ব্যাংক
অস্ত্রের মুখে যেভাবে দখল হয় ইসলামী ব্যাংক
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িতদের জন্য ইসলামী ব্যাংক ছিল লোভনীয় টার্গেট। বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালে যখন শেখ হাসিনার আশীর্বাদপুষ্ট একটি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী জোর করে দখলে নেয় তখন আমানতের দিক থেকে শীর্ষে ছিল এটি। এই ঘটনা বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে ‘ডাকাতি’র একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি সকালে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) কয়েকজন সদস্য ইসলামী ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান, একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বাসা থেকে তুলে এনে একে একে এজেন্সির প্রধান দপ্তরে হাজির করে।
তাদেরকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পরে, ঢাকার একটি হোটেলে সামরিক কর্মকর্তাদের নজরদারির মধ্যে ব্যাংকের বোর্ড মিটিংয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগ করা হয়।
এই ঘটনার সাত বছর পর এস আলম গ্রুপের ইসলামী ব্যাংক দখল নিয়ে নীরবতা ভাঙলেন ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মান্নান।
শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে যা ছিল ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে নেতিবাচক ঘটনাগুলোর অন্যতম।
‘এটা খুবই হতাশাজনক যে একটি সরকারি নিরাপত্তা সংস্থাকে একটি বেসরকারি গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য পূরণে ব্যবহার করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত, কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এর সঙ্গে জড়িত ছিল বলে মনে করছি,’ গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন আবদুল মান্নান।
তিনি বলেন, ‘আমাকে ডিজিএফআই প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আকবর হোসেনের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি প্রথমে আমার প্রশংসা করেন, অর্থনীতি সম্পর্কে আমার পরামর্শ চান আর তারপরই আমাকে পদত্যাগ করতে বলেন।’
পদত্যাগ না করার কথা ভদ্রভাবে আমি তাকে জানাই, বলেন আব্দুল মান্নান।
মান্নান বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে আমার একটা আবেগের সম্পর্ক রয়েছে এবং পদত্যাগ করা আমার জন্য খুবই কঠিন ছিল। আমি ব্যাংকের প্রথম দিন থেকেই এর সঙ্গে জড়িত ছিলাম। বিশ্বের কোনো প্রতিষ্ঠানের এমডিকে এমন চাপের মুখোমুখি হতে হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।’
মান্নানের কাছে ডিজিএফআই অফিস ‘নরকের মতো’ মনে হয়েছিল।
তিনি যখন বলেন যে তার জন্য পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন, তখন ডিজিএফআই প্রধান বলেছিলেন ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ চায় আবদুল মান্নান যেন ব্যাংক ছেড়ে চলে যান।
‘ডিজিএফআই অফিসের ভেতরে আমার এত খারাপ লাগছিল যে তারা কয়েকবার আমার রক্তচাপ মাপেন।’
২০১০ সাল থেকে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা আব্দুল মান্নান অভিযোগ করে বলেন, জিম্মি করে তাকে অস্ত্রের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করতে সেদিন গভীর রাত পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক শীর্ষ কর্মকর্তা তাদের অফিসে অবস্থান করছিলেন। আর সবটাই হয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ফজলে কবিরের নজরদারিতে।
১৯৮৩ সালে গঠিত শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় ২০০৬ সালে, যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার কাছ থেকে ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের ৩২টি চেকবই পাওয়া যায়। সে সময় গণমাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
