অর্থনীতি
সৌরবিদ্যুতে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে ইন্দোনেশিয়া

কক্সবাজারের মহেশখালীতে ৫০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে ইন্দোনেশিয়া। দেশটির জ্বালানি খাতের শীর্ষ কোম্পানি পিটি পারতামিনা পাওয়ার ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) যৌথভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে।
গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে কোম্পানি দুটির মধ্যে এ-সংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি সই হয়। সিপিজিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ও পারতামিনা পাওয়ার ইন্দোনেশিয়ার স্ট্র্যাটেজিক পরিচালক ফাদলি রহমান নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত হিরু হারতান্তো সুবুলো উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি পারতামিনা পাওয়ারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই হলো। এ সমঝোতার আলোকে ৫০০ মেগাওয়াট সোলার প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে তারা। এ প্রকল্পে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে। এজন্য যৌথ একটি কোম্পানি গঠন করে ৫০ শতাংশ করে শেয়ারে মালিকানায় থাকবে পারতামিনা ও সিপিজিসিবিএল।’
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। তিনি জানান, মহেশখালীতে ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাব্য ক্ষেত্র রয়েছে। পারতামিনা ৫০০ মেগাওয়াট দিয়ে শুরু করবে। পর্যায়ক্রমে সেখানে আরো বিনিয়োগ বাড়বে।
তিনি আরো জানান, ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জন্য জ্বালানি আমদানি করছে বাংলাদেশ, বছরে যা প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়ন টন। এছাড়া সেখান থেকে মিনারেল পণ্যও আমদানি হচ্ছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে সৌরভিত্তিক বৃহৎ কোনো প্রকল্পে একক বিনিয়োগকারী হিসেবে প্রবেশ করবে ইন্দোনেশিয়া। এর আগে পটুয়াখালীর পায়রায় ৫০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) আধা মালিকানায় ‘বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড (রিনিউয়েবল)’ নামে একটি যৌথ মূলধনি কোম্পানি গঠন করা হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে ১১টি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫২১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। বেসরকারি খাতে চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে নয়টি পিপিএ-আইএ স্বাক্ষরিত প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মোট ২৬৯ মেগাওয়াট। বেসরকারি খাতে চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে ২৯টি এলওআই স্বাক্ষরিত হয়েছে। এগুলোর মোট উৎপাদনক্ষমতা ২ হাজার ৬০৮ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনায় ২০৪১ সালের মধ্যে মোট ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এ পরিকল্পনায় ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি হবে তার মোট ১০ শতাংশ থাকবে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ। এ লক্ষ্যে সরকার দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষত জামালপুর, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ, পায়রা, বাগেরহাটের রামপাল ও দেশের বিভিন্ন চরাঞ্চলে সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশী অর্থায়নে সৌরবিদ্যুতের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

অর্থনীতি
নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন, বাড়ছে ডিম-তেল-পেঁয়াজের দাম

নিত্যপণ্যের বাজার আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে। একে তো চালের চড়া দাম, এরমধ্যে প্রতিকেজি ৮০ টাকার নিচে মিলছে না বেশিরভাগ সবজি। সঙ্গে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে পেঁয়াজ, ডিম, আদা ও এলাচের দামও। এদিকে, প্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম একসঙ্গে বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা। অনেকে সাধ্যের মধ্যে চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর কয়েকটি বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমনটা।
দেখা গেছে, আজকের বাজারে প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, ঝিঙা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, শসা (দেশি) প্রতি কেজি ১০০ টাকা, শসা (হাইব্রিড) প্রতি কেজি ৮০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ১০০ টাকা, বেগুন (গোল) প্রতি কেজি ১২০ টাকা, বেগুন (লম্বা) প্রতি কেজি ১০০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া গাঁজর প্রতি কেজি ১৮০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৭০ টাকা, টমেটো প্রতি ১৮০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৭০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৫০ টাকা, কঁচু প্রতি কেজি ৮০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর মালিবাগ বাজারে আরেক ক্রেতা হাবিব আহমেদ বলেন, বাজারে একমাত্র কাঁচা পেঁপে ৪০ টাকা কেজি, বাকি সব ধরনের সবজি ১০০ টাকার ঘরে। এত দাম দিয়ে সবজি কিনে খাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে হয়ে গেছে। কি কারণে সবজির দাম এত বেশি জিজ্ঞেস করলে বিক্রেতারা বলে, বাজারে একেবারেই সরবরাহ কম সবজির। সে কারণে দাম বাড়তি যাচ্ছে।
রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে বাজার করতে এসে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, মোটামুটি গত একমাস ধরে সবজির দাম খুব বেশি যাচ্ছে। আজকের বাজারে মনে হচ্ছে আরও একটু বেশি দাম। বেশিরভাগ সবজি ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগে যদি সবজি এক কেজি করে কিনতাম এখন আধা কেজি কিনতে হচ্ছে। কি কারণে দাম বেড়েছে যে সে বিষয় নিয়ে কখনো দেখিনা বাজার মনিটরিং হতে। সেই সুযোগে সাধারণ ক্রেতাদের কাছ থেকে সবজি বিক্রেতারা অতিরিক্ত দাম আদায় করছে।
খিলগাঁও তালতলা বাজারে ক্রেতা জহির উদ্দিন বলেন, পটোল আর ঢ্যাঁড়স কিনলাম ৬০ টাকা কেজিতে। অন্য কোনো সবজি এর নিচে নেই শুধু পেঁপে ছাড়া। করলা, বরবটি, কাকরোলের দাম ৮০ থেকে ১২০ টাকা চাচ্ছে। প্রয়োজনমতো সবজি কিনে খাওয়াও আমাদের মতো নিম্নবিত্ত মানুষদের ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, টানা কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ তুলনামূলক কম হওয়ায় দাম বাড়তি যাচ্ছে। তাছাড়া বেশ কিছু সবজির ইতোমধ্যে মৌসুম শেষ হওয়ার কারণেও দাম বেড়েছে।
শুধু সবজি নয়, বেশ কয়েকজন ক্রেতা বলেন, নিত্যপণ্যের বাজারদর তাদের ওপর একটা বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। কারণ, এই মুহূর্তে বাজারে চাল, সবজিসহ ডিম থেকে শুরু করে মসলাজাতীয় পণ্য, সবকিছুর দামই চড়া। দামের চাপে অনেকে বাজারের পণ্যের তালিকা ছোট করতে বাধ্য হচ্ছেন।
অন্যদিকে, রাজধানীর সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে আরও দাম বেড়েছে পেঁয়াজ, ডিম, এলাচসহ বিভিন্ন পণ্যের।
এরমধ্যে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১৫-২০ টাকা। ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। আর ১২০ টাকা ডিমের ডজন এখন ১৪০ টাকা।
পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতারা বলছেন, পেঁয়াজের ভরা মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। এরমধ্যে কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের সরবরাহ পর্যায়ে বিঘ্ন ঘটেছে। বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
কারওয়ান বাজারে পাইকারি বিক্রেতা জুবায়ের আলী বলেন, কয়েকদিন আগে পাইকারিতে প্রতি পাল্লা ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকায় বিক্রি করছি। উৎপাদন এলাকায় পেঁয়াজের দাম কয়েক দিন বেড়েছে। পাবনা-ফরিদপুর এলাকার মোকামে প্রতিমণ পেঁয়াজের দাম প্রায় ৪০০ টাকা বেড়েছে।
বাড়তি দামের কারণ হিসেবে ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিমের ওপর নতুন একটি একটি চাপ তৈরি হয়েছে। কারণ ঢাকার বাজারে বৃষ্টির প্রভাবে সবজির সরবরাহ কমে গেছে। এতে করে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি, যা অনেকটাই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণত ডিমের চাহিদা বেড়ে গেছে।
বাজারে প্রতি ১০০ গ্রাম এলাচ আগে ৪০০ টাকা বিক্রি হলে এখন সেটি সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় উঠেছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি আদার দাম ১৮০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা।
চড়া চালের দামে নিম্নমুখী কোনো প্রবণতা নেই। মাস দেড়েক ধরে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে চাল। মোটা চালের দামই এখন ৬০ টাকার বেশি। মাঝারি মানের এক ধরনের কিছু মিনিকেট ও নাজির রয়েছে, যেটা শুধু ৬৫-৭০ টাকায় পাওয়া যায়। এ ছাড়া বাকি সব চালের দাম সাধারণত ৭৫-৮৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর খুব ভালো মানের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চালের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই করছে।
অর্থনীতি
মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮.৫৫ শতাংশ

দীর্ঘ সময় পর গত জুনে স্বস্তি ফিরেছিল মূল্যস্ফীতিতে। তবে জুলাইয়ে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার শূন্য দশমিক ০৭ শতাংশ বেড়েছে। ফলে জুনের ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ থেকে বেড়ে জুলাইয়ে তা হয়েছে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
বিবিএস জানায়, জুলাইয়ে বেড়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতিও। মাসটিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। জুনে যা ছিল ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
এছাড়া জুনে সার্বিক খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ থাকলেও জুলাইয়ে সেটি বেড়ে ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বেড়েছে শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ।
জুলাইয়ে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক ০৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
আর শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
অর্থনীতি
সঞ্চয়পত্রে আগ্রহ কমছে, বিল-বন্ডে বিনিয়োগ বেড়ে পাঁচ গুণ

দেশে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের সঞ্চয় করার সামর্থ্য কমে গেছে। একই সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের সুদহার নিয়ে বিভ্রান্তি, নিয়মের জটিলতা এবং ব্যাংক ও সরকারি বিল-বন্ডে উচ্চ সুদের হার—এসব কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে আগ্রহ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। বিপরীতে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। গত জুন শেষে সরকারি এ উপাদানে ব্যক্তি, কর্পোরেট বডি, প্রভিডেন্ট, পেনশন ফান্ডের বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের জুন শেষে যা ছিল মাত্র ২৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। গত দুই বছরে বেড়ে প্রায় পাঁচ গুণ হয়েছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, টানা তিন অর্থবছর ধরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিট বিক্রি কমেছে ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। এর ফলে সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৩৮ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকায়। আগের দুই অর্থবছরেও যথাক্রমে ২১ হাজার ১২৪ কোটি এবং ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ কমেছিল।
একসময় বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র ছিল সরকারের অন্যতম নির্ভরযোগ্য উৎস। চলতি অর্থবছরের জন্য সঞ্চয়পত্র থেকে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে ১৪ হাজার কোটি করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০১৯ সালে ‘জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ চালুর পর সঞ্চয়পত্র কেনার প্রক্রিয়া অনেক কঠোর হয়ে যায়। একই নামে বড় অঙ্কে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ কমে যায়, এক লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে টিআইএন বাধ্যতামূলক হয়।
পাশাপাশি প্রতি ছয় মাস অন্তর সুদহার পরিবর্তনের নতুন নিয়মে সর্বশেষ জুলাই মাসে সুদহার ৪৭ থেকে ৫৭ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত কমেছে। বর্তমানে সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি ও কম বিনিয়োগে আলাদা সুদহার প্রযোজ্য হয়, যা অনেকের কাছে জটিল মনে হচ্ছে।
ফলে বিনিয়োগকারীরা এখন বেশি ঝুঁকছেন ট্রেজারি বিল ও বন্ডের দিকে। যেখানে ব্যাংক, প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন ফান্ড এবং ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়োগ দ্রুত বাড়ছে। ২০২৩ সালের জুন শেষে এ খাতে মোট বিনিয়োগ ছিল ২৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা, যা ২০২৫ সালের জুন শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ১৫৯ কোটি টাকায়—মাত্র দুই বছরে বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রেজারি বিল-বন্ডে এখন ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া যাচ্ছে, যা করমুক্ত এবং নিরাপদ। সময়মতো মুনাফা পাওয়ার নিশ্চয়তা ও সেকেন্ডারি বাজারে বিক্রির সুযোগ থাকায় এটি এখন ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় খাতে পরিণত হয়েছে।
অর্থনীতি
সিআরআর ঘাটতিতে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংককে জরিমানা

তারল্য সংকটে পড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) রাখতে পারেনি আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক। এজন্য দণ্ডসুদ হিসেবে জরিমানা গুনতে হয়েছে শরিয়াহভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি এ অর্থ পরিশোধ করেছে ব্যাংকটি।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পাঠানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক নির্ধারিত নগদ জমা (সিআরআর) রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। নিয়ম অনুসারে ৯ শতাংশ হারে দণ্ডসুদ বাবদ ১৯ কোটি ১৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা ১৪ দিনের মধ্যে ( ৬ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত স্থানে জমা দিতে হবে। সময়মতো না দিলে ব্যাংকের হিসাব থেকে টাকা কেটে নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এবিষয় জানতে চাইলে ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) কামাল হোসেন বলেন, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে কিছুটা অস্থিরতা তৈরি হয়, যার প্রভাবে নির্ধারিত হারে সিআরআর বজায় রাখা সম্ভব হয়নি। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমাদের ব্যাংকের বিরুদ্ধে আর্থিক জরিমানা আরোপ করা হয়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক চিঠির মাধ্যমে করা জরিমানা পরিশোধের জন্য ১৪ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করে। আমরা নির্ধারিত সময়সীমার আগেই ৪ আগস্ট, জরিমানার অর্থ পরিশোধ করেছি।
প্রধান অর্থ কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে আমাদের ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্থিতিশীল। এখন ঋণের প্রবাহ তুলনামূলকভাবে কম, বিপরীতে আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সিআরআর সংরক্ষণসহ অন্যান্য আর্থিক বাধ্যবাধকতা যথাযথভাবে পূরণ করতে কোনো সমস্যা নেই।
গত বছর ক্ষমতার পালাবদলের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এস আলম গ্রুপের সত্তাধীন ব্যাংকগুলোর ওপর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। এর প্রেক্ষাপটে, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এস আলমের ভাই আবদুস সামাদ নিজেই পদত্যাগ করেন। পরে ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন সেলিম রহমান, যিনি কেডিএস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা খলিলুর রহমানের ছেলে। ব্যাংক খাতে খলিলুর রহমান ও এস আলমের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরে সেপ্টেম্বরে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা বেসরকারি আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা শাহরিয়ার। তার সঙ্গে পর্ষদের চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক হন। তারা হলেন— বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. শাহীন উল ইসলাম, এনআরবি ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল ওয়াদুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ এবং হিসাববিদ মোহাম্মদ আশরাফুল হাছান।
বর্তমান ২২৬টি শাখা, ৮৭টি উপশাখা, প্রায় ৭৫০টির মতো এজেন্ট আউটলেট নিয়ে কার্যক্রম চলছে। গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩৬ লাখ। আমানত রয়েছে ৫১ হাজার কোটি টাকা এবং ৪৬ হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ রয়েছে।
এদিকে গত এপ্রিলে ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং বিভাগের অর্থ তছরুপ করার অভিযোগে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফরমান আর চৌধুরী, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ নাদিমসহ চার কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। অপর দুই কর্মকর্তা হলেন ব্যাংকটির ডিএমডি ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রধান আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া ও ট্রেজারি বিভাগের প্রধান মো. আব্দুল মবিন।
অর্থনীতি
মোংলা ইপিজেডে ৮০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করবে দ. কোরিয়া

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান ওসিএফ কোম্পানি লিমিটেড ৮০ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগে মোংলা ইপিজেডে একটি তাঁবু ও তাঁবু অ্যাক্সেসরিজ, ক্যাম্পিং ফার্নিচার, ফার্নিচার অ্যাক্সেসরিজ ও ব্যাগ তৈরির কারখানা স্থাপন করতে যাচ্ছে।
এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বুধবার (৬ আগস্ট) ঢাকাস্থ বেপজা নির্বাহী দপ্তরে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
বেপজার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বেপজার সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবীর এবং ওসিএফ কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাইয়ুন গিল কিম নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠানটি তাঁবু, তাঁবু ও ফার্নিচার অ্যাক্সেসরিজ, ক্যাম্পিং চেয়ার ও টেবিল, অ্যালুমিনিয়াম, কার্বন, স্কি ও ট্রেকিং পোল, মাউন্টেন ও ওয়াকিং স্টিক, বেড কট, স্ট্যান্ড, পেট ফার্নিচার, অ্যারো এবং ব্যাগ তৈরি করবে যার ফলে ৮২০ জন বাংলাদেশি নাগরিকের
কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
অনুষ্ঠানে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, বেপজা সবসময় বৈচিত্র্যময় উৎপাদনে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে। যেহেতু এটি বেপজার অধীন প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় প্রকল্প, তিনি ওসিএফ কোম্পানি লিমিটেডকে বেপজার প্রতি আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বিশেষ করে ইপিজেডগুলোতে দক্ষিণ কোরিয়ার আরও বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে ‘অ্যাম্বাসেডর’ হিসেবে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। তিনি বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ প্রদানে বেপজার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
এ সময় হাইয়ুন গিল কিম বেপজার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং আগামী বছরের মধ্যে নতুন কারখানায় উৎপাদন শুরু করতে পারার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেপজার সদস্য (প্রকৌশল) মো. ইমতিয়াজ হোসেন, সদস্য (অর্থ) আ ন ম ফয়জুল হক, নির্বাহী পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. তানভীর হোসেন, নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) এ এস এম আনোয়ার পারভেজসহ প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।