অর্থনীতি
সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ শতাধিক প্রভাবশালীর ব্যাংক হিসাব জব্দ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটেছে। সরকার পতনের পর এখন ওই আমলের মন্ত্রী-এমপিসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দুর্নীতি, অর্থপাচার ও ঋণ কেলেঙ্কারির বিভিন্ন খবর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
ইতোমধ্যে সদ্য বিগত সরকারের এমন শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব জব্দ ও স্থগিত হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তি, সাবেক সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে এ তালিকায়।
সবশেষ এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবি ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার স্ত্রী নাছরিন ইসলাম, পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান, আর্থিক খাতের আলোচিত নাম চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান ও তাদের স্ত্রী-সন্তানদের নাম। গত ২৫ আগস্ট তাদের সবার ব্যক্তিগত এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ও লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে।
এর দুদিন আগে, গত ২৩ আগস্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সদ্য পদত্যাগ করা সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং দিনাজপুর-৬ (হাকিমপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের স্ত্রী-সন্তানদের ব্যক্তিগত এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ও লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে।
তার আগের দিন, ২২ আগস্ট সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস), তার স্ত্রী কাশ্মিরি কামাল ও মেয়ে নাফিসা কামাল এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, তার স্ত্রী আইরিন মালবিকা মুনশি ও মেয়ে তানিয়া অনন্যা মুনশি এবং তৃষা মুনশির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়। এছাড়াও এদিন দেশের ব্যাংকিং খাতের মাফিয়াখ্যাত শিল্পগ্রুপ এস আলম গ্রুপের স্বত্বাধিকারী এস আলম ও তার পরিবারের ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের নামে-বেনামে কত টাকা ঋণ আছে, তা জানতে ২২ আগস্ট ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ বাংক।
গত ২০ আগস্ট বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ও তার ছেলে জুহায়ের সারার ইসলাম, মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান, শেয়ারবাজারের আলোচিত কারসাজিকারক মো. আবুল খায়ের, শেয়ারবাজারের আলোচিত ব্যক্তি জাভেদ এ মতিন, সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি সিডব্লিউটির এমডি মনিজা চৌধুরীসহ আট ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেনও স্থগিত করা হয়। এ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিগত সরকারের আমলে দেশের পুঁজিবাজার অস্থির করার পেছনে জড়িত ছিলেন তারা।
একইদিন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ৯১ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সকল হিসাব তলব করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এদিন আলোচিত সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়েছে।
সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার চিঠি দেওয়া হয় গত ১৯ আগস্ট। ওই চিঠিতে জাহিদ মালেক তার মেয়ে সিন্থিয়া মালেক, ছেলে রাহাত মালেকের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করতে বলা হয়।
একইদিন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত সিকদারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার স্ত্রী মাহমুদা আলী সিকদার এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার ওয়ার্ল্ড বিডির ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়।
১৯ আগস্ট জব্দ করা হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ও তার ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও। একই সঙ্গে তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে।
সাবেক শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তার স্বামী তৌফীক নাওয়াজ এবং বড় ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপুর ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয় এদিন। পাশাপাশি তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিন সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের স্ত্রী-সন্তান এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়।
গত ১৮ আগস্ট ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সাবেক ডিবি প্রধান আলোচিত হারুন অর রশিদ এবং তার স্ত্রী, সন্তান ও তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়।
ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু তার সন্তান এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও স্থগিত করা হয় একইদিন।
পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ ও নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের শফিকুল ইসলাম শিমুলের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয় ১৫ আগস্ট। একইসঙ্গে তাদের স্ত্রী, সন্তান এবং মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত রাখতে বলা হয়।
গত ১৪ আগস্ট সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও আরও সাবেক তিন সংসদ সদস্য ও তাদের স্ত্রী, সন্তান এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করে বিএফআইইউ। ওই তিন সাবেক সংসদ সদস্যরা হলেন- আওয়ামী লীগ নেতা জামালপুর-৩ (মাদারগঞ্জ-মেলান্দহ) আসনের মির্জা আজম, সিরাজগঞ্জ-২ (সদর ও কামারখন্দ) আসনের জান্নাত আরা হেনরী এবং ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল।
গত ১৩ আগস্ট সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, তার স্ত্রী আরিফা জেসমিন কনিকাসহ তার সন্তান এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়।
একইদিন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার স্ত্রী সন্তানদের ব্যক্তিগত ও তাদের মালিকানাধীন সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার নির্দেশ দেয় বিএফআইইউ। আর্থিক সংস্থাটির পক্ষ থেকে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে আসাদুজ্জামান খান, তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, ছেলে সাফি মুদ্দাসির খান এবং মেয়ে সাফিয়া তাসনিম খানের নামে থাকা সব ধরনের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট বন্ধ থাকবে।
আগের দিন, ১২ আগস্ট সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও তার স্ত্রীর নামে থাকা ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয় বিএফআইইউ। একইসঙ্গে তাদের হিসাবের সব তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি।
এমআই

অর্থনীতি
যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক চূড়ান্ত না: অর্থ উপদেষ্টা

বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক চূড়ান্ত না। ওয়ান টু ওয়ান নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে এটা ঠিক হবে। এ লক্ষ্যে আগামীকাল ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের (ইউএসটিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ নিয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ওখানে আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টা আছেন। উনি ৩ দিন আগে গেছেন। আজকেই কমার্স টিম যাচ্ছে। ৮ তারিখে মিটিং। ওদের ৮ তারিখ মানে কালকে খুব ভোরবেলা। মিটিংয়ের পর আমরা বুঝতে পারবো। কারণ, যেটা দিয়েছে, সেটা ঠিক অফিসিয়াল…। ইউএসটিআর’র সঙ্গে যখন আলাপ করবেন উনি (বাণিজ্য উপদেষ্টা) ম্যান্ডেটরি। এর আগের দিন কথা বলেছেন। কালকের পর আপনারা বুঝতে পারবেন।
মিটিংয়ে কি কোনো উন্নতি হওয়ার আশা করা যায়? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন বলেন, আমরা আশা করি। যাই হোক, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য পদক্ষেপগুলো নেবো। এখন বৈঠকটা মোটামুটি পজিটিভ। ৬ তারিখ বোধহয় একটা মিটিং হয়েছে, মোটামুটি পজিটিভ।
চিঠি তো ইতোমধ্যে ইস্যু হয়ে গেছে, সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, প্রেসিডেন্ট দিয়েছে। এটা ওয়ান টু ওয়ান যখন নেগোসিয়েশনে ঠিক হবে। চিঠি তো বহু আগে দিয়ে দিতো, ৩৫ শতাংশ। এইটা আবার ১৪টা দেশের জন্য বলছে একই। কিন্তু ওয়ান টু ওয়ান নেগোসিয়েশন হবে, সেজন্যই তো ইউএসটিআর’র সঙ্গে কথা বলা। এটা ফাইনাল না।
ভিয়েতনাম চেষ্টা করে ২৬ শতাংশ কমিয়েছে, বাংলাদেশের কেন মাত্র ২ শতাংশ কমানো হলো। তার মানে কি নেগোসিয়েশন ভালো হয়নি? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, না, না নেগোসিয়েশন….। এটা ঠিক যে আমাদের ডেফিসিট মাত্র পাঁচ বিলিয়ন ডলার। ভিয়েতনামের ১২৫ বিলিয়ন ডলার। ওখানে কিন্তু ওরা কনসেশন দিতে পারে, মানে রাজি হয়েছে। কিন্তু আমাদের এত কম ডেফিসিট। আমরা চেষ্টা করছি যে, আমাদের এত কম ডেফিসিট, এতো শুল্ক দেওয়ার তো জাস্টিফিকেশন থাকে না।
তিনি বলেন, ওরা যেটা করছে ব্ল্যাঙ্কেট কতগুলো করেছে। চায়নার জন্য আলাদা। একেবারে চায়নার একটা সিঙ্গেল হ্যান্ডেলে ডিল করে ওরা। আর বাকিরা… এটা যেটা করেছে ১৪টা দেশের একই বলেছে। এখন আমরা নেগোশিয়েট করবো।
চিঠিতে যে সমস্ত কন্ডিশন দেওয়া হয়েছে এগুলো কি ফুলফিল করা সম্ভব? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এখন তো আমি কিছু বলতে পারবো না।
রাজস্ব আয় নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এইবার কালেকশন যা হয়েছে মোটামুটি, একেবারে বিরাট গ্যাপ না। আর আগামী বছর চেষ্টা করছি শুধু ট্যাক্স, ভ্যাট না দিয়ে সিস্টেমটা চেঞ্জ করলে দেখবেন কালেকশনটা অনেক বেশি হবে। লিকেজ হবে না, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আতাঁত করে কিছু করতে পারবে না। আমাদের ট্যাক্স ক্যাপাসিটি ভালো, কিন্তু আমরা সেটা ইউটিলাইজ করতে পারিনি। সে কারণে রেভিনিউ কিছুটা শর্ট।
অর্থনীতি
খালেদা জিয়ার কণ্ঠ নকল করে প্রতারণা, হাতিয়ে নিলো ২৬ কোটি টাকা

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কণ্ঠ নকল করে প্রতারণার মাধ্যমে ২৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন মোতাল্লেছ হোসেন নামে এক ব্যক্তি, যিনি নিজেকে অকো-টেক্স লিমিটেডের পরিচালক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
বিএফআইইউ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে তিন মাসের ব্যবধানে সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখায় মোতাল্লেছ হোসেনের একাধিক ব্যাংক হিসাবে জমা হয় প্রায় ১১ কোটি ১১ লাখ টাকা। এরপর তার মোট ৯টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করে কর্তৃপক্ষ। অনুসন্ধানে উঠে আসে, এসব হিসাবে মোট ২৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। অথচ তার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী, তার ঘোষিত সম্পদের পরিমাণ মাত্র ৩৪ লাখ টাকা।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে বিএফআইইউ সন্দেহ করছে, খালেদা জিয়ার কণ্ঠ নকল করে মোতাল্লেছ ও তার সহযোগীরা কিছু ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ আদায় করেছেন। তবে এই অভিযোগ এখনও যাচাই-বাছাই ও প্রমাণের পর্যায়ে রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে মোতাল্লেছ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার ব্যবসার সুবিধার্থে নিজস্ব টাকা নিজেরই বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করেছি, সেটিকে পাচার হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে সরকারের একজন উচ্চপর্যায়ের আইন কর্মকর্তা ও বিএফআইইউয়ের কিছু কর্মকর্তা ষড়যন্ত্র করছে। এরই মধ্যে কর রিটার্নে সাড়ে ৫ কোটি টাকার সম্পদ দেখিয়েছি। তবুও আমাকে ‘লাপাত্তা’ বলা হচ্ছে, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সম্মানহানিকর।’
মোতাল্লেছ বিএফআইইউ’র প্রধান ও পরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গত ২০ মে হিসাব মুক্ত করার আবেদনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কেউ মামলা করেননি বলেও জানান তিনি।
ঘটনার বিষয়ে বিএফআইইউয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মোতাল্লেছ হোসেনের হিসাবে এখন পর্যন্ত কোনো পাচার বা অপরাধজনিত অর্থের সরাসরি প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং একই অর্থ একাধিক বার স্থানান্তর হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এজন্য তার ফ্রিজ করা হিসাব খুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
অর্থনীতি
এস আলম সুগার কারখানাসহ প্রুপের ১১ একর সম্পত্তি নিলামে

এস আলম গ্রুপের সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা পাওনা আদায়ে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজসহ প্রায় ১১ একর সম্পত্তির নিলাম ডেকেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এ নিলাম ডাকে ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখা।
এর আগেও ২০ এপ্রিল এসব সম্পত্তি নিলামে ডাকা হয়। তখন এই ঋণে এস আলম গ্রুপের কাছে ব্যাংকটির পাওনা ছিল ৯ হাজার ৯৪৮ কোটি ৪২ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
চট্টগ্রামের স্থানীয় এক পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখার বিনিয়োগ গ্রাহক এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ হাছান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের কাছ থেকে ২০২৫ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত মুনাফা, ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য চার্জসহ ব্যাংকের খেলাপি বিনিয়োগ বাবদ পাওনা ১০ হাজার ৫৩৮ কোটি ৬৮ লাখ ৮ হাজার ৮৮৯ টাকা ৮০ পয়সা আদায়কাল পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য খরচ আদায়ের নিমিত্তে অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩এর ১২ (৩) ধারা মোতাবেক বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে বিক্রয়ের জন্য আগ্রহী ক্রেতাদের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়।
প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে, তিনটি রেজিস্টার্ড মর্টগেজ চুক্তি অনুসারে ১০ দশমিক ৯৩ একর জায়গা এবং এসব জায়গার ওপর কারখানা, মেশিনারিজ, অফিস বিল্ডিংসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা নিলামে তোলা হয়।
এরমধ্যে ২০১৪ সালের ১৩ ও ১৬ মার্চের ৩৭৪৬ নম্বর, ২০১৩ সালের ২৮ ও ২৯ মের ৮০৫৭ নং এবং ২০১৩ সালের ১৪ ও ১৫ জুলাইয়ের ৩৩২৭ নম্বর রেজিস্টার্ড মর্টগেজ চুক্তিবদ্ধ সম্পদ রয়েছে।
অর্থনীতি
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
চিঠিতে ট্রাম্প লেখেন, ‘প্রিয় ড. ইউনূস, আপনাদের কাছে এই চিঠি পাঠানো আমার জন্য একটি বড় সম্মানের বিষয়। আমাদের বাণিজ্য সম্পর্কের শক্তি ও প্রতিশ্রুতি এবং আপনার মহান দেশের সাথে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাথে কাজ চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে। তবে পরবর্তী বাণিজ্য কেবল আরও ভারসাম্যপূর্ণ এবং ন্যায্য, বাণিজ্যের সাথে হবে। অতএব, আমরা আপনাকে বিশ্বের এক নম্বর বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসাধারণ অর্থনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে বহু বছর ধরে আলোচনা হয়েছে এবং আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, বাংলাদেশের শুল্ক এবং অ-শুল্ক, নীতি ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতার কারণে সৃষ্ট এই দীর্ঘমেয়াদি এবং অত্যন্ত স্থায়ী বাণিজ্য ঘাটতি থেকে আমাদের অবশ্যই সরে আসতে হবে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে শুরু করে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রেরিত যেকোনো এবং সব বাংলাদেশি পণ্যের ওপর বাংলাদেশ থেকে আগত পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক নেব। উচ্চতর শুল্ক এড়ানোর জন্য প্রেরিত পণ্যগুলো সেই উচ্চতর শুল্কের সাপেক্ষে হবে। দয়া করে বুঝবেন, ৩৫ শতাংশ শুল্কটি আপনার দেশের সাথে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতির বৈষম্য দূর করার জন্য যা প্রয়োজন, তার চেয়ে অনেক কম। আপনারা জানেন, বাংলাদেশ বা আপনার দেশের কোম্পানিগুলো যদি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই পণ্য তৈরি বা উৎপাদন করার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে কোনো শুল্ক থাকবে না।
চিঠিতে বাংলাদেশ যদি এই শুল্কের বিরুদ্ধে পাল্টা কোনো ব্যবস্থা নেয় তাহলে শুল্ক আরও বাড়ানোর হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।
তিনি চিঠিতে লেখেন, যদি কোনো কারণে আপনি মার্কিন পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন, তবে আপনি যে সংখ্যাটি বাড়াতে চান তা আমরা যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছি সেটির সঙ্গে যুক্ত করা হবে। দয়া করে বুঝুন যে এই শুল্কগুলো বাংলাদেশের বহু বছরের শুল্ক, এবং অ-শুল্ক, নীতি এবং বাণিজ্য বাধাগুলো সংশোধন করার জন্য প্রয়োজনীয়। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই অস্থিতিশীল বাণিজ্য ঘাটতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘাটতি আমাদের অর্থনীতি এবং প্রকৃতপক্ষে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি।
ট্রাম্প আরও লেখেন, সামনে দীর্ঘ সময় আমরা বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে আপনার সাথে কাজ করার জন্য উন্মুখ। আপনি যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আপনার পূর্বে বন্ধ থাকা ট্রেডিং মার্কেটগুলো খুলতে চান এবং আপনার দেশের শুল্ক এবং অ-শুল্ক, নীতি এবং বাণিজ্য বাধা দূর করতে চান তাহলে আমরা সম্ভবত এই চিঠির একটি সমন্বয় বিবেচনা করব। আপনার দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে এই শুল্কগুলি ঊর্ধ্বমুখী বা নিম্নমুখী করা যেতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে আপনি কখনোই হতাশ হবেন না। এই বিষয়ে আপনার মনোযোগের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
এর আগে গত এপ্রিলে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। যা ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছিল। তবে বিশ্ব অর্থনীতিতে টালমাটাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে এসব শুল্ক ৩ মাসের জন্য স্থগিত করেন তিনি। যা আগামী ৯ জুলাই শেষ হচ্ছে। এর আগেই নতুন করে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন তিনি।
অর্থনীতি
স্বর্ণের দাম ভরিতে কমলো ১ হাজার ৫৭৫ টাকা

দেশের বাজারে সোনার দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। ভরিতে সর্বোচ্চ এক হাজার ৫৭৫ টাকা কমানো হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো মানের ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার ৫৫১ টাকা।
সোমবার (৭ জুলাই) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাজুস। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর হবে। সোমবার প্রতি ভরি সোনা এক লাখ ৭২ হাজার ১২৬ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পিওর গোল্ড) মূল্য কমেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক লাখ ৭০ হাজার ৫৫১ টাকা, ২১ ক্যারেট প্রতি ভরি এক লাখ ৬২ হাজার ৭৯৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম এক লাখ ৩৯ হাজার ৫৪৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম এক লাখ ১৫ হাজার ৩৯২ টাকা।
সোনার দাম কমানো হলেও দেশের বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। দেশে ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৮১১ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ৬৮৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ২৯৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রুপার দাম ১ হাজার ৭২৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কাফি