অর্থনীতি
সোনা চোরাচালানে রাজস্ব হারিয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে আসছে বিপুল পরিমাণ সোনা, যা সীমান্তের ৩০ জেলা দিয়ে পাচার হয় ভারতে। চোরাচালানের নিরাপদ রুট হওয়ায় বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে দেশি-বিদেশি চেরাকারবারি চক্র। ফলে ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রিজার্ভ আর ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হওয়ার তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা বিএফআইইউ।
এ পরিস্থিতিতে দেশের আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনতে সোনা চোরাচালান বন্ধের তাগিদ দিয়েছেন অংশীজনরা।
তারা বলেছেন, অর্থনীতি ধ্বংস করছে সোনা চোরাচালান। এখন অর্থনীতি সুরক্ষায় চোরাচালান বন্ধের বিকল্প নেই। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রয়োজন। বিএফআইইউকে সক্রিয়করণ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কড়া নজরদারি লাগবে।
পাশাপাশি চোরাচালান প্রতিরোধে পৃথকভাবে সরকারি মনিটরিং সেল গঠনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন-বাজুস।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইকোনোমিক রিচার্স গ্রুপ বা ইআরজির নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. সাজ্জাদ জহির গতকাল বলেন, সোনা চোরাচালানের ফলে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। এই চোরাচালানাটা কেন হচ্ছে, সেটা বিএফআইইউকে বলতে হবে। লোকে বলে, বাইরে থেকে আসা সোনা যায় ওপারে। এখন সোনা চোরাচালানে কারা লাভবান হয়, সেটা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে। কেননা, চোরাচালান বাণিজ্যের বিনিময় ব্যাপার।
রাষ্ট্রীয় স্বায়ত্তশাসিত জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ বা বিআইআইএসএসের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। বিমান বন্দরগুলোতে যাত্রীসেবা কার্যক্রম উন্নত হয়েছে। আবার প্রতিদিনই বিমান বন্দরগুলোতে চোরাচালানের মাধ্যমে আসা সোনা ধরা পড়ছে।
বর্তমান সরকারের আমলে সোনা চোরাচালান হওয়া দুঃখজনক। অন্যদিকে দেশে সৎভাবে জুয়েলারি ব্যবসা পরিচালানার জন্যও বর্তমান সরকারকে সোনা চোরাচালান বন্ধের কর্মসূচি নিতে হবে। যারা চোরাচালান করছে, তাদের শাস্তি দিতে হবে। বাজুসকে যুক্ত করে জুয়েলারি শিল্প এগিয়ে নিতে হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।
বাজুসের মুখপাত্র ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, দেশের অধিকাংশ জুয়েলারি ব্যবসায়ী সৎ ও সততার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করেন। কিন্তু প্রচলিত আইনি কাঠামো জুয়েলারি শিল্পবিরোধী। যারা সৎভাবে ব্যবসা করতে চান, তারা কঠিন বাস্তবতার শিকার হচ্ছেন। একটি নীতিমালা হলেও, তার সঠিক বাস্তবায়ন আজও হয়নি। বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ- জুয়েলারি শিল্প বিকাশে কার্যকর উদ্যোগ নিন।
বাজুসের এই নেতা সোনা চোরাচালান বন্ধের দাবি জানিয়ে আরো বলেন, বিদেশে অর্থ পাচার বা হুন্ডি বন্ধ করতে হলে সোনা চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। এজন্য সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করতে হবে সরকারকে। ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। দেশে বড় বড় আকারের বিদেশি সোনা এবং হীরার অলংকার কোথা থেকে কীভাবে আসে, এই সোনার বৈধ উৎস কী, কোনো বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, আগস্ট মাসে প্রবাসীরা ২২২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন দেশে। এর আগে গত বছর আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে আসে। সূত্র বলছে, মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের রক্তে-ঘামে অর্জিত রেমিট্যান্স মার্কিন ডলারের বদলে পাচার হয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশ ঢুকেছে অবৈধ সোনা হিসেবে। এই সোনার বড় চালান পুনরায় পাচার হয়েছে দেশের স্থল ও নৌপথে অন্য দেশে। অবৈধভাবে চোরাচালানের ফলে বছরে ৯১ হাজার কোটি টাকা হন্ডিতে পাচার হওয়ার তথ্য দিয়েছে বাজুস। অপরদিকে অব্যাহত ডলারসংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ফলে ডলারসংকট কাটছে না। ব্যাংকগুলো সময়মতো এলসি খুলতে পারছে না। ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি।
এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, রিজার্ভের অর্থ হুন্ডিতে আসার ফলে সোনা চোরাচালানসহ সব ধরনের চোরাকারবারি বেড়ে যায়। কেন ৯১ হাজার কোটি টাকার সোনা ও হীরা চোরাচালান হচ্ছে তা সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে খতিয়ে দেখতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, চোরাকারবারিদের ধরতে বিএফআইইউকে সক্রিয় হতে হবে। চোরাচালানে সোনা কীভাবে আসে, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। পাচার হওয়া সোনা কীভাবে দেশে আসছে, সেই পথ বন্ধ করতে হবে। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনতে চোরাচালান বন্ধের বিকল্প নেই। সর্বশেষ গত ৩ জুন সোনা ও হীরা চোরাচালানে বছরে ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা পাচার হওয়ার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বাজুস বলেছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৩০টি জেলার সীমান্ত অবস্থিত।
এর মধ্যে খুলনা বিভাগের ৬টি মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর ও সাতক্ষীরা জেলা সোনা চোরাচালানের নিরাপদ রুট হয়ে উঠেছে। ভারতে পাচার হওয়া সোনার বড় একটি অংশ এসব জেলার সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে থাকে। বাজুস চোরাকারবারিদের ধরতে সুপারিশে বলেছে, সোনা ও হীরা চোরাচালানে জড়িতদের ধরতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জোরালো অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। সোনা ও হীরা চোরাচালান প্রতিরোধে বাজুসকে সম্পৃক্ত করে পৃথকভাবে সরকারি মনিটরিং সেল গঠন করা জরুরি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ১০১ দশমিক ৮৯ কোটি টাকার সোনা জব্দ করা হয়েছে।
২০১৪ থেকে ২০২৩ সালে বিজিবি সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে ৯২৫ কেজি সোনা জব্দ করেছে। গত ১০ বছরে শুল্ক গোয়েন্দা, কাস্টম হাউস, বিজিবি, পুলিশ ও এয়ারপোর্ট এপিবিএন সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৫৮৩ কেজি সোনা জব্দ করে। বিএফআইইউর তথ্য অনুযায়ী, এই সময়কালে সোনা যদি আনুষ্ঠানিক পথে আমদানি করা হতো তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকে ২২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ জমা হতো, যা থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণ হতো প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
ঢাকা কাস্টমস হাউজের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমেই ২০২০ সালে ২ দশমিক ৭৭৫ টন, ২০২১ সালে ২৫ দশমিক ৬৮৯ টন, ২০২২ সালে ৩৫ দশমিক ৭৩৩ টন এবং ২০২৩ সালে ৩১ দশমিক ৪৬৮ টন সোনার বার ব্যাগেজ রুলের আওতায় আমদানি হয়েছে। কাস্টমসের তথ্যমতে, ২০২০ থেকে ২০২২ সালে শিল্পে ব্যবহারের জন্য চারটি চালানে ২ কেজি ১৬০ গ্রাম ডায়মন্ড আমদানি করা হয়েছে। তবে কোনো হীরার অলংকার আমদানি হয়নি। অবৈধ পথে হীরা আসছে। এর বড় কারণ শুল্ক ফাঁকি।
গত ১৯ বছরে এই মূল্যবান রত্ন আমদানিতে সরকার মাত্র ১২ কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দেশের হীরার বাজার প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার। হীরা চোরাচালানের সঙ্গে কারা জড়িত, তাও দ্রুত চিহ্নিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জোরালো ভূমিকা প্রয়োজন বলে মনে করছে বাজুস। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২ ধারায় সোনা চোরাচালানকে মানি লন্ডারিংয়ের স¤পৃক্ত অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আইনে সেখানে ১২ বছর পর্যন্ত কারাদ এবং ২০ (বিশ) লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অপরাধীর মূল হোতা আড়ালে থেকে যায় এবং ধরা পড়ে চুনোপুঁটিরা। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও আইনের বেড়াজালে জামিনে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে চুনোপুঁটির দল। ফলে চোরাচালান চলছে তাদের নিজস্ব গতিতেই।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
১০ সাংবাদিকসহ ১১ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ
দশ সাংবাদিকসহ ১১ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একইসঙ্গে তাদের ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও স্থগিত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি।
দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছে বিএফআইইউ।
হিসাব জব্দ করা ব্যক্তিরা হলেন- দৈনিক বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক চৌধুরী জাফরুল্লাহ শারাফত, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান, টিভি টুডে প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ওয়াশিংটনের সাবেক প্রেস মিনিস্টার সাজ্জাদ হোসেন সবুজ, ডিবিসি নিউজের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর নাজনীন নাহার মুন্নি, ইনডিপেনডেন্ট টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক আশীষ ঘোষ সৈকত, গাজী টিভির এডিটর (রিসার্চ) অঞ্জন রায়, সময় টিভির চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ কমল দে, দৈনিক আমার সময়ের প্রধান সম্পাদক আব্দুল গাফফার খান, যুগান্তরের সাবেক নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি রাজু আহমেদ এবং এক্সিম ব্যাংকের হেড অব পিআরও সঞ্জীব চ্যাটার্জী।
