মত দ্বিমত
পুঁজিবাজার ব্যবস্থাপকরা অনুকূল পরিস্থিতির সুযোগ নিতে ব্যর্থ
পুঁজিবাজারে সূচকের পতন ধারা অব্যাহত। অব্যহাত আছে পুঁজিক্ষরণও। পুঁজিক্ষরণ নয়। কম বেশী ১৩ লাখ বিনিয়োগকারীর রক্তক্ষরণ। গত ১৬ বছর এটাই চলে আসছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও পরিবর্তন নেই। উত্তরাধিকারিত্ব বহাল রয়েছে!
দেশের পুঁজিবাজারে ব্যবস্থাপনা নেই। অব্যবস্থাপনা আছে। শীর্ষ বাজার ব্যবস্থাপক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ব্যাংকার। পুঁজিবাজার বুঝেন না। বুঝার ইচ্ছা আছে- তাও মনে হয় না। অতি বিতর্কিত কমিশনার তারিকুজ্জামানের চোখ দিয়ে তিনি পুঁজিবাজারকে দেখছেন। খুব সম্ভবত তিনি আর থাকছেন না। অতি চালাকের গলায় দড়ি। তার গলায় সেই দড়িই পড়েছে।
সম্প্রতি, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চার নির্বাচিত পরিচালক বিএসইসিতে গিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য, পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও ডিএসই বোর্ডের অচলাবস্থা নিয়ে কথা বলা। আধঘন্টা স্থায়ী সে বৈঠকে চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ একাই কথা বলেন ২৩ মিনিট। কেউ কিছু বলতে গেলেই থামিয়ে দিয়েছেন। নিজেই ফের বলতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন “আমাকে শেখাতে আসবেন না”।
তারপরও তাকে জানানো হয়, চলমান বোর্ড থাকা অবস্থায় আর একটি বোর্ড চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা আইন সিদ্ধ নয়। বর্তমান বোর্ডকে দিয়েই নতুন বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা জরুরী। জবাবে রাশেদ মাকসুদ বলেন, ‘এটা বিপ্লবী সরকার। বিপ্লবী সরকারের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। সেটাই আইন’।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নতুন চেয়ারম্যান নিজেই বিপ্লবী সরকারের চেতনা ধারণে ব্যার্থ। তার দেয়া সব সিদ্ধান্তই ভুল প্রনানিত হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত অন্তর্ঘাত বান্ধব। নতুন সরকার গঠিত হবার পর পুঁজিবাজারের সূচকের বিমান আকাশে উড়ার জন্য রানওয়েতে দৌড়াচ্ছিল। এসময় একটি তদন্ত কামিটি গঠনের মাধ্যমে সে বিমানের চাকা আটকে দেয়া হয়। টেনে আনা হয় হ্যাংগারে। এ অবস্থায় সব সূচক নিম্নগামী হতে শুরু করে। এবং সে ধারা অব্যাহত থাকে।
ডিএসইর পরিসংখ্যন হলো; গত সপ্তাহে ডিএসই’র ৪টি মূল্য সূচকের মধ্যে তিনটিরই অধোগতি হয়েছে। লেনদেন ও টাকার অংকে ২১টির মধ্যে ১৪টি খাতই লাল সংকেত দেখিয়েছে। খাত ভিত্তিক রিটার্ন ডিস্ট্রবিউশনে ১৬টি খাতে লাল বাতি জ্বালনো হয়েছে।
একই সময় দুদুকও পুঁজিবাজারে তদন্ত শুরুর ঘোষণা দেয়। বাজারের ভিতর ও বাইরে থেকে আসা সিদ্ধান্ত দুটি বাজার সংশ্লিষ্টদের সতর্ক অবস্থানে ঠেলে দেয়। দুদুকের ঘোষণায় বিভ্রান্তি বাড়ে। কারণ’ এর আগে দুদুক, বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল ও শিবলীর বিষয়েও তদন্ত শুরু করেছিল। পরবর্তীতে দুদুক খায়রুলকে ‘সফেদ সনদ’ দেয়। শিবলীকে দেয়ার সময় পায়নি। তার ফাইল চাপা দেয়া ছিল।
এখনও কী একই উদ্দেশ্য নিয়ে দুদক নেমেছে কী না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আসলে, দুদুক ও বিএসইসি কোন প্রতিষ্ঠানই – বাজার সংশ্লিষ্টজন ও জনগণের আস্থার যায়গাতে নেই। উভয় প্রতিষ্ঠানের উচিত ছিল প্রথমে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে আস্থাশীল করার দিকে গুরুত্ব দেয়া।
বিএসইসি’র নয়া চেয়ারম্যানের অগ্রাধিকার হতে পারতো; প্রথমে নিজ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সত্তার যায়গাটি পরিষ্কার করা। অর্থাৎ বিএসইসি, ‘কমিশন নাকী সরকারী প্রতিষ্ঠান’? এটা পরিষ্কার করা। বর্তমানে এটি ‘খচ্চর’ প্রজাতির সংস্থা। পরবর্তী করণীয় ছিল; নিজ সংস্থায় রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০০ ‘লীগ জনবল’ নিয়োগ দেয়া কর্মকর্তা কর্মচারীদের পারফরমেন্স যাচাই বাছাই করা। এবং সে অনুযায়ী করণীয় ও ব্যবস্থা নেয়া। এবং নিজ ঘরে সংস্কার ও শুদ্ধিকরণ সম্পন্ন করার কাজটি প্রথমেই সম্পন্ন করা।
পরিচ্ছন্ন ভাবমর্যদা নিয়ে বাজারের অংশীদার প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সবার সাথে বসা। তাদের মতামত ও পরার্মশ গ্রহন। প্রয়োজনে কারো কারো সাথে একান্ত বৈঠক করা। পরবর্তীতে ব্যাক্তি বড়, মাঝারি ও ছোট বিনিয়োগকারীদের সাথে বসা ও তাদের সমস্যা ও পরামর্শ গ্রহন করা। ইত্যকার বিষয়গুলো সম্পন্ন করার কাজটিই জরুরী ছিল।
উল্লিখিত ধাপ অতিক্রম করার পর বিএসইসি’র গবেষণা ও অনুসন্ধান বিভাগের সহয়তায় প্রয়োজনীয় বাজার সংস্কার সর্ম্পকিত কার্যক্রম শুরু করলে ভালো ফল পাওয়া যেত। উল্লিখিত কর্মকাণ্ড চলাকালীন সময়ে বাজারকে বাজারের গতি চলতে দেয়াই উত্তম ছিল। এরই মধ্যে, পুঁজিবাজারের মূল্য সূচক, লেনদেন পরিধি গহনযোগ্য অবস্থানে চলে আসার সুযোগ সৃষ্টি হতো। রোগী অপারেশন টেবিলে শোয়া’র সামর্থ অর্জন করতো। অর্থাৎ অপারেশন চলাকালীন সময় ও অপারেশন পরবর্তী ধকল সইবার সক্ষমতা অর্জন করতো।
বিএসইসি বাজারকে তৈরী করার আগেই রোগীকে অপারেশনের টেবিলে শুইয়ে দেয়ার ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্ত – বাজারকে পশ্চাৎ ধাক্কা দিয়েছে। ভিন্ন পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণে ধরা পড়ে – কমিশনের তদন্ত বিষয় বস্তুর সব দায়ই তদন্তকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ঘাড়ে পড়বে। যদি সঠিক তদন্ত হয়। কমিশনের চোখেই পড়েনি; পুঁজিবাজারের নানা সূচক ঊর্ধমুখী করা ও জমজমাট লেনদেন পরিস্থিতির সুযোগ, পরিবেশ, পরিস্থিতি ইতোমধ্যেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার সম্পন্ন করেছে। গভীর খাঁদে পড়া – অর্থনীতিতেও সবুজ চিত্র দৃশ্যমান করছে।
অর্থউপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ অর্থখাতের অগ্রগতি সামনে নিয়ে এসেছেন। আশা জাগানীয় অগ্রগতি তুলে ধরেছেন। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদও রাষ্ট্র পরিকল্পনায় বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রস্তুতি সপন্ন করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর আহসান এইচ মনসুর ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিা করার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন। ইতোমধ্যেই ৯৫ শতাংশ আমানতকরীর, আমানত নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, সব ব্যাংক প্রতিষ্ঠান চালু রাখার পক্ষে তাঁর অবস্থান। ১০টি ব্যাংক খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। সেগুলোর ক্ষেত্রে নীতি সহায়তার মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতির চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সে চেষ্টা ব্যর্থ হলে; একীভূত করার দিকে এগুবেন। পাঁচারকৃত অর্থ ফেরৎ আনার ক্ষেত্রেও তিনি আশাবাদী অবস্থানেই আছেন। যেসব ব্যাংকের বোর্ডের পরিবর্তন আনা হয়েছে; সেসব ব্যাংকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়েনি।
উল্লিখিত সব তথ্য চিত্রই পুঁজিবাজারের ইতিবাচক প্রবাহের অনুকূলে ছিল। পুঁজিবাজার ব্যবস্থাপকরা সে অনুকূল সুবিধার সুযোগ নিতে পারেনি।
তথ্য উপাত্ত জানান দেয়; পুঁজিবাজার অনুকূল সময়ে ঘুড়ে দাঁড়ানোর অপেক্ষায় আছে। দেশ বিরোধী চক্র অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরাকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনসহ, গামের্ন্টস, ঔষধ ও পাট খাতে অস্থিরতা বর্ধক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
তথ্য মতে, বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাসহ পতিত স্বৈরাচারের দোসররা এ অস্থিরতা বিস্তারে সহায়তা করছে। অন্ততঃ তিনটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারীতে বাংলাদেশ আছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে; দেশী গোয়েন্দা ও কাউন্টার গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকাণ্ড আরও নিবীড় ও বিস্তৃত করার দাবি রাখে।
লেখক:ফজলুল বারী, সিনিয়র সাংবাদিক।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
পুঁজিবাজার পুঁজির সমুদ্র, নীতি সহায়তাই যথেষ্ট
গত সপ্তাহেও পুঁজিবাজার ঋণাত্মক অবস্থানেই ছিল। সপ্তাহের শেষ লেনদেন দিবসে ডিএসইএক্স সূচক ৯৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫৯০৩ দশমিক ৮৪ পয়েন্টের ঘরে এসে থামে। ২০২১ সালের অক্টোবরে ডিএসইএক্স সূচক ৭৩৬৮ পয়েন্ট উচ্চতায় ছিল। সূচক অবস্থান বিবেচনায় দেশের পূঁজিবাজার তিন বছর পিছনে। কারসাজি বাদ দিলে প্রকৃত সূচক অবস্থান আরও অনেক নিচে। নানা ধরণের হস্তক্ষেপ ও কারসাজির কারণে কোন সূচকই মৌল অবস্থানে নেই। দেড় যুগ পার হয়েছে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। ঐ সময়ের মধ্যেই পূঁজিবাজার মহা শ্মশানে পরিণত হয়েছে। এ শ্মশানে কম বেশী ১৮ লাখ বিনিয়োগকারীর পুঁজি পুড়েছে। নিঃস্ব হয়ে বাজার ছাড়তে বাধ্য হয়েছে লাখো বিনিয়োগকারী। স্টক ব্রোকারসহ বেশ কিছু বিনিয়োগকারী হার্টফেল করে মরেছে। জীবিতরা কংকাল।
বিনিয়োগকারী কংকাল। পুঁজিবাজার ভল্লুকীয় জ্বরে কাতর। কিন্তু, বাজার ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িতরা বেজায় বিত্তবান। আঙ্গুল ফুলে বটগাছ। তাদের আর্শীবাদ প্রাপ্তরাও অনেক বিত্তশালী। অর্থদানব। অর্থ পাঁচারকারী। অর্থবাজার লুটেরাও। বিগত আওয়ামী সরকারের পোড়ামাটি নীতি বাস্তাবায়নের অংশীদার। রাষ্ট্রযন্ত্রের সুবিধা প্রাপ্ত – ওদের কয়েকজন সম্প্রতি আটক হয়েছে। বসুন্ধরা ও বেক্সিকোসহ পাঁচ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। বাকীরা দেশে- বিদেশে পলাতক।
অন্তর্বর্তীকালীণ সরকারের উপদেষ্টাগণ পাঁচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাতেই দেশের সার্বিক অর্থনীতির অন্ধকার সুরঙ্গের শেষ প্রান্তে আলোর রেখা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠাসহ মেক্রো ইকনমিতে সুখবর আনারও চেষ্টা চলছে। রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে। রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি ও স্থিতাভাব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে। এসব চেষ্টার ইতিবাচক প্রভাব দেশের পুঁজিবাজারে পড়ার কথা। কিন্তু পড়েনি। কারণ, অর্থ ও পূঁজি – উভয় বাজার শতভাগ আওয়ামী জার্সিতে ঢাকা। ব্যবস্থাপনা-দুর্নীতি ও কারসাজি বান্ধব।
বর্তমানদের সরিয়ে দল নিরপেক্ষ সৎ,যোগ্য, দক্ষ ও মেধাসম্পন্ন পেশাজীবিদের হাতেই বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পন জরুরী।এটা করা গেলে বাজার চিত্রের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে অনেকটা স্বয়ংক্রিয় ভাবেই।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ আ্যন্ড এক্সচেঞ্জর (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম ও দুজন কমিশনার পদত্যাগ করেছেন। বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান পদে খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি পেশায় ব্যাংকার। ব্যাংক ও পূঁজিবাজার একই সরল রেখায় চলে না। চরিত্র ও বৈশিষ্টের দিক থেকে বিপরীতমুখী। সাংঘর্ষিকও।
তবে প্রবল ইচ্ছা শক্তির জোরে ভালো কিছু হতেও পারে। ক্রান্তিকালে আশাবাদী অবস্থানে থাকাই উত্তম। ইতোমধ্যেই খন্দকার সাহেব দুই স্টকএক্সচেঞ্জ, ডিবিএ, বিবিএ বিএমবিএসহ বাজার অংশীদারদের সাথে বৈঠক করেছেন। তিনি তাদের বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ওদের সাথে সবাই বসে। ওরা দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনা করে। তাদের সাথে বৈঠকের পর – বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষিত হয়েছে – এমন প্রমান হাতের কাছে নেই।
পুঁজিবাজারে শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার স্বার্থসহ ভালো কিছু করার ইচ্ছা থাকলে বিএসইসি চেয়ারম্যানের উচিৎ ব্যাক্তি বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সাথেও বসা। একসাথে নয়, ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বসতে হবে।
গত সপ্তাহে দেশের প্রধান পূঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড, হাফিজ এমডি হাসান বাবু পদত্যাগ করেছেন। বাকী সতন্ত্র পরিচালকদের পদত্যাগের মৌখিক নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখানেও বিএসইসির জন্য যে গাইড লাইন দেয়া হয়েছে তা অনুসরণ করাই শ্রেয়। পাঁচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনাসহ দেশের সর্বত্র সিন্দুক বন্দী বিপুল অর্থ, অর্থনীতির মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ আছে।সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কঠিন। তবে, অসম্ভব নয়। প্রচলিত অপ্রচলিত ও নানা কৌশল উদ্ভাবন ও তার যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে কঠিন চ্যালেঞ্জও সহজ করা সম্ভব।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে সর্তকবার্তা হলো; দেশের তথাকথিত সুশীল অর্থনীতিবিদ ও চিন্তকদের সমলোচনা আমলে না নেয়া। ওরা সময়ের পরামর্শ, সময়মতো দেয় না। তেলবাজী করে। অর্থনীতির পোস্টমর্টেম রির্পোট প্রকাশ করে। একই কাজ তারা এখনো করছে। আওয়ামী শাসন আমলে যথা সময়ে যদি তারা অর্থনীতির ঝুঁকি ও ঝুঁকি মোকাবিলার কৌশল সমূহ তুলে ধরতো- দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতো। তাহলে হয়তো দেশের অর্থনীতি অন্ধকার কূঁপে পতিত হতো না। দানবীয় লুটেরারাও অর্থখাতে দানবীয় তান্ডব চালাতে পারতো না।
তাত্ত্বিক দিক থেকে, পূঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় দূর্নীতি নির্মূল সম্ভব না। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতেও দূর্নীতি আছে। উভয় ব্যবস্থায় দূর্নীতি কঠিন ও কস্টলি করার চর্চা আছে। কোন ব্যবস্থাতেই দুর্নীতি নির্মূল সম্ভব না। দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহন কঠিন করার বিষয়টি এখন সময়ের দাবি। দেশ পরিচালনায় দেশেরই বৃহত্তর স্বার্থে, কিছু কিছু সময় কিছু কিছু বিষয়ে, কিছু সময়ের জন্য; শাসকদের চোখ বুঝে থাকার নীতি গ্রহনের উদাহরন আছে। প্রয়োজন ফুরালে অথবা পরিস্থিতি বারাবারি পর্যায়ে গেলে শাসকের চোখ তাৎক্ষণিক ভাবে খুলবেই।
দেশে লুটপাট ও দুর্নীতি বান্ধব শাসন ব্যবস্থা বহাল থাকায় ব্যপক অর্থ পাচার হয়েছে। অর্থ ও পুঁজিবাজার লুট হয়েছে। এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতি ও অর্থবাজারে তারল্য সংকট প্রকট হয়েছে। পাচারকৃত ও সিন্দুক বন্দী অর্থ, মূল ধারায় টেনে আনার জন্য অর্থ ও পূঁজি, উভয় বাজারে – অর্থ ও পুঁজির অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থ ও পূঁজির অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা গেলে দেশের নামী দামী বেশ কিছু কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবার আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে।
সময় দেশের ক্রান্তিকালের প্রয়োজন মিটাতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রস্তাবিত ব্যবস্থা গ্রহন করা যেতেই পারে। তবে, প্রয়োগের সময় ও কৌশল গোপন রাখাই শ্রেয়। রাষ্ট্রযন্ত্রে মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে বার্তা ও ইঙ্গিত পৌছাতে পারলেই হলো। আমার স্থির বিশ্বাস- কাজ হয়ে যাবে।
পুঁজিবাজার হলো বিনিয়োগ পুঁজির সমুদ্র। এখানে আর্থিক সাহায্য নয়। বিনিয়োগ পুঁজির নিরাপত্তা ও নীতি সহায়তাই তারল্য প্লাবন সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট। বাজার ব্যবস্থাপকদের দায়ীত্ব সুশান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিনিয়োগ আস্থা ফিরিয়ে আনার তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহন।
লেখক:ফজলুল বারী, সিনিয়র সাংবাদিক।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
পুঁজিবাজারে তেজী ষাঁড়, ভালো কিছুর প্রত্যাশা
খুঁটি উপড়ে পুঁজিবাজারের তেজী ষাঁড় গত সপ্তাহে এক দৌড়ে ৫৯০.৮৭ পয়েন্ট উচ্চতার মাইল ফলক স্পর্শ করেছে। তাতে ডিএসইএক্স সূচকের গ্রাফ খাঁড়া উপরে উঠেছে। ডিএসই৩০ ও শরিয়াহ সূচকও যথাক্রমে ২৩১.৮৮ ও ১০৯.৫৩ পয়েন্ট বেড়েছে।
এভাবেই ঊর্ধ্বলাফে সূচক আগস্ট বিপ্লবকে স্যালুট জানিয়েছে। স্বাগত জানিয়েছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বতীকালীন সরকারকেও। বিশ্বের সর্বত্র পুঁজিবাজারে এ রীতিই অনুসৃত হয়।
গত সপ্তাহে বিএসইসি’র ‘আয়না ঘর’ ছিল বহিরাগত মুক্ত। লেনদেন কর্মকাণ্ডও হস্তক্ষেপ মুক্ত ছিল। তাই পুঁজিবাজার স্বাভাবিক ও স্বাচ্ছন্দের সাথে এগিয়েছে। গতিও একই কারণে। তিনদিনের লেনদেনে ডিএসইএক্স সূচক ৫৯২৪.৮১ পয়েন্ট উচ্চতায় উঠেছে। এ গতি ও সূচক অবস্থান স্বাভাবিক। অতিশয় নয়। সপ্তাহ শেষে ডিএসই’র মার্কেট পিই’র অবস্থান ছিল ১১.৪২। দারুণ ক্রয় আকর্ষক পিই অবস্থান।
গত সপ্তাহের ডিএসই’র লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সূচক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে- ব্যাংক খাত ও বহুজাতিক কোম্পানিসহ শক্ত মৌলভিত্তি নির্ভর শেয়ার সমূহ। উল্লেখিত খাত ও বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের পিই অনুপাতও কম। এসব শেয়ার পিই নির্ভর যৌক্তিক মূল্যে পৌঁছলে ডিএসইএক্স সূচকের অবস্থান ১০ হাজার পয়েন্টর ঘরও অতিক্রম করতে পারে।
পুঁজিবাজার ব্যবস্থপনা বাজার বান্ধব ও বাজারের গভীরতা বৃদ্ধি পেলে ‘হেজিং’ ইন্সট্রুমেন্ট বসতে পারে। হেজিং ব্যবস্থায় পিই অনুপাত যে কোনে উচ্চতায় যেতেই পারে। বর্তমান ব্যবস্থায় গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারের ষাঁড় যে দৌড় দিয়েছে- তাতে মূখ্য ভূমিকা ছিল মৌল ভিত্তি সম্পন্ন শেয়ারেরই।
ডিএসই’র লেনদেন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে লেনদেনে শীর্ষ দশে ছিল যথাক্রমে; বিএটিবিসি, স্কয়ার ফার্মা, সিটি ব্যাংক, ইউনিলিভার, ব্র্যাক ব্যাংক, টেকনো ড্রাগস, উত্তরা ব্যাংক, সীপার্ল, ট্রাস্ট ব্যাংক ও ররি’র শেয়ার। একটি বাদে বাকী সবগুলো শেয়ারের সূচক প্রভাবের ক্ষেত্রে যথেষ্ট শক্তিমান।
দীর্ঘদিন এসব শেয়ারগুলোর লেনদেন সীমিত ছিল। বাজারমূল্যও তেমন বাড়েনি। এসব শেয়ারের দাম যৌক্তিক অবস্থানে গেলে; সূচকের উচ্চতা বর্তমানের থেকে দ্বিগুণ হওয়া বাঞ্ছনীয়।
বিরাজমান বাজার ব্যবস্থাপনায় সূচক নিয়ন্ত্রণমূলক। এ ব্যবস্থায় বাজার ব্যবস্থাপকরাই সূচক প্রত্যাসিত উচ্চতায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে। বাজার ব্যবস্থাপকদের সাথী হয় সংবাদ মাধ্যমগুলোও। শেয়ারমূল্য ও সূচক বাড়লে সংবাদ মাধ্যমে হৈচৈ ও তালগোল পাাকিয়ে দেয়। সংবাদ শিরোনামগুলো হয় নেতিবাচক। বিষয়জ্ঞান বির্বজিত বিশেষজ্ঞদের বিজ্ঞ মতামত বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে।
এখন বিএসই’র আয়না ঘরে বাইরের লোক নেই। বাজারমূল ও সূচক বাড়লে- বাজার জ্ঞান বির্বজিত ভিন্ন পেশার লোকজন আয়না ঘরে বসতে পারে। যদি বসে, তারা সূচকের রাশ টানবেই। পুঁজিবাজার ভালো ও শক্তিশালী করতে চাইলে ওদের সশরীরে বাজারমুখী না হওয়াই ভালো। স্ব স্ব পেশাগত অবস্থান থেকেই প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ সম্ভব। বিএসইসি, ডিএসই ও সিডিবিএলের মাধ্যমেই সব পাওয়া সম্ভব। তাতে বাধা বা আপত্তি থাকবে না কারো।
গত সপ্তাহে বিএসইসিতে চেয়ারম্যানসহ তিন কমিশনার অফিসে আসেনি। দুজন এসেছে। তবে, হস্তক্ষেপ হয়নি। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বোর্ডের শীর্ষ পদে ‘বাবু সোনা’ বসে আছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। অর্থনীতি তথা পুঁজিবাজার সর্ম্পকে গভীর জ্ঞান থাকার কথা নয়। উপরন্তু ঢাবি শিক্ষক অর্থ ও পুঁজিবাজারের জন্য ভয়ঙ্কর। প্রমান- অর্থ ও পুঁজি উভয় বাজারেই আছে।
ডিএসই প্রশাসনের শীর্ষপদ গুলোতে- অযোগ্য লোকজন বসিয়ে রাখা হয়েছে। তারা আছে বছরের পর বছর জুড়ে। ডিএসই বোর্ড ও প্রশাসন মিলে গত ১৫ বছরে ডিএসই’র আওয়ামীকরণ সম্পন্ন করেছে। তাতে যা হবার তাই হয়েছে। ডিএসই ‘বি’ ক্যাটাগরিতে নেমেছে।
বিএসইসি ও ডিএসই মিলে পুঁজিবাজারে কারসাজি ও লুটপাটের লেনদেন পথ প্রশস্ত করেছে। পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের অভিশাপ, মার্জিন ব্যবস্থা এখনো বহাল রেখেছে। মার্জিন রুল সময় উপযোগী করার প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করেনি। বর্তমান ব্যবস্থায় বিনিয়োগকারীদের শরীরে পুঁজি চোষা জোঁক লেপ্টে রয়েছে। তাতে, মার্জিন ও নন মার্জিন উভয় একাউন্টের বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে বাজার ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এ পর্যন্ত কম বেশী ১৩ লাখ বিনিয়োগকারী নিঃস্ব অবস্থায় বাজার ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছর রাষ্ট্র পরিচালনায় পোড়ামাটি নীতি অনুসরণ করেছে। তাতে, রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানের কাঠামোই নড়বড়ে হয়ে গেছে। এর উদাহরণ দেশের অর্থনীতি গভীর খাতে পতিত হওয়া। ব্যাংকগুলো ফোকলা হওয়া। অর্থ ও পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট বৃদ্ধি পাওয়া। রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠানগুলোর কোথাও সুশাসন নেই। নেই কোন সুখবরও। ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও ব্যর্থতাই দেশের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক এমনকি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভঙ্গুর অবস্থানে চলে গেছে।
এখন সবার দৃষ্টি ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্ব গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দিকে। অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন সালেহ উদ্দিন আহমেদ। উভয়ই দক্ষ ব্যবস্থাপক। সামনে ভালো কিছু হবে এটাই প্রত্যাশা।
লেখক: ফজলুল বারী
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
নতুন প্রজন্মের গণতন্ত্রের নবজাগরণ
বাংলাদেশে নতুন গণতন্ত্রের যে ঢেউ উঠেছে, এটি কীভাবে কার্যকর করা যায়? কিছু সমস্যাও আমরা দেখছি যা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। বিশ্বের সবখানেই একটি বিষয় দেখা যায়—শকুন একটি পাখি মৃত প্রাণীর মাংস খেয়ে থাকে। সাধারণত এরা অসুস্থ ও মৃতপ্রায় প্রাণীর চারপাশে উড়তে থাকে এবং প্রাণীটির মরার জন্য অপেক্ষা করে। এই পাখিগুলো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অপেক্ষা করে, যখন সুযোগ আসে তখনই মৃত প্রাণীর মাংস খায়। আমি ১৯৭১-এ বর্তমানের মতো বর্বরতা দেখেছি। এই সমস্যার শেষ কোথায়? ৫৩ বছর ধরে শুধু সমস্যা সৃষ্টি করা হয়েছে। এখন নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সল্প সময়ের মধ্যে সমস্যাগুলোর সমাধান করবে, এটাই সবার কাম্য। তবে সমস্যার সমাধান সহজ হবে না। শিক্ষার্থীদের গত কয়েক দিনের কাজকর্ম দেখে মুগ্ধ হয়েছি। মনে হচ্ছে সময় এসেছে পুরনো নীতিমালা প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করে নতুন নীতিমালা তৈরি করার এবং দেশের সকল স্তরের নাগরিকদের শিখিয়ে দেওয়ার। তারপর জনগণ এবং তাদের প্রতিনিধিদের কাছে গণতান্ত্রিক নীতিমালা বুঝিয়ে দিন।
আপনি কি জনগণের সেবা করতে নাকি সেবা পেতে রাজনীতি করতে চান? এর সত্য উত্তর যদি জানা না থাকে, তবে আমার এই লিখাটি পড়ুন—জেনে যাবেন।
নীতিমালা কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের সম্পত্তি নয়, এটি জাতীয় পবিত্র সম্পদ। আর যেন শুনতে না হয় ‘আমার বাবা দেশটি স্বাধীন করে গেছে’। বরং শুনতে চাই যে, আবু সাঈদের মতো লাখো লাখো শহিদের রক্তে দেশ স্বাধীন হয়েছে। কোটা নিয়ে যেন কেউ নতুন করে রাজনীতি করতে না পারে বা অযথা বিতর্ক সৃষ্টি না করতে পারে, তা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। অবশ্যই নির্বাচন হবে, রাষ্ট্র ক্ষমতাও হস্তান্তর হবে, তবে এমন ব্যক্তির হাতে হস্তান্তর করতে হবে যার নিজস্ব পরিচয় এবং যোগ্যতা রয়েছে। এখন থেকে এ ধরনের ভণ্ডামি বন্ধ করুন—যে ব্যক্তি নিজের পরিচয় ছাড়া অন্যের পরিচয়ে নিজের ক্ষমতা কায়েম করতে চায়।
দেশের সব জানালা খুলে দিন, সত্যিকার দেশপ্রেমিকদের মুখ দেখতে পাবেন। তা না হলে আমাদের দেশে কী হবে জানেন? আসুন, কিছুক্ষণ বাংলাদেশের স্বৈরশাসনের সময়ের উপর ভ্রমণ করি।
দেশটি ১৮ কোটি মানুষের, তাই বলে পরিবারতন্ত্র নয়, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুন। দেশের উন্নয়নে যে লোক কাজ করবে তাকেই ক্ষমতায় আসতে দিন, যদি সেই লোক একজন অতি সাধারণ কৃষক, রিকশাচালক বা জেলে হন। তার রাজনীতি, নতুন গণতন্ত্রের ওপর জ্ঞান, দুর্নীতিমুক্ত থাকার সক্ষমতা, এবং জনগণের কল্যাণের প্রতি দক্ষতা বিবেচনা করুন।
৫৩ বছরের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোনো সরকার বা সরকার প্রধান দুর্নীতিমুক্ত থাকতে পারেনি। তাই শুধু কোটা পরিচয়ে এবং নিজের স্বার্থে নয়, দেশের স্বার্থে কাজ করে সুন্দর একটি দেশ গড়ার মনমানসিকতা এবং যোগ্যতা নিয়ে জনগণের সামনে আসুন।
আবু সাঈদের মত লাখো লাখো শহিদ ভাইবোন নিজেদের জন্য তাজা রক্ত দেয়নি। আজকে যে স্বাধীন দেশ আমরা পেয়েছি, তার উদ্দেশ্য দুর্নীতিমুক্ত, কোটা মুক্ত একটি সুন্দর গণতান্ত্রিক দেশ ফিরিয়ে আনা। আজকের বাংলাদেশ একবার নয়, কয়েকবার স্বাধীন হয়েছে। ক্ষমতার রদবদল হয়েছে। দেশ ভ্রমণে যে তালিকা খুঁজে পেলাম তা হলো:
– তাজউদ্দিন আহম্মদ (৭১-এর যুদ্ধকালীন সময়ের রাষ্ট্র প্রধান ছিলেন)
– শেখ মুজিবুর রহমান
– খন্দকার মোশতাক আহমাদ
– আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম
– জিয়াউর রহমান
– আব্দুস সাত্তার ও আবুল ফজল মোহাম্মদ আহ্সান উদ্দীন চৌধুরী
– হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ
– সাহাবুদ্দিন আহমদ
– খালেদা জিয়া
– শেখ হাসিনা
– আবার খালেদা জিয়া
– সর্বশেষ টানা ১৬ বছর শেখ হাসিনা
এ তালিকার মতো কোটি কোটি তালিকা পাওয়া যাবে যদি গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পর্যায়ে ফিরে যান। একইভাবে প্রশাসনের তালিকা গঠন করা হয়েছে যার প্রমাণ শেখ হাসিনার প্রশাসন। ইতিহাস সাক্ষী, উপমহাদেশের ছোট্ট এই দেশের ক্ষমতার রদবদলে হিংসা ও লোভে ভরপুর। বাংলাদেশের রাজনীতি ব্যবসার একটি কেন্দ্রবিন্দু। এত কিছুর পরও কি আমাদের একই ভুল নতুন করে করা উচিত?
নতুন প্রজন্ম দেশের পরিকাঠামো এবং অবকাঠামো পরিষ্কার থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, ট্রাফিক কন্ট্রোল এবং মেরামত করছে ক্লাস বন্ধ রেখে। কেন জানেন? আমাদেরকে হাতে-কলমে অনুশীলনের মাধ্যমে শিখাচ্ছে কীভাবে কী করতে হবে এবং আগামী কালের নতুন গণতন্ত্র কেমন হবে। স্যুট-কোট খুলে, পাজোড় গাড়ি থেকে নেমে, দরকারে সরকারকে রাস্তায় নেমে ময়লা পরিস্কার করতে হবে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন পারে, আপনি জনগণের প্রতিনিধি হয়ে কেন পারবেন না?
মনে কি পড়ে, জর্জ ওয়াশিংটন কাঠ কাটতে পেরেছিলেন কিন্তু সেনাপ্রধান তা পারেননি। এর ফয়সালা তো সেদিনই হয়ে গেছে। তারপরও কেন সেই পুরনো কাহিনী নতুন করে দেখাতে হবে? আমি কি সত্যিকার্থে পুরো বিষয়টি বোঝাতে পেরেছি!
রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
এখন দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে
বাংলাদেশ আজ গভীর রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত। সরকার বিরোধী দলের ওপর নানা চাপ প্রয়োগ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু এভাবে আসল সমস্যাগুলো থেকে কতদিন দৃষ্টি ফেরানো সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। গত প্রায় এক মাস ধরে ছাত্রসমাজ কোটা আন্দোলনে সক্রিয় হয়েছে। তাদের অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে, এবং তারা রাস্তায় নেমেছে মানুষের নিরাপত্তা, দুর্নীতি, ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবিতে।
এখন ছাত্রসমাজের একটিই দাবি: “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ এই সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদের বিলোপ।” তাদের মতে, এই সরকার ক্ষমতায় থাকার অধিকার হারিয়েছে, এবং খুন-লুটপাট ও দুর্নীতির জন্য বিচার হওয়া উচিত। চলমান ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা চিরতরে বিলোপ করা প্রয়োজন।
সরকারের বিবৃতিতে প্রায়শই বিএনপি ও জামাতকে বিভিন্ন সমস্যার জন্য দায়ী করা হয়। বিরোধী দলকে দোষারোপ করে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার প্রবণতা নতুন নয়। কিন্তু এভাবে আসল সমস্যাগুলো থেকে কতদিন চোখ ফিরিয়ে রাখা সম্ভব?
সম্প্রতি ছাত্রসমাজ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। তারা নিজেদের দাবি ও অভিযোগ নিয়ে সোচ্চার। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, শিক্ষা ব্যবস্থা, ও ভবিষ্যতের বিষয়ে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের অভাব দৃশ্যমান। কতজন শিক্ষার্থীকে হারালে সরকার তাদের দাবির প্রতি সঠিক গুরুত্ব দেবে? পুলিশ ও মিলিটারি রাস্তা দখল করে অস্ত্র দিয়ে নতুন প্রজন্মকে হত্যা করছে।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষা করা সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু অনেকের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে যে, বাংলাদেশ কি সত্যিই স্বাধীনভাবে চলতে পারছে, নাকি কোনো বৃহত্তর শক্তির প্রভাবাধীন হয়ে পড়েছে।
সরকারি কার্যক্রমে স্বচ্ছতার অভাব জনগণের আস্থার ঘাটতি তৈরি করেছে। প্রকৃত তথ্য গোপন করে শুধুমাত্র বিরোধী দলকে দোষারোপ করা একটি অকার্যকর কৌশল। এতে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না, বরং আরও জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার দায়িত্বহীনতার কারণে সমস্যাগুলো আরও প্রকট হয়ে উঠছে। ছাত্রসমাজের দাবি-দাওয়া, তাদের নিরাপত্তা, ও শিক্ষার মান উন্নয়ন নিশ্চিত করা এখন জরুরি। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের অভাব স্পষ্ট। রাজনৈতিক স্বার্থে বিরোধী দলকে দোষারোপ করে সমস্যাগুলো থেকে দৃষ্টি সরানোর প্রবণতা দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর। জনগণের প্রকৃত সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও কার্যকর পদক্ষেপ।
দেশের সকল স্তরের সরকারি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রকৃত তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য স্বচ্ছতা অপরিহার্য। ছাত্রসমাজের দাবির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে তাদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার মান উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষার ক্ষেত্রের সমস্যাগুলো সমাধান করা দেশের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের প্রতি উদাসীনতা দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। অন্য কোনো দেশের প্রভাবমুক্ত থেকে নিজেদের স্বার্থে কাজ করতে হবে। এর মাধ্যমে দেশকে বহিঃশক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব।
একটি সংসার বা একটি দেশ যত গরিবই হোক, সাজানো-গোছানো অবস্থায় থাকলে বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠলে মনের মধ্যে একটি পবিত্র অনুভূতি কাজ করে। উন্নতির ধাপগুলো দেখে গর্ব হয়। কিন্তু হঠাৎ অন্ধকার ঘনিয়ে এলে বা বিপদে পড়ে সেটি ভেঙে-চুরে তচনচ হয়ে গেলে হতাশা কাজ করে, নতুন উদ্দীপনা বা অনুভূতি দেহে ও মনে আসে না।
বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে দেখা যায়, কোটা সংক্রান্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে জাতি কীভাবে সক্ষম হবে? কীভাবে নতুন বিশ্বাসে গড়ে উঠবে দেশ? কীভাবে পরস্পর পরস্পরকে বিশ্বাস করবে এবং প্রিয়জন হারাবার বেদনা কখন বিলীন হবে? এসব প্রশ্ন আজ প্রতিটি সচেতন নাগরিকের মনে জেগে উঠছে।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জনগণের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে। সমস্যার সমাধান করতে হলে স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন। ছাত্রসমাজের নিরাপত্তা ও শিক্ষার মান উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এর মাধ্যমে দেশের জনগণকে আশ্বস্ত করা সম্ভব হবে এবং একটি সুস্থ, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে দুর্নীতির চিরতরে বিনাশ করতে হবে।
বর্তমান সংকট মোকাবেলায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে প্রয়োজন সকলের সচেতনতা, আন্তরিকতা, ও সমন্বিত প্রচেষ্টা। কেবলমাত্র সঠিক পথে এগিয়ে গিয়ে আমরা একটি উন্নত, শান্তিপূর্ণ ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব।
আমি শেষে বলতে চাই, যদি সরকার সত্যিকার অর্থে দেশকে ভালোবেসে থাকে তবে ব্যক্তি স্বার্থ ছেড়ে দেশের স্বার্থে সঠিক নেতৃত্বধীনের কাছে দেশকে হস্তান্তর করবে। সরকার যদি অহংকার, লোভ, ও রাগের কারণে সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়, তবে দেশের কৃষক, মজুর সহ কোটি কোটি মানুষ মহাসঙ্কটে পড়বে। একই সাথে যদি মিলিটারি প্রতিনিয়ত কার্ফিউ জারি করে ব্যক্তি বিশেষকে রক্ষা করার জন্য এবং দেশকে জলাঞ্জলি দিতে চায় তবে এ যুদ্ধ ৭১ সালের থেকে ভয়ঙ্কর রূপ নিবে। সেক্ষেত্রে আমার দাবি, শিক্ষার্থীদের কাছে রাস্তায় যখন নেমেছো তখন জনগণকে মুক্ত না করে ঘরে ফিরবে না এবং শুধু দুই কোটি কোটা সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে নয়, দেশের সব কোটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা, দুর্নীতির চিরতরে বিনাশ ঘটিয়ে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেই ঘরে ফিরবে।
আমি তোমাদের একদফা সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। একই সাথে বলতে চাই, যে খুন-লুটপাট, দুর্নীতি এই দেশে হয়েছে, তার বিচার হতে হবে এবং চলমান ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা চিরতরে বিলোপ করতে হবে। এর শতভাগ নিশ্চয়তা না করে তোমরা ঘরে ফিরো না, কারণ তোমরা যদি ব্যর্থ হও তবে দেশ পৃথিবীর মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে যাবে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামও শেষ হয়ে যাবে।
রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
চীনের সঙ্গে সংস্কৃতি বিনিময় ও মুক্ত বাণিজ্যের সম্ভাবনা
সংস্কৃতি বিনিময় বিশ্বায়নের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই বিনিময় বিভিন্ন মাধ্যমে ঘটতে পারে। যেমন- বাণিজ্য, অভিবাসন, পর্যটন, শিক্ষা এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি। চীনের সাথে আমাদের সম্পর্ক অনেক পুরনো। চীনের সাথে আমাদের সংস্কৃতি বিনিময় এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে এই সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে। আমরা আমাদের সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে চীনের হিউয়েন সাং এবং ফা-হিয়েনের লেখনী থেকে অনেক কিছু জেনেছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৫০ এর দশকে চীন ভ্রমণ করেছেন। সেই সময় তার লেখা “আমার দেখা নয়া চীন” বই থেকে আমরা চীনের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পেরেছি।
বর্তমানে অনেক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী এবং ছাত্র-ছাত্রী চীনে বসবাস করছেন। যার ফলে তারা চীনা ভাষা, সংস্কৃতি, চীনের প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পেরেছে এবং আমাদের সংস্কৃতি সেখানে তুলে ধরতে পেরেছে। ঠিক তেমনি অনেক চীনা নাগরিক বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আসছে। যার মাধ্যমে তারা আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি এবং ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পেরেছে। ফলে উভয় দেশের মধ্যে আমাদের সংস্কৃতি বিনিময় হচ্ছে। এছাড়া তাদের প্রযুক্তি দিয়ে তারা আমাদের সহযোগিতা করছে। এই বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক আরও মজবুত হচ্ছে।
বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বর্তমানে বাংলাদেশর সাথে চীনের অনেক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। যার মনোহর এবং দূরদর্শিতা পূর্ণ নেতৃত্বের মাধ্যমে চীন তথা সারা বিশ্বের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। বর্তমানে চীনের সহযোগিতায় আমাদের ১৪ টি মেগা প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। আরো অনেক প্রকল্প চলমান রয়েছে। আমরা যদি চীনের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে পারি তাহলে তা আমাদের অর্থনীতিতে খুব ভালো একটি প্রভাব ফেলতে পারে। এতে দুই দেশ একই সঙ্গে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে পারবে এবং নির্বিঘ্নে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারবে। এতে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
উদাহরণ হিসেবে আমরা আফ্রিকার দেশ মরিশাস এবং কম্বোডিয়াকে দেখতে পারি। চীনের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পর মরিশাসের প্রায় ১৫ শতাংশ বাণিজ্য ঘাটতি কমে গিয়েছে এবং চীনে কম্বোডিয়ার রপ্তানি প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। চীনে আমাদের সবচেয়ে বড় বাজার হতে পারে আম পাট-পাটজাত পণ্য এবং চামড়া জাত পণ্য। ১৪০ কোটি মানুষের এই বড় বাজারে আমাদের দেশীয় পণ্যের অনেক বড় সম্ভাবনা রয়েছে। চীনের সাথে যদি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা যায়, তবে আমাদের দেশের অর্থনীতিতে অনেক বড় বিপ্লব ঘটবে।
সৈয়দ রাকিবুল ইসলাম (রাকিব)
সাধারণ সম্পাদক,
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, চীন শাখা।
চীন বাংলাদেশ বিনিয়োগ পরামর্শক।