আন্তর্জাতিক
বিশ্বের শীর্ষ ১০ তেলের খনি কোনগুলো

জ্বালানি তেলের মজুতের দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ স্থানে রয়েছে ভেনেজুয়েলায়। এরপর রয়েছে সৌদি আরব, কানাডা ও ইরানে। তবে প্রতিদিন সবচেয়ে বেশি অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করে যুক্তরাষ্ট্র। আবার তেলের বড় রপ্তানিকারক দেশ হলো সৌদি আরব। রাশিয়াও বড় তেল উৎপাদনকারী এবং অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ।
তেলের খনি অবশ্য ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এসব খনির কোনো কোনোটি বিশাল, কোনোটি আবার একেবারে ক্ষুদ্র। বেশি ছোট খনিতে আবার তেল উত্তোলন বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হয় না। বড় তেলের খনি খুঁজে পেলে তা সেই দেশের অর্থনীতিকেই বদলে দিতে পারে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় খনিগুলোর বেশির ভাগই সেই সব দেশে অবস্থিত, যারা তেলের আন্তর্জাতিক বাজারেও গুরুত্বপূর্ণ।
দেখে নেওয়া যাক উৎপাদনের নিরিখে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রথাগত তেলের ক্ষেত্র কোনগুলো:
১. গাওয়ার তেলক্ষেত্র, সৌদি আরব
এটি দেশটির পূর্ব প্রদেশে অবস্থিত। এই খনিটি লম্বায় ২৮০ কিলোমিটার ও চওড়ায় ৩০ কিলোমিটার। ১৯৪৮ সালে গাওয়ার খনি আবিষ্কৃত হয়, আর এটি উৎপাদনে যায় ১৯৫১ সালে। সৌদি আরামকো এটির মালিক। গাওয়ার খনি থেকে প্রতিদিন ৫০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে। এই খনিতে তেলের সম্ভাব্য মজুত ৭ হাজার ১০০ কোটি ব্যারেল।
২. অসবার্গ, নরওয়ে
এটি উত্তর সাগরে অবস্থিত একটি তেল খনি, যার ওপরে অংশ রয়েছে গ্যাস ক্ষেত্র। নরওয়ের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলীয় বার্জেন শহরের ১৪০ কিলোমিটার উত্তর–পশ্চিমে এটির অবস্থান। নবম শতকের একটি ভাইকং জাহাজের নামে এই খনিটির নামকরণ করা হয়েছে, আবিষ্কার করা হয়েছে ১৯৭৯ সালে। এটি থেকে প্রতিদিন ৩০ লাখ ৭৮ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন করা যায়। এই খনির মূল পরিচালনাকারী কোম্পানি হলো স্টেটঅয়েল। সঙ্গে রয়েছে পেটোরো, টোটাল, এক্সমোবিল ও কনোকোফিলিপস।
৩. বলিভার কোস্টাল ফিল্ড, ভেনেজুয়েলা
দেশটির ভুখণ্ডে এই তেল ক্ষেত্রের আবিষ্কার হয় ১৯১৭ সালে আর উৎপাদনে যায় ১৯২২ সালে। দক্ষিণ আমেরিকায় এটি সবচেয়ে বড় তেলক্ষেত্র, যেখানে কূপের সংখ্যা ৭ হাজার। লেক মারাকাইবোর ৩৫ কিলোমিটার উপকূলজুড়ে এগুলোর অবস্থান। এই তেলক্ষেত্রে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ কোটি ব্যারেল তেল আছে বলে ধারনা করা হয়। উৎপাদন সক্ষমতা প্রতিদিন ২৬ লাখ ব্যারেল।
৪. ফিউদোরোভস্কোই ফিল্ড, রাশিয়া
পশ্চিম সাইবেরিয়ায় সেন্ট পিটার্সবার্গের দক্ষিণে এই তেলক্ষেত্রের অবস্থান। আবিষ্কার হয়েছে ১৯৭১ সালে। এই খনির মজুত এখন অনেকটাই কমে গেছে। তবে এখনো এটি থেকে ১৯ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদিত হয়।
৫. বুরগান ফিল্ড, কুয়েত
এই তেল ক্ষেত্রের খোঁজ পাওয়া যায় ১৯৫৭ সালে। কুয়েতের দক্ষিণ মরুভূমিতে এর অবস্থান। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্যান্ডস্টোন তেলের খনি বলে বিবেচিত। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ইরাকি সেনারা পালিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে এই তেলক্ষেত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে ওই ঘটনায় এটির বড় রকমের কোনো ক্ষতি হয়নি বা মজুত কমেনি। বুরগান ক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন ১৭ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হয়। সম্ভাব্য মজুত ৪ হাজার ৪০০ কোটি ব্যারেল।
৬. রুমাইলা তেলক্ষেত্র, ইরাক
১৯৫৩ সালে এই তেলের খনি আবিষ্কৃত হয়। এটির মালিক দেশটির সরকার হলেও বিপি বা ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম ও চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কাছে ইজারা দেওয়া আছে। বর্তমানে রুমাইলা ক্ষেত্র থেকে ১৩ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হয়। এটির সম্ভাব্য মজুত ১ হাজার ৭০০ কোটি ব্যারেল। রুমাইলা তেলক্ষেত্রে কূপের সংখ্যা ২৭০টি। আগামী দিনে উৎপাদনক্ষমতা ২১ লাখ ব্যারেলে বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
৭. সামোতলর ফিল্ড, রাশিয়া
লেক সামোতলর এলাকায় ১ হাজার ৭৫২ বর্গকিলোমিটারজুড়ে এর অবস্থান। আকারের দিক থেকে এই তেলক্ষেত্র রাশিয়ার সবচেয়ে বড়। ১৯৬৫ সালে এটি খুঁজে পাওয়া যায় আর এটি উৎপাদনে যায় ১৯৬৯ সালে। বর্তমানে এই খনি থেকে ৮ লাখ ৪৪ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হয়। সম্ভাব্য মজুত ৪০০ কোটি ব্যারেল। উৎপাদন শুরুর পর এই খনি থেকে ২৬০ কোটি টন তেল উত্তোলন করা হয়েছে।
৮. প্রিবস্কোই ফিল্ড, রাশিয়া
পশ্চিম সাইবেরিয়ার ৫ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটারজুড়ে এই বিশাল তেলক্ষেত্রের অবস্থান। আবিষ্কার হয় ১৯৮২ সালে আর এটি উৎপাদনে আসে ২০০০ সালে। গাজপ্রম নেফট ও রসনেফট যৌথভাবে এটির মালিক ও পরিচালনা করে। বর্তমানে এই তেলক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন ৬ লাখ ৮৪ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন হয়।
৯. প্রুডহো বে, যুক্তরাষ্ট্র
আলাস্কার নর্থ স্লোপে ২ লাখ ১৩ হাজার ৫৪৩ একরজুড়ে এটির অবস্থান। এই তেলক্ষেত্র যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশে সবচেয়ে বড়। ১৯৬৮ সালে এটি আবিষ্কৃত হলেও উৎপাদনে আসে ১৯৭৭ সালে। বিপি পরিচালিত এই খনিতে অন্য অংশীদার হলো এক্সনমবিল ও কনোকোফিলিপস আলাস্কা। প্রতিদিন ৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন হয় এখান থেকে। আর সম্ভাব্য মজুত ২ হাজার ৫০০ কোটি ব্যারেল।
১০. মাজনুন তেলক্ষেত্র, ইরাক
দক্ষিণ ইরাকের বসরা শহরের কাছে এই খনির অবস্থান। বিশ্বে যেসব খনি তেলে একেবারে পরিপূর্ণ, সেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে মাজনুন তেলক্ষেত্র। এটির সম্ভাব্য মজুত ১ হাজার ২৬০ কোটি ব্যারেল। ১৯৭৫ সালে ব্রাজিলের কোম্পানি ব্রাসপেট্রো এটি আবিষ্কার করে। মাজনুন শব্দের অর্থ হলো পাগলাটে। প্রতিদিন এই ক্ষেত্র থেকে ৫ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হয়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আন্তর্জাতিক
যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেছে ভারত

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেছে ভারত। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এবিপি আনন্দের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ভারত।
এর আগে ভারতের পহেলগামে হামলার ঘটনার পর পাকিস্তান ঘোষণা দেয়, তারা ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাবে। এ নিয়ে করাচি উপকূলের কাছে নিজেদের ‘এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে’ পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানি নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২৪ -২৬ এপ্রিলের মধ্যে এই মিসাইল পরীক্ষা সম্পন্ন হবে।
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, পাকিস্তানের এই পদক্ষেপ ঘিরে ভারতের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
এদিকে পাল্টা প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ভারতও সামরিক তৎপরতা জোরদার করেছে। গতকাল মিসাইল ধ্বংসের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী। নিজেদের প্রযুক্তিতে তৈরি আইএনএস সুরাত থেকে এক নিম্ন-উড্ডয়ন মিসাইল সফলভাবে ধ্বংস করা হয়। এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ভারতীয় নৌবাহিনী বলেছে, এতে তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
এই সামরিক পাল্টাপাল্টির মধ্যে ভাষার লড়াইও থেমে নেই। ভারতের সিদ্ধান্তকে ‘শিশুসুলভ’ আখ্যা দিয়ে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, ‘আমরা ভারতকে যোগ্য জবাব দেব। এই জবাব কম হবে না।’
সাম্প্রতিক উত্তেজনায় দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ইতোমধ্যে হিমশীতল হয়ে পড়েছে। একে অপরের কূটনীতিক বহিষ্কার করেছে দুই দেশ। বন্ধ হয়েছে আকাশসীমাও। এখন সামরিক শক্তি প্রদর্শনের পালা শুরু হয়েছে সমুদ্র ও আকাশপথে।
চলমান পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ সংঘাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
ভারত-পাকিস্তানকে সংযত হওয়ার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

ভারত-শাসিত কাশ্মিরের পেহেলগামে প্রাণঘাতী হামলার পর পাকিস্তান ও ভারতকে “সর্বোচ্চ সংযম” দেখাতে বলেছে জাতিসংঘ। মূলত হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই আহ্বান জানিয়েছেন।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
হামলার ঘটনাটি ঘটেছে ভারত-শাসিত জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে — যা গ্রীষ্মকালে হাজার হাজার পর্যটকের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র। বন্দুকধারীদের গুলিতে সেখানে কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দা এবং একজন নেপালের নাগরিক। আহত হন আরও অন্তত ১৭ জন।
এই ঘটনায় পাকিস্তানের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে ভারত। তবে ভারতের দাবি প্রত্যাখ্যান করে কাশ্মিরের এই হামলাকে সাজানো ঘটনা বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। দেশটি বলেছে, এটি ছিল একটি ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন—অর্থাৎ নিজেরাই ঘটিয়ে অন্যের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা।
হামলার এই ঘটনার পর উভয় দেশই উভয়ের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে এবং এতে করে উভয় দেশের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
এমন অবস্থায় নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক বলেন, “মহাসচিব এই পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং এতে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আমরা ভারত ও পাকিস্তান – উভয় দেশের সরকারকে সংযম বজায় রাখার জন্য জোরালোভাবে আহ্বান জানাচ্ছি, যেন পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে না যায়।”
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, মহাসচিব এখন পর্যন্ত পাকিস্তান বা ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেননি। ডুজারিক আরও বলেন, “আমাদের বিশ্বাস, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার যেকোনও সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে এবং পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত।”
ভারতের একতরফাভাবে ১৯৬০ সালের সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা প্রসঙ্গে জাতিসংঘ মুখপাত্র বলেন, “আমরা এমন কোনও পদক্ষেপ সমর্থন করি না যা পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করতে পারে। তাই আমরা সংযম বজায় রাখার আহ্বানই পুনর্ব্যক্ত করছি।”
তবে জাতিসংঘের এই আহ্বানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি)-এ ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। আজাদ কাশ্মির সরকারের কর্মকর্তা সৈয়দ আশফাক গিলানি এএফপি-কে বলেন, “সীমান্তে সেনারা গুলি বিনিময় করেছে। তবে বেসামরিক জনগণের ওপর কোনও হামলা হয়নি।”
এই প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস জানান, “দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, আমরা তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। কাশ্মির বা জম্মুর অবস্থান নিয়ে আমরা বর্তমানে কোনও অবস্থান নিচ্ছি না।”
এদিকে পেহেলগাম হামলার পর ভারতের কড়া পদক্ষেপের জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য স্থগিত, আকাশপথ বন্ধ এবং আরও বেশ কয়েকটি কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষামূলক সিদ্ধান্ত।
ভারতের পদক্ষেপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিচুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত করা। বিশ্ব ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং দুই দেশের মধ্যকার নানা বৈরিতার মধ্যেও এতদিন চুক্তিটি টিকে ছিল।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
সর্বাত্মক যুদ্ধের সতর্কতা পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার জেরে পারমানবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে যেন আগুনে ঘি ঢাললেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, প্রতিবেশী দু দেশের মধ্যে আলোচনাই পারে এ সংকট নিরসন করতে। তবে ভারত যদি হামলা করতে চায়, পাকিস্তান কঠোর ব্যবস্থা নেবে। সর্বাত্মক যুদ্ধ হবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন জানিয়ে পাকিস্তানি জিও নিউজ শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
খাজা আসিফ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে পূর্ণ মাত্রার সংঘাতের সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্বকে ‘চিন্তা’ করতে হবে। ভারতের সাথে উত্তেজনা ‘সর্বাত্মক যুদ্ধে’ রূপ নিতে পারে।
ভারত সরকার পেহেলগামের হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ দৃঢ়ভাবে দাবি অস্বীকার করেছে। এ অবস্থায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জোর দিয়ে বলেছেন, ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ‘যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত’।
তবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, পরিস্থিতি এখনও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা উচিত।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত কিনা জানতে চাইলে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইতিবাচক উত্তর দেন। তিনি বলেন, দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘর্ষ সর্বদা উদ্বেগজনক… যদি পরিস্থিতি ভুল হয়ে যায়, তাহলে এই সংঘর্ষের একটি দুঃখজনক পরিণতি হতে পারে।
জিও নিউজ লিখেছে, পেহেলগাম হামলার তীব্র প্রতিক্রিয়ায় ভারত ছয় দশকের পুরোনো সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার একতরফা সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে এবং অধিকৃত অঞ্চলে পর্যটকদের ওপর হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অন্যান্য পদক্ষেপও নিয়েছে।
ভারতের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি (এনএসসি) সতর্ক করে দিয়েছে, পাকিস্তানের আইনত পানির প্রবাহকে ভিন্ন দিকে সরানোর জন্য ভারতের যেকোনো পদক্ষেপকে যুদ্ধের পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
এরইমধ্যে পাকিস্তান ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে সমস্ত ভারতীয় স্থল পরিবহন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সমস্ত বাণিজ্যিক ভারতীয় বিমান চলাচলের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় হাই কমিশনের কর্মীদের সংখ্যা ৩০ জনে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।
দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা এশীয় উপমহাদেশের ‘ভয়াবহ’ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
গত ২২ এপ্রিল বিকেলে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন ২৬ জন। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তান ভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার স্থানীয় শাখা দ্য রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্ট।
এদিকে, উত্তেজনার মধ্যেই জম্মু ও কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) ভারত ও পাকিস্তানের সেনা সদস্যদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হননি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
মোদিকে ফোনে করে যা বললেন নেতানিয়াহু

কাশ্মীর হামলার ঘটনায় সমবেদনা জানাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) কাশ্মীর হামলা ঘটনা নিয়ে কথা হয় তাদের।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি ভারতের শোক ভাগ করে নেয়ার জন্য নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। জোর দিয়ে বলেছেন, দুই দেশই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী অভিযানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে।’
এ আগে, মঙ্গলবার পাহেলগাম হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন নেতানিয়াহু। ফোনে মোদি এই বর্বর হামলা সম্পর্কে নেতানিয়াহুকে বিস্তারিত জানিয়েছেন এবং অপরাধীদের ও হামলায় সমর্থনকারীদের বিচারের আওতায় আনার ভারতের দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছেন।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক্স-এ একটি পোস্টে এসব তথ্য শেয়ার করেছেন।
এক্স-এ বলা হয়, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেছেন এবং ভারতের মাটিতে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি ভারতের জনগণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
ভারতীয়দের সকল ভিসা স্থগিত করলো পাকিস্তান

ভারত-শাসিত কাশ্মিরে হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে গেছে এবং এরই প্রেক্ষিতে ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা তথা সমানুপাতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পাকিস্তান।
ইসলামাবাদ তাৎক্ষণিকভাবে ভারতীয় নাগরিকদের দেওয়া সমস্ত ভিসা স্থগিত করেছে। এর পাশাপাশি প্রতিবেশী ভারতের কিছু কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে এবং ভারতীয় বিমানের জন্য পাকিস্তানি আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, কাশ্মিরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আবারও চরম উত্তেজনায় পৌঁছেছে। গত মঙ্গলবারের ওই হামলায় একদল বন্দুকধারী পর্যটকদের ওপর গুলি চালায়, যাতে ২৬ জন প্রাণ হারান। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দা ছিলেন।
ঘটনাটিকে গত কয়েক বছরের মধ্যে কাশ্মিরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হিসেবে মনে করা হচ্ছে। হামলার পর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের স্তর কমিয়ে আনে এবং একাধিক পদক্ষেপ নেয়, যার মধ্যে—দুই দেশের মধ্যে চলাচলের প্রধান স্থলপথ আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া, পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভারতীয় ভিসা বন্ধ করে দেওয়া এবং ৬০ বছরের পুরোনো সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের ঘোষণাও রয়েছে।
জবাবে পাকিস্তানও বেশ কিছু পাল্টা কড়া সিদ্ধান্ত নেয়। দেশটি ভারতের সব ফ্লাইটের জন্য পাকিস্তানের আকাশপথ বন্ধ করে দেয়, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য স্থগিত করে। এছাড়া ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মরত কূটনীতিকের সংখ্যা ৩০ জনে নামানোর নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি ভারতীয় নৌ, বিমান ও সামরিক উপদেষ্টাদের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পাকিস্তান ছাড়তে বরঅ হয়েছে।
এদিকে কাশ্মিরজুড়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৫০০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। কয়েকদিন ধরে বন্ধ থাকা স্কুল, দোকানপাট ও ব্যবসা এখন ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে।
অন্যদিকে হামলার এই ঘটনার পর ভারতের বিভিন্ন জায়গায় কাশ্মিরি মুসলিম শিক্ষার্থীদের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। জম্মু-কাশ্মির ছাত্র সংঘের প্রধান নাসির খুইহামি জানিয়েছেন, উত্তরাখণ্ডে একটি কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে কাশ্মিরি শিক্ষার্থীদের মারধরের হুমকি দিয়ে একটি ভিডিও ছড়িয়েছে।
যদিও এই ভিডিওগুলোর সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।