অর্থনীতি
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ৭ ব্যাংকের সমঝোতা

সর্বজনীন পেনশন স্কিম কার্যক্রম বাস্তবায়নে আরও গতিশীলতা আনতে ৭টি ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, জনতা ব্যাংক পিএলসি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক পিএলসি, ডাচ বাংলা ব্যাংক পিএলসি, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি। বুধবার (৩ জুলাই) অর্থ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সাতটি ব্যাংকের সঙ্গে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ব্যাংকগুলোর ওই সমঝোতা সই হয়।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার। এ সময় ৭টি ব্যাংকের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও সিইওসহ অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, পেনশন কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসমূহের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও সিইও সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে ৭টি ব্যাংক সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বিভিন্ন স্কিমে জনগণকে নিবন্ধন কাজে সহায়তাসহ নিবন্ধনকারীর সাবস্ক্রিপশন গ্রহণ করবে। যেকোনো নিবন্ধনকারী এই ৭টি ব্যাংকের শাখাসমূহের কাউন্টারে সাবস্ক্রিপশন জমা দিতে পারবে। এছাড়াও ব্যাংকসমূহের গ্রাহকগণকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের জন্য শাখা ব্যবস্থাপকগণ সহায়তা প্রদান করবেন।
এসব ব্যাংকের নির্ধারিত অ্যাপ ব্যাবহার করেও গ্রাহকরা রেজিস্ট্রেশন ও অনলাইনে পেমেন্ট করতে পারবেন। উল্লিখিত ব্যাংকগুলোর শাখাসমূহ জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ফ্রন্ট অফিস হিসেবে কাজ করবে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে সাবস্ক্রিপশন প্রদান আরও সহজতর করার লক্ষ্যে এ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
এর আগে সোনালী ব্যাংক পিএলসি, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি, ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি ও সিটি ব্যাংক পিএলসির সঙ্গে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয় বলে জানা গেছে।
এমআই

অর্থনীতি
ব্যাংক খাতে কমেছে কোটিপতি গ্রাহকের সংখ্যা

দেশের ব্যাংক খাতে কোটি টাকার বেশি আমানত থাকা গ্রাহকের সংখ্যা কমে গেছে। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে কোটি টাকার বেশি আমানত থাকা গ্রাহকের সংখ্যা ছিল এক লাখ ২২ হাজার ৮১টি। চলতি বছরের মার্চ শেষে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৩৬২টিতে। অর্থাৎ, তিন মাসে ৭১৯টি হিসাব কমেছে।
কোটি টাকার গ্রাহকের সংখ্যা কমার কারণ হিসেবে ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ ধরনের পরিবর্তনের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। বিশেষ করে, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে কিছু বিত্তশালী ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করা হচ্ছে। এর মধ্যে সাবেক এমপি, মন্ত্রী এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবও অন্তর্ভুক্ত। এ কারণে অনেক বড় আমানতকারী গ্রাহক তাদের অর্থ সরিয়ে নিচ্ছেন।
এ ছাড়া বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠানও তাদের ব্যাংক হিসাব কমিয়ে দিচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে প্রতিষ্ঠানের হিসাব সংখ্যা বেড়ে গেলেও এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একাধিক অ্যাকাউন্ট থাকার কারণে একক হিসাবের সংখ্যা কমতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাব আছে। পাশাপাশি অনেক সরকারি সংস্থারও কোটি টাকার হিসাব রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, কোটি টাকার হিসাবধারী গ্রাহকের সংখ্যা কমলেও এসব অ্যাকাউন্টে জমা টাকার পরিমাণ বেড়েছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে এসব অ্যাকাউন্টে জমা ছিল ৭ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বছরের মার্চ শেষে বেড়ে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা।
এ ছাড়া আলোচিত সময় ব্যাংক খাতে মোট হিসাবের সংখ্যা ও জমার পরিমাণ দুটোই বেড়েছে।
