ধর্ম ও জীবন
জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ ৬ আমল

মুসলিমদের কাছে জুমার দিন পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে এই দিনটিকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলা হয়েছে। এ বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ এ দিনটিকে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। তাই যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। (সুনানে ইবনে মাজা)
জুমার দিনে বিশেষ ৬ আমল
জুমার নামাজ
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান মধ্যবর্তী সময়ের পাপ মোচন করে; যদি সেই ব্যক্তি সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে। (মুসলিম হাদিস ২৩৩)
হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যায় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করবেন। (বোখারি, হাদিস ৮৮৩)
জুমার দিন গোসল করা
জুমার দিন গোসল করার অনেক ফজিলত রয়েছে। গোসল করে সবার আগে মসজিদে যাওয়া সওয়াবের। হজরত আউস বিন আউস সাকাফি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালো করে গোসল করল, দ্রুততর সময়ে মসজিদে গেল ও (ইমামের) কাছাকাছি বসে মনোযোগসহ (খুতবা) শুনল, তার জন্য প্রতি কদমের বদলে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব থাকবে। (আবু দাউদ, হাদিস ৩৪৫)
মসজিদে সবার আগে যাওয়া
শুক্রবারে জুমার নামাজের জন্য মসজিদে আগে প্রবেশ করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে প্রথমে মসজিদে গেল সে যেন একটি উট কোরবানি করল। যে এরপর মসজিদে গেল, সে যেন একটি গরু কোরবানি করল। আর যে এরপর ঢুকল, সে যেন ছাগল কোরবানি করল…। (বোখারি, হাদিস ৮৪১) জুমার দিন দোয়া কবুল হয় জুমার দিন একটি সময় আছে, যখন মানুষ আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, জুমার দিন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে ভালো কিছুর দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তা দেন। তোমরা সময়টি আছরের পর অনুসন্ধান করো। (আবু দাউদ ১০৪৮)
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দান করেন। এই মুহূর্তটি তোমরা আছরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান করো। (আবু দাউদ ১০৪৮)
সুরা কাহাফের ফজিলত
জুমার অন্যতম আমল সুরা কাহাফ পাঠ করা। হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। যে ব্যক্তি অজুর পর এই দোয়া পড়বে তার নাম একটি চিঠিতে লেখা হবে। অতঃপর তাতে সিল দেওয়া হবে, যা কিয়ামত পর্যন্ত আর ভাঙা হবে না। (তারগিব ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক ২/৩৯৯)
দরুদ শরিফের ফজিলত
জুমার দিন রাসুল (সা.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা অনেক সাওয়াব। হজরত আউস বিন আবি আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং এই দিনে সবাইকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণ দরুদ পড়। কারণ জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়। (আবু দাউদ ১০৪৭)
জুমার দিনের আমল
হাদিসগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, জুমার দিনের কিছু কাজে সাওয়াব মিলে। যেমন, নখ কাটা, গায়ের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করা, উত্তমরূপে গোসল করা, উত্তম পোশাক পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যদি তার নিকট থাকে। তারপর জুমার নামাজে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যায়। নির্ধারিত নামাজ আদায় করে। তারপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকে। তাহলে তার এই আমল পূর্ববর্তী জুমার দিন থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সব সগিরা গুনাহের জন্য কাফ্ফারা হবে (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৩)।
এমআই

ধর্ম ও জীবন
কেয়ামতের দিন হিসাব সহজ হওয়ার দোয়া

কিয়ামতের দিন নেককার, বিশ্বাসী এবং আল্লাহতে অবিশ্বাসী প্রত্যেকেই তার আমলনামা, কাজকর্ম নিজের চোখে দেখতে পাবে। সেদিন অবিশ্বাসী কাফেরেরা নিজেদের বদ আমল দেখে আফসোস করবে।
এ বিষয়ে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, কিয়ামতের দিন ভূপৃষ্ঠ সমতল ভূমিতে রুপান্তর করা হবে। সবার হিসাব নেওয়া হবে। কেউ কারো ওপর জুলুম করলে তার কাছ থেকে এর বদলা নেওয়া হবে। পশু-পাখি জীব-জন্তুদের মধ্যে কেউ দুনিয়াতে কারো ওপর জুলুম- অত্যাচার করে থাকলে তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেওয়া হবে। পশু-পাখির হিসাব নেওয়া শেষ হলে তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘তোমরা মাটি হয়ে যাও’। তখন সব মাটি হয়ে যাবে।
এ দৃশ্য দেখে তখন অবিশ্বাসী কাফেরেরা আফসোস করে বলবে, وَ یَقُوۡلُ الۡکٰفِرُ یٰلَیۡتَنِیۡ کُنۡتُ تُرٰبًا
‘হায়! আমরা যদি মাটি হয়ে যেতাম। এমন হলে আমরা হিসাব-নিকাশ ও জাহান্নামের আজাব থেকে বেঁচে যেতাম।’ (তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা, ৬৮১, তাফসিরে ইবনে কাসির, ১১ তম খণ্ড, পৃষ্ঠা, ৩৯৪, সূরা নাবা, (৭৮), আয়াত, ৪০, পারা, ৩০)
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা যাদের ক্ষমা করবেন তারা হবেন সৌভাগ্যবান আর যাদের হিসাব নেবেন কঠিন করে তাদের রক্ষা পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।
এ বিষয়ে হজরত আব্দুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন-
আল্লাহ ঈমানদারদের কাছাকাছি হবেন। নিজের উপর একটা পর্দা রেখে দিবেন। আর তাকে বলবেন, তুমি কি সেই পাপটি সম্পর্কে জানো? সেই পাপটির কথা কি তোমার মনে আছে? সে উত্তরে বলবে, হ্যা, প্রভূ। এভাবে সে সকল পাপের কথা স্বীকার করবে। আর ধারনা করবে আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। আল্লাহ তায়ালা তখন তাকে বলবেন, আমি দুনিয়াতে তোমার পাপগুলো গোপন রেখেছি আর আজ তা ক্ষমা করে দিলাম। এ কথা বলে তার নেক আমলের দফতর তাকে দেওয়া হবে। আর যারা কাফির বা মুনাফিক সকলের সামনে তাদের ডাকা হবে। ফিরিশতারা বলবে, এরাইতো তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে মিথ্যা বলেছে। জালিমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪৪১)
কিয়ামতের দিন হিসাব সহজ হওয়ার জন্য হাদিসে বর্ণিত এই দোয়াটি পড়া যেতে পারে— اَللّٰهُمَّ حَاسِبْنِـىْ حِسَابًا يَّسِيْــرًا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা হাসিব-নি হিসাবাই-ইয়াসিরা
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার হিসাব সহজ করে দাও। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস: ৮৭২৭)
ধর্ম ও জীবন
হজের পর যেসব ভুল করবেন না

হজ শেষে একজন মুসলমান নতুন করে আল্লাহ তায়ালার দিকে ফিরে আসেন। হজের বিনিময়ে আল্লাহ তাকে পরকালে পুরস্কার দেবেন, সব গুনাহ মাফ করবেন এই প্রত্যাশা রাখেন। আল্লাহ তায়ালার ক্ষমা এবং পুরস্কার লাভের জন্য একজন মুসলমানের উচিত নিজেকে সবসময় পাপমুক্ত রাখা। নিজেকে কিছু ভুল-ত্রুটি থেকে মুক্ত রাখা।
হজের পর যেসব ভুল-ত্রুটি থেকে বিরত থাকবেন—
হজ করলেই গুনাহ মাফ
হাদিসে হজের মাধ্যমে গুনাহ মাফের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তাই বলে এমন ধারণা রাখা যাবে না যে, হজের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন, এখন যত ইচ্ছা গুনাহ করা যাবে।
হাদিসে হজের মাধ্যমে গুনাহ মাফের যেই সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে তা হজে মাবরুরের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে। কোনো ব্যক্তি নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না যে তিনি হজে মাবরুর লাভ করেছেন।
তাই হজের পর যথাসম্ভব পাপ ও গুনাহ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। হজের পর কারো ভেতর খারাপ কাজ করা বা নৈতিক অবনতি দেখা দিলে তা এই ইঙ্গিত দিতে পারে যে, হজ কবুল হয়নি— কারণ তার জীবনে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনেনি।
রমজান ও হজের মতো ইবাদতের মৌসুমগুলো আমাদের আত্মিক শক্তি জোগানোর মাধ্যম। এর মাধ্যমে আমাদের সঠিক পথে পরিচালনার শিক্ষা দেওয়া হয়।
হজ শেষে ঘরে ফেরার সময়ও ইহরাম পরা
১০ জিলহজের সব হজের কাজ শেষ করার পর হজযাত্রীদের উচিত স্বাভাবিক পোশাক পরা। কিন্তু কেউ কেউ বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত ইহরাম পরে থাকেন।
এর মাধ্যমে নিজেদের ওপর অপ্রয়োজনীয় কষ্ট চাপিয়ে দেওয়া হয়, যা সুন্নাহর পরিপন্থী। বরং এতে আত্মপ্রদর্শনের শঙ্কাও থাকে— মানুষকে দেখানোর জন্য এমন কিছু করা অনুচিত।
নিজেকে ‘হাজি সাহেব’ বলে ডাকতে জোর করা
হজ শেষে কেউ যদি ‘হাজি’ নামে পরিচিত হন, এতে কোনো সমস্যা নেই। তবে কেউ যদি তাকে ‘হাজি সাহেব’ ডাকতে অন্যদের জোর করেন। তাহলে তা অহংকারের প্রকাশ হিসেবে গণ্য হবে। এটি ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় কাজ।
হজের পরও পাপ করা ও ইবাদতের প্রতি অবহেলা
হজের পর কেউ যদি মন্দ আচরণ ও পাপ ছাড়তে না পারে এবং আগের মতোই মন্দ আচরণ ও গুনাহে লিপ্ত থাকেন। ইবাদতের প্রতি অবহেলা দেখান। তবে তা হজ কবুল না হওয়ার আলামত হতে পারে।
একজন প্রকৃত হজযাত্রীর জীবন হজের পরে আরও সুন্দর, ধার্মিক ও নৈতিকভাবে উন্নত হওয়ার কথা।
নবীজির কবরের ওপর শপথ করা
কেউ কেউ মদিনায় গিয়ে নবীজির (সা.) কবর জিয়ারত করার পর বলেন, ‘আমি সেই নবীর কসম করে বলছি, যার কবর আমি হাতে ছুঁয়েছি।’
ইসলামের দৃষ্টিতে শপথ একমাত্র আল্লাহর নামেই করা উচিত, অন্য কারো নামে নয়। আর না পারলে চুপ থাকা শ্রেয়।
হজ জীবনে এক বিশাল পরিবর্তনের সুযোগ এনে দেয়। তাই সবার খেয়াল রাখতে হবে আমাদের হজ যেন শুধুমাত্র একটি সফর হিসেবে পরিচিতি না পায়। বরং তা জীবনের আলোকবর্তিকা হিসেবে গণ্য হয়। তবেই তা হজে মাবরুরের বলে গণ্য হবে।
ধর্ম ও জীবন
তাকবিরে তাশরিক পড়তে হবে মঙ্গলবার আসর পর্যন্ত

৯ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক পড়া ওয়াজিব। জিলহজের ৯-১৩ তারিখ পর্যন্ত ৫ দিন মোট ১৩ ওয়াক্তের ফরজ নামাজের পর এ তাকবির পড়তে হয়।
কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَاذْكُرُوا اللَّهَ فِي أَيَّامٍ مَّعْدُودَاتٍ
আল্লাহকে স্মরণ কর নির্দিষ্ট দিনসমূহে। (সুরা বাকারা: ২০৩)
কোরআনের ব্যখ্যাকারদের মতে এ আয়াতে ‘নির্দিষ্ট দিন’ বলে তাশরিকের দিনগুলো অর্থাৎ জিলহজের ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ বোঝানো হয়েছে। এ দিনগুলোতে ফরজ নামাজসমূহের পরবর্তী তাকবির ছাড়া অন্যান্য সময়ও বেশি বেশি জিকির করা বাঞ্চনীয়।
বাংলাদেশে আজ (৯ জুন) ১২ জিলহজ। আগামীকাল (১০ জুন) ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত তাকবিরে তাশরিক পড়তে হবে।
অর্থ ও উচ্চারণসহ তাকবিরে তাশরিক
اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَاَللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর; লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু; ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর; ওয়ালিল্লাহিল হামদ্।’
অর্থ : ’আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; সব প্রশংসা মহান আল্লাহ জন্য।’
তাকবিরে তাশরিক যাদের ওপর ওয়াজিব
মুসলমান প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ, নিজের বাড়িতে অবস্থানকারী ও মুসাফির, একা ও জামাতে নামাজ আদায়কারী সবার জন্য ফরজ নামাজের পর একবার তাকবিরে তাশরিক পড়া ওয়াজিব।
অনেকে মনে করে এটা মসজিদে নামাজ আদায়ের সাথে সম্পর্কিত। এ ধারণা সঠিক নয়। কোনো কারণে জামাত ছুটে গেলে ঘরে নামাজ আদায়ের পরও তাকবিরে তাশরিক পড়তে হবে। নারীরা ঘরে নামাজ আদায়ের পর তাকবিরে তাশরিক পড়বে।
তবে কোনো নারী এ সময় মাসিক অবস্থায় থাকলে তার ওপর তাকবিরে তাশরিক পড়া ওয়াজিব নয়। যেহেতু সে এ সময় নামাজ আদায় থেকে বিরত থাকে, নামাজ তার ওপর আবশ্যক থাকে না, তাই নামাজ পরবর্তী তাকবির পড়াও তার ওপর আবশ্যক হবে না।
ধর্ম ও জীবন
আজ যে ৪ আমল করবেন হজ পালনকারীরা

আজ (৬ জুন) সৌদি আরবে ১০ জিলহজ ঈদুল আজহার দিন। এ দিন হজ পালনকারীরা হজের ৪টি আমল সম্পন্ন করবেন। সুবহে সাদিকের পর মুজদালিফায় অবস্থান করবেন, তারপর সূর্য ওঠার আগে মিনায় এসে বড় জামরায় ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেন। তারপর কোরবানি করবেন। কোরবানি সম্পন্ন হলে মাথা মুণ্ডন করবেন, চুল ছাটবেন বা কাটবেন।
চুল মুণ্ডন বা কাটার পর স্ত্রী সঙ্গম ছাড়া ইহরামের যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে।
মুজদালিফায় অবস্থান
হিজরি ক্যালেন্ডারে সূর্যাস্তের পর নতুন দিন শুরু হয়। ৯ জিলহজ আরাফায় অবস্থান করে সূর্যাস্তের পর ১০ জিলহজ হজ পালনকারীদের যেতে হয় মুজদালিফায়। মুজদালিফায় মাগরিব ও ইশা আদায়ের পর সুবহে সাদিক পর্যন্ত অবস্থান করা সুন্নতে মুআক্কাদা। রাতের অর্ধেকের বেশি অবস্থান করলে সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।
১০ জিলহজ সুবহে সাদিকের পর কিছু সময় মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। তাই ফজরের আগে মুজদালিফা ত্যাগ করা যাবে না। ফজরের পর সুর্য ওঠার আগেই মুজদালিফা থেকে মিনার উদ্দেশে রওয়ানা হতে হবে।
জামারায় কংকর নিক্ষেপ
১০ জিলহজ সুবহে সাদিক বা ফজরের সময় শুরু হওয়ার পর থেকে আগত রাতের সুবহবে সাদিক পর্যন্ত মোট ২৪ ঘণ্টা প্রথম দিনের কংকর নিক্ষেপ করা যায়। এর মধ্যে সুবহে সাদিক থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত মাকরূহ সময়, তবে নারী, অসুস্থ ও দুর্বলদের জন্য মাকরুহ নয়। সুর্যোদয়ের পর থেকে মধ্যাহ্ন পর্যন্ত মুস্তাহাব সময়; এ সময়ই কংকর করার চেষ্টা করা উচিত। মধ্যাহ্ন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জায়েজ সময়। সূর্যাস্তের পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত মাকরুহ সময়। তবে কারো ওজর থাকলে, প্রচণ্ড ভড়ি থাকলে বৃদ্ধ, নারী ও দুর্বল ব্যক্তিরা এ সময় কংকর নিক্ষেপ করতে পারে।
১০ জিলহজ শুধু বড় জামারায় কংকর নিক্ষেপ করতে হয়। অন্য দুটি জামারায় এ দিন কংকর নিক্ষেপ করা নিষেধ।কংকর নিক্ষেপের সময় পড়তে হয় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ অথবা শুধু ‘আল্লাহু আকবার’। পরপর ৭ বার তাকবির দিয়ে কংকর নিক্ষেপ করতে হয়।
কংকর নিক্ষেপের জন্য পবিত্রতা অর্জনের শর্ত নেই, তবে অজু অবস্থায় কংকর নিক্ষেপ করা ভালো।
হজের কোরবানি
কেরান ও তামাত্তু হজ পালনকারীরা যেহেতু ওমরাহ ও হজ পালনের মাধ্যমে দুটি ইবাদত করেছে, এ জন্য তাদের ওপর শুকরিয়াস্বরূপ একটি কোরবানি করা ওয়াজিভ। একে দমে শোকরও বলা হয়। এই কোরবানি হারামের সীমানার ভেতরে করতে হয়।
ঈদের কোরবানি আর হজের কোরবানি এক নয়। কেউ যদি ঈদের কোরবানি মনে করে কোরবানি করে, তাহলে তার হজের কোরবানি বা দমে শোকর আদায় হবে না। দমে শোকরের নিয়তে পুনরায় কোরবানি করতে হবে।
বড় জামারায় কংকর নিক্ষেপের পর এই কোরবানি করতে হবে। এরপর চুল-নখ কাটা যাবে। কোরবানির আগে চুল-নখ কাটা যাবে না।
ইফরাদ হজ পালনকারীদের জন্য কোরবানি এই কোরবানি ওয়াজিব নয়, মুস্তাহাব। তারা কংকর নিক্ষেপের পরই চুল নখ কাটতে পারবে।
চুল কাটা
হজের কোরবানি হয়ে গেলে পুরুষরা মাথার চুল মুণ্ডন করবেন বা ছোট করবেন। পুরুষের জন্য হলক অর্থাৎ পুরো মাথা মুণ্ডন করাই উত্তম। তবে কসর অর্থাৎ পুরো মাথার চুল আঙুলের এক গিরা পরিমাণ কেটে খাটো করা করার মাধ্যমেও হালাল হওয়া যায়। কারো মাথার চুল যদি ছোট হওয়ার কারণে এক গিরা পরিমাণ কাটা সম্ভব না হয় তাহলে তার মাতা মুণ্ডানো জরুরি।
নারীরা হলক করবে না বরং কসর বা পুরো মাথার চুল এক ইঞ্চি পরিমাণ কাটবে। মাথার এক চতুর্থাংশ চুলের অগ্রভাগ এক ইঞ্চি পরিমাণ কাটলে নারীদের ওয়াজিব আদায় হয়ে যায় তবে এটা মাকরুহ, পুরো মাথার চুল কাটা উত্তম।
চুল কাটার মাধ্যমে ইহরাম শেষ হয়ে যায়। তাই ইহরাম অবস্থায় যে কাজগুলো নিষিদ্ধ ছিল, চুল কাটার পর স্ত্রী সঙ্গম ছাড়া বাকি সব কাজ বৈধ হয়ে যায়। যেমন সেলাইকৃত পোশাক রা, সুগন্ধি ব্যবহার করা ইত্যাদি। স্ত্রী-সঙ্গম তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করা পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকে।
কাফি
ধর্ম ও জীবন
আজ জামারায় পাথর মারবেন হজযাত্রীরা

১০ জিলহজে শুধু বড় জামরায় (শয়তান) সাতটি কঙ্কর (পাথর) নিক্ষেপ এবং ১১ ও ১২ জিলহজে ছোট, মধ্যম ও বড় এ তিন জামরাতেই (শয়তানকে) পাথর মারা ওয়াজিব। শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করা পবিত্র হজের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ৮ জিলহজ (চলতি বছর ৪ জুন)। এদিন হাজিরা মিকাত থেকে ইহরাম (পুরুষদের জন্য হজের নির্ধারিত পোশাক-দুই টুকরা সেলাইবিহীন সাদা কাপড়) বেঁধে মক্কার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। তারপর তাওয়াফে কুদুমের মাধ্যমে শুরু হয় হজের আনুষ্ঠানিকতা। তওয়াফে কুদুম করার পর হাজিরা মিনায় অবস্থান করেন।
দোয়া কবুলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও সময় হচ্ছে, জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ করে দোয়া করা। কঙ্কর নিক্ষেপের পর জামারার স্থান থেকে সামান্য সরে গিয়ে প্রাণ খুলে দোয়া করা।
মিনাতেই তিনটি ‘জুমরা’ (স্তম্ভ) অবস্থিত, এগুলোকে একত্রে ‘জামারাত’ বলে। এগুলো ছোট শয়তান (জুমরায়ে উলা), মেজ শয়তান (জুমরায়ে উস্তা), বড় শয়তান (জুমরায়ে আকাবা) নামে পরিচিত। হজরত ইব্রাহিম (আ.) যখন হজরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি দিতে যাচ্ছিলেন, তখন পথে এ স্থানে শয়তান বাধা সৃষ্টি করে। তখন হজরত ইব্রাহিম (আ.) পাথর ছুড়ে শয়তানকে বিতাড়িত করেন।
৮ জিলহজ মিনায় আগমনের মাধ্যমেই শুরু হয়েছে হজের আনুষ্ঠানিকতা। সৌদি সরকারের নির্দেশনায় মঙ্গলবার রাত থেকেই হজযাত্রীরা মিনায় আসতে শুরু করেন।
মিনার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে বিত্ত-বৈভব, কামনা-বাসনাকে পরিত্যাগ করে হজযাত্রীরা আল্লাহর সান্নিধ্য ও ক্ষমাপ্রত্যাশা করেন। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় তাদের মন ব্যাকুল। তারা পাপতাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান।
রাত থেকেই মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে যেতে থাকেন হজযাত্রীরা। কারণ আরাফাতের ময়দানে ৯ জিলহজ সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার পর থেকে সূর্যাস্ত যাওয়ার আগে কিছু সময় অবস্থান করা ফরজ। এরপর মাগরিবের নামাজ না পড়েই মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হন তারা।
মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে সারারাত অবস্থানের পর ১০ জিলহজ ফজরের নামাজের পর শয়তানের স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপের জন্য যাত্রা শুরু করেছেন হজযাত্রীরা। তারা মুজদালিফা থেকেই শয়তানকে মারার জন্য পাথর সংগ্রহ করেছেন।
আজ তারা শুধু বড় জামারায় (প্রতীকী বড় শয়তান) পাথর নিক্ষেপ করতে মিনায় যাচ্ছেন।
কাফি