অর্থনীতি
বিদ্যুৎ খাতে নসরুল হামিদের লুটপাটের মহোৎসব

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন নসরুল হামিদ বিপু। লম্বা সময় দায়িত্ব পালন করার মাঝে বিদ্যুৎ খাতে গড়ে তুলেছেন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিশাল সিন্ডিকেট। গত এক যুগ ধরে এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিয়েছেন খোদ সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বিপু। এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ ও আহমেদ কায়কাউসসহ বিপুর পরিবারের সদস্যরা লুটপাটের এ মহোৎসবে জড়িত ছিলেন। দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জানা যায়, কোন বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া থেকে শুরু করে অনুমোদন পর্যন্ত কমপক্ষে ২০টি ধাপে টাকা আদায় করতেন বিপু চক্র। এর মধ্যে ছিল প্ল্যানিং, সাইট ভিজিট, মেশিনপত্র অনুমোদন দেওয়া, নেগোসিয়েশন, প্রকল্পের সাইট সিলেকশন, মাটি ভরাট, জমি ক্রয়, বিদ্যুৎ ক্রয়ের দরদাম ঠিক করা, বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা বা কমিশনিং, মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠানো, ক্রয় অনুমোদন, বিল অনুমোদন, বিল ছাড় করা-অর্থাৎ প্রতিটি খাতে এ সিন্ডকেটকে টাকা দিতে হতো।
এছাড়া পিডিবি চেয়ারম্যান কিংবা মন্ত্রী স্বাক্ষর করলে সেই স্বাক্ষরের পাশে সিল দেওয়ার জন্যও ঘুস দিতে হতো। পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন কোম্পানির নানা কেনাকাটা এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন পারচেজসহ লোভনীয় কমিটিতে পছন্দের কর্মকর্তাদের রাখা, পদোন্নতি, পোস্টিং দিয়েও এ চক্র হাতিয়ে নিত কোটি কোটি টাকা। বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালনা পর্যদে যাওয়ার জন্যও এ সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিত মোটা অঙ্কের টাকা। এছাড়া প্রকল্পের বিরুদ্ধে নিজস্ব লোকদের দিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় রিপোর্ট করিয়ে প্রকল্পের পিডি বা কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের ব্ল্যাকমেইল করে তাদের কাছ থেকে টাকা নিতেন সিন্ডিকেট সদস্যরা।
অর্থ আদায়ের পুরস্কার হিসেবে চক্রের এসব সদস্যরা পেতেন লোভনীয় সুবিধা ও অস্বাভাবিক পদোন্নতি।
অনুসন্ধানে উঠে আসে, ওই সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য ছিলেন পিডিবির বর্তমান চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানসহ সাবেক দুই চেয়ারম্যান ও একাধিক প্রধান প্রকৌশলী, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন, প্রতিমন্ত্রীর ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ অপু এবং সাবেক সেতুমন্ত্রীর এক ভাতিজা। আর সিন্ডিকেটের অবৈধ আয়ের হিসাবনিকাশের দায়িত্বে ছিলেন প্রতিমন্ত্রীর এপিএস মুজাহিদুল ইসলাম মামুন, কেরানীগঞ্জের প্রভাবশালী শাহীন চেয়ারম্যান এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা মীর আসলাম।
তারা সবার ক্যাসিয়ার হিসাবে পরিচিত ছিলেন। পাশাপাশি নানা কাজের মূল কারিগর ছিলেন পিডিবির বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের বিভিন্ন স্তরের নেতা। আলোচ্য সময়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ১০০টির বেশি কোম্পানির পকেটে ঢুকেছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা জানান, পিডিবির বর্তমান চেয়ারম্যানের কর্মকাণ্ডের তদন্ত করা হলে এ খাতের বড় বড় অনিয়ম ও দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে। এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব আবুল কালাম আজাদ ও আহমদ কায়কাউসও বড় বড় অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ দুজনই পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। আর তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে বসে সব কলকাঠি নাড়তেন।
পিডিবির তথ্যানুযায়ী, ১৪ বছরে বেসরকারি খাতে প্রায় ১০০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। সব কেন্দ্রই কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংক্রান্ত বিশেষ আইনে অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১০ সাল থেকে অনুমোদন দেওয়া ছোট-বড় এসব কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ থাকলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উলটো দায়মুক্তি আইন পাশ করে বিচারের পথ রুদ্ধ করেছে সরকার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নসরুল হামিদের ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ অপু এবং সেতুমন্ত্রীর এক ভাতিজা মিলে অন্তত ৪টি কোম্পানির মাধ্যমে ৫ বছরে বাগিয়ে নিয়েছেন ৮ হাজার কোটি টাকার কাজ। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর সব খাতে ব্যাপক ওলটপালট হলেও বিদ্যুৎ সেক্টর থেকে এই ভূত এখনো দূর হয়নি।
অভিযোগ আছে, শুধু আইটি সেক্টরে তারা বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন ১২টি বড় মেগা প্রকল্প। জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ঢাকা পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) থেকে অ্যাডভান্সড মিটারিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার (এএমআই) নামের ২টি প্রকল্প হাতিয়ে নেয়। এ দুটি প্রকল্পের অর্থমূল্য ছিল ২০০০ কোটি টাকা।
এছাড়া ২০২১-২০২২ অর্থবছরে একই কোম্পানি মোবাইল অ্যাপস অ্যান্ড কাস্টমার পোর্টাল প্রতিষ্ঠার নামে ডিপিডিসির কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় আরও একটি বড় মেগা প্রকল্প। এ প্রকল্পটির ব্যয় মূল্য ছিল ৫০০ কোটি টাকা। এছাড়া গত ৫ অর্থবছরে নসরুল হামিদ বিপুর ভাই একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিলিং প্রকল্পের নামে ডিপিডিসি, নেসকো, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি), ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) থেকে প্রায় ৭টি মেগা প্রকল্প হাতিয়ে নেয়। প্রকল্পগুলোর মোট মূল্য ছিল ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।
অপরদিকে ডেটা সেন্টার স্থাপনের নামে বিদ্যুৎ খাতের এ ৬ কোম্পানি থেকে তারা দুটি বড় টেক কোম্পানির মাধ্যমে হাতিয়ে নেন ৮টি মেগা প্রকল্প। শুধু তাই নয়, নসরুল হামিদ বিপুর ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার ছোট ভাই একটি কোম্পানির মাধ্যমে নেটওয়ার্ক অ্যান্ড সিকিউরিটি নামে ৮টি মেগা প্রকল্প হাতিয়ে নেন। এর মধ্যে ২০২৩ সালের ১ জুন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আরইবির কাছ থেকে হাতিয়ে নেন ৫০ লাখ মিটার স্থাপনের কাজ। এই প্রকল্পটির মোট ব্যয় ছিল ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, পাওয়ারকো ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির মাধ্যমে সবেচেয়ে বেশি লুটপাটের কাজ করা হতো। যার বেশির ভাগ মালিকানায় ছিল নসরুল হামিদ বিপুর পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়স্বজন। কোম্পানিটি সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশে নিবন্ধিত। একসময় নসরুল হামিদ নিজেই হামিদ গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পারিবারিক এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মাধ্যমে একাধিক ব্যবসা পরিচালনা করে। এর কয়েকটিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবেও ছিলেন বিপু। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর বিপুল পরিমাণ শেয়ারের মালিক তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা।
সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের ব্যবসা নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানে দাখিলকৃত নথিপত্র অনুযায়ী, পাওয়ারকোর প্রধান শেয়ারধারী হলেন কামরুজ্জামান চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি। তিনি হলেন নসরুল হামিদ বিপুর আপন মামা। কামরুজ্জামান চৌধুরী নিজেও দীর্ঘদিন হামিদ গ্রুপের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার ছেলে, ভাই ও ভাইয়ের ছেলেরা হামিদ গ্রুপের শীর্ষ নির্বাহী হিসাবে কাজ করেছেন ও করছেন। সিঙ্গাপুরে দাখিলকৃত নথিপত্র অনুযায়ী পাওয়ারকো ইন্টারন্যাশনালের একজন বিকল্প পরিচালক হলেন মুরাদ হাসান। পাশাপাশি তিনি কোম্পানিটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা বা সিওও হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী, পাওয়ারকোর সিওও হিসাবে তিনি বিপিসির সঙ্গে সরাসরি মাতারবাড়ী এলপিজি টার্মিনাল প্রকল্পের দরকষাকষিতে অংশ নিয়েছিলেন। এই মুরাদ হাসানই আবার ‘ডেলকো বিজনেস অ্যাসোসিয়েট’ নামে হামিদ গ্রুপের একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও ছিলেন।
২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় নসরুল হামিদ নির্বাচনি হলফনামায় জানান, তিনি নিজেই ডেলকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সেসময় তিনি কোম্পানিটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ারেরও মালিক ছিলেন। বর্তমানে ডেলকোর মালিকানা তার ছেলে জারিফ হামিদ ও ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদের হাতে।
বিপুর ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ নিজেও হামিদ গ্রুপের একাধিক অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এই ইন্তেখাবুল হামিদের সঙ্গে পাওয়ারকো ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাবিল খানের সংযোগ রয়েছে। এই ভারতীয় নাগরিক দুবাইভিত্তিক একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি শিপিং লাইনের মধ্যপ্রাচ্য শাখা পরিচালনা করেন।
পাওয়ারকোর সঙ্গে জড়িত আরেক ব্যক্তি হলেন কোম্পানিটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক তারেক খলিল উল্লাহ, যিনি দীর্ঘদিন হামিদ গ্রুপে কর্মরত ছিলেন। তিনি ইন্তেখাবুল হামিদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে হামিদ গ্রুপের আরও দুইজন কর্মকর্তা পাওয়ারকো গঠনের সময় আরজেএসসি অফিসে উপস্থিত ছিলেন। কোম্পানি হিসাবে পাওয়ারকোর নিবন্ধনের সময় এ দুইজনকে সাক্ষী হিসাবে রাখা হয়। জাহাঙ্গীর আলম নামের একজন সাক্ষীর পরিচয়পত্র ও লিংকডইন প্রোফাইল অনুযায়ী তিনি হামিদ গ্রুপের একজন সহকারী ব্যবস্থাপক।
সরকারি নথিপত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, মাতারবাড়ীতে এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য তিনটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পেয়েছিল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন। মারুবেনি-ভিটল-পাওয়ারকো কনসোর্টিয়ামের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে এ প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় জাপানের মিতসুই করপোরেশন ও দক্ষিণ কোরিয়ার এসকে গ্যাসের সমন্বয়ে গঠিত একটি কনসোর্টিয়াম এবং জাপানের সুমিতোমো করপোরেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি কনসোর্টিয়াম।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতায় থাকাকালীন বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির গডফাদার হিসাবে আবির্ভূত হন আহমেদ কায়কাউস। বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের (বিপ্পা) সাবেক একজন সভাপতি ছিলেন তখন কায়কাউসের ডান হাত। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসেন নসরুল হামিদ বিপু। ২০১৬ সালের আগস্টে পিডিবির চেয়ারম্যান হন খালিদ মাহমুদ।
কায়কাউসের নেতৃত্বে তখন বিদ্যুৎ খাতের সব উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন মন্ত্রণালয়ে নিয়ে আসতে বাধ্য করা হয়। এরপর তার রুমে বসে একের পর এক কমিশন বাণিজ্য চলত। এই সিন্ডিকেট এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করে। অভিযোগ আছে, সচিব থাকাকালীনও কায়কাউস ইউনাইটেড গ্রুপের কাছ থেকে প্রতিমাসে মোটা অঙ্কের টাকা মাসোয়ারা পেতেন। জানা যায়, আবুল কালাম আজাদের সিন্ডিকেট সদস্য হওয়ায় সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার থেকে তরতর করে খালেদ মাহমুদ চেয়ারম্যান হয়ে যান।
পিডিবিকে তিনি মহা দুর্নীতির এক স্বর্গরাজ্য বানিয়ে ফেলেন। তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় রেন্টাল, কুইক রেন্টাল থেকে প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকা মাসোয়ারা আদায় করার কাজ। তার মূল কাজ ছিল নসরুল হামিদের সঙ্গে থেকে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া, অনুমোদনের জন্য কমিটি করা, কেন্দ্র যাচাই-বাছাই করা, কেন্দ্রগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করাসহ নানা কাজ। এভাবে ব্ল্যাকমেইল করে তিনি নসরুল হামিদের জন্য প্রতিমাসে শত শত কোটি টাকা আয় করে দিতেন।
বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীরা বলেছেন, নসরুল হামিদ দেশে কোনো লেনদেন করতেন না। তার অধিকাংশ টাকা বিদেশে লেনদেন হতো।
অভিযোগ আছে, ভাড়াভিত্তিক অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, যেগুলোর ভেতরে কোনো ইঞ্জিনই ছিল না। মূলত বিদ্যুৎ না কিনে বসিয়ে বসিয়ে এসব কেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে।
পরবর্তী সময়ে এ ক্যাপাসিটি চার্জ ভাগবাঁটোয়ারা করে নিয়ে গেছে সিন্ডিকেট। পুরস্কার হিসাবে আহমেদ কায়কাউস তাকে প্রধান প্রকৌশলী হিসাবে নিয়োগ দেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে নিয়োগ পান পিজিসিবিতে। সেখানে বসেও তিনি ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ আছে। পিডিবিতে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ নামে একটি সংগঠন বানিয়ে সেখানে দুর্নীতির আসর বসানো হয়েছিল।
কাজল কান্তি রায় ছিলেন এ পরিষদের সদস্য। ক্রয় বিভাগের পরিচালক ছিলেন মোহাম্মদ ইউসুফ। দুজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে একাধিক অভিযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগের তদন্ত করেনি কমিশন। জানা যায়, নসরুল হামিদ ও মাহবুবুর রহমানের কল্যাণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি দুদক। নসরুল হামিদের শেষ সময়ে পিডিবি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ২৭টি সোলারভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফাইল চূড়ান্ত করেন।
এগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১৩৬০ মেগাওয়াট। অভিযোগ আছে, এই ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের মধ্যে অধিকাংশই সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপি। তাদের মধ্যে নসরুল হামিদ বিপুর ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ অপুর ২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া আছে নাঈম রাজ্জাকের ১টি, বিসিবির (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) সাবেক পরিচালক জালাল ইউনুসের ১টি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের ১টি, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের ছোট ভাইয়ের ১টি, আবদুস সালামের ১টি, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের ১টি, টাঙ্গাইলের ছোট মনিরের ১টি, সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুর রহমানের ১টি, সিলেটের হাবিবুর রহমান এমপির ১টি এবং রাজশাহী অঞ্চলের এক এমপির ১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। অভিযোগ আছে, এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফাইল চূড়ান্ত করার জন্য মাহবুবুর রহমান সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

অর্থনীতি
আকু বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ৩০ বিলিয়ন ডলারে

দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দিনশেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে এখন ৩০ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুসারে রিজার্ভ এখন ২৫ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে বৃহস্পতিবার গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩১ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার এবং বিপিএম৬ অনুযায়ী ছিল ২৬ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। এরপর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই ও আগস্ট মাসের আমদানি বিল বাবদ প্রায় ১৫০ কোটি ডলার পরিশোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে কমেছে রিজার্ভ।
গত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নকে (আকু) ২ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছিল গ্রস হিসাবে ২৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন এবং বিপিএম৬ অনুযায়ী ২৪ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলারে।
রেমিট্যান্স প্রবাহে উল্লম্ফন, রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবণতা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ঋণ সহায়তার কারণে জুন শেষে গ্রস রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলারে। গত ২৮ মাসের মধ্যে যা ছিল সর্বোচ্চ। বিপিএম৬ অনুযায়ী এ সময় রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার।
২০২১ সালের আগস্টে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভে পৌঁছায় বাংলাদেশ। তবে পরবর্তী সময়ে ধারাবাহিক পতনে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে গত জুলাই শেষে রিজার্ভ নেমে যায় ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর অর্থপাচারে কঠোর নিয়ন্ত্রণ, হুন্ডি প্রবাহ কমে যাওয়া এবং বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়ায় পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে প্রায় ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা ডলারে হিসাব করলে দাঁড়ায় ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন।
অর্থনীতি
স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড, ভরি ১ লাখ ৮১ হাজার টাকা ছাড়ালো

দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আরও বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনায় ২ হাজার ৭১৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮১ হাজার ৫৫০ টাকা। এর মাধ্যমে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় উঠেছে সোনার দাম।
স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠকে করে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে গত ৪ ও ২ সেপ্টেম্বর এবং ৩১ ও ২৭ আগস্ট সোনার দাম আর ৪ দফা বাড়ানো হয়। ৪ দিনের মাথায় এখন দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে বাজুস বলছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার দাম বেড়েছে, তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে সোনার দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এখন সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ২ হাজার ৭১৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮১ হাজার ৫৫০ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ২ হাজার ৬০১ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৩০৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ২ হাজার ২২৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৪১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৯০১ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৩ টাকা।
এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ৩ হাজার ৪৪ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮৩২ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ২ হাজার ৯০৫ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৭০ হাজার ৭০৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ২ হাজার ৪৮৪ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনায় ২ হাজার ১২৩ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ২১ হাজার ১৬৬ টাকা। এতো দিন এটাই সোনার সর্বোচ্চ দাম ছিলো। আজ রোববার পর্যন্ত এই দামে সোনা বিক্রি হয়েছে। আগামীকাল থেকে নতুন রেকর্ড দামে বিক্রি হবে সোনা।
সোনার দাম বাড়লেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৮১১ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৬৮৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ২৯৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ৭২৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থনীতি
৬ দিনে রেমিট্যান্স এলো ৬ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা

চলতি মাস সেপ্টেম্বরের ৬ দিনে ৫১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে দেশে। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৬ হাজার ২৯৫ কোটি ২০ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, সেপ্টেম্বরের ৬ দিনে ৫১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। যা গত বছরের (২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের ৬ দিন) একই সময়ের তুলানায় ৪ কোটি ডলার কম। গত বছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স আসে ৫৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৪১ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৪৬৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরে একই সময়ের তুলনায় ৭২ কোটি ২০ ডলার বেশি এসেছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে এসেছে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ১০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩০ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। সদ্য বিদায়ী আগস্টের পুরো সময়ে এসেছিল ২৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ২৯ হাজার ৫৪৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার রেমিট্যান্স।
এর আগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা ছিল বছরের রেকর্ড পরিমাণ। পুরো অর্থবছর (২০২৪-২৫) জুড়ে প্রবাসী আয় এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল জুলাইয়ে ১৯১ দশমিক ৩৭ কোটি ডলার, আগস্টে ২২২ দশমিক ১৩ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ দশমিক ৪১ কোটি ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ দশমিক ৫০ কোটি ডলার, নভেম্বরে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ডলার, মে মাসে ২৯৭ কোটি ডলার এবং জুনে ২৮২ কোটি ডলার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা ও প্রবাসী আয়ের পথ সহজ করায় রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক ধারায় রয়েছে।
অর্থনীতি
আগস্টে মূল্যস্ফীতি কমে ৮.২৯ শতাংশ, তিন বছরে সর্বনিম্ন

চলতি বছরের আগস্ট মাসে দেশের মূল্যস্ফীতি কমে বিগত তিন বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৮.২৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়েছে।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ।
বিবিএসের তথ্য মতে, গত জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.৫৫ শতাংশ। সেই হিসাবে জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে মূল্যস্ফীতি কমেছে ০.২৬ শতাংশ। গত বছরের আগস্টে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০.৪৯ শতাংশ।
অন্যদিকে আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৬০ শতাংশে। জুলাই মাসে এ হার ছিল ৭.৫৬ শতাংশ। আর ২০২৪ সালের আগস্টে খাদ্যমূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১.৩৬ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি জুলাইয়ের ৯.৩৮ শতাংশ থেকে কমে আগস্টে ৮.৯০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে এ হার ছিল ৯.৭৪ শতাংশ।
এদিকে, স্বল্প আয়ের দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির হার সামান্য কমে ৮.১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে টানা ৪৩ মাস ধরেই মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে পিছিয়ে রইল, যা নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জীবনযাত্রার ব্যয় সংকটকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় খাদ্যপণ্যের দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের অব্যাহত চাপের কারণে সার্বিক মূল্যস্ফীতি এখনও চড়া রয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
কাফি
অর্থনীতি
ব্যাংকের মূলধন ১০ শতাংশের নিচে হলে কোনো কর্মকর্তা বোনাস পাবেন না: গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘ব্যাংকের মূলধন ১০ শতাংশের নিচে হয় এবং প্রভিশন লস করে তাহলে ডিভিডেন্ড ও বোনাস দিতে পারবে না। এ ছাড়া কোনো কর্মকর্তাকে বোনাস দেওয়া হবে না।’
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর এক হোটেলে সেন্টার ফর নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশ এনআরবি আয়োজিত ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ; আসন্ন নির্বাচন, প্রবাসীদের অংশগ্রহণ, আগামীর অর্থনীতি বিষয়ক এক আলোচনায়সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘চেষ্টা করছি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার।
গত কয়েক বছর অর্থ ব্যবস্থায় শঙ্কা তৈরি হয়, একটা অস্থিরতা বিরাজ করছিল সেখান থেকে ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি এবং আংশিক হলেও কাজ করছি। ব্যালেন্স অব পেমেন্ট সবগুলোতেই উদ্বৃত্ত আছে এর কারণ হলো রেমিট্যান্সপ্রবাহ ২১% বেড়েছে আর সংকটের মধ্যে রপ্তানিও বেড়েছে।’
গভর্নর বলেন, ‘ওপরমহল থেকেও কমিশন বাণিজ্য যেভাবে হতো তবে হুন্ডিও কমে এসেছে। ৩০ শতাংশ লিকেজ হতো প্রবাসী আয়ের।
আমদানি কমেনি তবে মূল্যটা কমে এসেছে। মূল্য বাড়িয়ে পাচার করার মানুষ এখন দেশে নেই তাই ব্যয় কমেছে। যেভাবে অর্থ পাচার হতো সেভাবে এখন হয় না। এর পেছনে কাজ করছে সুশাসন।
এ জন্যই বেড়েছে রিজার্ভ।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের মূলধন ১০ শতাংশের নিচে হয় এবং প্রভিশন লস করে তাহলে ডিভিডেন্ড ও বোনাস দিতে পারবে না। এ ছাড়া কোনো কর্মকর্তাকে বোনাস দেওয়া হবে না। যদি তারা প্রভিশন লস করেন। তিন মাসের ঋণ অনাদায়ি থাকলে তাকে ননপারফর্মিং লোন হিসেবে ধরা হবে।’
গত এক মাসে এক বিলিয়ন মূল্যের ডলার বাজার থেকে কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিন্তু দাম বাড়েনি। ডলার সংকট না থাকলেও টাকার সংকট রয়েছে এ কথা জানিয়ে গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ে কাজ করছি, আরো কাজ করতে হবে। এটা একদিনে হয় না সময় লাগে। চালের দামটা বেড়ে যাওয়ায় আগস্টে কিছুটা মূল্যস্ফীতি বেড়েছে তবে আমাদের ৫ শতাংশের নিতে নামাতেই হবে মূল্যস্ফীতি।
জুনের খেলাপি রিপোর্টে ৩০ শতাংশ খেলাপির আশঙ্কা করা হচ্ছে এ কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, সরকারের সাথে রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) থেকে আলোচনা শুরু হবে ৫টি ব্যাংকে একীভূত করার বিষয়ে। এক-দুই বছরের মধ্যে ভালো করবে। কর্মকর্তা ও আমানতকারীদের জন্যও ভালো হবে।