ধর্ম ও জীবন
অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা দান করলে সওয়াব হবে?

উপার্জনের ক্ষেত্রে ইসলাম সবসময় হালাল-হারামে গুরুত্ব দিতে বলেছে। কারণ, হারাম পন্থায় উপার্জন করলে বরকত নষ্ট হয়ে যায়। যার উপার্জন হারাম তার সারা জীবনই ধ্বংসের মুখে। কারণ, তার খাবার-দাবার, পোশাক সবই হারাম উপার্জনের এমনকি সন্তান-সন্ততির শরীরও হারাম খাবারে পূর্ণ। এক কথায় তার পুরো জীবন প্রতিষ্ঠিত হারামের ওপর। এমন ব্যক্তি অঢেল সম্পদ উর্পাজন করলেও বরকত থেকে বঞ্চিত। আল্লাহর রহমত থেকে বিতাড়িত।
তাই হালাল উপার্জনে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, এতে রয়েছে বরকত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সৎ পন্থায় সম্পদ উপার্জন করে থাকে তাকে এর মধ্যে বরকত দেওয়া হয়। (মুসলিম, হাদিস, ২৩১১)
হালাল রিজিক অনুসন্ধান করা আবশ্যক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, অন্যান্য ফরজ কাজ আদায়ের সঙ্গে হালাল রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা গ্রহণ করাও একটি ফরজ।’ (বায়হাকী, হাদিস, ৪৬০)।
অপর এক হাদিসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালা কেবল পবিত্র বস্তুই কবুল করেন। যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে এক মুষ্টি খেজুরও দান করে, আল্লাহ তা নিজ হাতে গ্রহণ করেন। এরপর তা ওই ব্যক্তির জন্য পরিচর্যা করতে থাকেন- যেমন তোমাদের কেউ উটের বাচ্চার পরিচর্যা করে। ওই সামান্য পরিমাণ খেজুর বাড়তে বাড়তে এক সময় পাহাড় পরিমাণ হয়ে যায়। (বুখারি, হাদিস, ১৪১০; মুসলিম, হাদিস, ১০১৪)
হাদিসের মাধ্যমে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, ইসলামে হারামে উপায়ে উপার্জনের কোনো স্থান নেই এবং একে বৈধতা দেওয়ার কোনো উপায় নেই। তবে কেউ যদি অবৈধভাবে উপার্জন করে ফেলে তাহলে তার জন্য এই সম্পদ নিজের কাছে রাখার অনুমতি নেই; প্রকৃত হকদারের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। হকদারের খোঁজ না পেলে তা দান-সদকার নিয়ত না করে জনকল্যাণে ব্যয় করে দিতে হবে। এতে ওই ব্যক্তির কোনো সওয়াব হবে না। কারণ অবৈধ আয়ে ভালো কাজ করলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা পবিত্রতা ছাড়া নামাজ কবুল করেন না এবং আত্মসাৎকৃত সম্পদের সদকা কবুল করেন না। (মুসলিম, হাদিস, ২২৪; তিরমিজি, হাদিস, ০১; নাসায়ি, হাদিস, ১৩৯)
ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, বান্দা হারাম পথে উপার্জন করবে, এরপর তা থেকে আল্লাহর পথে খরচ করবে এবং তাতে বরকত দেওয়া হবে বা সে তা থেকে সদকা করবে এবং তা কবুল করা হবে- এমন ধারণা অমূলক। বরং ওই ব্যক্তি মৃত্যুর পর সেই সম্পদ রেখে গেলে তা তাকে আরও বেশি জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে। (আহমাদ, হাদিস, ৩৬৭২; বাজ্জার, হাদিস, ২০২৬)
অন্য এক হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হারাম উপার্জন করবে, এরপর তা সদকা করবে- সেই সদকায় কোনো সওয়াব হবে না; বরং অবৈধ উপার্জনের গুনাহের বোঝা তার ঘাড়ে চেপেই থাকবে। (ইবনে হিব্বান, হাদিস, ৩২১৬; হাকিম, হাদিস, ১৪৪০)

ধর্ম ও জীবন
হজের পর যেসব ভুল করবেন না

