অর্থনীতি
কয়েকটি ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলতে গ্রাহকদের ভোগান্তি

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকে চেক নিয়ে গত সপ্তাহের পুরোটা সময় ঘোরাঘুরি করেও চাহিদামতো টাকা তুলতে পারেননি গ্রাহকরা, যা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা। অ্যাপ ও অনলাইনে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সীমিত করে রাখা এসব ব্যাংকে লেনদেন করতে না পেরে কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করেও গ্রাহকরা কোনো সমাধান পাননি। আবার যেমন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক-এফএসআইবিতে টাকা তুলতে গেলে তাদের বলা হয়েছে, যার যে শাখায় অ্যাকাউন্ট, তাকে সেই শাখায় গিয়ে টাকা তুলতে হবে।
গত সপ্তাহের প্রথম কার্যাদিবস ছিল রোববার, ২৫ অগাস্ট। সেদিন থেকে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর অনেক গ্রাহক টাকা তুলতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনা ও ভোগান্তির শিকার হওয়ার তথ্য দিয়েছেন। মূলত এসব ব্যাংকের কাছে নগদ টাকা না থাকায় গ্রাহকদের এই ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে, যা স্বীকার করেছেন ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারাও। অবশ্য তারা বলছেন, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে সব ঠিক হয়ে যাবে।
সাধারণ আমানত, মেয়াদি আমানত, বেতনের টাকা, সঞ্চয়- কোনো ধরনের হিসাব থেকেই চাহিদামতো টাকা তুলতে অথবা অনলাইনে অন্য ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়েও স্থানান্তর করতে পারেননি গ্রাহকরা। গত সপ্তাহজুড়ে ব্যাংকগুলোর এমন কার্যকলাপে হতাশা ও আস্থাহীনতায় ভুগছেন গ্রাহকরা, যারা তাদের জমানো টাকার নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কায় পড়েছেন।
এমন একজন ভুক্তভোগী বেসরকারি চাকরিজীবী সাইদুর রহমান। গত সপ্তাহে ঢাকার মতিঝিলের দিলকুশায় এফএসআইবির শাখায় নিজের একাউন্ট থেকে চেক দিয়ে এক লাখ টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। ক্যাশ কাউন্টার থেকে তাকে বলা হয়, ২০ হাজার টাকার বেশি দিতে পারবে না। কেন দিতে পারবেন, সাইদুরের সেই প্রশ্নের জবাবে ব্যাংক কর্মকর্তারা তাকে বলেন, নগদ টাকার সংকট চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও তারা টাকা পাচ্ছেন না। তাই শাখার হাতে যে পরিমাণ টাকা আছে, তা-ই সবাইকে একটু একটু করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। হতাশ সাইদুর বাধ্য হয়েই ২০ হাজার টাকা নিয়ে ফিরে আসেন।
তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “আমার টাকা আমিই তুলতে পারছি না, এর চেয়ে হতাশার আর কিছু হয়! ব্যাংকের যে এই অবস্থা, অথবা কোনো সমস্যা, তা তো আগে থেকে নোটিশ দিয়ে জানানো হয়নি। পুরো অবস্থাটা অদ্ভুত লেগেছে।
ফার্স্ট সিকিউরিটির আরেকজন গ্রাহক কয়েকদিন ধরে অনলাইন লেনদেন করতে ব্যর্থ হয়ে গত সপ্তাহের বুধবার মহাখালী শাখায় তার স্যালারি অ্যাকাউন্ট থেকে বেতনের জমানোর টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তাকে পড়তে হয় অন্যরকম এক অভিজ্ঞতার মুখে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, আমি ২০ হাজার টাকার কিছু বেশি টাকার চেক ক্যাশ কাউন্টারে দেই। তারা চেকটি ধরে কাজ করতে করতেই আমার দিকে না তাকিয়েই বলেন, হবে না। এখান থেকে আপনাকে টাকা দেওয়া যাবে না। “কেন, কী হইছে? আমি জানতে চাইলে ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, আপনার অ্যাকাউন্ট খোলা যেখানে, সেখান থেকে টাকা তুলতে হবে, আমরা দিতে পারব না।”
তারপর কী হলো- জানতে চাইলে ওই গ্রাহক বলেন, “আমি তাদের কাছে জানতে চাইলাম, আমার অ্যাকাউন্ট যদি দিনাজপুর হয়, তাহলে আমাকে সেখানেই যেতে হবে? উত্তরে এলো- আমাদের কিছু করার নেই, আপনারটা আপনাকেই একটু ব্যবস্থা করে নিতে হবে।” ব্যাংকে টাকা তুলতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতার মুখে আগে কখনও পড়েছেন কি না, জানতে চাইলে ওই গ্রাহক বলেন, “মনে পড়ে না।”
তারল্য সংকট রয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্শিয়াল ব্যাংকেরও। গ্রাহকরা গিয়ে চাহিদামতো টাকা না পেয়ে মুখ কালো করে ফিরছেন। ক্ষমতার পালাবদলের পর ব্যাংক খাতের সংস্কারের কথা বলেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ‘দুর্বল’ ব্যাংকগুলোর মালিকায় ব্যাপক অনিয়ম, পরিচালনায় সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট হওয়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানোর সক্ষমতা তলানিতে এসে ঠেকেছে, যা নিয়ে দীর্ঘদিন করে কথা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তাদের পছন্দের গভর্নরকে অপসারণ করে সেখানে বসানো হয় অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুরকে। তিনি ব্যাংক খাতে সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন, তবে