ব্যাংক
ঢাকা ব্যাংকের এমডি এমরানুল হক আর নেই
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমরানুল হক মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্যাংকটির একজন কর্মকর্তা।
জানা যায়, এমরানুল হক ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর।
এমরানুল হক দেশে ও বিদেশে তিন দশকের বেশি সময় ব্যাংকিং খাতে কাজ করেছেন। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এ ব্যাংকার ১৯৮৬ সালে ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনালের (বিসিসিআই) ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। তিনি ১৯৯৮ সালে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডে যোগ দেওয়ার আগে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড এবং ক্রেডিট আফ্রিকা ব্যাংক লিমিটেড, জাম্বিয়ায় বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা ব্যাংকের সঙ্গে দীর্ঘ পথপরিক্রমায় তিনি উপব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (বিজনেস ব্যাংকিং) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ করপোরেট শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এ ছাড়াও এই ব্যাংকার যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, হংকং, পাকিস্তানসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নেন। তিনি একজন সার্টিফায়েড করপোরেট ব্যাংকার এবং আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্টের ফেলো। এ ছাড়াও তিনি ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের (আইসিসি) ব্যাংকিং টেকনিক অ্যান্ড প্র্যাকটিস সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনায় স্নাতক (সম্মান) এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
আজ থেকে উত্তোলন করা যাবে যেকোন অংকের নগদ টাকা
ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তোলার সীমা তুলে নিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ রবিবার থেকে চেকের মাধ্যমে যে কোনো ব্যাংক থেকে প্রয়োজন মতো নগদ টাকা তুলতে পারবেন গ্রাহক।
গতকাল শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ব্যাংকগুলোকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) থেকে ব্যাংক হিসাবের টাকা তোলার কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না। যে কোনো পরিমাণ টাকা গ্রাহক তার নিজ হিসাব থেকে তুলতে পারবেন।
এর আগের সপ্তাহে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা তোলার সুযোগ ছিল। তার আগের সপ্তাহে ছিল সর্বোচ্চ চার লাখ, এর আগে তিন লাখ এবং প্রথমে ছিল দুই লাখ টাকা উত্তোলনের সুযোগ।
অভিযোগ ছিল বিদায়ী সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট বিতর্কিত ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতারা বেশি বেশি টাকা তুলে নিচ্ছেন। অবৈধভাবে অর্জিত টাকা যেন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে ব্যবহার না হতে পরে, সে কারণে টাকা তোলার সীমা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর প্রতি সপ্তাহে নগদ উত্তোলনের সীমা কিছুটা বাড়ানো হয়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ব্যাংক
নগদ টাকা উত্তোলনের সীমা তুলে দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক হিসাব থেকে নগদ টাকা উত্তোলনের উপর বাংলাদেশ ব্যাংক এতদিন যে সীমা আরোপ করেছিল, তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে গ্রাহকরা যে কোনো পরিমাণ অর্থ নগদ উত্তোলন করতে পারবেন।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এক ক্ষুদে বার্তায় তিনি জানান, আগামী রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) থেকে ব্যাংক হিসাবের নগদ টাকা উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা আর প্রযোজ্য হবে না। ফলে যে কেউ যে কোনো অঙ্কের টাকা নিজ নিজ হিসাব থেকে তুলতে পারবেন। এর আগে, দেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পরিস্থিতিতে কয়েক সপ্তাহ ধরেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি এ রকম নির্দেশনা জারি করে।
গত সপ্তাহে ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত তুলতে পেরেছেন গ্রাহকরা।
এর আগের সপ্তাহে চার লাখ টাকা পর্যন্ত তোলা যেত। তার আগের সপ্তাহে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা উত্তোলনের সুযোগ ছিল। একইভাবে তার আগের দুই সপ্তাহে যথাক্রমে সর্বোচ্চ দুই লাখ এক লাখ টাকা করে উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ চার সপ্তাহ ধরে টাকা তোলার সীমা এক লাখ করে বাড়ানো হচ্ছে।
৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা শুরু হলেও এখনো নগদ টাকা পরিবহনে নিরাপত্তা শঙ্কা আছে। এ ছাড়া অনেকেই ব্যাংক থেকে বেশি নগদ টাকা তুলে ব্যাংক খাতকে অস্থিতিশীল করতে পারেন, এমন আশঙ্কাও করা হয়েছে। সে জন্য ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের সীমা আরোপ করা হয়।
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের সীমা আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ধীরে ধীরে নগদ টাকা উত্তোলনের সীমা বাড়ানো হচ্ছিলো। এবার তা পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হলো।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুঁজিবাজার
তদন্তের জেরে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের তোপের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসির এক তদন্তে গিয়ে শাস্তির মুখে পড়েন বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ন-পরিচালক কামাল হাসান শিশির। তদন্তে ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান পারভেজ তমালসহ ব্যাংকিং ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজনের আর্থিক অনিয়ম, ভুয়া ঋণ, অর্থের বিনিময়ে শতাধিক নিয়োগের অবিশ্বাস্য সব নজির উঠে আসে তদন্তে। তবে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের তোপের মুখে সাবেক ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমানের পছন্দসই প্রতিবেদন করিয়ে নিতে দিনের পর দিন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তা শিশিরসহ তার তদন্ত দল। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ন-পরিচালক এসব বিষয়ে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তোলেন। গত ৬ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুটি স্ট্যাটাসে এসব তথ্য শেয়ার করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এ কর্মকর্তা।
ব্যাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা শিশির ও তার দুই সহকর্মীর তদন্তে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের আর্থিক অনিয়ম, ভুয়া ঋণ, অর্থের বিনিময়ে শতাধিক নিয়োগ, চেয়ারম্যানের নিজের প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যাংকের ব্যবসাসহ অবিশ্বাস্য সব নজির উঠে আসে। তদন্তে এমন বিষ্ময়কর সব দূর্নীতির তথ্য উদঘাটনের পরেও প্রতিবেদন নিজেদের পক্ষে নিতে বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখান। তদন্ত রিপোর্ট পারভেজ তমালের পক্ষে না করায় সাবেক ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান অকথ্য ভাষায় বাবা-মা তুলে গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে টিমের দুজন তার পছন্দের রিপোর্টে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা শিশির সম্মত না হওয়ায় তার ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়।
এবিষয়ে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ন-পরিচালক কামাল হাসান শিশির অর্থসংবাদকে বলেন, এনআরবিসি ব্যাংকের তদন্তে বিষ্ময়কর সব দূর্নীতির তথ্য উঠে এসেছিলো। তদন্ত প্রতিবেদন সুপারিশসহ বিআরপিডিতে পাঠিয়ে ছিলাম, তবে দুঃখের বিষয় সেই তদন্ত রিপোর্ট আর আলোর মুখ দেখেনি। রিপোর্টটাতে আমাদের অনেক পর্যবেক্ষণ-অনুসন্ধানে ভয়াবহ তথ্য পাওয়া যায়। এটাকে পুরোপুরি নখদন্তহীন ভাবে অনুমোদন করা হয়েছে। এটা পরবর্তীতে দুদক, বিআরপিডিতে গিয়েছে তবে কোনো দিক থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত ব্যাংকটিতে দুর্নীতিগ্রস্ত পর্ষদ এখনোও বহাল রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে অনেকেই বাণিজ্য করেছে। তৎকালীন ইডি-১ হুমায়ুন কবির এখন এনআরবিসি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে চাকরি বাগিয়ে নেয়। তিনি এই রিপোর্ট বিক্রি করে এনআরবিসি ব্যাংকে চাকরি নিয়েছেন, এমনকি ওনার মেয়েকেও চাকরি দিয়েছেন। তবে এটার কারণে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তা শিশির অর্থসংবাদকে বলেন, এনআরবিসি ব্যাংকের এ তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে অনেকের বাণিজ্য সফল হয়েও আমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের তোপের মুখে সাবেক ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমানের পছন্দসই প্রতিবেদন করিয়ে নিতে ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়েছি। ২০২১ সালে বেস্ট এমপ্লয়িজ অ্যাওয়ার্ডের জন্য বিভাগের মনোনয়ন পাওয়া সত্ত্বেও কাজী ছাইদুর রহমানকে তুষ্ট না করার অপরাধে প্রথমবারের মতো শাস্তিমূলক বার্ষিক মূল্যায়ন রিপোর্ট পাই। আমার ১৩ বছরের ব্যাংকিং জীবনে সবচেয়ে খারাপ রিপোর্ট পাই ঐ বছরেই।
এবিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হককে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে কোনো মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে জানতে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমালের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে মন্তব্য জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমানকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। ফলে কোনো মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তা শিশির প্রথম স্ট্যাটাসে লেখেন, এনআরবিসি ব্যাংকে একটা ইন্সপেকশনের সূত্রে ব্যাংক লুটেরাদের বিশাল সিন্ডিকেটের বিরাগভাজন হয়েছি আমিসহ আমার টিম মেটরা। রিজার্ভ খেকো ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদূর রহমান তার পছন্দসই রিপোর্ট করিয়ে নিতে দিনের পর দিন নির্যাতন করেছেন আমাকে। রুমে ডেকে নিয়ে সাবেক ইডি হাবিবুর রহমান স্যার এবং আমার টিমমেটদের উপস্থিতিতে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন কয়েকবার। আমার পরিবার এবং বাবা মা তুলে নোংরা কথা বলেছেন। এক পর্যায়ে আমার বাকি দুজন টিমমেট তার পছন্দের রিপোর্টে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হলেও আমি সম্মত না হওয়ায় তার ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়েছি।
‘আমার কাছ থেকে পছন্দসই রিপোর্ট করিয়ে নিতে না পারায় ২ জন ইডি এবং ২ জন জিএমকে ডিপার্টমেন্ট থেকে বদলি করিয়েছেন। আমাদের টিমের কাছ থেকে সকল নথিপত্র জোর পূর্বক সিজ করিয়েছেন একজন দূর্নীতিবাজ ডিজিএম একেএম নুরুন্নবীকে দিয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন ইন্সপেকশন টিমের কাছ থেকে গায়ের জোরে নথি জব্দ করার অতীতের কোন নজির না থাকলেও কাজী ছাইদুর রহমান এন্ড কোং স্বৈরাচারী স্ট্যাইলে সব অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। নথি জব্দের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে ইমেইল করে অবহিত করা হলেও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে কেউ সাহস করেনি কোন কথা বলার।’
আমার বক্তব্যের সমর্থনে সকল রেকর্ড সংরক্ষিত আছে বলেও জানান শিশির। তিনি আরও লেখেন, শুধু আমার কিংবা আমাদের সাথে নয়, অসংখ্য কর্মকর্তার কাজকে ন্যাক্কারজনকভাবে প্রভাবিত করেছেন দিনের পর দিন। আমি মুখ খুলেছি, অন্যরা হয়তো ভয়ে কথা বলছেন না।
ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমানের ব্যাপারে তিনি আরও লেখেন, কাজী ছাইদুর রহমান সরাসরি এস আলমের ব্যাংকিং এজেন্ট হিসেবে সকল কুকীর্তির পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন দিনের পর দিন। তার ভয়ে তটস্থ হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা কেউ স্বাধীনভাবে কাজ করার সাহস পাননি বিধায় এস আলম গ্রুপ দূর্নীতির ক্লিনশীট পেয়ে এসেছেন।
এদিন সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিটে আরেকটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেন তিনি। সেখানে এনআরবিসি ব্যাংকের লুটপাটের তথ্য, তার ও তার তদন্ত কমিটির দুই সদস্যের কয়েক দফায় নাস্তানাবুদ হওয়ার তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি লেখেন, চারদিকে জাদরেল সব সেনা কর্মকর্তাদের দিয়ে সাজানো এই ব্যাংকটি লুটপাটের দিক থেকে অসাধারণ সব অভিনবত্ব আবিস্কার করেছে। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মাফিয়াদের কাছে ব্যাংকটা সম্পূর্ণ জিম্মি। সেনা কর্মকর্তাদের চোখে চোখ রেখে, মাফিয়াদেরকে ঠান্ডা মাথায় হ্যান্ডেল করে আমরা একের পর এক বিষ্ময়কর সব দূর্নীতির তথ্য উদঘাটন করি। কত ধরনের তথ্য যে পেয়েছিলাম তার মূল্যায়ন হলে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ কমপক্ষে ৫ বার ডিজলভ করা সম্ভব ছিল। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, পারভেজ তমাল এবং বিসেক চেয়ারম্যানের আর্থিক অনিয়ম, ভুয়া ঋণ, অর্থের বিনিময়ে শতাধিক নিয়োগ, চেয়ারম্যানের নিজের প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যাংকের ব্যবসাসহ অবিশ্বাস্য সব নজির পেয়েছি আমরা।
তিনি লেখেন, পারভেজ তমাল তৎকালীন গভর্নর ফজলে কবিরের রুমে বসে তাকে বাধ্য করেন আমাদের ইন্সপেকশন বন্ধ করে দিতে। ফ্রন্টলাইনে সেই একই ব্যক্তি, ছাইদুর রহমান। কেন আমরা এতকিছু ঘাটাঘাটি করছি তার জন্য আমাকেসহ পুরো টিমকে নাস্তানাবুদ করেন কয়েক দফায়। কাজী ছাইদুর রহমানের ব্যাচমেট তৎকালীন ইডি জনাব হাবিবুর রহমান স্যার সবকিছু জানেন। এই তদন্তকালে হঠাৎ এক সন্ধ্যায় কোন প্রকার কারণ দর্শানো ছাড়াই বিভাগের তৎকালীন ডিজিএম একেএম নুরুন্নবী আমার চেম্বারে রক্ষিত তদন্ত সংশ্লিষ্ট সকল নথি সিজ করেন। তিনি আমাকে জানান উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিনি সকল নথিপত্র জোরপূর্বক দখল করেছেন কারন আমার কাছে নাকি তথ্যের নিরাপত্তা নেই। ডিবি হারুনের মতো নিরাপত্তা দেয়ার অজুহাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের চিন্হিত দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা জনাব নুরুন্নবী সিজকৃত ডকুমেন্টস আর কখনো ফেরত দেননি। তার কারনে সাকিব আল হাসানের দূর্নীতির তথ্যসহ অন্যান্য তথ্যগুলো আর আলোর মুখ দেখেনি।
ডকুমেন্টস দখল করার ঘটনাটা আমি আমার টিমসহ লাইনের সকল উর্ধতন কর্মকর্তাকে ইমেইল করে অবহিত করি। এই বিষয়ে করা আমাদের ইমেইল অভিযোগটি এখনও ডিপার্টমেন্টে পেন্ডিং আছে। নুরুন্নবী বহুবারই বিষয়টা সলভ করার চেষ্টা করলেও তার পাপ মোচনের সুযোগ তাকে দেয়া হয়নি।
‘উক্ত তদন্ত প্রতিবেদনে আমাদের প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত কেটেকুটে নখদন্তহীন একটা রিপোর্ট করিয়ে নিতে কাজী ছাইদুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ব্যাপক তৎপরতা দেখান। আমাদের রিপোর্টের সারবস্তু এতটাই ব্রিলিয়ান্ট ছিল যে এই রিপোর্ট বিক্রি করে তৎকালীন ইডি -১ হুমায়ুন কবির তার পিআরএল সমাপ্তির আগেই এনআরবিসিতে চাকরি বাগিয়ে নেন। পরবর্তীতে আমাদের তদন্তদলের বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের লিখিত অভিযোগ আসে। আমরাও শুনেছি এনআরবিসি চেয়ারম্যান ২ কোটি টাকায় বিষয়গুলো সেটেল করেছেন। ফিগার ঠিকঠাক মিলে গেলেও কর্তৃপক্ষকে বারংবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও আমাদের বিরুদ্ধে আনা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগটি নিয়ে তদন্ত করা হয়নি। আমরা এতবার অনুরোধ করেও আমাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কর্তৃপক্ষকে রাজি করাতে না পারাটা রহস্যময়। কে পেল তাহলে এই দুই কোটি টাকা?’
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা শিশির আরও লেখেন, ২০২১ সালে বেস্ট এমপ্লয়িজ অ্যাওয়ার্ডের জন্য বিভাগের মনোনয়ন পাওয়া সত্ত্বেও ছাইদুর রহমানকে তুষ্ট না করার অপরাধে আমার ১৩ বছরের ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো শাস্তিমূলক বার্ষিক মূল্যায়ন রিপোর্ট পাই। একই বছর একই বিভাগের বেস্ট এমপ্লয়ি নমিনেশন এবং ভেরি গুড পিএমএস পাওয়া কি একটু ইন্টারেস্টিং না? জ্বি, কাজী সাহেবের মনোরঞ্জন না করার রিওয়ার্ড একটু ইন্টারেস্টিং ই বটে!
এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ব্যাংক
ইসলামী ব্যাংকে ব্যবসা পরিচালনা ও এলসি খোলায় বাধা নেই: গভর্নর
ইসলামী ব্যাংকে এখন থেকে ব্যবসা পরিচালনা ও লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে আর কোনও বিধিনিষেধ থাকবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ইসলামী ব্যাংকের নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বৈঠকে গভর্নর ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাবের দৈনিক ইতিবাচক ব্যালেন্স নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘শিগগিরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করা হবে।’
আমানতকারীদের উদ্দেশ্যে গভর্নর বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকে গ্রাহকদের আমানত নিরাপদ। ইসলামী ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল গ্রাহকদের চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট। তবে প্রয়োজনে তারল্য সহায়তার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে।’
সভা শেষে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের নিয়মিত ব্যবসায়িক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক গভর্নরের কাছে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ উপস্থাপন করা হয়েছ। ব্যাংকের পারফরম্যান্স ও ব্যবসায়িক সাফল্যের মাধ্যমে কোটি কোটি গ্রাহকের আস্থার কারণে ইসলামী ব্যাংক দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াবে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
১০ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি সাড়ে ৩১ হাজার কোটি টাকা
বিতরণ করা ঋণের গুণমান বিবেচনায় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) হিসেবে জমা রাখতে হয় ব্যাংকগুলোকে। তবে চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে ১০টি ব্যাংক প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ এসব ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৫৪৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর ভঙ্গুর আর্থিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি উঠে এসেছে।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। আর বেসরকারি খাতের মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক এবং আইএফআইসি ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বেসরকারি খাতের নানা সমস্যায় জর্জরিত ন্যাশনাল ব্যাংক সবচেয়ে বেশি প্রভিশন ঘাটতির মুখে পড়েছে। ব্যাংকটির প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৭০৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মতে, ব্যাংকগুলোকে পরিচালন মুনাফার ০.৫ থেকে ৫ শতাংশ সাধারণ ক্যাটাগরির ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে রাখতে হয়। আর নিম্নমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ। কোনো সন্দেহজনক খেলাপি ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ৫০ শতাংশ। তবে মন্দ বা লোকসান ক্যাটাগরির খেলাপি ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ নিরাপত্তা সঞ্চিতি আলাদা রাখতে হবে।
নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন ঘাটতি ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি অশনি সংকেত। এটি ব্যাংকগুলোর দুর্বল আর্থিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরে। যা মূলত একটি ব্যাংকের উচ্চ খেলাপি ঋণের ফল। জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতের সার্বিক প্রভিশন ঘাটতি ছিল ২৪ হাজার ৮১০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, যা ১০টি ব্যাংকের চেয়ে কম।
খাত সংশ্লিষ্টরা এবিষয়ে বলেন, ব্যাংকের বর্তমান যে অবস্থা তাতে প্রভিশন ঘাটতি হবে। দিন দিন খেলাপি ঋণ বাড়ছে। সম্প্রতি খেলাপি ঋণ ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বেশি, তাই প্রভিশন ঘাটতি বাড়বে। শতভাগ প্রভিশন রাখা দরকার এখানে। প্রভিশন বাড়তে থাকলে ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়বে। প্রভিশন কমাতে হলে আগে খেলাপি ঋণ কমাতে হবে। পাশাপাশি ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যাছাই-বাছাই করে দিতে হবে, যাতে টাকাগুলো আবার ফেরত আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা, যা ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। একই এ সময়ে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা।