ব্যাংক
ছাত্র আন্দোলনে হুমকিদাতা এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থ দিলেন সমন্বয়কদের!
আওয়ামী সরকারের পতনে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমালের পল্টি। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্যাংকের অর্থ লুটপাটসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে শিক্ষার্থীদের পক্ষে থাকার সুর করে আচরণের ভোল পাল্টেছেন তিনি। এনআরবিসি ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা তৎকালীন কোটা সংস্কার আন্দোলনে শামিল হলে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়ে সতর্ক করেছিলেন। একইসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ সংক্রান্ত কোন পোস্ট শেয়ার ও মন্তব্য করলে, তাকে প্রশাসনিক হয়রানির হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি। অথচ তৎকালীন সরকার পতনের পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অর্থ সহায়তা দিয়ে অতীত অপকর্মের ইতি টানতে মরিয়া পারভেজ তমাল। অর্থসংবাদের এক অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সূত্র বলছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার হয়ে কাজ করেছেন পারভেজ তমাল। এমনকি এনআরবিসি ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা তৎকালীন কোটা সংস্কার আন্দোলনে শামিল হলে এবং এ সংক্রান্ত কোন মন্তব্য করলে তাকে প্রশাসনিক হয়রানির হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া কেউ যাতে আন্দোলনে শামিল হয়ে দেরি করে ব্যাংকে না ঢুকতে পারে এজন্য তদারকিও করা শুরু করেছিলেন। আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে তার নির্দেশে গত ১৭ জুলাই রাতে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা এনআরবিসি ব্যাংকের প্রত্যেক শাখা প্রধান বরাবর পাঠানো হয়। যার তথ্য প্রমাণ অর্থসংবাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।
ব্যাংকের ওই নির্দেশনায় বলা হয়, ব্যাংকে কর্মরত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কোন সমাবেশে শামিল হওয়া বা সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোটা সংস্কার সংক্রান্ত কোন ধরনের কোন মন্তব্য, এই সংক্রান্ত কোন তথ্য শেয়ার করা বা পোস্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এই ব্যাপারে মানব সম্পদ বিভাগ হতে প্রেরিত সূত্রপত্র ‘চ’ ই-মেইলে উল্লেখিত নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হলো। এই আদেশের ব্যত্যয় হলে তার বিরুদ্ধে মানব সম্পদ বিভাগের নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যাংক এবং ব্যাংকের আশেপাশে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যথাসময়ের মধ্যে কর্তব্য স্থানে যোগদান করার নির্দেশনাও দেওয়া হয় সেই চিঠিতে।
সূত্র জানায়, এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ম্যানেজ করার পাঁয়তারার গুঞ্জন উঠেছে। যার প্রমাণ হিসেবে সম্প্রতি ৫০ লক্ষ টাকা অনুদানের চেক হস্তান্তরের অনুষ্ঠানের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে ছাত্রদের পক্ষে সুর তুলেন পারভেজ তমাল। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের জন্য ব্যাংকের কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। যার চেক হস্তান্তর করা হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসানত আবদুল্লাহর নিকট। সেই অনুদানের ছবি ঢালাওভাবে প্রচারের জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। ফলে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে পারভেজ তমাল আসলে কোন পক্ষের লোক? শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর কোন উদ্দেশ্য হাসিলে তিনি ভোল পাল্টাচ্ছেন? এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠাভাজন হয়েও হঠাৎ ছাত্রদের পক্ষে সুর তোলার কারণে সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ছাত্র-জনতার জন্য অনুদান দেওয়া অনুষ্ঠানে ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে যারা স্বপ্ন দেখেছে, তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এনআরবিসি ব্যাংক পাশে থাকবে। আহতদের চিকিৎসা ও অনুদানের পাশাপাশি ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে এনআরবিসি ব্যাংক। এছাড়া, আহত শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করবে। শহীদ পরিবারে কর্মক্ষম সদস্যদের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করা হবে। অথচ কিছুদিন আগেও শেখ হাসিনার সমর্থনে কথা বলছিলেন আওয়ামী ঘনিষ্ঠ ব্যাংক চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসানাত আবদুল্লাহর মুঠোফোনে অর্থসংবাদের অফিস থেকে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। একাধিকবার তাঁর মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। একইসঙ্গে অপর সমন্বয়ক সারজিস আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পরিচিত মুখ সাইয়েদ আব্দুল্লাহ ফেসবুকে লিখেন, ঝোঁপ বুঝে কোপ মেরে ছাত্রদের কাছে ইমেজ প্রতিষ্ঠিত করে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসাবে টিকে থাকার রাস্তা ক্লিয়ার করার মিশনে আছে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং ব্যাংকে তার ঘনিষ্ঠজনরা। এসময় পারভেজ তমাল এবং তার ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে দুদক এবং সাংবাদিকদের জরুরি তদন্ত শুরু করতে অনুরোধ করেন তিনি।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল এর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সূত্র বলছে, হাসিনা সরকারের সাফাই গাইতে গিয়ে ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে বিভিন্ন অনুদান প্রদান করেছেন এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান। এসবের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নামে শিক্ষাবৃত্তি, শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন, কর্ম নিয়ে ‘প্ল্যানেট’ ম্যাগাজিনের বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ, বঙ্গবন্ধু যুবমেলায় এনআরবিসির অনুদান, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে ব্যাংক থেকে কোটি টাকা প্রদান, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ঘিরে ব্যাংক থেকে বই ও ইফতার বিতরণ করেছেন। এছাড়া শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পে ব্যাংক থেকে কোটি টাকার অনুদানও দিয়েছিলেন তিনি।
জানা যায়, নিজেকে রাশিয়ান অলিগার্ক পরিচয় দেওয়া পারভেজ তমাল রাশিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ছিলেন। নিজের নাম আর পদবী ব্যবহার করে দেশ ছেড়ে পালানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সহায়তায় ঋণ জালিয়াতি, কমিশন বানিজ্য, নিয়োগ বানিজ্য, শেয়ার কারসাজি, মানিলন্ডারিং, বিদেশে অর্থ পাচার, গ্রাহকের কোম্পানী দখলসহ বিবিধ আর্থিক দুর্নীতিতে লিপ্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে পারভেজ তমালের বিরুদ্ধে।
এর আগে নিয়মবহির্ভূতভাবে ঘনিষ্ট কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমালের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বাংলাদেশ ব্যাংকে তমালের বিরুদ্ধে ব্যাংকটির এক স্পন্সর শেয়ারহোল্ডারের অভিযোগের সূত্র ধরে এ তদন্ত করা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্টের সার্কুলারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তমাল পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়া ৩৮০০ কর্মকর্তা কর্মচারীকে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট না দিয়ে শুধু ২৭ জন কর্মকর্তাকে ৫ থেকে ১৩টি পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট দিয়েছেন। যা নিয়মবহির্ভূত ও দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে বিরল। এছাড়া তমাল ও তার পিএস আসিফ ইকবাল পরিচালকদের সভায় প্রতি বৈঠকে উপস্থিতি ফি ৭ হাজার ২০০ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত হলেও তারা প্রতি বৈঠকে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা অতিরিক্ত অন্যায়ভাবে গ্রহণ করছেন, যা ব্যাংক কোম্পানি আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। একইসঙ্গে তমাল পারভেজ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে মতিঝিল ও গুলশানে ২টি অফিস ব্যবহার করছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ব্যতিরেকে এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট নামক একটি বিধিবহির্ভূত প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। তবে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারে নিজের বিরুদ্ধে করা এ তদন্ত শুরুর কয়েকদিনের মধ্যে ইতি টানান প্রভাবশালী পারভেজ তমাল।
এর আগে ২০২৩ সালের ১১ জুলাই দুদকের উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বাদী হয়ে অর্থপাচার ও নিয়মবহির্ভূত ঋণ প্রদানের অভিযোগে এনআরবিসি ব্যাংকের ১১ জন কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার এজহারে বলা হয়, আসামিগণ পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার অভিপ্রায়ে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ ও অসদাচরণের মাধ্যমে পর্যাপ্ত জামানত ছাড়াই উত্তরোত্তর ঋণ বৃদ্ধিপূর্বক ৭৪ কোটি ৬০ লাখ ৩৩ হাজার ৮০৪ টাকা (সুদসহ ৭৮ কোটি ৫৭ লাখ ০২ হাজার ২৭৩ টাকা) পরিশোধ ও আদায় না করে আত্মসাৎ করেন। এছাড়া ৫ কোটি ৯৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭৫ টাকা সমমূল্যের পণ্যের রপ্তানীমূল্য বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন না করে পাচার করা হয়। এতে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমালের যোগসাজশ রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে নিজের সংশ্লিষ্টতা থাকায় উচ্চ মহলের সহযোগিতায় দুদকের এ তদন্ত ধামাচাপা দেওয়া হয়। যা পরবর্তী প্রতিবেদনে প্রকাশ করবে অর্থসংবাদ।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ডলার
এক সপ্তাহের ব্যবধানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার বেড়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন তথ্য প্রকাশ করেছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, এক সপ্তাহের ব্যবধানে রিজার্ভ ছয় কোটি ১০ লাখ বেড়ে এক হাজার ৮৪৯ কোটি কোটি ৪০ লাখ ডলারে দাঁড়াল। বর্তমানে বিভিন্ন তহবিলসহ গঠিত মোট রিজার্ভ দুই হাজার ৪২৭ কোটি ডলার।
আগের সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দুই মাসের বিল পরিশোধের পর নভেম্বরের মাঝামাঝি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।
আকু হলো আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তির ব্যবস্থা। এর সদস্যদেশ হলো বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি এ তালিকা থেকে বাদ পড়েছে শ্রীলঙ্কা।
আকুর বিল পরিশোধ ছাড়াও রিজার্ভ থেকে দৈনন্দিন ভিত্তিতে বিদেশি ঋণ ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয় বাংলাদেশকে। সরকারের জরুরি আমদানি ব্যয় পরিশোধে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিও করতে হয়।
অন্যদিকে বৈদেশিক ঋণ, অনুদান, প্রবাসী আয়ের নির্দিষ্ট অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ হিসেবে জমা হয়।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ব্যাংক
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের নতুন ডিএমডি আবু জাফর
এস এম আবু জাফর আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক পিএলসিতে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। ২০২১ সাল থেকে ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে উত্তরা মডেল টাউন শাখায় দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে যোগদানের পূর্বে তিনি এক্সিম ব্যাংক এবং ইউসিবিএল ব্যাংকে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন।
আজ (মঙ্গলবার) ব্যাংকটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আবু জাফর এক্সিম ব্যাংকে ২০০০ সালে ম্যানেজমেন্ট ট্র্রেইনি হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার ব্যাংকিং কর্মজীবন শুরু করেন। দীর্ঘ ২৪ বছরের ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে শাখা পর্যায়ে বৈদেশিক বাণিজ্য প্রধান, অপারেশন ম্যানেজার এবং তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কর্পোরেট ও এডি শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সফলতার সাথে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি তিনবার “চেয়ারম্যানস্ গোল্ড মেডেল” অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। এ ছাড়াও ২০১৭ সালে তিনি শুদ্ধাচার পুরস্কার লাভ করেন।
তিনি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বহু প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাংকিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং দেশে ও বিদেশে অনুষ্ঠিত ব্যাংকিং এবং আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। প্রথিতযশা এ ব্যাংকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দুর্বল তিন ব্যাংককে আরও ২৬৫ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা
তারল্য ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোকে সচল করতে কাজ করছে সরকার। তাতে সবল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত সপ্তাহে বড় অঙ্কের তারল্য সহায়তার পর এবার দুর্বল তিন ব্যাংককে আরও ২৬৫ কোটি টাকার সহায়তা দিয়েছে সবল চার ব্যাংক।
সহায়তা দেওয়া ব্যাংকগুলো হলো- ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, সহায়তার পাশাপাশি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব কৌশল থাকা উচিত। কারণ গ্যারান্টি সহায়তা দিয়ে যে কোনো ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। ঋণ আদায়ে তাদের নিজস্ব কৌশল থাকতে হবে। যদিও কিছু ব্যাংক ঋণ আদায়ে খুব ভালো করছে। তাদের মতো অন্যদেরও উদ্যোগী হতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তার আশাই সব ঠিক হবে না।
এর আগে গত সপ্তাহে তারল্য ঘাটতি মেটাতে দুর্বল সাত ব্যাংকে ৬ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকার সহায়তা দিয়েছে সবল ১০ ব্যাংক। ওই সময় এসব ব্যাংক থেকে চাওয়া হয়েছিল ১১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এসব ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহায়তা পেয়েছে ইসলামী ব্যাংক। সাতটি থেকে ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক পেয়েছিল ২ হাজার ৯৫ কোটি টাকা।
সহায়তা পাওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে ছিল- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ছয় ব্যাংক থেকে পেয়েছে ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ছয় ব্যাংক থেকে ১ হাজার কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক ৯২০ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ৭০০ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংক ৪০০ কোটি এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পেয়েছে ২৯৫ কোটি টাকা। আর যেসব ব্যাংক তারল্য সহায়তা দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্র মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক, বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক ও বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক।
এর আগে গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ১৭টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে সভা করেন। সভায় দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তা অব্যাহত রাখতে শক্তিশালী ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ করেন গভর্নর।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৩ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব
এস আলম গ্রুপ ও তার সহযোগীদের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানে এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৩ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বরাবর অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক ইয়াছির আরাফাত সই করা তলবি চিঠিতে তাদেরকে আগামী ২০ ও ২১ নভেম্বর দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চিঠিতে কর্মকর্তাদের হাজির হওয়ার পাশাপাশি তাদের পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। এছাড়া চিঠিতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চাকতাই শাখার গ্রাহক মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজ, জুবিলি রোড শাখার গ্রাহক ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স, খাতুনগঞ্জ শাখার গ্রাহক সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস নামীয় ঋণ পরিদর্শন ও মনিটরিং সংক্রান্ত কর্মকর্তা ভূমিকার বিষয়ের বিস্তারিত তথ্যসহ হাজির হতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে ২০ নভেম্বর যাদের তলব করা হয়েছে- বাংলাদেশ ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের যুগ্মপরিচালক সুনির্বাণ বড়ুয়া, অনিক তালুকদার, অতিরিক্ত পরিচালক শংকর কান্তি ঘোষ, ছলিমা বেগম, উপপরিচালক মো. জুবাইর হোসেন ও রুবেল চৌধুরী।
২১ নভেম্বর যাদের তলব করা হয়েছে- বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক সৈয়দ মু. আরিফ-উন-নবী, অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, মো. শোয়েব চৌধুরী, মো. মঞ্জুর হোসেন খান ও মো. আব্দুর রউফ, উপ-পরিচালক লেনিন আজাদ পলাশ এবং পরিচালক মো. সরোয়ার হোসাইন।
একই ঘটনায় এর আগে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ২৩ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল সংস্থাটি।
অভিযোগ রয়েছে, মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী গোলাম সারওয়ার চৌধুরী, জুবিলি রোড শাখার গ্রাহক ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স, খাতুনগঞ্জ শাখার গ্রাহক সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টসসহ অন্যান্যরা ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ইসলামী ব্যাংকে থেকে আত্মসাৎ করেছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার কোটি টাকা
গত তিন মাসে (জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর) খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৭৩ হাজার কোটি টাকা। আর চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২১ কোটি। সেই হিসাবে খেলাপি মোট ঋণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। শুধু তাই নয় গত ১৬ বছরের মধ্যে বিতরণ করা ঋণ ও খেলাপি ঋণের সর্বোচ্চ রেকর্ড এটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যের প্রতিবেদন থেকে এ বিষয়টি জানা গেছে।
তথ্য বলছে, গত বছরের জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এতদিন যা স্বার্থান্বেষী মহলগুলোর কারসাজিতে চাপা পড়েছিল।
এর আগে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। সেদিন গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। মূলত তার পদত্যাগের পর ব্যাংক খাতের প্রকৃত তথ্য সামনে আসতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০০৮ সালের নির্বাচনে যখন আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে তখন ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। এরপর থেকে আওয়ামী সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও কেলেঙ্কারি বাড়তে থাকে। ফলে খেলাপি ঋণও ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। এদিকে সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ১১১ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণ করা ঋণের ৪০ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বা বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে। কারণ তারা ধারণা করছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো ভুয়া দলিল ও অনিয়মের মাধ্যমে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছিল। শুধু এস আলম ও তার সহযোগীরা একাই ছয়টি ব্যাংক থেকে ৯৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে। ইতোমধ্যে এসব ঋণ মন্দ ঋণে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক অবস্থাকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে অনেকে ঋণ পরিশোধ করতে চান না। তাদের এই প্রবণতা মন্দ ঋণের বোঝা আরও বাড়াতে পারে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা অধিকাংশ ঋণ অনিয়ম ও কেলেঙ্কারির মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। ফলে এসব ঋণ আদায় করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
কাফি