এর জন্য সময়ও চেয়েছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আস্থাহীনতা বা শঙ্কা থেকে গ্রাহকরা টাকা তুলে ব্যাংকগুলো যেন খালি করে না ফেলে এবং সেই সঙ্গে আরও কিছু ‘কৌশলগত’ কারণে গ্রাহকের দিনপ্রতি সর্বোচ্চ টাকা তোলার সীমা বেঁধে দিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ দেশের ব্যাংকিং খাত সচল রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত সপ্তাহে দিনপ্রতি ব্যাংক থেকে টাকা তোলার সীমা ছিল ৪ লাখ। অথচ শরিয়াভিত্তিক ‘দুর্বল’ ও ‘রেড জোন’ভুক্ত ব্যাংকগুলো দিতে পেরেছে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা। আবার কোনো কোনো শাখায় ৩০ হাজার টাকার চেক নিয়ে গেলে ১০ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলেছে, “আপাতত চলুন, আগামী সপ্তাহ থেকে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকরা গত বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা নগদ তুলতে পেরেছেন বলে তথ্য রয়েছে। ব্যাংকটির দিলকুশা প্রিন্সিপাল শাখায় থেকে কিছু কিছু গ্রাহক তাদের চাহিদা মোতাবেক টাকা পেয়েছেন, যদিও তা ৪ লাখ টাকার নিচে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দুজন সেনাকর্মকর্তা এক লাখ টাকার চেক নিয়ে এলে তাদের টাকা দিয়ে দেওয়া হয়।
ব্যাংকটির দিলকুশার প্রিন্সিপাল শাখার ম্যানেজার মো. মোতাল্লেবের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে? জবাবে তিনি বলেন, “তারল্য সংকট রয়েছে। তাই আমরা গ্রাহকের চাহিদা মোতাবেক টাকা দিতে পারছি না। আগামী সপ্তাহে এ সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে।”
ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ করমার্শিয়াল ব্যাংকেও একই অবস্থা। ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বেশি নগদ দিতে পারছে না তারা। চলতি বছর ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর ব্যাংক খাতে পরিবর্তনের হাওয়া লাগে; ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে যারা যাত্রা শুরু। চরম অনিয়ম ও ঋণ জালিয়াতের মাধ্যমে ব্যাংকটি থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বের হয়ে যাওয়ায় এটি ‘দুর্বল’ হিসেবে চিহ্নিত হয়। যে কারণে পরিচালনা পর্ষদ বোর্ড পুনর্গঠনসহ ব্যাংকিং পরিচালনা নীতিতেও পরিবর্তন চাচ্ছেন ইসলামী ব্যাংকের পুরনো কর্মকর্তারা।
পরিবর্তনের ধারায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, সঙ্গে দুই ডেপুটি গভর্নর, বিএফআইইউর প্রধান ও পলিসি উপদেষ্টা পদত্যাগ করেন বা তাদের অপসারণ করা হয়।
গভর্ননের দায়িত্বে বসে আহসান মনসুর সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “অবৈধভাবে কোনো দুর্বল ব্যাংককে আর তারল্য সহায়তা দেওয়া হবে না। তা ছাড়া ইসলামী ব্যাংকেও তারল্য সহায়তা দেওয়া হবে না। কারণ এটা অর্থনীতির জন্য ভালো হবে না।”
মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক গত দুই বছর ধরে এস আলমের দখলে থাকা ইসলামী শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দিয়ে আসছিল, টাকা ছাপিয়েও তাদের দেওয়া হয়েছে বলে খবর রয়েছে। তবে ‘তলাফুটো’ ব্যাংকগুলো তাতেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এমন কি এসব ব্যাংক আমানতের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ টাকা রাখতেও ব্যর্থ হচ্ছিল বলে খবর রয়েছে। গভর্নর আহসান মনসুর তার কয়েকটি সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় তুলে ধরে ব্যাংক খাতের সংস্কারে উদ্যোগী হওয়ার কথা বলেছেন।
সেই পরিপ্প্রেক্ষিতে এসব ব্যাংক বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো রকম তারল্য সহায়তা পাচ্ছে না। তাই গ্রাহকরা তাদের জমানো টাকা ফেরত চাইলেও তা প্রয়োজন অনুযায়ী দিতে পারছে না ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো।
এ বিষয়ে একজন সাধারণ গ্রাহক হিসাবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অপারেশন ম্যানেজার শফিকুল আলমকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কেন ২০ হাজার টাকার বেশি টাকা উত্তলোন করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, “ব্যাংকের তারল্য সংকট রয়েছে। এটা আগামী সপ্তাহে ঠিক হয়ে যাবে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক এত দিন তারল্য সহায়তা দিয়ে আসছিল। সেটা বর্তমানে বন্ধ আছে।” যদিও এভাবে তারল্য সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি সঠিক ছিল না বলে মনে করেন ব্যাংক কর্মকর্তা শফিকুল।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
নয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে ৬৫ হাজার কোটি টাকা

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৯ মাস (জুলাই-মার্চ) শেষে রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে ৬৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। যেখানে অর্থবছরের আট মাস (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার বেশি পিছিয়ে ছিল রাজস্ব জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
গত জানুয়ারিতে শতাধিক পণ্যের ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধি কিংবা আয়কর রিটার্ন জমায় জোর প্রচারণার পরও রাজস্ব আদায়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রভাব ফেলতে পারেনি।
মার্চ পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। ওই সময়ে এনবিআরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ২২ হাজার ১৫২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
এনবিআরের পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্রে পাওয়া তথ্যানুসারে, মার্চ পর্যন্ত গত নয় মাসে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৭৯.৬২ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এনবিআর। রাজস্ব আহরণে আয়কর, শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
সূত্র জানায়, ৯ মাসে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৯৫ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা কম। এ খাতে প্রবৃদ্ধি ২.০৯ শতাংশ।
একই সময়ে শুল্ক আদায় হয়েছে ৭৪ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৬ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা কম। এ খাতে প্রবৃদ্ধি ০.৩৮ শতাংশ।
অন্যদিকে আয়কর আদায় হয়েছে ৮৬ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২৯ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা কম। আর প্রবৃদ্ধি ৫.৬৭ শতাংশ।
এনবিআর সূত্র বলছে, কেবল মার্চে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ হাজার ৯৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩৪ হাজার ৬৬৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ঘাটতি ৭ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। লক্ষ্যের তুলনায় ঘাটতি থাকলেও এ সময় রাজস্ব আহরণে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি ৯.৬৪ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। তবে অর্থবছরের মাঝপথে এসে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি করা হয়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
আমদানি মূল্য পরিশোধের নিয়মে পরিবর্তন আনলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

আমদানি মূল্য পরিশোধের নিয়মে বড় পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে যৌক্তিক ত্রুটি থাকলে ত্রুটিপূর্ণ আমদানি বিলের বিপরীতেও মূল্য পরিশোধ করা যাবে। এ নিয়ম চালুর ফলে বিদেশি সরবরাহকারীরা বিলম্বে অর্থ পাওয়ার ঝুঁকি থেকে মুক্ত হবেন বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
রবিবার (২০ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে।
এতে বলা হয়, আমদানিকারকদের সম্মতিতে যৌক্তিক ত্রুটিসম্পন্ন আমদানি বিল ব্যাংকগুলো গ্রহণ করতে পারবে এবং তার বিপরীতে অর্থ পরিশোধ করতে পারবে। তবে, পণ্যে যেন কোনো পরিবর্তন না আসে তা নিশ্চিত করতে হবে।
সার্কুলারে আরও বলা হয়, আমদানিকারকদের কাছ থেকে পাওয়া আমদানি বিলের বিপরীতে ডেলিভারি অর্ডার দেওয়ার সময়ও ব্যাংকগুলোকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এক্ষেত্রে ডকুমেন্টে কোনো ত্রুটি থাকছে কি না তা যাচাই করতে হবে।
এর আগে কাস্টমস থেকে পণ্য খালাসের পর বিল অব এন্ট্রি জমা দিলেই কেবল ত্রুটিপূর্ণ আমদানি বিল বা আমদানিকারকের কাছে সরাসরি আসা বিলের বিপরীতে মূল্য পরিশোধ করা যেত।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে ত্রুটিপূর্ণ বিলের কারণে পণ্য খালাসে দেরি হতো এবং বিদেশি সরবরাহকারীদের অর্থ পেতে অপেক্ষা করতে হতো। এখন নিয়ম সহজ হওয়ায় তারা সময়মতো মূল্য পাবেন। এতে তাদের ঝুঁকি কমবে।
তাদের মতে, নতুন নিয়ম আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফলে আমদানি ব্যয় কমবে। কারণ এতে কনফারমেশন চার্জ ও আমদানি ঋণের সুদের হার কমে আসবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
স্বাস্থ্যখাতে ১৩৮ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে চীন: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

বাংলাদেশের স্বাস্থখাতের উন্নয়নের জন্য চীন ১৩৮ দশমিক ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
রবিবার (২০ এপ্রিল) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ইউনান শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ঢাকার ধামরাইতে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের জন্য একটি হাসপাতাল তৈরি করতে সম্মত হয়েছে চীন। এছাড়াও, একটি এক হাজার শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল তৈরি নিয়েও দেশটির সাথে আলোচনা চলছে। কোভিডের সময়ে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি টিকা চীন থেকে কিনেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
চীনের রাষ্ট্রদূতের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফর সফল হয়েছে। এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশি নাগরিকরা সহজেই উন্নত চিকিৎসার জন্য চীনে যেতে পারবেন। এ ধরনের সহযোগিতা উভয় দেশের জনগণের জন্য উপকারী হবে বলেও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত নিয়ে যৌথ উদ্যোগ ও বিনিয়োগ স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
স্মারক স্বর্ণমুদ্রার দাম বাড়লো ১৫ হাজার টাকা

দেশের ইতিহাসে যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে সোনার দাম। বর্তমানে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম এক লাখ ৬৭ হাজার ৮৩৩ টাকা। এমন পরিস্থিতিতে স্মারক স্বর্ণমুদ্রার দাম ফের বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রবিবার (২০ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিটি স্মারক স্বর্ণমুদ্রার দাম ১৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এতদিন যা ছিল এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা। স্বর্ণের স্মারক মুদ্রার দাম বাড়লেও রৌপ্যমুদ্রার দাম আগের নির্ধারণ করা ৭ হাজার টাকাই থাকছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, এখন থেকে ২২ ক্যারেট সোনা দিয়ে তৈরি করা ১০ গ্রাম ওজনের স্মারক স্বর্ণমুদ্রার (বক্সসহ) প্রতিটি বিক্রি হবে এক লাখ ৫০ হাজার টাকায়। বর্তমানে বাজারে ১১টি স্মারক রৌপ্যমুদ্রা (ফাইন সিলভার) রয়েছে। রুপার স্মারক মুদ্রার ওজন ২০ গ্রাম থেকে ৩১ দশমিক ৪৭ গ্রাম। রৌপ্যমুদ্রার দাম ৭ হাজার টাকা নির্ধারণ করা আছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
১৯ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২১ হাজার কোটি টাকা

বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে ইতিবাচক ধারায় রয়েছে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্সের এ গতিধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি মাস এপ্রিলের প্রথম ১৯ দিনেই এসেছে ১৭১ কোটি ৮৭ লাখ ২০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ২০ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। চলতি মাসে প্রতিদিন গড়ে আসছে ৯ কোটি ডলার বা ১১০৪ কোটি টাকার বেশি।
রবিবার (২০ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, হুন্ডির দৌরাত্ম্য কমেছে, বন্ধ হয়েছে অর্থপাচার। এছাড়া খোলা বাজার এবং ব্যাংকে রেমিট্যান্সের ডলারের একই দাম পাচ্ছেন প্রবাসীরা। এসব কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, চলতি মাস এপ্রিলের প্রথম ১৯ দিনে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৩ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। এসময় বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৯ কোটি ডলারের বেশি। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে প্রায় ৯৯ কোটি ডলার। পাশাপাশি বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩৩ লাখ ২০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।
আলোচ্য সময়ে ৮ ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে সিটিজেনস ব্যাংক, আইসিবি ইসলামি ব্যাংক এবং পদ্মা ব্যাংক। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি ব্যাংক।
এর আগে সদ্য বিদায়ী মাস মার্চের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন (৩২৯ কোটি ডলার) ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ৪০ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা।
তথ্য বলছে, গত বছরের মার্চের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল এক দশমিক ৭১ বিলিয়ন বা ১৭১ কোটি ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে সদ্য বিদায়ী মার্চে ১৫৮ কোটি ডলার বেশি এসেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৭৮ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে একই সময়ে এসেছিল এক হাজার ৭০৮ কোটি ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরে একই সময়ের তুলনায় ৯ মাসে ৪৭০ কোটি ডলার বেশি এসেছে।
গত ডিসেম্বরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসে দেশে। সে রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস গড়লো মার্চ মাস। এ নিয়ে অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্ট থেকে টানা ৮ মাস দুই বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করলো প্রবাসী আয়। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স আসে। এরপর আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে। নভেম্বর মাসে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। এরপর জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
এসএম