অর্থনীতি
কাঁচামরিচের কেজি ফের ৪০০ টাকা

কাঁচামরিচের বাজারে আবারও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে দর বেড়েছে ২৫০ টাকা। সরবরাহ সংকটে দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
কয়েক মাস ধরে কাঁচামরিচের বাজারে চলছে উত্থান-পতন। দু’দিন আগে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর খুচরা বাজারে কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হয়েছিল ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। গতকাল শনিবার বিক্রি হয়েছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এতে পণ্য আসা কমে যাবে। এজন্য পাইকারদের কাছে যে মরিচ ছিল, তা বিক্রি হয়ে গেছে। পাইকাররাও এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দাম বাড়িয়েছেন। ফলে অনেক খুচরা ব্যবসায়ী দাম বেশি থাকার কারণে মরিচ না কিনে ফিরে গেছেন।
কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান বলেন, অসহযোগ আন্দোলনের খবর শোনার পর শাকসবজি কম আসবে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে বাজারে। এতে পাইকাররা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেজন্য খুচরা বাজারে বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
উৎপাদন মৌসুম নয়, তাই বছরের এ সময় সাধারণত কাঁচামরিচের দর কিছুটা বেশি থাকে। ফলে চাহিদা মেটাতে আমদানি করতে হয়। তবে পরিবহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটলে তা দামে প্রভাব বিস্তার করে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীর চলমান আন্দোলনের মধ্যেই গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে মরিচের কেজি ৪০০ টাকা ঠেকেছিল। এরপর ধীরে ধীরে তা কমে আসে।
গত বছরের এ সময়েও কাঁচামরিচের বাজার ছিল চড়া। তখন ঢাকায় ৮০০ টাকা ছুঁয়েছিল মরিচের কেজি। দেশের কোনো কোনো জেলায় কেজি হাজার টাকাও ছাড়িয়ে ছিল।
এমআই

অর্থনীতি
ব্যাংকের পর্ষদ সভায় দ্বিমত–পর্যবেক্ষণ কার্যবিবরণীতে লিপিবদ্ধের নির্দেশ

ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় পরিচালকদের কারও আলোচ্যসূচি নিয়ে কোনো দ্বিমত বা পর্যবেক্ষণ থাকলে এখন থেকে তা কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি যেসব ব্যাংকের পর্ষদে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক রয়েছেন, তাঁরা কোনো মতামত দিলে সেটিও কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও পর্যবেক্ষকদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এমন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার (০৪ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে এ–সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও পরিচালনা পর্ষদের সহায়ক কমিটির সভায় উপস্থাপিত কোনো বিষয়ে কোনো সদস্য নোট অব ডিসেন্ট বা নিজস্ব মতামত দিলে তা কার্যবিবরণীতে উল্লেখের বিধান রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো অনেক ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা পালন করছে না। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও সহায়ক কমিটির সভায় উপস্থাপিত কোনো বিষয়/এজেন্ডার ওপর ওই সভায় যে আলোচনা হয় এবং পরিচালকসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক যেসব মতামত দেন, তা সভার কার্যবিবরণীতে যথাযথভাবে উল্লেখ করা হয় না। ফলে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের পর্ষদ ও সহায়ক কমিটির সভায় কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ ও অবদান রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। এ জন্য পরিচালনা পর্ষদের সদস্যের কার্যকর অংশগ্রহণ ও অবদান রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য নতুন নীতিমালা মেনে চলতে বলা হয়েছে।
এ নীতিমালায় বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদ ও সহায়ক কমিটির সভায় উপস্থাপিত কোনো বিষয়ের ওপর কোনো আলোচনা এবং কোনো পরিচালকের দ্বিমত, ভিন্ন মতামত বা পর্যবেক্ষণ থাকলে তা সভার কার্যবিবরণীতে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সভায় আলোচিত পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও সহায়ক কমিটির সব পর্যবেক্ষণ বা সুপারিশও কার্যবিবরণীতে যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। এ ছাড়া কোনো ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক থাকলে এবং সভায় উপস্থাপিত কোনো বিষয়ের ওপর ওই পর্যবেক্ষক কোনো মতামত বা পর্যবেক্ষণ দিলে, তা–ও সভার কার্যবিবরণীতে যথাযথভাবে উল্লেখ করতে হবে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, গত এক দশকে ব্যাংকের যেসব ঋণে অনিয়ম হয়েছে, সেসব ঋণের বিষয়ে পর্ষদ সভার কার্যবিবরণীতে কারও কোনো দ্বিমত পাওয়া যায়নি। ফলে এখন পর্ষদের সবাই আইনের আওতায় আসছেন। এখন সময় এসেছে পর্ষদে কার কী ভূমিকা, তা সুস্পষ্ট করার। যাতে ভবিষ্যতে দোষী কেউ ধরাছোঁয়ার বাইরে না থাকেন। এতে সৎ পরিচালকেরা তাঁদের ভূমিকা পালনে উৎসাহিত হবেন।
অর্থনীতি
অনিয়মের অভিযোগে ‘বিনিময়’ প্ল্যাটফর্ম স্থগিত

অনিয়ম ও চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তঃকার্যকর ডিজিটাল লেনদেন প্ল্যাটফর্ম ‘বিনিময়’ স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০২২ সালের নভেম্বরে চালু হওয়া এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যাংক, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এবং পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (পিএসপি) মধ্যে লেনদেন সহজ করার লক্ষ্যে তৈরি হয়েছিল। এটি তৈরি করে আইসিটি বিভাগের আওতাধীন আইডিয়া প্রকল্প, ব্যয় হয় প্রায় ৬৫ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, (বিনিময় প্ল্যাটফর্ম চালু করতে) তাদের ওপর চুক্তি সইয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংক মাসের পর মাস কোনো রক্ষণাবেক্ষণ ফি পায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা চুক্তি যাচাইয়ের সুযোগ না পেয়ে বাধ্য হয়েই এটি চালু করি। শুরু থেকেই ছিল অনিয়ম। এখন আমরা এটি আইনগতভাবে বাতিল করেছি।
চুক্তি অনুযায়ী সরকার থেকে অর্থ পাওয়ার কথা থাকলেও সাত–আট মাস ধরে কোনো অর্থ পায়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
‘বিনিময়’ ব্যবহারে আগ্রহ ছিল না অনেক ব্যাংকেরই। ইন্টারফেস জটিল হওয়ায় ব্যবহারকারীরাও আগ্রহ দেখায়নি। এখন নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম ‘মোজালুপ’-এর সহায়তায় তৈরি হচ্ছে, যা গেটস ফাউন্ডেশন দ্বারা সমর্থিত।
বর্তমানে বিকাশ, রকেট, এমক্যাশসহ ৮টি ব্যাংক এবং ২টি পিএসপি ‘বিনিময়’ ব্যবহার করছিল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি সহজ ও কার্যকর আন্তঃকার্যকর প্ল্যাটফর্ম চালু হলে দেশের ডিজিটাল পেমেন্ট খাতে বড় পরিবর্তন আসবে।
অর্থনীতি
অর্থনীতিবিদরা সরকারের ভালো কাজ দেখেন না: অর্থ উপদেষ্টা

অর্থনীতিবিদরা শুধু সরকারের ভুলগুলোই দেখেন, ভালো কাজ দেখেন না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, অন্তর দিয়ে দেখলে ভুলের পাশাপাশি ভালো কাজও দেখতে পারবেন।
সোমবার (০৪ আগস্ট) রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরে রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে আয়কর, মূসক, ও কাস্টমস বিষয়ে নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এনবিআরের ভেতরে সেবার মান বাড়াতে হবে। টেবিলে ভালো করে সাজিয়ে রেখে ভেতরে সারশূন্য হলে ভুক্তভোগীরা খারাপ সম্পর্কে বুঝতে পারবেন। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও মনোনিবেশ করতে হবে।
স্বচ্ছতা বাড়াতে তথ্যপ্রবাহে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বাজেটে নেওয়া উদ্যোগগুলো গণমাধ্যমের সঙ্গে শেয়ারের মতো কাজ করছে এনবিআর। অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, ওয়েবসাইটে তথ্য দেওয়ার মতো আরও যেসব কার্যক্রম আছে, সেগুলো চালাতে হবে। এতে যারা সেবা নেবেন, তাদের সুবিধা হবে, আবার যারা সেবা দিচ্ছেন তাদেরও সহজ হবে।
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি দৌলত আক্তার মালা বলেন, বাজেটের পর সংবাদ সম্মেলন করে বাজেট সম্পর্কে জানানো হয়। তবে মূসক, আয়কর ও কাস্টমসের মতো অনেক জটিল বিষয় থাকে, যা আমরাও বুঝি না। ফলে অনেক তথ্য আমরা পাঠককে জানাতে পারি না। বাজেটের পর এনবিআর সেমিনারের মাধ্যমে জানানোর ব্যবস্থা করলে বাজেট সম্পর্কে দেশের মানুষকে জানানোর কাজটি সহজ হবে।
শুল্কবিষয়ক প্রবন্ধে প্রথম সচিব রইস উদ্দিন বলেন, আমদানির ক্ষেত্র, ভুল ঘোষণার শাস্তি হিসাবে আগে ২০০ থেকে ৪০০ শতাংশ জরিমানা ছিল, চলতি অর্থবছরের বাজেট তা কমিয়ে শতভাগ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ শতাংশ করা হয়েছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
অর্থনীতি
তৃতীয় প্রান্তিকে ভিসার আয় বেড়েছে ১০.২ বিলিয়ন ডলার

বৈশ্বিক ডিজিটাল পেমেন্ট জায়ান্ট ভিসা চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে তাদের আর্থিক প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ করেছে। ২০২৫ এর ৩০ জুন পর্যন্ত তাদের নেট রেভিনিউ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। বিশ্বজুড়ে ভোক্তা ব্যয়ের স্থিতিশীল ধারা, প্রসেসড ট্রানজেকশন বৃদ্ধি এবং ক্রস-বর্ডার লেনদেন মূলত এই প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
ভিসা’র তথ্য মতে, এই তিন মাসে তাদের মোট পেমেন্ট ভলিউম ধ্রুব-মুদ্রার ভিত্তিতে ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মার্চে শেষ হওয়া আগের প্রান্তিকের তুলনায় অপরিবর্তিত। এ সময় ভিসা মোট ৬৫.৪ বিলিয়ন ট্রানজেকশন প্রসেস করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। আন্তর্জাতিক লেনদেনে আরও ইতিবাচক চিত্র দেখা গেছে; ইউরোপের অভ্যন্তরীণ লেনদেন বাদ দিলে ক্রস-বর্ডার ভলিউম বেড়েছে ১১ শতাংশ এবং সামগ্রিকভাবে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বৈশ্বিক ভ্রমণ ও বাণিজ্যের সার্বিক বৃদ্ধিকে ইঙ্গিত করে।
এ প্রসঙ্গে ভিসা’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রায়ান ম্যাকইনার্নি বলেন, “এই প্রান্তিকে আমাদের নেট রেভিনিউ ১৪ শতাংশ, জিএএপি ইপিএস ১২ শতাংশ এবং নন- জিএএপি ইপিএস ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রান্তিকজুড়ে আমরা এ ধারায় ইতিবাচক চিত্র লক্ষ করেছি। যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তারা প্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল উভয় ধরনের খরচেই সক্রিয় রয়েছে। আমরা এআই ও স্টেবলকয়েন-এর মতো নতুন প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রগুলোয় নতুনত্ব আনতে মনোযোগ বাড়াচ্ছি, যা আমাদের দীর্ঘমেয়াদে আরও শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাবে বলে আমি আশাবাদী।”
রেভিনিউ রিসোর্স বিশ্লেষণ বলছে, সেবা খাত থেকে আয় ৪.৩ বিলিয়ন ডলার, যা বছরে ৯ শতাংশ বৃদ্ধি এবং ডেটা প্রসেসিং রেভিনিউ ১৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.২ বিলিয়ন ডলারে। আন্তর্জাতিক লেনদেনের আয় দাঁড়িয়েছে ৩.৬ বিলিয়ন ডলার (১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি) এবং অন্যান্য আয় ৩২ শতাংশ বেড়ে ১.০ বিলিয়নে পৌঁছেছে। এছাড়া, মোট আয় থেকে ক্লায়েন্ট ইন্সেনটিভ বাদ দেওয়ার পর তা এ প্রান্তিকে দাঁড়িয়েছে ৪.০ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি।
জিএএপি অনুযায়ী পরিচালন ব্যয় বছরে ৩৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.০ বিলিয়ন ডলারে, যার মূলে রয়েছে লিটিগেশন প্রভিশন ও কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি। এসব বাদ দিয়ে নন-জিএএপি ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ। জিএএপি ভিত্তিক নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৫.৩ বিলিয়ন ডলার বা প্রতি শেয়ারে ২.৬৯ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় যথাক্রমে ৮ শতাংশ ও ১২ শতাংশ বেশি। বিশেষ খরচ বাদ দিয়ে ভিসার নিট মুনাফা ৫.৮ বিলিয়ন ডলার বা প্রতি শেয়ারে ২.৯৮ ডলার হয়েছে, যা যথাক্রমে ১৯ শতাংশ ও ২৩ শতাংশ বেশি।
প্রান্তিক শেষে তাদের হাতে নগদ অর্থ ও বিনিয়োগযোগ্য সিকিউরিটিজ রয়েছে ২০.৪ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ। ভিসা কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক, প্রযুক্তি-নির্ভর উদ্ভাবন এবং ডিজিটাল অর্থনীতিতে নেতৃত্ব অব্যাহত রাখতে তারা কাজ করে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য টেকসই মুনাফা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
অর্থনীতি
আমদানি-রপ্তানি শুল্ক ও কর কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনলো সরকার

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে আমদানি-রপ্তানি শুল্ক ও কর কাঠামোয় বড় পরিবর্তন এনেছে সরকার। শুল্কনীতি ও কাস্টমস ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে বাণিজ্য সহজীকরণ, রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা আনা, এবং দেশীয় শিল্পকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে নেওয়া লক্ষ্যে এ পবির্তন আনা হয়েছে। এই লক্ষ্যে কর ছাড় ও রেয়াতি সুবিধা যৌক্তিকীকরণ, দীর্ঘমেয়াদি অব্যাহতি হ্রাস এবং ‘অ্যান্টি-এক্সপোর্ট বাইয়াস’ কমানোর দিকেও জোর দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) আয়োজিত এক সেমিনারে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘিরে আমদানি-রপ্তানি শুল্ক ও আয়কর খাতে গৃহীত বিভিন্ন সংস্কার ও নীতিগত পরিবর্তন তুলে ধরা হয়। এনবিআরের মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে ইআরএফ সদস্যদের সামনে পৃথক তিনটি প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে কাস্টমস, ভ্যাট এবং আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট তথ্য উপস্থাপন করেন। প্রেজেন্টেশনগুলোতে বিশেষভাবে আলোচনায় আসে নতুন শুল্ক কাঠামো, কর রেয়াত ও ছাড় সীমা, এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী প্রস্তুতি, রাজস্ব আহরণ বাড়াতে গৃহীত উদ্যোগ এবং ট্যাক্স এক্সপেনডিচার যৌক্তিকীকরণ সংক্রান্ত দিক-নির্দেশনা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে আছেন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি দৌলত আকতার মালা। সেমিনারটি সভাপতিত্ব করছেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
পেট্রোলিয়াম পণ্যে শুল্ক হ্রাস
চলতি অর্থবছরের আমদানি শুল্ক কাঠামোতে নতুন দুটি স্তর যোগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো, ক্রুড পেট্রোলিয়ামের জন্য ৩ শতাংশ এবং পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য ৬ শতাংশ। আগে এসব পণ্যে শুল্কহার ছিল ৫ শাতংশ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত।
ক্রুড অয়েলে শুল্কহার ৫ শাতংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। মোটর স্পিরিট, ডিজেল, কেরোসিন, জেট ফুয়েল ১০ শাতংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৬ শতাংশ।
রফতানি সহায়ক পরিবর্তন
১০৭টি পণ্যের ওপর কাস্টমস ডিউটি পুরোপুরি প্রত্যাহার, ৬০টি পণ্যের কাস্টমস ডিউটি হ্রাস এবং ১৯টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ বাতিল এবং ৪৩১টি পণ্যের এসডি হ্রাস করা হয়েছে।
গার্মেন্টস, ফেব্রিকস ও ফুড পণ্যে এসডি হ্রাস
গার্মেন্টস পণ্যে এসডি ৪৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ; ফেব্রিকস ২০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ; পাস্তা, সিরিয়ালজাত খাবার ৩০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ; মাইক্রোবাস (১০-১৫ আসন) ২০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
কিছু পণ্যে এসডি বা ডিসি বৃদ্ধি করা হয়েছে। যেমন- গ্রানাইট বা মার্বেল ব্লকে এসডি ২০ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। হেলিকপ্টার, মোটর ও এলইডি পার্টস, মিথানল ইত্যাদিতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।
লৌহ ও ইস্পাত পণ্যে পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্টিল স্ক্র্যাপ, স্পঞ্জ আয়রন, পিগ আয়রনের কাস্টমস ডিউটি সম্পূর্ণ তুলে দিয়ে ভ্যাট ও অগ্রিম আয়কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিপ স্ক্র্যাপের ক্ষেত্রেও সিডি তুলে দিয়ে ভ্যাট ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং এআইটি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ন্যূনতম মূল্য ব্যবস্থা বাতিল ও যৌক্তিকীকরণ
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) অনুযায়ী ১৩টি হেডিংয়ের পণ্যের জন্য আরোপিত ন্যূনতম মূল্য বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া পাঁচটি হেডিংয়ের ক্ষেত্রে মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে; বিশেষ করে চকোলেট, কসমেটিকস, লিপস্টিক, ফেসক্রিম, ওভেন ইত্যাদি পণ্যে।
কাস্টমস আইন সংশোধন
কাস্টমস আইন ২০২৩-এ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেমন-ডি মিনিমিস সীমা ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা; বিলম্বে শুল্ক পরিশোধে বার্ষিক ১০ শতাংশ সুদের পরিবর্তে মাসিক ১ শতাংশ সুদ; মিথ্যা ঘোষণায় শাস্তির সীমা নির্ধারণে ৪ হাজার টাকার বেশি কর পরিহার হলে তবেই নোটিশ; কাস্টমস কর্মকর্তার দায়িত্ব বণ্টনে কমিশনারের ক্ষমতা বৃদ্ধি; কার্গো ঘোষণায় জরিমানার ন্যূনতম সীমা বিলোপ।
রেয়াতি সুবিধা ও নতুন প্রজ্ঞাপন
কৃষি ও খাদ্য খাতে কোল্ড স্টোরেজ যন্ত্রপাতি আমদানিতে মাত্র ১ শতাংশ শুল্ক; কম্বাইন হারভেস্টার তৈরির যন্ত্রাংশে রেয়াতি সুবিধা; নিউট্রালাইজড সয়াবিন অয়েল আমদানিতে সিডি প্রত্যাহার; গবাদিপশুর খাদ্য উপাদান ক্যালসিড প্রোম্যাক্স তৈরির কাঁচামালে সম্পূর্ণ শুল্ক ছাড়।
মূলধনি যন্ত্রপাতি
নতুন প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আমদানি শুল্ক ১ শতাংশ সীমিত রেখে বাকি শুল্ক মওকুফ করা হয়েছে।
ফার্মাসিউটিক্যালস ও স্বাস্থ্য খাত
ক্যানসার প্রতিরোধী ও এপিআই পণ্যের ৩৬টি কেমিক্যালে শুল্ক, ভ্যাট ও রেগুলেটরি ডিউটি মওকুফ করা হয়েছে। ৫০ শয্যার বেশি হাসপাতালের যন্ত্রপাতিতে মাত্র ১ শতাংশ শুল্ক রাখা হয়।
অন্যান্য খাত
ম্যানমেড ফাইবার, ই-বাইক ও লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদন সরঞ্জামে রেয়াত; নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়। অ্যামিউজমেন্ট পার্ক সরঞ্জামে সিডি মাত্র ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
এইচ কোড বাতিল
১০৭টি ব্যবহারকারীভিত্তিক এইচএস কোড বাতিল করা হয়েছে। ফলে একই পণ্যে ভিন্ন কোডের অসামঞ্জস্যতা দূর হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য এসেছে।
ব্যক্তিগত যাত্রী ব্যাগেজ বিধিমালা সংশোধন
সাধারণ যাত্রীরা ৬৫ কেজি ব্যাগেজ, দুটি ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও নির্দিষ্ট ব্যক্তিগত সামগ্রী শুল্কমুক্ত আনতে পারবেন। বিএমইটি (BMET) কার্ডধারীরা বছরে দুটি নতুন মোবাইল ফোন আনতে পারবেন। ঘোষণা দিয়ে সর্বোচ্চ ১০ তোলা স্বর্ণের বার এবং ২০ তোলা রৌপ্যবার শুল্ক পরিশোধ করে আনা যাবে।
উল্লেখ্য, এই বাজেটে শুল্কনীতি ও কাস্টমস কাঠামোয় যে সংস্কার আনা হয়েছে, তা শিল্পায়ন, রফতানি বহুমুখীকরণ এবং রাজস্ব আদায়কে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই ভিত্তি দেবে বলে আশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, শুল্ক হ্রাসের প্রভাবে রাজস্ব ঘাটতি ও অভ্যন্তরীণ শিল্পে প্রতিযোগিতা নিয়ে আরও সতর্ক নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে।
এসএম