অর্থনীতি
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে এস আলম গ্রুপের দখল মুক্ত করার দাবি

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিলসিকে এস আলম গ্রুপের কবল থেকে দখল মুক্ত করে প্রকৃত মালিক ও প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তাদের কাছে মালিকানা হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন শেয়ার হোল্ডাররা।
রোববার (১১ আগস্ট) সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডাররা এবিষয়ে এক মানববন্ধনের আয়োজন করে। ব্যাংকটির মালিকানা প্রকৃত মালিকদের হাতে ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আবেদন করা হয়।
প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানব বন্ধন থেকে দেশের অন্যতম সনামধন্য এই ব্যাংকটিকে অর্থ পাচারকারীদের কবল থেকে পুনরূদ্ধার করে ব্যাংকের বর্তমান অবৈধ পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে ব্যাংকটির প্রকৃত মালিক, প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ের একটি নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের মাধ্যমে ব্যাংকটি মালিকানা হস্তান্তরের জোর দাবি জানিয়েছেন। এতে করে ব্যাংকটির আমানতকারী শেয়ার হোল্ডারদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে। দেশের আর্থিক খাত সংস্কারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলনের অন্যতম দাবির সাথে একাত্ততা প্রকাশ করে এবং দেশ ও অর্থনীতির স্বার্থ রক্ষায় এই প্রদক্ষেপ গ্রহন করার জন্য বর্তমান অন্তবর্তী কালীন সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য শেয়ার হোল্ডাররা জোর দাবি জানিয়েছেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০১৭ সালে শরিয়াভিত্তিক পরিচালিত এসআইবিপিলসি’র মালিকানা জোর করে তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দখল করে নেয় আওয়ামী মদদপুষ্ট এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের চরমভাবে হেনস্তা করে এক দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নরের যোগসাজশে অবৈধভাবে রাতের আঁধারে ব্যাংকটির মালিকানা পরিবর্তন করা হয়।
এরপর থেকে এস আলাম গ্রুপের মাধ্যমে নামে বেনামে মনোনয়নকৃত পরিচালকদের সমন্বয়ে গঠিত অবৈধ বোর্ড কর্তৃক ব্যাংকটি দীর্ঘ সাত বছর যাবৎ পরিচালিত হয়ে আসছিল। মূলত চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মাসুদের (এস আলম) নিকটবর্তী আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমেই ব্যাংকটি পরিচালিত হয়ে আসছিল। বর্তমানে তার জামাতা মো. বেলাল আহমেদ ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান তারা।
এতে বলা হয়, ১৯৯৫ সালে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যাংকটির অন্যতম উদ্যোক্তা পরিচালক এবং তৎকালীণ পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব:) ডাঃ রেজাউল হক এর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সুযোগ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকটি অত্যন্ত সুচারুরূপে পরিচালিত হয়ে আসছিল। সমাজের স্বনামধন্য, গুণী, সৎ, মেধাবী ও ব্যাংকিং বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। ব্যাংকটিকে উত্তোরত্তর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং শেয়ার হোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। সে সময় ব্যাংকের সম্মানিত শেয়ার হোল্ডাররা তাদের কাঙ্খিত লভ্যাংশ পেয়েছেন।
পরবর্তীতে গত ৭ বছর আওয়ামী মদদপুষ্ট এস আলম ও তার সহযোগীদের চক্রান্তে সাধারণ আমানতকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকা নামে বেনামে অবৈধভাবে ব্যাংক থেকে লুট পাট করে পাচার করা হয়। আর এই লুট-পাটের কাজে তাদেরকে ন্যাক্কারজনকভাবে অবৈধ পন্থায় নামে-বেনামে ব্যাংকের অর্থ পাচার করতে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন তাদেরই আজ্ঞাবহ চরম দুর্নীতিবাজ বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। তাদের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে শুধু এসআইবিএল নয় বরং সম্পূর্ণ আর্থিক খাত আজ হুমকির মুখে। সাধারণ আমানতকারীদের স্বার্থ আজ ক্ষতির দ্বারপ্রান্তে। বর্তমানে সাধারণ আমানতকারীরা তাদের জমাকৃত অর্থ প্রয়োজন অনুযায়ী উত্তোলন করতে পারছেন না। স্বৈরাচারী সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার অবৈধ অর্থের অন্যতম যোগানদাতা হিসেবে এস আলম গ্রুপ সক্রিয়ভাবে সম্পূর্ণ অবৈধ পন্থায় সহযোগিতা করে আসছে বলেও মানববন্ধনে জানানো হয়।