তথ্য ও পরিসংখ্যান ছাড়াই ইসলামী ব্যাংককে সন্ত্রাসে অর্থায়নের সঙ্গে জড়িত করে অনেক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বলছিলেন একসময় ব্যাংকটির মুখপাত্র আবদুল মান্নান।
২০১১ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু অভিযোগ করেন, ইসলামী ব্যাংক মুনাফার ৮ শতাংশ সন্ত্রাসে অর্থায়নে ব্যয় করেছে। এতে ব্যাংকটির আরও এক দফা সুনাম ক্ষুণ্ন হয়।
‘এটি ছিল একজন অত্যন্ত দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে সবচেয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য এবং আমি মনে করি এই মন্তব্যের জন্য সরকারের তাকে বরখাস্ত করা উচিত ছিল।’
এম এ মান্নান বলেন, ‘মন্ত্রী তার ভুল বুঝতে পেরেছিলেন এবং আমি তার বাসায় গেলে তিনি আমাকে বলেন, এটা তার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।’
কিন্তু ততক্ষণে ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।
টুকুর এই অভিযোগ বিশ্ববাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সেবাদাতা ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকের লেনদেন সক্ষমতাকে ‘মারাত্মকভাবে প্রভাবিত’ করে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ফাঁসির দাবিতে ২০১৩ সালে শাহবাগে আন্দোলনকারীরা আন্দোলন করলে ব্যাংকটির ওপর চাপ আবার তীব্র হয়।
বিক্ষোভ চলার মধ্যেই একজন অর্থনীতিবিদ অভিযোগ করেন, সন্ত্রাসে অর্থায়নের জন্য ব্যাংকটি থেকে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বের করে নেওয়া হয়েছে।
তারা সবাই ইসলামী ব্যাংককে জামায়াতে ইসলামীর ব্যাংক হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং এর অধিগ্রহণের কথা ছড়িয়ে পড়ে,’ বলেন মান্নান।
আব্দুল মান্নান বলেন, প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকটির ৭০ শতাংশ শেয়ার ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকসহ (আইডিবি) বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ছিল, ১৫ শতাংশ স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের হাতে, ৫ শতাংশ সরকারের হাতে এবং ১০ শতাংশ ছিল শেয়ার বাজারে।
তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আতিউর রহমান ব্যাংকটিকে অধিগ্রহণ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন।
‘এটি আমাদের জন্য একটা বড় সহায়তা ছিল,’ তিনি যোগ করেন।
২০১৬ সালে ব্যাংকটির মালিকানা আরও খারাপের দিকে যেতে শুরু করে যখন বিভিন্ন গোষ্ঠী ব্যাংকটি বন্ধ করে দেওয়া বা এটি অধিগ্রহণের জন্য সরকারের উপর চাপ তৈরি করে।
সরকারের নির্দেশে ব্যাংকটিতে চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, যা ইঙ্গিত দেয় যে ব্যাংকটি দ্রুত অধিগ্রহণ করা হচ্ছে।
চার স্বতন্ত্র পরিচালক হলেন- ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী ও ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আজিজুল হক।
ইসলামী ব্যাংকের এস আলম গ্রুপের ‘পেছনের দরজা দিয়ে’ এসে দখল করার প্রাথমিক পর্যায়। যা থেকে সতর্ক হতে শুরু করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।
লন্ডনভিত্তিক ইকোনোমিস্ট ম্যাগাজিন ২০১৭ সালে এক প্রতিবেদনে জানায় বোর্ডরুম ক্যু’র বিষয়ে সৌদি আরব ও কুয়েতের শেয়ারহোল্ডারদের কিছুই জানানো হয়নি এবং এ নিয়ে তারা অভিযোগ জানিয়েছিলেন।
তাদের মধ্যে একটি ছিল জেদ্দা ভিত্তিক আইডিবি। তারা বলছে ২০১৭ এর জানুয়ারিতে মাত্র তিন দিনের নোটিশে বোর্ড মিটিং ডাকা হয়, যে কারণে তারা কাউকে পাঠাতে পারেনি। পরে আইডিবি ইসলামী ব্যাংকের সব শেয়ার বিক্রি করে দেয়।
