রাজনীতি
শিবির সেক্রেটারির সঙ্গে আলোচনা করে ৯ দফা তৈরি: সমন্বয়ক কাদের

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঘোষিত নয় দফা নিয়ে এবার মুখ খুললেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের। নয় দফা কিভাবে ঘোষণা হয়েছিল সে বিষয়ে রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিজের ফেসবুক পেজে বিস্তর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন তিনি।
আব্দুল কাদের লিখেছেন, ‘কোটা সংস্কারকে উদ্দেশ্য করে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল; কিন্তু সরকার পরিস্থিতি ঘোলাটে করলে আন্দোলন ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় নয় দফার অবতারণা হয়।’
‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিলাম; কিন্তু ১৬ তারিখ মঙ্গলবার আবু সাঈদসহ ৬ জন যখন শহীদ হন। ওইদিন রাত ১২ টায় সামনের সারির সমন্বয়করা মিলে আমরা একটা অনলাইন মিটিং করি। মিটিংএ প্রথম এজেন্ডাই ছিল আজকে যে ছয়জন শহীদ হলেন, এই ছয়টা লাশের বিনিময়ে শুধু কোটা সংস্কার কি না? তখন সবাই হই হই করে বলে উঠে, ছয়টা লাশের বিনিময়ে শুধু কোটা সংস্কার হতে পারে না। পরবর্তীতে দীর্ঘক্ষণ আলাপ আলোচনা করা হয়।
এই আলোচনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিসহ আরো কিছু দাবি দাওয়া উঠে আসে। বলে রাখা ভালো, আমরা এতোদিন “বাংলা ব্লকেড” থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি পেশসহ নানান সফট এবং হার্ড কর্মসূচি নিয়ে মাঠে অবস্থান করেছিলাম; কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে একেবারে নির্বিকার-নির্লিপ্ত মনোভাব পরিলক্ষিত হয়েছিল। আলাপ-আলোচনার ধার ধারেনি সরকার, কেবল হাইকোর্টের কাঁধে বন্দুক রেখে চুপচাপ দেখে যাচ্ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি যখন বেগতিক হয়ে যায়, ৬ জন শহীদ হয়; ওইদিনই সরকার আলোচনার জন্য তোড়জোড় শুরু করে দেয়, আমাদেরকে বিভিন্ন মাধ্যমে চাপ দিতে থাকে আলোচনায় বসার জন্য।
কিন্ত আমরা আলোচনার আহ্বানকে বরাবরের মতোই প্রত্যাখ্যান করে নিজেদের দৃঢ় অবস্থান প্রকাশ করি। যদিও ভিতর-বাহির থেকে আলোচনায় বসার নানারকম চাপ আসছিল।’
তিনি বলেন, ‘সরকার সংলাপের আহ্বান ফরমালি জানিয়েছিল কিন্ত সেটার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের অবস্থান ফরমালি ক্লিয়ার করিনি। ক্লিয়ার করার সুযোগও পাইনি। বুধবার গায়েবানা জানাযায় ঢাবি ক্যাম্পাসে পুলিশ আমাদের উপর গুলি চালায়, আমিসহ কয়েকজন আহত হই।
হান্নান মাসউদ গুলিবিদ্ধ হন। তখন থেকেই আমরা আন্দোলন পরিচালনা করে যাবার স্বার্থে কৌশলী অবস্থান নিয়ে গ্রেপ্তার এড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই। যদিও সরকারের সংলাপকে প্রত্যাখ্যান করে মঙ্গলবার রাতে আমরা কিছু দাবি দাওয়া ঠিক করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে সবাই মিলে আলাপ-আলোচনা করে যে সেই দাবিগুলো ফাইনাল করব সে সময় পাইনি। তবে আমরা বৃহস্পতিবার মাঠের কর্মসূচি (কমপ্লিট শাটডাউন) দিয়ে নিজেদের অবস্থান ক্লিয়ার করেছিলাম। বৃহস্পতিবার আমি আর আসিফ ভাই এক বাসা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভিন্ন ভিন্ন গন্তব্যে চলে যাই। ওইদিন ১৮ তারিখ রাতেই ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার। আমরাও কর্মসূচি চলমান রাখতে, গ্রেপ্তার এড়াতে বার বার জায়গা পরিবর্তন করে বেড়াচ্ছি। কারো সাথে তেমন কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না।’
‘আন্দোলনের শুরুতেই নাহিদ ভাই আমাকে ডেকে নিয়ে এক লোকের সাথে মিট করায় এবং পরবর্তীতে আন্দোলনের পারপাসে একাধিকবার ওই লোকের সাথে যোগাযোগ হয়; পরবর্তীতে জানতে পারি তিনি ঢাবি শিবিরের ছাত্র আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। কিন্ত তখনো শিবিরের সভাপতি এবং সেক্রেটারির সাথে ওইভাবে যোগাযোগ হয়নি।’
‘শুক্রবার যাত্রাবাড়ি এলাকায় যখন আন্দোলন করছিলাম তখন শিবিরের ঢাবি সেক্রেটারি ফরহাদ ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, “আন্দোলনরত কয়েকজন সমন্বয়ক সরকারের মন্ত্রীদের সাথে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে, এতো এতো শহীদের রক্তের সাথে বেইমানী করতেছে তারা। আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে। কিছু দাবি-দাওয়া দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে, মানুষের সাথে বেইমানি করা যাবে না।” আমি সম্মতি জানাই। আমাদের তো আগেই অবস্থান ছিল আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার। তাছাড়া মঙ্গলবার রাতের মিটিংয়ে ঠিক করা কিছু দাবি দাওয়া আমার মাথায় আছে।’
‘আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার মতো মাঠে কোনো সিনিয়র নেই। আসিফ-নাহিদ ভাইকে গুম করে রেখেছে। আমি সাত-পাঁচ না ভেবে রিস্ক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। ওইদিন জুমার নামাজের পর পরই যাত্রাবাড়ীতে কয়কজন শহীদ হন, সবগুলা আমার চোখের সামনেই ঘটতেছে। মানুষকে পাখির মতো গুলি করে মেরে ফেলছে, এটা আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। তাছাড়া দীর্ঘদিন জেল-জুলুম, হামলা-মামলার শিকার হয়ে হাসিনার এমন অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলে গেছি; মাথা নত করিনি। আমার পরিণতি কি হবে, সেটা ঘুনাক্ষরেও কল্পনা করিনি। চোখের সামনে মানুষ মেরে ফেলছে, মানুষের কথা চিন্তা করে নিজের জীবনের কথা ভাবার সময় পাইনি। গত ৪/৫ বছর ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াই আমাদেরকে দৃঢ়তা ধরে রাখার শিক্ষাই দিয়েছে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে হাল ধরার সিদ্ধান্ত নিই।’
‘যাইহোক, কিছুক্ষণ বাদে শিবিরের সেক্রেটারি আমাকে আবারো ফোন দিলেন। বলছেন, “কিছু দাবি দাওয়া খসড়া আকারে করছি, তোমার সাথে আলোচনা করি”৷ আমাদেরও যেহেতু আগেই আলোচনা হয়েছিল অনেকগুলো দাবির ব্যাপারে সেগুলো তখন উনার সাথে আলোচনা করে সমন্বিতভাবে তৈরী হয় ৯ দফা।’
‘তিনি একে একে কিছু দাবি বললেন। যেগুলা খুব কমন দাবিদাওয়া- যেমন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ, ছাত্র হত্যার সাথে জড়িত পুলিশ প্রশাসনকে বরখাস্ত, সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনা, ভিসি’র পদত্যাগ। যেগুলা ৬ জন শহীদ হওয়ার পরে মঙ্গলবার রাতের বৈঠকের আলোচনাতেই আমরা ভেবেছিলাম। এছাড়া মানুষজনও সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কিছু দাবিদাওয়া জানিয়ে আসছিল। শেষের দিকে গিয়ে শিবিরের সেক্রেটারি একটা দাবি এড করলেন, “ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে” এটা আমি মানি নাই, দীর্ঘক্ষণ আলাপ আলোচনা হল। পরে আমি বললাম, ঢালাওভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা যাবে না, এক্ষেত্রে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলতে পারেন। পরে সেটাই ঠিক হল, “লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে”।
‘এই হইলো নয় দফা তৈরির পেছনের গল্প। তবে নয় দফা প্রচার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল শিবির। যেহেতু নেট নেই, গোলাগুলি-কারফিউয়ের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সশরীরে হাউজে হাউজে পৌঁছে দিয়েছে, বিদেশি সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা তারাই করেছে।’
‘আমাকে নতুন একটা সীম এবং মোবাইল কালেক্ট করার পরামর্শ দিল তারা। আমি স্টুডেন্টের বাসা থেকে সীম নিয়ে ওই নম্বরটা নয় দফা সংবলিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির সাথে দিয়ে দিলাম। ওইদিন সন্ধ্যায় বাসা থেকে ৪-৫ কিলো দূরে হেটে গিয়ে পরিচিত সাংবাদিকদেরকে ফোন দিয়ে নয় দফার বিষয়টা জানালাম। টুকটাক ছাত্র রাজনীতি করার সুবাদে ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদের সাথে আমার পরিচয় ছিল। তো ওই রাতে তাদের অনেককে একটা একটা করে দফা বাটন ফোন দিয়ে ম্যাসেজের মাধ্যমে দাবিগুলা লিখে পাঠাইছি। পুরা নয়টা দাবি একসাথে ম্যাসেজে পাঠানো যায় না। কাউকে আবার মুখে বলে দিয়েছি, সে লিখে নিয়েছে। কেউ আবার রেকর্ড করে নিয়েছেন। কনফার্ম হওয়ার জন্য অনেকেই ফোন দিয়েছেন, এটা আসলেই আমি দিয়েছি কি না। বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলাকেও ফোন দিয়ে কনফার্ম করতে হয়েছে, ‘আমার পক্ষ থেকে এটা যাচ্ছে, আপনাকে একজন পেনড্রাইভের মাধ্যমে পৌঁছে দেবেন।’ এইভাবে চলল রাতের ১১ টা পর্যন্ত।’
‘প্রতিদিন রাতের বেলায় বাসা থেকে দূরে চলে যেতাম। ফোন অন করে সাংবাদিকদের সাথে ২-৩ ঘন্টা কথাবার্তা বলে, তাদেরকে কনফার্ম করে, ফোন বন্ধ করে আবার বাসায় ফিরতাম। সিনিয়ররা গুম অবস্থায় ছিল, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না বাকিদের সাথেও। এইভাবেই চলতে থাকল। আমার বাসা ছিল যাত্রাবাড়ী থানার পাশেই। গ্রেপ্তারের আতঙ্ক, তারপরও বাসায় থাকতে হতো। শুরুতেই যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না। কোনো রাত মসজিদে কাটিয়েছি, কোনো রাত অর্ধেকটা বাইরে কিংবা বাসার ছাদে কাটিয়ে শেষ রাতে বাসায় ফিরেছি।’
‘এইতো ঐতিহাসিক নয় দফা, আমাদের নয় দফা,
ফ্যাসিস্ট হাসিনা থেকে মুক্তি লাভের সনদ!’
এমআই

রাজনীতি
গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি তারেক রহমানের শ্রদ্ধা

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে কোনো আবেগতাড়িত বা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে চরমপন্থা বা ফ্যাসিবাদ যাতে পুনরায় ক্ষমতা লাভ করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তারেক রহমান। শনিবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবদান ও শহীদদের স্মরণে স্মরণসভায়’ তিনি অনলাইনে যুক্ত হয়ে এ মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা যেভাবে জনগণের হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে আছেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের শহীদরাও একইভাবে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে থাকবেন। তিনি বলেন, গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলেও, ১৬ তারিখের পর তা কেবল কোটায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং সেই সময়েই দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছিল যে, মাফিয়া সরকারের পতন শুধু সময়ের ব্যাপার। এই বিশ্বাস থেকেই সকল গণতান্ত্রিক দল একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল এবং এটি নিশ্চিত করা হয়েছিল যাতে আন্দোলন কোনো একক দলের পরিচয়ে পরিচিত না হয়।
তারেক রহমান আরও বলেন, তিনি ২০১৪ সাল থেকেই কোটা ব্যবস্থার সমালোচনা করে আসছেন। তার মতে, গণঅভ্যুত্থানের বীর শহীদরা জাতির গৌরব। তাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ার মধ্য দিয়েই তাদের প্রতি যথার্থ সম্মান জানানো সম্ভব। আর এই কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রথম ও প্রধান শর্তই হলো ‘জনগণের সরকার’ প্রতিষ্ঠা। এর জন্য এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা জরুরি, যেখানে জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পারবে।
রাজনীতি
জামায়াত আমিরকে দেখতে হাসপাতালে মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান-কে দেখতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে গেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার (১৯ জুলাই) সন্ধ্যায় তিনি হাসপাতালে যান।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকেল ৫টার পর বক্তব্য শুরু করেন জামায়াত আমির। ৫টা ২০ মিনিটের দিকে প্রথমবার অসুস্থ হয়ে তিনি নিচে পড়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর মঞ্চের অন্য নেতাদের সহযোগিতায় তিনি উঠে দাঁড়ান। এ সময় নেতারা তাকে ধরে রাখেন এবং কেউ কেউ তার খোলা মাথায় বাতাস করেন। ৫টা ২৩ মিনিটে তিনি আবার বক্তব্য শুরু করেন। এক মিনিট বক্তব্য না দিতেই ফের অসুস্থ বোধ করলে ক্ষণিকের জন্য বক্তৃতা বন্ধ করেন। এরপর ডান হাত দিয়ে বুক চেপে ধরেন এবং তাকে পড়ে যেতে দেখা যায়। এ সময় অন্য নেতারা চারপাশ থেকে তাকে ধরে বসিয়ে দেন। বসা অবস্থাতেই তিনি বক্তৃতা চালিয়ে যান।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আল্লাহ আমার হায়াত যতক্ষণ রেখেছেন, তার এক মিনিটও বেশি থাকতে পারব না। সুতরাং এটা নিয়ে আপনারা কেউ বিচলিত হবেন না।”
তিনি আল্লাহ যাতে তাকে শহীদি মৃত্যু দেন, সেই কামনা করেন। এরপর ‘আল্লাহু আকবার, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ বলে জামায়াত আমির তার বক্তৃতা শেষ করেন।
রাজনীতি
আগামীর বাংলাদেশে আরও একটি লড়াই হবে: ডা. শফিক

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশে আরও একটি লড়াই হবে। তিনি বলেন, “আমি বলতে চাই আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে? আমি বলব আরেকটা লড়াই হবে ইনশাআল্লাহ। একটা লড়াই হবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আরেকটা লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে।”
শনিবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত জাতীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “এই দুর্নীতির মূল উৎপাটনের জন্য যা করা দরকার, আমরা তারুণ্য ও যৌবনের শক্তিকে একত্র করে সেই লড়াইয়েও ইনশাআল্লাহ বিজয় লাভ করব।”
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, “জামায়াতে ইসলামী যে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তুলবে, তার প্রমাণ কী? সবাইকে নিয়েই তা গড়ে তুলব। আমরা কথা দিচ্ছি, মুক্তি অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই অব্যাহত থাকবে।”
বক্তব্য দিতে গিয়ে মঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। এ সময় জামায়াতের চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি বসেই বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন এবং বলেন, “আল্লাহ আমার হায়াত যতক্ষণ রেখেছেন তার এক মিনিটও বেশি থাকতে পারব না আমি। সুতরাং এটা আপনারা কেউ বিচলিত হবেন না।”
শাসনক্ষমতায় গেলে কী করবেন, তা জানিয়ে তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামী যদি আল্লাহর ইচ্ছায় দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পায়, তাহলে মালিক হবে না, সেবক হবে ইনশাআল্লাহ।”
ঘোষণা দিয়ে আমিরে জামায়াত বলেন, “আজ আমি ঘোষণা দিচ্ছি, লাখো জনতাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে যারা আগামীতে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করবেন, কোনো এমপি, কোনো মন্ত্রী সরকার থেকে কোনো প্লট গ্রহণ করবে না, ট্যাক্সবিহীন গাড়িতে চড়বে না, নিজের হাতে টাকা চালাচালি করবে না, নিজেদের নির্দিষ্ট কাজের জন্য যে বরাদ্দ পাবেন, কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৮ কোটি মানুষের কাছে হিসাবের প্রতিবেদন তুলে ধরবেন।”
এ সময় তিনি সতর্ক করে বলেন, “চাঁদা আমরা নেব না, দুর্নীতি আমরা করব না। চাঁদা আমরা নিতে দেব না, দুর্নীতি আমরা সহ্য করব না।”
রাজনীতি
বক্তব্য দিতে গিয়ে অসুস্থবোধ, মঞ্চে বসে বক্তব্য শেষ করলেন জামায়াত আমির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় অসুস্থবোধ করায় দুবার মঞ্চে লুটিয়ে পড়েন। এরপর তিনি মঞ্চে বসেই তার বক্তব্য শেষ করেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আবু সাঈদরা বুক পেতে না দিলে এই বাংলাদেশ আমরা দেখতাম না। যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীনতা পেয়েছি, আমরা যেন তাদেরকে অবজ্ঞা না করি।”
জামায়াতের এই মহাসমাবেশে অংশ নিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী জড়ো হয়েছিলেন। দলটির পক্ষ থেকে দেশের ডান ও ধর্মভিত্তিক ঘরানার একাধিক রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ন্যাশনাল সিটিজেন্স পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, গণঅধিকার পরিষদসহ বেশ কয়েকটি দল সমাবেশে তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছে।
রাজনীতি
নতুন সংবিধান লাগবে, জামায়াতের সমাবেশে সারজিস আলম

আমাদের নতুন সংবিধান লাগবে। গণপরিষদ নির্বাচন লাগবে। নারীদের অধিকার ও সংখ্যালঘু ভাই-বোনদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশে যোগ দিয়ে তিনি একথা বলেন।
সারজিস বলেন, অভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে আমরা আরেক বছরে এসে উপস্থিত হয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে মুজিববাদীদের ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। গোপালগঞ্জে মুজিববাদীদের আস্তানা গড়ে উঠেছে। মুজিববাদের সদস্যরা এখনো বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয়। এই মুজিববাদ একটি আদর্শ। শুধু আইনিভাবেই মুজিববাদের মোকাবিলা করা যাবে না। আমাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবেই মুজিববাদের কোমর ভেঙে দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু স্বৈরাচারের প্রশ্নে অভ্যুত্থানের সব শক্তি একসঙ্গে থাকতে হবে। এই বাংলাদেশে আবার নতুন করে মুজিববাদী ভারতপন্থি শক্তিগুলো এখন সক্রিয় হচ্ছে। আমাদের মতবিরোধ থাকতে পারে তবে এই বাংলাদেশে বাংলাদেশপন্থি ব্যতীত অন্য কোনো পন্থির জায়গা হবে না। এই বাংলাদেশে আর কোনো ভারতীয় আধিপত্যবাদের জায়গা হতে দেওয়া যাবে না। অন্য যে কোনো দেশের নামে বাংলাদেশ হতে দেওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, হাজারের অধিক ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে। একটা আকাঙ্ক্ষা ছিল, জুলাই-আগস্টের ৫ তারিখ আমাদের যে স্বপ্ন ছিল আরেক ৫ আগস্ট আসতে চলেছে আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা সুশীল সরকারের ভূমিকায় চাই না। এই বাংলাদেশে খুনি হাসিনার বিচারের রায় হতেই হবে।
সারজিস বলেন, এই বাংলাদেশের বিচার বিভাগে কোনো দলের বিচার বিভাগ হিসেবে আমরা দেখতে চাই না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ক্ষমতার তোষামদের বাহিনী হিসেবে দেখতে চাই না। কেউ চাঁদাবাজি করলে আমরা সেটা মুখের ওপর বলবো। কিন্তু স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে আমরা একতাবদ্ধ থাকবো।