হিসাব জব্দ করা ব্যক্তি ও তাদের ব্যক্তি মালিকানা ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টের সব ধরনের লেনদেন আগামী ৩০ দিন বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে লেনদেন স্থগিত করার এ সময় বাড়ানো হবে।
লেনদেন স্থগিত করার এ নির্দেশের ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা সংশ্লিষ্ট ধারা প্রযোজ্য হবে বলে বিএফআইইউয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে আলোচিত ব্যক্তিদের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেওয়া হয়েছে।
বিএফআইইউয়ের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, যেসব হিসাব স্থগিত করা হয়েছে, তাদের হিসাব সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী যাবতীয় তথ্য চিঠি দেওয়ার তারিখ থেকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউতে পাঠাতে হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
২৩ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২০ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা
দেশে চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ২৩ দিনে বৈধপথে ১৭২ কোটি ৬৩ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২০ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে)। সে হিসেবে দৈনিক গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
রবিবার (২৪ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ২৩ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৪ কোটি ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৩ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৯৫ কোটি ১৩ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪ মাসে দেশে ৮৯৩ কোটি ৭১ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৬৮৭ কোটি ৮৩ লাখ মার্কিন ডলার। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার এবং অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ, সেপ্টেম্বর মাসে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ, নভেম্বরে ১৯৩ কোটি, ডিসেম্বরে ১৯৯ কোটি ১২ লাখ, জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ, মার্চ মাসে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মে মাসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ এবং জুন মাসে ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
উত্তরা ব্যাংকের এমডি রবিউলের বিচারের দাবি
উত্তরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীকে মাফিয়া হিসেবে আখ্যায়িত করে ব্যাংকটির মতিঝিল প্রধান শাখা ঘেরাও করেছে একদল ছাত্র জনতা। এ সময় উত্তরা ব্যাংকের নানান অভিযোগে বিক্ষোভ করেন তারা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
চীনা ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান বিডার
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পরবর্তী পরিস্থিতিতে চীন-ভিত্তিক ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। এক ‘খোলা চিঠি’তে তিনি বলেন, চীন-ভিত্তিক ব্যবসায়ী, যারা তাদের উৎপাদন কেন্দ্র স্থানান্তর বা বৈচিত্র্য আনতে আগ্রহী তাদের জন্য বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় গন্তব্য হয়ে উঠতে প্রস্তুত।
সিঙ্গাপুরের বহুজাতিক দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) সাবেক সিনিয়র ব্যাংকার আশিক চৌধুরী আরও বলেন, ‘মার্কিন নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতিতে চীন-ভিত্তিক ব্যবসায়ীদের জন্য শুল্ক ও শুল্কহার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।’
‘এই প্রেক্ষাপটে, আমরা চীনের বিনিয়োগকারী বন্ধুদের আহ্বান জানাই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের সমর্থন জানাতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
‘আমরা গার্মেন্টস, ইলেকট্রনিক্স, সোলার ভ্যালু চেইন এবং অটোমোটিভের মতো শিল্পে সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। আমরা বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় প্রণোদনা কর্মসূচি এবং সুবিধাসহ বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ,’ বলেন তিনি।
গত মাসে বহুজাতিক ও স্থানীয় কোম্পানির অন্তত ২০০ জন প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে দেখা করেছেন বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের অধীনে বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে লাভবান হবে বলে আশা জানান তিনি।
