অর্থনীতি
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে বছরে লোকসান ৬৬ কোটি টাকা
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি। ফলে লোকসানে আছে স্যাটেলাইটটির পরিচালনাকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল)। যদিও ‘কৌশলে’ তারা নিজেদের লাভজনক দেখাচ্ছে।
বিএসসিএলের সর্বশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন (২০২১-২২) অনুযায়ী, কোম্পানিটির মুনাফা ৮৫ কোটি টাকা। যদিও মুনাফার এই হিসাব করার ক্ষেত্রে স্যাটেলাইটের অবচয় বা ডেপ্রিসিয়েশন ধরা হয়নি। অবচয় ধরা হলে মুনাফার বদলে লোকসান দাঁড়াবে প্রায় ৬৬ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরেও প্রায় সমপরিমাণ লোকসান ছিল।
লাভ-লোকসানের হিসাবের ক্ষেত্রে সম্পদের স্থায়িত্বের বিপরীতে বছর বছর অবচয় দেখাতে হয়। ধরা যাক, একটি গাড়ির দাম ১০ লাখ টাকা। এটি ব্যবহার করা যাবে ১০ বছর। তাহলে বছরে গাড়িটির অবচয় দাঁড়াবে ১ লাখ টাকা।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মেয়াদ ১৫ বছর। এর সম্পদমূল্য দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা। ফলে বছরে অবচয় (স্ট্রেইট লাইন মেথড) দাঁড়ায় প্রায় ১৮৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি এর মালিকানা হস্তান্তর করা হয় নতুন কোম্পানি বিএসসিএলের কাছে। এই কোম্পানি গঠন করা হয় স্যাটেলাইটটির পরিচালনার জন্য। তাদের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে (২০২১-২২) স্যাটেলাইটের সম্পদের বিপরীতে অবচয় দেখানো হয়নি। স্যাটেলাইট থেকে আয় দেখানো হয়েছে। ফলে কোম্পানিটির মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৮৫ কোটি টাকা। যদিও ১৮৬ কোটি টাকা অবচয় বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, বিএসসিএল ওই অর্থবছরে লোকসান করেছে (৬৬ কোটি টাকা)।
বিএসসিএলের নিরীক্ষা করেছে এস এফ আহমেদ অ্যান্ড কোম্পানি। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্যাটেলাইট বাবদ সম্পদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য বিএসসিএল তাদের সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেনি। বিএসসিএলের যুক্তি, বিটিআরসি তাদের সম্পদ বিবরণী থেকে স্যাটেলাইটের সম্পদমূল্য হস্তান্তর করেনি। নিরীক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান আরও বলেছে, স্যাটেলাইটের সম্পদমূল্য না দেখানোয় বিএসসিএলের সম্পদ বিবরণী ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।
যদিও একই অর্থবছরে বিটিআরসির নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বাবদ কোনো সম্পদ দেখানো হয়নি। আগের অর্থবছরগুলোতে দেখানো হয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিটিআরসি স্যাটেলাইটের সম্পদের বিপরীতে অবচয় ঠিকই দেখিয়েছে।
বিএসসিএলের নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি নিয়ে তিনজন সনদধারী হিসাববিদের মতামত নিয়েছে এই প্রতিবেদক। তিনজনই বলেছেন, অবচয় না দেখানোয় বিএসসিএল লাভজনক কোম্পানি মনে হচ্ছে। অবচয় ধরা হলে প্রতিষ্ঠানটি সংশ্লিষ্ট অর্থবছরে লোকসানি হিসেবে গণ্য হবে।
হিসাববিদদের সংগঠন দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, নিরীক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানই তাদের প্রতিবেদনে বিষয়টি নিয়ে ডিসক্লোসার (ঘোষণা) দিয়েছে। যে সম্পদ থেকে কোম্পানির আয় হয়, তার অবচয় না দেখালে প্রকৃত আর্থিক চিত্র উঠে আসে না।
উল্লেখ্য, শুধু ২০২১-২২ অর্থবছর নয়, এখন পর্যন্ত নিরীক্ষার আওতায় আসা কোনো অর্থবছরেই বিএসসিএল লাভ করতে পারেনি। আগামী বছরগুলোতেও পারবে কি না, সে সন্দেহ রয়েছে। কারণ তাদের আয় খরচের তুলনায় অনেক কম।
স্যাটেলাইটের ছয় বছর
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট তৈরি করেছে ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ২০১৮ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎপেক্ষণ করা হয়। সেদিন কেনেডি স্পেস সেন্টারে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, জুনাইদ আহ্মেদসহ সরকারের একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিল।
স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণের পরপরই সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মহাকাশে আজ উড়ল বাংলাদেশের পতাকা। আজ থেকে আমরাও স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য হলাম।’
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইটের ক্লাবে যুক্ত হয় বাংলাদেশের নাম। তখন সরকারের পক্ষ থেকে স্যাটেলাইটটির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়সহ নানা সুফলের কথা বলা হয়েছিল। অপরদিকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কেউ কেউ।
বিএসসিএলের লাভ-লোকসানের হিসাব নিয়ে শুরু থেকেই লুকোচুরি করা হতো। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আয়-ব্যায়ের হিসাব খোঁজ করা হলে বিএসসিএল ২০২১-২২ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেয়। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, সমাপ্ত হওয়া ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন এখনো তৈরি হয়নি।
বিএসসিএল ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। এই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। ৩ সেপ্টেম্বর নাহিদ ইসলামের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে নিজেদের কার্যক্রম তুলে ধরে বিএসসিএল। সেখানেও রাজস্ব আয়ের হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু লাভ-লোকসানের তথ্য দেওয়া হয়নি।
সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অবচয় বিটিআরসি তার হিসাবে দেখাচ্ছে। অন্যদিকে সেই অবচয় না দেখানোর কারণে বিএসসিএল লাভজনক কোম্পানি হিসেবে গণ্য হচ্ছে। যদিও স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে প্রকল্পের অর্থ ও দৈনন্দিন খরচ মিলিয়ে যে ব্যয় তা উঠছে না।
স্যাটেলাইটের আয় কত
বিএসসিএলের ২০২১-২২ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায়, কোম্পানিটির মোট আয় হয়েছে ১৩০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে যা ছিল ১২৯ কোটি টাকার মতো। আয়ের প্রায় পুরোটা আসে দেশে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও বিদেশি কিছু চ্যানেলের কাছে ব্যান্ডউইথড বিক্রি করে।
বিএসসিএলের সম্পদ বিবরণীতে স্থায়ী ও চলতি সম্পদের তালিকায় স্যাটেলাইট নেই। অবচয় দেখানো হয়েছে দুই কোটি টাকার মতো, যা প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য সম্পদের, স্যাটেলাইটের নয়। যদিও একই অর্থবছর বিটিআরসি স্যাটেলাইটের সম্পদমূল্য বাবদ ১৮৬ কোটি টাকা অবচয় দেখিয়েছে। ওই বছর বিটিআরসির রাজস্ব আয় ছিল প্রায় ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ফলে স্যাটেলাইট বাবদ ধরা অবচয় বিটিআরসির আয়-ব্যয়ে তেমন প্রভাব ফেলেনি।
সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অবচয় বিটিআরসি তার হিসাবে দেখাচ্ছে। অন্যদিকে সেই অবচয় না দেখানোর কারণে বিএসসিএল লাভজনক কোম্পানি হিসেবে গণ্য হচ্ছে। যদিও স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে প্রকল্পের অর্থ ও দৈনন্দিন খরচ মিলিয়ে যে ব্যয় তা উঠছে না।
লোকসান নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল বিএসসিএলের সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহজাহান মাহমুদের কাছে, যিনি ৫ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিদায় নেন। তিনি বলেন, এটা লোকসানের প্রকল্প না। যেভাবে এখন আয় হচ্ছে, তাতে আরেকটি স্যাটেলাইট করার জন্য সরকারের কাছে হাত পাততে হবে না।
যদিও বিএসসিএলের হিসাব বলছে, বছরে তাদের যে আয় হয়, তা অবচয়ের টাকার পরিমাণের চেয়ে কম, অন্যান্য খরচ দূরে থাক। অবচয় না ধরে তারা মুনাফা দেখিয়ে সেই টাকা রিটেইন্ড আর্নিংস বা অবিতরণকৃত আয় হিসেবে দেখায়।
বিএসসিএলের মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) শাহ আহমেদুল কবির বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বিটিআরসির অধীনে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত অবচয়ের হিসাব বিটিআরসি ধরত। পরের অর্থবছর থেকে এটি স্যাটেলাইট কোম্পানির হিসাবে চলে এসেছে। তিনি দাবি করেন, বিএসসিএল লোকসান করে। তবে পরিমাণ কমে আসছে।
দেশে বিক্রি বেশি, বিদেশে কম
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প নিয়ে বিটিআরসির প্রকল্প প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্যাটেলাইটির ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি বাংলাদেশের জন্য এবং ২০টি দেশের বাইরের জন্য ব্যবহার করা যাবে। ট্রান্সপন্ডার বিদেশে ইজারা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে। অবশ্য ছয় বছর পর এসে দেখা যাচ্ছে, দেশের জন্য রাখা ২০টি ট্রান্সপন্ডার প্রায় পুরোটা ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশের বাইরের জন্য রাখা ট্রান্সপন্ডারের ব্যবহার কম। সব মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সরবরাহযোগ্য ব্যান্ডউইথের ৬০ শতাংশ বিক্রি হচ্ছে।
বিএসসিএল বলছে, ৪০টির মতো টেলিভিশন চ্যানেল স্যাটেলাইটটির সেবা নেয়। বাংলাদেশে সম্প্রচারের ক্ষেত্রে ভারতীয় চারটি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করে। সেগুলো হলো স্টার, সনি, জি নেটওয়ার্ক ও কালারস টিভি।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আওতার মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, আফগানিস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের বছরে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে ট্রান্সপন্ডার বিক্রির জন্য চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু দেশ দুটির বাজার ধরা যায়নি।
৩ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সেবা বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়। তা হলো স্যাটেলাইটটির কে ইউ ব্যান্ডের ট্রান্সপন্ডারগুলো চারটি ভিন্ন ভিন্ন ‘ব্লকে’ বিভক্ত। প্রতিটি ব্লকে ছয়টি করে ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। কোনো দেশে কে ইউ ব্যান্ডের একটি ট্রান্সপন্ডার বিক্রি করতে গেলে ওই ব্লকের বাকি পাঁচটি ট্রান্সপন্ডার অন্য কোনো দেশে ব্যবহার বা বিক্রি করা যায় না—ওই দেশেই বিক্রি করতে হয়। এর কারণ নকশা। চাহিদা না থাকলে অথবা উপযুক্ত দাম না পাওয়া গেলে ব্লকের বাকি ট্রান্সপন্ডারগুলো অবিক্রীত থেকে যায়।
বিএসসিএল বলছে, স্যাটেলাইটি উৎক্ষেপণের আগেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্রিকোয়েন্সি সমন্বয় করা দরকার ছিল। সেটা করা হয়নি। ফলে সেসব দেশে ‘ল্যান্ডিং রাইটস’ (অনুমতি) পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের উদ্যোগ
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতনের আগে আওয়ামী সরকার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের উদ্যোগ নিয়েছিল। গত ২০ জুন সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেছিলেন, চার বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ করা হবে। এর আগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের জন্য রুশ ফেডারেশনের গ্লাভকসমসের সঙ্গে সহযোগিতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ।
সার্বিক বিষয়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু স্যাটেলাইটটি ব্যবহারের জন্য সঠিক ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করা হয়নি। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর যে প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দেশীয় বিশেষজ্ঞ গড়ে ওঠার কথা, সেটা হয়েছে কি না, সে প্রশ্ন সামনে আসা উচিত।
অধ্যাপক খলিলুর রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানকে (স্পারসো) বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কোনো পর্যায়েই যুক্ত করা হয়নি। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলে স্যাটেলাইটের সঙ্গে তাদের যুক্ত করা প্রয়োজন ছিল। এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের লোকসান কমিয়ে ব্যবসা বাড়ানোর পরিকল্পনা করতে হবে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৭ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব
ঋণের নামে ইসলামী ব্যাংকের ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৭ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দুদকের উপপরিচালক ইয়াছির আরাফাতের সই করা এক চিঠিতে এ তলব করেন।
চট্টগ্রামের মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. গোলাম সরওয়ার চৌধুরী ও অন্য ব্যবসায়ী গ্রুপ জাল-জালিয়াতি করে ওই পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে দুদকে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়। দুদক সূত্রে এই খবর জানা গেছে।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ইয়াছির আরাফাতের নেতৃত্বে তিন সদস্যের টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে। ১৭ কর্মকর্তার বিষয়ে ও অভিযোগ সম্পর্কে তথ্য চেয়ে উপপরিচালক ইয়াছির আরাফাত স্বাক্ষরিত চিঠি এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে ওইসব কর্মকর্তার জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি পাঠাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংক চট্টগ্রামের চাকতাই শাখার গ্রাহক মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজ, জুবিলী রোড শাখার গ্রাহক ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স, খাতুনগঞ্জ শাখার গ্রাহক সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টসের ঋণ পরিদর্শন বা মনিটরিং নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভূমিকার যৌক্তিকতা সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, গত ১১ নভেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওইসব কর্মকর্তাদেরকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিলো। তারা ওইদিন হাজির না হওয়ায় তাদেরেক দুদকে হাজির হয়ে ঋণ-সংক্রান্ত পরিদর্শন রেকর্ডপত্র ও লিখিত বক্তব্য জমা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ওই ১৭ কর্মকর্তা হলেন- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের উপপরিচালক মে. জুবাইর যেসেন, উপপরিচালক খোরশেদুল আলম, রুবেল চৌধুরী, দেবাশীষ বিশ্বাস, মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বাবলু, যুগ্ম পরিচালক সুনির্বাণ বড়ুয়া, অনিক তালুকদার, কোল হোসেন, সৈয়দ মু আরিফ-উন-নবী, অতিরিক্ত পরিচালক ছলিমা বেগম, শংকর কান্তি ঘোষ, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও মো. সোয়াইব চৌধুরী।
বাংলাদেশ ব্যাংক ঢাকা অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আব্দুর রউফ, উপপরিচালক লেনিন আজাদ পলাশ, পরিদর্শন দলের নেতা ও অতিরিক্ত পরিচালক মো. মঞ্জুর হোসেন খান।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
খেজুরের আমদানিতে কমলো শুল্ক, থাকছে না অগ্রিম কর
রমজানে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে খেজুর আমদানিতে আমদানি শুল্ক ও সমুদয় অগ্রিম কর কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সই করা প্রজ্ঞাপন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। নতুন ওই সুবিধা ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পবিত্র রমজান মাসে খেজুরকে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য খেজুর আমদানির ওপর বিদ্যমান কাস্টমস ডিউটি ২৫ শতাংশ হতে হ্রাস করে ১৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৩ শতাংশ এবং বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে অর্থাৎ মোট করভার ৬৩ দশমিক ৬০ শতাংশ হতে হ্রাস করে ৩৮ দশমিক ৭০ শতাংশ করা হয়েছে।
এর আগে ১৭ নভেম্বর খেজুর আমদানি শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর (এআইটি) কমানোর প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। খেজুর আমদানিতে আগাম আয়কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ, আগাম কর ৫ শতাংশ পুরোপুরি বাতিল এবং আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার সুপারিশ করে ট্যারিফ কমিশন।
এনবিআর মনে করে, খেজুর আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক-কর হ্রাস করার ফলে মানভেদে প্রতি কেজি খেজুরের আমদানি ব্যয় প্রায় ৬০ টাকা হতে ১০০ টাকা হ্রাস পেতে পারে। আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর হ্রাসের ফলে খেজুরের আমদানি বৃদ্ধি পাবে, বাজারে খেজুরের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে এবং খেজুরের বিক্রয় মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম
দেশের বাজারে আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। ভরিতে এবার সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯৯৪ টাকা বাড়িয়ে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দাম বাড়ানোর ফলে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম হবে এক লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা। যা আজকেও ছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বাজুস জানায়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার দাম বেড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামীকাল (২২ নভেম্বর) থেকে সোনার নতুন দাম কার্যকর হবে।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
জুস-ড্রিংকস রপ্তানিতে মিলবে নগদ প্রণোদনা
কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তার জন্য নতুন নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে দেশে উৎপাদিত ফলজাত পাল্প থেকে প্রস্তুত করা জুস ফ্রুটবার, ড্রিংকস জাতীয় পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা পাবেন রপ্তানিকারকরা। বর্তমানে এ খাতের রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেয় সরকার।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, কৃষিপণ্য (শাক-সবজি ও ফলমূল) এবং প্রক্রিয়াজাত (অ্যাগ্রো প্রসেসিং) কৃষিপণ্য রপ্তানিতে রপ্তানি প্রণোদনা নগদ সহায়তা প্রদান প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে জারি করা এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলারে ফল ও সবজি থেকে উৎপাদিত সব ধরনের পেস্ট, ফ্রুটবার, টিনজাত সামগ্রী, ডিহাইড্রেটেড সামগ্রী, জুস, ড্রিংকস রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে। এর সঙ্গে সরকারি সিদ্ধান্ত স্পষ্ট করা বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত সহযোগী বা ভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফলজাত পাল্প থেকে প্রস্তুত করা জুস এবং ড্রিংক্স ইত্যাদি রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা পাবে।
কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানির বিপরীতে প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত আগের জারি করা অন্যান্য নির্দেশনা অপরিবর্তিত থাকবে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ডলার
এক সপ্তাহের ব্যবধানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার বেড়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন তথ্য প্রকাশ করেছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, এক সপ্তাহের ব্যবধানে রিজার্ভ ছয় কোটি ১০ লাখ বেড়ে এক হাজার ৮৪৯ কোটি কোটি ৪০ লাখ ডলারে দাঁড়াল। বর্তমানে বিভিন্ন তহবিলসহ গঠিত মোট রিজার্ভ দুই হাজার ৪২৭ কোটি ডলার।
আগের সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দুই মাসের বিল পরিশোধের পর নভেম্বরের মাঝামাঝি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।
আকু হলো আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তির ব্যবস্থা। এর সদস্যদেশ হলো বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি এ তালিকা থেকে বাদ পড়েছে শ্রীলঙ্কা।
আকুর বিল পরিশোধ ছাড়াও রিজার্ভ থেকে দৈনন্দিন ভিত্তিতে বিদেশি ঋণ ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয় বাংলাদেশকে। সরকারের জরুরি আমদানি ব্যয় পরিশোধে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিও করতে হয়।
অন্যদিকে বৈদেশিক ঋণ, অনুদান, প্রবাসী আয়ের নির্দিষ্ট অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ হিসেবে জমা হয়।
কাফি