অর্থনীতি
পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে বিভিন্ন দেশে বিএফআইইউয়ের চিঠি

দেশে-বিদেশে প্রভাবশালীদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে কাজ শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে পাচার অর্থ পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন দেশকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
সেই সঙ্গে সংস্থাটি পাচারকারীদের স্থানীয় সম্পদ জব্দের জোর চেষ্টা করছে। দেশের অর্থ আত্মসাৎকারীদের স্থানীয় সম্পদ অধিগ্রহণ ও পাচার অর্থ পুনরুদ্ধারে বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা চেয়ে যোগাযোগ করছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বিএফআইইউয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, আর্থিক খাতের বিতর্কিত এস আলম, সামিট, বসুন্ধরা, বেক্সিমকো, ওরিয়ন, নাসাসহ অনেক গ্রুপের তথ্য চেয়ে একাধিক দেশে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশে। প্রভাবশালীদের হাতে থাকা ব্যাংকগুলো থেকে কী পরিমাণ অর্থ বের করে পাচার হয়েছে সেটি যাচাইয়েরও কাজ চলছে।
সংস্থাটির অপর এক কর্মকর্তা বলেন, আলোচিত গ্রুপ অব কোম্পানির মালিকদের অর্থপাচারের আংশিক তথ্য বিএফআইইউয়ের কাছে রয়েছে। এখন আরও বিস্তারিত তথ্য নেওয়ার কাজ চলছে। বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের বিষয়ে তথ্য পাওয়ার পর আইনি ব্যবস্থার সুপারিশ করা হবে। পাচার অর্থ ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ হলেও দেশের সব সংস্থা মিলে জোর চেষ্টা করছে। আশা করছি সুফল বয়ে আনবে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গণমাধ্যমে দেওয়া ভাষণে জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি নামে-বেনামে ঋণের নামে কত টাকা আত্মসাৎ করে পাচার করেছেন, তার হিসাব করা হচ্ছে।
আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক ব্রিফিংয়ে বলেন, এস আলম বিশ্বের ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি, যে পরিকল্পিতভাবে ব্যাংক লুট করেছে। পৃথিবীতে কেউ এভাবে ব্যাংক ডাকাতি করেছে কি না, আমার জানা নেই। তার নামে-বেনামে থাকা সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীর অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। এ মুহূর্তে কেউ যেন এস আলম গ্রুপের সম্পদ না কেনেন।
এসএম

অর্থনীতি
কালোটাকা সাদা করার সুবিধা থাকছে না: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুবিধা তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তবে অপ্রদর্শিত অর্থ হিসেবে বাজেটে কিছু সুযোগ থাকতে পারে বলে জানান তিনি।
শনিবার (২১ জুন) দুপুরে গবেষণা প্রতিষ্ঠান র্যাপিড আয়োজিত বাজেট আলোচনায় তিনি এসব কথা জানান।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ খুব একটা কাজে আসে না। পাঁচ কোটি টাকা দিয়ে কিনে কেউ যদি এক কোটিও দেখাতে না পারে, তাহলে এটা থাকার তো কোনো দরকার নেই। এতই যখন আলোচনা হয়েছে, তা তুলে দেওয়া হোক।
এ সময় তৈরি পোশাকশিল্প মালিকরা বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন বা উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের বিষয়টি একটি প্রস্তুতিহীন পরিকল্পনা। তারা এজন্য প্রস্তুত নন।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলেন, এটি একটি প্রস্তুতিহীন পরিকল্পনা, আমরা কোনোমতেই এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুত নই।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, গ্র্যাজুয়েশন-পরবর্তী প্রযুক্তির ব্যবহারে শিল্পখাতে কর্মসংস্থান কমার শঙ্কা আছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় বাড়াতে হবে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, গ্র্যাজুয়েশন আমাদের হয়ে গেছে ২০২১ সালে। এখন আমরা প্রথম তিন বছরের পর দুই বছর এক ধরনের গ্রেস পিরিয়ডে আছি। এখন নতুন করে যদি তিন বা পাঁচ বছর চাওয়া হয়–এটা এক ধরনের আবদার হতে পারে।
অর্থনীতি
আমদানি ও সেবা ব্যয় পরিশোধে ১ লাখ ডলার পর্যন্ত বিদেশে পাঠানো যাবে

ব্যবসায়ীরা এখন থেকে চলতি লেনদেনের মাধ্যমে পণ্য আমদানি ও সেবার ব্যয় মেটাতে সর্বোচ্চ এক লাখ ডলার পর্যন্ত বিদেশে পাঠাতে পারবেন। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
নতুন এই নির্দেশনার ফলে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বিদেশে অর্থ পাঠানো আরও সহজ ও দ্রুত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এখন থেকে বিদ্যমান শিল্পনীতির আওতায় থাকা সব খাতের কোম্পানি তাদের বার্ষিক বিক্রির ১ শতাংশ অথবা সর্বোচ্চ ১ লাখ মার্কিন ডলার, যেটি বেশি হবে, তা বিদেশে পাঠাতে পারবে, যদি তা চলতি হিসাবে লেনদেন হয়।
আগে এই সুবিধা শুধু উৎপাদন ও শিল্পনীতি অনুযায়ী তালিকাভুক্ত সেবা খাতের জন্য প্রযোজ্য ছিল। নতুন নির্দেশনায় এই সুবিধা আরও বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে, এখন থেকে ট্রেডিংসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়িক লেনদেনেও প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ পাঠানো যাবে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ব্যাংক, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানি, পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের মতো আর্থিক খাতগুলো এই নতুন নির্দেশনার বাইরে থাকবে।
এছাড়াও, রয়্যালটি, কারিগরি সহায়তা, টেকনিক্যাল নলেজ ফি এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি সংক্রান্ত রেমিট্যান্সও এই বিশেষ সুবিধার আওতায় পড়বে না। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা অনুযায়ী পূর্বের মতোই নির্ধারিত অনুমোদনের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
এই পদক্ষেপ কি দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে আপনি মনে করেন?
