আন্তর্জাতিক
মোটা অঙ্কের টাকায় ভারতে আশ্রয় নিচ্ছেন বাংলাদেশি প্রভাবশালীরা

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী অনেক এমপি ও রাজনীতিকরা। অনেকেই ইতোমধ্যে বিভিন্ন মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। এমন অবস্থায় আত্মগোপনে থাকা প্রভাবশালী এমপি ও রাজনীতিকরা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের দুই পাশের সক্রিয় সিন্ডিকেট চক্রের সহায়তায় ভারতে পাড়ি জমাচ্ছেন। সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার বিনিময়ে সিন্ডিকেটের চক্রের সদস্যদের কাছে পাঁচ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকাও গুনছেন তারা।
বুধবার পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে সীমান্ত সিন্ডিকেটের সহায়তায় বাংলাদেশের এক এমপি ও তার পরিবারের ভারতে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তবে বাংলাদেশি ওই এমপির পরিচয় প্রকাশ করেনি আনন্দবাজার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলার কাশারীবাজার থেকে একজন এমপি ফোন করেন পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী কাথুলিবাজার এলাকার একটি বাড়িতে। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে কিছু দিনের জন্য দেশ ছেড়ে ভারতে ‘নিরাপদ আশ্রয়’ চান তিনি। ফোন করার কিছুক্ষণ পর কাথুলিবাজার থেকে ফোন আসে নদিয়ার করিমপুর-২ ব্লকের রাউতবাটি গ্রামে। এতে ফোনের দুই প্রান্তের ব্যক্তির মাঝে প্রায় পাঁচ মিনিট আলোচনা হয়। যিনি আশ্রয় চাইছেন তার ‘প্রোফাইল’, রাজনৈতিক ঝুঁকি, আর্থিক সক্ষমতা-সহ বিভিন্ন বিষয় সংক্ষেপে জেনে নিয়ে ওই এমপিকে সীমান্ত পার করে ভারতে প্রবেশ করানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
এসময় জানিয়ে দেওয়া হয় ভারতে আসার জন্য ওই এমপির পরিবারের সদস্যদের মাথাপিছু খরচ পড়বে ভারতীয় মুদ্রায় এক লাখ করে টাকা। এছাড়া যতদিন ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’ থাকবেন, ততদিন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের নজর এড়িয়ে থাকার জন্য মাসিক ১০ লাখ টাকা গুনতে হবে! টাকার অংক নিয়ে দর কষাকষির পর ঠিক হয় সীমান্ত পার করানোর বিনিময়ে প্রত্যেকের মাথাপিছু ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। আর আশ্রয়ের জন্য দিতে হবে মাসিক ৫ লাখ টাকা।
পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত লাগোয়া এলাকার এই সিন্ডিকেট চক্রের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান বাংলাদেশের ওই এমপি। পরে গত সোমবার রাতে মেহেরপুর সদর থেকে পরিবারকে নিয়ে সীমান্তের দিকে রওনা দেন তিনি। সেখানে বাংলাদেশের একটি গ্রামে একদিন অপেক্ষার পর চুক্তির টাকা পরিশোধ করে কাথুলি ও কুলবেড়িয়া হয়ে উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের একটি গ্রামে গিয়ে পৌঁছান ওই এমপি ও তার পরিবার। বাংলাদেশের মইনুদ্দিন (নাম পরিবর্তিত) এবং পশ্চিমবঙ্গের দেবাংশু (নাম পরিবর্তিত) মিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চাঞ্চল্যকর এই ‘অপারেশন’ সফল করেন।
আনন্দবাজার লিখেছে, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে এমন অবৈধ উপায়েই বাংলাদেশের প্রভাবশালীরা ভারতে পাড়ি জমাচ্ছেন। তাদের নিরাপদে পৌঁছে দিতে কাজ করছে একাধিক চক্র। চক্রের সদস্যরা সীমান্ত পারাপারের বিনিময়ে বাংলাদেশিদের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের অর্থ নিচ্ছেন। কেউ মাথাপিছু লাখ টাকা নিচ্ছেন, তো কেউ ৫০ হাজার। আর এই চক্রের বিষয়ে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফও অবগত রয়েছে। ইতোমধ্যে এই চক্রের সাথে জড়িত কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে বিএসএফ।
পশ্চিমবঙ্গের এই বাংলা দৈনিক বলছে, বাংলাদেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তৈরি হয়েছে অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের নতুন ‘সিন্ডিকেট’। পারাপার ও আশ্রয়ের জন্য কেউ খরচ করছেন ২ হাজার টাকা (তারা বেশিদিন থাকছেন না), কাউকে দিতে হচ্ছে ২ লাখ টাকা (বেশিদিন থাকার জন্য)। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আর্থিক সঙ্গতি এবং সামাজিক পরিচিতি বুঝেই টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করেন চক্রের সদস্যরা।
কাথুলিবাজার এলাকায় ব্যবসা করেন শেখ নাজিম (নাম পরিবর্তিত)। আনন্দবাজারকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এ সব এলাকা হাতের তালুর মতো চিনি। কোথায় কাঁটাতার আছে, কোথায় নেই, সব মুখস্থ। কোথায় পাচারকারী কাঁটাতার কেটে রেখেছে, সেটাও জানি।’’
তার কথায়, এই বর্ষায় ভৈরব নদী টইটম্বুর। নদী পুরো খোলা। বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যেতে চাইছেন, তাদেরকে পরিচিত ও আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে শুধু সীমান্ত পার করিয়ে দিচ্ছি আমরা। বাকি দায়িত্ব তাদের।
সীমান্ত পারাপার ও ভারতে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য কী পরিমাণ অর্থ নেওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে নাজিম বলেন, ঝুঁকি দু’পক্ষেরই রয়েছে। তাই টাকার ভাগাভাগিও সমান সমান।
পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তের বাসিন্দা ও পাচারচক্রের সদস্য দেবাংশু বললেন, কাঁটাতার পার হয়ে আমাদের চাষের জমি আছে। রোজ যাতায়াত করি। ওদিক থেকে বেশ কয়েকজন পরিচিত, আত্মীয়-স্বজনেরা ভারতে আসার জন্য মোটা টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা শুধু পার করে এখানে নিয়ে এসেছি। রাখার দায়িত্ব আমাদের নয়। সেটা দেখে অন্য লোক।
বিএসএফ ও পুলিশের নজর এড়ানোর বিষয়ে দেবাংশু বলেন, বিএসএফ এখন খুব সজাগ। সেটা ঠিক। তবে গ্রামে আমাদের সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক। তাই কাউকে আশ্রয় দিয়েছি জানলে কেউ মুখ খুলবে না। কিন্তু কাজটা তো অনৈতিক? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা আসছেন, তারা তো সত্যিই বিপদে পড়েছেন। বিপদে মানুষকে আশ্রয় দেওয়া তো মানুষেরই কর্তব্য!
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ‘ঘনিষ্ঠ’ বা সমর্থকরা এখন বাংলাদেশে আন্দোলনকারী ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর নজরে রয়েছেন। শেখ হাসিনার আমলের অনেক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় লুক-আউট নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশের প্রশাসন। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন, এমন মানুষজনের ক্ষেত্রেও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দেশ ছাড়ার অনুমতি দিচ্ছে না বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।
তবে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন গ্রামে এই ‘হঠাৎ অতিথিদের’ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা। যদিও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না। ‘নতুন পন্থায়’ অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে বিএসএফ-ও উদ্বিগ্ন। সিন্ডিকেট চক্রের উপস্থিতি টের পেয়ে টহলদারি বেড়েছে সীমান্তবর্তী এলাকায়।
বিএসএফ দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি একে আর্য বলেন, প্রতিবেশি দেশের অশান্ত পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকায় টহল কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের সঙ্গে জনসংযোগ বৃদ্ধি করেছি আমরা। অনুপ্রবেশের সব রকম খবর রাখার চেষ্টা করছে বিএসএফ। কয়েকটি অবৈধ অনুপ্রবেশ আটকেও দিয়েছেন জওয়ানরা। গ্রেপ্তার হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তবে সীমান্ত এলাকায় এই মুহূর্তে কোনও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির খবর নেই।
অবৈধ অনুপ্রবেশ আটকাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কতটা সক্রিয়? বিজিবির উপ-মহাপরিচালক (যোগাযোগ) কর্নেল শফিউল আলম পারভেজ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, যারা রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেআইনি এবং অন্যায় কাজ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তার দাবি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তরা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছেন। বাংলাদেশে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা যাতে কোনোভাবে রাজনৈতিক আশ্রয় না পায়, তার জন্য আমরা ভারত সরকারকে অনুরোধ জানাব।

আন্তর্জাতিক
পদত্যাগ করলেন নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক পদত্যাগ করেছেন। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।
বৈঠকে উপস্থিত একজন মন্ত্রীর বরাত দিয়ে কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, সোমবার বিক্ষোভকালে কাঠমান্ডুতে ১৭ জন এবং ইটাহরিতে দুজন নিহত হওয়ার পর নৈতিক দায় স্বীকার করে তিনি পদত্যাগ করেছেন।
এর আগে দিনের শুরুতে নেপালি কংগ্রেসের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের বৈঠকে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক গগন থাপা এবং বিশ্ব প্রকাশ শর্মা নৈতিক কারণে লেখকের পদত্যাগের দাবি জানান।
রমেশ লেখককে গত ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মৃত ও আহতদের মধ্যে অনেকের পরিচয় এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।
এদিন বিক্ষোভকারীরা নির্দেশনা ভেঙে পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এসময় পুলিশ জলকামান, টিয়ারগ্যাস ও গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এতে বহু বিক্ষোভকারী আহত হন।
নেপালের তরুণরা মূলত সরকারের দুর্নীতি ও ২৬টি অনিবন্ধিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম—যার মধ্যে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব ও স্ন্যাপচ্যাট রয়েছে—নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে।
সংঘর্ষের পর কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন শহরের বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি করেছে। এ বিক্ষোভ দেশের অন্যান্য বড় শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক
জেন জি বিক্ষোভে উত্তাল নেপাল, পার্লামেন্টে ঢুকে পড়েছে জনতা

নেপালে জেন-জি বিক্ষোভকারীরা নিউ বানেশ্বরে অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে। সোমবার তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এবং গেট টপকে সেখানে প্রবেশ করে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির কথা থাকলেও জেন-জিদের বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও পানি কামান ব্যবহার করে। খবর দ্য হিমালয়ান টাইমসের।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বনেশ্বর ও আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কারফিউ জারি করেছে কাঠমান্ডুর জেলা প্রশাসন কার্যালয়।
প্রধান জেলা কর্মকর্তা ছবি রিজালের সই করা কারফিউ ঘোষণায় জানানো হয়, স্থানীয় প্রশাসন আইন ২০২৮-এর ৬(এ) ধারা অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নিউ বানেশ্বর চৌক থেকে পশ্চিমে বিজুলিবাজার সেতু পর্যন্ত (এভারেস্ট হোটেল সংলগ্ন), পূর্বে টিঙ্কুনে চৌক পর্যন্ত (মিন ভবন ও শান্তিনগর হয়ে), উত্তরে আইপ্লেক্স মল সংলগ্ন রত্ন রাজ্য সেকেন্ডারি স্কুল পর্যন্ত এবং দক্ষিণে শঙ্খমূল সেতু পর্যন্ত এলাকা কারফিউয়ের অধীনে রাখা হয়েছে।
১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া জেনারেশন জেডের (জেন-জি) তরুণরা কাঠমান্ডু, পোখারা, বুটওয়াল, বিরাটনগরসহ বিভিন্ন শহরে দুর্নীতি ও সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে।
বনেশ্বর এলাকায় কিছু তরুণকে পুলিশের গার্ড হাউসে উঠতে দেখা যায়। এরপরই নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস ব্যাবহার করে। পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করা বিক্ষোভকারীদের সরাতে কর্তৃপক্ষ অভিযান চালাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক
রাশিয়ার যুগান্তকারী ক্যানসার ভ্যাকসিন ট্রায়ালে সফল

ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাশিয়ার বিজ্ঞানীদের তৈরি ভ্যাকসিন ট্রায়ালে সফল হয়েছে। যা এখন সব রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত।
রাশিয়ার ফেডারেল মেডিকেল অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল এজেন্সির (এফএমবিএ) প্রধান ভেরোনিকা স্কভোর্টসোভা ইস্টার্ন অর্থনৈতিক ফোরামে এ ঘোষণা দেন চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই চলতি মাসেই বাজারে আসবে এন্টারোমিক্স। রুশ বার্তা সংস্থা তাসের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটিই প্রথম ক্যানসারের কোনো টিকা, যা তৈরি করা হয়েছে এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
ক্যানসার একটি শব্দ, যা শোনার পর মুহূর্তেই বদলে যায় জীবনের চালচিত্র। দীর্ঘদিন ধরে অনিরাময়যোগ্য রোগ হিসেবে ধরা হয় এই ক্যানসারকে। তবে উন্নত চিকিৎসাবিজ্ঞানের কল্যাণে এই রোগের ভীতি অনেকটাই কমেছে মানুষের মন থেকে। এখন ক্যানসার মানেই নিশ্চিত মৃত্যু নয়, বরং এটি হয়ে উঠছে নিয়ন্ত্রণযোগ্য।
তেমনই ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন যুগের সূচনা দেখিয়েছে রাশিয়া। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল মেডিকেল রিসার্চ রেডিওলজিক্যাল সেন্টার এবং ইনস্টিটিউট অব মলিকুলার বায়োলজির যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে এই রোগের নতুন টিকা। ইতিমধ্যে ট্রায়ালে এন্টারোমিক্স নামের টিকাটি শতভাগ সাফল্য দেখিয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
এন্টারোমিক্স হবে এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা প্রথম টিকা। এমআরএনএ হলো এক ধরনের প্রোটিন, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে করোনার টিকাও তৈরি করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।
গবেষণা অনুযায়ী টিকাটি ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায় এবং মধ্যম পর্যায়ের জন্য বেশি কার্যকর। এ ছাড়া এটি শুধু ক্যানসার কোষ ধ্বংসই নয়, বড় আকারের টিউমারও উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট করে দেয়।
টিকা গ্রহণকারীদের শরীরেও কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বলে জানানো হয়েছে। এখন শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষা।
আন্তর্জাতিক
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভ, গ্রেপ্তার ৪ শতাধিক

যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গ্রুপের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবিতে দেশটির পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভ করেছেন হাজারও মানুষ। এ সময় তাদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির পরে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করে গণগ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম খবর আলজাজিরা।
স্থানীয় সময় শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সমাবেশের আয়োজনকারী প্রচারণা গোষ্ঠী ডিফেন্ড আওয়ার জুরিস জানিয়েছে, লন্ডনে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের বাইরে বিক্ষোভে প্রায় ১,৫০০ জন অংশগ্রহণ করেন। সন্ত্রাসবাদ আইনের অধীনে গ্রেপ্তারের ঝুঁকি নিয়েই তারা রাস্তায় নামেন। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর নির্মমভাবে আক্রমণ করে এবং তাদের মাটিতে ফেলে দেয়।
অন্যদিকে, তারা প্ল্যাকার্ড ধরে রাখার জন্য গণহারে গ্রেপ্তার করে। ওই প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘আমি গণহত্যার বিরোধিতা করি। আমি প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সমর্থন করি’। ডিফেন্ড আওয়ার জুরিস এক্স-এ সংঘর্ষের ভিডিওসহ একটি পোস্টও করেছে। সেখান থেকে লন্ডন পুলিশ ৪২৫ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে।
যুক্তরাজ্যের সংবাদ সংস্থা প্রেস অ্যাসোসিয়েশন জানায়, বিক্ষোভের সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে এবং গ্রেপ্তারের পর একজন বিক্ষোভকারীর মুখ দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখা গেছে।
সংস্থাটি আরও জানায়, বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের প্রথমে তর্কাতর্কি হয়। এক পর্যায়ে পুলিশের দিকে পানির বোতল ছুঁড়ে মারেন তারা। এক পর্যায়ে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান।
লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশের দাবি, একজন পুলিশ অফিসারকে আক্রমণ করা এবং নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রতি সমর্থন প্রকাশসহ বিভিন্ন অপরাধের জন্য ৪২৫ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পার্লামেন্ট স্কোয়ারে ডিফেন্ড আওয়ার জুরিসের বিক্ষোভে পুলিশ অফিসাররা আক্রমণের শিকার হয়েছেন। মৌখিক নির্যাতনের পাশাপাশি পুলিশকে ঘুষি, লাথি, থুতু এবং জিনিসপত্র নিক্ষেপ করেন বিক্ষোভকারীরা।
আন্তর্জাতিক
মালয়েশিয়া ভ্রমণকারীদের জন্য নতুন নিয়ম

মালয়েশিয়ায় ভ্রমণকারীদের বিষয়ে নতুন নিয়ম করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ। এতে বলা হয়েছে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে অতিরিক্ত সময় মালয়েশিয়ায় অবস্থানকারী বিদেশিদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক জরিমানার বিধান কার্যকর করা হবে।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জোহরের সেকোলা কেবাংসান রামবং পুলাইতে ইমিগ্রেশন বিভাগের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসুতিন ইসমাইল।
তিনি বলেন, বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত করা এবং মামলা আদালতে না নেওয়ার উদ্দেশ্যে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে, ৯০ দিনের বেশি অবস্থানকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালানো হবে।
জরিমানার নতুন কাঠামো:
১ থেকে ৩০ দিন অতিরিক্ত অবস্থান করলে প্রতিদিন ৩০ রিঙ্গিত জরিমানা, সর্বোচ্চ ৯০০ রিঙ্গিত পর্যন্ত। ৩১ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত অবস্থান করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১,০০০ রিঙ্গিত জরিমানা। ৬১ থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত অবস্থান করলে ২,০০০ রিঙ্গিত জরিমানা। ৯০ দিনের বেশি অবস্থান করলে তদন্ত পত্র খোলা হবে।
মন্ত্রী জানান, এই পদক্ষেপে বিচারের সময়কাল ১৪ দিন থেকে কমে মাত্র এক দিনে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে অভিবাসন ডিপোতে ভিড়ও কমবে। তবে দুর্ঘটনা, বন্যা বা অন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো যুক্তিসঙ্গত কারণে দেশে ফিরতে না পারা ব্যক্তিদের জন্য শিথিলতার সুযোগ রাখা হয়েছে।
এদিকে, ইমিগ্রেশন বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের দায়ে ৩৫ হাজার ২২৫ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। এ সময় দেশব্যাপী ৯ হাজার ৫০০টি অভিযান চালানো হয়, যেখানে ১ লাখ ৫২ হাজার বিদেশিকে চেক করা হয়।
আটক হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে ইন্দোনেশীয়, মিয়ানমার এবং বাংলাদেশিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদের মধ্যে কেউ বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই দেশে প্রবেশ করেছিলেন, কেউ মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থান করেছেন, আবার কেউ বৈধ পাসপোর্ট বা কাজের অনুমতির অপব্যবহার করেছেন। এ সময়ের মধ্যে ১ হাজার ৩৯৫ জন নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে অবৈধ অভিবাসী নিয়োগ ও আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে।
এছাড়া, ২৮ আগস্ট পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৫৫৭ জন বিদেশিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া আটকাদেশ, ফেরত পাঠানোর আদেশ এবং বিমানের টিকিট সংগ্রহের ১০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।