অর্থনীতি
এনবিআরের পাঁচ কর্মকর্তার পদায়ন
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাঁচ কর্মকর্তার পদায়ন করা হয়েছে। রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এনবিআরের এক অফিস আদেশে তাদের পদায়ন করা হয়।
আদেশের তথ্য অনুযায়ী, শুল্ক ও আবগারি সদস্য হোসেন আহমদকে মূসক নীতি থেকে কাস্টমস নীতি ও আইসিটি বিভাগে বদলি করা হয়েছে।
এছাড়া সদ্য যোগদানকৃত চার কর্মকর্তাকে চলতি দায়িত্বের সঙ্গে চার দপ্তরে পদায়ন করা হয়েছে। চার কর্মকর্তা হলেন- মোহাম্মদ বেলাল হোসাইনকে মূসক নীতিতে, মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে শুল্ক রপ্তানি বন্ড ও আইটিতে, মো. আজিজুর রহমানকে মূসক নিরীক্ষাতে এবং ড. মো. আবদুর রউফকে মূসক বাস্তবায়ন ও আইটিতে পদায়ন করা হয়েছে।
একই সঙ্গে একইসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গত ২০২২ সালে ৫ জানুয়ারি ও ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর পৃথক দুই অফিস আদেশে মো. মাসুদ সাদিক ও ফারজানা আফরোজকে পদায়নের আদেশটি বাতিল করা হয়েছে।
যথাযথ কর্তপক্ষের অনুমোদনক্রমে জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো এবং ইহা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।
এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দেশে প্রথম ড্রোন কারখানা স্থাপনে চুক্তি, ব্যয় সাড়ে ৪ কোটি ডলার
বাংলাদেশি কোম্পানি স্কাই বিজ লিমিটেড ৪ কোটি ৫৯ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে (বেপজা ইজেড) মনুষ্যবিহীন আকাশযান (ইউএভি, যা মূলত ড্রোন হিসেবে পরিচিত) তৈরির কারখানা স্থাপন করবে।
বেপজাধীন ইপিজেডসমূহ ও বেপজা ইজেড এলাকায় এটি হতে যাচ্ছে ড্রোন তৈরির প্রথম কারখানা যেখানে ৫৫ জন বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এ লক্ষ্যে, বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ঢাকার বেপজা নির্বাহী দপ্তরে স্কাই বিজ লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। বেপজার সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবীর এবং স্কাই বিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসীম উদ্দিন আহমেদ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন।
প্রতিষ্ঠানটি বার্ষিক ৭ হাজার ৩১৪ পিস বিভিন্ন ধরনের ড্রোন তৈরি করবে যা কৃষিকাজে কীটনাশক স্প্রে, অগ্নিনির্বাপণ, জরুরি উদ্ধারকাজ, পণ্য সরবরাহ, সিনেমাটোগ্রাফি, ম্যাপিং প্রভৃতি কাজে ব্যবহৃত হবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে, বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় স্কাই বিজ লিমিটেডের প্রশংসা করে বলেন, বেপজা সর্বদা বৈচিত্র্যময় পণ্যে বিনিয়োগ উৎসাহিত করে। তিনি ড্রোনের মতো একটি উচ্চপ্রযুক্তির বৈচিত্র্যময় পণ্য তৈরির লক্ষ্যে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলকে বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে নির্বাচনের জন্য স্কাই বিজ লিমিটেডকে ধন্যবাদ জানান। ড্রোন তৈরির এই উদ্যোগের প্রশংসা করে নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, দেশে ড্রোন তৈরিতে বিনিয়োগের পথিকৃৎ হিসেবে এবং রপ্তানি বাস্কেটকে প্রসারিত করতে এই উদ্যোগ গুরুত্বপূণ ভূমিকা রাখবে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
পাঁচ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ড বিক্রির তারিখ ঘোষণা
বাংলাদেশ ব্যাংকে ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ট্রেজারি বন্ড বিক্রির জন্য নিলাম অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর)। বাংলাদেশ ব্যাংকের যোগাযোগ ও প্রকাশনা বিভাগ (ডিসিপি) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে মঙ্গলবার ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ট্রেজারি বন্ড বিক্রির নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। এ নিলামে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অভিহিত (লিখিত) মূল্যের বন্ড ইস্যু করা হবে। এ বন্ডের জন্য বার্ষিক কাট অব ইয়েল্ড হারে কুপন বা মুনাফা ষাণ্মাষিকভিত্তিতে পরিশোধ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আরও জানায়, নিলামে শুধু সরকারি সিকিউরিটিজের প্রাইমারি ডিলারের ভূমিকায় নিয়োগ পাওয়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিড দাখিল করতে পারবে। তবে অন্যান্য ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানও নিজস্ব খাতে তাদের ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী গ্রাহকদের জন্য প্রাইমারি ডিলারের মাধ্যমে নিলামে বিড দাখিল করতে পারবে।
অভিহিত (লিখিত) মূল্যে প্রতি ১০০ টাকা মূল্যের বন্ড ক্রয়ের জন্য কাঙ্ক্ষিত প্রাইস ও বন্ড ক্রয়ের পরিমাণ উল্লেখ করে নিলামে সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টার মধ্যে ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থাপিত এফএমআইর মাধ্যমে বিড দাখিল করতে হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
তবে বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমতি নিয়ে ম্যানুয়াল বিডস ইন সিলড কভারস পদ্ধতিতে বিড দাখিল করা যাবে।
এদিকে নিলামে অংশগ্রহণের বিস্তারিত নির্দেশনা এরই মধ্যে প্রাইমারি ডিলারসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ভারত থেকে ২২ টন নতুন আলু আমদানি
দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় দিনাজপুর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে নতুন আলু আমদানি শুরু হয়েছে। মেসার্স সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান নতুন আলুগুলো আমদানি করেছে।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে ভারত থেকে ১টি ট্রাকে ২২ মেট্রিক টন নতুন আলু আমদানি হয়। দেশের বাজারে নতুন আলুর চাহিদা থাকায় এসব আলু আমদানি করা হচ্ছে বলে জানান, আমদানিকারক।
আলু আমদানিকারক সাইফুল ইসলাম বলেন, দেশের বাজারে এই নতুন আলুর চাহিদা রয়েছে, তাই আমদানি করছি। পাইকারি বাজারে ৭০ টাকা কেজি হিসেবে দাম পাবো বলে আশা করছি। নতুন আলু এই প্রথম ভারত থেকে ১ ট্রাকে ২২ মেট্রিক টন আলু আমদানি করা হয়েছে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
লাগামহীন ডিম, সবজির দামেও অস্বস্তি
ভোক্তাদের কথা মাথায় রেখে গত ১৫ সেপ্টেম্বর মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু তার যেন প্রতিফলন নেই বাজারে। এলাকাভেদে ডজনপ্রতি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি সোনালি মুরগির দামও ১০ টাকা বেড়ে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা হয়েছে। এতে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা পড়েছেন চরম বিপাকে। সুখবর নেই সবজিতেও। গত সপ্তাহের চেয়ে আরও বেড়েছে দাম।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট ও হাতিরপুলসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাজারগুলো শাক-সবজিতে ভরপুর। দোকানিরা বেগুন, শসা, পটল, বরবটি, কচুর লতি, ঢ্যাঁড়শ, কাঁকরোল, পেঁপে, করলা, শিম, গাজর, মুলা, ফুলকপি ও বাঁধাকপির পসরা সাজিয়েছে বসেছেন। তবে কোনটার দামই নাগালে নেই।
বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি বেগুন ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০, ঢ্যাঁড়শ ৫০ থেকে ৬০, বরবটি ১০০ টাকা, মুলা ৫০, কচুর লতি ৬০ থেকে ৮০, ধুন্দুল ৮০ টাকা ও পটল ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি পেঁপে ৩০, কাঁকরোল ৮০, গাজর ১২০, কচুরমুখী ৮০ থেকে ৯০ টাকা, টমেটো ১৬০, শিম ২২০-২৬০ টাকা ও শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পাশাপাশি, প্রতি কেজি চিচিঙ্গা ৬০, প্রতি পিস ফুলকপি ৬০ থেকে ৭০, আলু কেজি প্রতি ৫৫ থেকে ৬০ ও প্রতি পিস লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, সম্প্রতি বন্যায় ও টানা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত। এতে বাজারে সরবরাহ কম থাকায় সবজির দাম বেড়েছে।
পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের শর্ত শিথিল ও শুল্ক কমানোর পর দেশে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। আগে যে পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো, তা এখন ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এমন দামে হতাশ ক্রেতারা। তারা বলছেন, সরকার বদলেছে, তবে বাজার সিন্ডিকেট একই আছে। আর সিন্ডিকেটের কবলেই জিম্মি ভোক্তার পকেট। এ অবস্থা থেকে যেন আর পরিত্রাণ নেই!
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সামিট সিন্ডিকেটের কবজায় দেশের ইন্টারনেট খাত!
বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেওয়ার কারণে ইন্টারনেট সেবার একক কর্তৃত্ব হারিয়েছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস পিএলসি (বিএসসিপিএলসি)। একসময় একক নিয়ন্ত্রণ থাকলেও বর্তমানে দেশের চাহিদার অর্ধেকেরও কম ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। বাকি অর্ধেকের বেশি সরবরাহ করে বেসরকারি ৭টি কোম্পানি। যদিও দেশের চাহিদার চেয়ে বেশি সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটির।
জানা গেছে, দেশে বর্তমানে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৬ হাজার জিবিপিস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথের চাহিদা রয়েছে। আর বিএসসিপিএলসি দুটি সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার ৭০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করছে। অথচ কোম্পানিটির সক্ষমতা রয়েছে প্রায় ৭ হাজার ২০০ জিবিপিএস। অন্যদিকে, আইটিসির লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৭টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করছে ৩ হাজার ৩০০ জিবিপিএস। যার শুধু সামিটই সরবরাহ করে ৮০ শতাংশ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে বিএসসিপিএলসির অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে প্রায় ৫ হাজার জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ। সরকার হারাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব।
সক্ষমতা থাকার পরও কেন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যান্ডউইথ বিক্রি কমে যাচ্ছে—এর কারণ অনুসন্ধানে গিয়ে জানা গেছে, বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং ‘কাছের লোকদের’ মালিকানাধীন কোম্পানিকে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়। ফলে সরকারি কোম্পানিটির সরবরাহের পরিমাণ অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে সামিট। আমদানি থেকে শুরু করে গ্রাহক পর্যায় পর্যন্ত ইন্টারনেট সরবরাহের সব ধরনের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে আলোচিত এই কোম্পানিকে। সরকারি কর্মকর্তারাই এই সুযোগ করে দিয়েছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ আমদানি করে ইন্টারনেট সেবা দিয়ে আসছিল বিএসসিপিএলসি। অন্যদিকে, ইন্টারন্যাশনাল টেরিসট্রিয়াল কেবল (আইটিসি) লাইসেন্স নিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ আমদানি করে। কোনো কারণে সাবমেরিন কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হলে শুধু এর বিকল্প হিসেবে সামিটসহ ৭টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আইটিসি লাইসেন্স দেওয়া হলেও বর্তমানে বেসরকারি কোম্পানিগুলোই নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের ইন্টারনেট ব্যবসা।
এমনকি লভ্যাংশ প্রদানেও বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বিটিআরসির রেভিনিউ শেয়ারিং নীতিমালায় সাবমেরিন কেবল লাইসেন্সের ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে লভ্যাংশের ৩ শতাংশ রাজস্ব দেওয়ার বিধান থাকলেও বেসরকারি আইটিসিদের জন্য সেটা মাত্র এক শতাংশ। দেশের বেশিরভাগ ব্যান্ডউইথ সরবরাহকারী সামিটকে বিশেষ সুবিধা দিতেই এটা করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দেশের ইন্টারনেট ব্যবসা মূলত সামিটের নেতৃত্বাধীন বেসরকারি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দখলে চলে যায়। এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএসসিপিএলসিকেও সামিটের ওপর নির্ভরশীল করা হয়েছে। এই নির্ভরশীলতা কমাতে গত বছর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের অনুপাত ৭০:৩০ নির্ধারণের অনুরোধ জানায় বিএসপিএলসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এ বিষয়ে এখানো কোনো অগ্রগতি হয়নি।
প্রয়োজন না থাকলেও বেসরকারি খাতে সাবমেরিনের লাইসেন্স: বিএসসিপিএলসির সক্ষমতা বাড়াতে নতুন করে হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করে তৃতীয় সাবমেরিন কেবল সিমিউই-৬ প্রকল্প চলমান রয়েছে, যা ২০২৫ সালে শেষ হবে। এর মধ্য দিয়ে বিএসসিপিএলসি প্রায় ১৩ হাজার ২০০ জিবিপিএস অতিরিক্ত ব্যান্ডউইথ সক্ষমতা অর্জন করবে। মোট ব্যান্ডউইথ ক্ষমতা দাঁড়াবে ২০ হাজার ৪২০ জিবিপিএসর বেশি, যা বর্তমান চাহিদার তিন গুণেরও বেশি।
এদিকে, সাবমেরিন কেবল পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণে বছরে ৫০-৬০ কোটি টাকা খরচ হয়। তৃতীয়টি চালু হলে খরচ হবে প্রায় শতকোটি টাকা। ব্যান্ডউইথ বিক্রি করে এই ব্যয় মেটানো হয়। ব্যান্ডউইথ বিক্রি না হলে পরিচালন ব্যয় উঠে আসাই চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
এর পরও সামিটসহ তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ব্যন্ডউইথ আমদানির জন্য সাবমেরিন কেবলের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। লাইসেন্স পাওয়া তিনটি কোম্পানি সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেড, সিডিনেট কমিউনিকেশন্স লিমিটেড ও মেটাকোর সাবকম লিমিটেড। তৃতীয় সাবমেরিন কেবল চালু হলে যেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদার প্রায় তিন গুণ সক্ষমতা বাড়বে, সেখানে বেসরকারি খাতে সাবমেরিন কেবলের লাইসেন্স দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
সাবমেরিন কেবলের লাইসেন্স পাওয়া কোম্পানির মধ্যে সামিট কমিউনিকেশন্সের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ফরিদ খান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের ছোট ভাই। মেটাকোর সাবকম কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক এবং সিডিনেটের পরিচালক হিসেবে আছেন চৌধুরী নাফিজ সারাফাত। বর্তমানে এই তিনটি কোম্পানির অনুকূলে বিএসসিপিএলসির কেপিআইভুক্ত নিজস্ব জমি এবং সাবমেরিন কেবলের পিভিসি ডাক্ট লিজ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বিএসসিপিএলসির সাবেক এবং বর্তমান কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
জানা গেছে, গত ২৪ জুলাই বিএসসিপিএলসির কক্সবাজার ল্যান্ডিং স্টেশনের জমি এবং সাবমেরিন কেবলের পিভিসি ডাক্ট লিজ নিতে আবদার করে চিঠি পাঠায় প্রাইভেট তিন সাবমেরিন কেবল কোম্পানি। কিন্তু কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই অনুমোদন করতে তড়িঘড়ি করে ৭ দিনের মধ্যে বিএসসিপিএলসির ২২৮তম পর্ষদ সভায় প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। যদিও সরকার পতনের পর সেটা আর সম্ভব হয়নি।
টেলিকম ও ইন্টারনেট খাতে সামিটের আধিপত্য
২০০৯ সালে আত্মপ্রকাশের পরে টেলিকম ও ইন্টারনেট অবকাঠামো খাতে দেশে সবচেয়ে বড় কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে সামিট কমিউনিকেশন। কোম্পানিটির হাতে রয়েছে টাওয়ারের ব্যবসা, আইআইজি, আইটিসি, এনটিটিএন আর সবশেষে সাবমেরিন কেবলের লাইসেন্স। সব ধরনের লাইসেন্স থাকায় সামিট গ্রাহককে আইটিসি থেকে ব্যান্ডউইথ কিনতে বাধ্য করছে। সামিট ব্যান্ডউইথ এবং অপটিক্যাল ফাইবারের মিশ্রণে প্যাকেজ সেবার সুযোগ নিচ্ছে। এনটিটিএন লাইসেন্স থাকায় আইটিসি থেকে আগত ব্যান্ডউইথ আইআইজি পর্যন্ত সামিট নিজেই নিয়ে যেতে পারে। বিএসসিপিএলসির এনটিটিএন লাইসেন্স না থাকার সুবিধা গ্রহণ করছে সামিট। এসবের মধ্য দিয়ে ইন্টারনেট সিস্টেমের প্রতিটি খাতের লাইসেন্স সামিটকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দিয়ে একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, গত নভেম্বরে বিএসসিপিএলসি পাওনা বকেয়া থাকার কারণে ১৯টি আইআইজি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যান্ডউইথ সীমিত করে। এ কারণে দেশের ব্যান্ডউইথের প্রায় ৫০ শতাংশ প্রভাবিত হয় এবং গ্রাহকদের প্রায় ৪ দিন সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আসলে এই পুরো বিষয়টি বিএসসিপিএলসি এবং বিটিআরসির যোগসাজশে ঘটানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আইআইজি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যান্ডউইথ সীমিত করার পেছনে যৌথভাবে কাজ করেছেন আইসিটি সচিব ও সামিট। সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান বিগত সময়ের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী আজিজ খান এবং সামিট কমিউনিকেশন্সের চেয়ারম্যান ফরিদ খানের নির্দেশনা এবং পরামর্শে সামিটের প্রতিযোগী আইআইজিদের একটি তালিকা তৈরি করে সচিব বরাবর পাঠানো হয়। এরপর বিএসসিপিএলসি বোর্ড সভায় নিজ ক্ষমতাবলে সব আইআইজির ব্যান্ডউইথ সীমিত করার আদেশ দেন আইসিটি সচিব। মূলত সামিটের রাজনৈতিক চাপে ব্যান্ডউইথ সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসসিপিএলসি। এ ছাড়া সরকারি তিনটি প্রতিষ্ঠানের এনটিটিএন লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও কার্যত অকেজো করে রাখা হয়েছে। যাতে এনটিটিএন ব্যবসা সামিট এবং আরেক আইটিসি লাইসেন্সধারী ফাইবার এট হোম নির্দ্বিধায় করতে পারে।
ব্যক্তিস্বার্থে প্রাইভেট কোম্পানিকে বিশেষ সুবিধা: বিএসসিপিএলসির এবং বিটিআরসি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিজেদের স্বার্থে বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানির কাছে স্পর্শকাতর তথ্য পাচার করে বলে অভিযোগ উঠেছে। তথ্য পাচারের বিপরীতে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে থাকে। বিএসসিপিএলসির এবং বিটিআরসি তথ্য পাচারের অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এবং বর্তমান এমডির বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সামিট সিন্ডিকেটকে সাবমেরিন লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে বিটিআরসির কর্মকর্তারাও জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। লাইসেন্স দেওয়ার পুরস্কার হিসেবে চলতি বছরের মার্চে বিটিআরসির চার কর্মকর্তা সামিট সিন্ডিকেটের অর্থে সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করেন।
জানা গেছে, গত ২৪ জুলাই বিএসসিপিএলসির কক্সবাজার ল্যান্ডিং স্টেশনের জমি এবং সাবমেরিন কেবলের পিভিসি ডাক্ট লিজ নিতে আবদার করে চিঠি পাঠায় প্রাইভেট তিন সাবমেরিন কেবল কোম্পানি। কালবেলার হাতে আসা নথি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ল্যান্ডিং স্টেশনের ৩০-৩৩ শতাংশ জমি এবং একটি চার ইঞ্চির পিভিসি ডাক্ট লিজ নিতে চায় কোম্পানি তিনটি। এজন্য সুনির্দিষ্ট করে পিভিসি ডাক্টের অব্যবহৃত দুটি ডাক্টের কথা উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু মাটির নিচে থাকা এই ডাক্টের কথা বিএসসিপিএলসি কর্তৃপক্ষ ছাড়া কেউ জানার কথা নয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, সাবমেরিনের লাইসেন্স পাওয়া সামিট সিন্ডিকেটের আরেক কোম্পানি সিডিনেট কমিউনিকেশনের সিইও মশিউর রহমান ছিলেন বিএসসিপিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। তা ছাড়া প্রাইভেট খাতে সাবমেরিন কেবলের লাইসেন্স দেওয়ার অন্যতম ক্রীড়ানকও ছিলেন তিনি। লিজ চাওয়া চিঠিতেও কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে তার নাম রয়েছে।
কোম্পানি সূত্র জানায়, প্রাইভেট কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দিতে মশিউর রহমান তার মেয়াদকালে সিমিউই-৪ প্রকল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি অনুমোদন করতে চাননি। শুধু তাই নয়, চার বছরেরও অধিক সময় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে থাকায় বিএসসিপিএলসির সব তথ্যই তিনি জানেন। যার পুরস্কার হিসেবে অবসর গ্রহণের পরপরই তাকে সাবমেরিন কেবলের লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সিডিনেটের সিইও পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক এমডি মশিউর রহমান বলেন, যখন বেসরকারি কোম্পানিকে সাবমেরিনের লাইসেন্স দেওয়া হয় তখন তিনি ছিলেন না, এর সঙ্গে তিনি জড়িত নন। তিনি বলেন, অবসর গ্রহণের পর সিডিনেটে তিনি নিয়োগ পান, তবে সেটা কোনো অনৈতিক সুবিধার কারণে নয়। বিএসসিপিএলসির জমি এবং ডাক্ট লিজে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন করে সাবমেরিন কেবল লাইন স্থাপনের জন্য অনেক টাকা খরচ হবে। সে ক্ষেত্রে আমরা সামিটের সঙ্গে মিশে বিএসসিপিএলসির জমি এবং ডাক্ট লিজ চেয়েছিলাম। যদিও এই প্রস্তাব ছিল সামিটের। সামিট তৎকালীন আইসিটি প্রতিমন্ত্রীকে দিয়ে এটা অনুমোদন করাতে চেয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।
নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করলেও সামিটের একক আধিপত্যের কথা স্বীকার করে সিডিনেটের এই সিইও বলেন, সামিট একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যাদের ইন্টারনেটের সব ধরনের লাইসেন্স রয়েছে। যে কারণে এ খাতে এখন আর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। সাবমেরিনেরও লাইসেন্স পাওয়ায় এখন তাদের আধিপত্য আরও বেড়ে গেছে। সব ধরনের লাইসেন্স থাকায় তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কেউ পারবে না। এটার দায় বিটিআরসিসিও এড়াতে পারে না।
ক্ষতির মুখে সরকারি প্রতিষ্ঠান
জানা গেছে, সিমিইউ-৪ এবং সিমিইউ-৫ এই দুই কেবলের বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকা। আর সিমিইউ-৬ চালু হলে এই ব্যয় বেড়ে হবে ৯০-১০০ কোটি টাকা, যা বিএসসিপিএলসি ব্যান্ডউইথ বিক্রির আয় থেকে পরিশোধ করে। ব্যান্ডউইথ অব্যবহৃত রয়ে গেলে পরিচালন ব্যয় উঠে আসাই চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। এ ছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত লাভজনক সরকারি প্রতিষ্ঠানটিতে শেয়ারের প্রায় ২৭ শতাংশের মালিকানায় রয়েছেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। ব্যবসা ক্রমাগত হারাতে থাকলে কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। লভ্যাংশ প্রদানের সক্ষমতা কমবে।
এমআই