মানবন্ধনে বলা হয়, বর্তমানে পট পরিবর্তনের পর সম্পূর্ণ জাতি যখন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যায় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, এখনও এই কুচক্রী মহলের আজ্ঞাবহ ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে সাধারণ আমানতকারীদের টাকা পাচার করার প্রয়াসে লিপ্ত রয়েছে।

অর্থনীতি
সবজির দামে পুড়ছে মানুষ, ডিমের ডজন ১৫৫

বেশ কিছুদিন ধরে সবজির বাজারে ঊর্ধ্বগতির দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। প্রায় সব ধরনের সবজির দাম ৮০ টাকার ঘরে আটকে আছে। তবে করলা, বেগুন ও টমেটোর মতো সবজিগুলোর দাম আরও বেশি। সবজির সঙ্গে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ডিমের দামও। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ১৫৫ টাকা দরে।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে সবজির চড়া দামের এমন চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর শনিরআখরা কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে আসা ইকরাম আহমেদ বলেন, আমাদের আয় সীমিত, টানাটানির সংসার। এরমধ্যে কোনো ক্ষেত্রে বেশি খরচ হলে অন্যদিকে টান পড়ে যায়। সবজির মূল্যবৃদ্ধি আসলেই আমাদের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগের চেয়ে সবজি কেনা কমিয়ে দিয়েছি। তবে দু-এক কেজি না কিনলে তো রান্না চলবে না। অল্প অল্প করে নিচ্ছি।
শুধু শুধু ইকরাম নন, বাজারে আসা ক্রেতাদের সবাই সবজির চড়া দামে নাকাল। অনেকে দাম বেশি হওয়ায় সবজি কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। কেউ আবার সবজি না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে।
বিক্রেতারা বলছেন, টানা বৃষ্টির কারণে এখন সবজির উৎপাদন আর সরবরাহ কম। তাই দাম বেড়েছে।
সবুজ হোসেন নামের একজন বিক্রেতা বলেন, এখন কম উৎপাদনের মৌসুম চলছে। এসময় আবহাওয়ার কারণে জমিতে সবজি চাষ কম হয়, ফলে সরবরাহও কমে যায়। এরমধ্যে অস্বাভাবিক বৃষ্টিতে অনেক এলাকার সবজিক্ষেত তলিয়ে গেছে। এ কারণে বাজারে সবজির দাম বেড়েছে।০
বাজারে এখন আলু, বই কচু ও কাঁচা পেঁপে ছাড়া আর কোনো সবজি ৮০ টাকার কমে মিলছে না। এমনকি গ্রীষ্মের সবজি ঢ্যাঁড়স-পটোলও বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। এছাড়া বরবটি, বেগুন, উস্তা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গার, ধুন্দল কাঁকরোলের দাম বাজারভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে এখন কাঁচামরিচের দামও অনেক চড়া। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩২০ টাকা পর্যন্ত। কয়েকদিন আগেও প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। বাজারে এখন প্রতি পিস চালকুমড়া ৭০ টাকা, লাউ ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়ার ফালি ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
সবজির সঙ্গে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ডিমের দামও। আগে প্রতি ডজন ডিম ১৪০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বেড়ে হয়েছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। পাড়া-মহল্লার দোকানে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে। মাত্র একমাস আগেও প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা।
ডিমের দাম বেশি কেন—জানতে চাইলে মালিবাগ বাজারের ডিম বিক্রেতা বুলু মিয়া জানান বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে ডিমের দামেও। সবজির দাম বাড়লেই স্বাভাবিকভাবে ডিমের চাহিদা বেড়ে যায়। এছাড়া বৃষ্টির কারণে ডিমের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে।
বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে।
কাফি
অর্থনীতি
দুই মাসে বাংলাদেশি পোশাকের ক্রয়াদেশ বেড়েছে ৩২ শতাংশ

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির কারণে বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিদেশি ক্রেতারা ধীরে ধীরে নয়াদিল্লি, ইসলামাবাদ ও বেইজিং থেকে মুখ ফিরিয়ে এখন লাল-সবুজের পতাকার দিকে ঝুঁকছেন। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্রেতারা অর্ডার নিয়ে ঢাকায় আসছেন, ফলে গত দুই মাসে আগের একই সময়ের তুলনায় ক্রয়াদেশ বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও সরাসরি পোশাক রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, দেশের তৈরি পোশাক খাতে নতুন সম্ভাবনা জেগে উঠেছে। চলতি আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বিশ্ববাজারের ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশে নতুন রপ্তানি আদেশ দেওয়ার প্রবল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে সেপ্টেম্বর থেকে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে।
