রাজনীতি
শিবির সেক্রেটারির সঙ্গে আলোচনা করে ৯ দফা তৈরি: সমন্বয়ক কাদের

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঘোষিত নয় দফা নিয়ে এবার মুখ খুললেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের। নয় দফা কিভাবে ঘোষণা হয়েছিল সে বিষয়ে রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিজের ফেসবুক পেজে বিস্তর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন তিনি।
আব্দুল কাদের লিখেছেন, ‘কোটা সংস্কারকে উদ্দেশ্য করে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল; কিন্তু সরকার পরিস্থিতি ঘোলাটে করলে আন্দোলন ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় নয় দফার অবতারণা হয়।’
‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিলাম; কিন্তু ১৬ তারিখ মঙ্গলবার আবু সাঈদসহ ৬ জন যখন শহীদ হন। ওইদিন রাত ১২ টায় সামনের সারির সমন্বয়করা মিলে আমরা একটা অনলাইন মিটিং করি। মিটিংএ প্রথম এজেন্ডাই ছিল আজকে যে ছয়জন শহীদ হলেন, এই ছয়টা লাশের বিনিময়ে শুধু কোটা সংস্কার কি না? তখন সবাই হই হই করে বলে উঠে, ছয়টা লাশের বিনিময়ে শুধু কোটা সংস্কার হতে পারে না। পরবর্তীতে দীর্ঘক্ষণ আলাপ আলোচনা করা হয়।
এই আলোচনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিসহ আরো কিছু দাবি দাওয়া উঠে আসে। বলে রাখা ভালো, আমরা এতোদিন “বাংলা ব্লকেড” থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি পেশসহ নানান সফট এবং হার্ড কর্মসূচি নিয়ে মাঠে অবস্থান করেছিলাম; কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে একেবারে নির্বিকার-নির্লিপ্ত মনোভাব পরিলক্ষিত হয়েছিল। আলাপ-আলোচনার ধার ধারেনি সরকার, কেবল হাইকোর্টের কাঁধে বন্দুক রেখে চুপচাপ দেখে যাচ্ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি যখন বেগতিক হয়ে যায়, ৬ জন শহীদ হয়; ওইদিনই সরকার আলোচনার জন্য তোড়জোড় শুরু করে দেয়, আমাদেরকে বিভিন্ন মাধ্যমে চাপ দিতে থাকে আলোচনায় বসার জন্য।
কিন্ত আমরা আলোচনার আহ্বানকে বরাবরের মতোই প্রত্যাখ্যান করে নিজেদের দৃঢ় অবস্থান প্রকাশ করি। যদিও ভিতর-বাহির থেকে আলোচনায় বসার নানারকম চাপ আসছিল।’
তিনি বলেন, ‘সরকার সংলাপের আহ্বান ফরমালি জানিয়েছিল কিন্ত সেটার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের অবস্থান ফরমালি ক্লিয়ার করিনি। ক্লিয়ার করার সুযোগও পাইনি। বুধবার গায়েবানা জানাযায় ঢাবি ক্যাম্পাসে পুলিশ আমাদের উপর গুলি চালায়, আমিসহ কয়েকজন আহত হই।
হান্নান মাসউদ গুলিবিদ্ধ হন। তখন থেকেই আমরা আন্দোলন পরিচালনা করে যাবার স্বার্থে কৌশলী অবস্থান নিয়ে গ্রেপ্তার এড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই। যদিও সরকারের সংলাপকে প্রত্যাখ্যান করে মঙ্গলবার রাতে আমরা কিছু দাবি দাওয়া ঠিক করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে সবাই মিলে আলাপ-আলোচনা করে যে সেই দাবিগুলো ফাইনাল করব সে সময় পাইনি। তবে আমরা বৃহস্পতিবার মাঠের কর্মসূচি (কমপ্লিট শাটডাউন) দিয়ে নিজেদের অবস্থান ক্লিয়ার করেছিলাম। বৃহস্পতিবার আমি আর আসিফ ভাই এক বাসা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভিন্ন ভিন্ন গন্তব্যে চলে যাই। ওইদিন ১৮ তারিখ রাতেই ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার। আমরাও কর্মসূচি চলমান রাখতে, গ্রেপ্তার এড়াতে বার বার জায়গা পরিবর্তন করে বেড়াচ্ছি। কারো সাথে তেমন কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না।’
‘আন্দোলনের শুরুতেই নাহিদ ভাই আমাকে ডেকে নিয়ে এক লোকের সাথে মিট করায় এবং পরবর্তীতে আন্দোলনের পারপাসে একাধিকবার ওই লোকের সাথে যোগাযোগ হয়; পরবর্তীতে জানতে পারি তিনি ঢাবি শিবিরের ছাত্র আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। কিন্ত তখনো শিবিরের সভাপতি এবং সেক্রেটারির সাথে ওইভাবে যোগাযোগ হয়নি।’
‘শুক্রবার যাত্রাবাড়ি এলাকায় যখন আন্দোলন করছিলাম তখন শিবিরের ঢাবি সেক্রেটারি ফরহাদ ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, “আন্দোলনরত কয়েকজন সমন্বয়ক সরকারের মন্ত্রীদের সাথে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে, এতো এতো শহীদের রক্তের সাথে বেইমানী করতেছে তারা। আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে। কিছু দাবি-দাওয়া দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে, মানুষের সাথে বেইমানি করা যাবে না।” আমি সম্মতি জানাই। আমাদের তো আগেই অবস্থান ছিল আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার। তাছাড়া মঙ্গলবার রাতের মিটিংয়ে ঠিক করা কিছু দাবি দাওয়া আমার মাথায় আছে।’
‘আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার মতো মাঠে কোনো সিনিয়র নেই। আসিফ-নাহিদ ভাইকে গুম করে রেখেছে। আমি সাত-পাঁচ না ভেবে রিস্ক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। ওইদিন জুমার নামাজের পর পরই যাত্রাবাড়ীতে কয়কজন শহীদ হন, সবগুলা আমার চোখের সামনেই ঘটতেছে। মানুষকে পাখির মতো গুলি করে মেরে ফেলছে, এটা আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। তাছাড়া দীর্ঘদিন জেল-জুলুম, হামলা-মামলার শিকার হয়ে হাসিনার এমন অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলে গেছি; মাথা নত করিনি। আমার পরিণতি কি হবে, সেটা ঘুনাক্ষরেও কল্পনা করিনি। চোখের সামনে মানুষ মেরে ফেলছে, মানুষের কথা চিন্তা করে নিজের জীবনের কথা ভাবার সময় পাইনি। গত ৪/৫ বছর ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াই আমাদেরকে দৃঢ়তা ধরে রাখার শিক্ষাই দিয়েছে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে হাল ধরার সিদ্ধান্ত নিই।’
‘যাইহোক, কিছুক্ষণ বাদে শিবিরের সেক্রেটারি আমাকে আবারো ফোন দিলেন। বলছেন, “কিছু দাবি দাওয়া খসড়া আকারে করছি, তোমার সাথে আলোচনা করি”৷ আমাদেরও যেহেতু আগেই আলোচনা হয়েছিল অনেকগুলো দাবির ব্যাপারে সেগুলো তখন উনার সাথে আলোচনা করে সমন্বিতভাবে তৈরী হয় ৯ দফা।’
‘তিনি একে একে কিছু দাবি বললেন। যেগুলা খুব কমন দাবিদাওয়া- যেমন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ, ছাত্র হত্যার সাথে জড়িত পুলিশ প্রশাসনকে বরখাস্ত, সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনা, ভিসি’র পদত্যাগ। যেগুলা ৬ জন শহীদ হওয়ার পরে মঙ্গলবার রাতের বৈঠকের আলোচনাতেই আমরা ভেবেছিলাম। এছাড়া মানুষজনও সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কিছু দাবিদাওয়া জানিয়ে আসছিল। শেষের দিকে গিয়ে শিবিরের সেক্রেটারি একটা দাবি এড করলেন, “ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে” এটা আমি মানি নাই, দীর্ঘক্ষণ আলাপ আলোচনা হল। পরে আমি বললাম, ঢালাওভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা যাবে না, এক্ষেত্রে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলতে পারেন। পরে সেটাই ঠিক হল, “লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে”।
‘এই হইলো নয় দফা তৈরির পেছনের গল্প। তবে নয় দফা প্রচার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল শিবির। যেহেতু নেট নেই, গোলাগুলি-কারফিউয়ের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সশরীরে হাউজে হাউজে পৌঁছে দিয়েছে, বিদেশি সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা তারাই করেছে।’
‘আমাকে নতুন একটা সীম এবং মোবাইল কালেক্ট করার পরামর্শ দিল তারা। আমি স্টুডেন্টের বাসা থেকে সীম নিয়ে ওই নম্বরটা নয় দফা সংবলিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির সাথে দিয়ে দিলাম। ওইদিন সন্ধ্যায় বাসা থেকে ৪-৫ কিলো দূরে হেটে গিয়ে পরিচিত সাংবাদিকদেরকে ফোন দিয়ে নয় দফার বিষয়টা জানালাম। টুকটাক ছাত্র রাজনীতি করার সুবাদে ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদের সাথে আমার পরিচয় ছিল। তো ওই রাতে তাদের অনেককে একটা একটা করে দফা বাটন ফোন দিয়ে ম্যাসেজের মাধ্যমে দাবিগুলা লিখে পাঠাইছি। পুরা নয়টা দাবি একসাথে ম্যাসেজে পাঠানো যায় না। কাউকে আবার মুখে বলে দিয়েছি, সে লিখে নিয়েছে। কেউ আবার রেকর্ড করে নিয়েছেন। কনফার্ম হওয়ার জন্য অনেকেই ফোন দিয়েছেন, এটা আসলেই আমি দিয়েছি কি না। বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলাকেও ফোন দিয়ে কনফার্ম করতে হয়েছে, ‘আমার পক্ষ থেকে এটা যাচ্ছে, আপনাকে একজন পেনড্রাইভের মাধ্যমে পৌঁছে দেবেন।’ এইভাবে চলল রাতের ১১ টা পর্যন্ত।’
‘প্রতিদিন রাতের বেলায় বাসা থেকে দূরে চলে যেতাম। ফোন অন করে সাংবাদিকদের সাথে ২-৩ ঘন্টা কথাবার্তা বলে, তাদেরকে কনফার্ম করে, ফোন বন্ধ করে আবার বাসায় ফিরতাম। সিনিয়ররা গুম অবস্থায় ছিল, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না বাকিদের সাথেও। এইভাবেই চলতে থাকল। আমার বাসা ছিল যাত্রাবাড়ী থানার পাশেই। গ্রেপ্তারের আতঙ্ক, তারপরও বাসায় থাকতে হতো। শুরুতেই যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না। কোনো রাত মসজিদে কাটিয়েছি, কোনো রাত অর্ধেকটা বাইরে কিংবা বাসার ছাদে কাটিয়ে শেষ রাতে বাসায় ফিরেছি।’
‘এইতো ঐতিহাসিক নয় দফা, আমাদের নয় দফা,
ফ্যাসিস্ট হাসিনা থেকে মুক্তি লাভের সনদ!’
এমআই

রাজনীতি
সব দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়: ১২ দলীয় জোট

এ বছরের ডিসেম্বরে কেবল একটি দল নয়, দেশের সব দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল নির্বাচন চায়। একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই দেশের মুক্তি ও উন্নতির অভিমুখ নিশ্চিত করে। বারবার তা প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ১২ দলীয় জোটের নেতারা।
আজ শুক্রবার (৩০ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ১২ দলীয় জোট নেতারা এ কথা বলেন।
জাপানের নিক্কেই ফোরামে যোগ দিতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ডিসেম্বরে মাত্র একটি দল নির্বাচন চায়।’ এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা বলেন, এক কথায় নিরেট মিথ্যাচার করেছেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূস। কেবল একটি দলই নয়, দেশের সব গণতন্ত্রপন্থি দলগুলো স্পষ্টভাবে গত ৯ মাস ধরে ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলে এসেছে। বরং তিনি নিজেই কিছু মৌলবাদী, জনসমর্থনহীন, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনৈতিক দলকে পাশে নিয়ে নির্বাচনের প্রশ্নটিকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করেছেন, করছেন।
জোট নেতারা বলেন, আমরা ১২ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে দফায় দফায় এ বছরের জুনের মধ্যেই নির্বাচনের কথা বলেছি। দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো সভা, সমাবেশ, সেমিনার, বক্তব্য, বিবৃতি এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বারবার এই কথা উচ্চারণ করেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস হয়তো ভুলে যাচ্ছেন তিনি কথার মারপ্যাঁচ দিয়ে তার গদি রক্ষা করতে পারবেন না। পদত্যাগের নাটক করেও পারবেন না। বাংলাদেশের জনগণ তার নাটকবাজি বুঝে গেছেন।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ডক্টর ইউনূস যেসব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তাদের মধ্যে অনেকেই স্বৈরাচারী সরকারের পদলেহনকারী এবং স্বৈরাচারী হাসিনার আচলের নিচে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। আমি, তুমি ও ডামি নির্বাচন প্রতিরোধে তাদের ন্যূনতম কোনো ভূমিকা ছিল না ভোট বর্জনের ব্যাপারেও তারা ছিলেন নীরব। এমনকি জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না। নিজের পায়ে চলতে পারে না এমন অনেক জনসম্পর্কবিহীন নেতৃত্বকে ডেকে তিনি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এবং গণঅভ্যুত্থনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী দল ও নেতাদের অপমান করেছেন, অবজ্ঞা করেছেন। তার এই অশোভন আচরণে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত দল এবং নেতারা ব্যথিত এবং দুঃখিত।
বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে, ১৯৯০ সালে, এমনকি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে জীবনক্ষয়ী সংগ্রাম করেছে, তার মূলে ছিল ভোট ও নির্বাচন উল্লেখ করে ১২ দলীয় জোট নেতারা বলেন, তিনি কূটকৌশলে ক্ষমতা প্রলম্বিত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হবে, তিনি ভিন্ন কোনো কিছু অর্জনের উদ্দেশে ভোট ও নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে চাইছেন। আর তার সঙ্গে রয়েছেন কয়েকজন উপদেষ্টা।
জোট নেতারা বলেন, আগামী ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন করা সম্ভব। দেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও নানাভাবে বিষয়টি সামনে এসেছে। আমরা চাই দেশের জনগণের দীর্ঘদিনের চাওয়া তিনি পূরণ করবেন। তাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অন্তর্বর্তী কাজ করার জন্য, স্থায়ী কোনো কাজ নয়। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া, ন্যূনতম সংস্কার করে নির্বাচন করতে হবে। আগে প্রয়োজন নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা। পাশাপাশি চলবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিচার। ইতোমধ্যে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে এ প্রক্রিয়া চলমান হয়েছে।
অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে দেশ মহাসংকটের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান ১২ দলীয় জোট নেতারা। তারা বলেন, অন্যথা দেশের মানুষই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তখন তিনি মৌলবাদী ও জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দলকে পাশে পাবেন না। তার পরিণতি যেন আফগানিস্তানের পালিয়ে যাওয়া মোহাম্মদ আশরাফ গনি আহমদজাইয়ের মতো না হয়।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ১২ দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ডক্টর গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপার) সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, লেবার পার্টি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, কল্যাণ পার্টি চেয়ারম্যান শামসুদ্দীন পারভেজ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকিব, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি এমএ মান্নান, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দল (পিএনপির) চেয়ারম্যান ফিরোজ মো. লিটন।
কাফি
রাজনীতি
বিদেশে বসে বিএনপির বিরুদ্ধে বদনাম করছেন ড. ইউনূস: মির্জা আব্বাস

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, খুব দুঃখের সঙ্গে এই কথা বলতে হচ্ছে, আজকে ড. ইউনূস সাহেব জাপানে বসে বিএনপির বিরুদ্ধে বদনাম করছেন। লজ্জা লাগলো না বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করতে।
শুক্রবার (৩০ মে) শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এসব কথা বলেন তিনি। জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
মির্জা আব্বাস বলেন, সংস্কার সংস্কার করতে করতে বর্তমান সরকার আমদানি করেছেন বিদেশি লোকদের। জিয়া বহু সংস্কার করেছেন, কিন্তু কোনো বিদেশি পরামর্শক আনেননি, কাউকে আমদানি করেনি। কিন্তু বর্তমান সরকার কিছু বিদেশি পরামর্শক এনেছে। সংস্কার সংস্কার করতে করতে আজ এমন অবস্থায় চলে গেছে, তারা নির্বাচন দিতে চায় না।
ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের কথা বিএনপির আগে ড. ইউনূসই বলেছিলেন উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, এটা তারই (ড. ইউনূস) প্রস্তাব। পরবর্তীতে শিফট করে জুনে গেলেন ইউনূস। সুতরাং নির্বাচন করতে হলে ডিসেম্বরের মধ্যে করতে হবে। আর ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে দায়-দায়িত্ব সব ড. ইউনূসকে নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। না হয় বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচন আদায় করবে। নির্বাচন না হলে এ দেশের ভৌগলিক অবস্থান ঠিক থাকবে না।
এই সময় উপস্থিত ছিলেন— বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রমুখ।
কাফি
রাজনীতি
জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী আজ

স্বাধীনতার ঘোষক এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী আজ শুক্রবার (৩০ মে)। দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ও বেদনাদায়ক অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে দেশি-বিদেশি চক্রান্তে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য তাকে হত্যা করে।
জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা। জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় থাকাকালীন বিএনপি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়।
প্রতি বছর ৩০ মে দিনটি জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী হিসেবে পালন করে বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠন। এ বছর এ উপলক্ষে টানা ৮ দিনের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে – আলোচনা সভা, পোস্টার ও বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ, কালো ব্যাজ ধারণ, কালো পতাকা উত্তোলন, জিয়ার কবরে ফুল দেওয়া ও ফাতেহা পাঠ, দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য ও বস্ত্রসামগ্রী বিতরণ।
গত ২৬ মে থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি চলবে আগামী ২ জুন পর্যন্ত। কর্মসূচি অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে আলোচনা সভা করেছে বিএনপি। এতে জ্যেষ্ঠ নেতা ও বিশিষ্টজন বক্তব্য রাখেন।
দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল ৬টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দুপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ করা হবে। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা এ সময় উপস্থিত থাকবেন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া খালকাটা কর্মসূচি, সবুজ বিপ্লব, শিল্প উন্নয়ন এবং যুগোপযোগী ও আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে স্বনির্ভর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা রাখেন। নারী সমাজের উন্নয়ন ও শিশুদের বিকাশে তার আগ্রহ জাতিকে নতুন দিকনির্দেশনা দেন। তার সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়।
দেশকে যখন তিনি সামনের দিকে নিয়ে চলতে শুরু করেন সেই সময়ে তার বিরুদ্ধে শুরু হয় দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র। ১৯৮১ সালের ২৯ মে তিনি এক সরকারি সফরে চট্টগ্রামে যান। ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে গভীর রাতে একদল সেনাসদস্য তাকে হত্যা করে। বিপথগামী সেনাসদস্যরা তার লাশ চট্টগ্রামের রাউজানের গভীর জঙ্গলে কবর দেয়। তিন দিন পর ওই লাশ উদ্ধার করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়, লাখ লাখ শোকার্ত মানুষ শেরেবাংলা নগরে তার জানাজায় শরিক হন। পরে জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরে তাকে সমাহিত করা হয়।
রাজনীতি
শিগগির গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা দেখতে পাবো: খালেদা জিয়া

শিগগির বাংলাদেশ গণতন্ত্রে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে দলের আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বক্তব্যের শুরুতেই শহীদ জিয়ার স্মৃতিচারণ করে খালেদা জিয়া বলেন, প্রতি বছর মে মাসের এই দিন আমাদের কাছে আসে বেদনাবিধূর এক স্মৃতি নিয়ে। এই দিনে শুধু আমাদের পরিবার নয়, বরং সমগ্র দেশই হয়ে উঠেছিল বেদনার্ত অভিভাবকহীন। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে এক অবিচ্ছেদ্য নাম শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। যে চট্টগ্রাম থেকে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে এ দেশের সঙ্গে তার নাম অবিচ্ছেদ্য করে রেখেছিলেন, সেই চট্টগ্রামেই এক সফল, সৎ, দূরদর্শী দেশপ্রেমিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
তিনি বলেন, এ দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বনির্ভরতা, উন্নয়ন ও নিজস্ব জাতীয়তাবাদ সৃষ্টির অনন্য রূপকার শহীদ জিয়া। যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা আর সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াইয়ে তিনি শহীদ হয়েছেন, সেই গণতন্ত্রের নিরবচ্ছিন্ন যাত্রা আজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রতি পদে পদে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, খুব শিগগির আমরা বাংলাদেশকে গণতন্ত্রে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত দেখতে পাবো। এই হোক শহীদ জিয়ার শাহাদাতবার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার। এই লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমি বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
খালেদা জিয়া বলেন, মনে রাখবেন, সবার জন্য গণতন্ত্র ও উন্নয়নের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধানের যে রাজনীতি শহীদ জিয়া রেখে গেছেন, তা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে। আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
বক্তব্যের শেষে শহীদ জিয়ার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়াও দলটির নেতারা আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।
রাজনীতি
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের কোনো ছাড় নয়: জামায়াত আমির

দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি, সিদ্ধান্ত ও শৃঙ্খলার বাইরে গিয়ে কেউ কিছু করলে সংগঠন তার কোনো দায় নেবে না বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না—ব্যক্তি তিনি যেই হোন না কেন।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ফেসবুকে এক বার্তায় জামায়াতের আমির দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি এ সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেন।
বার্তায় তিনি বলেন, সবাইকে দলীয় শৃঙ্খলা, সিদ্ধান্ত ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সর্বোচ্চ আনুগত্য বজায় রেখে কাজ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এর কোনো ভিন্নতা যেখানেই ঘটুক, সংগঠন অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেবে।
কাফি