অর্থনীতি
শরীয়াহভিত্তিক শাখার অর্থ সাধারণ ব্যাংকিংয়ে ব্যবহার নয়

ইসলামিক বা শরিয়াহভিত্তিক শাখায় রক্ষিত সাধারণ হিসাবের অর্থ কনভেনশনাল (সাধারণ বা শরীয়াহ ভিত্তিক নয়) ব্যাংকিং কার্যক্রমে ব্যবহার করা যাবে না। ব্যাংকের ইসলামিক ব্যাংকিং শাখা ও উইন্ডোর গ্রাহকদের কনভেনশনাল শাখা ও উপশাখাগুলোর অনলাইনে ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা কীভাবে দেবে এমন নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সোমবার (৮ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। গাইডলাইন্স ফর কনডাক্টিং ইসলামিক ব্যাংকিং গাইডলাইন্সে ইসলামিক ব্যাংক এবং কনভেনশনাল ব্যাংকের ইসলামিক ব্যাংকিং শাখার মাধ্যমে ইসলামিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ইসলামিক ব্যাংকিং কার্যক্রম অধিকতর সম্প্রসারণ ও গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে ব্যাংকের ইসলামিক ব্যাংকিং শাখা, উইন্ডোর গ্রাহকদের কনভেনশনাল শাখা ও উপশাখাগুলোতে বেশ কিছু শর্তে অনলাইনে ইসলামিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।
শর্তগুলো হলো- গ্রাহকদের ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা প্রদানে শাখা ও উপশাখায় ইসলামিক ব্যাংকিং হেল্প ডেস্ক থাকতে হবে। ইসলামিক ব্যাংকিং বিষয়ে প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাকে ইসলামিক ব্যাংকিং ডেস্কে পদায়ন করতে হবে। ইসলামিক ব্যাংকিং ডেস্কের মাধ্যমে শুধু ব্যাংকের অনুমোদিত ইসলামিক ব্যাংকিং শাখা বা উইন্ডোর গ্রাহকদের অনলাইনভিত্তিক আর্থিক লেনদেন তথা গ্রাহক হিসাবে অর্থ জমা, উত্তোলন ও স্থানান্তর সুবিধা দেওয়া যাবে। ইসলামিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পৃথক ‘ইসলামিক কোর ব্যাংকিং’ সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। ইসলামিক ব্যাংকিং লেনদেন ইসলামিক ব্যাংকিং শাখায় রক্ষিত সাধারণ হিসাবের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। ইসলামিক ব্যাংকিং শাখায় রক্ষিত সাধারণ হিসাবের অর্থ কনভেনশনাল ব্যাংকিং কার্যক্রমে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রাহক হিসাব খোলা ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রম ইসলামিক ব্যাংকিং ডেস্কের মাধ্যমে সম্পাদন করা যাবে না। ইসলামিক ব্যাংকিং ডেস্কের মাধ্যমে অনলাইনে ইসলামিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে শাখাসমূহের দর্শনীয় স্থানে ‘অনলাইন ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা হয়’ মর্মে বিজ্ঞপ্তি,ব্যানার, প্লেকার্ড, ফেস্টুন প্রদর্শন করতে হবে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

অর্থনীতি
তৃতীয় প্রান্তিকে ভিসার আয় বেড়েছে ১০.২ বিলিয়ন ডলার

বৈশ্বিক ডিজিটাল পেমেন্ট জায়ান্ট ভিসা চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে তাদের আর্থিক প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ করেছে। ২০২৫ এর ৩০ জুন পর্যন্ত তাদের নেট রেভিনিউ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। বিশ্বজুড়ে ভোক্তা ব্যয়ের স্থিতিশীল ধারা, প্রসেসড ট্রানজেকশন বৃদ্ধি এবং ক্রস-বর্ডার লেনদেন মূলত এই প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
ভিসা’র তথ্য মতে, এই তিন মাসে তাদের মোট পেমেন্ট ভলিউম ধ্রুব-মুদ্রার ভিত্তিতে ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মার্চে শেষ হওয়া আগের প্রান্তিকের তুলনায় অপরিবর্তিত। এ সময় ভিসা মোট ৬৫.৪ বিলিয়ন ট্রানজেকশন প্রসেস করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। আন্তর্জাতিক লেনদেনে আরও ইতিবাচক চিত্র দেখা গেছে; ইউরোপের অভ্যন্তরীণ লেনদেন বাদ দিলে ক্রস-বর্ডার ভলিউম বেড়েছে ১১ শতাংশ এবং সামগ্রিকভাবে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বৈশ্বিক ভ্রমণ ও বাণিজ্যের সার্বিক বৃদ্ধিকে ইঙ্গিত করে।
এ প্রসঙ্গে ভিসা’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রায়ান ম্যাকইনার্নি বলেন, “এই প্রান্তিকে আমাদের নেট রেভিনিউ ১৪ শতাংশ, জিএএপি ইপিএস ১২ শতাংশ এবং নন- জিএএপি ইপিএস ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রান্তিকজুড়ে আমরা এ ধারায় ইতিবাচক চিত্র লক্ষ করেছি। যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তারা প্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল উভয় ধরনের খরচেই সক্রিয় রয়েছে। আমরা এআই ও স্টেবলকয়েন-এর মতো নতুন প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রগুলোয় নতুনত্ব আনতে মনোযোগ বাড়াচ্ছি, যা আমাদের দীর্ঘমেয়াদে আরও শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাবে বলে আমি আশাবাদী।”
রেভিনিউ রিসোর্স বিশ্লেষণ বলছে, সেবা খাত থেকে আয় ৪.৩ বিলিয়ন ডলার, যা বছরে ৯ শতাংশ বৃদ্ধি এবং ডেটা প্রসেসিং রেভিনিউ ১৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.২ বিলিয়ন ডলারে। আন্তর্জাতিক লেনদেনের আয় দাঁড়িয়েছে ৩.৬ বিলিয়ন ডলার (১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি) এবং অন্যান্য আয় ৩২ শতাংশ বেড়ে ১.০ বিলিয়নে পৌঁছেছে। এছাড়া, মোট আয় থেকে ক্লায়েন্ট ইন্সেনটিভ বাদ দেওয়ার পর তা এ প্রান্তিকে দাঁড়িয়েছে ৪.০ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি।
জিএএপি অনুযায়ী পরিচালন ব্যয় বছরে ৩৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.০ বিলিয়ন ডলারে, যার মূলে রয়েছে লিটিগেশন প্রভিশন ও কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি। এসব বাদ দিয়ে নন-জিএএপি ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ। জিএএপি ভিত্তিক নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৫.৩ বিলিয়ন ডলার বা প্রতি শেয়ারে ২.৬৯ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় যথাক্রমে ৮ শতাংশ ও ১২ শতাংশ বেশি। বিশেষ খরচ বাদ দিয়ে ভিসার নিট মুনাফা ৫.৮ বিলিয়ন ডলার বা প্রতি শেয়ারে ২.৯৮ ডলার হয়েছে, যা যথাক্রমে ১৯ শতাংশ ও ২৩ শতাংশ বেশি।
প্রান্তিক শেষে তাদের হাতে নগদ অর্থ ও বিনিয়োগযোগ্য সিকিউরিটিজ রয়েছে ২০.৪ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ। ভিসা কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক, প্রযুক্তি-নির্ভর উদ্ভাবন এবং ডিজিটাল অর্থনীতিতে নেতৃত্ব অব্যাহত রাখতে তারা কাজ করে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য টেকসই মুনাফা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
অর্থনীতি
আমদানি-রপ্তানি শুল্ক ও কর কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনলো সরকার

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে আমদানি-রপ্তানি শুল্ক ও কর কাঠামোয় বড় পরিবর্তন এনেছে সরকার। শুল্কনীতি ও কাস্টমস ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে বাণিজ্য সহজীকরণ, রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা আনা, এবং দেশীয় শিল্পকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে নেওয়া লক্ষ্যে এ পবির্তন আনা হয়েছে। এই লক্ষ্যে কর ছাড় ও রেয়াতি সুবিধা যৌক্তিকীকরণ, দীর্ঘমেয়াদি অব্যাহতি হ্রাস এবং ‘অ্যান্টি-এক্সপোর্ট বাইয়াস’ কমানোর দিকেও জোর দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) আয়োজিত এক সেমিনারে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘিরে আমদানি-রপ্তানি শুল্ক ও আয়কর খাতে গৃহীত বিভিন্ন সংস্কার ও নীতিগত পরিবর্তন তুলে ধরা হয়। এনবিআরের মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে ইআরএফ সদস্যদের সামনে পৃথক তিনটি প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে কাস্টমস, ভ্যাট এবং আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট তথ্য উপস্থাপন করেন। প্রেজেন্টেশনগুলোতে বিশেষভাবে আলোচনায় আসে নতুন শুল্ক কাঠামো, কর রেয়াত ও ছাড় সীমা, এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী প্রস্তুতি, রাজস্ব আহরণ বাড়াতে গৃহীত উদ্যোগ এবং ট্যাক্স এক্সপেনডিচার যৌক্তিকীকরণ সংক্রান্ত দিক-নির্দেশনা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে আছেন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি দৌলত আকতার মালা। সেমিনারটি সভাপতিত্ব করছেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
পেট্রোলিয়াম পণ্যে শুল্ক হ্রাস
চলতি অর্থবছরের আমদানি শুল্ক কাঠামোতে নতুন দুটি স্তর যোগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো, ক্রুড পেট্রোলিয়ামের জন্য ৩ শতাংশ এবং পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য ৬ শতাংশ। আগে এসব পণ্যে শুল্কহার ছিল ৫ শাতংশ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত।
ক্রুড অয়েলে শুল্কহার ৫ শাতংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। মোটর স্পিরিট, ডিজেল, কেরোসিন, জেট ফুয়েল ১০ শাতংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৬ শতাংশ।
রফতানি সহায়ক পরিবর্তন
১০৭টি পণ্যের ওপর কাস্টমস ডিউটি পুরোপুরি প্রত্যাহার, ৬০টি পণ্যের কাস্টমস ডিউটি হ্রাস এবং ১৯টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ বাতিল এবং ৪৩১টি পণ্যের এসডি হ্রাস করা হয়েছে।
গার্মেন্টস, ফেব্রিকস ও ফুড পণ্যে এসডি হ্রাস
গার্মেন্টস পণ্যে এসডি ৪৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ; ফেব্রিকস ২০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ; পাস্তা, সিরিয়ালজাত খাবার ৩০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ; মাইক্রোবাস (১০-১৫ আসন) ২০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
কিছু পণ্যে এসডি বা ডিসি বৃদ্ধি করা হয়েছে। যেমন- গ্রানাইট বা মার্বেল ব্লকে এসডি ২০ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। হেলিকপ্টার, মোটর ও এলইডি পার্টস, মিথানল ইত্যাদিতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।
লৌহ ও ইস্পাত পণ্যে পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্টিল স্ক্র্যাপ, স্পঞ্জ আয়রন, পিগ আয়রনের কাস্টমস ডিউটি সম্পূর্ণ তুলে দিয়ে ভ্যাট ও অগ্রিম আয়কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিপ স্ক্র্যাপের ক্ষেত্রেও সিডি তুলে দিয়ে ভ্যাট ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং এআইটি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ন্যূনতম মূল্য ব্যবস্থা বাতিল ও যৌক্তিকীকরণ
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) অনুযায়ী ১৩টি হেডিংয়ের পণ্যের জন্য আরোপিত ন্যূনতম মূল্য বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া পাঁচটি হেডিংয়ের ক্ষেত্রে মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে; বিশেষ করে চকোলেট, কসমেটিকস, লিপস্টিক, ফেসক্রিম, ওভেন ইত্যাদি পণ্যে।
কাস্টমস আইন সংশোধন
কাস্টমস আইন ২০২৩-এ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেমন-ডি মিনিমিস সীমা ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা; বিলম্বে শুল্ক পরিশোধে বার্ষিক ১০ শতাংশ সুদের পরিবর্তে মাসিক ১ শতাংশ সুদ; মিথ্যা ঘোষণায় শাস্তির সীমা নির্ধারণে ৪ হাজার টাকার বেশি কর পরিহার হলে তবেই নোটিশ; কাস্টমস কর্মকর্তার দায়িত্ব বণ্টনে কমিশনারের ক্ষমতা বৃদ্ধি; কার্গো ঘোষণায় জরিমানার ন্যূনতম সীমা বিলোপ।
রেয়াতি সুবিধা ও নতুন প্রজ্ঞাপন
কৃষি ও খাদ্য খাতে কোল্ড স্টোরেজ যন্ত্রপাতি আমদানিতে মাত্র ১ শতাংশ শুল্ক; কম্বাইন হারভেস্টার তৈরির যন্ত্রাংশে রেয়াতি সুবিধা; নিউট্রালাইজড সয়াবিন অয়েল আমদানিতে সিডি প্রত্যাহার; গবাদিপশুর খাদ্য উপাদান ক্যালসিড প্রোম্যাক্স তৈরির কাঁচামালে সম্পূর্ণ শুল্ক ছাড়।
মূলধনি যন্ত্রপাতি
নতুন প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আমদানি শুল্ক ১ শতাংশ সীমিত রেখে বাকি শুল্ক মওকুফ করা হয়েছে।
ফার্মাসিউটিক্যালস ও স্বাস্থ্য খাত
ক্যানসার প্রতিরোধী ও এপিআই পণ্যের ৩৬টি কেমিক্যালে শুল্ক, ভ্যাট ও রেগুলেটরি ডিউটি মওকুফ করা হয়েছে। ৫০ শয্যার বেশি হাসপাতালের যন্ত্রপাতিতে মাত্র ১ শতাংশ শুল্ক রাখা হয়।
অন্যান্য খাত
ম্যানমেড ফাইবার, ই-বাইক ও লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদন সরঞ্জামে রেয়াত; নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়। অ্যামিউজমেন্ট পার্ক সরঞ্জামে সিডি মাত্র ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
এইচ কোড বাতিল
১০৭টি ব্যবহারকারীভিত্তিক এইচএস কোড বাতিল করা হয়েছে। ফলে একই পণ্যে ভিন্ন কোডের অসামঞ্জস্যতা দূর হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য এসেছে।
ব্যক্তিগত যাত্রী ব্যাগেজ বিধিমালা সংশোধন
সাধারণ যাত্রীরা ৬৫ কেজি ব্যাগেজ, দুটি ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও নির্দিষ্ট ব্যক্তিগত সামগ্রী শুল্কমুক্ত আনতে পারবেন। বিএমইটি (BMET) কার্ডধারীরা বছরে দুটি নতুন মোবাইল ফোন আনতে পারবেন। ঘোষণা দিয়ে সর্বোচ্চ ১০ তোলা স্বর্ণের বার এবং ২০ তোলা রৌপ্যবার শুল্ক পরিশোধ করে আনা যাবে।
উল্লেখ্য, এই বাজেটে শুল্কনীতি ও কাস্টমস কাঠামোয় যে সংস্কার আনা হয়েছে, তা শিল্পায়ন, রফতানি বহুমুখীকরণ এবং রাজস্ব আদায়কে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই ভিত্তি দেবে বলে আশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, শুল্ক হ্রাসের প্রভাবে রাজস্ব ঘাটতি ও অভ্যন্তরীণ শিল্পে প্রতিযোগিতা নিয়ে আরও সতর্ক নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে।
এসএম
অর্থনীতি
১০ লাখ টাকার বেশি আমানত ও সঞ্চয়পত্রে রিটার্ন বাধ্যতামূলক

এখন থেকে ১০ লাখ টাকার বেশি মেয়াদি আমানত বা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ও ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণ গ্রহণের আগে বাধ্যতামূলকভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। সরকারের গেজেটের ভিত্তিতে তফসিলি সব ব্যাংককে এই নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে সরকার গেজেট জারি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনে সব ব্যাংককে এই নির্দেশনা পালনের জন্য চিঠি দিয়েছে। গেজেটে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি যদি ১০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের মেয়াদি আমানত খুলতে চান বা তা চালু রাখতে চান, তাহলে তাঁকে সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের আয়কর রিটার্নের প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। একইভাবে ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রেও একই শর্ত প্রযোজ্য হবে।
এ ছাড়া বড় অঙ্কের সঞ্চয়পত্র কেনা, কোনো কোম্পানির পরিচালক বা স্পনসর শেয়ারহোল্ডার হওয়া, আমদানি-রপ্তানি নিবন্ধন সনদ নবায়ন, ট্রেড লাইসেন্স বা পেশাজীবী লাইসেন্স নবায়ন, জমি বা ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ–সংযোগপ্রাপ্তিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া ড্রাগ লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, অগ্নিনির্বাপণ ছাড়পত্র, ট্রলার ও নৌযানের জরিপ সার্টিফিকেট এমনকি স্কুলে শিশুর ভর্তি কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স গ্রহণের মতো ক্ষেত্রেও রিটার্ন দাখিলের প্রয়োজন হবে। বলা হয়েছে, দ্বৈত কর পরিহার–সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির আলোকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে দেশীয় আইন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে।
সম্প্রতি এ–বিষয়ক একটি গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। সে অনুযায়ী, এসব আর্থিক লেনদেন ও কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। তা না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষ সেবা দিতে বাধ্য থাকবে না। এসব সেবা নিতে গিয়ে কেউ যদি রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র না দেখান, তাহলে সেবা দেবেন না সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যদি কোনো কারণে সেবা দেন, তাহলে এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান আছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, এতে সরকারের রাজস্ব আয়ে গতি বাড়লেও ব্যাংক আমানত ও সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, ১০ লাখ টাকার বেশি জমা করলেই রিটার্ন দিতে হবে।
অর্থনীতি
জুলাইয়ে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি যে ৮ ব্যাংকে

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের পুরো সময়ে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ১০ হাজার (প্রায় ২.৪৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাস করা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার ২৩৯ কোটি (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) টাকা।
তবে এসময়ে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি পুলিশের ব্যাংকসহ (কমিউনিটি ব্যাংক) আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের পুরো মাসে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা গত বছরের একই সময়ে (২০২৪ সালের জুলাই মাস) এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ে তুলনায় ৫৬ কোটি ৪১ লাখ ডলার বা প্রায় ৬ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা বেশি এসেছে।
এসময়ে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫৪ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ২২ কোটি ৯২ লাখ ২০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৬৮ কোটি ৯৭ লাখ ৬০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে এক কোটি ১৩ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স।
তবে আলোচিত সময়ে সময়ে আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব; বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে কমিউনিটি ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক; বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
অর্থনীতি
৭ ট্রিলিয়ন ডলারের হালাল অর্থনীতির সুযোগ নিতে চায় বাংলাদেশ: বিডা চেয়ারম্যান

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, হালাল অর্থনীতির সহায়ক পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশকে হালাল পণ্যের আঞ্চলিক হাব হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার বদ্ধপরিকর। ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক হালাল অর্থনীতিতে নিজেদের একটি প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে নিয়ে যেতে কাজ করছে সরকার।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘হালাল ইকোনমি ৩৬০ : ড্রাইভিং গ্লোবাল গ্রোথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই) এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে হালাল অর্থনীতির বিপুল সম্ভাবনা, টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে মালয়েশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বিশ্বব্যাপী ৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই খাত নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় করতে এতে অংশ নেন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিবর্গ, নীতিনির্ধারক ও বিশেষজ্ঞরা।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, বিশ্বজুড়ে অধিকাংশ হালাল পণ্যই অমুসলিম দেশগুলো উৎপাদন করে থাকে। এটি আমাদের মতো মুসলিম-প্রধান দেশের জন্য দুঃখজনক। তবে এ পরিস্থিতি আমাদের জন্য বড় একটি সুযোগও। সঠিক নীতিমালা ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ এ খাতে সাফল্যের সাথে নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে পারে।
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগ আকর্ষণ ও হালাল উৎপাদনের অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
তিনি সরকারি-বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে বলেন, হালাল অর্থনীতির পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এই অংশীদারিত্ব অপরিহার্য, যা উদ্ভাবন ও টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।
সেমিনারের শুরুতে বিএমসিসিআই সভাপতি সাব্বির এ খান অংশগ্রহণকারীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, হালাল অর্থনীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে।
তিনি বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্য ও সেবার চাহিদা বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশকে এই লাভজনক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সব অংশীজনকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
বিএমসিসিআই সভাপতি বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানির বাইরে বাংলাদেশ হালাল পণ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগানদাতা হয়ে উঠতে পারে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, সহজতর সনদ প্রক্রিয়া এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে শুধু মালয়েশিয়াতেই আমরা ৭-৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের হালাল পণ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হবো।
তিনি আরও জানান, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক হালাল খাদ্যবাজারের আকার ৩.৩০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে এবং ২০৩৪ সালের মধ্যে এটি ৯.৪৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে, যা ২০২৫ থেকে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির হার হবে ১২.৪২ শতাংশ।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার মোহাম্মদ শুহাদা ওসমান। তিনি বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দৃঢ়তার কথা তুলে ধরেন এবং হালাল অর্থনীতি গঠনে মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, এই সহযোগিতা উভয় দেশের জন্য উল্লেখযোগ্য সুফল বয়ে আনতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ব্যাপক ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া থেকে প্রায় ২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করলেও একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হয়েছে মাত্র ২৯৩.৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য।