জাতীয়
হলি আর্টিজান হামলার ৮ বছর আজ

দেশের ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস ঘটনা হলো হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলা। ২০১৬ সালের ১ জুলাই (শুক্রবার)। রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে খবর পাওয়া যায় রাজধানীর গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ‘সন্ত্রাসীদের সঙ্গে’ পুলিশের গোলাগুলি হচ্ছে। সশস্ত্র হামলাকারী এক রেস্টুরেন্টে ঢুকে বিদেশী নাগরিকসহ বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করেছে। ভয়াবহ এ হামলায় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ এবং প্রায় ১২ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস জিম্মি সংকটের ঘটনায় স্তম্ভিত করেছিল পুরো জাতিকে।
ওই দিনের হামলায় মোট ২২ জন নিহত হন। এর মধ্যে ২ পুলিশ কর্মকর্তা ও ১৭ বিদেশি নাগরিক ছিল। ওই দিন পুরো রাত স্পর্শকাতর বিবেচনায় কয়েকবার প্রস্তুতি নেয়া সত্ত্বেও অভিযান চালোনো থেকে বিরত থাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
হলি আর্টিজানে হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ফোর্সসহ প্রথমে পৌঁছান গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার দাস।
মামলার এজাহারে ঘটনার বিবরণীতে তিনি উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন গুলশান থানার রোড নম্বর-৭১ থেকে ৯২ এবং এর আশপাশ এলাকায় পেট্রোল ডিউটির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। রাত আনুমানিক পৌনে ৯টার দিকে ওয়্যারলেসে ভেসে আসে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বেকারিতে গুলির খবর। খবর পেয়েই ফোর্সসহ রাত আনুমানিক ৮টা ৫০ মিনিটে ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছান এসআই রিপন।
হলি আর্টিজানের কাছে উপস্থিত হয়ে তারা দেখতে পান, রেস্টুরেন্টের ভেতরে কতিপয় সন্ত্রাসীরা ‘আল্লাহ্ আকবর’ ধ্বনি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করছে।
পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ ও এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। আত্মরক্ষার্থে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালায়। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীদের নিক্ষিপ্ত গুলি ও গ্রেনেডের আঘাতে এসআই ফারুক হোসেন ও কনস্টেবল প্রদীপ চন্দ্র দাস ও আলমগীর হোসেন গুরুতর আহত হন। আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং এসআই রিপন কুমার দাস বিষয়টি তাৎক্ষণিক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।
যার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়াসহ ডিএমপির বিভিন্ন ইউনিটের অফিসার ও ফোর্স ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হয়। এরপর পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হলি আর্টিজানের বেকারির চারপাশে কর্ডন করে ফেলে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সন্ত্রাসীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে অনবরত গ্রেনেড ও গুলি করতে থাকে।
এ অবস্থায় রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে সন্ত্রাসীরা হলি আর্টিজানের বেকারির পশ্চিম দিকের বাড়ির সামনে অবস্থানরত পুলিশ অফিসার ও ফোর্সদের লক্ষ্য করে গ্রেনেড নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে অন্তত ৩০-৩৫ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য আহত হন, কেউ কেউ মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হয়।
সে সময় চারদিকে ঘিরে থাকা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-পুলিশসহ অন্য বাহিনীর সদস্যরা দৌড়ে নিরাপদ দূরত্বে যান। আহতদের সবাইকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১টা ২০ মিনিটে বনানী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাহউদ্দিন খান মৃত্যুবরণ করেন। এর কিছুক্ষণ পরই ডিবির সহকারী কমিশনার (এসি) মো. রবিউল করিমের মৃত্যু হয়।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে রাতেই সিদ্ধান্ত হয় পরের দিন ২ জুলাই ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনা করা হবে। এ অভিযানের মধ্য দিয়েই জিম্মিদশার অবসান ঘটান যৌথ সেনা, নৌ, পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ কমান্ডো দল। নিহত হয় ৬ জঙ্গি, আহত অবস্থায় ধরা পড়ে একজন।
