জাতীয়
কারাগারে ডিভিশন পাচ্ছেন যারা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মোট ৩৭ জন এমপি-মন্ত্রী গ্রেপ্তার হয়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারে রয়েছেন। এদের মধ্যে নয়জনকে কারাগারে ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বকশিবাজারে অবস্থিত কারা অধিদপ্তরে কারা নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন গৃহীত ব্যবস্থাদি সম্পর্কিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন।
এক প্রশ্নের জবাবে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যেসব বন্দিরা সাজাভোগ করেছেন, তারা রেয়াত পেতে পেতে মুক্তি পেতে পারেন। যখন তারা মুক্তির আওতায় চলে আসেন, তখন তারা মুক্তি পেতে পারেন। যারা মুক্তির আওতায় চলে আসেন, তাদের বিষয়ে প্রস্তাবনা আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাঠাই। পরবর্তীতে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বেটিংয়ের পর চূড়ান্তভাবে যদি মাফ করতে হয় সেটি রাষ্ট্রপতি করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে মাফ করার অধিকার রাষ্ট্রপতির। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রধান উপদেষ্টাও পারেন। এ রকম অনেক বন্দিদের বিষয়ে প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আছে। এই বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করছি। এই বিষয়ে অতি শিগগিরই একটি বৈঠকের প্রস্তাবনা আছে। যারা অক্ষম চলাফেরা করতে পারে না, অথবা যারা রেয়াত পাওয়ার যোগ্য, তাদের মুক্তি দেওয়া হতে পারে।
পলাতক বন্দিদের মধ্যে জঙ্গি কতজন রয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত নয়জন জঙ্গি পালিয়েছে। এছাড়া, বিচারাধীন মামলার অনেক জঙ্গি পালিয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট ৭০ জন জঙ্গি পলাতক রয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক বন্দিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে আরও বলেন, সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামি পালিয়ে ছিল মোট ৯৮ জন। এদের মধ্যে অনেককে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বর্তমানে দেশের সব কারাগারের ধারণক্ষমতা কত ও বর্তমানে কতজন বন্দি রয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোতাহের হোসেন বলেন, বর্তমানে দেশের সব কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪২ হাজারেরও কিছু বেশি। এই মুহূর্তে আমাদের কারাগারে আছে ৫০ হাজারেরও বেশি বন্দি।
কারাগারে হামলার সময় কত আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারাগার থেকে ৯৪টি অস্ত্র লুট হয়ে গিয়েছিল। এখনো উদ্ধার করা বাকি আছে ২৯টি অস্ত্র। অস্ত্র উদ্ধারের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মোট সংখ্যা ৬৫টি।
কারাগারে নিয়মবহির্ভূত কার্যক্রমের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিয়ম-বহির্ভূত কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে আমরা চিহ্নিত করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভ্যন্তরীণ তদন্ত চলমান রয়েছে। যেসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মোটা দাগে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে আমি অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতা নিচ্ছি। এ বিষয়ে কিছু ব্যবস্থা শিগগিরই দেখা যাবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে সৎ অফিসারদের আমরা পদায়ন করছি। লম্বা সময় ধরে কিছু লোক একই জায়গায় কাজ করছিল, তাদের সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
৫ আগস্টের পর এখন পর্যন্ত কারাগার থেকে সাধারণ মানুষসহ কতজন শীর্ষ সন্ত্রাসী ও জঙ্গি বের হয়ে এসেছে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, এ রকম আলোচিত মোট ৪৩ জন বন্দি এখন পর্যন্ত কারাগার থেকে জামিন পেয়ে মুক্ত হয়েছেন।
বর্তমান সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর কিছু কিছু কারাগারে হামলা হয়। এ সময় সাধারণ মানুষদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়। এরা আসলে কারা ছিল। কারা কর্তৃপক্ষ তাদের চিহ্নিত করেছে কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, তাদের শনাক্ত করার জন্য আমরা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য নিচ্ছি। ৫ আগস্টের পরে যারা হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের চিহ্নিত করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে অনেক সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতেও হামলা হয়েছিল। কারাগার যেহেতু একটি ক্ষোভের জায়গা ছিল, এরই বহিঃপ্রকাশ এসব হামলা।
তিনি বলেন, যেসব কারাগারে বিশৃঙ্খলা হয়েছিল, আমরা প্রতিটিতেই মামলা করেছি। মামলায় আমরা সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে আসামি করতে পারিনি। কারণ পরিস্থিতি যেহেতু ভিন্ন ছিল। অজ্ঞাতনামা আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে মূলত মামলা করা হয়েছে। আটটি কারাগারে বিশৃঙ্খলার দায়ে মোট আটটি মামলা দায়ের হয়েছে। আমাদের পাঁচটি কারাগার থেকে বন্দিরা পালিয়েছে, সে সংক্রান্ত পাঁচটি মামলা হয়েছে। তবে, সবমিলিয়ে আমাদের ১৭টি কারাগারে হামলার ঘটনা ঘটেছিল।
কারাগারের কর্মকর্তাদের ডোপ টেস্টের বিষয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত আছে কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যোগদান করার পর মাদকের বিষয়ে ব্যাপক অভিযোগ পাচ্ছি। আসলে এই বিষয়ে আমরা শঙ্কিত। মাদক সংক্রান্ত অভিযোগ বন্দিদের বিষয়ে যেমন পাচ্ছি, তেমনি কারারক্ষী এবং কারা কর্মকর্তাদের বিষয়েও পাচ্ছি। এই বিষয়ে আমাদের সবচেয়ে আশঙ্কার জায়গাটি হলো যে, এটিকে আমরা খুঁজে কীভাবে বের করব। কারাগারে যেন মাদক না ঢুকতে পারে, সেই বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। মাদকাসক্ত কেউ কারা বিভাগে চাকরিরত অবস্থায় থাকতে পারবে না।
কারাগারে নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে আমি অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ বিষয়ে আমরাও আমাদের মতো করে তদন্ত করছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হলে এই বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
গত ১৫ বছরে যে পরিমাণ কাস্টডিয়ালের মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোতাহের হোসেন বলেন, এটা আসলে আইনের একটা বিষয়। রুটিন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যদি কোনো জায়গায় সন্দেহ হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে…। আর কেউ যদি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তাহলে তাদের আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করব।
জুলাই ও আগস্টে আন্দোলন চলাকালে যারা গ্রেপ্তার হয়েছিল, তাদের মধ্যে কতজন বন্দি এখনো কারাগারে আছে, আর কতজন জামিন পেয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আন্দোলন চলার সময় যেই ধরনের মামলা হয়েছিল এবং গ্রেপ্তার হয়েছিল এ ধরনের বন্দি এখন আমাদের কাছে নেই। সবাই জামিন প্রাপ্ত হয়ে গেছেন এবং জামিনে বের হয়েছেন। আন্দোলনের কতজন বন্দি জামিনে বের হয়ে গেছে তার সঠিক সংখ্যাটা বলা মুশকিল। তবে, সেই সময় আমাদের বন্দি সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার, এখন তা ৫৫ হাজার। তাহলে বলা যায় ওই সময় এসব মামলায় গ্রেপ্তার প্রায় ১৫ হাজার বন্দি ধীরে ধীরে জামিন পেয়ে বের হয়েছেন।
বিদেশি বন্দিদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সাজা ভোগ হওয়ার পরও তাদের অনেকে জেলে থেকে যায়। এখন পর্যন্ত কতজন বিদেশি বন্দি আছে এবং তাদের বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, বিদেশি বন্দিদের সাজা শেষ হয়ে গেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পরে আমরা তাদের ডি-পোর্ট করি। এখন আমাদের কারাগারে মোট ১৪৩ জন বিদেশি বন্দি রয়েছে। আমরা যদি ক্লিয়ারেন্স পাই, তাহলে আমরা তাদের নিজ নিজ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করব।
গত ৫ আগস্টের পরে যেসব মন্ত্রী এবং এমপিরা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, তারা কারাগারে কোনো ডিভিশন পাচ্ছেন কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সরকারি গেজেটেড অফিসাররা কারাগারে আসলে ডিভিশন পেয়ে যান। বাকি যারা বিশিষ্ট ব্যক্তি বা এমপি-মন্ত্রী আছেন, তারা আবেদন করবেন অথবা এ বিষয়ে আদালত বললে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আর যাদের বিষয়ে আদালত বলবে না, তারা যদি আবেদন করেন, তখন সে আবেদনটি আমরা ডিসির কাছে পাঠাবো। ডিসি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমরা তাদের ডিভিশন দিতে পারব। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের কাছে বিশেষ বন্দি (এমপি-মন্ত্রী) মোট ৩৭ জন… তাদের মধ্যে নয়জন ডিভিশন পাচ্ছেন, আর বাকিদের বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
বাংলাদেশে ইসলামী চরমপন্থার উত্থান হবে না: দ্য ইকোনমিস্টকে প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশে ইসলামি চরমপন্থা আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি উল্লেখ করে বলেন, ধর্মের বিষয়ে বাংলাদেশের তরুণরা খুবই পক্ষপাতহীন। তরুণরা দেশকে নতুন করে গড়তে চান।
প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ড. ইউনূস। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ওই সাক্ষাৎকারের ভিডিও ইকোনমিস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ২০২৪ সালে ইকোনমিস্টের বর্ষসেরা দেশ নির্বাচিত হয়েছে। সবচেয়ে সুখী বা ধনী হিসেবে নয়, বরং গত ১২ মাসে কোন দেশ সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে, সেই বিচারে বাংলাদেশকে বর্ষসেরা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশকে বর্ষসেরা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং বাংলাদেশে নতুন যাত্রা শুরুর বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে ইকোনমিস্ট।
বাংলাদেশ বর্ষসেরা দেশের খেতাব পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকার নেন ইকোনমিস্টের বিদেশবিষয়ক সম্পাদক প্যাট্রিক ফোলিস।
শুরুতে তিনি বাংলাদেশ ইকোনমিস্টের বর্ষসেরা দেশ হওয়ায় ড. ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়ে এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চান।
জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা আনন্দিত, অত্যন্ত গর্বিত। সত্যিকার অর্থেই আমরা বড় একটি পরিবর্তন ঘটিয়েছি। ছাত্রদের কারণেই অভ্যুত্থান ঘটেছে। তখন থেকে আমরা বলছি, একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।’
প্যাট্রিক ফোলিস জানতে চান, বাংলাদেশে ইসলামি চরমপন্থা ফিরে আসার কিছু ঝুঁকি রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের কর্মকর্তারা। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? জবাবে ড. ইউনূস আশ্বস্ত করে বলেন, বাংলাদেশে এমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে না। দেশের তরুণরা খুবই উদ্যমী। ধর্মের বিষয়ে তারা খুবই পক্ষপাতহীন। এই তরুণরা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে চান।
তরুণরা কতটা শক্তিশালী, সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান এর একটি উদাহরণ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আসুন, আমরা তরুণদের ওপর মনোযোগ দিই, বিশেষ করে তরুণীদের ওপর। বাংলাদেশের অভ্যুত্থানে তরুণীরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। দেশের যে কোনো তরুণের মতো তারা (অভ্যুত্থানে) সামনের কাতারে ছিলেন। আমাদের তরুণ-তরুণীদের ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত এবং তাদের স্বপ্নগুলো যেন পূরণ হয়, তা নিশ্চিত করা উচিত।’
যোগ্যতার দিক দিয়ে বাংলাদেশের তরুণরা কোনো অংশে কম নন উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তিন তরুণকে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মন্ত্রিসভায়’ (ক্যাবিনেট) যুক্ত করা হয়েছে। তারা এখন ‘মন্ত্রিসভার’ সদস্য এবং অসাধারণ কাজ করছেন। তারা বিগত শতাব্দীর নন, বরং এই শতাব্দীর তরুণ।
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের পর কী করতে চান, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘আসলে আমাকে আমার কাজ থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে। জোর করে এই কাজে আমাকে যুক্ত করা হয়েছে। আমি আমার কাজ করছিলাম, তা উপভোগ করছিলাম। এ কারণেই আমি প্যারিসে ছিলাম। আমাকে ভিন্ন কিছু করার জন্য প্যারিস থেকে সরিয়ে আনা হয়। সুতরাং আমার জীবনে সব সময় যে কাজ করেছি, উপভোগ করেছি, সেখানে ফিরে যেতে পারলে খুশি হব।’
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
লাইসেন্স ও ট্যাক্সের আওতায় আনা হচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা
রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোকে লাইসেন্স এবং ট্যাক্সের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে পুলিশ, ছাত্র, জনতা ও রমনা মডেল থানার নাগরিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা বর্তমানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্যাডেলচালিত রিকশার সাইজ ছোট হলেও অটোরিকশার সাইজ বড় এবং এর দ্রুত বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে রাজধানীর সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, অটোরিকশার ব্যবসা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৮০-৯০ হাজার টাকায় অটোরিকশা কিনে প্রতিদিন লাভ করা হচ্ছে। তিনি সরকারের কাছে অটোরিকশার সংখ্যা সীমিত করার জন্য সুপারিশ করেন।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, অটোরিকশাগুলোর লাইসেন্স ও ট্যাক্সের আওতায় আনা জরুরি। জনগণের টাকার রাস্তা ব্যবহার করবেন অথচ ট্যাক্স দেবেন না? এটা বিশ্বের কোথাও নেই। তিনি বিদ্যুৎ ব্যবহার করা ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যাও সীমিত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
ঢাকার সড়ক পরিকল্পনার অভাবের বিষয়ে তিনি বলেন, যত্রতত্র রাস্তা তৈরি ও বড় বিল্ডিং নির্মাণের কারণে সড়কে গাড়ি চলাচলে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসের প্রবেশেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে।
রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দলের সভা-সমাবেশের প্রভাব নিয়েও কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, যখন রাস্তা এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকে, তখন তার প্রভাব সাত-আট ঘণ্টা স্থায়ী হয়। তাই তিনি রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সভা-সমাবেশ রাস্তার পরিবর্তে বদ্ধ জায়গায় আয়োজন করার পরামর্শ দেন।
এছাড়া, ঢাকার সড়কগুলোর অবৈধ নির্মাণসামগ্রী রাখা নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন কমিশনার। তিনি সড়কে ইট-বালু রাখার বিরুদ্ধে সতর্কতা জারি করে বলেন, ডিএমপির আইনে এই ধরনের কাজে মামলা করার ব্যবস্থা রয়েছে, তবে আমি চাই না সেখানে যেতে।
মতবিনিময় সভায় রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. ইসরাইল হাওলাদার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) হাসান মো. শওকত আলী, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. মাসুদ করিমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী এবং ধর্মীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন
বাংলাদেশে বিভিন্ন গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে তদন্ত কমিশন। দুই দেশের মধ্যে বন্দি বিনিময়ের কার্যক্রম এবং আটক ব্যক্তিদের সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে কমিশন তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ‘বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা জনসমক্ষে একটি আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
সাবেক বিচারপতি মাইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশন সম্প্রতি ‘সত্য উদঘাটন’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছে।
কমিশন জানিয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মধ্যে এ বিষয়ে একটি জোরালো ইঙ্গিত রয়েছে যে কিছু বন্দি এখনো ভারতের জেলে থাকতে পারে।
কমিশন জানায়, ‘আমরা পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করছি, যেন তারা ভারতে এখনো বন্দি অবস্থায় থাকতে পরে এমন যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিককে খুঁজে বের করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করে। বাংলাদেশের সীমানার বাইরে এই বিষয়টি তদন্ত করা কমিশনের এখতিয়ারবহির্ভূত কাজ।’
প্রতিবেদনে উল্লিখিত দুটি বহুল আলোচিত গুমের ঘটনা এই কার্যক্রম কিভাবে পরিচালিত হয়েছিল, তা বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ সরবরাহ করে।
ঘটনা দুটির একটি হলো, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে অপহৃত হয়ে ভারতীয় কারাগারে উপস্থিত হওয়া সুখরঞ্জন বালির ঘটনা।
অপরটি হলো বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের ঘটনা।
এসব ঘটনার পাশাপাশি হুম্মাম কাদের চৌধুরী জানান, ‘তার কারাগারের বাইরে হিন্দি ভাষায় কথা বলতে শোনা যেত, যেখানে বলা হচ্ছিল, ওকে কখন ধরা হয়েছে? কোনো তথ্য দিয়েছে কি? এখনো কি জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছে? ইত্যাদি।’
কমিশন জানায়, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের ঘটনা বাংলাদেশ-ভারত বন্দি বিনিময় ব্যবস্থার কিছু কার্যপ্রণালীকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে। ২০১৫ সালে উত্তরায় লুকিয়ে থাকা অবস্থায় আটক হওয়ার পর তিনি জানান, তাকে একটি পরিত্যক্ত সেলে আটক রাখা হয়েছিল, যেখানে মেঝেতে একটি গর্ত ছিল, যা টয়লেট হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
সালাহউদ্দিন আহমেদকে দেওয়া কম্বলটিতে ‘টিএফআই’ অক্ষরগুলো লেখা ছিল, যা ‘টাস্ক ফোর্স ফর ইন্টারোগেশন’-এর ইঙ্গিত বহন করে।
তারা জানায়, ওই সময় একমাত্র সক্রিয় টিএফআই কেন্দ্রটি ছিল র্যাব গোয়েন্দা শাখার তত্ত্বাবধানে, যা র্যাব সদর দপ্তরের অধীনে পরিচালিত। এটি ঢাকার উত্তরায় র্যাব-১ ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের একটি প্রাচীর ঘেরা স্থাপনার ভেতরে ছিল।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
ওষুধ কোম্পানি থেকে চিকিৎসকদের কমিশন অবৈধ: আজাদ খান
ওষুধ কোম্পানি থেকে চিকিৎসকদের কমিশন নেওয়া শুধু অনৈতিক নয়, অবৈধ বলেও মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন প্রধান জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ অডিটোরিয়ামে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যখাত নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, আমি নিজে একজন ডাক্তার। ডাক্তারদের কমিশন নেওয়া খালি অনৈতিক না বরং অবৈধও। এটা কমিশনের রিপোর্টে উল্লেখ থাকবে। কাজেই আমাদের রিপোর্টে ওরকম পিনপয়েন্ট না থাকলেও বিষয়টি থাকবে।’
সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. আজহারুল ইসলাম খান বলেন, আমরা অংশীজনদের থেকে জানতে চেয়েছি সাধারণ মানুষের বিশেষ করে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ করে ফেলে কিংবা প্রাইমারি হেলথ কেয়ারে কি কি ধরনের সমস্যা আছে মানুষের চিকিৎসার পেছনে অতিরিক্ত ব্যয় কীভাবে কমানো যায় সেসব বিষয়ে আমরা কাজ করবো।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নিজেদের দক্ষ চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে কিন্তু আমাদের আরেকটু সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। এবং রোগীকে চিকিৎসার বিষয়ে কিংবা ফলোআপের বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারলে বাইরে রোগী যাওয়ার প্রবণতা কমে আসবে। সেসব বিষয়ে আমরা কাজ করবো।
সভায় উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যখাতে সংস্কার চেয়েছেন অংশীজনেরা। একইসাথে মানহীন প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চিকিৎসাখাতে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূরীকরণসহ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের নানা সংকট নিয়ে আলোচনা উঠে আসে।
এ ছাড়া সভায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন খ্যাতনামা চিকিৎসক, মেডিকেল শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, বেসরকারি মেডিকেলসংশ্লিষ্ট কর্মী ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা তাদের পেশাগত জীবনের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন এবং সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা পেশ করেন। তুলে ধরেন নানা বৈষম্য ও অব্যবস্থাপনার চিত্র। তবে সভায় ছিলেন না রোগীদের কোনো প্রতিনিধি। এনিয়েও ক্ষোভ জানান বক্তারা।
বক্তারা দেশের স্বাস্থ্যসেবাকে উন্নত করতে হলে বাজেটে চিকিৎসাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ মেডিকেল এডুকেশনের ওপর জোর দেয়ার তাগিদ দেন।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন, অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার, অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক, অধ্যাপক ডা. আজহারুল ইসলাম খান, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন, উমাইর আফিফ প্রমুখ।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
বিদেশে পলাতক ১৯ নাবিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
বিদেশের বন্দরে অবস্থানের সময় জাহাজ থেকে পালিয়ে যাওয়া ১৯ বাংলাদেশি নাবিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন নৌ আদালত। নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলমের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে ১৯ জন নাবিকের নাম ও ঠিকানা প্রকাশ করা হয়। এসব নাবিক ১৩টি জাহাজ থেকে পালিয়ে যান। জাহাজগুলো বিদেশের বিভিন্ন বন্দরে অবস্থানকালে তারা বন্দর ত্যাগ করে আর জাহাজে ফেরেননি।
যে নাবিকদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে তারা হলেন— মো. সোহানুর রহমান, মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, আবু সুফিয়ান, মোস্তফা কামাল, ইসকান্দার মিজি, মো. সানাউল্লাহ, মোহাম্মদ আনোয়ারুজ্জামান, মো. আব্দুল কুদ্দুস, আমিনুল ইসলাম, ওপি হোসেন, মো. রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, মোহাম্মদ শেখ আলম, মো. মেহেদী হাসান, মো. আল আমিন, মো. ইমাম হোসেন, এনামুল হক, মো. ইমরুল হোসেন এবং মোহাম্মদ ইব্রাহীম।
এদের মধ্যে নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের পাঁচজন করে এবং ফেনীর দুজন রয়েছেন। এ ছাড়া সাতটি জেলার সাতজন নাবিক রয়েছেন। এ নাবিকেরা গত তিন বছরে বিদেশে পালিয়েছেন।
কাফি