অর্থনীতি
বাংলাদেশের জন্য ৫০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন দিলো বিশ্বব্যাংক

নতুন করে বাংলাদেশের জন্য ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। এই ঋণের মূল উদ্দেশ্য হলো- বাংলাদেশের স্বচ্ছতা, সরকারি খাতের জবাবদিহিতা এবং আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করা। প্রতি ডলার সমান ১২২ টাকা ৩৭ পয়সা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এ ঋণের পরিমাণ ৬ হাজার ১১৮ কোটি টাকা।
শনিবার (২১ জুন) বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস এ তথ্য জানায়।
সংস্থাটি জানায়, সরকারের শাসন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতিস্থাপকতা উন্নয়নে এই ঋণ সহায়তা করবে। সরকারি ও আর্থিক খাতের সংস্কারকে সমর্থন করবে এই ঋণ, যা টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই সংস্কারগুলো ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের জন্য উন্নত পরিষেবার ভিত্তিও স্থাপন করবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি টেকসইভাবে বৃদ্ধির জন্য সরকারি অর্থায়ন কীভাবে পরিচালিত হয় তার উন্নতি গুরুত্বপূর্ণ। সরকার তার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও উন্মুক্ত এবং জবাবদিহিতামূলক করার জন্য উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ নিচ্ছে, যাতে তারা জনগণকে আরও ভালো সেবা দিতে পারে। এই অর্থায়ন সরকারের নীতিমালা এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামোকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে যাতে একটি শক্তিশালী, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি গড়ে তোলা যায়। যা সবার উপকার করে। গত সপ্তাহে অনুমোদিত আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে, আমরা এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়নে সরকারকে সহায়তা করছি।
সংস্থাটি জানায়, বর্তমানে, মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত সবচেয়ে কম, যা জনগণের কাছে মানসম্পন্ন পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত করে। এই কর্মসূচি অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহের উন্নতির লক্ষ্যে সংস্কারগুলোকে সমর্থন করে। এই সংস্কারগুলো আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম অনুশীলনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে কর প্রশাসন এবং নীতি নির্ধারণকে আরও স্বচ্ছ এবং দক্ষ করে তুলবে। এছাড়াও, এটি কর ছাড় পরিচালনার জন্য আরও কৌশলগত, নিয়মতান্ত্রিক এবং স্বচ্ছ পদ্ধতিতে যাওয়ার জন্য সংস্কারগুলোকে সমর্থন করবে যার জন্য সমস্ত ছাড়ের জন্য সংসদীয় অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। তবে বর্তমানে অ্যাডহক অনুশীলন থেকে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে সমস্যা নেই হবে। অর্থায়ন আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে আর্থিক প্রতিবেদনকে সামঞ্জস্য করে এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করে কর্পোরেট গভর্নেন্স এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কাঠামোকেও শক্তিশালী করবে। এটি ব্যাংকিং খাতে দুর্বলতা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংককে সম্পূর্ণ সমাধান ক্ষমতা দিয়ে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা উন্নত করতে সহায়তা করবে।
সংস্থাটি সরকারকে কিছু শর্ত দিয়ে জানায়, সংস্কারের তৃতীয় ধাপটি সরকারি খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং দক্ষতা উন্নত করবে। ২০২৭ সালের মধ্যে, সমস্ত সরকারি প্রকল্প মূল্যায়ন নথি জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করতে হবে। প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতির ঝুঁকি কমাতে সরকারি ক্রয় ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক সরকারি ক্রয় (ই-জিপি) ব্যবহার, সুবিধাভোগীর মালিকানা প্রকাশ এবং মূল্যসীমা অপসারণ বাধ্যতামূলক করা হবে। সরকারি খাতে আর্থিক জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা উন্নত করার জন্য, নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক কার্যালয়ের নিরীক্ষণ ক্ষমতা জোরদার করা হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর স্বাধীনতা তথ্য স্বচ্ছতা উন্নত করবে, যার ফলে নাগরিকদের জন্য উন্নত পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে। পরিশেষে, একটি গতিশীল সামাজিক রেজিস্ট্রি কার্যকর করার মাধ্যমে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণদের জন্য নগদ স্থানান্তর কর্মসূচি আরও কার্যকর করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ধ্রুব শর্মা বলেন, এই অর্থায়ন নাগরিকদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ, আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও শাসনব্যবস্থা এবং সরকারি খাতের কর্মক্ষমতা উন্নত করার জন্য বাংলাদেশের উচ্চাকাঙ্ক্ষী সংস্কারকে সমর্থন করি। তথ্য ব্যবস্থার উন্নতি এবং সুবিধাভোগীদের উন্নত নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়ার মাধ্যমে সরকারি সম্পদ কার্যকরভাবে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোতে পৌঁছাবে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক ধাক্কা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়।
এই অর্থায়নের মাধ্যমে, বিশ্বব্যাংকের চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রতি মোট নতুন প্রতিশ্রুতি ৩ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সহায়তাকারী অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশকে ৪৬ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান, সুদমুক্ত এবং ছাড়মূলক ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
কাফি
অর্থনীতি
চার প্রকল্পে বাংলাদেশকে ১৩০ কোটি ডলার ঋণ দিলো এডিবি

চার প্রকল্পে বাংলাদেশকে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিলো এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রতি ডলার ১২২ টাকা ২২ পয়সা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১৫ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা।
শুক্রবার (২০ জুন) বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এই ঋণচুক্তি হয়। চুক্তিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সই করেন অর্থনৈতিক সম্পদ বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী। এডিবির পক্ষে সই করেন সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রধান হোয়ে ইউন জিয়ং।
বাংলাদেশে ব্যাংক খাত স্থিতিশীল ও সংস্কারের জন্য ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। নিয়ন্ত্রক তত্ত্বাবধান, করপোরেট সুশাসন, সম্পদের মান এবং স্থিতিশীলতা জোরদার করে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতকে স্থিতিশীল ও সংস্কারের জন্য এ ঋণ দিচ্ছে সংস্থাটি। ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা ও সংস্কার কর্মসূচি, সুশাসন বৃদ্ধি, বাংলাদেশ ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনা কাঠামোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং ব্যাংক ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য খেলাপি ঋণ সমস্যা সমাধানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা প্রবর্তনে খরচ হবে এ অর্থ। এর মাধ্যমে আর্থিক খাতের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধির জন্য নীতিগত সংস্কারের ওপর জোর দেওয়া হবে।
এডিবির প্রধান আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞ সঞ্জীব কৌশিক বলেন, ব্যাংক খাতে মূল সমস্যা হলো শক্তিশালী সম্পদের মানের অভাব, তারল্যের অভাব এবং অপর্যাপ্ত আর্থিক মধ্যস্থতা- যার ফলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির হার কম। এই কর্মসূচি আন্তর্জাতিক নিয়মে মেনে চলা নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রকের ক্ষমতা বাড়ানো হবে। এছাড়া ব্যাংক খাতের মূলধন বৃদ্ধি এবং ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের অর্থায়নের অ্যাক্সেস উন্নত করার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য মূল্য সংযোজন আনবে।
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং বলেন, বাংলাদেশ এখন ব্যাংক খাতে বড় পরিসরে সংস্কার বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এই কর্মসূচি বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়াবে, ব্যাংকগুলোর সুশাসন জোরদার করবে, সম্পদের মান উন্নত করবে এবং আর্থিক খাতকে উচ্চতর প্রবৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত করবে।
ঢাকা উত্তর-পশ্চিম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করিডোর উন্নয়নে ২০ দশমিক ৪ কোটি ডলারের একটি ঋণচুক্তি সই করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সরকার। করিডোরটির উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশের আঞ্চলিক বাণিজ্য আরও বিস্তৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই সহায়তা দ্বিতীয় দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (এসএএসইসি) ঢাকা উত্তর-পশ্চিম করিডোর সড়ক প্রকল্পের আওতায় এক দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের বহু-অঞ্চলীয় এডিবি ঋণের চতুর্থ কিস্তি হিসেবে দেওয়া হচ্ছে।
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, এই প্রকল্প বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ এবং উপ-আঞ্চলিক সংযোগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতিকে সমর্থন করে। এটি করিডোর পথের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে এবং ভুটান, নেপাল ও ভারতের সঙ্গে উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য সহজ করবে।
এ প্রকল্পের আওতায় এলেঙ্গা থেকে হাটিকুমরুল হয়ে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে। এটি বাংলাদেশের আধুনিক ও দক্ষ পরিবহন ব্যবস্থার লক্ষ্যে বড় ভূমিকা রাখবে। সড়ক নিরাপত্তা বাড়াতে নির্মিত হবে ফুটওভারব্রিজ, ফুটপাত এবং ধীরগতির যানবাহনের জন্য দুটি নির্দিষ্ট লেন।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার মান, নির্ভরযোগ্যতা, স্থিতিশীলতা এবং দক্ষতা বাড়াতে ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার প্রসারে ২০ কোটি ডলার ঋণ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। ‘বিদ্যুৎ সঞ্চালন শক্তিশালীকরণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি একীভূতকরণ’ প্রকল্পের আওতায় বগুড়া, চাঁদপুর, গোপালগঞ্জ, হবিগঞ্জ, পিরোজপুর ও সাতক্ষীরা জেলার গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিড উন্নয়ন করা হবে। একই সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিবর্তনশীল নবায়নযোগ্য জ্বালানি (ভিআরই) হাবের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করাও সহজ হবে।