পোশাক খাতের সংশ্লিষ্টদের মতে, গত দুই মাসে আগের একই সময়ের তুলনায় ক্রয়াদেশ প্রায় ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেই মোট রপ্তানি আয়ে ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে কেবল পোশাক খাত থেকেই রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩৯৬ কোটি ডলার, যা দেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮৩ শতাংশ।
ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জানান, ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী রপ্তানি আদেশ গ্রহণ ও সময়মতো শিপমেন্ট সম্পন্ন হলে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শেষে মোট রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কিংবা তারও বেশি হতে পারে। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আট মাসের মধ্যেই রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও জানান, শুধু তৈরি পোশাক নয়—চীন ও ভারত থেকে আগে যুক্তরাষ্ট্রে যেসব পণ্য রপ্তানি হতো, সেসবের ক্রেতারাও এখন বাংলাদেশে আসছেন। উদ্যোক্তারা যদি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেন, তবে এসব ক্রেতা স্থায়ীভাবেই বাংলাদেশমুখী হতে পারেন। তবে এর জন্য দ্রুত বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকট সমাধান ও বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, গত ছয়-সাত মাস ধরে চীনের পরিবর্তে অনেক ক্রেতা তাদের আমদানি আদেশ ভারতে স্থানান্তর করছিলেন। কারণ, তারা আগেই অনুমান করেছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে চীনের রপ্তানিকারকদের কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হবে। তবে হঠাৎ ভারতের ওপর বাড়তি মার্কিন শুল্ক আরোপ সেই প্রবণতাকে বদলে দিয়েছে। এর সঙ্গে চীনের পোশাক কারখানাগুলোতে শ্রমিক সংকট তৈরি হওয়ায় বাংলাদেশ এ সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারবে।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী সব রপ্তানি আদেশ বাস্তবায়ন করা গেলে চলতি অর্থবছরেই রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধি ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে শিল্পে বিনিয়োগ ও উৎপাদন প্রবাহ এখনো কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতের কারণে। তার মতে, ব্যাংকগুলো বর্তমানে পুরোপুরি রিকভারি মোডে আছে, তারা ঋণ আদায়ে মরিয়া। কিন্তু বহু বছরের অনিয়ম ও লুটপাটের সমস্যাগুলো রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয়। ঋণের সুদহার বাড়ানো বা ঋণ প্রবাহ কমিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণও সম্ভব নয়। এখনো পরিস্থিতি এমন নয় যে একদিনে সব ঠিক করে ফেলা যাবে। তিনি বলেন, সহনীয় নীতির বিপরীতে গিয়ে যেমন রাজস্ব আয় বাড়ানো যায় না, তেমনি উদ্যোক্তাদের আতঙ্কিত করে ঋণ আদায় করাও সম্ভব নয়।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল আমার জানান, সাধারণত জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে তুলনামূলক কম রপ্তানি হয়ে থাকে; কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। রপ্তানি আয় বাড়ছে, একই সঙ্গে আসছে নতুন নতুন ক্রয়াদেশ। আগে যেখানে শুধু বড় ক্রেতারা অর্ডার দিতেন, সেখানে গত এক মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারের জন্য ছোট ছোট ক্রেতারাও অর্ডার দিতে শুরু করেছেন। এতে গত মাসে রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর সেখানকার ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশ ভালো সাড়া পাচ্ছে। প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় চীন ও ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় আমাদের পণ্যের চাহিদা বেড়েছে।
পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাড়তি ক্রয়াদেশ গ্রহণে সতর্ক হতে হবে। কোনো অবস্থাতেই মূল্যছাড়ে পণ্য বিক্রি করা উচিত নয়। কারণ, একবার কম দামে পণ্য বিক্রি করলে পরে ক্রেতারা আর সঠিক দাম দিতে চাইবে না। এতে রপ্তানি আয় বাড়লেও অল্প সময়ের মধ্যেই অনেক প্রতিষ্ঠান উৎপাদন বন্ধ করে দেনার ফাঁদে পড়তে পারে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি টাস্কফোর্স গঠন করা উচিত সরকারের।
অর্থনীতি
দেউলিয়া হচ্ছে ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশের আর্থিক খাতে বড় ধরনের ধাক্কা আসছে। দেশের ৩৫টি নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনের (এনবিএফআই) মধ্যে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে লিকুইডেশনের (দেউলিয়া ঘোষণা করে কার্যক্রম বন্ধ) পথে নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম, যা খাতটির অস্থিরতা ও দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনাকে স্পষ্ট করে তুলছে। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে গত মে মাসে খারাপ অবস্থায় থাকা ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না জানতে চেয়ে নোটিশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় ৯ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান অবসায়নে সরকারের ৯ হাজার কোটি টাকা লাগবে বলে জানা গেছে।
বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো– পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, আভিভা ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি ও প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। গতকাল গভর্নরের সম্মতি নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান অবসায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেজল্যুশন বিভাগে তথ্য পাঠানো হয়। অবসায়নের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। কর্মরত কর্মচারীদের চাকরিবিধি অনুযায়ী সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে– এফএএস ফাইন্যান্সের মোট ঋণের এক হাজার ৮১৪ কোটি টাকা বা ৯৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ খেলাপি। ক্রমপুঞ্জীভূত লোকসান এক হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৯৮ শতাংশ ঋণ খেলাপি। এ ছাড়া লোকসান এক হাজার ১৭ কোটি টাকা। বিআইএফসির ৯৭ দশমিক ৩০ শতাংশ ঋণখেলাপি এবং লোকসান এক হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের তিন হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা ঋণের ৯৬ শতাংশ খেলপি। ক্রমপুঞ্জীভূত লোকসান চার হাজার ২১৯ কোটি টাকা। পিপলস লিজিংয়ের ৯৫ শতাংশ খেলাপি, লোকসান চার হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। আভিভা ফাইন্যান্সের দুই হাজার ৪৩০ কোটি টাকা বা ৮৩ শতাংশ খেলাপি। লোকসান তিন হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। প্রিমিয়ার লিজিংয়ের ৯৮৪ কোটি টাকা বা ৭৫ শতাংশ খেলাপি, লোকসান ৯৪১ কোটি টাকা। জিএসপি ফাইন্যান্সের ৫১৫ কোটি টাকা বা ৫৯ শতাংশ খেলাপি, লোকসান ৩৩৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রাইম ফাইন্যান্সের ৫৩৪ কোটি টাকা বা ৭৮ শতাংশ ঋণখেলাপি। ক্রমপুঞ্জীভূত লোকসান ৩৫১ কোটি টাকা।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর পর্যালোচনা প্রতিবেদন তৈরির জন্য গত জানুয়ারিতে একটি কমিটি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই কমিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সূচক পর্যালোচনা, ঋণের প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ, তারল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং সম্পদ দায়ের পরিমাণের ভিত্তিতে ২০টি প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে। সমস্যাগ্রস্ত অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো– ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, হজ ফাইন্যান্স কোম্পানি, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এবং সিভিসি ফাইন্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০২৩ সালে প্রণীত ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠান অবসায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই আইনের ৭(১) ধারা অনুযায়ী মোট ৯টি কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে উল্লেখিত (ঘ) আমানতকারীর স্বার্থ পরিপন্থী ব্যবসা পরিচালনা এবং (ঙ) আমানতকারীর দায় পরিশোধে সম্পদের অপর্যাপ্ততায় লাইসেন্স বাতিলের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া (চ) উপধারায় মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারলে লাইসেন্স বাতিল করা যাবে। লাইসেন্স বাতিলের আগে ৭(২) ধারা অনুযায়ী ১৫ দিনের সময় দিয়ে নোটিশ দিতে হবে।
জানা গেছে, একীভূত করার আগে আইনগত বাধ্যবাধকতা মেনে গত ২২ মে কেন লাইসেন্স বাতিল করা হবে না জানতে চেয়ে পরিচালনা পর্ষদকে নোটিশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নোটিশ পাওয়ার ১৫ দিনের জন্য জবাব দিতে বলা হয়। ওই নোটিশে বলা হয়, ‘আপনাদের প্রতিষ্ঠানের ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরভিত্তিক বিবরণী পর্যালোচনা করে আমানতকারীর দায় পরিশোধে সম্পদের অপর্যাপ্ততা, শ্রেণিকৃত ঋণের উচ্চহার ও ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এসব ব্যর্থতার ফলে ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন ২০২৩ এর ৭(১) ধারার (ঘ), (ঙ) ও (চ) উপধারাসমূহ কেন লঙ্ঘিত হয়নি ব্যাখ্যা দিতে হবে। এ ছাড়া ৭(২) ধারা অনুযায়ী কেন লাইসেন্স বাতিল করা হবে না সে বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলো।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মোট ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট ঋণ রয়েছে ৭৫ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এসব ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পদের মূল্য ৩৬ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত সমস্যাগ্রস্ত ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২৫ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ২১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের যা ৮৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। তাদের বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য মাত্র ছয় হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা ২৬ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানগুলোর পুঞ্জীভূত লোকসান ২৩ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা। মূলধন ঘাটতি ১৯ হাজার ২১৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে, তুলনামূলক ভালো হিসেবে চিহ্নিত ১৫টি প্রতিষ্ঠানের ৪৯ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি মাত্র তিন হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য ২৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। এ হিসাবে মোট বন্ধকি সম্পত্তির প্রায় ৮১ শতাংশ ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোর। গত বছর এসব প্রতিষ্ঠান মুনাফা করেছে এক হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। তাদের মূলধন উদ্বৃত্ত রয়েছে ছয় হাজার ১৮৯ কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ৪৮ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা আমানত এবং অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ১৮ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট আমানতের মধ্যে সমস্যাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের আমানত ২২ হাজার ১২৭ কোটি টাকা এবং অন্য ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ধার পাঁচ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খারাপ প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যক্তি আমানত রয়েছে পাঁচ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৮৯ কোটি টাকা আমানতের বিপরীতে ঋণ নিয়েছেন গ্রাহক। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের নিট ব্যক্তি আমানত চার হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন বা একীভূতকরণের জন্য প্রাথমিকভাবে এ পরিমাণ তহবিল দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে।
কাফি
অর্থনীতি
আগস্টের ২০ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২০ হাজার কোটি টাকা

চলতি আগস্ট মাসের ২০ দিনে অর্থাৎ ২০ আগস্ট পর্যন্ত দেশে ১৬৪ কোটি ২০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা ২০ হাজার ৩২ কোটি ৪০ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ও সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, আগস্টের ২০ দিনে ১৬৪ কোটি ২০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। যা গত বছরের (২০২৪ সালের আগস্টের ২০ দিন) একই সময়ের চেয়ে ১১ কোটি ২০ ডলার বেশি। গত বছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৩ কোটি ডলার।
এ নিয়ে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে আগস্টের ২০ তারিখ পর্যন্ত ৪১২ কোটি ডলার এসেছে দেশে। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ৩৪৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সে হিসাবে আলোচ্য সময়ে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি প্রায় ২০ শতাংশ।
এর আগে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে এসেছে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ১০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩০ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। তবে এ মাসে ৮ ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি।
গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা ছিল বছরের রেকর্ড পরিমাণ। পুরো অর্থবছরে (২০২৪-২৫) প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ডলার, আগস্টে আসে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে আসে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার। এরপর অক্টোবরে আসে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, নভেম্বরে আসে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে। পরের মাস জানুয়ারিতে আসে ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চ মাসে আসে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ডলার, মে মাসে আসে ২৯৭ কোটি ডলার এবং জুনে ২৮২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা ও প্রবাসী আয়ের পথ সহজ করায় রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক ধারায় রয়েছে।
কাফি
অর্থনীতি
এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ তৈরির অধ্যাদেশ পাস

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ ‘রেভিনিউ পলিসি ডিভিশন’ এবং ‘রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন’ তৈরির অধ্যাদেশ পাস হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) ২০২৫ নীতিগত ও চুড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
অধ্যাদেশটিতে আনা সংশোধনী অনুযায়ী, নতুন দুটি বিভাগের মধ্যে ‘রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন’ বা রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধানের পদে এনবিআরের বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই নিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ‘রেভিনিউ পলিসি ডিভিশন’ বা রাজস্ব নীতি বিভাগেও সরকার চাইলে এনবিআর অথবা যোগ্যতা সম্পন্ন অন্য কোনো বিভাগ থেকে নিয়োগ দিতে পারবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড(এনবিআর) ভেঙে যে দুটি বিভাগ করা হচ্ছে, সেখানে রাজস্ব নীতি বিভাগের প্রধান বা সচিব হিসেবে যেকোনো ক্যাডারেরর কর্মকর্তারা নিয়োগ পাবেন। এক্ষেত্রে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও নায্যতার ভিত্তিতে এই নিয়োগ হবে।
ফাওজুল কবির খানের নেতৃত্বে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান শফিকুল আলম। তিনি বলেন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব নিয়োগ আগের মতোই রাখা হয়েছে।
আগের অধ্যাদেশে ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের’ প্রধান পদে রাজস্ব আহরণ সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞদের ‘অগ্রাধিকার’ দেওয়ার কথা থাকলেও সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ‘রাজস্ব আহরণ সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে, এরকম কোনো যোগ্য সরকারি কর্মকর্তাকে ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনে নিয়োগ দেবে।’ এর মাধ্যমে মূলত এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই এই বিভাগের প্রধান নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে।
একইভাবে, ‘রাজস্ব নীতি বিভাগের’ প্রধান হিসেবে আগে ‘উপযুক্ত কোনো কর্মকর্তাকে’ নিয়োগের কথা বলা ছিল। নতুন সংশোধনীতে বলা হয়েছে, সরকার সামষ্টিক অর্থনীতি, বাণিজ্য নীতি, পরিকল্পনা, রাজস্ব নীতি বা ব্যবস্থাপনা কাজে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মকর্তাকে রেভিনিউ পলিসি ডিভিশনে নিয়োগ দিতে পারবে।”
ফলে এক্ষেত্রে সরকার চাইলে এনবিআর বাদেও অন্য কোনো বিভাগের যোগ্য কর্মকর্তাকে এ বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে।
এছাড়া উভয়-বিভাগে কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
গত মে মাসে সরকার এনবিআর বিলুপ্ত করে নতুন অধ্যাদেশ জারির পরে এনবিআরের বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। তাদের আন্দোলনের মুখে পরবর্তীতে অধ্যাদেশটি সংশোধন করা হয়।
কর্মকর্তাদের অভিযোগ ছিল, অধ্যাদেশটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে দুটি বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি হয় এবং রাজস্ব কর্মকর্তাদের শীর্ষ পদে আসার পথ সংকুচিত হয়ে পড়ে।
এর প্রতিবাদে কর্মকর্তারা গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে আন্দোলন শুরু করেন এবং জুনের শেষ দিকে বন্দর অচল করার মতো কর্মসূচিও পালন করেন। এর প্রেক্ষিতে সরকার কঠোর অবস্থান নেয়। এখন পর্যন্ত ৩৬ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বহিষ্কার, পাঁচজনকে বাধ্যতামূলক অবসর এবং প্রায় ৪০০ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
তবে অধ্যাদেশে সংশোধনী আনার ফলে এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যে কিছুটা সন্তোষ ফিরেছে। তারা বলছেন, অন্তত একটি বিভাগের প্রধান হিসেবে এনবিআর কর্মকর্তাদের নিয়োগ নিশ্চিত হওয়ায় তাদের আন্দোলন যৌক্তিক ছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে।