জাতীয়
বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের মিডিয়ায় ভয়াবহ প্রোপাগান্ডা

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে দেশজুড়ে অস্থিরতা চলছে। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও পুলিশের কর্মবিরতি অস্থিরতাকে অরাজকতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, এমনকি লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। এর বেশিরভাগ রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক, আবার কিছু ঘটনা সুযোগসন্ধানী অপশক্তি ঘটিয়েছে। তবে এ সহিংসতা ঘিরে ভারতের কতিপয় গণমাধ্যম প্রচার করছে উসকানিমূলক প্রতিবেদন। আর ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার), টিকটক ও ইউটিউবের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে ভয়াবহ প্রোপাগান্ডা ও গুজব। সাম্প্রদায়িক রং মাখিয়ে বানানো এসব গুজব-প্রোপ্রাগান্ডার ঢেউ এসে পড়ছে বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সোশ্যাল প্লাটফর্মেও। ফলে অস্থিরতা আরও উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে।
স্রোতের মতো ছড়াতে থাকা এসব প্রোপাগান্ডা ধরে ধরে শনাক্তে হিমশিম খাচ্ছেন ফ্যাক্ট-চেকাররা। বেশিরভাগ প্রোপাগান্ডাই যে ভয়াবহ এবং পরিকল্পিত সে কথাও বলছেন কেউ কেউ। রিউমার স্ক্যানার, ডিসমিসল্যাবের মতো ফ্যাক্ট-চেকিং বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমও এসব প্রোপাগান্ডা-গুজব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
রিউমার স্ক্যানার গত শুক্রবার (৯ আগস্ট) রাতে জানায়, তারা ভারতীয়দের ছড়ানো ২০টিরও বেশি গুজব শনাক্ত করেছে। পরে শনিবার (১০ আগস্ট) জানা যায়, ভারতীয়দের ছড়ানো মারাত্মক পর্যায়ের গুজব শনাক্ত হয়েছে ৩০টির বেশি।
তারা জানায়, গত ৭ আগস্ট বিকেলে এক্সে মোহন গৌড়া নামে আইডি থেকে একটি ছবি পোস্ট করে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ-আসাম সীমান্তে শরণার্থীদের ভিড় তৈরি হয়েছে’। অথচ যে ছবি পোস্ট করা হয়েছে, সেটি ২০১৮ সালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে দুই দেশে বসবাসরত বিচ্ছিন্ন আত্মীয়দের মিলনমেলার ছবি।
৭ আগস্ট বিকেলেই এক্সে সালওয়ান মোমিকা নামে আইডি থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে ইরাকের মতো হিন্দু নারীদের বন্দি করে বিক্রি করা হচ্ছে’। অথচ ওই ভিডিওটি বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেত্রীকে বেঁধে রাখার সময়ের।
সেদিন সন্ধ্যায় ‘দ্য জয়পুর ডায়লগস’ নামে ভেরিফায়েড এক্স আইডিতে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে হিন্দু নারীদের ধর্ষণ ও হত্যা করা হচ্ছে। তারা গণহত্যার ঝুঁকিতে’। অথচ ওই ভিডিও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের বিচারের দাবিতে মৌন প্রতিবাদী নাটকের।
৭ আগস্ট সকালে ‘সুদর্শন নিউজ’ নামে ভেরিফায়েড এক্স আইডিতে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, ‘লক্ষ্মীপুরে রাজন চন্দ্র নামে এক হিন্দুর দোকান আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে’। অথচ ওই ভিডিও লক্ষ্মীপুরেরই মজুচৌধুরীর একটি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের।
৬ আগস্ট ‘র্যান্ডমসেনা’ নামে ভেরিফায়েড এক্স আইডিতে একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হয়, ‘আরেকটি হিন্দু মন্দিরে আগুন দেওয়া হয়েছে’। অথচ ওই ভিডিও সাতক্ষীরার রাজপ্রাসাদ রেস্টুরেন্টে আগুনের ঘটনার।
৬ আগস্ট দুপুরে ‘বাবা বেনারস’ নামে ভেরিফায়েড এক্স আইডিতে একটি পোস্টে দাবি করা হয়, ‘রংপুরে দুই শিশুসহ ৬ নারীকে ধর্ষণের পর পুড়িয়ে মারা হয়েছে’। অথচ রংপুরে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
ছবি: রিউমার স্ক্যানার৫ আগস্ট রাতে ‘হিন্দুত্ব নাইট’ নামে এক্স আইডিতে একটি ভিডিও পোস্ট করে লেখা হয়, ‘বাংলাদেশের হিন্দু ক্রিকেটার লিটন দাসের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে’। অথচ ওই ভিডিওটি মাশরাফির বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনার। তাছাড়া, লিটন নিজে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, তার বাড়িতে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তিনি নিরাপদে ও ভালো আছেন।
৬ আগস্ট মধ্যরাতে ওই একই আইডিতে আরেকটি ভিডিও দিয়ে পোস্টে দাবি করা হয়, ‘হিন্দু বৃদ্ধকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ’ অথচ ওই ভিডিওটি ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম হিরণের মৃতদেহের।
এছাড়া চাঁদপুরের আলোচিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খানের মৃতদেহের ভিডিওকে প্রচার করা হয়েছে হিন্দু ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারার ভিডিও বলে। ২০১২ সালে রামুতে বৌদ্ধ বিহারে সহিংসতার ভিডিওকে প্রচার করা হয়েছে সাম্প্রতিক ঘটনা হিসেবে।
এদিকে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাবও শনাক্ত করেছে কিছু গুজব। এর মধ্যে, ৫ আগস্ট রাতে একটি গুজব এক্স-এর ‘ডেইলি লেটেস্ট আপডেটস’ নামে ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়িয়েছে। সেই অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করে বলা হয়, চট্টগ্রামের নবগ্রহ মন্দিরে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়েছে।
এক্স-এর তথ্য অনুসারে, অ্যাকাউন্টটি ভারত থেকে পরিচালিত হয়। যাচাইয়ে নেমে সাঈদ খান সাগর নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টে বলা হয়, নবগ্রহ মন্দিরে হামলার দাবিটি একটি প্রোপাগান্ডা। যোগাযোগ করা হলে পোস্টদাতা জানান, চট্টগ্রামের লালদিঘী পাড় সংলগ্ন নবগ্রহ মন্দিরে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। তাকে এক্সে প্রচারিত ভিডিওটি পাঠানো হলে, তিনি বলেন যে এটি মূলত মন্দিরের কাছাকাছি অবস্থিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুরের ঘটনায় সৃষ্ট আগুন। তিনি অক্ষত মন্দিরের ছবি পাঠিয়ে জানান, মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক স্বপন দাসও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। একই ভিডিওটি প্রচার হতে দেখা যায় ভারতের গণমাধ্যম রিপাবলিক টিভিতে। ৬ আগস্টে রিপাবলিক বাংলার অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিওর শিরোনাম করা হয়, “চট্টগ্রামে লালদিঘি পাড় নবগ্রহ মন্দির ভাঙচুর #shorts। ” অথচ খবরটি পুরোপুরি বানোয়াট।
অন্যদিকে এএফপির বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেকবিষয়ক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশিরও কিছু গুজব-প্রোপাগান্ডা শনাক্ত করে তার ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করেছেন।
এর মধ্যে একটি হলো, ‘গত কয়েকদিন ধরে একটি কথিত মেসেজ কনভারসেশনের স্ক্রিনশট পোস্ট করে দেখানো হচ্ছে যে, কোটা আন্দোলন চলাকালে কোনো মেসেজ গ্রুপে একটি হিন্দু মেয়েকের ধর্ষণের ছবি দিয়ে গর্বভরে প্রচার করছে মৌ/লবাদী স/ন্ত্রাসীরা। তবে যাচাই করে দেখা যাচ্ছে, একই রকম ছবি ২০২১ সালে ভারতে একজন নারীর ধর্ষিত হওয়ার খবরের সাথে প্রকাশিত হয়েছিল। ’
এছাড়া, নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় এক নারীকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তোলার একটি ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দাবি করা হয়, এক হিন্দু তরুণীকে অপহরণ করা হয়েছে।
তবে দেশের মূলধারার গণমাধ্যম প্রতিবেদন করে জানিয়েছে, ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক হামলা বা সহিংসতার ঘটনা ছিল না। ওই নারীকে অপহরণের চেষ্টা করেছিলেন তার স্বামী। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দাম্পত্য বিরোধের জেরে স্বামীর ঘর থেকে বাবার বাড়িতে চলে এসেছিলেন ওই নারী। তাকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তার স্বামীসহ কয়েকজন ব্যক্তি। তখন ওই নারীর চিৎকার শুনে গ্রামবাসী এগিয়ে আসেন। তারা মাইক্রোবাসটি ভাঙচুর করেন। এ সময় ওই নারীর স্বামীসহ তিনজনকে তারা আটক করেন। আটক ব্যক্তিদের সেনাবাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হয় বলে জানায় গ্রামবাসী।
কদরুদ্দিন শিশিরও বিষয়টি তার আইডিতে শেয়ার করেছেন। এক্ষেত্রে বিদেশে থাকা এক ব্যক্তির একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেন।
সিলেটে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর আক্রমণেরও একটি খবর ছড়ানো হয়। রিউমার স্ক্যানারের সিনিয়র ফ্যাক্ট-চেকার সোহানুর রহমান একটি সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানান, সিলেটে যে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা হয়েছে, তারা আওয়ামী লীগের নেতা। এই তথ্য দিয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। ওই সংগঠনের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমি এখন পর্যন্ত জানি, কোনো নিরীহ হিন্দু সিলেটে আক্রান্ত হননি। যারা হয়েছেন, তারা আওয়ামী লীগের নেতা।
গণমাধ্যমের নাম দিয়ে মিথ্যা প্রচারণা
এদিকে ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি দেশের সোশ্যাল মিডিয়াতেও চলছে গুজব-প্রোপাগান্ডা। সম্প্রতি প্রথম আলোর বরাত দিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যেখানে লেখা হয়, ‘প্রথম দিনেই ৬২ হাজার গ্রামে লুটপাট। ’
খোদ প্রথম আলো এই পোস্টের বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দেয়। তারা ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় একটি পোস্ট দিয়ে জানায়, এটি মিথ্যা প্রচারণা। প্রথম আলোর নামে ছড়ানো তথ্যটি নকল এবং তাদের প্রকাশিত নয়।
ফ্যাক্ট-চেকার ও গবেষকরা যা বলছেন
গুজবের এই রমরমা কারবার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাবের গবেষক মিনহাজ আমান বলেন, ‘গুজবের সীমান্ত পার হওয়া কোনো নতুন ঘটনা নয়। খবর যেমন বৈশ্বিক, ভুয়া খবরও বৈশ্বিক। এর আগেও ২০২১ সালে কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সময়েও বাংলাদেশের ভুয়া খবর ভারতে ছড়িয়েছে। ভারত-বাংলাদেশে ভুয়া খবর দ্রুত সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার কারণ আমাদের মধ্যে ভাষা সংস্কৃতি ধর্মের সাদৃশ্য আছে। ফলে বাংলাদেশ বা ভারত যে কেউ অশান্ত হলে ভুয়া খবর দুই পক্ষকেই খুব জলদি আক্রান্ত করতে পারে। এজন্যে সবার আগে ভুয়া খবর কেন কীভাবে ছড়ায় সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা উচিত। এছাড়া সামাজিক মাধ্যমগুলোর মধ্যে ফেসবুক বা টিকটকে ভুয়া খবর রোধ করার যে আয়োজন বা চেষ্টা আছে, এক্স বা ইউটিউবে নেই। তার মানে কোনো কোনো সামাজিক মাধ্যমে বেশি অপতথ্য ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে, তার ইশারা পাওয়া যায়। ’
তিনি বলেন, ‘ভুয়া খবর থেকে রক্ষা পাওয়ার আরেকটি মোক্ষম উপায় আছে, মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর যথাযথ ভেরিফিকেশন প্রসেস অনুসরণ করা। তাহলে ব্যবহারকারীরা খুব জলদি সঠিক তথ্য পেতে পারে, বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ কমে যায়। গবেষণা বলে, যে কোনো সামাজিক রাজনৈতিক উত্তেজনার সময়ে যথাযথ তথ্য প্রবাহের অভাব ঘটলেই সেখানে ভুয়া খবর তৈরি হয়। এদিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। ’
রিউমার স্ক্যানারের সিনিয়র ফ্যাক্ট-চেকার সোহানুর রহমান বলেন, সরকারের পতনের পরে যে ঘটনাগুলি ঘটেছে তা মূলত প্রতিশোধপরায়ণ সহিংসতা। ধর্মীয়ভাবে ভাগ করে বললে আওয়ামী লীগের মুসলিম নেতা-কর্মী এবং হিন্দু নেতা-কর্মী উভয়ের ওপর হামলা হয়েছে। তবে সমাজিক মাধ্যম বিশেষ করে এক্সে চেরি-পিক করে আওয়ামী লীগের হিন্দু নেতা-কর্মীদের ওপর রাজনৈতিক কারণে হওয়া হামলার ঘটনাগুলি সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে এবং এই অ্যান্টি-আওয়ামী লীগ ভায়োলেন্সকে অ্যান্টি-হিন্দু ভায়োলেন্স হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। হিন্দুদের ওপর আক্রমণের সব ঘটনাকেই সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন পুরনো ও ভিন্ন ঘটনার ছবি/ভিডিও সাম্প্রতিক হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। এমনকি বেশ কিছু উদাহরণ দেখেছি, যেখানে মুসলিম ধর্মের ভুক্তভোগীকে হিন্দু হিসেবে তুলে ধরে প্রচার করা হয়েছে। এভাবে পরিস্থিতির একটা ভুল চিত্রায়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলার ঘটনাগুলির অধিকাংশ রাজনৈতিক। অর্থাৎ এসব হামলা হিন্দু হওয়ার কারণে নয়, হয়েছে আওয়ামী লীগের লোক হওয়ার কারণে। তবে এর পাশাপাশি আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে যেগুলোর মধ্যে সাম্প্রদায়িক কারণও রয়েছে। আমাদের বর্তমান সংকটটা রাজনৈতিক। কিন্তু এক্সে প্রচার দেখলে মনে হবে সমস্যাটা যেন ধর্মীয়। যেখানে অধিকাংশ ঘটনাই রাজনৈতিক সেখানে সব ঘটনাই সাম্প্রদায়িক বলে প্রচার করা হচ্ছে।
ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচার ধরা পড়ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে
ভারতীয় সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই প্রোপাগান্ডা বা গুজবের বিষয়টি ধরা পড়ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের চোখেও। এরই মধ্যে কাতারের আল জাজিরা একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন করেছে, এতে বলা হয়েছে, ভারতীয় গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মে বিভ্রান্তিকর নিবন্ধ ও ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
টাইমস গ্রুপের মালিকানাধীন মিরর নাও এর ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিওতে চারটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার খবর দৃশ্যায়ন করা হয়েছে। যেখানে ঘটনাটি সনাতনীদের ওপর হামলা বলে বর্ণনা করা হয়েছে। অথচ ওই চার বাড়ির দুটি মুসলিম মালিকানাধীন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভিডিওতে জনতার হাতে ২৪টি জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারার কথা বলা হয়েছে, যা স্পষ্টতই বিভ্রান্তিকর। আল জাজিরা এ বিষয়গুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করে বলেছে, এক্ষেত্রে ভারতীয় গণমাধ্যমের মিথ্যাচার প্রমাণিত হয়েছে। এ পর্যন্ত দুই হিন্দু মারা গেছেন। তাদের কাউকেই হিন্দু বলে প্রাণ দিতে হয়নি। ওই দুই হিন্দুর মধ্যে একজন ছিলেন পুলিশ এবং অন্যজন শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের লোক। দুজনই মূলত ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যদিকে ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের সহিংসতায় তিন শতাধিক আন্দোলনকারী প্রাণ হারিয়েছেন।
বিজেপিঘনিষ্ঠ ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই সেদেশের এক ছাত্র নেতাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, এ দেশে অভ্যুত্থান ইসলামপন্থিরা ঘটিয়েছে। অথচ এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। আর শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশের মূলধারা সব সংবাদমাধ্যম বিষয়টিকে ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান’ বা ‘ছাত্র-জনতার বিজয়’ বলেই উল্লেখ করে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি নিবন্ধেও দাবি করা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। যা মিথ্যা বলেই প্রতীয়মান হয় ঢাকার মূলধারার গণমাধ্যমের খবরে।
খোদ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশই বলছে, ‘একতরফা বিদ্বেষমূলক ও বিভ্রান্তিকর প্রচার’
বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতীয় গণমাধ্যমে সাম্প্রদায়িক রঙ মাখিয়ে উসকানিমূলক প্রতিবেদনকে ‘নিয়ম পরিপন্থী’ বলছে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশও।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ৬ আগস্ট রাতে এক পোস্টে বলা হয়, ‘কিছু স্থানীয় টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে যেভাবে রিপোর্টিং হচ্ছে, তা খুবই দৃষ্টিকটুভাবে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক এবং ভারতের প্রেস কাউন্সিলের নিয়মাবলীর পরিপন্থী। ’
এতে আরও বলা হয়, ‘দর্শকদের অনুরোধ, এ ধরনের কভারেজ দেখার সময় নিজস্ব বিচার-বিবেচনা প্রয়োগ করুন এবং মাথায় রাখুন যে চ্যানেলের দেখানো ফুটেজের সত্যতা কিন্তু কোনো নিরপেক্ষ তৃতীয় সংস্থা দিয়ে যাচাই করা নয়। একতরফা বিদ্বেষমূলক এবং বিভ্রান্তিকর প্রচারের ফাঁদে পা দেবেন না। শান্ত থাকুন, শান্তি বজায় রাখুন। ’
ভারতীয় মিডিয়া মিথ্যাচার করছে: হিন্দু মহাজোট
ভারতের মিডিয়ায় বাংলাদেশের হিন্দু সমাজের ওপর হামলা নিয়ে মিথ্যাচার করছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোবিন্দ প্রামাণিক।
তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরে এদেশের হিন্দু সমাজ মনে করেছিল যে তাদের ওপর হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটবে। কিন্তু জামায়াত ও বিএনপির নেতারা তাদের সব নেতাকর্মীদের হিন্দুদের বাড়িতে হামলা-লুটপাট যাতে না হয় এবং মন্দিরে যেন পাহারার ব্যবস্থা করা হয় সেই নির্দেশ দেন। তারা পাহারা দিয়েছেন। যে কারণে সাধারণভাবে হিন্দুদের ওপর কোনো ধরনের হামলা হয়নি বা কোনো মন্দিরে ভাঙচুর হয়নি।
গোবিন্দ প্রামাণিক আরও বলেন, কিছু আওয়ামী লীগ হিন্দু নেতা রয়েছেন, যারা বিভিন্ন সময়ে লম্ফঝম্প করেছিলেন, তাদের বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ হয়েছে। একই সাথে মুসলমান আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তবে গুটিকয়েক সুযোগ সন্ধানী লোক মন্দিরে হামলা করেছে। সেটা তেমন কোনো বিষয় না।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয়
প্রধান উপদেষ্টা কাতার যাচ্ছেন সোমবার

‘আর্থনা সামিট-২০২৫’ -এ অংশগ্রহণ করতে চারদিনের সরকারি সফরে আগামীকাল সোমবার কাতারের রাজধানী দোহার উদ্দেশে রওনা দেবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির আমন্ত্রণে এ সফরে যাচ্ছেন বলে বাসসকে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
তিনি বলেন, সামিটে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি কাতারের আমিরের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন বলে জানা গেছে।
দেশের ইতিহাসে এ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের চারজন জাতীয় নারী ক্রীড়াবিদ প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে কাতারে যাচ্ছেন। এই চার ক্রীড়াবিদ হলেন- ফুটবলার আফিদা খন্দকার ও শাহেদা আখতার রিপা এবং ক্রিকেটার সুমাইয়া আখতার ও শারমিন সুলতানা।
‘আমাদের উত্তরাধিকার গড়ে তোলা: স্থায়িত্ব, উদ্ভাবন ও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান’ প্রতিপাদ্যে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠেয় ‘আর্থনা সামিট’-এ কাতারের উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়ায় টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে দেশটির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও অনন্য প্রতিবেশগত বৈচিত্র্যকে কাজে লাগানোর প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হবে।
এই সামিট একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে যেখানে প্রথাগত জ্ঞান ও আধুনিক উদ্ভাবনের সমন্বয়ের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের নতুন দিক উন্মোচন এবং এক সমৃদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গঠনের উপায় নিয়ে আলোচনা হবে।
আগামী ২২ ও ২৩ এপ্রিল এই দুই দিনে সামিটে উপস্থাপনা, ইন্টারঅ্যাকটিভ প্যানেল আলোচনা, কর্মশালা ও গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
শান্তিরক্ষা মিশনে আরও বেশি ফোর্স নেওয়ার অনুরোধ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ থেকে পুলিশ ও সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যসহ আরও বেশি হারে ফোর্স নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব পিস অপারেশনের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে এ অনুরোধ জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
রবিবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব পিস অপারেশনের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জাঁ পিয়ের লাক্রোয়ার। এসময় উপদেষ্টা এ অনুরোধ জানান।
বৈঠকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদান, বর্তমান অবস্থান, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, মিশনের যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য অফিসার ও ফোর্সদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং সামর্থ্য বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া নারী পুলিশ অফিসারদের সমন্বয়ে ফিমেল প্লাটুন প্রেরণ, মিশনে বিজিবি ও আনসার সদস্য প্রেরণের সম্ভাব্যতা, দক্ষিণ সুদান ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে ফরমড পুলিশ ইউনিট (এফপিইউ) প্রেরণ, রোহিঙ্গা সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে স্বাগত জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একসময় শীর্ষ দেশ ছিল। কালের পরিক্রমায় বর্তমানে আমাদের অবস্থান তৃতীয়। নেপাল ও রুয়ান্ডা বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা আবারও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণের ক্ষেত্রে প্রথম স্থান পুনরুদ্ধার করতে চাই। আমরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের আওতায় বিভিন্ন দেশে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও আন্তঃসীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে বিজিবি সদস্যদের পাঠাতে চাই। তাছাড়া মিশনে প্রশিক্ষিত আনসার সদস্যদের পাঠানোর বিষয়েও ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের সহযোগিতা আমাদের একান্ত প্রয়োজন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদানকে স্বীকৃতি জানিয়ে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, পুলিশসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রদর্শনের মাধ্যমে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর ক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশ শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেখানে শীর্ষ পদগুলোতে যাতে বাংলাদেশি অফিসাররা আরও অধিক হারে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সে লক্ষ্যে আমরা চেষ্টা করছি।
এসময় তিনি সারাবিশ্বে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অবদানের কথা উল্লেখ করেন।
এসময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে প্রেরণের জন্য আমাদের একটি ফিমেল প্লাটুন প্রস্তুত রয়েছে। এ ব্যাপারে জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব পিস অপারেশনের সহযোগিতা প্রয়োজন। যাতে তারা প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দ্রুত শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত হতে পারেন।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের অনুরোধে সাড়া দিয়ে তাৎক্ষণিক সাফল্যের সঙ্গে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো থেকে দক্ষিণ সুদানে দুটি ফরমড পুলিশ ইউনিট মোতায়েন করে। বাংলাদেশের প্রশংসনীয় পারফরম্যান্স থাকার পরও সেখানে কোনো ফরমড পুলিশ ইউনিট নেই।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, যদিও জাতিসংঘ ২০১৪ সাল থেকে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে একটি মিশন বজায় রেখেছে, সেখানেও বাংলাদেশের কোনো ফরমড পুলিশ ইউনিট প্রতিনিধিত্ব নেই। উপদেষ্টা এ দুই দেশে বাংলাদেশ থেকে ফরমড পুলিশ ইউনিট নেওয়ার জন্য আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে অনুরোধ করেন।
উপদেষ্টা আরও বলেন, শান্তিরক্ষা মিশনের পাশাপাশি বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ শুরু থেকে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের পর রোহিঙ্গা সমস্যা দূরীকরণে আমাদের জনগণের মধ্যে আশা জেগেছে। উপদেষ্টা এসময় রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের আরও সময়োপযোগী ও কার্যকরী উদ্যোগ কামনা করেন।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান, রাজনৈতিক-১ অধিশাখার যুগ্ম সচিব মু. জসীম উদ্দিন খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তনের সুপারিশ

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন।
রবিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে স্থানীয় সরকার কমিশনের প্রতিবেদন দাখিল পরবর্তী এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, মন্ত্রণালয়ের নাম হতে পারে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিষ্ঠান ও জনপ্রকৌশল সেবা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি বিভাগ থাকবে। একটির নাম হবে জনপ্রতিষ্ঠান বিভাগ ও জনপ্রকৌশল সেবা বিভাগ।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতি বিষয়ক হাইকোর্টের রায় স্থগিত

ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে পদোন্নতি দেওয়া সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। একই সঙ্গে আবেদনটি আগামী ১৮ মে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন রাখা হয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের করা আবেদনের শুনানি শেষে রোববার (২০ এপ্রিল) আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হকের চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ। অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
পরে আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম বলেন, হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। ফলে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টররা জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা এটা নিয়ে আন্দোল করছেন। এখন যেহেতু রায় স্থগিত হয়ে গেছে তাই আন্দোলনের যৌক্তিকতা থাকে না।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও অধিদপ্তরের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্যাডারবহির্ভূত গেজেটেড ও নন-গেজেটেড কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ২০২০ এর দুটি সিরিয়াল (২৭ ও ২৮) চ্যালেঞ্জ করে গত বছর ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর মো. আশিক মিয়াসহ কয়েকজন হাইকোর্টে রিট করেন।
ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সেই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১৮ মার্চ হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে রিট আবেদনকারীদের (ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর) জন্য কিছু পদ রাখতে বা সন্নিবেশিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। যদি পদ না থাকে তাহলে যোগ্যতাসাপেক্ষে যে কোনোভাবে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে পদোন্নতি দিতে বলা হয়।
এই রায়ের বিরুদ্ধে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গত ১৫ এপ্রিল লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন।
জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের পদোন্নতির রায় বাতিল করতে হবে। ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণ বাতিল ও নিয়োগবিধি সংশোধন করতে হবে।
ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যে কোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। চার বছর মেয়াদি কারিকুলাম চালু ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নপদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে। এসব পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়’ নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
গ্রাম আদালত বিলুপ্তির সুপারিশ

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন এবং গ্রাম আদালত বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন।
রবিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় স্থানীয় সরকার কমিশনের প্রতিবেদন দাখিল পরবর্তী প্রেস ব্রিফিংয়ে কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ এ কথা বলেন
তিনি বলেন, উপজেলাতে পূর্ণাঙ্গ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং এডিআর চালু করার সুপারিশ করা হয়েছে। এটি চালু করা গেলে সাধারণ মানুষ দ্রুত বিচার পাব
তোফায়েল আহমেদ বলেন, সংস্কার ছাড়া জাতীয় সংসদ কিংবা স্থানীয় সরকার; কোনো নির্বাচনেই ভালো ফল আসবে না।
তিনি বলেন, মাত্র ৪০ দিনের একটি শিডিউলে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করা সম্ভব। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে ২২৫ দিন লাগে। খরচ হয় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। একটি শিডিউলে খরচ নেমে আসবে ৭০০ কোটি টাকায়।
এর আগে, বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশন প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।