অর্থনীতি
দুই বিলিয়ন ডলারের নতুন সহায়তার প্রতিশ্রুতি বিশ্বব্যাংকের
বাংলাদেশকে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি নতুন সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডাকে সহায়তা করতে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশকে ঋণ প্রদান বাড়ানোর জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নতুন সহায়তার কথা তিনি বলেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তা জানানো হয়েছে।
আবদুলায়ে সেক বলেন, সরকারের সংস্কার, বন্যার প্রতিক্রিয়া, উন্নত বায়ুর গুণমান এবং স্বাস্থ্যের জন্য বিশ্বব্যাংক এই অর্থ বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের নতুন অর্থায়ন জোগাড় করতে পারে। আমরা যত দ্রুত সম্ভব এবং যতটা সম্ভব আপনাকে সমর্থন করতে চাই। ব্যাংকটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রয়োজনে সহায়তা করবে।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, নতুন প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি বহুপাক্ষিক ঋণদাতা সমর্থনের আহ্বানের প্রতিক্রিয়া হিসেবে সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে তার বিদ্যমান কর্মসূচি থেকে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত পুনরুদ্ধার করবো।
তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো থেকে তহবিল পুনঃপ্রয়োগ করা হলে বিশ্বব্যাংক চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশকে যে ঋণ ও অনুদান দেবে তার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারে।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি চিফ বলেন, সংস্কার বাংলাদেশ এবং এর তরুণ-তরুণীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যার মধ্যে ২০ লাখ মানুষ প্রতি বছর চাকরির বাজারে যোগ দিচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি হেডকে বলেছেন, বাংলাদেশের সংস্কারে অর্থায়নের জন্য ব্যাংকের নমনীয়তা থাকতে হবে এবং ১৫ বছরের চরম অপশাসনের পরে নতুন যাত্রা শুরু করতে সহায়তা করতে হবে।
তিনি বলেন, এই ছাই থেকে আমাদের নতুন কাঠামো তৈরি করতে হবে। আমাদের একটি বড় সহায়তা প্রয়োজন। আমাদের শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। আমি পরামর্শ দেব, আমাদের সাহায্য করুন। আমাদের দলের একটি অংশ হোন।
অধ্যাপক ইউনূস শেখ হাসিনার ১৫ বছরের দীর্ঘ স্বৈরশাসনের সময় দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের দ্বারা বাংলাদেশ থেকে চুরি করা বিলিয়ন ডলারের চুরি করা সম্পদ পুনরুদ্ধার করতে বিশ্বব্যাংককে তার প্রযুক্তিগত সহায়তা ধার দিতে বলেছেন।
চুরি হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনার প্রযুক্তি সহায়তা চেয়ে অধ্যাপক ইউনুস বলেন, একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ব্যাংকের দক্ষতার প্রয়োজন হবে।
এসময় বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর বাংলাদেশকে চুরি যাওয়া টাকা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে রাজি হয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা আপনাকে সাহায্য করতে পেরে খুশি। ব্যাংকের তথ্য স্বচ্ছতা, ডেটা অখণ্ডতা, ট্যাক্স সংগ্রহের ডিজিটালাইজেশন ও আর্থিক খাতের সংস্কারে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চাই।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ তার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিক করার ও বড় ধরনের সংস্কার করার জন্য জীবনে একবার এই সুযোগ হারাতে পারে না। আমরা একবার এটি হারিয়ে ফেললে, আর ফিরে আসবে না।
সেক জুলাই-আগস্টের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহের শহীদদের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, ঢাকার দেয়ালে তরুণদের আঁকা গ্রাফিতি ও ম্যুরাল দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। আমার ক্যারিয়ারের ৩০ বছরের মধ্যে এটি কোথাও দেখিনি। আমাদের তাদের ক্ষমতায়ন করতে হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বিশ্বব্যাংকের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে সরকার
অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিশ্বব্যাংক হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান। তাদের কাছ থেকে আর্থিক ও কারিগরি সাহায্য চেয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া দফতরের আঞ্চলিক পরিচালক ম্যাথিউ এ ভারজিসের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রধান যে সমস্যা বা চ্যালেঞ্জগুলো রেখে গেছে এর মধ্যে আর্থিক দুর্দশা অন্যতম। ব্যাংকে রিজার্ভ বা বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন এখন ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে, যা দুবছর আগের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। পাশাপাশি বিদ্যুৎ-জ্বালানি আমদানি করা ছাড়াও মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য চীন, রাশিয়া ও অন্যান্য দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই দাতাদের সঙ্গে নতুন ঋণ নিয়ে একের পর এক বৈঠক চলছে। পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার ঋণের সুদহার পর্যালোচনা করছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার।
বৈঠক প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আজকে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একটা নিয়মিত ও ধারাবাহিক আলোচনা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান। আমরা তাদের কাছ থেকে আর্থিক ও কারিগরি সাহায্য চেয়েছি।’
‘আমাদের সংস্কারগুলোর জন্য সহায়তা দরকার, সহসা একটা বাজেট সাপোর্ট দরকার। লিকুইডিটি সাপোর্টও চেয়েছি। ওরা দিতে সম্মত হয়েছে। আমি চলমান প্যাকেজের বাইরে বাড়তি কিছু সাহায্য চেয়েছি; ওরাও দিতে সম্মত হয়েছে। তাদের মনোভাব মোটামুটি ইতিবাচক। ওরা বেশ খোলা মনে আলোচনা করেছে,’ বলেন উপদেষ্টা।
সরকারের পক্ষ থেকে সর্বমোট দুই বিলিয়ন ডলার সাহায্য চাওয়া হয়েছে বলে এক সাংবাদিক উল্লেখ করলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি বিলিয়ন বা টাকার অঙ্কের কথা বলবো না। এই বছরের জন্য তারা একটা বাজেট সহায়তা দেবে। আমরা আরও কিছু এক্সপেক্ট করেছি। কী কী প্রকল্প আমরা নেবো, সে অনুযায়ী সেটা চূড়ান্ত হবে।’
বিশ্বব্যাংক ঋণের সঙ্গে কোনো শর্ত দিচ্ছে কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, ‘শর্ত নয়, আমাদেরকে কতগুলো অ্যাকশন নিতে হবে। আমরা বলেছি যে, ওটা যেন বাস্তবায়নযোগ্য হয়। এমন অ্যাকশন নেয়া যাবে না, যেটা আমাদের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। পরে তারা টাকাও দেবে না। তাহলে তো হবে না। আমরা সোজাসুজি বলেছি যে, আমাদের সংস্কারের জন্য যেসব বিষয় বাস্তবায়নযোগ্য হয়, সে ধরনের অ্যাকশন যেন আমাদের দেয়া হয়।’
তিনি বলেন, আর্থিক খাত সংস্কারে বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংক এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারের ঋণসহায়তা দেবে। এর মধ্যে পলিসিভিত্তিক লোন হিসেবে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার এবং ইনভেস্টমেন্ট লোন ও গ্যারান্টি ফ্যাসিলিটি হিসেবে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা দেয়া হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে এ ঋণ অনুমোদন হওয়ার কথা রয়েছে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বাংলাদেশে ১০০ কোটি ইউরো বিনিয়োগ করবে জার্মানি
জার্মানি বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের জন্য ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ইউরো বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে জার্মান রাষ্ট্রদূত আচিম ত্রোস্টারের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
উপদেষ্টা বলেন, দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ১ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করবে জার্মানি। চলতি অর্থবছরে মিলবে ১৫ মিলিয়ন ইউরো। মোট অর্থ ১০ বছরে দেবে দেশটি।
এই সহযোগিতায় ক্ষুদ্র জাতিগত সংখ্যালঘু, নারী এবং যুবকদেরও সম্পৃক্ত করা হবে, যা বহু-স্টেকহোল্ডার পদ্ধতিকে উৎসাহিত করবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু চ্যালেঞ্জ এবং টেকসই বন ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের সমর্থনে জার্মানির প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে রাষ্ট্রদূত বলেন, পরিবেশ রক্ষায় সরকারের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে জার্মানির বেশ দক্ষতা রয়েছে। বাংলাদেশের সবুজ জ্বালানি উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়া হবে।
বৈঠকে উভয় পক্ষ নদী পরিষ্কার, পরিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প, সবুজ প্রযুক্তি গ্রহণ, পরিবেশ ও জলবায়ু-সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্ভাব্য সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
রিজার্ভ এখন ২৪ বিলিয়ন ডলার
দেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চিতি বা রিজার্ভের পরিমাণ বর্তমানে ২ হাজার ৪৩০ কোটি বা ২৪ বিলিয়ন ডলার। তবে আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে এর পরিমাণ ২ হাজার কোটি ডলারের কাছাকাছি।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি বাড়ায় বেড়েছে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ। সংকট কাটতে শুরু করায় ব্যাংকগুলো এখন নিজেরাই ডলার কেনা-বেচা করতে পারছে। ডলারের দাম বর্তমানে ১১৮-১২০ টাকার মধ্যে রয়েছে।
হুসনে আরা শিখা বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে ও কার্ব মার্কেটে ডলারের দামের পার্থক্য এখন ১ শতাংশেরও কম। ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। আন্তঃব্যাংক লেনদেন সক্রিয় থাকার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার এখন থেকে স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুসারে নিট রিজার্ভ গণনা করা হয়। গ্রস বা মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বাদ দিলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ জানা যায়। আইএমএফের ঋণ অনুমোদনের পর ২০২৩ সালের জুলাই থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই তথ্য প্রকাশ করছে।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব নিয়ে আহসান এইচ মনসুর জানান, তিনি রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। তাতে রিজার্ভ বাড়বে, কমার কোনো ‘সম্ভাবনা নেই’।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
মতিউরের এসকে ট্রিমসের কারখানা বন্ধ যে কারণে
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আলোচিত সদস্য মতিউর রহমানের পারিবারিক মালিকানাধীন কোম্পানি এসকে ট্রিমসের কারখানা সম্প্রতি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গত শুক্রবার কারখানা বন্ধের বিষয়টি নোটিশ আকারে জারি করে শ্রমিকদের জানিয়ে দেয় কোম্পানিটি।
পাশাপাশি এসকে ট্রিমস শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী গত রোববার বিনিয়োগকারীদের এ তথ্য জানিয়েছে তারা। একইসাথে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এসকে ট্রিমস জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) ও মহানগর দায়রা জজ আদালতের নির্দেশে গত ২৫ জুন থেকে কোম্পানিটির সব ব্যাংক হিসাব বন্ধ রয়েছে। এ কারণে রপ্তানিমুখী কারখানাটি বিদেশ থেকে কোনো কাঁচামালও আমদানি করতে পারছে না। ফলে কারখানায় বেশ কিছুদিন ধরে কোনো ধরনের কাজ নেই। কারখানা সচল রাখার মতো অর্থায়নেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। এ অবস্থায় কারখানা বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
গত জুনে ছেলের ছাগল-কাণ্ডে দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন মতিউর রহমান। এরপর ২৫ জুন বিএফআইইউ মতিউর রহমান পরিবারের মালিকানাধীন এসকে ট্রিমসের ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে দেয়। রপ্তানির সুবিধার্থে পরে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ১১ জুলাই থেকে আবার সব ব্যাংক হিসাব বন্ধের নির্দেশ দেয়। এর পর থেকে অর্থসংকটে পড়ে কোম্পানিটি। শেষমেশ কাঁচামাল সংকটে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, লে–অফকালে কারখানার যেসব শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তার চাকরির মেয়াদ এক বছরের বেশি হয়েছে, তাঁরা শ্রম আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাবেন।
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, কোম্পানিটিতে মতিউর, তার স্ত্রী ও পুত্র-সন্তান কেউই সরাসরি পরিচালনা পর্ষদের সাথে জড়িত নয়। তবে তাদের প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে এসকে ট্রিমসের ৩০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করেছে মতিউর রহমানের পরিবারের সদস্যরা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ প্রায় ১৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে মতিউর রহমানের ভাই এম এ কাউয়ুম হাওলাদারের হাতে, তিনি কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আর ১১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে মতিউর রহমানের ছেলেমেয়ের মালিকানাধীন কোম্পানি গ্লোবাল ম্যাক্স প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজের হাতে। আর প্রায় ৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে মতিউর রহমানের ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীর মালিকানাধীন কোম্পানি গ্লোবাল শুজ–এর নামে। আর বাকি প্রায় ৬৯ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহায়তা চেয়েছে এস আলম গোষ্ঠী
ব্যবসায়িক কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে সরকারের কাছে আর্থিক, আইন ও সামাজিক সহায়তা চেয়েছে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধানকে (বিএফআইইউ) দেওয়া এক চিঠিতে এই সহায়তা চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের পর্ষদ এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার পাশাপাশি এই গোষ্ঠীর ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। ফলে এস আলম গ্রুপ লেনদেন করতে পারছে না এবং ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে তারা।
চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির যেসব হিসাব ছিল, সেগুলো স্থগিত করা হয়েছে বলে কর্মীদের সময়মতো বেতন-ভাতা দেওয়া যাচ্ছে না। তাতে বিভিন্ন শিল্প এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীটির চিঠিতে বলা হয়, লেনদেন স্থগিত হওয়ায় এস আলম গ্রুপ বিভিন্ন পরিষেবার বিল পরিশোধ করতে পারছে না। তাদের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির মতো পরিষেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে এস আলম গ্রুপের পক্ষে সরকারের কর, ভ্যাট ও কাস্টমস শুল্ক পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
এস আলম গ্রুপের চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, এলসি বা ঋণপত্র জোরপূর্বক বাতিল করা হচ্ছে। এর মধ্যে খাদ্য ও সহায়ক অন্যান্য পণ্যের এলসিও আছে। এস আলম গ্রুপ মনে করছে, এর ফলে দেশে খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের সংকট হতে পারে।
চিঠিতে বলা হয়, এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির বেচাবিক্রি কমে যাচ্ছে। পরিণামে ক্রেতা ও সরবরাহকারীদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো অনেক শ্রমিক কাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এই বিষয়টি তারা বিশেষভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এনেছে।
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে যেসব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিশেষ সুবিধা পেয়েছে, তাদের অন্যতম ছিল এস আলম গ্রুপ। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ও রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম ও তাঁর পরিবার গত এক দশকে ব্যাংক দখলসহ নানা ধরনের আর্থিক অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলো থেকে নামে-বেনামে অর্থ বের করে তা পাচার করা হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এমআই