ব্যাংক
অস্ত্রের মুখে যেভাবে দখল হয় ইসলামী ব্যাংক

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িতদের জন্য ইসলামী ব্যাংক ছিল লোভনীয় টার্গেট। বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালে যখন শেখ হাসিনার আশীর্বাদপুষ্ট একটি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী জোর করে দখলে নেয় তখন আমানতের দিক থেকে শীর্ষে ছিল এটি। এই ঘটনা বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে ‘ডাকাতি’র একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি সকালে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) কয়েকজন সদস্য ইসলামী ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান, একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বাসা থেকে তুলে এনে একে একে এজেন্সির প্রধান দপ্তরে হাজির করে।
তাদেরকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পরে, ঢাকার একটি হোটেলে সামরিক কর্মকর্তাদের নজরদারির মধ্যে ব্যাংকের বোর্ড মিটিংয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগ করা হয়।
এই ঘটনার সাত বছর পর এস আলম গ্রুপের ইসলামী ব্যাংক দখল নিয়ে নীরবতা ভাঙলেন ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মান্নান।
শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে যা ছিল ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে নেতিবাচক ঘটনাগুলোর অন্যতম।
‘এটা খুবই হতাশাজনক যে একটি সরকারি নিরাপত্তা সংস্থাকে একটি বেসরকারি গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য পূরণে ব্যবহার করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত, কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এর সঙ্গে জড়িত ছিল বলে মনে করছি,’ গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন আবদুল মান্নান।
তিনি বলেন, ‘আমাকে ডিজিএফআই প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আকবর হোসেনের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি প্রথমে আমার প্রশংসা করেন, অর্থনীতি সম্পর্কে আমার পরামর্শ চান আর তারপরই আমাকে পদত্যাগ করতে বলেন।’
পদত্যাগ না করার কথা ভদ্রভাবে আমি তাকে জানাই, বলেন আব্দুল মান্নান।
মান্নান বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে আমার একটা আবেগের সম্পর্ক রয়েছে এবং পদত্যাগ করা আমার জন্য খুবই কঠিন ছিল। আমি ব্যাংকের প্রথম দিন থেকেই এর সঙ্গে জড়িত ছিলাম। বিশ্বের কোনো প্রতিষ্ঠানের এমডিকে এমন চাপের মুখোমুখি হতে হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।’
মান্নানের কাছে ডিজিএফআই অফিস ‘নরকের মতো’ মনে হয়েছিল।
তিনি যখন বলেন যে তার জন্য পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন, তখন ডিজিএফআই প্রধান বলেছিলেন ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ চায় আবদুল মান্নান যেন ব্যাংক ছেড়ে চলে যান।
‘ডিজিএফআই অফিসের ভেতরে আমার এত খারাপ লাগছিল যে তারা কয়েকবার আমার রক্তচাপ মাপেন।’
২০১০ সাল থেকে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা আব্দুল মান্নান অভিযোগ করে বলেন, জিম্মি করে তাকে অস্ত্রের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করতে সেদিন গভীর রাত পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক শীর্ষ কর্মকর্তা তাদের অফিসে অবস্থান করছিলেন। আর সবটাই হয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ফজলে কবিরের নজরদারিতে।
১৯৮৩ সালে গঠিত শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় ২০০৬ সালে, যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার কাছ থেকে ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের ৩২টি চেকবই পাওয়া যায়। সে সময় গণমাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
তথ্য ও পরিসংখ্যান ছাড়াই ইসলামী ব্যাংককে সন্ত্রাসে অর্থায়নের সঙ্গে জড়িত করে অনেক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বলছিলেন একসময় ব্যাংকটির মুখপাত্র আবদুল মান্নান।
২০১১ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু অভিযোগ করেন, ইসলামী ব্যাংক মুনাফার ৮ শতাংশ সন্ত্রাসে অর্থায়নে ব্যয় করেছে। এতে ব্যাংকটির আরও এক দফা সুনাম ক্ষুণ্ন হয়।
‘এটি ছিল একজন অত্যন্ত দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে সবচেয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য এবং আমি মনে করি এই মন্তব্যের জন্য সরকারের তাকে বরখাস্ত করা উচিত ছিল।’
এম এ মান্নান বলেন, ‘মন্ত্রী তার ভুল বুঝতে পেরেছিলেন এবং আমি তার বাসায় গেলে তিনি আমাকে বলেন, এটা তার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।’
কিন্তু ততক্ষণে ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।
টুকুর এই অভিযোগ বিশ্ববাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সেবাদাতা ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকের লেনদেন সক্ষমতাকে ‘মারাত্মকভাবে প্রভাবিত’ করে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ফাঁসির দাবিতে ২০১৩ সালে শাহবাগে আন্দোলনকারীরা আন্দোলন করলে ব্যাংকটির ওপর চাপ আবার তীব্র হয়।
বিক্ষোভ চলার মধ্যেই একজন অর্থনীতিবিদ অভিযোগ করেন, সন্ত্রাসে অর্থায়নের জন্য ব্যাংকটি থেকে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বের করে নেওয়া হয়েছে।
তারা সবাই ইসলামী ব্যাংককে জামায়াতে ইসলামীর ব্যাংক হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং এর অধিগ্রহণের কথা ছড়িয়ে পড়ে,’ বলেন মান্নান।
আব্দুল মান্নান বলেন, প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকটির ৭০ শতাংশ শেয়ার ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকসহ (আইডিবি) বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ছিল, ১৫ শতাংশ স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের হাতে, ৫ শতাংশ সরকারের হাতে এবং ১০ শতাংশ ছিল শেয়ার বাজারে।
তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আতিউর রহমান ব্যাংকটিকে অধিগ্রহণ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন।
‘এটি আমাদের জন্য একটা বড় সহায়তা ছিল,’ তিনি যোগ করেন।
২০১৬ সালে ব্যাংকটির মালিকানা আরও খারাপের দিকে যেতে শুরু করে যখন বিভিন্ন গোষ্ঠী ব্যাংকটি বন্ধ করে দেওয়া বা এটি অধিগ্রহণের জন্য সরকারের উপর চাপ তৈরি করে।
সরকারের নির্দেশে ব্যাংকটিতে চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, যা ইঙ্গিত দেয় যে ব্যাংকটি দ্রুত অধিগ্রহণ করা হচ্ছে।
চার স্বতন্ত্র পরিচালক হলেন- ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী ও ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আজিজুল হক।
ইসলামী ব্যাংকের এস আলম গ্রুপের ‘পেছনের দরজা দিয়ে’ এসে দখল করার প্রাথমিক পর্যায়। যা থেকে সতর্ক হতে শুরু করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।
লন্ডনভিত্তিক ইকোনোমিস্ট ম্যাগাজিন ২০১৭ সালে এক প্রতিবেদনে জানায় বোর্ডরুম ক্যু’র বিষয়ে সৌদি আরব ও কুয়েতের শেয়ারহোল্ডারদের কিছুই জানানো হয়নি এবং এ নিয়ে তারা অভিযোগ জানিয়েছিলেন।
তাদের মধ্যে একটি ছিল জেদ্দা ভিত্তিক আইডিবি। তারা বলছে ২০১৭ এর জানুয়ারিতে মাত্র তিন দিনের নোটিশে বোর্ড মিটিং ডাকা হয়, যে কারণে তারা কাউকে পাঠাতে পারেনি। পরে আইডিবি ইসলামী ব্যাংকের সব শেয়ার বিক্রি করে দেয়।
ওই মাসেই ক্ষমতা দখলের কাজ শেষ হলে দেশের অন্যতম প্রভাবশালী আমলা হিসেবে বিবেচিত আরাস্তু খানকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এক বছরের কিছু বেশি সময় তিনি কাজ করতে পেরেছিলেন। তার আকস্মিক প্রস্থান অন্যান্য পরিচালক এবং কর্মচারীদের হতবাক করেছিল, একজন পরিচালক জানিয়েছিলেন যে আরও পরিবর্তন আসছে।
এস আলমের ‘বোর্ডরুম ক্যু’র আগে বাংলাদেশের ইসলামি ব্যাংকিং সম্পদের এক-তৃতীয়াংশই ছিল এই ব্যাংকটির কাছে। ১০ বিলিয়ন ডলারের ব্যালেন্স শিট থাকা এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমেই বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের এক চতুর্থাংশেরও বেশি আসত। আর এ সবই এস আলমকে এই ব্যাংকের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
ইসলামী ব্যাংকে বিপুল সংখ্যক শেয়ার কিনতে চট্টগ্রামভিত্তিক এ গ্রুপটি নিজেদের লোক মাঠে নামায়।
‘আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে এস আলম গ্রুপ বেসরকারি খাতের বৃহত্তম ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নিতে চলেছে। এর আগে ইসলামী ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনছে যেসব কোম্পানি, সেগুলো আমাদের পরিচিত ছিল না,’ বলেন মান্নান।
২০১৬ সাল থেকে ব্যাংকটির শ্রেণিকৃত ঋণ ১৯৩ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। পুঁজিবাজারে সবচেয়ে সম্পদশালী কোম্পানি হিসেবেও শীর্ষস্থান হারিয়েছে এটি।
ব্যাংকের নথি অনুসারে, পরিচালনা পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর মোহাম্মদ সাইফুল আলমের মালিকানাধীন চট্টগ্রামভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক থেকে ৭৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়, যা চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের মোট বকেয়া ঋণের ৪৭ শতাংশ।

অর্থনীতি
ডিজিটাল ব্যাংকের আবেদনপত্র চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশীয় প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করেছে। চলতি বছরের ১–৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদনকারীদের পাঁচ লাখ টাকা ফি জমা দিতে হবে, এবং সব সেবা হবে সম্পূর্ণ ডিজিটাল। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক খাতে বৈশ্বিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এর লক্ষ্য হলো আর্থিক খাতের দক্ষতা বাড়ানো, সেবার পরিসর বিস্তৃত করা আর ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (সিএমএসই) অর্থায়নের সুযোগ সহজ করা।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুযোগ কাজে লাগিয়ে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ঋণপ্রবাহ সহজ করতে ডিজিটাল ব্যাংককে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার মনে করছে তারা।
আবেদনকারীদের নির্ধারিত প্রস্তাবপত্রের সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকা (অফেরতযোগ্য) ফি জমা দিতে হবে। এ টাকা যেকোনো তফসিলি ব্যাংক থেকে ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে দিতে হবে। শর্ত পূরণ না করলে আবেদন বাতিল হবে।
এ ছাড়া আবেদনপত্র সরাসরি জমা দেওয়ার পাশাপাশি ই-মেইলের মাধ্যমেও সব নথি জমা দিতে হবে। বিস্তারিত নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) মহাব্যবস্থাপক মো. বায়াজিদ সরকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, ধারাবাহিক প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ফলে বৈশ্বিক আর্থিক খাতের চিত্র বদলে গেছে। এই পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে আর্থিক পণ্য ও সেবা প্রদানে অধিক কার্যকারিতা আনতে এবং আর্থিক ব্যবস্থার বিস্তৃত পরিসর তৈরি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
এর আগে ২০২৩ সালের ১৪ জুন ডিজিটাল ব্যাংকের নীতিমালা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ছিল ১২৫ কোটি টাকা। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা বৃদ্ধি করে ৩০০ কোটি টাকা করেছে। প্রচলিত ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে প্রয়োজন ৫০০ কোটি টাকা। ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনের আওতায় ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হবে। পেমেন্ট সার্ভিস পরিচালিত হবে ২০১৪ সালের বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশনের অধীন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনার জন্য প্রধান কার্যালয় থাকবে। সেবা দেওয়ার বেলায় স্থাপনা লাগবে না। অর্থাৎ এই ব্যাংক ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) সেবা দেবে না। ডিজিটাল ব্যাংকের নিজস্ব শাখা বা উপশাখা, এটিএম, সিডিএম অথবা সিআরএমও থাকবে না। সব সেবাই হবে অ্যাপনির্ভর, মুঠোফোন বা ডিজিটাল যন্ত্রে।
পুঁজিবাজার
পুঁজিবাজারের তিন ব্যাংকের সম্পদের মান যাচাই শুরু

সমস্যাগ্রস্ত আরও তিনটি ব্যাংকের সম্পদের গুণগত মান যাচাই (অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ–একিউআর)-এর প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন যুক্ত হওয়া তিন ব্যাংক হলো—আইএফআইসি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও এবি ব্যাংক।
জানা গেছে, বৈশ্বিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ডেলয়েটকে একিউআর কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গতকাল (২০ আগস্ট) ডেলয়েটের একটি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শনের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু করে।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো একীভূত, অধিগ্রহণ, অবসায়ন বা মূলধন জোগান দিয়ে পুনর্গঠন করা হবে কি না—তা নির্ধারণ করা হবে। ফলে নিরীক্ষা শেষে এসব ব্যাংকের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গত জুলাইয়ে দ্বিতীয় ধাপে আরও ১১টি ব্যাংকের একিউআর করার সিদ্ধান্ত হয়, যার অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। এ তালিকায় রয়েছে—এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, মেঘনা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও ইউসিবি ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, একিউআরের মাধ্যমে এসব ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি, মূলধন ঘাটতি, আমানত ও ঋণের অবস্থা স্পষ্ট হবে। একই সঙ্গে ব্যাংক একীভূত করতে কত মূলধন প্রয়োজন হবে, তাও নিরূপণ করা যাবে।
এর আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াং ও কেপিএমজি ছয়টি ব্যাংকের একিউআর সম্পন্ন করে। সেখানে দেখা যায়, এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক; খেলাপি ঋণ আগের প্রতিবেদনগুলোর তুলনায় চারগুণ বেশি।
তবে বিদেশি মালিকানার কারণে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংককে একীভূত প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে। বাকি পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করে একটি নতুন ব্যাংক গঠনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এই পাঁচ ব্যাংক একীভূত করতে প্রাথমিকভাবে ৩৫ হাজার কোটি টাকার ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা মূলধন হিসেবে সরকারের কাছে চাওয়া হবে।
পাশাপাশি আমানত বীমা তহবিল থেকে ঋণ নেওয়া এবং আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা নেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। সরকারের সম্মতি পেতে বাংলাদেশ ব্যাংক শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পাঠাবে।
অর্থনীতি
মূলধন সংকটে ২৩ ব্যাংক, ঘাটতি এক লাখ কোটি টাকা

চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে দেশের ২৩টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এসব ব্যাংকের সম্মিলিত ঘাটতির অঙ্ক দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ২৬০ কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত ডিসেম্বর শেষে ১৯টি ব্যাংকের ঘাটতি ছিল এক লাখ ৭১ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। মার্চ প্রান্তিকে ঘাটতির পরিমাণ কমলেও ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩-এ। এর মূল কারণ, ডিসেম্বরভিত্তিক ২৮টি ব্যাংককে ডেফারেল (ঋণ পরিশোধে ছাড় বা বিলম্ব) সুবিধা দেওয়া হয়, ফলে হিসাবের কাগজে ঘাটতি কম দেখা গেলেও বাস্তবে ব্যাংকগুলোর অবস্থার খুব বেশি উন্নতি হয়নি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চ শেষে ব্যাংকখাতের সিআরএআর (Capital to Risk Weighted Asset Ratio) দাঁড়িয়েছে ৬.৭৪ শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ন্যূনতম ১০ শতাংশ হওয়া দরকার। ডেফারেল সুবিধা না থাকলে এ হার হতো ঋণাত্মক ১০.৯৭ শতাংশ। গত বছরের শেষে এই হার ছিল মাত্র ৩.০৮ শতাংশ।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বড় ঘাটতি
মার্চ শেষে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে (বিকেবি) ১৮ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ৫২ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের ঘাটতি বেড়ে হয়েছে পাঁচ হাজার ৮২২ কোটি টাকা, আর রূপালী ব্যাংকের ঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। এছাড়া বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি বেড়ে হয়েছে তিন হাজার ৫০৬ কোটি টাকা এবং রাকাবের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫১১ কোটি টাকা।
ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ঘাটতি ইউনিয়ন ব্যাংকে, ১৭ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঘাটতি ৭ হাজার ৭৯০ কোটি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ৬ হাজার ৪৫৪ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৩ হাজার ৯৮১ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ৯৮০ কোটি এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ঘাটতি ১ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া এক্সিম ব্যাংকের ঘাটতি ৫২১ কোটি টাকা।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আইএফআইসি ব্যাংকের ঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা (আগে ছিল ৯ হাজার ২৯ কোটি টাকা)। ন্যাশনাল ব্যাংকের ঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। তবে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও এবি ব্যাংকের ঘাটতি বেড়ে যথাক্রমে ১ হাজার ৭৮২ কোটি এবং ৩ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। পদ্মা ব্যাংকের ঘাটতি বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ১৭১ কোটি টাকা।
ডেফারেল সুবিধা নেওয়ার পরও মার্চ প্রান্তিকে নতুন করে ঘাটতিতে পড়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংক (১,১৭১ কোটি), সীমান্ত ব্যাংক (২৬ কোটি) এবং ইউসিবি ব্যাংক (৯৫৪ কোটি)।
এবারের প্রতিবেদনে বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংকও মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। মার্চ শেষে ব্যাংকটির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৬ লাখ টাকা।
খেলাপি ঋণের প্রভাব
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, মার্চ শেষে ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। ডেফারেল সুবিধা নেওয়ার পরও খেলাপি ঋণের চাপেই ২৩টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।
ব্যাংক
প্রিমিয়ার ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

আওয়ামী লীগ নেতা ডা. এইচ বি এম ইকবালের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটির বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্বলতা এবং সুশাসনের অভাবের অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংক এই কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
নতুন গঠিত ছয় সদস্যের এই পর্ষদে আগের কোনো পরিচালককে রাখা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গঠিত এই নতুন পর্ষদে রয়েছেন পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক এবং একজন উদ্যোক্তা পরিচালক।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে তিনটি প্রধান কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত, ব্যাংকটির পর্ষদে সুশাসনের ঘাটতি ছিল; দ্বিতীয়ত, নীতি ও পলিসি বাস্তবায়নে দুর্বলতা ছিল; এবং তৃতীয়ত, ঋণ ব্যবস্থাপনা দেখা গেছে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা। এসব কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্ষদ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
নতুন পরিচালনা পর্ষদে উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে স্থান পেয়েছেন ডা. আরিফুর রহমান। তিনি উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডারদের প্রতিনিধি হিসেবে পর্ষদে যুক্ত হয়েছেন।
স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. ফোরকান হোসেন, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ফরিদুল ইসলাম, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ)-এর অধ্যাপক শেখ মোর্শেদ জাহান এবং প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগের শর্তে এফসিএস চার্টার্ড সেক্রেটারি এম নুরুল আলম।
তবে নতুন এই পর্ষদে এখনো কাউকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, পরবর্তী বোর্ড সভায় পর্ষদের সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করা হবে।
কাফি
ব্যাংক
পদত্যাগ করেছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি

এক বছরের কম সময় দায়িত্বে থেকে পদত্যাগ করেছেন ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ মোহাম্মদ মারুফ। গত বৃহস্পতিবার তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।
গত বছরের অক্টোবর মাসে ঢাকা ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগ দেন শেখ মোহাম্মদ মারুফ। এর আগে তিনি সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত এমডি ছিলেন।
ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংকের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান পরিচালক হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠেন। কেউ কেউ নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন কার্যালয়ে। এ নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হওয়ায় এমডিকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।
তবে শেখ মোহাম্মদ মারুফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এ কারণে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার বলেন, আমাদের সঙ্গে কোনো সমস্যা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কিছু নিয়ম পরিপালন করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর পদত্যাগপত্র আমরা পেয়েছি। সোমবার পর্ষদ সভায় তাঁর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
চলতি মাসের শুরুতে এক সপ্তাহের মধ্যে তিন ব্যাংকের এমডি পদত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডিকে আগে থেকেই ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল। এ ছাড়া মেঘনা ও কমার্স ব্যাংকের এমডি হঠাৎ সরে দাঁড়ান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো এমডি পদত্যাগ করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তার কারণ অবহিত করতে হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেয়, পদত্যাগ কার্যকর হবে কি না। এর আগে পদত্যাগ করা কোনো এমডিকে আবার কাজে ফেরানো হয়েছে—এমন নজিরও আছে।