ওই মাসেই ক্ষমতা দখলের কাজ শেষ হলে দেশের অন্যতম প্রভাবশালী আমলা হিসেবে বিবেচিত আরাস্তু খানকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এক বছরের কিছু বেশি সময় তিনি কাজ করতে পেরেছিলেন। তার আকস্মিক প্রস্থান অন্যান্য পরিচালক এবং কর্মচারীদের হতবাক করেছিল, একজন পরিচালক জানিয়েছিলেন যে আরও পরিবর্তন আসছে।
এস আলমের ‘বোর্ডরুম ক্যু’র আগে বাংলাদেশের ইসলামি ব্যাংকিং সম্পদের এক-তৃতীয়াংশই ছিল এই ব্যাংকটির কাছে। ১০ বিলিয়ন ডলারের ব্যালেন্স শিট থাকা এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমেই বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের এক চতুর্থাংশেরও বেশি আসত। আর এ সবই এস আলমকে এই ব্যাংকের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
ইসলামী ব্যাংকে বিপুল সংখ্যক শেয়ার কিনতে চট্টগ্রামভিত্তিক এ গ্রুপটি নিজেদের লোক মাঠে নামায়।
‘আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে এস আলম গ্রুপ বেসরকারি খাতের বৃহত্তম ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নিতে চলেছে। এর আগে ইসলামী ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনছে যেসব কোম্পানি, সেগুলো আমাদের পরিচিত ছিল না,’ বলেন মান্নান।
২০১৬ সাল থেকে ব্যাংকটির শ্রেণিকৃত ঋণ ১৯৩ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। পুঁজিবাজারে সবচেয়ে সম্পদশালী কোম্পানি হিসেবেও শীর্ষস্থান হারিয়েছে এটি।
ব্যাংকের নথি অনুসারে, পরিচালনা পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর মোহাম্মদ সাইফুল আলমের মালিকানাধীন চট্টগ্রামভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক থেকে ৭৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়, যা চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের মোট বকেয়া ঋণের ৪৭ শতাংশ।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বিটকয়েনের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ
একটি বিটকয়েনের দাম ১ লাখ ছুইছুই করছে। আজ শুক্রবার বিটকয়েনের দাম ৯৯ হাজার ৩৮০ ডলারে ছাড়িয়েছে। এই দাম বিটকয়েনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিটকয়েনের দাম বাড়তে থাকে। আর্থিক বাজারের প্রত্যাশা, ট্রাম্প প্রশাসন ক্রিপ্টোবান্ধব হবে। খবর রয়টার্সের
এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থাটি বলছে, চলতি বছর বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের দাম দিগুণের বেশি হয়েছে। গত ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর বিটকয়েনের দাম ২৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। গত দুই সপ্তাহের মধ্যে এটি বেড়েছে ৪৫ শতাংশের বেশি। আজ শুক্রবার একটি বিটকয়েন বিক্রি হয়েছে ৯৯ হাজার ৩৮০ ডলারে।
মূল্যবৃদ্ধির দৌড়ে বিটকয়েন পাল্লা দিচ্ছে ইলন মাস্কের টেসলার সঙ্গে। ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে টেসলার শেয়ারের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ। বিনিয়োগকারীরা মনে করেছেন, ট্রাম্পের বন্ধুরা এবং যেসব বিষয়ে তার আগ্রহ আছে, সেসব বিষয় তিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ভালো করবে।
সিডনির এটিএফএক্স গ্লোবালের প্রধান বাজার বিশ্লেষক নিক টুইডেল বলেন, ‘বিটকয়েনের দাম বাড়ছে ট্রাম্পের জন্যই। কারণ, তিনি এই শিল্পের খুবই সমর্থনকারী। এর মানে হলো, ক্রিপ্টোর মজুত ও মুদ্রা উভয়েইর চাহিদা আরও বাড়বে। নির্বাচনের ফল আসার পর বিটকয়েনের দাম প্রায় রেকর্ড পর্যায়ে ওঠার মানে হলো, এই মুদ্রার ওপরে কেবল খোলা আকাশ রয়েছে।’
গত ১০ নভেম্বর আগের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ৮০,০০০ ডলারে পৌঁছে যায়। বিশেষজ্ঞরা রুশ বার্তা সংস্থা তাসকে বলেছেন, বর্তমান বৃদ্ধির পর্যায়ে থাকলে বিটকয়েনের দাম ৩ লাখ ডলারে পৌঁছানোও অবাক করার মতো কিছু হবে না।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারকারীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার মাধ্যমে এর দাম ওঠা-নামা করে। ২০০৮ সালের নভেম্বরে সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামে বিটকয়েন কারেন্সি মার্কেটে প্রকাশ করা হয়।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ব্যাংকে কলমানি সুদহার ১০ শতাংশ ছাড়ালো
ব্যাংক খাতে কলমানি সুদহার সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। সপ্তাহের শেষ দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার কলমানি বাজারে এক দিনের জন্য ধার নেওয়া টাকার গড় সুদহার উঠেছে ১০ দশমিক ০৯ শতাংশে। ১৩ নভেম্বর থেকে এই সুদহার ১০ শতাংশ বা তার ওপরে রয়েছে। কলমানি বাজারে সুদহার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এর আগে সাম্প্রতিক সময়ে কলমানি বাজারে এক দিনের জন্য টাকা ধারের ক্ষেত্রে সুদহার ১০ শতাংশের ওপরে ওঠেনি। আবার চার দিন ও সাত দিনের জন্য টাকা ধারের ক্ষেত্রে এই সুদহার আরও বেশি। গতকাল চার দিনের ধারের ক্ষেত্রে গড় সুদহার ছিল সোয়া ১২ শতাংশ। আর সাত দিনের ধারের ক্ষেত্রে এই সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। তবে কলমানিতে বিভিন্ন মেয়াদে ধারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি টাকা লেনদেন হয় এক দিনের ধার হিসেবে।
কলমানি হচ্ছে সরকারি–বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যে টাকা ধার দেওয়া–নেওয়ার একটি ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় যেসব ব্যাংকের হাতে নগদ টাকার সংকট থাকে তারা তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে যেসব ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত তারল্য বা অর্থ থাকে তাদের কাছ থেকে টাকা ধার করে। এ জন্য সুদ দিতে হয়। সুদহার নির্ধারিত হয় চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে। ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে টাকা ধার দেওয়া–নেওয়া করলেও দিন শেষে লেনদেন ও সুদের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কলমানি বাজারের প্রতিদিনের লেনদেন ও সুদের তথ্য প্রকাশ করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ২০১৬ সাল থেকে কলমানি বাজারের তথ্য রয়েছে। সেই তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৬ সালের পর গতকালই প্রথম কলমানিতে এক দিনের ধারের ক্ষেত্রে গড় সুদহার ১০ দশমিক ০৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এদিন এক দিনের জন্য কলমানিতে ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা লেনদেন হয়, যার সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ১১ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। এক দিনের ধারের ক্ষেত্রে কলমানিতে গড় সুদহার প্রথম ১০ শতাংশে উন্নীত হয় ১৩ নভেম্বর। ওই দিন এই বাজারে এক দিনের জন্য ৩ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।
ব্যাংকাররা বলছেন, বর্তমানে কিছু ব্যাংক তীব্র তারল্যসংকটে রয়েছে। এসব ব্যাংকের সংকট এতটাই প্রকট যে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী টাকাও ফেরত দিতে পারছে না। আবার সরকারি ট্রেজারি বিল–বন্ডের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় অনেক ব্যাংক বেশি লাভের আশায় কলমানির বদলে বিল–বন্ডে অর্থ বিনিয়োগ করছে। ফলে কলমানিতে টাকা ধার দেওয়া বা এই বাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া ব্যাংকের সংখ্যা কমে গেছে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
আদানির সঙ্গে ২৫০ কোটি ডলারের চুক্তি বাতিল!
ঘুষ দেয়া ও প্রতারণার মাধ্যমে কয়েকশ’ কোটি ডলারের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাগিয়ে নেয়ায় অভিযুক্ত ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির বিরুদ্ধে সম্প্রতি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে নিউইয়র্কের একটি আদালত। এ নিয়ে বেশ বিপাকেই পড়েছেন তিনি। তবে এর মধ্যেই আরও এক দুঃসংবাদ পেলো আদানি গ্রুপ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে আলজাজিরা জানিয়েছে, আদানি শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থের চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে আফ্রিকার দেশ কেনিয়া।
কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দেশটির পার্লামেন্টে দেয়া এক ভাষণে, আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে হওয়া দুটি চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেন।
এর মধ্যে একটি চুক্তির অর্থমূল্য প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। এই চুক্তির আওতায় দেশটির জোমো কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দ্বিতীয় রানওয়ে করার কথা ছিল আদানি গোষ্ঠীর। এছাড়া ৩০ বছর মেয়াদি ইজারার (লিজ) আওতায় বিমানবন্দরের যাত্রী টার্মিনাল উন্নত করার কথা ছিল।
এছাড়া আদানির সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি ৭৩ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের সরকারি-বেসরকারি খাতের একটি অংশীদারত্ব (পিপিপি) চুক্তিও বাতিল করার কথা জানান রুটো।
কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি পরিবহন এবং জ্বালানি ও পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে অবিলম্বে চুক্তি বাতিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
তদন্তকারী সংস্থা ও অংশীদার দেশগুলোর কাছ থেকে পাওয়া নতুন তথ্যের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
মুডিসের রেটিংয়ে সঠিক চিত্র উঠে আসেনি দাবি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
ঋণমান নির্ণয়কারী মার্কিন এজেন্সি মুডিস রেটিংয়ে বাংলাদেশের আর্থ-রাজনৈতিক অবস্থার সঠিক চিত্র উঠে আসেনি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান কমানোর মাত্র দুদিনের মাথায় ছটি বেসরকারি ব্যাংকের ঋণমান কমানোর পর বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাতে এমন দাবি করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এতে বলা হয়, দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি একটি বড় রূপান্তরের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে। এর ইতিবাচক ফল পেতে আরও সময় লাগবে। দেশি-বিদেশি অংশীদারদের সমর্থন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি বাড়াবে।
এর আগে, গত বুধবার (২১ নভেম্বর) ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে মুডিস।
একই সময়ে মুডিস ছটি ব্যাংকের এলটি ডিপোজিট বা দীর্ঘমেয়াদি আমানতের রেটিং পূর্বাভাস পরিবর্তন করে স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচক করেছে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ডলার
এক সপ্তাহের ব্যবধানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার বেড়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন তথ্য প্রকাশ করেছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, এক সপ্তাহের ব্যবধানে রিজার্ভ ছয় কোটি ১০ লাখ বেড়ে এক হাজার ৮৪৯ কোটি কোটি ৪০ লাখ ডলারে দাঁড়াল। বর্তমানে বিভিন্ন তহবিলসহ গঠিত মোট রিজার্ভ দুই হাজার ৪২৭ কোটি ডলার।
আগের সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দুই মাসের বিল পরিশোধের পর নভেম্বরের মাঝামাঝি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।
আকু হলো আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তির ব্যবস্থা। এর সদস্যদেশ হলো বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি এ তালিকা থেকে বাদ পড়েছে শ্রীলঙ্কা।
আকুর বিল পরিশোধ ছাড়াও রিজার্ভ থেকে দৈনন্দিন ভিত্তিতে বিদেশি ঋণ ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয় বাংলাদেশকে। সরকারের জরুরি আমদানি ব্যয় পরিশোধে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিও করতে হয়।
অন্যদিকে বৈদেশিক ঋণ, অনুদান, প্রবাসী আয়ের নির্দিষ্ট অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ হিসেবে জমা হয়।
কাফি