ব্যাংক খাতে মোট অ্যাকাউন্টের (হিসাব) সংখ্যা ১৬ কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩২টি। এসব হিসাবে মোট আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের মার্চ শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট অ্যাকাউন্টের (হিসাব) সংখ্যা ১৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬ হাজার ৮২১টি। এসব হিসাবে মোট আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা।
গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট হিসাব ছিল ১৬ কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩২টি। এসব হিসাবে মোট আমানতের স্থিতি ছিল ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪ জন, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি।
২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে কোটি টাকা আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর বেড়ে তা দাঁড়ায় ১ লাখ ১৯৭৬টিতে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই হিসাবের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়ায় এক লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টিতে। গত বছরের জুনে এমন হিসাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪টিতে, সেপ্টেম্বরে এক লাখ ১৭ হাজার ১২৭টিতে এবং ডিসেম্বরে বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ২২ হাজার ৮১টিতে।
অর্থনীতি
প্রবাসী আয়ের শীর্ষে ঢাকা, পিছিয়ে লালমনিরহাট

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে দুই হাজার ৭৫০ কোটি ৬৩ লাখ ডলার প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ঢাকা জেলায়, ৯২৬ কোটি ১৩ লাখ ডলার। আর সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে লালমনিরহাটে, মাত্র ২ কোটি ৪১ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয়ের তথ্য থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে বরাবরের মতো ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোয় প্রবাসী আয়ের প্রবাহ সবচেয়ে বেশি। আর রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে কম।
বিভাগভিত্তিক তথ্যে দেখা যায়, গত জুলাই-মে সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা বিভাগে, যা মোট রেমিট্যান্সের ৪৯ শতাংশ। এরপর রয়েছে চট্টগ্রামে ২৭ শতাংশ, সিলেটে ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ, খুলনায় ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ ও বরিশালে প্রায় ৩ শতাংশ। আর মোট রেমিট্যান্সের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছে দুই বিভাগে– রংপুরে ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং ময়মনসিংহে ২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে দেশে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা জেলায়। এরপর রয়েছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট ও নোয়াখালী জেলার অবস্থান। জুলাই-মে সময়ে ঢাকা জেলায় ২১৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার, চট্টগ্রাম জেলায় ২২৫ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। এ ছাড়া কুমিল্লায় ১৪৪ কোটি, সিলেটে ১২৫ কোটি ও নোয়াখালী জেলায় ৮৩ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে।
কম রেমিট্যান্সের আসছে যেসব জেলায়
চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে প্রবাসী আয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে লালমনিরহাট জেলা। এই জেলায় আলোচিত সময়ে প্রবাসী আয় এসেছে মাত্র দুই কোটি ৪১ লাখ ডলার। প্রবাসী আয় কম আসার তালিকায় অপর চারটি জেলা হলো– রাঙামাটি, বান্দরবান, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও। রাঙামাটিতে দুই কোটি ৪৬ লাখ, বান্দরবানে দুই কোটি ৪৮ লাখ ডলার, পঞ্চগড়ে ৩ কোটি ও ঠাকুরগাঁওয়ে ৩ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে এবং আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বরে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ডলার এবং মে মাসে ২৯৭ কোটি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। অর্থাৎ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর টানা ৮ মাসে দুই বিলিয়ন এবং মার্চে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে।
অর্থনীতি
সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না চামড়া, হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

রাজধানীতে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না কাঁচা চামড়া। প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকায় কোরবানির গরুর কাঁচা চামড়া মানভেদে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ ঢাকায় সর্বনিম্ন কাঁচা চামড়ার দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। এ ছাড়া বরাবরের মতো ছাগলের চামড়ায় আগ্রহ নেই ব্যাপারিদের।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, সায়েন্সল্যাব ও পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকায় ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, এ বছর বেশির ভাগ গরুর কাঁচা চামড়া ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। ছোট চামড়ার দাম ৬০০ টাকা পর্যন্ত উঠছে। গত বছরও গরুর কাঁচা চামড়ার এ রকম দাম ছিল। এ ছাড়া এবার ছাগলের চামড়া প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা, যা গতবারও একই রকম ছিল।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার। সেখানে গরু-ছাগলসহ কোরবানির জন্য প্রস্তুত ছিল প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার পশু। চলতি বছর কোরবানির ঈদের মৌসুমে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ট্যানারিমালিকেরা।
গত ২৬ মে কোরবানির পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৬০-৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫-৬০ টাকা। ঢাকার বাইরের গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। এ ছাড়া ঢাকায় সর্বনিম্ন কাঁচা চামড়ার দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর ঢাকার বাইরে সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২২ থেকে ২৭ টাকা ও বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তার আড়তগুলো কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্যতম বড় জায়গা। আজ বিকেল চারটার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রিকশা, ভ্যান ও ট্রাকে করে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও মাদ্রাসার কর্মকর্তারা চামড়া নিয়ে আসছেন। আড়তদারেরা দরদাম করে চামড়া কিনছেন। এ ছাড়া পাইকারি ব্যবসায়ীরা সড়কের ওপর চেয়ার নিয়ে বসে চামড়া কিনছেন।
একাধিক আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, একেকটি গরুর চামড়া ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় কিনছেন। মাঝারি আকারের গরু কোরবানি হয় বেশি। সেই চামড়া তাঁরা কিনছেন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে।
পোস্তায় শহীদুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে চামড়া কিনছিলেন। বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত শতাধিক চামড়া কিনেছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা না বুঝে বেশি দামে চামড়া কিনে নিয়ে আসেন। তবে বাজার ভালো নয়। তিনি জানান, ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় চামড়া কিনছেন তাঁরা।
চামড়া কেনায় তদারকি করছিলেন সুমন অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী মো. শরীফ। তিনি জানান, প্রতিটি গরুর চামড়া ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় কিনছেন। তাঁর ভাষ্য, একেকটি চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে লবণ ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ খরচ পড়ে যাবে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। বাজার মন্দা, সে জন্য গতবারের চেয়ে কিছুটা কমে কিনছেন।
বিকেলে রাজধানীর কলাবাগান এলাকা থেকে গরুর ১৩টি কাঁচা চামড়া বিক্রির জন্য সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় নিয়ে আসেন মৌসুমি ব্যবসায়ী কাউছার আহমেদ। কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে এসব চামড়া তিনি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে কিনে আনেন এবং বিক্রির জন্য দাম হাঁকেন ১ হাজার ২০০ টাকা করে। কিন্তু কোনো আড়তদার বা ট্যানারি প্রতিষ্ঠান ৭৫০ টাকার ওপরে দাম দিতে চায়নি। শেষ পর্যন্ত ৭৫০ টাকা দরেই সবগুলো চামড়া বিক্রি করেন তিনি।
কাউছার আহমেদ বলেন, যে আকারের চামড়া বিক্রির জন্য তিনি নিয়ে এসেছিলেন, সেগুলোর দাম হওয়া উচিত অন্তত ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। কিন্তু একপ্রকার লোকসান করেই চামড়া বিক্রি করতে হলো। সারা দিনের ভ্যান ভাড়া ও একজন সহকারীর মজুরি দিয়ে তাঁর কাছে আর কিছু থাকবে না।
সায়েন্স ল্যাব এলাকাতেই মৌসুমি বিক্রেতাদের কাছ থেকে চামড়া কিনে রাখছিলেন কালাম ব্রাদার্স ট্যানারির পরিচালক সাজেদুল খায়ের। চলতি বছর এই ট্যানারিটির এক দেড় লাখ লবণযুক্ত চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য আছে। পাশাপাশি কোরবানি ঈদের দুই দিনে তারা অন্তত ১০ হাজারের মতো কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করবে।
সাজেদুল খায়ের বলেন, আজকে মৌসুমি বিক্রেতাদের কাছ থেকে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকার মধ্যে বেশির ভাগ গরুর চামড়া কিনেছেন। তাঁদের হিসাবে, গত বছরের তুলনায় প্রতিটি গরুর চামড়ায় ৩০ থেকে ৫০ টাকা বাড়তি দাম পাওয়া যাচ্ছে।
খুব বড় আকারের চামড়া দেড় হাজার টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা গেছে। যেমন রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকায় আজ দুপুরে চামড়া কিনছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সকাল থেকে তিনি ৬০টির বেশি চামড়া কিনেছেন। ৩২ লাখ টাকায় কেনা দুটি গরুর চামড়া তিনি মোট তিন হাজার টাকা দিয়ে কিনেছেন। অর্থাৎ প্রতিটির দাম পড়েছে দেড় হাজার টাকা।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, এ বছর ছোট গরুর চামড়া বেশি। তবে সার্বিকভাবে চামড়ার সরবরাহ ভালো। তাঁদের হিসাবে, গত বছরের তুলনায় প্রতিটি চামড়ায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দাম রয়েছে। তিনি জানান, চলতি বছর ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো পাঁচ থেকে ছয় লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছে। মূলত কাঁচা চামড়ার দাম তথা বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি কাঁচা চামড়া কিনে থাকে।
অর্থনীতি
ঈদযাত্রার ৬ দিনে যমুনা সেতুতে ১৯ কোটির বেশি টাকা টোল আদায়

ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে ১ থেকে ৬ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত ছয় দিনে যমুনা সেতু দিয়ে ২ লাখ ৫৫ হাজার ২২০টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ১৯ কোটি ২৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫০ টাকা।
যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, গত রবিবার (১ জুন) যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে ২৭ হাজার ১৭৩টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৫৯ লাখ ২৭ হাজার ৮৫০ টাকা।
এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ১৩ হাজার ৮৬৮টি যানবাহন পারাপার হয়। টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ২০০ টাকা। অপর দিকে ঢাকাগামী ১৩ হাজার ৫টি যানবাহন পারাপার হয়। এর বিপরীত টোল আদায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ২০০ টাকা।
গত সোমবার (২ জুন) যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে ৩০ হাজার ১৬৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৭৫ লাখ ৪৫ হাজার ৮৫০ টাকা। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ১৫ হাজার ৩৯৮টি যানবাহন পারাপার হয়। টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ১৩ হাজার টাকা।
অপরদিকে ঢাকাগামী ১৪ হাজার ৭৬৯টি যানবাহন পারাপার হয়। বিপরীত টোল আদায় এক কোটি ৩৮ লাখ ৩২ হাজার ৪০০ টাকা।
গত মঙ্গলবার (৩ জুন) সেতুর ওপর দিয়ে ৩৩ হাজার ৫৬৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ১৭ হাজার ৬৫৭টি যানবাহন পারাপার হয়। টোল আদায় হয় ১ কোটি ৪৪ লাখ ৮২ হাজার ৮৫০ টাকা।
অপর দিকে ঢাকাগামী ১৫ হাজার ৯০৭টি যানবাহন পারাপার হয়। এর বিপরীত টোল আদায় ১ কোটি ৪১ লাখ ৮১ হাজার ৫০ টাকা।
গত বুধবার (৪ জুন) সেতু দিয়ে ৫১ হাজার ৮৪৯টি যানবাহন পারাপার হয়। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ৩০ হাজার ৮৪৫টি যানবাহন পারাপার হয়। টোল আদায় হয় ১ কোটি ৮৪ লাখ ৯৭ হাজার ৩৫০ টাকা। অপর দিকে ঢাকাগামী ২১ হাজার ৪টি যানবাহন পারাপার হয়। বিপরীত টোল আদায় ১ কোটি ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৬৫০ টাকা। গত বৃহস্পতিবার (৫ জুন) যমুনা সেতু দিয়ে যানবাহন ও টোল আদায়ে নতুন রেকর্ড করে যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ। এদিন সেতু দিয়ে ঈদযাত্রায় ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের ৬৪ হাজার ২৮৩টি যানবাহন পারাপার হওয়ায় এ রেকর্ডের সৃষ্টি হয়। যা যমুনা সেতু চালু হওয়ার সর্বোচ্চ সংখ্যক যানবাহন পারাপার করে নতুন রেকর্ড গড়ল। ছোট-বড় বিপুলসংখ্যক গাড়ি পারাপার হওয়ায় এদিন ৪ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ৯৫০ টাকার টোল আদায় করেছে করেছে কর্তৃপক্ষ। এর ফলে সেতু চালু হওয়ার পরে একদিনে সর্বোচ্চ টোল আদায় হয়।
গতকাল শুক্রবার (৬ জুন) সেতু দিয়ে ৪৮ হাজার ১৮৪টি যানবাহন পারাপার হয়। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ৩৩ হাজার ৮৫৪টি যানবাহন পারাপার হয়। টোল আদায় হয় ২ কোটি ৩৩ লাখ ৮০ হাজার ১৫০ টাকা। অপর দিকে ঢাকাগামী ১৪ হাজার ৩৩০টি যানবাহন পারাপার হয়। বিপরীত টোল আদায় হয় ১ কোটি ৯ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকা।
প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, অতিরিক্ত গাড়ির চাপ ও সেতুর ওপর গাড়ি বিকল হওয়ায় টোল আদায়ে বিঘ্ন ঘটে। যার ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। এইজন্য বেশ কয়েক দফায় টোল আদায় বন্ধ ছিল। ঈদযাত্রায় উভয় পাশেই ৯টি করে বুথ দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা দুটি করে বুথ করা হয়। মহাসড়ক এখন স্বাভাবিক আছে। স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন গন্তব্য যাচ্ছে।
অর্থনীতি
এবার ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহ করতে চান ট্যানারিমালিকেরা

চলতি বছর কোরবানির ঈদের মৌসুমে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ট্যানারিমালিকেরা। তাঁরা আশা করছেন, ঠিকভাবে চামড়া ছাড়ানো ও লবণজাত করা হলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।
সাধারণত কোরবানির মৌসুমেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পশু জবাই করা হয়। ফলে চামড়ার পরিমাণও অনেক বেশি হয়। সারা বছর যে পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ করা হয়, তার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ আসে এ মৌসুমে।
কোরবানি ঈদের দিন সকাল থেকেই চামড়া সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়। পশু কোরবানির পর বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে চামড়া সংগ্রহ করেন স্থানীয় মৌসুমি ব্যবসায়ী ও মাদ্রাসা–এতিমখানার শিক্ষার্থীরা। তাঁরা এসব চামড়া নিয়ে ট্যানারিমালিক বা চামড়া লবণজাতকারী ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। এভাবে লবণ দেওয়া চামড়া শেষ পর্যন্ত ট্যানারিতে পৌঁছায়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার। সেখানে গরু-ছাগলসহ কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার পশু।
রাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তা এলাকার চামড়ার আড়তগুলো কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্যতম বড় জায়গা। কোরবানির ঈদের দিন সকাল থেকেই চামড়া সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করেন পোস্তার আড়তদারেরা। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনেন তাঁরা। এরপর তা আড়তে এনে লবণ দেন। ঈদের তৃতীয় দিন পর্যন্ত চলে চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণের এ কার্যক্রম।
পোস্তা এলাকায় বর্তমানে ৩৫টির মতো কাঁচা চামড়ার আড়ত রয়েছে। পোস্তার পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির আগে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা। আড়তগুলো ধুয়েমুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন কর্মীরা; আবার আড়তে থাকা পুরোনো চামড়া পাঠিয়ে দিচ্ছেন ট্যানারি ও গোডাউনে। এ ছাড়া নতুন চামড়ায় লবণ দিতে আগেভাগেই অনেকে লবণ কিনে রেখেছেন।
এর বাইরে সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়াশিল্প নগর–সংলগ্ন এলাকায় চামড়া সংগ্রহের প্রায় ১০০টি আড়ত রয়েছে। গত কয়েক বছরে এসব আড়ত গড়ে উঠেছে। পোস্তা এলাকা থেকেও অনেকে সেখানে গেছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে এটিই এখন চামড়া সংগ্রহের বড় জায়গা। পোস্তার মতো সেখানেও চামড়া সংগ্রহ করা হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কোরবানির চামড়া নষ্ট হয়। ট্যানারিমালিকদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) জানিয়েছে, গত বছর কোরবানির ঈদের প্রথম দুই দিনে সংরক্ষণের অভাবে সারা দেশে প্রায় পাঁচ লাখ কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়েছিল।
মূলত ঢাকার বাইরের জেলাগুলোয় চামড়ার দাম একটু কম থাকে। তাই অনেকে বেশি দামের আশায় রাজধানীতে কাঁচা চামড়া নিয়ে আসেন। এতে অনেক সময় চামড়ার গুণগত মান কমে যায় বা নষ্ট হয়। এ জন্য নিকটস্থ এলাকাতেই চামড়া বিক্রি ও লবণজাতের পরামর্শ দেন ব্যবসায়ীরা।