অর্থনীতি
সপরিবারে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়েছেন এস আলম

ব্যাংকিং খাতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর সপরিবারে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়েছেন বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রত্যাহার করেন এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহির। একই দিন বিদেশি নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের (পারমানেন্ট রেসিডেন্সিয়াল) অনুমোদন পায় পরিবারটি।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে এসব সুবিধা দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অর্থ পাচারের পথ সহজ করা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জবাবদিহি এড়াতে এমন কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
জানা গেছে, এস আলস পরিবার যেদিন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন, সেইদিনই আবার বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেয়েছিলেন। নাগরিকত্ব ত্যাগ ও স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ বাংলাদেশে জটিল প্রক্রিয়া হলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে একই দিন সন্ধ্যায় অতি গোপনে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই কাজটি করা হয়।
তবে নাগরিকত্ব ত্যাগ ও আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করতে হলে পুলিশের বিশেষ শাখার ছাড়পত্রসহ বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন হলেও কীভাবে একই দিনে দুটি কাজ সম্পন্ন হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এস আলম পরিবারকে স্থায়ী বসবাসের অনুমতির নথিতে স্বাক্ষর করা মো. খায়রুল আলম শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদনপত্র অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন, তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম এবং আসাদুল আলম মাহির বাংলাদেশে স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের এই সুবিধা অর্জনের সুযোগ বা প্রয়োজন নেই। নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন বলেই তারা স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করেন।
নথিপত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ঋণ নিলেও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেতে এস আলম পরিবারের সদস্যরা জনপ্রতি বিনিয়োগ দেখিয়েছেন মাত্র ৭৫ হাজার ডলার।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এস আলম ও তার পরিবার এমন কোন দেশে নাগরিকত্ব নিয়েছেন যে দেশে দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদিত নয়। আবার তিনি পরিবারসহ বাংলাদেশের স্থায়ী আবাসিক সুবিধা নিয়েছেন ব্যবসায়িক প্রয়োজনে, এটা নিশ্চিত। বাংলাদেশে বিদেশি কেউ বিনিয়োগ করলে যে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়, তা এড়াতেই এস আলমের পরিবার এই পন্থা অবলম্বন করেন। একই সঙ্গে দুই দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার মাধ্যমে অনেকে অর্থ পাচার করেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশে যদি কেউ বিদেশি বিনিয়োগ করে তবে তাকে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। বিনিয়োগের পরিমাণ হিসেবে কমপক্ষে ৭৫ হাজার হাজার মার্কিন ডলার হতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ভারী শিল্পে বিনিয়োগ থাকতে হবে। এ ছাড়াও বিনিয়োগের ছাড়পত্র দেয়- এমন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সনদ প্রয়োজন হয়।
সর্বোপরি পুলিশের বিশেষ শাখার ছাড়পত্রের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশের অনেকেই বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন। পরবর্তী সময়ে তাদের এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, স্থাবর সম্পত্তির বিক্রির সুবিধার্থে অনেকেই দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। অনেকে স্থায়ী বসবাসের অনুমতিও গ্রহণ করে থাকেন।
এস আলম পরিবারের সদস্যদের স্থায়ী বসবাসের পৃথক অনুমোদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের বাসিন্দার মতো সব অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ও যোগ্যতার অধিকারী হবেন এবং বাংলাদেশের নাগরিকের মতোই দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকবে। তবে সরকার কর্তৃক অর্পিত বা পরিত্যক্ত ঘোষিত কোনো সম্পত্তি দাবি করতে পারবে না। বাংলাদেশে শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকৃত অর্থ আবেদনকারী তাহার স্বদেশে অথবা বাংলাদেশের বাইরে অন্য কোনো দেশে ফেরত বা প্রেরণ করিতে পারবে না, অন্যথায় তার স্থায়ী আবাসিক সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে।’
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব আলীমুন রাজীব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, বিনিয়োগকারী হিসেবে স্থায়ী আবাসিক সুবিধা দেওয়া হয়। যদি কোনো বিদেশি নাগরিক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগ বাংলাদেশে করে, তবে তাকে স্থায়ী আবাসিক সুবিধা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বাংলাদেশের কেউ নাগরিকত্ব ত্যাগ করলে তিনিও বিনিয়োগকারী হিসেবে স্থায়ী আবাসিক সুবিধা পেতে পারেন।’
এস আলম পরিবারের মালিকানায় রয়েছে ৫৬টি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া বিগত সরকারের আমলে ছয়টি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে এস আলম গ্রুপ। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম এবং ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন তার ছেলে আহসানুল আলম। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করেছে সরকার।

অর্থনীতি
অনুমোদন ছাড়াই বিদেশে পাঠানো যাবে সরকারি প্রকল্প সেবার ফি

সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছ থেকে নেওয়া বিভিন্ন সেবার ফি এখন অনুমোদন ছাড়াই পাঠানো যাবে। এ বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বুধবার (১৮ জুন) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এখন থেকে সরকারি প্রকল্পে পরামর্শ, ব্যবস্থাপনা বা অন্যান্য চলতি সেবার জন্য নির্ধারিত ফি আগাম অনুমোদন ছাড়াই বৈধভাবে বিদেশে পাঠানো যাবে। এতদিন এসব লেনদেনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল।
তবে এ সুবিধা নিতে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। যেমন— প্রকল্পটি সরকারের অনুমোদিত হতে হবে এবং তাতে অর্থ ছাড়ের অনুমোদন থাকতে হবে। সেবা প্রদানকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তিও থাকতে হবে। অর্থ ছাড়ের সময় প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে ইনভয়েস ও সেবা নেওয়ার প্রমাণস্বরূপ একটি সনদপত্র জমা দিতে হবে। পাশাপাশি উৎসে কর, মূল্য সংযোজন করসহ অন্যান্য প্রযোজ্য কর পরিশোধের বিষয়েও নিশ্চিত হতে হবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, রয়্যালটি, প্রযুক্তিগত জ্ঞান বা সহায়তা এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) নির্ধারিত নির্দেশিকা অনুসরণ করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন নির্দেশনার ফলে এখন আর আগাম অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। এতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম আরও দ্রুত ও সহজ হবে।
অর্থনীতি
শ্রীলংকায় ওষুধ খাতে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের আহ্বান

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে ওষুধ খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
বুধবার (১৮ জুন) শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্প্রসারণে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়ন’ শীর্ষক বিজনেস প্লেনারি সেশনে শ্রীলংকা-বাংলাদেশ বিজনেস কো-অপারেশন কাউন্সিলের সভাপতি আন্দ্রে ফার্নান্দো এ আহ্বান জানান।
শ্রীলঙ্কা সফররত ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এ প্লেনারি সেশন হয়। দেশটিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনের সার্বিক সহযোগিতায় এর আয়োজন করে ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অব শ্রীলঙ্কা।
অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অব শ্রীলঙ্কার সভাপতি আনূরা ওয়ারনাকুলাসুরিয়া বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস জরুরি। দুদেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে এ ধরনের সমন্বয় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
এসময় ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, বিগত কয়েক দশকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশ স্থিতিশীল ছিল। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য, ইলেকট্রনিক্স ও হালকা প্রকৌশল এবং তথ্য-প্রযুক্তি প্রভৃতি খাত এ অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
তিনি জানান, শ্রীলঙ্কার উদ্যোক্তারা এরই মধ্যে বাংলাদেশে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক, জ্বালানি, অবকাঠামো প্রভৃতি খাতে ৪৩৮ দশমিক ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তিনি বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে আরও বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
একই সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের অধিকতর উন্নয়নে প্রায় তিন দশক আগে সই হওয়া ‘ডাবল ট্যাক্সেশন এভয়ডেন্স এগ্রিমেন্ট’ যুগোপযোগী করার ওপর জোর দেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি।
অনুষ্ঠানে শ্রীলঙ্কার এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান মানগালা ওয়াইজেসিঙ্গহি জানান, শ্রীলঙ্কার জিডিপিতে রপ্তানি খাতের অবদান ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২৪ সালে মোট রপ্তানি ছিল ১৬ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শ্রীলঙ্কার তার রপ্তানি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ ও পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর অধিক হারে প্রধান্য দিচ্ছে।
তিনি জানান, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ওষুধ, তৈরি পোশাক, ফেব্রিক্স এবং কেমিক্যাল প্রভৃতি পণ্য আমদানি করেছে। এছাড়াও সুতা ও টেক্সটাইল, ফেব্রিক্স, মসলা, পশু খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, বাদাম ও কৃষিপণ্য প্রভৃতি খাতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। শ্রীলঙ্কার ওষুধ, প্যাকেজিং, লজিস্টিক ও রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদন খাতে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট অফ শ্রীলঙ্কার রেনুকা এম ওয়াইরাকুনে বলেন, দুদেশের মধ্যকার এফটিএ স্বাক্ষরের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অনেকাংশে বৃদ্ধির পাশাপাশি শুল্ক বিষয়ক প্রতিবন্ধকতাও নিরসন হবে। শ্রীলঙ্কায় ওষুধ, মেডিকেল যন্ত্রপাতি এবং ফেব্রিক্স খাতে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারেন। একই সঙ্গে অবকাঠামো, পর্যটন, তথ্য-প্রযুক্তি এবং শিক্ষা প্রভৃতি খাত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।
তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগ বোর্ড উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে সব সেবা সম্বলিত ১৫টি রপ্তানি প্রক্রিয়া অঞ্চল পরিচালনা করছে। যেখানে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারেন।
অনুষ্ঠানে শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার ধর্মপালা বীরাক্কোদি বক্তব্য দেন।
আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে অতিদ্রুত এফটিএ স্বাক্ষর জরুরি।
এসময় ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়াতে এফটিএ স্বাক্ষরে দুদেশের সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও উভয় দেশের সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একযোগে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। উভয় দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে দুদেশের শুল্ক-বিষয়ক প্রতিবন্ধকতা নিরসনের পাশাপাশি নীতির যুগোপযোগী সংস্কারের ওপর জোর দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ৭০টি শ্রীলঙ্কান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির ১৫০টি বিটুবি ম্যাচ-মেকিং অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে দুদেশের উদ্যোক্তারা নিজেদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ বিষয়ক তথ্য আদান-প্রদানের সুযোগ পান। যা ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
অনুষ্ঠানে ডিসিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি সালিম সোলায়মান ও প্রতিনিধিদলের সদস্যরা যোগ দেন।
অর্থনীতি
ভিসিপিয়াব’র বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়া

ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ভিসিপিয়াব) একটি অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার এবং অর্থ-উপদেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। সরকার আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়নের জন্য ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করায় ভিসিপিয়াব সরকারকে সাধুবাদ জানাই। এই পদক্ষেপ নারীদের জন্য ব্যবসায়িক পরিবেশকে শক্তিশালী করবে এবং বাংলাদেশে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোক্তা বাস্তুতন্ত্র গড়ে তুলবে।
তবে, ই-কমার্স ব্যাবসার উপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভিসিপিয়াব উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এই বৃদ্ধি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলির জন্য পরিচালনা ব্যয় বাড়িয়ে দিবে, যার ফলে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বৃদ্ধি পাবে এবং এই খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলিকে (এসএমই’স) ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বাজেট প্রস্তাবে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডে বিনিয়োগকে ট্যাক্স রিবেট ও ক্রেডিট সুবিধার অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে, যা স্টক মার্কেটের বিনিয়োগের অনুরূপ। একটি সমৃদ্ধ, উদ্ভাবন-ভিত্তিক অর্থনীতি তৈরিতে সহায়তা করার জন্য ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ষষ্ঠ তফসিলের ৪৪ ধারা, অংশ বি-এর অধীনে অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্দ (এআইএফ)-এ বিনিয়োগকে যোগ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।
ভিসিপিয়াব’র সভাপতি শওকত হোসেন বলেন, আমরা নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারের সাধুবাদ জানাই এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডে বিনিয়োগকে ট্যাক্স রিবেটের জন্য অনুমোদিত বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচনা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
অর্থনীতি
আগামী দুই শনিবার এনবিআরের সব অফিস খোলা

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট কার্যক্রম নির্বিঘ্ন করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়করসহ রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর আগামী ২১ ও ২৮ জুন, পরপর দুই শনিবার খোলা থাকবে। সাধারণত সপ্তাহের এই দিনটি সরকারি ছুটির দিন হলেও বাজেট পরবর্তী কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে এনবিআর ব্যতিক্রমী এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বুধবার (১৮ জুন) এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা আল আমিন শেখ এক প্রেস বিবৃতিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (বোর্ড প্রশাসন-১) উম্মে আয়মান কাশেমী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ ইতোমধ্যে জারি করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট কার্যক্রম চলমান থাকায় আগামী ২১ ও ২৮ জুন (শনিবার) এনবিআর এবং এর অধীন কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর দপ্তরসহ রাজস্ব আদায় সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সব দপ্তর খোলা থাকবে। এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাজেট ঘোষণার পর রাজস্ব প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে করদাতা, ভ্যাটদাতা ও আমদানি-রপ্তানিকারকদের অনেক পরামর্শ, দাখিলপত্র ও কর সংক্রান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। এই সময়ে করসেবা নিশ্চিত করা এবং দ্রুত বাজেট বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য অতিরিক্ত কর্মদিবস রাখা জরুরি হয়ে পড়ে। তাই ছুটির দিনেও অফিস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সরকার গত ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করে। সেই বাজেটের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও পরিপত্র জারির কাজ এরই মধ্যে শুরু করেছে এনবিআর।
অর্থনীতি
ট্রেজারি বিলের সুদ রেকর্ড ১২.১০ শতাংশ

৯১ দিনের আর্থিক ঋণপত্র বা ট্রেজারি বিলের সুদহার নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নিলামে এ বিলের সুদহার বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ১০ শতাংশ, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে সুদহার বেড়েছে ১৮ বেসিস পয়েন্ট। এর আগে গত ২ জুন এই মেয়াদের বিলের সুদহার ছিল ১২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ—যা তখন ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
স্বল্পমেয়াদি এই আর্থিক ঋণপত্র বা ট্রেজারি বিল সরকার নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য বাজারে ছাড়ে। এর মেয়াদ সাধারণত ৯১ দিন থেকে শুরু হয়ে ৩৬৪ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ব্যাংক খাতে চলমান তারল্য সংকটকে সুদহার বাড়ার মূল কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকার যে পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করতে চায়, তা ব্যাংকগুলো দিতে পারছে না। ফলে বেশি সুদ দিয়ে টাকা তুলতে হচ্ছে সরকারকে। কয়েক মাস আগেও ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার তুলনামূলকভাবে কম ছিল। এখন সরকারের চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ আগ্রহ কমে যাওয়ায় সুদহার আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, যখন ব্যাংকের কাছে তারল্য কম থাকে এবং সরকারের চাহিদা বাড়ে, তখন স্বাভাবিকভাবে সুদহার বেড়ে যায়। এটা মূলত চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংকগুলো আগের মতো ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এর একটি কারণ হচ্ছে—রেপো থেকে নেওয়া অর্থ সময়মতো ফেরত দিতে হয়, ফলে সেটেলমেন্ট ঝুঁকি বেড়েছে। অন্যদিকে, ব্যাংকে তারল্যের চাপও বিদ্যমান।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, এ বছরের মার্চে ট্রেজারি বিলের সুদ কিছুটা কমেছিল। তবে এপ্রিলে তা আবার বাড়ে এবং ১০১ থেকে ১২৩ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। জুনে এসে তা নতুন রেকর্ড গড়ে।
বর্তমানে ১৮২ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ৩৬৪ দিনের বিলে ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ। সুদের নিশ্চয়তা ও কম ঝুঁকির কারণে ট্রেজারি বিল তুলনামূলক নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত। এর বিপরীতে দীর্ঘমেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের মেয়াদ হয়ে থাকে ২ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত।