অর্থনীতি
যেসব পরিবর্তন এনে অর্থবিল পাশ
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ, এমপিদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি কেনার সুবিধা বহাল ও ধনীদের সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ থেকে সরে আসাসহ বেশকিছু পরিবর্তন করে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য অর্থ বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।
শনিবার (২৯ জুন) স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে কণ্ঠভোটে পাস হয় বিলটি।
বিলটি পাসের আগে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য সংশোধনী আনেন। এরমধ্যে কিছু সংশোধনী অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গ্রহণ করেন। অন্যগুলো তিনি গ্রহণ করেননি। পরে সেগুলো কণ্ঠভোটে অনুমোদন করেন সংসদ সদস্যরা।
অর্থবিলে প্রস্তাবিত বাজেটে দেওয়া বেশ কিছু সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। যার মধ্য রয়েছে—
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ
২০২০-২১ অর্থবছরে ১০ শতাংশ কর পরিশোধ সাপেক্ষে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছিল সরকার। চার বছর পর এবার আবারও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলো। অর্থবিলে ওই সুযোগ রাখা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, দেশের প্রচলিত আইনে যাই থাক না কেন কোনো করদাতা স্থাবর সম্পত্তি যেমন- ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ও ভূমির জন্য নির্দিষ্ট করহারে এবং নগদসহ অন্যান্য পরিসম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করলে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। এর ফলে আগামীকাল ১ জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ কর প্রদানের মাধ্যমে ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যাচাই-বাছাই ছাড়াই কালো টাকা সাদা করতে পারবেন।
এমপিদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি কেনার সুবিধা বহাল
বর্তমানে সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করতে পারেন। বৈষম্য হ্রাসে এবারের বাজেটে এই সুবিধা বাতিল করে এমপিদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। গত ৬ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে সব প্রকার শুল্ক কর অব্যাহতি বিদ্যমান রয়েছে। কর অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা হ্রাস করে কেবল আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ এবং মূসক (মূল্য সংযোজন কর) ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে অন্যান্য সব শুল্ক-করাদির অব্যাহতি সুবিধা বহাল রাখার প্রস্তাব করছি। এজন্য বিদ্যমান প্রজ্ঞাপন বাতিল করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করার সুপারিশ করছি। কিন্তু আইনগত জটিলতা ও এমপিদের দাবির মুখে ওই প্রস্তাব থেকে সরে এসেছে সরকার। সংসদে পাস হওয়া অর্থবিল ২০২৪ অনুযায়ী, আগের মতোই শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করতে পারবেন সংসদ সদস্যরা।
ধনীদের সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশই থাকছে
ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছিল প্রস্তাবিত বাজেটে। শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে সরে এসে আগের মতো ২৫ শতাংশেই অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
কেবল ব্যক্তিগত একাধিক গাড়ি থাকলেই সারচার্জ
প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন কোম্পানির কাজে ব্যবহৃত একাধিক গাড়ির পরিবেশ সারচার্জ তুলে দিলেও শুধু ব্যক্তিগত গাড়িতে বহাল রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ১৫০০ সিসি বা ৭৫ কিলোওয়াট পর্যন্ত প্রতিটি মোটরগাড়ির জন্য পরিবেশ সারচার্জের হার ২৫ হাজার টাকা, ১৫০০ সিসি বা ৭৫ কিলোওয়াটের অধিক কিন্তু ২০০০ সিসি বা ১০০ কিলোওয়াটের অধিক নয় এমন প্রতিটি মোটরগাড়ির জন্য ৫০ হাজার, ২০০০ সিসি বা ১০০ কিলোওয়াটের অধিক কিন্তু ২৫০০ সিসি বা ১২৫ কিলোওয়াটের অধিক নয় এমন প্রতিটি মোটরগাড়ির জন্য ৭৫ হাজার, ২৫০০ সিসি বা ১২৫ কিলোওয়াটের অধিক কিন্তু ৩০০০ সিসি বা ১৫০ কিলোওয়াটের অধিক নয় এমন প্রতিটি মোটরগাড়ির জন্য দেড় লাখ টাকা, ৩০০০ সিসি বা ১৫০ কিলোওয়াটের অধিক কিন্তু ৩৫০০ সিসি বা ১৭৫ কিলোওয়াটের অধিক নয় এমন প্রতিটি মোটরগাড়ির জন্য দুই লাখ টাকা এবং এর চেয়েও বেশি সিসি বা কিলোওয়াট হলে অর্থাৎ সাড়ে তিন হাজার সিসি বা ১৭৫ কিলোওয়াটের অধিক প্রতিটি মোটরগাড়ির জন্য সাড়ে তিন লাখ টাকা সারচার্জ দিতে হবে।
সর্বজনীন পেনশনে করমুক্ত
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় পেনশন বাবদ যে কোনো আয় এবং পেনশন স্কিমে প্রদত্ত যে কোনো পরিমাণ চাঁদা করের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে অর্থবিলে। তবে কোম্পানি, তহবিল ও ট্রাস্ট কর্তৃক অর্জিত মূলধনি আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর বসছে। এর আগে প্রস্তাবিত বাজেটে শুধু ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই বিধান রাখা হয়েছিল।
কমিউনিটি সেন্টার ভাড়ায় কর শুধু সিটিতে
অর্থবিলে সারাদেশে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়ার ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়। এ প্রস্তাব সংশোধন করে শুধু সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানির মতো তহবিল ও ট্রাস্টের মূলধনি আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স বসানো হয়েছে।
বিলে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর অবকাশ সুবিধা বহাল
অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্কে মূলধনি যন্ত্র আমদানি শুল্কমুক্তই থাকছে। অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ১ শতাংশ শুল্কারোপের প্রস্তাব করেছিলেন। রপ্তানি ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর চেষ্টার অংশ হিসেবে সরকার দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলোতে বিনিয়োগে কর অবকাশ সুবিধার কথা জানিয়েছিল সরকার। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দাবির মুখে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে মূলধনী যন্ত্রপাতির ওপর ১ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব থেকে সরে এসেছে সরকার।
গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। সুখী সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার শিরোনামে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। এতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ ভাগ এবং মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
প্রভাবশালীদের জব্দ করা ব্যাংক হিসাবে ১৫ হাজার কোটি টাকা
ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার পতনের পর বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ৬ শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে। এসব অ্যাকাউন্টে জমা আছে ১৫ হাজার কোটি টাকা।
এ তালিকায় রয়েছেন আলোচিত এস আলম গ্রুপের মালিক, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, এমপি, সাংবাদিক, পুলিশসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এসব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এরই মধ্যে বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় তাদের অনেকের অ্যাকাউন্টের তথ্য দিয়েছে আর্থিক খাতের গোয়েন্দা সংস্থাটি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৬টি ব্যবসায়ী গ্রুপের অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়ে বিভিন্ন দেশে চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ। এর বাইরে ১১২ ঘটনায় ৩৬৬ ব্যক্তি ও ২০০ প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে বিএফআইইউ অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (তলব) করেছে। অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্যসহ প্রায় ২৫০টি তদন্ত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে সিআইডি এবং দুদকে। পর্যায়ক্রমে এসব সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে বলে জানায় বিএফআইইউ সূত্র।
আর্থিক খাতের গোয়েন্দা সংস্থাটির এক কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত ২০ ব্যবসায়ী গ্রুপের অর্থ পাচার, ঋণ জালিয়াতি, সরকারি তহবিল তছরুপসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চট্টগ্রামভিত্তিক আলোচিত এস আলম গ্রুপ এবং সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পরিবারের তদন্ত রিপোর্ট সিআইডি এবং দুদকে পাঠানো হয়েছে। বেক্সিমকো গ্রুপের তদন্ত রিপোর্ট পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করেছে বিএফআইইউ। এছাড়া সামিট, বসুন্ধরা, ওরিয়ন, সিকদার, নাসা, নাবিলসহ আরও ১৭টি ব্যবসায়ী গ্রুপের বিষয়ে চলছে তদন্ত। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শিগগির এসব রিপোর্ট সিআইডি ও দুদকে পাঠানো হবে।
যাদের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ, তার ৬ ভাইসহ পরিবারের ১৩ জন এবং তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. আকিজ উদ্দীন, বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও পুত্রবধূ শাজরেহ রহমান।
এছাড়া আছেন- সামিট গ্রুপের মোহাম্মদ আজিজ খান, সাবেক মন্ত্রী ফারুক খানসহ তাদের পরিবারের ১১ সদস্য, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পরিবারের ৮ সদস্য, ওরিয়ন গ্রুপের ওবায়দুল করিম পরিবারের ৬ জন, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ও তার স্ত্রী, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা সাহিদ এবং ছেলে রাহীব সাফওয়ান সরাফাত চৌধুরী, নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলামের পরিবারের ৬ জন, নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার স্ত্রী, প্রয়াত জয়নুল হক সিকদারের পরিবারে ১৪ জন।
হিবাস জব্দ করা হয়েছে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের। শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই), সিআরআই-ইয়ং বাংলা প্রজেক্ট এবং সাবেক মন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর পরিবারের ৭ জন, চাচাতো ভাই শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের পরিবারের ৯ জন, শেখ ফজলুল করিম সেলিমের পরিবারের ৫ জন এবং শেখ হেলাল উদ্দিন, তার স্ত্রী রূপা চৌধুরী ও ছেলে শেখ তন্ময়ের। এছাড়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের পরিবারের ৪ জন এবং এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (বরখাস্তকৃত) জিয়াউল আহসান ও তার স্ত্রী।
ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং তার স্ত্রী ইউসিবির সাবেক চেয়ারম্যান রুখমিলা জামানের। এছাড়াও রয়েছেন প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি ডা. এইচ বি এম ইকবাল, এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল, ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আদনান ইমাম ও সিএফও মো. জাফর ইকবাল হাওলাদার, এসবিএসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি আবু জাফর মোহাম্মদ শফি উদ্দিন, ইউনিয়ন ব্যাংকের সাবেক এমডি এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরী ও তার স্ত্রী নাজনিন আকতার, বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম পরিবারের ৮ জন এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি এলআর গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলাম ও তার সংশ্লিষ্ট ১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের।
রাজনীতিবিদদের মধ্যে রয়েছেন- জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পরিবারের ৫ জন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের পরিবারের ২ জন, আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু ও তার মেয়ে সুমাইয়া হোসেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পরিবারের ৪ জন, নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি শামীম ওসমানের পরিবারের ৪ জন, তার ভাই এ কে এম সেলিম ওসমানের পরিবারের ৫ জন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও তার স্ত্রী দেওয়ান আলেয়া, মাহবুবউল-আলম হানিফ ও তার স্ত্রী, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত আলী সিকদারের পরিবারের তিনজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
পাকিস্তান থেকে চাল আমদানি করবে সরকার
পাকিস্তান থেকে জি টু জি ভিত্তিতে আতপ চাল আমদানি করবে সরকার। এ লক্ষ্যে ট্রেডিং করপোরেশন অব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ খাদ্য অধিদপ্তরের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সচিবালয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ চুক্তি সই হয়।
ট্রেডিং করপোরেশন অব পাকিস্তানের চেয়ারম্যান সৈয়দ রাফিও বশির শাহ এবং খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল খালেক সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
দেশের চালের বাজার স্থিতিশীল, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী করতে এই সমঝোতা স্মারক এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ সময় খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান, পাকিস্তানের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সচিব শাকিল আহমেদ, হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফসহ উভয় পক্ষের সংশ্লিষ্ট ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ শোষণ-বঞ্চনার অবসানে ৯ মাসের রক্তাক্ত যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে ঠাঁই নেয় বাংলাদেশ। তারপর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়েই গড়িয়েছে।
গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের শাসনকালে সেই সম্পর্ক নাজুক হয়ে পড়েছিল। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। গত নভেম্বরে পাকিস্তানের করাচি থেকে পণ্যবাহী একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল। এটি ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের পর করাচি থেকে সরাসরি চট্টগ্রামে নোঙর করা প্রথম কোনো জাহাজ। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো দুই দেশের মধ্যে নৌপথে সরাসরি যোগাযোগ শুরু হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, পানামার পতাকাবাহী ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ নামের কনটেইনার জাহাজটি দুবাই থেকে করাচি হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে ১১ নভেম্বর। এতে ৩৭০ একক কনটেইনার পণ্য ছিল। এর মধ্যে পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে আনা হয়েছে ২৯৭ একক কনটেইনার। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা হয়েছে ৭৩ একক কনটেইনার। পরদিন জাহাজটি পণ্য খালাস করে ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে বন্দর ছেড়ে যায়।
শিপিং ও কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, জাহাজটিতে করে পাকিস্তান থেকে সবচেয়ে বেশি আনা হয়েছে টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত সোডিয়াম কার্বোনেট বা সোডা অ্যাশ। এছাড়া খনিজ পদার্থ ডলোমাইট, চুনাপাথর, ম্যাগনেশিয়াম কার্বোনেট, কাঁচশিল্পের কাঁচামাল ভাঙা কাঁচ, রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের কাঁচামাল কাপড় ও রং, গাড়ির যন্ত্রাংশ, পেঁয়াজ এবং আলু।
সরাসরি পাকিস্তান থেকে দ্বিতীয়বার জাহাজ আসে গত ২২ ডিসেম্বর। এই জাহাজে সবচেয়ে বেশি এসেছে পরিশোধিত চিনি। এর পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টন। পাশাপাশি ডলোমাইট, সোডা অ্যাশ, কাপড়ের রোল, আলু এবং আখের গুড়ও আনা হয়েছে।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
রেমিট্যান্স পাঠানো দেশের তালিকায় এখন শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ। ফলে রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশ হিসেবে টানা ৪ মাস ধরে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে পশ্চিমের এই দেশটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসের দেশ ভিত্তিক হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ডিসেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দেশটি থেকে এসেছে ৫৬ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে ৩৭ কোটি ৮৫ লাখ ডলার এবং সব সময় শীর্ষে থাকা সৌদি আরব নেমে এসেছে তৃতীয় অবস্থানে; দেশটি থেকে এসেছে ২৯ কোটি ডলার। এছাড়া প্রবাসী আয় প্রেরণের দিক থেকে শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় এরপরে রয়েছে যথাক্রমে মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, ওমান, কুয়েত, ইতালি, কাতার ও সিঙ্গাপুর।
হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে একাধিক ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী ও প্রবাসী আয় আহরণের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির নানামুখী কারণ থাকতে পারে। বড় কারণ হতে পারে- বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে ডলার কেনে। তবে ব্যাংকের কাছে বিক্রির সময় অনেক ক্ষেত্রে যে দেশের এক্সচেঞ্জ হাউস ওই দেশের রেমিট্যান্স হিসেবে বিক্রি করে। এছাড়া সম্প্রতি সময় ডলারের দাম বেড়েছে এটিও অন্যতম কারণ হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৯ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। এরপর সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৯ কোটি ডলারে। এক মাসের ব্যবধানে দেশটি থেকে প্রবাসী আয়ে ৩৪ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়। অক্টোবরে তা আরও বেড়ে ৫০ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয় ২৮ শতাংশের বেশি। নভেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫১ কোটি ১৯ লাখ ডলারে। সবশেষ ডিসেম্বর মাসে এসেছে ৫৬ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার যা আগের মাস নভেম্বরের চেয়ে ৫ কোটি ৩১ লাখ ডলার বেশি।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
১২ কেজি এলপিজির দাম বেড়ে ১৪৫৯ টাকা
লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ওপর আরোপিত মূল্য সংযোজন করের (মুসক) হার পরিবর্তনের ফলে জানুয়ারি মাসের জন্য এলপিজির নতুন মূল্য ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) এক বিজ্ঞপ্তিতে নতুন মূল্যের ঘোষণা দেওয়া হয়, যা আজ সন্ধ্যা থেকে কার্যকর হবে।
ঘোষণা অনুযায়ী, গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৫৯ টাকা, যা মাসের শুরুতে নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ হাজার ৪৫৫ টাকায়। এছাড়া বেসরকারি এলপিজির রিটেইলার পয়েন্টে ভোক্তাপর্যায়ে মূসকসহ প্রতি কেজি গ্যাসের দাম ১২১ টাকা ৫৬ পয়সা ও রেটিকুলেটেড পদ্ধতিতে তরল অবস্থায় সরবরাহ করা গ্যাসের দাম ১১৭ টাকা ৮১ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির (অটো গ্যাস) নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি লিটার ৬৭ টাকা ২৭ পয়সা, যা আগে ছিল ৬৬ টাকা ৭৮ পয়সা।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে শীর্ষে এখন যুক্তরাষ্ট্র
টানা তিন মাস ধরে প্রবাসী আয় পাঠানো শীর্ষ দেশের তালিকায় রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতকে (ইউএই) পেছনে ফেলে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় পাঠানো দেশের তালিকায় উঠে এসেছে দেশটি। দেশটি থেকে প্রবাসী আয় আসা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পরই যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় আসা বেড়ে যায়, যে ধারা অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যমতে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন (সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ১৪০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। এই তালিকায় শীর্ষ থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটি থেকে অর্থবছরের তিন মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ৯৯ কোটি ডলার। এরপরে রয়েছে যথাক্রমে- সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, ইতালি, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুর।
তথ্য বলছে, গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৯ কোটি ৩৪ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল। পরের মাস সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৯ কোটি ডলার। নভেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫১ কোটি ১৯ লাখ ডলারে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে গত আগস্টে প্রবাসী আয় এসেছিল ৩৪ কোটি ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ৫ কোটি ডলার বেশি ছিল। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরই সেপ্টেম্বরে এসে প্রবাসী আয়ে আরব আমিরাতকে পেছনে ফেলে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সেপ্টেম্বরে আরব আমিরাত থেকে প্রবাসী আয় এসেছিল ৩৬ কোটি ডলার, অক্টোবরে আসে ৩৩ কোটি ডলার এবং নভেম্বরে আরও কমে ২৯ কোটি ডলারে নেমে আসে।
ধারাবাহিকতা রয়েছে ডিসেম্বর মাসেও। গত বছরের সবশেষ মাস ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় এসেছে ৫৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বেশি, যেখানে প্রথম থেকে দ্বিতীয় স্থানে নেমে যায় আরব আমিরাত থেকে এসেছে ৩৭ কোটি ডলারের বেশি।
এছাড়া ডিসেম্বরে সৌদি আরব থেকে এসেছে ২৯ কোটি ডলার, মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যুক্তরাজ্য থেকে ২৪ কোটি ৮৪ লাখ ডলার।