রাত দেড়টায় ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠী তাদের বার্তা সংস্থা বলে পরিচিত ‘আমাক’ এ হামলার দায় স্বীকার করে ২০জন নিহত হবার কথা জানায়। আইএস এর পক্ষ থেকে হামলাকারীদের মধ্যে পাঁচজনকে তাদের ‘সৈনিক’ বলে দাবি করে, হামলার দায় নেয় তারা।
২০১৬ সালের ২ জুলাই ভোর ৭টা ৩৫ মিনিটে গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট অভিযানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয় যৌথ কমান্ডো দল। ৭টা ৪৫ মিনিটে কমান্ডো বাহিনী অভিযান শুরু করে। অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত দলের সদস্যরা রেস্টুরেন্টের ভেতরে প্রবেশ করে। এসময় গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। সকাল সোয়া ৮টায় রেস্টুরেন্ট থেকে প্রথম দফায় নারী ও শিশুসহ ৬ জনকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। পাশের একটি ভবন থেকে একজন বিদেশী নাগরিক তার মোবাইল ফোনে সেটি ধারণ করেন। ৮টা ৫৫ মিনিটে ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় অভিযানকারীরা। গোয়েন্দা দল ভবনের ভেতর বিস্ফোরকের জন্য তল্লাশি শুরু করে। কিছুক্ষণ পরই আলামত সংগ্রহের কাজ শুরু করে গোয়েন্দারা। ৯টা ১৫ মিনিটে অভিযান শেষ হয়। কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে প্রায় ১২ ঘণ্টার রক্তাক্ত জিম্মি সংকটের অবসান হয়।
সকাল ১০টায় ৪ জন বিদেশীসহ ১৩ জন জীবিত উদ্ধারের খবর জানানো হয়। রেস্টুরেন্টের ভেতরে অজ্ঞাত পাঁচজনের মৃতদেহ পাবার কথা পুলিশ জানায়। ১১টা ৫০ মিনিটে অভিযানে জঙ্গিদের ৫ জন নিহত হয় বলে নিশ্চিত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অভিযানে নিহত জঙ্গিরা হলেন- মীর সামিহ মোবাশ্বের (১৯), রোহান ইমতিয়াজ (২০), নিরবাস ইসলাম (২০), খায়রুল ইসলাম পায়েল (২২), শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওরফে বিকাশ (২৬)।
পরে জিম্মি থাকাবস্থায় সন্ত্রাসী কর্তৃক নৃশংসভাবে নিহত হওয়া ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে নয়জন ইতালির নাগরিক, সাতজন জাপানের, একজন ভারতের ও তিনজন বাংলাদেশি।
উদ্ধার জিম্মিদের বয়ান অনুযায়ী তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, জঙ্গিরা হামলার প্রথম ২০ মিনিটেই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায়। তারা দেশি-বিদেশিদের গুলি করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে-গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। হত্যার পর ছবি তুলে অ্যাপের মাধ্যমে বাইরে অবস্থানরত নব্য জেএমবির নেতা তামিম চৌধুরী ও মারজানের কাছে পাঠায় তারা। জঙ্গিরা এতটাই নিষ্ঠুর ছিল যে, লাশের সারি মেঝেতে রেখেই খাবার খায়।

জাতীয়
সীমানা পুনর্নির্ধারণে ৫ অঞ্চলের শুনানি আজ

সীমানা পুনর্নির্ধারণের শেষ দিন আজ। এদিন রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও সিলেট অঞ্চলের দাবি-আপত্তির শুনানি করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বুধবার (২৭ আগস্ট) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে সকাল ১০টায় এ শুনানি শুরু হবে।
এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পঞ্চগড়-১, ২, রংপুর-১, কুড়িগ্রাম-৪, সিরাজগঞ্জ-২, ৫, ৬, পাবনা-১; আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টাঙ্গাইল-৬, জামালপুর-২, কিশোরগঞ্জ-১, সিলেট-১, ফরিদপুর- ১, ৪, মাদারীপুর-২, ৩, শরীয়তপুর-২ ও ৩ আসনের শুনানি হবে।
গত ১০ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৮৩টি আসনের সীমানা নিয়ে এক হাজার ৭৬০টি দাবি আপত্তি জমা পড়ে ইসিতে। এগুলোর দাবি আপত্তি নিষ্পত্তিতে গত রোববার থেকে শুনানি শুরু করেছে ইসি। যা শেষ হচ্ছে আজ।
শুনানি শেষে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত রোববার ২৩ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের শুনানি। যা আজ শেষ হচ্ছে। এরপর শুনানি পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সীমানা তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।
জাতীয়
রাজধানীর সব বাস চলবে একক ব্যবস্থায়: প্রেস উইং

ঢাকায় চলাচলকারী সব বাস একক একটি ব্যবস্থার অধীনে চলবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দিনগত রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি বিবৃতিতে এ বিষয়ে জানানো হয়।
সেখানে বলা হয়, ঢাকার বাস পরিবহন দীর্ঘদিন ধরে কোনো নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই চলছে। এর ফলে যাত্রীরা প্রতিদিন জ্যাম, দুর্ঘটনা, ভাড়ায় প্রতারণা ও নানা ভোগান্তির শিকার হন। যেসব যাত্রী তরুণ এবং শারীরিকভাবে সক্ষম, তারা কোনোরকমে বাসে উঠতে পারেন, কিন্তু নারী, শিশু এবং বয়স্কদের জন্য এটি অনেক কঠিন হয়।
ঢাকার যানজটের একটি বড় কারণ অকার্যকর রুটে চলা বাস। এ কারণে বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে এবং প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।
প্রেস উইং জানায়, সব বাস একক একটি ব্যবস্থার অধীনে চলবে। কোম্পানিগুলোকে নির্ধারিত রুট ও স্টপেজ মেনে চলতে হবে। এর ফলে রুট শৃঙ্খলা ও ভালোভাবে পরিচালিত বাস সার্ভিসের মাধ্যমে সার্বিক যানজট, ভাড়ায় প্রতারণা এবং বিশৃঙ্খলা কমবে।
যাত্রীদের জন্য নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্য বাড়বে, এবং গণপরিবহন হবে আরও কার্যকর।
আরও জানানো হয়, রাজধানীতে বাসে চলাচলের সময় যাত্রীদের আর বাসে উঠতে লড়াই করতে হবে না বা ভাড়ায় প্রতারণার শিকার হতে হবে না। ঢাকার লাখ লাখ মানুষের জন্য বাসযাত্রা হবে সহজ, দ্রুত এবং স্বাচ্ছন্দ্যময়।
জাতীয়
প্রাথমিকের দুই শ্রেণির জন্য ১৮৭ কোটি টাকার বই ছাপাবে সরকার

আগামী ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির জন্য প্রায় ৩ কোটি ৬৩ লাখ পাঠ্যপুস্তক সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ (কাগজসহ), বাঁধাই ও সরবরাহে ১৮৭ কোটি ১১ লাখ ৭ হাজার ২০৮ টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
মঙ্গলবার (২৬ অগস্ট) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিদেশ থেকে এ বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগদান করেন অর্থ উপদেষ্টা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে বৈঠকে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক স্তরের (চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির) ৯৮টি লটের মধ্যে ৯৪টি লটের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ (কাগজসহ), বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয় প্রস্তাব নিয়ে আসা হয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, ১৮৭ কোটি ১১ লাখ ৭ হাজার ২০৮ টাকা ব্যয়ে ৯৪টি লটের মোট ৩ কোটি ৬২ লাখ ৯১ হাজার ২০৭ কপি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ করা হবে।
সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকের পাশাপাশি অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ২০২৬ সালের বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক দরপত্রের মাধ্যমে মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ৮৩ (১) (ক) প্রয়োগ করে ক্রয় প্রক্রিয়ার সময় কমানোর নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গত ১২ আগস্ট অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে আগামী ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিতে ৪ কোটি ৪ লাখ ৪২ হাজার ৪৯১টি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ (কাগজসহ), বাঁধাই ও সরবরাহের সিদ্ধান্ত হয়। এতে ২০০ কোটি ৯১ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮০ টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়।
জাতীয়
সাদাপাথর লুটের নেতাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে: ডিসি সারওয়ার

পাথর উত্তোলনে কয়েক হাজার লোকজন জড়িত ছিল। তবে যারা সাদাপাথর লুটপাটে নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম।
লুট করা সাদাপাথর ফেরত দেওয়ার সময়সীমা শেষ হওয়ার পর মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে সাদাপাথর পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে সাদাপাথর ফেরত দিতে মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন সিলেটের নতুন জেলা প্রশাসক।
সারওয়ার আলম বলেন, পাথর পুনঃস্থাপনের পাশাপাশি আইনি কার্যক্রমও চলবে। যারা পাথর লুট করেছে তাদের অবশ্যই গ্রেপ্তার করা হবে। তবে যারা নিরীহ ও নিরপরাধ তারা যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে। আগে অপরাধীদের নাম প্রকাশ করা হলে তারা পালিয়ে যাবে। অবশ্যই প্রকৃত দোষীরা আইনের আওতায় আসবে।
ইতোমধ্যে ২৬ লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৬ লাখ ঘনফুট পাথর স্বেচ্ছায় জমা দিয়েছেন লোকজন। অবশিষ্ট প্রায় ১৯ লাখ ঘনফুট পাথর অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করার কথা জানান তিনি।
সাদাপাথর পুনঃস্থাপন প্রসঙ্গে সারওয়ার আলম বলেন, এটা অনেক কঠিন কাজ। এখন পর্যন্ত ১১ লাখ ঘনফুট পাথর প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে বাকি পাথরগুলো পুনঃস্থাপন করা হবে।
তিনি জানান, এ কাজে প্রতিদিন ৫০০ শ্রমিক, ৪০০ নৌকা, ৩০০-এর অধিক ট্রাক কাজ করছে। সব পাথর পুনঃস্থাপন করা গেলে সাদাপাথরের সৌন্দর্য অনেকটা ফিরে আসবে। তবে প্রাকৃতিকভাবে যেরকম পাথর বিছানো থাকে, ঠিক সেরকম তো পুনঃস্থাপন করা সম্ভব হবে না, তবুও আমরা চেষ্টা করছি।
কী পরিমাণ পাথর লুট হয়েছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে আমার ধারণা আরও অন্তত ৩০ শতাংশ লুট হওয়া পাথর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে বা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
লুটের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রিপোর্ট সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটিও কাজ করছে। তাদের রিপোর্ট দেওয়ার পর দুটি প্রতিবেদন নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা হবে।
কাফি
জাতীয়
জুলাই শহীদ পরিবারে অনুদানের টাকা বণ্টনে নতুন বিধিমালা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের এককালীন অনুদান ও মাসিক ভাতা বণ্টন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে নতুন বিধিমালা জারি করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। নতুন বিধি অনুযায়ী, আর্থিক সহায়তা শহীদদের স্বামী বা স্ত্রী, সন্তান এবং বাবা-মায়ের মধ্যে সমান তিন ভাগে বণ্টন করা হবে।
সরকারি সহায়তা নিয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রায়শই দ্বন্দ্ব ও ঝামেলা তৈরি হওয়ায় সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাইযোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন বিধিমালা, ২০২৫’ জারি করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সহায়তার অর্থ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। প্রাথমিকভাবে ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী অর্থ বণ্টন শুরু হলেও তা নিয়ে আপত্তি ওঠে। কারণ, অনুদান বা ভাতা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ নয়। এ কারণে একটি সুনির্দিষ্ট বিধিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের ‘জুলাই শহীদ’ এবং আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। শহীদ পরিবারকে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা এককালীন অনুদান দেওয়া হচ্ছে এবং মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাওয়ার কথা রয়েছে। এ পর্যন্ত ৮৪৪ জন শহীদের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে।
বিধিমালা অনুযায়ী, আর্থিক সহায়তা তিন ভাগে ভাগ হবে— এক-তৃতীয়াংশ শহীদের স্বামী বা স্ত্রী, এক-তৃতীয়াংশ সন্তান এবং বাকি এক-তৃতীয়াংশ বাবা-মা পাবেন। যদি কোনো একজন না থাকেন, তবে তার অংশ বাকিদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ হবে। অবিবাহিত শহীদের ক্ষেত্রে তার সহায়তার অর্থ বাবা-মায়ের মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত হবে।
এছাড়াও বিধিমালায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে:
ভাতার অবসান: শহীদ পরিবারের কোনো সদস্য মারা গেলে বা শহীদের স্বামী বা স্ত্রী পুনরায় বিবাহ করলে মাসিক ভাতার অংশের অবসান ঘটবে।
আহত জুলাই যোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা: অভ্যুত্থানের সময় আহত কোনো জুলাই যোদ্ধা যদি পরবর্তীতে মারা যান, তবে তাকেও শহীদ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং তার পরিবার শহীদ পরিবারের সব সুবিধা পাবে।
পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণ: জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর শহীদ পরিবারের সদস্য ও জুলাই যোদ্ধাদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেবে।
বিরোধ নিষ্পত্তি: আর্থিক সহায়তা বা পুনর্বাসন নিয়ে কোনো বিরোধ দেখা দিলে তা নিষ্পত্তির জন্য একটি সালিশ বোর্ড গঠন করা হবে। বোর্ডের সিদ্ধান্ত নিয়ে আপিল করার সুযোগও থাকবে, যেখানে মহাপরিচালকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।
চিকিৎসা সহায়তা: আহত জুলাই যোদ্ধারা সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাবেন।