অর্থনীতি
এস আলম ও তার পরিবারের ব্যাংকে জমা ছিল ১ লাখ কোটি টাকা!
এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল আলমের পরিবারের সদস্য ও বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ছয়টি ব্যাংকের হিসাবে ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছিল বলে জানতে পেরেছে রাজস্ব কর্তৃপক্ষ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সূত্রগুলোর মতে, বর্তমানে এসব হিসাবের স্থিতি ২৬ হাজার কোটি টাকা। তবে কিছু ব্যাংকের থেকে এখনও লেনদেনের তথ্য আসছে বিধায় এর পরিমাণ এখনই চূড়ান্তভাবে বলা যাচ্ছে না।
এই ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। যারমধ্যে পাঁচটি ব্যাংকই এর আগে ছিল এস আলমের নিয়ন্ত্রণে।
তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে আহসান এইচ মনসুরকে নিয়োগের পর থেকেই এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে।
গত ১৪ আগস্ট এনবিআরের অধীন ইনকাম ট্যাক্স জোন-১৫ থেকে ৯১টি ব্যাংক ও ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এস আলম, তার পরিবার এবং তাঁদের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক সত্ত্বাগুলোর অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য দিতে বলা হয়। এর এক মাস পরে তারা এসব হিসাবের মধ্যে বিপুল পরিমাণ লেনদেনের ঘটনা খুঁজে পেয়েছে।
ট্যাক্স জোন-১৫ এর কমিশনার আহসান হাবিব বলেন, “এস আলমের পরিবারের সদস্য, এবং গ্রুপের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব সার্চ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।” এর বেশি তিনি আর কিছু জানাতে রাজি হননি।
নাম না প্রকাশের শর্তে ট্যাক্স জোন-১৫ এর একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ঋণ ও বিক্রির অর্থসহ এসব ব্যাংকে এপর্যন্ত তারা ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা জমার সন্ধান পেয়েছেন। “তবে এরমধ্যে কত টাকা ঋণের এখনও তা নির্ধারণের কাজ চলছে” – বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, “এস আলমের পরিবারের সদস্য ও ব্যবসায়িক সত্ত্বাগুলোর এসব হিসাবের বর্তমান স্থিতি ২৬ হাজার কোটি টাকা বলে আমরা জানতে পেরেছি।”
এই তথ্য কোন সময়ের, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা সাধারণত পাঁচ বছরের তথ্য চাই। তবে এক্ষেত্রে এর আগের সময়ের তথ্যও থাকতে পারে।”
অতীতে ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, যে কোন করদাতার বিগত পাঁচ বছরের ব্যাংক লেনদেনের তথ্য চাওয়া যেত। তবে নতুন আয়কর আইন অনুযায়ী, যা ২০২৩ সালে পাস হয়েছে, সেখানে এই টাইমলিমিট তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে কর বিভাগ অতীতের যে কোন সময়ের করদাতার তথ্য চাইতে পারে।
এস আলমের বিরুদ্ধে অন্যান্য তদন্ত
এনবিআর ছাড়াও, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন ধরণের অনিয়ম খুঁজে বের করতে কাজ করছে।
এর আগে এস আলমের কব্জায় থাকা ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করার পর নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। গত ৫ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে মাসুদ বলেন, ইসলামী ব্যাংকের মোট ঋণের অর্ধেকেরও বেশি এস আলম গ্রুপ নিয়েছে।
জুন শেষে ব্যাংকটির ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকার বেশি।
এছাড়া, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সংঘবদ্ধ অপরাধ, প্রতারণা, জালিয়াতি ও হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে এস আলম ও তাঁর সহযোগী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে।
গত ৩১ আগস্ট সিআইডির মিডিয়া উইংয়ের ককর্মকর্তা আজাদ রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সিআইডির ফিনান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট এই অনুসন্ধান করছে।
ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে এই ব্যবসায়িক গোষ্ঠী ফায়দা লুটেছে এমন অনেক অভিযোগ রয়েছে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ
স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৭৭৩ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪৯৮ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বাজুসের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) থেকে নতুন এই দর কার্যকর হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য কমার প্রেক্ষিতে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের নতুন দাম ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৭০৩ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৩২ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৪৫৮ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ২৩৭ টাকা কমিয়ে ৯৩ হাজার ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরপর ১১ ডিসেম্বর আরেক দফায় ভরিপ্রতি ১ হাজার ৮৭৮ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৪০ হাজার ২৭১ টাকা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
২৯ দিনে ভারত থেকে এলো ৩৫ হাজার টন চাল
দীর্ঘ দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত ১৩ নভেম্বর সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দরে চালের প্রথম চালান আসে। শুল্কমুক্ত সুবিধায় ২৯ দিনে ভারত থেকে ৯৬৯ ট্রাকে ৩৫ হাজার ৪৩ টন চাল আমদানি হয়েছে। এভাবে চাল আমদানি অব্যাহত থাকলে দেশের বাজারে দাম কমে আসবে বলে দাবি আমদানিকারকদের।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাল আমদানির প্রভাব এখনো সাতক্ষীরার চালের বাজারগুলোতে পড়েনি।
সাতক্ষীরার ভোমরা শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব শাখা থেকে চলতি অর্থবছরের ১৩ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের ৩৫ হাজার ৪৩ টন চাল আমদানি হয়। যার আমদানি মুল্য প্রায় ৩২ কোটি টাকা। আমদানিকৃত এসব চালের মধ্যে রয়েছে চিকন বাসমতি, মিনিকেট ও মোটা স্বর্না এবং জামাইবাবু জাতের চাল।
ভোমরা স্থল শুল্ক স্টেশন রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শফিউল বসর জানান, ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ১৩ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯৬৯টি গাড়িতে চাল আমদানি করা হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৩ টন। সরকার যেহেতু চালের ওপর ডিউটি ফ্রি করে দিয়েছে যার জন্য এখানে কোনো রাজস্ব আদাই হয়নি।
উত্তরবঙ্গের চাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সোনালি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কামাল হোসেন জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ভারত সরকার চাল রপ্তানি শুরু করার পর থেকে অন্যান্য বন্দরের পাশাপাশি ভোমরা বন্দর দিয়ে চাল আমদানি করছে তার প্রতিষ্ঠানটি। তবে গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে কেবল আমদানি শুরু হয়েছে। এখনো তেমন প্রভাব পড়তে শুরু হয়নি দেশের চালের বাজারগুলোতে।
সাতক্ষীরা জেলা সদরের বৃহৎ মোকাম সুলতানপুর বড় বাজারের চাল ব্যবসায়ীরা জানান, চিকন বাসমতি চাল প্রতি কেজি ৭৮ টাকা, চিকন আটাশ জাতের চাল কেজি প্রতি ৫৮ থেকে ৫৯ টাকা এবং মোটা জাতের চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি করেন। এ ছাড়া আমদানিকৃত মোটা স্বর্ণা ও জামাইবাবু জাতের চাল ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। তবে ভারতীয় চাল আমদানিতে দেশি চালের বাজারে এর কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সালেহ্ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানান, বর্তমান সাতক্ষীরার চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। তবে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরুর কারণে শিগগিরই চালের বাজার কমতির দিকে আসবে বলে আশা করছেন তিনি।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সবজিতে স্বস্তি, স্বাভাবিক হয়নি সয়াবিন তেল
বাজারে দুই সপ্তাহ ধরে চলা বোতলজাত সয়াবিন তেল নিয়ে অস্থিরতা এখনো কাটেনি। যদিও গত সোমবার সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। তারপরও গত চারদিনে বাজারে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক করেনি কোম্পানিগুলো। এখনো পাড়া-মহল্লার বেশিরভাগ দোকানে মিলছে না সয়াবিন তেল।
তবে বাজারে সুখবর আছে অন্য প্রায় অনেক পণ্যেই। আলু, পেঁয়াজ ও সবজিসহ কিছু মুদি পণ্যেরও দাম কমেছে। স্থিতিশীল রয়েছে মুরগি ও ডিমের দাম। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।
সকালে রামপুরা বাজারে গিয়ে বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে হাতেগোনা দুটি দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করতে দেখা গেছে। সেখানে আলম স্টোরের রেজাউল আলম বলেন, কোম্পানি গতকাল (বৃহস্পতিবার) তেল দেওয়ার কথা ছিল। শেষবেলায় জানিয়েছে দিতে পারবে না। শনিবার দেবে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে একই অবস্থা। এরমধ্যে তেলের দাম বেড়েছে। আগামীকাল তেল পাবো বলে আশা করছি।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পরিবেশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত একটি ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানি নতুন দামের সয়াবিন তেলের বোতল বাজারে ছাড়েনি। এজন্য তারাও খুচরা পর্যায়ে পণ্যটি দিতে পারছেন না।
বাড়তি দাম যোগ করে বাজারে এখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৭৫ টাকা। আর খোলা সয়াবিনের দাম ১৫৭ টাকা। তবে নতুন এ দামের তেল এখনো আসেনি। সরবরাহ সংকটের কারণে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। নতুন করে দাম বাড়ার আগে বোতলজাত সয়াবিন প্রতি লিটার ১৬৭ টাকা ও খোলা সয়াবিনের লিটার ছিল ১৪৯ টাকা।
খুচরা বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট থাকলেও গত সপ্তাহের চেয়ে মসুর ডালের দাম কেজিতে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১৩০ টাকায়। এছাড়া চিনি, আটা ও ময়দাসহ অন্য পণ্যগুলোর দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
দীর্ঘদিন অস্থিতিশীল থাকা পেঁয়াজের বাজারেও স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। কমেছে দামও। এক-দেড় মাস আগে দেশি ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। কেজিতে ৪০ টাকার মতো কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। বাজারে এখন দেশি হাইব্রিড পেঁয়াজের কেজিতে ৩০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। এ ধরনের পেঁয়াজের কেজি মাস দেড়েক আগেও ছিল ১০০ টাকার মতো।
মালিবাগ বাজারের দোকানি আবু খালেক বলেন, নতুন পেঁয়াজ ওঠা শুরু করেছে। পাতা পেঁয়াজও এসেছে। ফলে আগের মজুত পেঁয়াজ বাজারে ছাড়তে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। নতুন পেঁয়াজ পুরোপুরি চলে এলে দাম আরও কমবে।
নিম্নমুখী ধারা দেখা গেছে আলুর বাজারেও। ভারত থেকে আমদানি করা নতুন আলুর দাম ১২০ টাকা থেকে কমে ৭০ টাকায় নেমেছে। এ ধরনের আলুর আধিক্যের কারণে পুরোনো আলুর দামও কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়।
বাজারে শীতের সবজির সরবরাহও বেড়েছে। ফলে কমতে শুরু করেছে সব ধরনের সবজির দাম। সবজির কেজি এখন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে।
শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, সপ্তাহ দুয়েক আগেও যা ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। মুলার কেজি ৪০ থেকে নেমেছে ২০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি শালগম ৪০ থেকে ৫০ ও বেগুন ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আকারভেদে প্রতিটি ফুল ও বাঁধাকপির কিনতে ক্রেতার গুনতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা।
কিছুদিন আগেও আকাশছোঁয়া কাঁচামরিচের দাম কমে তলানিতে নেমেছে। বাজারে এখন প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। গত দুই সপ্তাহ ধরে এ দামেই বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ।
বাজারে মুরগির দামও অপরিবর্তিত দেখা গেছে। গত সপ্তাহের মতো প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৭৫ থেকে ১৮৫ এবং সোনালি জাতের মুরগি ২৭০ থেকে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
খেলাপি ঋণে কঠোর নীতিমালা চায় আইএমএফ
খেলাপি বা ঋণ শ্রেণিকরণ নীতিমালা আরও কঠোর করার কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা নিলে সঙ্গে সঙ্গে সেই ঋণ যেন নিয়মিত দেখাতে না পারে এমন নীতির করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফের মধ্যবর্তী পর্যালোচনা বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে ঋণ শ্রেণীকরণ বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।
চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে বাংলাদেশ চতুর্থ কিস্তির অর্থ পাবে। চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে তৃতীয় কিস্তির পর্যালোচনা করতে আইএমএফের ১০ সদস্যের একটি দল ৪ ডিসেম্বর ঢাকায় এসেছে। দলটি বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে দুই সপ্তাহ ধরে বৈঠক করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা নেওয়ার পর ব্যাংকগুলো ওই ঋণ সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত দেখায়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চর্চা অনুসরণ করা হচ্ছে না। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে বলেছে আইএমএফ।
ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা নিলেও ওই ঋণ তিন মাসের আগে নিয়মিত দেখাতে পারবে না। এই তিন মাস যদি গ্রাহক ঠিক মতো ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে তাহলে ঋণ নিয়মিত দেখাতে পারবে। তবে দেশের ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার সঙ্গে সঙ্গে ঋণটি নিয়মিত দেখাচ্ছে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ শ্রেণীকরণ নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত নীতিমালার প্রশংসা করেছে সংস্থাটি। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কোনো ঋণ পরিশোধ না করলে তা মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে গণ্য হবে। এরপর অনাদায়ি হিসেবে ওই ঋণ ৯০ দিন অতিক্রম করলে খেলাপি হয়ে যাবে।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণসংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত করে। পাশাপাশি আগামী বছরের জুনে এই নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিবেদন তৈরিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো তিন মাস ভিত্তিতে ঋণের মানসংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে, ফলে এপ্রিল মাস থেকে এই নীতিমালা কার্যকর হবে।
এই নীতিমালার ফলে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি রেকর্ড ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এক বৈঠকে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে ডলারের দামের ওঠানামা চেয়েছিল আইএমএফ।
এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, সাধারণত মুদ্রার বিনিময় হার যেভাবে ওঠানামা করার কথা, সেভাবে করছে না। এই বাস্তবতায় মানুষের মধ্যে ডলার ধরে রাখার প্রবণতা তৈরি হতে পারে। প্রভাব পড়তে পারে বাজারে ডলারের সরবরাহে। সে জন্য ক্রলিং পেগের কথা বলেছে আইএমএফ।
এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটিও বিনিময় হারের ক্রলিং পেগ ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে সম্পূর্ণভাবে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করা, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে তা আধুনিক করা এবং আমদানির ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ অবশিষ্ট থাকলে তা তুলে নেওয়ার জন্যও পরামর্শ দিয়েছেন।
আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। এখন পর্যন্ত তিন কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। গত ডিসেম্বরে পেয়েছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর গত জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে। তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ঋণের বাকি প্রায় ২৩৯ কোটি ডলার পাওয়া যাবে চার কিস্তিতে, যার এক কিস্তি পাওয়া যেতে পারে চলতি ডিসেম্বরে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বাড়লো ১০ হাজার কোটি টাকা
মোবাইল সেবা গ্রহণের মাধ্যমে আর্থিত লেনদেনের ও গ্রাহকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইল ফোনে ঘরে বসে খোলা যাচ্ছে হিসাব। ফলে শহর থেকে গ্রামে বাড়ছে লেনদেনের সুবিধা। পাশপাশি কেনাকাটা, বিল পরিশোধ, ঋণ নেওয়াসহ যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নানা পরিষেবা। বিদেশ থেকে আসছে রেমিট্যান্স। তাতে বিকাশ, রকেট, নগদের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবার (এমএফএস) ওপর মানুষের আগ্রহের পাশাপাশি বাড়ছে নির্ভরশীলতা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, গত অক্টোবর মাসে একক মাস হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। গত জুনে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। এটি ছিল একক মাসের হিসাবে সবচেয়ে বেশি। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে মোবাইলে আর্থিক লেনদেন বেড়েছে আরও বেশি। এ মাসে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা একক মাসের হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন।
এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৯ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আগস্ট মাসে লেনদেনের অংক ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১ লাখ ২২ হাজার ৯২২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।
দেশে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবার যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের ৩১ মার্চ। বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের (রকেট) মাধ্যমে প্রথম এ সেবা চালু হয়। পরে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমএফএস সেবা চালু করে বিকাশ। পরবর্তী সময়ে আরও অনেক ব্যাংক এ সেবা এনেছে। বর্তমানে বিকাশ, রকেটের পাশাপাশি রয়েছে মাই ক্যাশ, এম ক্যাশ, উপায়, শিওর ক্যাশ ইত্যাদি। এর বাইরে ডাক বিভাগের নগদও দিচ্ছে এ সেবা।
এখন মোবাইল ব্যাংকিং শুধু টাকা পাঠানোর পাশাপাশি সব ধরনের লেনদেনে, বিশেষ করে পরিষেবা বিল পরিশোধ, স্কুলের বেতন, কেনাকাটা, সরকারি ভাতা, টিকিট ক্রয়, বিমার প্রিমিয়াম পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ ও অনুদান প্রদানের অন্যতম মাধ্যম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে মোবাইলে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ৩০ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। এপ্রিল ও মে মাসে লেনদেন হয় যথাক্রমে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯২৯ কোটি ও ১ লাখ ৪০ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা।
গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে লেনদেন ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা; নভেম্বরে হয়েছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা। অক্টোবরে ১ লাখ ২০ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়। সেপ্টেম্বরে ১ লাখ ৮ হাজার ৩৭৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা, আগস্টে লেনদেন হয় ১ লাখ ৯ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ চার মাসেই (মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুন) মোবাইলে লাখ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম মাস জুলাইয়ে তা কমে লাখ কোটি টাকার নিচে, ৯৮ হাজার ৩০৬ কোটি টাকায় নেমে আসে। এরপর থেকে প্রতি মাসেই লাখ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে এ মাধ্যমে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মোবাইলে লেনদেন হয়েছিল ৩২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। দেশে মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএস ব্যবহার দ্রুত গতিতে বাড়ছে।
চালুর পর থেকেই বেড়েই চলেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মোট গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৬৮। চলতি বছরের অক্টোবরে সেই গ্রাহক সাড়ে তিন গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪ হাজার ৭১৩-তে। আগের মাস সেপ্টেম্বরে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৩৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫২৩।