অর্থনীতি
জনসাধারণের মতামত চেয়েছে অর্থনীতির শ্বেতপত্র কমিটি
দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে জনসাধারণের মতামত চেয়েছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। ই–মেইল, ফেসবুক, লিঙ্কডইন ও সরাসরি লিখিতভাবেও কমিটির কাছে মতামত দেওয়া যাবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি বেশ কিছু বিষয়ে মতামত ও পরামর্শ আহ্বান করেছে। বিষয়গুলো হলো, সরকারি পরিসংখ্যানের যথার্থতা ও নির্ভরযোগ্যতা; সামষ্টিক অর্থনীতির বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো; জিডিপির প্রবৃদ্ধির পর্যালোচনা; মূল্যস্ফীতির ধারা ও তার অভিঘাত; দারিদ্র্য, অসমতা ও বিষণ্নতা; অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ; সরকারি ব্যয় বরাদ্দে অগ্রাধিকার মূল্যায়ন; বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য ও ঋণ ধারণক্ষমতা, মেগা প্রকল্পগুলোর মূল্যায়ন, ব্যাংকিং খাতের প্রকৃত অবস্থা; জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের পরিস্থিতি; ব্যবসা–পরিবেশ ও বেসরকারি বিনিয়োগ; অবৈধ অর্থ ও তার পাচার; শ্রমবাজারের গতিশীলতা ও যুব কর্মসংস্থান; বৈদেশিক শ্রমবাজার ও প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকার।
যেভাবে পাঠানো যাবে মতামত
ই-মেইলের মাধ্যমে পরামর্শ পাঠানো যাবে এই ঠিকানায়। এ ছাড়া ফেসবুক ও লিঙ্কডইন পেজের মাধ্যমে এই কমিটির কার্যক্রম সম্বন্ধে জানা যাবে। ফেসবুকের ঠিকানা; লিঙ্কডইন। এ ছাড়া পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে কমিটির কার্যালয়ে (ব্লক ৪, নিচতলা) একটি পরামর্শ বাক্স রাখা থাকবে। লিখিতভাবে এখানে পরামর্শ ও দলিলপত্রাদি জমা দেওয়া যাবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের মাধ্যমে গত ২৯ আগস্ট অর্থনীতিবিদ, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির মূল কাজ দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন করা। এই কমিটিতে পরবর্তীকালে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন দেশের ১১ জন সুপরিচিত বিশেষজ্ঞ।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
এস আলমমুক্ত ৬ ব্যাংকের এলসি খোলার শর্ত শিথিল
এস আলমের গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হওয়ায় শরিয়াভিত্তিক ছয়টি ব্যাংকের এলসি খোলায় শতভাগ মার্জিনের বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে অন্য সব ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ বহাল থাকবে এস আলম মুক্ত হওয়া এসব ব্যাংকে।
বৃহস্পতিবার (৬ ডিসেম্বর) ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।
এতদিনে এসব ব্যাংক পতিত সরকারের বিশেষ আনুকূল্যে এস আলম গ্রুপ মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণে ছিল। গত ৬ আগস্টের পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করে। পরে ছয় ব্যাংকের ঋণ বিতরণসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই সময়ে ব্যাংকগুলোয় পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, কৃষি, চলতি মূলধন, সিএমএসএমই, প্রণোদনা প্যাকেজ এবং নিজ ব্যাংকে রক্ষিত এফডিআরের বিপরীতে এসওডি ও শতভাগ নগদ মার্জিনের বিপরীতে বিনিয়োগপত্র ও অন্যান্য পরোক্ষ বিনিয়োগ সুবিধা ছাড়া অন্য কোনো বিনিয়োগ করা যাবে না।
এসব খাতেও ৫ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ কিংবা সীমাতিরিক্ত বকেয়া স্থিতির নগদ আদায় ছাড়া বিদ্যমান বিনিয়োগ সুবিধা নবায়ন করা যাবে না।
অন্য কোনো ব্যাংক বা ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোনো বিনিয়োগ অধিগ্রহণ করা যাবে না। ব্যাংকের শীর্ষ ২০ ঋণগ্রহীতা থেকে আদায়ের তথ্য মাসিক ভিত্তিতে জানাতে হবে। এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ও আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় এ নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
নোভারটিসের অধিকাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করবে রেডিয়েন্ট ফার্মা
নোভারটিস বাংলাদেশ লিমিটেড নিজেদের মালিকানাধীন শেয়ার শীর্ষস্থানীয় দেশীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর করবে। এ নিয়ে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় আয়োজিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে শেয়ার হস্তান্তরের ঘোষণা দেওয়া হয়। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন নোভারটিসের হেড এশিয়া আ্যসপায়রিং মার্কেটস কেভিন জু রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.)সিনা ইবনে জামালী। এসময় দুই প্রতিষ্ঠানেরই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাণ উপস্থিত ছিলেন।
নোভারটিসের হেড এশিয়া অ্যাসপায়রিং মার্কেটস কেভিন জু বলেন, গ্লোভাল স্ট্র্যাটেজির সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা এনবিএল-এ আমাদের শেয়ার শীর্ষস্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছি। আমাদের উদ্ভাবনী ওষুধগুলোর মাধ্যমে রোগীদের সেবা প্রদান নিশ্চিতে আমরা প্রতিশ্রুতি বদ্ধ;পাশাপাশি,আমরা বাংলাদেশের মানুষের জিবনের মানোন্নয়ন ও তাদের সুদীর্ঘ জীবন অর্জনে ভূমিকা রাখার লক্ষ নিয়ে কাজ করছি । উপরন্তু,আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমাদের কর্মীদের প্রতি ন্যায্য আচরণ নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিব্ধ । এ হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় রেডিয়েন্টকে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।
রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্য়ান মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী রেডিয়েন্ট ও নোভারটিসের মধ্যে নতুন ব্যবসায়িক অংশদারিত্বের দিকগুলো তুলে ধরেন। তিনি মনে করেন, এ অংশীদারিত্ব দেশের মানুষের জন্য নোভারটিসের উদ্ভাবনী পন্য সরবারহে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তিনি নোভারটিসের পূর্ববর্তী কোম্পানি সিবা-গেইগি এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাস্থখাতে নোভারটিসের উল্লেখযোগ্য অবদানের প্রশংসা করেন। এ শেয়ার হস্তান্তর উভয় প্রতিষ্ঠান এবং বৃহত্তর পরিসরে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
১৯৭৩ সাল থেকে নোভারটিস ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিচালনা করে আসছে নোভারটিস।
বাংলাদেশে এনবিএলের মাধ্যমে ব্যবসার ধারাবাহিকতা ও উদ্ভাবনী ওষুধ সরবারহ অঙ্গিকারবদ্ধ নোভারটিস। এছাড়া, এনবিএলেএর অধিনে থাকা সব স্থায়ী কমপক্ষে ৩বছর একই সুযোগ সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে রেডিয়েন্ট। এ হস্তান্তরের মাধ্যমে কর্মীদের জন্য আরও সুযোগ সৃস্টি হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে; পাশাপাশি, এটি বাংলাদেশে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় সাধনেও উল্লেখযো্গ্য ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী এবং রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম । রেডিয়েন্ট ফার্মার সাড়ে ৬ হাজারের ও বেশি কর্মী রয়েছে। এছাড়াও ,প্রতিষ্ঠানটির পোর্টফলিওতে ১শ’র বেশি নিবন্ধিত ব্রান্ড এবং ১২ টি আন্তর্জাতিক অংশীদার রয়েছে । এই মালিকানা স্থানান্তর দীর্ঘমেয়াতে উভয় প্রতিষ্ঠানের টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এবং ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১.৩৮ শতাংশ
দেশে চলতি বছরের নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ হয়েছে। এক মাস আগে ছিল ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে দেশের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৮৯ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ তথ্যে জানিয়েছে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ হয়েছে, যা এক মাস আগে ছিল ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
নভেম্বরে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশে, যা আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
এছাড়া নভেম্বরে গ্রামীণ এলাকায় মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। অন্যদিকে নগর এলাকায় ছিল ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
অন্যদিকে অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
অর্থপাচার করে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ফতুর করা হয়েছে: নিউইয়র্ক টাইমস
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের হিসাবে শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামলে কেবল বাংলাদেশের আর্থিক খাত থেকেই ১৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। তবে অন্যান্য অর্থনীতিবিদের হিসাবে শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, তা ৩০ বিলিয়ন বা ৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি হতে পারে।
নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাচার হওয়া টাকার প্রকৃত পরিমাণ কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। বিভিন্ন ধরনের আর্থিক হিসাব-নিকাশ করে আহসান মনসুর বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে তার সহযোগীরা বাংলাদেশের ব্যাংক খাত থেকে যে পরিমাণ অর্থ লুট করেছে, তা কার্যত পৃথিবীর আর্থিক ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
মার্কিন এই সংবাদমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণে আজ বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছে গত অক্টোবরে। আর চলতি সপ্তাহে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ক শ্বেতপত্র কমিটি বলেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে সার্বিকভাবে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে।
আহসান মনসুর নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ বুঝতে পেরেছিল, লুটপাট করার জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা হচ্ছে ব্যাংক। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো শত শত কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বিভিন্ন কোম্পানির নামে ঋণ দিয়েছে, যে কোম্পানিগুলোর অনেকগুলোর আদতে কোনো অস্তিত্বই নেই। এই টাকাও কখনো সম্ভবত ব্যাংকে ফিরে আসবে না; এই অর্থের একটি বড় অংশ দেশ থেকে অবৈধভাবে বাইরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হওয়ার আগে ২৭ বছর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) কাজ করছেন আহসান মনসুর। তিনি বলেন, ব্যাংকের পুরো পরিচালনা পর্ষদ হাইজ্যাক করা হয়েছিল। তার ভাষ্য, বিশ্বের অন্য কোনো দেশে সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ এভাবে গুণ্ডা-মাস্তানদের সহযোগিতায় পুরো ব্যাংক খাতে এমন পদ্ধতিগতভাবে ডাকাতি করেছে, এমন ঘটনা তিনি আর কোথাও দেখেননি।
সংবাদে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে এখনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পালা চলছে, গণসহিংসতাও দেখা যাচ্ছে। অর্থনীতি প্রসঙ্গে আহসান মনসুর বলেন, আগামী বছর অর্থনীতির আকাশে আরো কালো মেঘের ঘনঘটা থাকবে। এরপর অর্থনীতির আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করবে।
শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে গেছেন। তার ভাগ্যে কী আছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, তাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। এর মধ্যে শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম এহসান। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে এখনো অভিযোগ গঠন করা হয়নি। আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ‘উইচ হান্ট’ করা হচ্ছে, তিনি এরর বাইরে নন।
নিউইয়র্ক টাইমস শেখ হাসিনা ও সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। ঢাকায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় খালি পড়ে আছে। এরপর তারা শেখ হাসিনার মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হয়নি।
ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল মান্নানের পদত্যাগের ঘটনা সবিস্তারে তুলে ধরেছে নিউইয়র্ক টাইমস। সংবাদে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি আর দশটা সাধারণ দিনের মতো আব্দুল মান্নান কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন। পথিমধ্যে তিনি একটি ফোন কল পান। কলটি করেছিলেন সামরিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধান। তাকে বলা হয়, গাড়ি ঘুরিয়ে তিনি যেন সংস্থাটির সদর দপ্তরে চলে আসেন।
গত অক্টোবর মাসে আব্দুল মান্নান নিউইয়র্ক টাইমসকে সেই ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। কার্যালয়ে যাওয়ার পর সামরিক গোয়েন্দারা আব্দুল মান্নানের ফোন, ঘড়ি ও ওয়ালেট রেখে দেন। এরপর গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান আব্দুল মান্নানের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের বিবরণ দেন; বাংলাদেশের ব্যাংক খাতকে তিনি যে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের কাছে নিয়ে গেছেন, সে জন্য তার প্রশংসা করেন।
আব্দুল মান্নান ভাবছিলেন, তার সময়টা বোধ হয় বৃথা যাচ্ছে। কিন্তু এরপরই তাকে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগের চিঠিতে সই করতে বলা হয়। গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান তাকে বলেন, এই আদেশ দেশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে এসেছে, অর্থাৎ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তিনি প্রথমে পদত্যাগ পত্রে সই করতে রাজি হননি।
তিনি বলেন, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তাকে মৌখিকভাবে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। এরপর তাকে গোয়েন্দা প্রধানের কার্যালয় থেকে আরেকটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
আব্দুল মান্নান বলেন, আমি যে ধরনের মানুষ, তাতে ওই সময়ে আমাকে যে অপমানজনক পরিস্থিতির মধ্যে ফেলা হয়েছিল, তার বিবরণ দেওয়া সম্ভব নয়। এরপর তিনি সময়ের হিসাব ভুলে যান এবং একপর্যায়ে জানতে পারেন, দুপুরের আগে আগে তিনি পদত্যাগ পত্রে সই করেছেন। এরপর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরবর্তী আট বছর তিনি কার্যত নির্বাসনে ছিলেন; এখন তিনি আবার একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হয়েছেন।
আব্দুল মান্নান ও আহসান মনসুর একই সুরে বলেন, ওই ঘটনার পর এস আলম গোষ্ঠী ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ কব্জা করে। এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সাইফুল আলম ট্রেডার হিসেবে ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বিশেষ করে শেখ হাসিনার আমলে জ্বালানি, আবাসন খাতসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দাবি, এস আলম গোষ্ঠী অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে আঁতাত করে শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত খালি করে দেওয়ার চক্রান্ত করেছিল।
হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএফআইইউর নির্বাহী পরিচালক এ কে এম এহসান। ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক এস আলম গোষ্ঠীর হাতে যাওয়ার পর নামে-বেনামে বিভিন্ন কোম্পানিকে ঋণ দেওয়া হয়েছে, যে ঋণের বড় অংশ আর ফেরত আসেনি। ফলে সেগুলো খেলাপি হয়ে গেছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে অনেক ব্যাংক এখন লাইফ সাপোর্টে আছে। এমনকি যেসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ভালো, তারাও সেভাবে ঋণ দিতে পারছে না, এমনকি আমানতকারীদের টাকা সব সময় ফেরত দিতে পারছে না। আমানতকারীদের তারা মাঝেমধ্যে টাকা তোলার সুযোগ দিচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে যে টাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেই টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শেখ হাসিনার দলের অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে অর্থ-পাচারের মামলা হয়েছে, যে অর্থ মূলত আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে।
এর মাধ্যমে যে কেবল কিছু মানুষের পকেট ভারী হয়েছে তা নয়, এতে বাংলাদেশের মুদ্রার দরপতনও হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে বাংলাদেশ থেকে এই অর্থ-পাচারের গতি বাড়তে থাকে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশের মুদ্রার বড় ধরনের দরপতন হয়। আমদানি মূল্য অনেকটা বেড়ে যায়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের লোডশেডিংয়ের মুখে পড়ে বাংলাদেশ।
অনেক ব্যাংকে নগদ অর্থের সংকট আছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা পুরো বেতন তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন। এমনকি যেদিন বেতন দেওয়া হয়, সেদিন তারা পুরো টাকা তুলতে পারেননি, এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে।
ওষুধ কোম্পানি টেকনো ড্রাগ কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে। এই কোম্পানির সহমহাব্যবস্থাপক মাজেদুল করিম নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, নিম্ন আয়ের কর্মীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কর্মীরা তাঁর কাছে অভিযোগ করেছেন, ব্যাংক টাকা দিতে পারছে না, সে কারণে কোম্পানি বাধ্য হয়ে নগখ টাকায় মজুরি পরিশোধ করছে। তিনি আরো বলেন, তার নিজের ডেবিট কার্ড দিয়েও টাকা তোলা যাচ্ছে না।
আহসান মনসুর বলেন, এ বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির বছর নয়। তবে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসছে এবং প্রবাসী আয়প্রবাহ বাড়ছে। আমাদের এ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
তিনি আশাবাদী, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বাংলাদেশের মুদ্রা স্থিতিশীল করতে অরো তিনশ’ কোটি ডলার সহায়তা দেবে। ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫.৬৩ শতাংশ
টানা দুই মাস ধরে বাড়তে শুরু করেছে দেশের পণ্য রপ্তানি। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে উৎপাদন খাতে যে ধাক্কা লেগেছে তা কাটিয়ে উঠছে এই খাত। নভেম্বরে রপ্তানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়েছে।
আজ বুধবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানায় ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো- ইপিবির হিসেবে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস অর্থ্যাৎ জুলাই থেকে নভেম্বরে মোট রফতানি হয়েছে এক হাজার ৯৯০ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য।
গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা বেড়েছে পৌঁনে ১২ শতাংশ। নভেম্বরে শুধু তৈরি পোশাক খাতে রফতানি আয় এসেছে ৩৩০ কোটি ৬২ লাখ ডলার। বছর ব্যবধানে পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এই সময়ে কৃষি খাতের রফতানি বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ এবং উৎপাদনমুখী শিল্পের রফতানি বেড়েছে ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। হোমটেক্সাটাইলে বেড়েছে প্রায় ২১ শতাংশ।কিছুটা কমেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের পরিমাণ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে তৈরি পোশাক খাতে রফতানি হয়েছে এক হাজার ৪৩৪ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের পণ্য। বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ।
কাফি