আন্তর্জাতিক
বিশ্বের শীর্ষ ১০ তেলের খনি কোনগুলো

জ্বালানি তেলের মজুতের দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ স্থানে রয়েছে ভেনেজুয়েলায়। এরপর রয়েছে সৌদি আরব, কানাডা ও ইরানে। তবে প্রতিদিন সবচেয়ে বেশি অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করে যুক্তরাষ্ট্র। আবার তেলের বড় রপ্তানিকারক দেশ হলো সৌদি আরব। রাশিয়াও বড় তেল উৎপাদনকারী এবং অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ।
তেলের খনি অবশ্য ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এসব খনির কোনো কোনোটি বিশাল, কোনোটি আবার একেবারে ক্ষুদ্র। বেশি ছোট খনিতে আবার তেল উত্তোলন বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হয় না। বড় তেলের খনি খুঁজে পেলে তা সেই দেশের অর্থনীতিকেই বদলে দিতে পারে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় খনিগুলোর বেশির ভাগই সেই সব দেশে অবস্থিত, যারা তেলের আন্তর্জাতিক বাজারেও গুরুত্বপূর্ণ।
দেখে নেওয়া যাক উৎপাদনের নিরিখে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রথাগত তেলের ক্ষেত্র কোনগুলো:
১. গাওয়ার তেলক্ষেত্র, সৌদি আরব
এটি দেশটির পূর্ব প্রদেশে অবস্থিত। এই খনিটি লম্বায় ২৮০ কিলোমিটার ও চওড়ায় ৩০ কিলোমিটার। ১৯৪৮ সালে গাওয়ার খনি আবিষ্কৃত হয়, আর এটি উৎপাদনে যায় ১৯৫১ সালে। সৌদি আরামকো এটির মালিক। গাওয়ার খনি থেকে প্রতিদিন ৫০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে। এই খনিতে তেলের সম্ভাব্য মজুত ৭ হাজার ১০০ কোটি ব্যারেল।
২. অসবার্গ, নরওয়ে
এটি উত্তর সাগরে অবস্থিত একটি তেল খনি, যার ওপরে অংশ রয়েছে গ্যাস ক্ষেত্র। নরওয়ের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলীয় বার্জেন শহরের ১৪০ কিলোমিটার উত্তর–পশ্চিমে এটির অবস্থান। নবম শতকের একটি ভাইকং জাহাজের নামে এই খনিটির নামকরণ করা হয়েছে, আবিষ্কার করা হয়েছে ১৯৭৯ সালে। এটি থেকে প্রতিদিন ৩০ লাখ ৭৮ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন করা যায়। এই খনির মূল পরিচালনাকারী কোম্পানি হলো স্টেটঅয়েল। সঙ্গে রয়েছে পেটোরো, টোটাল, এক্সমোবিল ও কনোকোফিলিপস।
৩. বলিভার কোস্টাল ফিল্ড, ভেনেজুয়েলা
দেশটির ভুখণ্ডে এই তেল ক্ষেত্রের আবিষ্কার হয় ১৯১৭ সালে আর উৎপাদনে যায় ১৯২২ সালে। দক্ষিণ আমেরিকায় এটি সবচেয়ে বড় তেলক্ষেত্র, যেখানে কূপের সংখ্যা ৭ হাজার। লেক মারাকাইবোর ৩৫ কিলোমিটার উপকূলজুড়ে এগুলোর অবস্থান। এই তেলক্ষেত্রে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ কোটি ব্যারেল তেল আছে বলে ধারনা করা হয়। উৎপাদন সক্ষমতা প্রতিদিন ২৬ লাখ ব্যারেল।
৪. ফিউদোরোভস্কোই ফিল্ড, রাশিয়া
পশ্চিম সাইবেরিয়ায় সেন্ট পিটার্সবার্গের দক্ষিণে এই তেলক্ষেত্রের অবস্থান। আবিষ্কার হয়েছে ১৯৭১ সালে। এই খনির মজুত এখন অনেকটাই কমে গেছে। তবে এখনো এটি থেকে ১৯ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদিত হয়।
৫. বুরগান ফিল্ড, কুয়েত
এই তেল ক্ষেত্রের খোঁজ পাওয়া যায় ১৯৫৭ সালে। কুয়েতের দক্ষিণ মরুভূমিতে এর অবস্থান। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্যান্ডস্টোন তেলের খনি বলে বিবেচিত। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ইরাকি সেনারা পালিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে এই তেলক্ষেত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে ওই ঘটনায় এটির বড় রকমের কোনো ক্ষতি হয়নি বা মজুত কমেনি। বুরগান ক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন ১৭ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হয়। সম্ভাব্য মজুত ৪ হাজার ৪০০ কোটি ব্যারেল।
৬. রুমাইলা তেলক্ষেত্র, ইরাক
১৯৫৩ সালে এই তেলের খনি আবিষ্কৃত হয়। এটির মালিক দেশটির সরকার হলেও বিপি বা ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম ও চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কাছে ইজারা দেওয়া আছে। বর্তমানে রুমাইলা ক্ষেত্র থেকে ১৩ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হয়। এটির সম্ভাব্য মজুত ১ হাজার ৭০০ কোটি ব্যারেল। রুমাইলা তেলক্ষেত্রে কূপের সংখ্যা ২৭০টি। আগামী দিনে উৎপাদনক্ষমতা ২১ লাখ ব্যারেলে বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
৭. সামোতলর ফিল্ড, রাশিয়া
লেক সামোতলর এলাকায় ১ হাজার ৭৫২ বর্গকিলোমিটারজুড়ে এর অবস্থান। আকারের দিক থেকে এই তেলক্ষেত্র রাশিয়ার সবচেয়ে বড়। ১৯৬৫ সালে এটি খুঁজে পাওয়া যায় আর এটি উৎপাদনে যায় ১৯৬৯ সালে। বর্তমানে এই খনি থেকে ৮ লাখ ৪৪ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হয়। সম্ভাব্য মজুত ৪০০ কোটি ব্যারেল। উৎপাদন শুরুর পর এই খনি থেকে ২৬০ কোটি টন তেল উত্তোলন করা হয়েছে।
৮. প্রিবস্কোই ফিল্ড, রাশিয়া
পশ্চিম সাইবেরিয়ার ৫ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটারজুড়ে এই বিশাল তেলক্ষেত্রের অবস্থান। আবিষ্কার হয় ১৯৮২ সালে আর এটি উৎপাদনে আসে ২০০০ সালে। গাজপ্রম নেফট ও রসনেফট যৌথভাবে এটির মালিক ও পরিচালনা করে। বর্তমানে এই তেলক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন ৬ লাখ ৮৪ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন হয়।
৯. প্রুডহো বে, যুক্তরাষ্ট্র
আলাস্কার নর্থ স্লোপে ২ লাখ ১৩ হাজার ৫৪৩ একরজুড়ে এটির অবস্থান। এই তেলক্ষেত্র যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশে সবচেয়ে বড়। ১৯৬৮ সালে এটি আবিষ্কৃত হলেও উৎপাদনে আসে ১৯৭৭ সালে। বিপি পরিচালিত এই খনিতে অন্য অংশীদার হলো এক্সনমবিল ও কনোকোফিলিপস আলাস্কা। প্রতিদিন ৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন হয় এখান থেকে। আর সম্ভাব্য মজুত ২ হাজার ৫০০ কোটি ব্যারেল।
১০. মাজনুন তেলক্ষেত্র, ইরাক
দক্ষিণ ইরাকের বসরা শহরের কাছে এই খনির অবস্থান। বিশ্বে যেসব খনি তেলে একেবারে পরিপূর্ণ, সেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে মাজনুন তেলক্ষেত্র। এটির সম্ভাব্য মজুত ১ হাজার ২৬০ কোটি ব্যারেল। ১৯৭৫ সালে ব্রাজিলের কোম্পানি ব্রাসপেট্রো এটি আবিষ্কার করে। মাজনুন শব্দের অর্থ হলো পাগলাটে। প্রতিদিন এই ক্ষেত্র থেকে ৫ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হয়।

আন্তর্জাতিক
রিলস বানাতে গিয়ে যমুনা নদীতে ডুবে ৬ কিশোরীর মৃত্যু

ভারতের উত্তরপ্রদেশের আগ্রার সিকান্দরা থানা এলাকায় যমুনা নদীতে গোসল করতে নেমে ছয় কিশোরীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ জুন) এ ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরীরা কাছাকাছি কৃষিজমিতে কাজ শেষে যমুনার পাড়ে বিশ্রাম নিতে যায়। প্রচণ্ড গরমে শরীর ঠান্ডা করতে তারা নদীতে নামে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শুরুতে তারা নদীর তীরে খেলছিল ও মোবাইল ফোনে রিলস ভিডিও করছিল। ধীরে ধীরে গভীর পানিতে চলে গেলে স্রোতের টানে তারা তলিয়ে যায়।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় চারজন ডুবে যায় এবং বাকি দু’জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দুই কিশোরীও মারা যায়। এর ফলে সেখানে পানিতে ডুবে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ছয়জনে দাঁড়িয়েছে।
মারা যাওয়া সবাই একটি স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দা। খবর পেয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, ছয়জনই পানিতে ডুবে মারা গেছে। জেলা প্রশাসন শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে এবং দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে।
কাফি
আন্তর্জাতিক
দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং

সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে অভিশংসনের মাধ্যমে অপসারণের পর আগাম নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার উদারপন্থি নেতা লি জায়ে মিয়ং। যদিও তিন বছর আগে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়োলের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার (৩ জুন) দিবাগত রাতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে দেশটির জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এতে দেশটির রক্ষণশীল প্রতিদ্বন্দ্বী কিম মুন-সু-কে ব্যাপক ব্যবধানে পরাজিত করেছেন বামপন্থী প্রার্থী লি জায়ে মিয়ং। বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
সব ভোট গণনার পর দেখা যায়, বিরোধীদল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী লি ৪৯ দশমিক ৪২ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টির প্রার্থী কিম মুন সু পান ৪১ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোট।
বিশ্লেষকদের মতে, নতুন প্রেসিডেন্ট লি’র সামনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কোরিয়ার শুল্কনীতি ও নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। অপরদিকে, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হুমকির মুখে দক্ষিণ কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মোতায়েন থাকলেও, ওয়াশিংটন কিছু সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে বলে গুঞ্জন উঠেছে।
এর আগে, লি জে-মিয়ং অতীতে দক্ষিণ কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র জোট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। তবে নির্বাচনী প্রচারে এবার কিছুটা নমনীয় অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। একইসাথে তিনি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের পক্ষে, যা ওয়াশিংটনের সাথে সম্পর্কের জটিলতা বৃদ্ধি করতে পারে বলে ধারণা আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের।
অপরদিকে, নির্বাচনে জয়ের পর দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মিয়ং। কঠিন এই পরিস্থিতিতে দেশটির ক্ষমতায় বসে আদর্শগত যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তি ও ঐক্যের পরিবেশ তৈরি করবেন, এমনটাই আশা দেশটির সাধারণ নাগরিকদের।
আন্তর্জাতিক
অবশেষে যুদ্ধবিমান হারানোর কথা স্বীকার করল ভারত

ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান অবশেষে পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতে যুদ্ধবিমান হারানোর বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছেন। শনিবার (৩১ মে) সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত শাংরিলা ডায়লগে ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই স্বীকারোক্তি দেন।
জেনারেল চৌহান বলেন, “বিমানের সংখ্যা নয়, বরং কী ভুল হয়েছে এবং কেন হয়েছে- সেটা বোঝা আমাদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।” যদিও তিনি পাকিস্তানের ছয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবিকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দেন, তবে কতগুলো বিমান হারিয়েছে ভারত, তা তিনি স্পষ্ট করে উল্লেখ করেননি।
তিনি জানান, “ভুলগুলো চিহ্নিত করে আমরা দ্রুত সেগুলোর সংশোধন করেছি এবং মাত্র দুই দিনের মধ্যে আবার আকাশে সব যুদ্ধবিমান নিয়ে হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছি।”
ভারতের পক্ষ থেকে এই প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে যুদ্ধবিমান হারানোর বিষয়টি স্বীকার করা হলো। উল্লেখ্য, সংঘাতের মধ্যেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ দাবি করেছিলেন, পাকিস্তান ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। তবে সেই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই হয়নি এবং ভারত সরকারও এতদিন বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর থেকেই পাক-ভারত এই সংঘাত শুরু হয়। ভারত একে ‘পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসী হামলা’ বলে দাবি করলেও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে। সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছালে উভয় দেশ বিমান, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাশাপাশি সীমান্তে গুলিবিনিময়ে জড়িয়ে পড়ে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য যে যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু যুদ্ধ এড়াতে ভূমিকা রেখেছে- এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকৃতি জানান জেনারেল চৌহান। তিনি বলেন, “পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিলাম- এমন দাবি বাস্তবতার থেকে অনেক দূরে।”
চৌহান আরও জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগের পথ সবসময় খোলা ছিল এবং উত্তেজনা প্রশমনে বিকল্প অনেক পথ রয়েছে। তিনি পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতা প্রসঙ্গে বলেন, “চীনসহ বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে পাকিস্তান যেসব অস্ত্র পেয়েছিল, সেগুলো কার্যকর হয়নি।” তবে ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থার মতে, চীন সংঘাতের সময় পাকিস্তানকে বিমান প্রতিরক্ষা ও স্যাটেলাইট সহায়তা দিয়েছে।
ভারতীয় সেনাপ্রধান বলেন, “আমরা পাকিস্তানের সুরক্ষিত ঘাঁটির ৩০০ কিলোমিটার ভেতরে মিটার-নির্ভুলতায় হামলা চালাতে পেরেছি।” তিনি জানান, বর্তমানে যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে, তবে ভবিষ্যতে তা পাকিস্তানের আচরণের ওপর নির্ভর করবে। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, “আমরা আমাদের স্পষ্ট লাল দাগ টেনে দিয়েছি।”
এর আগে বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী এক সাক্ষাৎকারে জানান, পাকিস্তান চীনা প্রযুক্তিনির্ভর যুদ্ধবিমান দিয়ে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। তিনি রাফায়েল বিমানের কার্যকারিতা এবং চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো জবাবদিহিতা নেই। তার এই বক্তব্য দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক
বাংলাদেশে আসতে চায় শুভেন্দুসহ বিজেপির টিম

ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের ‘সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক হামলার ঘটনা’ পরিদর্শন করতে বাংলাদেশ সফর করবে বলে জানা গেছে। এমনটাই জানিয়েছেন, বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে সেই টিমে কতজন প্রতিনিধি থাকবে সে তথ্য এখনও জানা যায়নি।
কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশ উপদূতাবাসও বিজেপি টিমের বাংলাদেশ সফরের তথ্য নিশ্চিত করেছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুভেন্দুসহ বিজেপির একটি টিম বাংলাদেশে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। তাদের ভিসা নিয়ে সমস্যা হবে না বলেও জানানো হয়। তবে কতজন যাবে, বিজেপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
গত শুক্রবার (৩০ মে) বিজেপির একটি টিম বাংলাদেশ মিশনে এসেছিলেন স্মারকলিপি জমা দিতে। এরপর সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে শুভেন্দু বলেন, সম্প্রতি যশোরে হামলার শিকার হওয়া সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি দেখতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল শিগগির বাংলাদেশে যাবে।
এ বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদারকে। তাকে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। সড়কপথে পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তারা যশোরের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন বলে জানিয়েছেন শুভেন্দু।
এরই মধ্যে কলকাতার বাংলাদেশ মিশনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন জানিয়েছে, যদি কোনো প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ যেতে চায়, তবে তাদের দ্রুত ভিসার ব্যবস্থা করা হবে।
মূলত গত সপ্তাহে যশোরের অভয়নগর উপজেলার ডহরমশিয়াহাটি গ্রামে মতুয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, এতে অন্তত ১৮টি বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে। যশোরের অভয়নগরে নওয়াপাড়া পৌর শাখা কৃষক দলের সভাপতি এস এম তরিকুল ইসলামকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনার পর এসব ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (২২ মে) সন্ধ্যায় বিএনপির ওই নেতার মৃত্যুর বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে অভিযুক্তের বাড়িসহ আশপাশের বাড়িতে আগুন দেয় উত্তেজিত জনতা।
শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির পরিষদীয় দলের একটি প্রতিনিধি দল শুক্রবার কলকাতার বাংলাদেশ মিশনে স্মারকলিপি জমা দেন। শুভেন্দু জানান, বাংলাদেশ মিশন তাদের জানিয়েছে, ওই ঘটনায় ৭ জন গ্রেফতার হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ৬ হাজার টাকা, ৩০ কেজি করে চাল ও ২ বান্ডিল করে টিন সাহায্য দিয়েছে।
শুভেন্দু জানিয়েছেন, তারাও সাহায্য করতে চান। কিন্তু সরাসরি করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ সরকার যদি অনুমতি দেয়, তাহলে সেখানে মতুয়া সম্প্রদায়, রামকৃষ্ণ মিশন, গৌড়ীয় মঠ এবং ভারত সেবাশ্রম সংঘের মাধ্যমে সেখানে সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিজেপির একটি টিম।
আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা-তেল আমদানি বাড়াতে চায় বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে ঢাকা ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্য আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পরিমাণে তুলা ও জ্বালানি তেল আমদানি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পেশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) টোকিওতে আয়োজিত নিক্কেই এশিয়া ফোরামের ফাঁকে জাপানের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়া-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান।
ড. ইউনূস বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেহেতু বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে আগ্রহী, তাই আমরা তাদেরকে প্রস্তাব দিয়েছি—আমরা যদি আরও বেশি মার্কিন পণ্য কিনি, তবে অন্যান্য দেশ থেকে এ ধরনের পণ্যের আমদানি কমিয়ে আনবো।”
তিনি আরও বলেন, “উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা প্রচুর তুলা আমদানি করি মধ্য এশিয়া ও ভারত থেকে। এখন আমরা ভাবছি, কেন সেই তুলা যুক্তরাষ্ট্র থেকেই আমদানি করবো না? এতে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি অনেকটাই হ্রাস পাবে।”
চলতি অর্থবছরে গত জুন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৬.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং আমদানি করেছে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এর মধ্যে তুলার পরিমাণ ছিল ৩৬১ মিলিয়ন ডলার।
বিশ্বের অন্যতম প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এই অর্থবছরে প্রায় ৭.৯ বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করেছে, যার একটি বড় অংশ এসেছে উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের মতো দেশ থেকে। মোট আমদানির ১২.৫ শতাংশই ছিল তুলা।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের তুলা উৎপাদনকারীদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়েছে এবং তারা মার্কিন প্রশাসনে বাংলাদেশের পক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন। তার ভাষায়, “তুলা উৎপাদনকারীরা আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠেছে, যারা আমাদের কিছু রাজনৈতিক সহায়তা দেয়।”
জ্বালানির বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, “যদিও আমরা বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীল, তবুও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল কেনার সুযোগ রয়েছে এবং সেটিও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।”
তবে কবে নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্য আলোচনা শুরু হবে—সে বিষয়ে এখনো কোনও নির্দিষ্ট সময়সূচি ঠিক হয়নি বলে জানান তিনি। একইভাবে, শুল্ক কতটা কমানো সম্ভব হবে, তা নিশ্চিত নয়। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকিকে ‘হুমকি নয়, বরং একটি সম্ভাবনা’ হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ—বলেই মন্তব্য করেন ইউনূস।
এ সময় তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত সাময়িকভাবে ট্রাম্পের শুল্ক কার্যকরের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে। আদালত মনে করে, বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কংগ্রেসের; প্রেসিডেন্ট এককভাবে এ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, সাবেক স্বৈরশাসক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরেও ১১-১২ বিলিয়ন ডলার লুটপাটের ঘটনা শনাক্ত করা হয়েছে এবং অর্থ বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
তিনি জানান, এই অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব হলে দুটি আলাদা তহবিল গঠন করা হবে, যেখান থেকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে অর্থায়ন করা হবে। একইসঙ্গে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে উদ্যোক্তায় রূপান্তর করে তাদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে এই অর্থ ব্যবহার করা হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করতে চান—এমন গুঞ্জন ছড়ায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিক্কেইকে তিনি বলেন, “আমি বাংলাদেশে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেইনি। তাই এখন বিদেশে কিছু বললে সেটা আমার জন্য জটিলতা তৈরি করতে পারে।”