চুক্তি সই শেষে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে টেকসই করা, দারিদ্র্য হ্রাস, ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ অপরিহার্য- বিশেষ করে দরিদ্র ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য। এই প্রকল্প নবায়নযোগ্য জ্বালানির সংহতকরণ, স্থানীয় জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, জ্বালানি খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে সহায়তা করবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানো, নির্গমন হ্রাস এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন উৎসাহিত করতে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি। এই তহবিল ‘জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কর্মসূচি (সিআরআইডিপি)’র দ্বিতীয় পর্যায়ে সহায়তা হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। এ কর্মসূচির আওতায় এজেন্সি ফ্রান্সেস ডি ডেভেলপমেন্ট (এএফডি) থেকে প্রায় ১১৩ মিলিয়ন ডলার এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকে আরও ৪০০ মিলিয়ন ডলার সহ-অর্থায়ন রয়েছে।
এ বিষয়ে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, এই কর্মসূচি একটি কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অভাব, অপর্যাপ্ত জলবায়ু অর্থায়ন এবং বেসরকারি খাতের সীমিত অংশগ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাধাগুলো মোকাবিলা করবে। এটি জলবায়ু উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহায়ক পরিবেশ তৈরি, অভিযোজন জোরদার এবং প্রশমনমূলক পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।
অর্থনীতি
সবজিতে স্বস্তি, বেড়েছে মাছ-মুরগির দাম

রাজধানীর বাজারে সবজির সরবরাহ ভালো থাকায় কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত কমেছে দাম, এতে সাধারণ ভোক্তাদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে বিপরীত চিত্র মুরগি ও মাছের বাজারে, যেখানে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে দাম।
শুক্রবার (২০ জুন) সকালে তালতলা ও আগারগাঁও বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, বরবটি ৫০ টাকা, দেশি পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ধুন্দুল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কচুর মুখী ৬০ টাকা, সাজনা ডাটা ১০০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচা আম ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও ছোট ফুলকপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, ইন্ডিয়ান গাজর ১২০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, দেশি শসা ৫০ টাকা এবং হাইব্রিড শসা ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কলমি শাক দুই আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা এবং ডাটা শাক দুই আঁটি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলু ২৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৫৫ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির বাজারে সোনালি কক মুরগি কেজিতে ৬০ টাকা বেড়ে ৩৩০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৯০ টাকা, লাল লেয়ার ৩১০ টাকা, সাদা লেয়ার ৩০০ টাকা, ব্রয়লার ১৬০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারেও ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ ২,৬০০ টাকা, ৭০০ গ্রাম ইলিশ ২,৪০০ টাকা, চাষের শিং মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, দেশি শিং ১,০০০ টাকা, রুই ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১,২০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় কাতল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, পোয়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১,৩০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকা এবং পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাংসের বাজারে গরুর মাংস ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১,২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আদা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ২০০ টাকা, দেশি রসুন ১৩০ টাকা, ইন্ডিয়ান রসুন ১৮০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা এবং খেসারির ডাল ১৩০ টাকা কেজিতে। চালের বাজারে মিনি কেট ৮২ থেকে ৯২ টাকা, নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা এবং চাল ‘২৮’ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে। ডিমের বাজারে লাল ডিম ডজনপ্রতি ১৩০ টাকা, হাঁসের ডিম ২২০ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়।