আশিক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে চীন-ভিত্তিক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তাদের ঝুঁকি এবং উত্পাদন বৈচিত্র্যময় করার ক্ষেত্রে ব্যাপক আগ্রহের কথা জানতে পেরেছি।’
চীন বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অংশীদার এবং ২০২২ সালে বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) বৃহত্তম উৎস হয়ে উঠে। নতুন ট্রাম্প প্রশাসন ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রবণতা বাড়বে বলে আশা জানান আশিক।
আশিক চৌধুরী বলেন, ‘বিনিয়োগ ব্যাংকার হিসেবে গত এক দশক ধরে চীনা ব্যবসায়ীদের আঞ্চলিক সম্প্রসারণ আমি পর্যবেক্ষণ করে আসছি। এর আগে তাদেরকে সমর্থন জানানোর সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। নতুন মার্কিন রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপে চীনা ব্যবসায়ীদের আঞ্চলিক সম্প্রসারণের প্রবণতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।’
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
এলডিসি উত্তরণের কারণে বাড়বে না ওষুধের দাম
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের কারণে দেশের বাজারে ওষুধের দাম বাড়বে না। তবে ওষুধশিল্পে কাঠামোগত সমস্যার সমাধান না হলে সংকট তৈরি হতে পারে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর বনানীর হোটেল শেরাটনে এক অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশের ওষুধশিল্পে এলডিসি উত্তরণের প্রভাব ও স্থানীয় বাজারে ওষুধের দাম’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এলডিসি থেকে উত্তরণের কারণে দাম না বাড়ার বিষয়ে একমত হন খাতসংশ্লিষ্টরা। তবে তারা বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম অনেক বাড়ার কারণে দেশের ওষুধশিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমছে।
এম এ রাজ্জাক বলেন, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর দেশের বাজারে ওষুধের দাম বাড়বে কিনা, এ নিয়ে ওষুধশিল্প-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি তথ্যগত গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশ ২০২৩ সালে নতুন যে পেটেন্ট আইন করেছে, সেখানে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সুযোগ-সুবিধা ধরে রাখা হয়েছে। ফলে উত্তরণের পর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যে উদ্বেগ ছিল, তা নিরসন করা সম্ভব হয়েছে। ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কী করা যাবে, তা এ আইনে বলে দেওয়া হয়েছে।
কোন পরিস্থিতিতে কী হতে পারে, তার একটি প্রক্ষেপণ দিয়েছে র্যাপিড। এ প্রসঙ্গে এম এ রাজ্জাক বলেন, যেসব ওষুধ বাংলাদেশে তৈরি হয় না, সেগুলো আমদানির সঙ্গে এলডিসি থেকে উত্তরণের সম্পর্ক নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে উৎপাদিত ৫ থেকে ১০ শতাংশ ওষুধে মেধাস্বত্ব প্রযোজ্য, এগুলোর ক্ষেত্রেও ডব্লিউটিওর বিধান অনুসারে বাংলাদেশ মেধাস্বত্ব দিতে বাধ্য নয়। পেটেন্ট আইনেও বিষয়টি সেভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, অর্থাৎ সেগুলো নিয়েও চিন্তা করতে হবে না।
এলডিসি থেকে উত্তরণের পর যেসব ওষুধ পেটেন্টের আওতায় আসবে, সেগুলো উৎপাদনের ক্ষেত্রে কী করতে হবে, তা আইনে উল্লেখ আছে। তাতে বলা হয়েছে, এসব ওষুধ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলে ডব্লিউটিওর আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে ৪ শতাংশ লয়্যালটি দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে দেশের বাজারে ওষুধের দাম ২ থেকে ৪ শতাংশ বাড়বে।
এম এ রাজ্জাক বলেন, সার্বিকভাবে বলা যায়- শুধু এলডিসি থেকে উত্তরণের কারণে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা একেবারেই কম। তবে অন্যান্য কারণে, যেমন ওষুধ তৈরির অন্যতম কাঁচামাল অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টের (এপিআই) দাম বাড়লে ওষুধের দাম বাড়তে পারে। তবে এখন রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে ওষুধ খাতে যে নগদ প্রণোদনা পায়, এলডিসি উত্তরণের পর তা দেওয়া যাবে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রণোদনা কিছুটা কমানো হয়েছে। এতে কিছুটা চাপ পড়তে পারে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য ব্যয় অনেক বেশি। এর মূল কারণ, এ খাতে বাজেট বরাদ্দ বিশ্বের যেসব দেশে সবচেয়ে কম, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। র্যাপিডের সুপারিশ, স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির সঙ্গে দরিদ্র ও অরক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য ক্ষুদ্র স্বাস্থ্য বীমা প্রবর্তন করা হোক।
এমআই