হজ শেষে একজন মুসলমান নতুন করে আল্লাহ তায়ালার দিকে ফিরে আসেন। হজের বিনিময়ে আল্লাহ তাকে পরকালে পুরস্কার দেবেন, সব গুনাহ মাফ করবেন এই প্রত্যাশা রাখেন। আল্লাহ তায়ালার ক্ষমা এবং পুরস্কার লাভের জন্য একজন মুসলমানের উচিত নিজেকে সবসময় পাপমুক্ত রাখা। নিজেকে কিছু ভুল-ত্রুটি থেকে মুক্ত রাখা।
হজের পর যেসব ভুল-ত্রুটি থেকে বিরত থাকবেন—
হজ করলেই গুনাহ মাফ
হাদিসে হজের মাধ্যমে গুনাহ মাফের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তাই বলে এমন ধারণা রাখা যাবে না যে, হজের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন, এখন যত ইচ্ছা গুনাহ করা যাবে।
হাদিসে হজের মাধ্যমে গুনাহ মাফের যেই সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে তা হজে মাবরুরের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে। কোনো ব্যক্তি নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না যে তিনি হজে মাবরুর লাভ করেছেন।
তাই হজের পর যথাসম্ভব পাপ ও গুনাহ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। হজের পর কারো ভেতর খারাপ কাজ করা বা নৈতিক অবনতি দেখা দিলে তা এই ইঙ্গিত দিতে পারে যে, হজ কবুল হয়নি— কারণ তার জীবনে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনেনি।
রমজান ও হজের মতো ইবাদতের মৌসুমগুলো আমাদের আত্মিক শক্তি জোগানোর মাধ্যম। এর মাধ্যমে আমাদের সঠিক পথে পরিচালনার শিক্ষা দেওয়া হয়।
হজ শেষে ঘরে ফেরার সময়ও ইহরাম পরা
১০ জিলহজের সব হজের কাজ শেষ করার পর হজযাত্রীদের উচিত স্বাভাবিক পোশাক পরা। কিন্তু কেউ কেউ বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত ইহরাম পরে থাকেন।
এর মাধ্যমে নিজেদের ওপর অপ্রয়োজনীয় কষ্ট চাপিয়ে দেওয়া হয়, যা সুন্নাহর পরিপন্থী। বরং এতে আত্মপ্রদর্শনের শঙ্কাও থাকে— মানুষকে দেখানোর জন্য এমন কিছু করা অনুচিত।
নিজেকে ‘হাজি সাহেব’ বলে ডাকতে জোর করা
হজ শেষে কেউ যদি ‘হাজি’ নামে পরিচিত হন, এতে কোনো সমস্যা নেই। তবে কেউ যদি তাকে ‘হাজি সাহেব’ ডাকতে অন্যদের জোর করেন। তাহলে তা অহংকারের প্রকাশ হিসেবে গণ্য হবে। এটি ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় কাজ।
হজের পরও পাপ করা ও ইবাদতের প্রতি অবহেলা
হজের পর কেউ যদি মন্দ আচরণ ও পাপ ছাড়তে না পারে এবং আগের মতোই মন্দ আচরণ ও গুনাহে লিপ্ত থাকেন। ইবাদতের প্রতি অবহেলা দেখান। তবে তা হজ কবুল না হওয়ার আলামত হতে পারে।
একজন প্রকৃত হজযাত্রীর জীবন হজের পরে আরও সুন্দর, ধার্মিক ও নৈতিকভাবে উন্নত হওয়ার কথা।
নবীজির কবরের ওপর শপথ করা
কেউ কেউ মদিনায় গিয়ে নবীজির (সা.) কবর জিয়ারত করার পর বলেন, ‘আমি সেই নবীর কসম করে বলছি, যার কবর আমি হাতে ছুঁয়েছি।’
ইসলামের দৃষ্টিতে শপথ একমাত্র আল্লাহর নামেই করা উচিত, অন্য কারো নামে নয়। আর না পারলে চুপ থাকা শ্রেয়।
হজ জীবনে এক বিশাল পরিবর্তনের সুযোগ এনে দেয়। তাই সবার খেয়াল রাখতে হবে আমাদের হজ যেন শুধুমাত্র একটি সফর হিসেবে পরিচিতি না পায়। বরং তা জীবনের আলোকবর্তিকা হিসেবে গণ্য হয়। তবেই তা হজে মাবরুরের বলে গণ্য হবে।
ধর্ম ও জীবন
তাকবিরে তাশরিক পড়তে হবে মঙ্গলবার আসর পর্যন্ত

৯ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক পড়া ওয়াজিব। জিলহজের ৯-১৩ তারিখ পর্যন্ত ৫ দিন মোট ১৩ ওয়াক্তের ফরজ নামাজের পর এ তাকবির পড়তে হয়।
কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَاذْكُرُوا اللَّهَ فِي أَيَّامٍ مَّعْدُودَاتٍ
আল্লাহকে স্মরণ কর নির্দিষ্ট দিনসমূহে। (সুরা বাকারা: ২০৩)
কোরআনের ব্যখ্যাকারদের মতে এ আয়াতে ‘নির্দিষ্ট দিন’ বলে তাশরিকের দিনগুলো অর্থাৎ জিলহজের ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ বোঝানো হয়েছে। এ দিনগুলোতে ফরজ নামাজসমূহের পরবর্তী তাকবির ছাড়া অন্যান্য সময়ও বেশি বেশি জিকির করা বাঞ্চনীয়।
বাংলাদেশে আজ (৯ জুন) ১২ জিলহজ। আগামীকাল (১০ জুন) ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত তাকবিরে তাশরিক পড়তে হবে।
অর্থ ও উচ্চারণসহ তাকবিরে তাশরিক
اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَاَللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর; লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু; ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর; ওয়ালিল্লাহিল হামদ্।’
অর্থ : ’আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; সব প্রশংসা মহান আল্লাহ জন্য।’
তাকবিরে তাশরিক যাদের ওপর ওয়াজিব
মুসলমান প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ, নিজের বাড়িতে অবস্থানকারী ও মুসাফির, একা ও জামাতে নামাজ আদায়কারী সবার জন্য ফরজ নামাজের পর একবার তাকবিরে তাশরিক পড়া ওয়াজিব।
অনেকে মনে করে এটা মসজিদে নামাজ আদায়ের সাথে সম্পর্কিত। এ ধারণা সঠিক নয়। কোনো কারণে জামাত ছুটে গেলে ঘরে নামাজ আদায়ের পরও তাকবিরে তাশরিক পড়তে হবে। নারীরা ঘরে নামাজ আদায়ের পর তাকবিরে তাশরিক পড়বে।
তবে কোনো নারী এ সময় মাসিক অবস্থায় থাকলে তার ওপর তাকবিরে তাশরিক পড়া ওয়াজিব নয়। যেহেতু সে এ সময় নামাজ আদায় থেকে বিরত থাকে, নামাজ তার ওপর আবশ্যক থাকে না, তাই নামাজ পরবর্তী তাকবির পড়াও তার ওপর আবশ্যক হবে না।
ধর্ম ও জীবন
আজ যে ৪ আমল করবেন হজ পালনকারীরা

আজ (৬ জুন) সৌদি আরবে ১০ জিলহজ ঈদুল আজহার দিন। এ দিন হজ পালনকারীরা হজের ৪টি আমল সম্পন্ন করবেন। সুবহে সাদিকের পর মুজদালিফায় অবস্থান করবেন, তারপর সূর্য ওঠার আগে মিনায় এসে বড় জামরায় ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেন। তারপর কোরবানি করবেন। কোরবানি সম্পন্ন হলে মাথা মুণ্ডন করবেন, চুল ছাটবেন বা কাটবেন।
চুল মুণ্ডন বা কাটার পর স্ত্রী সঙ্গম ছাড়া ইহরামের যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে।
মুজদালিফায় অবস্থান
হিজরি ক্যালেন্ডারে সূর্যাস্তের পর নতুন দিন শুরু হয়। ৯ জিলহজ আরাফায় অবস্থান করে সূর্যাস্তের পর ১০ জিলহজ হজ পালনকারীদের যেতে হয় মুজদালিফায়। মুজদালিফায় মাগরিব ও ইশা আদায়ের পর সুবহে সাদিক পর্যন্ত অবস্থান করা সুন্নতে মুআক্কাদা। রাতের অর্ধেকের বেশি অবস্থান করলে সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।
১০ জিলহজ সুবহে সাদিকের পর কিছু সময় মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। তাই ফজরের আগে মুজদালিফা ত্যাগ করা যাবে না। ফজরের পর সুর্য ওঠার আগেই মুজদালিফা থেকে মিনার উদ্দেশে রওয়ানা হতে হবে।
জামারায় কংকর নিক্ষেপ
১০ জিলহজ সুবহে সাদিক বা ফজরের সময় শুরু হওয়ার পর থেকে আগত রাতের সুবহবে সাদিক পর্যন্ত মোট ২৪ ঘণ্টা প্রথম দিনের কংকর নিক্ষেপ করা যায়। এর মধ্যে সুবহে সাদিক থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত মাকরূহ সময়, তবে নারী, অসুস্থ ও দুর্বলদের জন্য মাকরুহ নয়। সুর্যোদয়ের পর থেকে মধ্যাহ্ন পর্যন্ত মুস্তাহাব সময়; এ সময়ই কংকর করার চেষ্টা করা উচিত। মধ্যাহ্ন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জায়েজ সময়। সূর্যাস্তের পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত মাকরুহ সময়। তবে কারো ওজর থাকলে, প্রচণ্ড ভড়ি থাকলে বৃদ্ধ, নারী ও দুর্বল ব্যক্তিরা এ সময় কংকর নিক্ষেপ করতে পারে।
১০ জিলহজ শুধু বড় জামারায় কংকর নিক্ষেপ করতে হয়। অন্য দুটি জামারায় এ দিন কংকর নিক্ষেপ করা নিষেধ।কংকর নিক্ষেপের সময় পড়তে হয় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ অথবা শুধু ‘আল্লাহু আকবার’। পরপর ৭ বার তাকবির দিয়ে কংকর নিক্ষেপ করতে হয়।
কংকর নিক্ষেপের জন্য পবিত্রতা অর্জনের শর্ত নেই, তবে অজু অবস্থায় কংকর নিক্ষেপ করা ভালো।
হজের কোরবানি
কেরান ও তামাত্তু হজ পালনকারীরা যেহেতু ওমরাহ ও হজ পালনের মাধ্যমে দুটি ইবাদত করেছে, এ জন্য তাদের ওপর শুকরিয়াস্বরূপ একটি কোরবানি করা ওয়াজিভ। একে দমে শোকরও বলা হয়। এই কোরবানি হারামের সীমানার ভেতরে করতে হয়।
ঈদের কোরবানি আর হজের কোরবানি এক নয়। কেউ যদি ঈদের কোরবানি মনে করে কোরবানি করে, তাহলে তার হজের কোরবানি বা দমে শোকর আদায় হবে না। দমে শোকরের নিয়তে পুনরায় কোরবানি করতে হবে।
বড় জামারায় কংকর নিক্ষেপের পর এই কোরবানি করতে হবে। এরপর চুল-নখ কাটা যাবে। কোরবানির আগে চুল-নখ কাটা যাবে না।
ইফরাদ হজ পালনকারীদের জন্য কোরবানি এই কোরবানি ওয়াজিব নয়, মুস্তাহাব। তারা কংকর নিক্ষেপের পরই চুল নখ কাটতে পারবে।
চুল কাটা
হজের কোরবানি হয়ে গেলে পুরুষরা মাথার চুল মুণ্ডন করবেন বা ছোট করবেন। পুরুষের জন্য হলক অর্থাৎ পুরো মাথা মুণ্ডন করাই উত্তম। তবে কসর অর্থাৎ পুরো মাথার চুল আঙুলের এক গিরা পরিমাণ কেটে খাটো করা করার মাধ্যমেও হালাল হওয়া যায়। কারো মাথার চুল যদি ছোট হওয়ার কারণে এক গিরা পরিমাণ কাটা সম্ভব না হয় তাহলে তার মাতা মুণ্ডানো জরুরি।
নারীরা হলক করবে না বরং কসর বা পুরো মাথার চুল এক ইঞ্চি পরিমাণ কাটবে। মাথার এক চতুর্থাংশ চুলের অগ্রভাগ এক ইঞ্চি পরিমাণ কাটলে নারীদের ওয়াজিব আদায় হয়ে যায় তবে এটা মাকরুহ, পুরো মাথার চুল কাটা উত্তম।
চুল কাটার মাধ্যমে ইহরাম শেষ হয়ে যায়। তাই ইহরাম অবস্থায় যে কাজগুলো নিষিদ্ধ ছিল, চুল কাটার পর স্ত্রী সঙ্গম ছাড়া বাকি সব কাজ বৈধ হয়ে যায়। যেমন সেলাইকৃত পোশাক রা, সুগন্ধি ব্যবহার করা ইত্যাদি। স্ত্রী-সঙ্গম তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করা পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকে।
কাফি
ধর্ম ও জীবন
আজ জামারায় পাথর মারবেন হজযাত্রীরা

১০ জিলহজে শুধু বড় জামরায় (শয়তান) সাতটি কঙ্কর (পাথর) নিক্ষেপ এবং ১১ ও ১২ জিলহজে ছোট, মধ্যম ও বড় এ তিন জামরাতেই (শয়তানকে) পাথর মারা ওয়াজিব। শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করা পবিত্র হজের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ৮ জিলহজ (চলতি বছর ৪ জুন)। এদিন হাজিরা মিকাত থেকে ইহরাম (পুরুষদের জন্য হজের নির্ধারিত পোশাক-দুই টুকরা সেলাইবিহীন সাদা কাপড়) বেঁধে মক্কার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। তারপর তাওয়াফে কুদুমের মাধ্যমে শুরু হয় হজের আনুষ্ঠানিকতা। তওয়াফে কুদুম করার পর হাজিরা মিনায় অবস্থান করেন।
দোয়া কবুলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও সময় হচ্ছে, জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ করে দোয়া করা। কঙ্কর নিক্ষেপের পর জামারার স্থান থেকে সামান্য সরে গিয়ে প্রাণ খুলে দোয়া করা।
মিনাতেই তিনটি ‘জুমরা’ (স্তম্ভ) অবস্থিত, এগুলোকে একত্রে ‘জামারাত’ বলে। এগুলো ছোট শয়তান (জুমরায়ে উলা), মেজ শয়তান (জুমরায়ে উস্তা), বড় শয়তান (জুমরায়ে আকাবা) নামে পরিচিত। হজরত ইব্রাহিম (আ.) যখন হজরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি দিতে যাচ্ছিলেন, তখন পথে এ স্থানে শয়তান বাধা সৃষ্টি করে। তখন হজরত ইব্রাহিম (আ.) পাথর ছুড়ে শয়তানকে বিতাড়িত করেন।
৮ জিলহজ মিনায় আগমনের মাধ্যমেই শুরু হয়েছে হজের আনুষ্ঠানিকতা। সৌদি সরকারের নির্দেশনায় মঙ্গলবার রাত থেকেই হজযাত্রীরা মিনায় আসতে শুরু করেন।
মিনার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে বিত্ত-বৈভব, কামনা-বাসনাকে পরিত্যাগ করে হজযাত্রীরা আল্লাহর সান্নিধ্য ও ক্ষমাপ্রত্যাশা করেন। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় তাদের মন ব্যাকুল। তারা পাপতাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান।
রাত থেকেই মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে যেতে থাকেন হজযাত্রীরা। কারণ আরাফাতের ময়দানে ৯ জিলহজ সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার পর থেকে সূর্যাস্ত যাওয়ার আগে কিছু সময় অবস্থান করা ফরজ। এরপর মাগরিবের নামাজ না পড়েই মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হন তারা।
মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে সারারাত অবস্থানের পর ১০ জিলহজ ফজরের নামাজের পর শয়তানের স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপের জন্য যাত্রা শুরু করেছেন হজযাত্রীরা। তারা মুজদালিফা থেকেই শয়তানকে মারার জন্য পাথর সংগ্রহ করেছেন।
আজ তারা শুধু বড় জামারায় (প্রতীকী বড় শয়তান) পাথর নিক্ষেপ করতে মিনায় যাচ্ছেন।
কাফি
ধর্ম ও জীবন
হজের খুতবায় মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার আহ্বান

হজের খুতবায় মসজিদুল হারামের ইমাম শায়খ ড. সালেহ বিন হুমাইদ বলেছেন, মুসলমানদের পরস্পরের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখা উচিত। মসজিদে নামিরায় হজের খুতবা প্রদানকালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ঈমানদারদের উচিত আল্লাহকে ভয় করা এবং তাকওয়া অবলম্বন করা। তাকওয়া ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য। তিনি বলেন, শয়তান মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু। মুসলমানদের উচিত পরস্পরের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখা।
শায়খ সালেহ বিন হুমাইদ বলেন, আল্লাহ তায়ালা ইসলামকে মানবজাতির জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করেছেন। যদি তুমি তোমার শত্রুকে ক্ষমা করো, তাহলে আল্লাহ তোমাকে তাঁর বন্ধু বানিয়ে নেবেন।
তিনি আরও বলেন, সৎকর্ম পাপসমূহকে মুছে দেয়। তাই আমাদের উচিত যতটা সম্ভব নেক কাজের চেষ্টা করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহর এবাদত এমনভাবে করো যেন তুমি তাঁকে দেখছ।
মসজিদুল হারামের সাবেক ইমাম বলেন, ইসলাম ধর্মের তিনটি স্তর রয়েছে, যার মধ্যে সর্বোচ্চ স্তর হলো ‘ইহসান’। পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার, নম্রতা প্রদর্শন এবং প্রতিশ্রুতি পূরণ করাও ইসলামেরই অংশ। আর লজ্জাশীলতা বা হায়া হলো ঈমানের একটি শাখা।
শায়খ সালেহ বিন আবদুল্লাহ আরও বলেন, হজের সময় বেশি বেশি আল্লাহর জিকির (স্মরণ) করা উচিত, বেশি বেশি দোয়া করা উচিত এবং দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ প্রার্থনা করা উচিত। আল্লাহ বলেছেন, নেক কাজে একে অপরকে সাহায্য করো এবং মন্দ কাজে বাধা দাও।
হজের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ফরজ আরাফায় অবস্থান পালনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার (৮ জিলহজ, ৫ জুন) ভোর থেকে আরাফায় পৌঁছাতে শুরু করেন হাজিরা। এখানে পৌঁছে আল্লাহর কাছে দোয়া ও ইবাদতে সময় অতিবাহিত করছেন তারা।
সৌদি কর্তৃপক্ষ হাজিদেরকে দিনের সবচেয়ে উত্তপ্ত সময়ে (সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা) বাইরে না থাকার অনুরোধ জানিয়েছে।
হাজার হাজার হাজি ফজরের আগেই আরাফার ময়দান, জাবালে রহমত পাহাড় ও তার আশপাশের সমতল ভূমিতে একত্রিত হতে শুরু করেন। এটি সেই ঐতিহাসিক স্থান যেখানে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তার বিদায় হজের ভাষণ প্রদান করেছিলেন। সূর্যাস্তের পর তারা আরাফাত থেকে মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হবেন।
মিনা ও আরাফার ময়দানের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত একটি এলাকা মুজদালিফা। শয়তানকে প্রতীকি পাথর নিক্ষেপের রীতি অনুসরণের জন্য এখান থেকে তারা পাথর সংগ্রহ করবেন।
১০ জিলহজ তারিখে ওকুফে মুজদালিফা শেষে তারা রমি (শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ) করার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।
এরপর তারা বড় শয়তানকে সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন এবং কোরবানি করবেন। এরপর মাথা মুণ্ডিয়ে বা চুল ছেঁটে ইহরাম খোলার মাধ্যমে ইহরামমুক্ত হবেন।
১১ জিলহজ হজযাত্রীরা ছোট, মাঝারি ও বড় তিনটি শয়তানকে সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন। রমি শেষে তারা কাবা শরিফে ‘তাওয়াফে জিয়ারত’ করবেন এবং এরপর সাফা-মারওয়া সাঈ সম্পন্ন করবেন।
১২ জিলহজ তারিখে সূর্য ঢলার পর তিনটি শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করা হবে। ১৩ জিলহজ রমি জামেরাত শেষে হজযাত্রীরা মিনা থেকে তাদের বাসস্থানে ফিরে যাবেন।
কাফি