আন্তর্জাতিক
আফ্রিকায় বাণিজ্য সম্প্রসারণে ব্যস্ত চীন

আফ্রিকার সঙ্গে চীনের বাণিজ্য চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে বেড়েছে। চীনের সাধারণ শুল্ক প্রশাসনের (জিএসি) প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, এ সময় আফ্রিকার সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ ১ দশমিক ১৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে (প্রায় ১৬৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) উন্নীত হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়সীমার তুলনায় ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। খবর আফ্রিকা নিউজ।
এর আগে ২০২৩ সালে চীন-আফ্রিকা বাণিজ্য ২৮২ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেকর্ড তৈরি করেছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। ফলে ধারাবাহিকভাবে অঞ্চল দুটির মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ছে।
২০২৩ সালে চীনে আফ্রিকা থেকে বাদাম আমদানি আগের বছরের তুলনায় ১৩০ শতাংশ বেড়েছিল। একই বছর সবজি ৩২ শতাংশ, ফুল ১৪ শতাংশ ও ফল আমদানি ৭ শতাংশ বেড়ে যায়।
অন্যদিকে আফ্রিকায় চীনের পরিবেশবান্ধব গাড়ি রফতানি বেড়েছে ২৯১ শতাংশ। এছাড়া লিথিয়াম ব্যাটারি ১০৯ শতাংশ ও সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের সরঞ্জাম রফতানি আগের বছরের তুলনায় ৫৭ শতাংশ বাড়ে।
জিএসি জানিয়েছে, চীন ১৫ বছর ধরে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে রয়েছে। অব্যাহতভাবে এ বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ছে।
২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো চীন-আফ্রিকা বাণিজ্য সূচক প্রকাশ করে জিএসি। ওই সূচকে ২০০০ সালের তথ্যকে মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়। ২০০০ সালে সূচক ১০০ পয়েন্ট দিয়ে শুরু হয়ে ২০২২ সালে রেকর্ড ৯৯০ দশমিক ৫৫ পয়েন্টে পৌঁছেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি চীন-আফ্রিকা বাণিজ্যের দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও ইতিবাচক উন্নয়ন নির্দেশ করে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আন্তর্জাতিক
গ্রেপ্তার এড়াতে নেতানিয়াহুর উড়োজাহাজের পথ পরিবর্তন

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ঝুঁকি এড়াতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
গত রোববার স্থানীয় সময়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পা রেখেছেন। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম হারেৎস এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করতে পারে এমন দেশগুলোর আকাশপথ এড়িয়ে চলতে স্বাভাবিক পথের চেয়ে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার বেশি পথ ঘুরেছেন তিনি।
আয়ারল্যান্ড, আইসল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলো তাকে গ্রেপ্তার করতে তাকে বহনকারী বিমানের জরুরি অবতরণ করাতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন ইসরাইলি কর্মকর্তারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা ইঙ্গিত দেয় যে, আন্তর্জাতিক আদালতের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কেবল কাগজে-কলমে নয়, বাস্তব কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা সিদ্ধান্তেও গভীর প্রভাব ফেলে।
এর আগে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে গাজায় যুদ্ধাপরাধের দায়ে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি।
এদিকে, নেতানিয়াহুর হাঙ্গেরি সফরের আগেই ভিক্টর অরবানের সরকার জানায়, তারা “রোম সংবিধি” থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা আইসিসির বিচারিক কাঠামোর ভিত্তি। যদিও সদস্যপদ প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া কার্যকর হতে এক বছর সময় লাগে। হাঙ্গেরির সরকার আগেই স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তারা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে জারি হওয়া পরোয়ানা কার্যকর করবে না।
রবিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছালে নেতানিয়াহু ও তার স্ত্রী সারা নেতানিয়াহুকে স্থানীয় কর্মকর্তারা স্বাগত জানান।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
শুল্ক নিয়ে আলোচনার ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প

শুল্ক নিয়ে অনুরোধ জানানো দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় সোমবার (৭ এপ্রিল) নিজের মালিকানাধীন ট্রুথ সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে এ তথ্য জানান তিনি। এই পোস্টটির মূল বিষয় ছিল চীন।
এতে তিনি চীনকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, যদি তারা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার না করে তাহলে আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে চীনা পণ্যের শুল্ক দাঁড়াবে ১০৪ শতাংশ। সঙ্গে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার কথা বলেছেন তিনি।
নিজের মালিকানাধীন ট্রুথ সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্প লিখেছেন, রেকর্ড পরিমাণ শুল্ক, অ-আর্থিক শুল্ক, অবৈধ ভর্তুকি এবং দীর্ঘমেয়াদি মুদ্রা কারসাজির ওপর গতকাল চীন (যুক্তরাষ্ট্রের ওপর) পাল্টা ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। যদি কোনো দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে তাহলে তাদের ওপর আরও শুল্ক আরোপ করা হবে এমন সতর্কতা দেওয়ার পরও চীন এ কাজ করেছে।
তিনি আরও লিখেছেন, যদি চীন ৮ এপ্রিল ২০২৫ এর মধ্যে বাড়তি ৩৪ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। যা ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। সঙ্গে চীন এ নিয়ে কথা বলার জন্য যেসব বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে তার সবগুলো বাতিল করা হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
মধ্যপ্রাচ্যের ছয় দেশকে হুমকি ইরানের, যুদ্ধের শঙ্কা

মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশকে কঠোর কঠোর ভাষায় সতর্ক করেছে ইরান। সতর্ক বার্তায় বলা হয়, এসব দেশ যদি মার্কিন সামরিক অভিযানে সহায়তা করে—বিশেষ করে নিজেদের আকাশসীমা বা ভূখণ্ড ব্যবহারের অনুমতি দেয় তাহলে তাদেরকে ‘গুরুতর পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। খবর রয়টার্সের।
দেশগুলো হচ্ছে- ইরাক, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), কাতার, তুরস্ক এবং বাহরাইন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আলী খামেনি দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক অভিযানের হুমকি দেওয়ার পর এই প্রতিক্রিয়া এসেছে।
এ পরিস্থিতিতে ইরান সামরিক প্রস্তুতি জোরদার করেছে এবং নিজেদের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান দৃঢ় করেছে। এতে করে পুরো উপসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা বেড়ে গেছে এবং যুদ্ধের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আরব উপসাগরীয় দেশগুলো এখন এক জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছে। একদিকে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র, অপরদিকে মার্কিন হামলায় সহায়তা দিলে ইরানের প্রতিশোধের ঝুঁকিও আছে। এই অঞ্চল বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই এখানকার প্রতিটি সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও ইরান জানিয়েছে, তারা ওমানের মধ্যস্থতায় পরোক্ষ সংলাপ চালিয়ে যেতে চায়। এক ইরানি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, পরোক্ষ আলোচনায় আমরা জানতে পারব যুক্তরাষ্ট্র আদৌ একটি রাজনৈতিক সমাধানে আগ্রহী কি না। যুক্তরাষ্ট্র যদি আন্তরিকতা দেখায়, তাহলে শিগগিরই এ ধরনের সংলাপ শুরু হতে পারে।
এ আলোচনায় ইরানের প্রতিনিধি হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বা তার উপমন্ত্রী মজিদ তাখত-রাভানচির নাম বিবেচনায় আনা হতে পারে। তবে ওই কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন, এই পথ সহজ হবে না, বরং তা হতে পারে জটিল ও অনিশ্চিত।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
গাজা থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হামাসের

ইসরায়েলে প্রায় ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে হামাস। এতে বেশকিছু যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তিনজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এর মধ্যে বেশিরভাগই সফলভাবে প্রতিরোধ করা হয়েছে বলেও জানায় দখলদার বাহিনীটি। খবর-আল জাজিরা।
ইসরায়েলি সংবামাধ্যম হারেৎজ এর প্রতিবেদনের বরাতে আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রের টুকরো আশকেলন এবং গ্যান ইয়াভনে পড়েছে, যার ফলে কিছু যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তিনজন সামান্য আহত হয়েছেন।
বর্তমানে ক্ষেপণাস্ত্রের বিস্তার এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নির্বিচার হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার ইসরায়েল। সঙ্গে সেখানে এক মাস ধরে পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে রেখেছে দখলদাররা। এতে সেখানকার পরিস্থিতি ‘দমবন্ধকর’ হয়ে পড়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। গত দেড় বছরে উপত্যকায় মোট নিহত ও আহতের সংখ্যা পৌঁছেছে যথাক্রমে ৫০ হাজার ৬০৯ জন এবং ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৩ জনে। এই নিহত এবং আহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা।
জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল। কিন্তু বিরতির দু’মাস শেষ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার এ অভিযানে গত ১৫ দিনে গাজায় নিহত হয়েছেন ১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি।
ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে ধর্মঘটের ডাক
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ফিলিস্তিনের ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস নামের একটি গোষ্ঠী। সোমবার পুরো ফিলিস্তিনের পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে এই ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানিয়েছে গোষ্ঠীটি।
রোববার এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি বলেছে, ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস বিশ্বজুড়ে ধর্মঘট সফল করতে সবার প্রতি আহ্বান জানায়। একই সঙ্গে প্রতিরোধের কণ্ঠস্বর জোরাল ও ইসরায়েলি বাহিনীর সংঘটিত ভয়াবহ গণহত্যা ও অপরাধকে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে গোষ্ঠীটি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
আবারও মিথ্যাচারের অভিযোগ টিউলিপের বিরুদ্ধে

ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ সামনে আসছে। এবার খোদ যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার রেকর্ড সামনে এসেছে। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর যে হলফনামা দিতে হয় তাতে বাংলাদেশে নিজের মালিকানায় থাকা ফ্ল্যাট নিয়ে ওই প্রতারণার আশ্রয় নেন টিউলিপ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের দুর্নীতির সঙ্গে তার জড়িত থাকার প্রমাণ সামনে আসে। এতে দলের ভেতরে বাইরে চাপে পড়েন টিউলিপ। শেষমেশ বাধ্য হয়ে লেবার মন্ত্রিসভার ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।
ওই পদে তার কাজ ছিল যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া। কিন্তু মন্ত্রী নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ায় দেশ-বিদেশে কোণঠাসা হয়ে পড়েন টিউলিপ; পদত্যাগের পরও এর প্রভাব বিদ্যমান। সে সঙ্গে শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। সেসব তদন্তে নামে দুদক। প্রাথমিকভাবে যার প্রায় সব কটিরই বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পায় সংস্থাটি। এখনও তদন্ত চলমান।
ব্রিটিশ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমও টিউলিপকে নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেসব প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির সঙ্গে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের যোগসূত্র স্পষ্ট।
ডেইলি মেইল শনিবার (৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে জানায়, সাবেক নগরমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক তার জন্মভূমি বাংলাদেশে একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে পার্লামেন্টকে বিভ্রান্ত করেছেন কি না তা নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুরোধে রাজধানী ঢাকার ৬ লাখ পাউন্ড মূল্যের অ্যাপার্টমেন্টটি জব্দ করেছে সরকার। এ নিয়ে লেবার এমপির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
৪২ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিক কোনো অন্যায় করেননি দাবি করে মেইলকে বলেন, ২০০২ সালে তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে উপহার হিসেবে ফ্ল্যাটটি পেয়েছিলেন। ২০১৫ সালের মে মাসে সংসদে নির্বাচিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ‘আইনসম্মত এবং বৈধভাবে’ সেটি তার বোন আজমিনাকে (৩৪) হস্তান্তর করেন।
ওয়েস্টমিনস্টারের নিবন্ধন বহিতে বলা হয়েছে, তিনি ২০১৫ সালের জুন মাসেও পরিবারের একজন সদস্যের সঙ্গে সম্পত্তিটির সহমালিকানাধীন ছিলেন। পরের মাসের মধ্যেই মালিকানা হস্তান্তর করেন।
কিন্তু গত সপ্তাহে ঢাকা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে মেইল কর্তৃক অনুসন্ধানে দেখা যায়, টিউলিপ এখনও ফ্ল্যাটটির মালিক; যেমনটি দুদকের অভিযোগও বলা হয়েছে। এটি কার মালিকানাধীন, এখন সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের আদালত ।
গত মাসে দুদক জানিয়েছে, টিউলিপ ২০১৫ সালে হেবার মাধ্যমে ফ্ল্যাটের মালিকানা আজমিনার কাছে হস্তান্তর করার চেষ্টা করেছিলেন। হেবা একটি ইসলামিক দলিল, যা ভালোবাসার বশবর্তী হয়ে পরিবারের সদস্যের কাছে সম্পত্তি হস্তান্তরের অনুমতি দেয়।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশি আইন অনুসারে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সম্পত্তির মালিকানা পরিবর্তন না করা পর্যন্ত সম্পত্তি হস্তান্তর বৈধ বলে বিবেচিত হয় না।
দুদক দাবি করেছে, হেবা করার যে দাবি করা হচ্ছে তাও জাল। কারণ, যে ব্যারিস্টারের মাধ্যমে এটি করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে তিনি এতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, তার স্বাক্ষর জাল করে দলিল করার করা হয়েছে।
তবে টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবীরা বলেছেন, হেবার আইনটি সঠিকভাবে কার্যকর করা হয়েছে। তার প্রতিনিধিরা দুদকের অভিযোগগুলো মিথ্যা এবং বিরক্তিকর বলে অভিহিত করেন।
গত আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। তারপর থেকে তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, জমি বরাদ্দ ও আর্থিক অনিয়মের একের পর এক অভিযোগ উঠেছে। দুদকের দাবি, পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে প্রায় ৬০ কাঠা (এক একর) সরকারি জমি শেখ হাসিনা, তার সন্তান ও নিকটাত্মীয়দের নামে অবৈধভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
টিউলিপের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে যে, ঢাকায় তার অন্য একটি সম্পত্তি থাকার কারণে জমি বরাদ্দের ক্ষেত্রে তিনি অযোগ্য ছিলেন। তবে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা নিয়মকানুনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে এই মূল্যবান জমি বরাদ্দ নেন। এ জন্য তারা পাবলিক লটারি এবং যোগ্যতার মানদণ্ড এড়িয়ে গেছেন, যা মূলত সরকারি কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত ছিল।
এদিকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে প্রচার চালাচ্ছেন ব্রিটেনের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। দেশটির ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ এ কাজ চাতুরতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে নিয়োগ করেছেন আইনজীবী। সেই আইনজীবীদের তরফে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদককে) একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এমন তথ্য মার্চের শেষ দিকেই জানিয়েছিল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এপ্রিলের শুরুতে আইনজীবী নিয়োগের বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করেন টিউলিপ। এরপর থেকে টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছেন তার আইনজীবীরা।