবহার করা যায় না।