অর্থনীতি
জাতীয় রপ্তানি পদক পাচ্ছে ৭৭ প্রতিষ্ঠান

দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখায় ২০২১-২২ অর্থবছরের রপ্তানি পদক পাচ্ছে ৭৭টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৭৬টি প্রতিষ্ঠান জাতীয় রপ্তানি পদক এবং একটি প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি পদক দেবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।
শনিবার (১৩ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের টিসিবি অডিটোরিয়ামে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, জাতীয় রপ্তানি ট্রফি নীতিমালা-২০১৩ অনুসরণ করে প্রাথমিক ও চূড়ান্ত বাছাই কমিটির মাধ্যমে মোট ৩২টি খাতের রপ্তানিকারকদের মধ্য থেকে রপ্তানি আয়, আয়গত প্রবৃদ্ধি, নতুন পণ্যের সংযোজন, নতুন বাজারে প্রবেশ, কমপ্লায়েন্স প্রতিপালন ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে ট্রফি বিজয়ী প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, আগামীকাল রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে সম্মাননাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে পদক তুলে দেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
পুরস্কার পাচ্ছে যেসব প্রতিষ্ঠান-
২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য সর্বোচ্চ বিদেশি মুদ্রা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে রিফাত গার্মেন্টস। তৈরি পোশাক (ওভেন) খাতের এই প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি পদক দেওয়া হচ্ছে।
তৈরি পোশাকের ওভেন খাত থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে উইন্ডি অ্যাপারেলস, রৌপ্য পদক পাচ্ছে অ্যাপারেল গ্যালারি লিমিটেড ও ব্রোঞ্জ পদক পাচ্ছে মেসার্স চিটাগাং এশিয়ান অ্যাপারেলস।
তৈরি পোশাকে নিটওয়্যার খাত থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে লিবার্টি নিটওয়্যার লিমিটেড, রৌপ্যপদক পাচ্ছে ডিভাইন ইন্টিমেটস লিমিটেড এবং ব্রোঞ্জ পদক পাচ্ছে ফ্ল্যামিংগো ফ্যাশনস লিমিটেড।
সুতা খাত থেকে স্বর্ণ পদক পাচ্ছে বাদশা টেক্সটাইলস লিমিটেড, রৌপ্য পদক পাচ্ছে স্কয়ার টেক্সটাইলস লিমিটেড এবং ব্রোঞ্জ পদক পাচ্ছে কামাল ইয়ার্ন লিমিটেড।
টেক্সটাইল ফেব্রিকস খাত থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে নাইস ডেনিম মিলস লিমিটেড, রৌপ্যপদক পাচ্ছে হা-মীম ডেনিম লিমিটেড এবং ব্রোঞ্জ পদক পাচ্ছে ফোর এইচ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং।
হোম ও স্পেশালাইজড টেক্সটাইল খাত থেকে স্বর্ণ পদক পাচ্ছে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস লিমিটেড, রৌপ্যপদক পাচ্ছে মমটেক্স এক্সপো লিমিটেড এবং ব্রোঞ্জ পদক পাচ্ছে এসিএস টেক্সটাইলস (বাংলাদেশ) লিমিটেড।
টেরিটাওয়েল খাত থেকে স্বর্ণ পদক পাচ্ছে নোমান টেরিটাওয়েল মিলস লিমিটেড এবং রৌপ্য পদক পাচ্ছে এসিএস টাওয়েল লিমিটেড।
হিমায়িত পণ্য খাত থেকে স্বর্ণ পদক পাচ্ছে ছবি ফিশ প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, রৌপ্যপদক পাচ্ছে প্রিয়াম ফিশ এক্সপোর্ট লিমিটেড এবং ব্রোঞ্জ পদক পাচ্ছে এমইউসি ফুডস লিমিটেড।
কাঁচাপাট খাত থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ লিমিটেড, রৌপ্যপদক পাচ্ছে মেসার্স তানফিয়া জুট ট্রেডিং এবং ব্রোঞ্জ পদক পাচ্ছে মেসার্স ইন্টারন্যাশনাল জুট ট্রেডার্স।
পাটজাত দ্রব্য থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে জনতা জুট মিলস এবং রৌপ্যপদক পাচ্ছে আকিজ জুট মিলস। চামড়াজাত পণ্য থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে পিকার্ড বাংলাদেশ এবং রৌপ্যপদক পাচ্ছে এবিসি ফুটওয়্যার।
ফুটওয়্যার থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে বে-ফুটওয়্যার, রৌপ্য পদক পাচ্ছে এডিসন ফুটওয়্যার এবং এফবি ফুটওয়্যার পাচ্ছে ব্রোঞ্জ পদক।
কৃষিপণ্য থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে ইনডিগো করপোরেশন, রৌপ্যপদক পাচ্ছে মনসুর জেনারেল ট্রেডিং এবং ব্রোঞ্জ পদক পাচ্ছে সিএসএস ইন্টারন্যাশনাল।
কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে হবিগঞ্জ অ্যাগ্রো, রৌপ্যপদক পাচ্ছে প্রাণ অ্যাগ্রো এবং ব্রোঞ্জ পদক পাচ্ছে প্রাণ ফুডস লিমিটেড।
হস্তশিল্পজাত পণ্য খাত থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে কারুপণ্য রংপুর, রৌপ্যপদক পাচ্ছে বিডি ক্রিয়েশন এবং ক্ল্যাসিকস হ্যান্ডমেড প্রোডাক্টস পাচ্ছে ব্রোঞ্জ পদক।
মেলামাইন খাত থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে ডিউরেবল প্লাস্টিক, প্লাস্টিক পণ্য থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে অলপ্লাস্ট, রৌপ্যপদক পেয়েছে আকিজ বায়াক্স ফিল্মস এবং ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে বঙ্গ প্লাস্টিক ইন্টারন্যাশনাল।
সিরামিকের সামগ্রী খাত থেকে স্বর্ণ পদক পাচ্ছে শাইনপুকুর সিরামিকস, রৌপ্য পদক পাচ্ছে আর্টিসান সিরামিকস এবং ব্রোঞ্জ পদক পাচ্ছে প্রতীক সিরামিকস।
হালকা প্রকৌশল খাত থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে এমঅ্যান্ডইউ সাইকেলস, রৌপ্যপদক পাচ্ছে মেঘনা বাংলাদেশ এবং ব্রোঞ্জ পদক পাচ্ছে রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ।
ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক খাতে স্বর্ণপদক পাচ্ছে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ এবং রৌপ্যপদক পাচ্ছে বিআরবি কেব্ল ইন্ডাস্ট্রিজ।
অন্যান্য শিল্পজাত পণ্য খাত থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে মেরিন সেফটি সিস্টেম, রৌপ্যপদক পাচ্ছে মেসার্স এশিয়া মেটাল মেরিন সার্ভিস এবং ব্রোঞ্জ পদক পাচ্ছে তাসনিম কেব্লস।
ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য খাত থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল, রৌপ্যপদক পাচ্ছে ইনসেপটা ফার্মা এবং র স্কয়ার ফার্মা পাচ্ছে ব্রোঞ্জ পদক।
কম্পিউটার সফটওয়্যার থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে সার্ভিস ইঞ্জিন লিমিটেড এবং গোল্ডেন হারভেস্ট ইনফোটেক পাচ্ছে রৌপ্যপদক।
ইপিজেডভুক্ত শতভাগ বাংলাদেশি মালিকানাধীন তৈরি পোশাক শিল্প (নিট ও ওভেন) থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে ইউনিভার্সেল জিনস, রৌপ্যপদক পাচ্ছে প্যাসিফিক জিনস এবং ব্রোঞ্জ পদক পাচ্ছে শামা ডেনিমস।
ইপিজেডভুক্ত শতভাগ বাংলাদেশি মালিকানাধীন অন্যান্য পণ্য ও সেবা খাত থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে স্টার প্যাকেজিং অ্যান্ড অ্যাকসেসরিজ, রৌপ্য পদক পাচ্ছে পদ্মা স্পিনিং অ্যান্ড কম্পোজিট এবং ব্রোঞ্জ পদক পাচ্ছে ফারদিন অ্যাকসেসরিজ।
প্যাকেজিং ও অ্যাকসেসরিজ খাত থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে এমঅ্যান্ডইউ প্যাকেজিং, রৌপ্যপদক পাচ্ছে মনট্রিমস লিমিটেড ও ব্রোঞ্জ পদক পাচ্ছে মেসার্স ইউনিগ্লোরি পেপার অ্যান্ড প্যাকেজিং।
অন্যান্য প্রাথমিক পণ্য থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে হেয়ার স্টাইল ফ্যাক্টরি, রৌপ্যপদক পাচ্ছে রায় ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এবং ব্রোঞ্জ পদক পাচ্ছে ইকো ফ্রেশ ইন্টারন্যাশনাল।
সেবা খাত থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে মেসার্স এক্সপো ফ্রেইট লিমিটেড ও রৌপ্যপদক পাচ্ছে মীর টেলিকম লিমিটেড।
নারী উদ্যোক্তা বা রপ্তানিকারকদের জন্য সংরক্ষিত খাত থেকে স্বর্ণপদক পাচ্ছে পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস, রৌপ্যপদক পাচ্ছে বি-কন নিটওয়্যার ও ব্রোঞ্জ পদক পাচ্ছে ইব্রাহিম নিট গার্মেন্টস।

অর্থনীতি
আগস্টের জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ

আগস্ট মাসের জন্য জ্বালানি তেলের দাম অপরিবর্তিত রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। যা কার্যকর হবে আগামী ১ আগস্ট থেকে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) এক বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, আগস্ট মাসের জন্য জ্বালানি তেলের বিদ্যমান দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশে স্বয়ংক্রিয় প্রাইসিং ফর্মুলার আলোকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো ভোক্তাপর্যায়ে জ্বালানি তেলের সরবরাহ তুলনামূলক সাশ্রয়ী দামে নিশ্চিত করা।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগস্ট মাসে ডিজেল প্রতি লিটার ১০২ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১২২ টাকা এবং পেট্রোল ১১৮ টাকায় বিক্রি হবে।
বৃহস্পতিবার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। যা কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে।
অর্থনীতি
বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমালো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা কম। এর আগের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। অপরদিকে, সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ দশমিক ৪ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি গভর্নর, নীতিনির্ধারক পরামর্শক, প্রধান অর্থনীতিবিদ, গবেষণা বিভাগের পরিচালক এবং মুখপাত্র ও সহকারী মুখপাত্ররা উপস্থিত ছিলেন।
গত জানুয়ারিতে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ, তবে জুন শেষে অর্জিত হয়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। এর আগের ডিসেম্বরেও প্রায় একই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।
সরকারি খাতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে ২০ শতাংশ। গত অর্থবছরে এ হার ছিল ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, কিন্তু বাস্তবে অর্জন হয়েছে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।
মুদ্রা সরবরাহের দিক থেকেও সামান্য বাড়তি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত মুদ্রা সরবরাহের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ ধরা হয়েছে, যা আগের ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে সামান্য বেশি। তবে মে মাস পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, বাজারে বাস্তব মুদ্রা সরবরাহ ছিল ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাষ্য অনুযায়ী, ডলার কেনার মাধ্যমে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বেড়েছে। সেইসঙ্গে কিছু দুর্বল ব্যাংককে বিশেষ সহায়তা হিসেবে ঋণ দেওয়া হয়েছে, যার ফলে সামগ্রিক অর্থ সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে।
অর্থনীতি
নীতি সুদহার ১০ শতাংশ বহাল রেখেই নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা

মূল্যস্ফীতির হার কমে এসে গত জুনে ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে। একই সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধিও কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৪০ শতাংশে। এমন প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীরা সুদহার কমিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে আহ্বান জানান। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক আপাতত প্রধান নীতি সুদহার (রেপো) অপরিবর্তিত অর্থাৎ ১০ শতাংশে বহাল রেখেছে। চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি গভর্নর, নীতিনির্ধারক, পরামর্শক, প্রধান অর্থনীতিবিদ, গবেষণা বিভাগের পরিচালক এবং মুখপাত্র ও সহকারী মুখপাত্ররা উপস্থিত ছিলেন।
গভর্নর বলেন, যতক্ষণ না মূল্যস্ফীতির হার ৭ শতাংশের নিচে স্থায়ীভাবে নেমে আসে, ততদিন নীতি রেপো হার ১০ শতাংশ নির্ধারণ থাকবে। এছাড়া স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটির হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটির হার ৮ শতাংশ বজায় রাখা হবে।
চলতি মুদ্রানীতিতেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে আগামী বছরের জুন নাগাদ গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর রেপো সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করে। রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ধক রেখে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেয়।
নতুন মুদ্রানীতিতে স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটির হারও আগের মতো ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে, ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অর্থ রাখলে যে সুদ পায়- সেই স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটির হার গত ১৫ জুলাই ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৮ শতাংশে নামানো হয়।
অর্থনীতি
সাইবার হামলার আশঙ্কা, সতর্ক করলো বাংলাদেশ ব্যাংক

আসন্ন দিনগুলোতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো, বিশেষ করে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে সম্ভাব্য সাইবার হামলার আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে একটি জরুরি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটিডি) বিভাগ থেকে পাঠানো ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সাইবার হামলার মাধ্যমে ব্যাংক, স্বাস্থ্যসেবা, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। এতে করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হুমকির মুখে পড়তে পারে।
প্রতিরোধে যা করতে বলা হয়েছে
বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনায় সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-
সার্ভার, ডেটাবেইস ও সিস্টেমসমূহে প্রয়োজনীয় সিকিউরিটি প্যাঁচ আপডেট করা, অপ্রয়োজনীয় পার্ট বন্ধ রাখা এবং ন্যূনতম অ্যাক্সেস সুবিধা নিশ্চিত করা, ডেটা ব্যাকআপ নিশ্চিত করা ও ৩-২-১ ব্যাকআপ কৌশল অনুসরণ, সমস্ত স্তরে (ট্রানজিট, রেস্ট ও প্রসেস) ডেটা এনক্রিপশন, গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমে মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু, সন্দেহজনক কার্যক্রম যেমন lateral movement, DDoS, ও ডেটা চুরি শনাক্তে SIEM ও NIDS ব্যবহারের নির্দেশ, EDR (Endpoint Detection and Response) ও অন্যান্য সিকিউরিটি টুল ব্যবহারের পাশাপাশি থ্রেট সিগনেচার নিয়মিত আপডেট, সুনির্দিষ্ট Incident Response Plan প্রস্তুত রাখা।
এছাড়া সন্দেহজনক লগইন, অজানা ফাইল পরিবর্তন, রিমোট অ্যাকসেস ও প্রিভিলেজড অ্যাকাউন্টগুলো বিশেষভাবে নজরে রাখা, কোনো ধরনের Indicators of Compromise (IOCs) পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাংলাদেশ ব্যাংকে অবহিত করা, ২৪/৭ ভিত্তিতে সিকিউরিটি অপারেশনস সেন্টার মনিটরিং, উচ্চ পর্যায়ের রেজিলিয়েন্স নিশ্চিত করতে লোড ব্যাল্যান্সার, ফলোব্যাক প্ল্যান, বিজনেস কন্টিনিউইটি প্ল্যান ও ডিজাস্টার রিকভারি প্ল্যান বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, এই নির্দেশনা অনুসরণ করলে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাত সম্ভাব্য সাইবার হুমকি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হবে। ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন ও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পুনরায় অনুরোধ জানায় আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি।
অর্থনীতি
২৯ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২৭ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের ২৯ দিনে দেশে ২২৭ কোটি ৬০ লাখ (প্রায় ২ দশমিক ২৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) প্রায় ২৭ হাজার ৭৬৭ কোটি ২০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের প্রথম ২৯ দিনে ২২৭ কোটি ৬০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছে দেশে। গত বছরের একই সময়ে (২০২৪ সালের জুলাইয়ের ২৯ দিন) এসেছিল ১৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ে তুলনায় ৫৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা প্রায় ৬ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
এর আগে সদ্যবিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠিয়েছেন প্রায় ২৮১ কোটি ৮০ লাখ (২ দশমিক ৮২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার বেশি। আর প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ১১৪৭ কোটি টাকা।
একক কোনো মাস হিসেবে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। গত মে মাসে দেশে এসেছে ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তারও আগে গত মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল।
বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে (জুলাই থেকে জুন) মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এরপর আগস্টে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, নভেম্বরে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ডলার, মে মাসে ২৯৭ কোটি ডলার ও জুনে রেমিট্যান্স এসেছে ২৮২ কোটি ডলার।