পুঁজিবাজার
বেক্সিমকোর শেয়ার কারসাজিতে জড়িত ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান
সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে বেক্সিমকোর শেয়ারে কারসাজির মাধ্যমে চার ব্যক্তি ও চার প্রতিষ্ঠান মিলে গড়ে ওঠা একটি চক্র হাতিয়ে নিয়েছে ৩১৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। একই সময়ে চক্রটি ৫২৬ কোটি টাকা ‘আনরিয়ালাইজড গেইন’ করেছে। বিষয়টি উঠে এসেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) একটি তদন্ত প্রতিবেদনে। তবে ২০২২ সালে এ তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হলেও এতদিন তা ধামাচাপা দিয়ে রাখা ছিল। অভিযোগ রয়েছে, পুজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এবং শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণে প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি বিএসইসি সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।
ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেয়ার কারসাজিকারী চক্রটির চার ব্যক্তি হলেন আব্দুর রউফ, মোসফেকুর রহমান, মারজানা রহমান ও মমতাজুর রহমান এবং প্রতিষ্ঠানটি চারটি হল জুপিটার বিজনেস, অ্যাপোলো ট্রেডিং লিমিটেড, ক্রিসেন্ট লিমিটেড ও ট্রেডনেক্সট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত বেক্সিমকোর শেয়ারের লেনদেন মূল্য ছিল ৪ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে ভিন্ন ভিন্ন ক্লায়েন্ট কোডের মাধ্যমে এর ৭০ শতাংশের বেশি লেনদেন করেছে এই আট বিনিয়োগকারী। এর মাধ্যমে চক্রটি মুনাফা তুলে নিয়েছে ৩১৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আর এ সময় তাদের আনরিয়ালাইজড গেইন (অবিক্রীত শেয়ার কেনা দামের চেয়ে মূল্য বেশি ছিল) ৫২৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
জানা গেছে, ২০২২ সালে জুপিটার বিজনেস ও ট্রেডেনেক্সট ইন্টারন্যাশনাল বিমান প্রতিষ্ঠান ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার অধিগ্রহণের পর পরিচালনা পর্ষদে ঢোকে। দুটি কোম্পানি ফারইস্টের বোর্ডে তাদের প্রতিনিধিত্বের জন্য বেক্সিমকো গ্রুপের সিনিয়র এক্সিকিউটিভদের মনোনীত করে। ট্রেডেনেক্সট ইন্টারন্যাশনাল বেক্সিমকো গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা জামানুল বাহারকে মনোনীত করে। অন্যদিকে জুপিটার বিজনেস বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা আলী নওয়াজ ও বেক্সিমকো টেক্সটাইলের জেনারেল ম্যানেজার মাসুম মিয়ার নাম সুপারিশ করে।
ডিএসইর অনুসন্ধান অনুসারে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ধারা ১৭-এর বেশ কয়েকটি উপধারা লঙ্ঘন করে চক্রটি শেয়ার কারসাজি করেছে। ধারা ১৭ লঙ্ঘন একটি ফৌজদারি অপরাধ। সুবিধাভোগী বিনিয়োগকারী আব্দুর রউফ ছিলেন ইউনাইটেড সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী। অন্যদিকে ক্রিসেন্ট লিমিটেড প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সঙ্গে যুক্ত ছিল। মোসফেকুর রহমান, মমতাজুর রহমান অ্যান্ড দেওয়ার অ্যাসোসিয়েটস জুপিটার বিজনেস, অ্যাপোলো ট্রেডিং, মারজানা রহমান এবং ট্রেডনেক্সট ইন্টারন্যাশনাল জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের বিনিয়োগকারী ছিলেন। এই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কেউ কেউ গ্রিন ডেল্টা সিকিউরিটিজ, বেক্সিমকো সিকিউরিটিজ, শেলটেক ব্রোকারেজ এবং আইসিবি সিকিউরিটিজের সঙ্গে আলাদা বিও অ্যাকাউন্টও রেখেছিলেন। তারা বেক্সিমকো শেয়ারে সার্কুলার লেনদেন করেছিল, যেখানে কিছু বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করেছে এবং তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যরা ভুয়া সক্রিয় ট্রেডিং দেখাতে একাধিক লেনদেনে এসব শেয়ার কিনেছে।
ডিএসইর অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, ক্রিসেন্ট লিমিটেড বেক্সিমকো শেয়ারের শীর্ষ ক্রেতা ছিল। ক্রিসেন্ট লিমিটেডের পরিচালক ও যুগ্ম অপারেটর আব্দুর রউফ চারটি বিও অ্যাকাউন্ট দিয়ে শেয়ার লেনদেনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। এই ৪টি বিও অ্যাকাউন্টের মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৩.২৫ শতাংশ। জুপিটার বিজনেস লিমিটেড দ্বিতীয় শীর্ষ ক্রেতা ছিল। মোসফেকুর রহমান সক্রিয়ভাবে সাতটি বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ব্যবসায় অংশ নেন। আট বিনিয়োগকারীর গ্রুপ যৌথভাবে বেক্সিমকো শেয়ারের ২৪.৬১ শতাংশ লেনদেন করেছে।
একই ব্যক্তিরাই শীর্ষ বিক্রেতাদের মধ্যেও ছিলেন। একদিকে তারা শেয়ার কিনেছেন, অন্যদিকে সেগুলো বিক্রিও করেছেন। এসব কিছু করা হয়েছে স্রেফ স্টকটিকে সক্রিয় দেখানোর জন্য।
এদিকে সিকিউরিটিজ বিধি লঙ্ঘন ও কারসাজির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ থাকা আব্দুর রউফ নিজেকে বেক্সিমকো গ্রুপের একজন কর্মচারী এবং গ্রুপের ইনস্যুরেন্স কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন বলে দাবি করেন। শেয়ার কারচুপির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। শুধু কম্পানির লোকেরাই এ বিষয়ে আরো তথ্য দিতে পারবে।’
কোম্পানির নামে খোলা বিও হিসাব অনুযায়ী আব্দুর রউফকে ক্রিসেন্ট লিমিটেডের যুগ্ম পরিচালক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় কিছু নথিতে আমার স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে, তবে আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।
ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বেক্সিমকো শেয়ার কারসাজি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ধারা ১৭-এর বেশ কয়েকটি উপধারা লঙ্ঘন করেছে। ধারা ১৭ লঙ্ঘন অনুযায়ী এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ।
এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুঁজিবাজার
সিলকো ফার্মার আয় বেড়েছে ৫৪ শতাংশ
গত ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সিলকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর তা প্রকাশ করা হয়।
কোম্পানি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১৭ পয়সা। গত বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি ১১ পয়সা আয় হয়েছিল। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কোম্পানিটির আয় বেড়েছে ৫৪ শতাংশ।
সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ২২ টাকা ৮৪ পয়সা।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুঁজিবাজার
লোকসানে এনার্জিপ্যাক, দেবে না লভ্যাংশ
গত ৩০ জুন, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য ঘোষণা করেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন পিএলসি। আলোচ্য বছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোন লভ্যাংশ দেবে না।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর লভ্যাংশ সংক্রান্ত এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কোম্পানি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৫ টাকা ১৮ পয়সা। আগের বছর শেয়ার প্রতি ৭৫ পয়সা আয় হয়েছিল।
গত ৩০ জুন, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছর শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য ছিল ৩৭ টাকা ৪৫ পয়সা।
লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য অনুমোদনের জন্য আগামী ২২ ডিসেম্বর কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৫ ডিসেম্বর।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুঁজিবাজার
এসকে ট্রিমসের লভ্যাংশ ঘোষণা
গত ৩০ জুন, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। আলোচ্য বছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার প্রতি পৌনে ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেবে।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর লভ্যাংশ সংক্রান্ত এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কোম্পানি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫৪ পয়সা। আগের বছর শেয়ার প্রতি ৯৪ পয়সা আয় হয়েছিল।
গত ৩০ জুন, ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছর শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য ছিল ১৬ টাকা ৬৫ পয়সা।
ঘোষিত লভ্যাংশ অনুমোদনের জন্য আগামী ২৯ ডিসেম্বর কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১২ ডিসেম্বর।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুঁজিবাজার
গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালের ক্যাটাগরি পরিবর্তন নিয়ে ডিএসইর নয়-ছয়!
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেডের ক্যাটাগরি পরিবর্তন নিয়ে ঢাকা স্টক একচেঞ্জের (ডিএসই) বিরুদ্ধে দেরি করার অভিযোগ উঠেছে। লেনদেনের শুরুতে কোন কোম্পানির ক্যাটাগরি পরিবর্তনের তথ্য জানানোর নিয়ম থাকলেও এ ক্ষেত্রে লেনদেনের সময় শেষে জানানো হয়। এতে লেনদেনের শুরুতে আগের ক্যাটাগরি বহাল থাকায় কারসাজিতে ডিএসইর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যোগসাজসের অভিযোগ তুলেছেন বিনিয়োগকারীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, ওষুধ ও রসায়ন খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেডের গতকাল (২০ নভেম্বর) পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সর্বশেষ হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কোম্পানিটি।
এদিকে আজ লেনদেনের শুরুতে ডিএসই ওয়েবসাইটে কোম্পানিটির লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করে ডিএসই। তবে লভ্যাংশ না দেওয়ায় কোম্পানিটিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের সংবাদটি ট্রেডিং আওয়ার বা লেনদেনের সময় শেষে প্রকাশ করা হয়। তাতে কোন লভ্যাংশ না ঘোষণা করেও গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালসের শেয়ার পুরো কার্যদিবস ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে লেনদেন করেছে। ডিএসইর এমন হঠকারী কর্মকাণ্ডে যোগসাজস ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তবে এ ঘটনাই প্রথম নয়, সম্প্রতি আরেকটি কোম্পানির শেয়ারের ক্যাটাগরি পরিবর্তন নিয়েও বিতর্ক তৈরি করেছে ডিএসই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর জনসংযোগ কর্মকর্তা শফিকুর রহমান মুঠোফোনে অর্থসংবাদকে বলেন, গতকালকে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলেও এটা আমাদের আইটি সফটওয়্যারে একদিন আগে ইনপুট দিয়ে ট্রেড চালাতে হয়। অথবা এ সংবাদটা অফিস আওয়ারের পরে আসছে বিধায় এ তথ্যটা পরে প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে ডিএসই একদিন পরে আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য ট্রেডিং আওয়ারের শুরুতে জানাতে পারলেও ক্যাটাগরি পরিবর্তন নিয়ে কেন গড়িমসি করেন এবং কেন লেনদেন শেষ হওয়ার পরে কেন ক্যাটাগরি পরিবর্তনের খবর প্রকাশ করে থাকেন- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ, লেনদেনের শুরুতে কোম্পানিটির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত না হলে সেখানে কারসাজির আশঙ্কা থাকে।
বিএসইসির সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ এর ১৭ ধারা অনুযায়ী, কোন কোম্পানি পরপর দুই বছর লভ্যাংশ না দিলে সেসব কোম্পানিকে দ্রুতই ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করতে হবে। কিন্তু গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস লিমিটেড টানা দুই বছর লভ্যাংশ না দেওয়ার পরেও তাদের ক্যাটাগরি পরিবর্তনের সংবাদ ট্রেডিং আওয়ারের পরে প্রকাশ করা হয়। এতে ডিএসইর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির এক ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত কোন কোম্পানি আগের দিন ডিএসই কর্মঘণ্টার মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করলে ওদিন ক্যাটাগরি পরিবর্তনের তথ্য জানানো যায়। কিন্তু ট্রেডিং আওয়ারের পরে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলে তা পরেরদিন লেনদেনের শেষে ক্যাটাগরি পরিবর্তনের সংবাদ প্রকাশ করা হয়। প্রযুক্তিগত কারণে সকালে কোম্পানিটির ক্যাটাগরি পরিবর্তন করা যায় না। তবে এখানেও আইনের ফাঁকফোকর রয়েছে।
এদিকে বিএসইসির নিয়ম অনুযায়ী, কোন কোম্পানির বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের দিন লেনদেনের ক্ষেত্রে শেয়ারের দামে সার্কিট ব্রেকারের সীমা আরোপিত হয় না। তাতে কোম্পানিটির শেয়ারদর স্বাভাবিক নিয়মের চেয়ে বেশি বাড়তে বা কমতে পারে। দুর্বল কোম্পানির ক্ষেত্রে এ সুযোগটাই ব্যবহার করে থাকেন কারসাজি চক্র।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষণায় আজ লেনদেনের শুরুতে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালের শেয়ারের দাম কমে ২০ টাকা ৪০ পয়সায় দাঁড়ায়। তবে লেনদেন শুরুর দেড় ঘণ্টা পার হতেই এর দাম বাড়তে শুরু করে। তাতে লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ২৪ শতাংশ।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালের আজকের দরবৃদ্ধিতেও কারসাজি চক্রের হাত থাকতে পারে। কারণ টানা লভ্যাংশ না দেওয়ার পরেও কোনো কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধি অস্বাভাবিক বিষয়। তবে লেনদেনের শুরুতে কোম্পানিটির ক্যাটাগরি পরিবর্তনের সংবাদটি ডিএসই প্রকাশ করলে শেয়ারদর হয়তো এতটা বাড়তো না। একইসঙ্গে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত হলে শেয়ার কেনাবেচায় কিছু সুবিধা হারাতো কারসাজি চক্র।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুঁজিবাজার
পুঁজিবাজারে লুটেরাদের অর্থ আত্মসাতের তদন্ত চেয়ে দুদকে চিঠি বিনিয়োগকারীদের
দেশের পুঁজিবাজারে গত ৯০ দশক থেকে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এসব কাজে বিএসইসি, ডিএসই এবং চিহ্নিত মাফিয়া চক্র জড়িত ছিলো বলে অভিযোগ তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা। এসব চক্রের সদস্যদের পরিচয় এবং বিএসইসি, ডিএসইর কর্মকর্তাদের পরিচয়ও তুলে ধরেছেন তারা। লুটপাটে অংশ নেওয়া এসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিনিয়োগকারীদের পক্ষে হেলাল উদ্দিন আকন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দুদকে পাঠানো হয়।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে গত নব্বই দশক থেকে চলতি বছর পর্যন্ত যে সকল মাফিয়া পুঁজিবাজারকে কুক্ষিগত করে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেছে,তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করছি। বিগত ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে ব্যবহার করে হাজার-হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে ফ্যাসিষ্ট সরকারের বিশ্বস্ত কিছু মাফিয়া চক্র এবং সরকারি সংস্থা। যারা বিএসইসি ও ডিএসইকে ব্যবহার করে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সর্বশান্ত করে, আইনের তকমা লাগিয়ে বিভ্রান্ত করে রেখেছিলো। ফলে বিএসইসি ও ডিএসই বিনিয়োগকারীদের আস্থার স্থান না হয়ে উল্টো অবৈধ কমিশন বাণিজ্য এবং চাঁদাবাজির সাথে জড়িত হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বিএসইসি ও ডিএসইর কর্মকর্তারা সরাসরি বাজারের মাফিয়া এবং জুয়ারিদের সাথে চুক্তিবদ্ধ। বাজারের দুর্বল, বন্ধ কোম্পানিগুলোকে এনে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে উচ্চ মূল্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীকে শেয়ার গছিয়ে দিয়েছে এবং হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যা বর্তমানেও চলমান রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা লুটেরা চক্রের কিছু সদস্যের নামও চিঠিতে তুলে ধরেছেন। এদের মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানকে চক্রের মূল হোতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া বে লিজিং সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, রেইজ মিচুয়াল ফান্ডের নাফিজ শারাফাত, ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসান রাজা, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান, সোনালী পেপারের চেয়ারম্যান মো. ইউনুস, ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়েদুল করিম, বিকন ফার্মার চেয়ারম্যান এবাদুল করিম, এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির, রেইজ মিচুয়াল ফান্ডের হাসান ইমাম, ইউনাইটেড সিকিরিটিজের পরিচালক রাজিব আল মামুন, সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাদেক হোসেন, ইস্টার্ন ব্যাংক সিকিরিটিজের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুর রহমান, সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক সিনিয়র এক্সকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়ারেস উল মতিন, সাউথইস্ট ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাশেদুল ইসলাম, সাউথইস্ট ব্যাংকের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট জেসমিন সুলতানা লাকী, সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটালের সিনিয়র অ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজীব আহমেদ, সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটালের এমডি মো. আবু বকর , শাকিল রিজভী স্টকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী, এস এস স্টিলের চেয়ারম্যান জাভেদ অপেনহেগেন, ডিএসইর সাবেক পরিচালক আহমেদ রশিদ লালী, লংকা বাংলা ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী, শেলটেক ব্রোকারেজের চেয়ারম্যান ও একজন পরিচালক এবং সমবায় মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি রেজিস্টার আবুল খায়ের হিরুকে মাফিয়া চক্রের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটালের কয়েজন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়।
লুটেরা চক্রকে খোদ বিএসইসির কর্মকর্তারা সহায়তা করতেন বলেও চিঠিতে জানানো হয়। যাদের মাধ্যমে চক্রটি দুর্বল কোম্পানির শেয়ার কারসাজি করে উচ্চমূল্যে লেনদেন করতো। এতে পুঁজি হারাতো সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। চক্রটিকে সহায়তা করার অভিযোগ বিএসইসির সাবেক দুই চেয়ারম্যানসহ সাবেক কমিশনার ও বর্তমান কমিশনার এবং নির্বাহী পরিচালকদের বিরুদ্ধে।
বিএসইসির পাশাপাশি ডিএসইর ৭ কর্মকর্তাও লুটপাটে অংশ নিয়েছিলেন বলে চিঠিতে বলা হয়। এসব কর্মকর্তারা হলেন- ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, চিফ রেগুলারিটি অফিসার খায়রুল বাশার আবু তাহের, মনিটরিং বিভাগের ম্যানেজার ইকরাম হোসেন, অ্যাসিস্টেন্ট জেনারেল ম্যানেজার বজলুর রহমান, সিনিয়র এক্সকিউটিভ জাকির হোসেন, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক এবং ম্যানেজার ফাহমিদা খাতুন।
বিনিয়োাগকারীরা চিঠিতে জানায়, বিগত সরকারের প্রভাব খাটিয়ে এবং বিএসইসি-ডিএসই কর্মকর্তাদের সহায়তায় এ লুটেরা চক্র শেয়ারবাজারে ১৩০টি দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্ত করেছে। আবার এসব কোম্পানির শেয়ার অভিনব কারসাজির মাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে তারা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া ব্রোকারেজ হাউস থেকে এ চক্র সাপ্তাহিক চাঁদা উত্তোলন করতো বলে জানানো হয়। কোন প্রতিষ্ঠান চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করে হেনস্তা করা হতো। পাশাপাশি কারসাজিতে শেয়ারদর বৃদ্ধিতে এ চক্র ছিলো বেশ সক্রিয়। নিজেদের চাওয়া চাহিদামতো তারা নির্দিষ্ট কোম্পানির দাম বাড়ানোর ইন্ধন দিতো। শেয়ারবাজারকে অস্থিতিশীল করে তোলা এ চক্র ও বিএসইসি-ডিএসই কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ করে চিঠিতে তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের তদন্ত অনুসন্ধানের আবেদন জানানো হয়।
এমআই