অর্থনীতি
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস আজ

৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সুখী সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার শিরোনামে আগামী অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। বড় কোনো পরিবর্তন ছাড়াই পাস হচ্ছে প্রস্তাবিত এই বাজেট।
আজ (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। পরে তা সংসদ সদস্যদের কণ্ঠভোটে পাস হবে। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট হতে যাচ্ছে এটি।
এর আগে শনিবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে কয়েকটি সংশোধনীসহ অর্থবিল-২০২৪ পাস হয়েছে। বিলটি পাসের আগে বিলের উপর সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগ বহাল রাখা হয়। এছাড়া ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। এতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ ভাগ এবং মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে অর্থবিলের উপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও হামিদুল হক খন্দকার এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ নাথ। তবে তাদের সেই প্রস্তাব কণ্ঠ ভোটে নাকচ হয়ে যায়। বিলের উপর সরকার দলীয় সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ ও আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী সংশোধনী আনেন এবং তা গৃহীত হয়।
বিলের উপর জনমত বাছাইয়ের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাকালে জাতীয় পার্টির হামিদুল হক খন্দকার বলেন, বিলে সরকারের দ্বিমুখী অবস্থান প্রকাশ পেয়েছে। একদিকে বলছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। অন্যদিকে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রদান। যেখানে বৈধ আয়ের জন্য ৩০ শতাংশ কর দিতে হয়। সেখানে অবৈধ আয়ের জন্য ১৫ শতাংশ কর কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অথচ এই সুযোগ নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী কালো টাকা সাদা করেছেন। সরকারকে এই অনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।
তামাকজাত পণ্যের উপর সারচার্জ বাড়ানোর দাবি জানান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ নাথ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ এখনো তামাকের কারণে দেশে প্রতিদিন ৪৪১ জন মারা যান। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সারচার্জ বাড়াতে হবে।
সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম কমাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকসুদের হার বাজারভিত্তিক ও নীতি সুদহার প্রবর্তন করা হয়েছে। ডলারের দাম স্বাভাবিক রাখতে ক্রলিংপেগ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। নতুন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে নিয়ে আসা হবে।
তিনি বলেন, এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সব সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত ১১টি পদক্ষেপ পূরণে বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ হলে ২০৪১ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় হবে ১২ হাজার ৫০০ ডলার। দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। খাদ্য নিরাপত্তায় টিসিবির মাধ্যমে কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা, ওএমস কার্যক্রম চালু রাখা ও সামাজিক সুরক্ষার আওতায় খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে।
সংসদে পাস হওয়া বিলে ২০২৪ সালের পহেলা জুলাই থেকে শুরু অর্থ বছরের জন্য আর্থিক বিধান, বিদ্যমান আইন সংশোধনীসহ কর প্রস্তাবসমূহ অনুমোদন করা হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেক সংসদ সদস্য (এমপি) নতুন নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। তাদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এমপিদের গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া সম্পদশালীদের কোম্পানির কাজে ব্যবহৃত গাড়ির পরিবেশ সারচার্জ মওকুফ করা হয়েছে। এছাড়া রিটার্নে আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি আয় দেখানো হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ট্যাক্স ফাইল অডিটে ফেলবে না।
এছাড়া সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় পেনশন বাবদ আয়কে করের আওতার বাইরে রাখার বিধান যুক্ত করা হয়েছে আয়কর আইনে। হয়রানি কমিয়ে আনতে অডিটের শর্ত শিথিল করা হবে। এজন্য অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী। নতুন নিয়মে আগের বছরের চেয়ে রিটার্নে ১৫ শতাংশ আয় বেশি দেখালে ট্যাক্স ফাইল অডিটে ফেলা হবে না। সংশোধিত রিটার্নের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য থাকবে। শুধু ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা এ সুযোগ পাবেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্থাবর সম্পত্তি যেমন জমি-প্লট-ফ্ল্যাট দান বা হেবা দলিলের ওপর উৎসে কর আরোপ করা হয়েছিল বিধায় সাধারণ বেচাকেনার মতো হেবা দলিলে সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় এলাকা, জমির শ্রেণি অনুযায়ী হস্তান্তরকারীকে নির্দিষ্ট হারে আয়কর দিতে হতো। সমালোচনার মুখে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। অর্থাৎ আগের নিয়মেই উৎসে কর পরিশোধ ছাড়াই আপন ভাই-বোন, পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী, দাদা-দাদি, নানা-নানি ও নাতি-নাতনির সম্পর্কের মধ্যে সম্পত্তি হস্তান্তরে হেবা দলিল করা যাবে। বর্তমানে হেবা দলিলে ২ হাজার ৫১০ টাকা কর দিতে হয়। কোম্পানির মতো তহবিল ও ট্রাস্টের মূলধনি আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স বসানো হচ্ছে। আর শেয়ারবাজারে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্যাপিটাল গেইন করমুক্ত থাকছে। তবে মূলধনী আয় ৫০ লাখ টাকা অতিক্রম করলে গেইন ট্যাক্স দিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের কাছ থেকে দুই পদ্ধতিতে গেইন ট্যাক্স আদায় করা হবে।
বিলের বিধান অনুযায়ী, অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্কে মূলধনী যন্ত্র আমদানি শুল্কমুক্তই থাকছে। অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে এক শতাংশ শুল্কারোপের প্রস্তাব করেছিলেন তবে রপ্তানি ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর চেষ্টার অংশ হিসেবে সরকার দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলোতে বিনিয়োগে কর অবকাশ সুবিধার কথা জানিয়েছিল সরকার। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দাবির মুখে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে মূলধনী যন্ত্রপাতির ওপর এক শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব থেকে সরে আসছে সরকার।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এই শুল্কারোপের কথা বলেছিলেন। পরে ব্যবসায়ীরা তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তারা বলছিলেন, কর অবকাশ সুবিধার কথা জেনেই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ এসেছে। এই এক শতাংশ শুল্কারোপ সেই বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। বিরোধী দলগুলোও এই শুল্ক প্রস্তাবের সমালোচনা করে আসছিল। এছাড়া ২৯ মে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এনবিআর বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের কর অবকাশসহ ৮টি কর সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়। ১০ বছর মেয়াদি কর অবকাশ সুবিধা তুলে নেওয়ার ফলে শিল্পভেদে কোম্পানিগুলোর আয়ের ওপর করহার ২০-২৭.৫ শতাংশ বা এরও বেশি প্রযোজ্য হওয়ার কথা।
এছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় কারিগরি সহায়তাকারী হিসাবে কর্মরত বিদেশিদের প্রথম তিন বছরের বেতনের ওপর ৫০ শতাংশ আয়কর ছাড় পেত। সেটিও বাতিল করা হয়। এসব অঞ্চলে স্থাপিত কোম্পানির ১০ বছরের জন্য লভ্যাংশ, মূলধনী আয়, রয়্যালটি, টেকনিক্যাল নো-হাউ এবং কারিগরি সহায়তা ফির ওপরও ১০ বছরের কর অব্যাহতি ছিল, এগুলোও বাতিল করা হয়। দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের চাপে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কর অবকাশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। অর্থাৎ বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীরা আগের মতোই কর অবকাশ সুবিধা পাবে। এছাড়া কালোটাকা সাদা করার ট্যাক্স অ্যামনেস্টি বা বিশেষ সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে। ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা এবং বর্গমিটার প্রতি নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে প্লট-ফ্ল্যাট রিটার্নে প্রদর্শনের সুযোগ থাকছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
ইউএসটিআরে চিঠি: যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আরও ১০০ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে বাংলাদেশ। সরকারে এমন উদ্যোগের কথা জানিয়ে সোমবার (০৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে চিঠি লিখেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা বাড়তি ৩৭ শতাংশ তিন মাসের জন্য স্থগিত চেয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যে অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা প্রত্যাহার করে। এরপর থেকে বাংলাদেশের সকল রপ্তানি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়। অথচ বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর গড়ে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। উল্লেখ্য, কাঁচা তুলা ও লোহার স্ক্র্যাপের ক্ষেত্রে আমাদের শুল্ক হার যথাক্রমে শূন্য ও এক শতাংশ।
চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় তুলা আমদানিকারক দেশ, যা দিয়ে তৈরি পোশাক শিল্প চালিত হয়। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের পণ্যগুলোর ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের শুল্ক তালিকায় ১৯০টি পণ্যের ওপর শুল্ক হার শূন্য এবং আরও ১০০টি পণ্যকে শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত করার চিন্তাভাবনা চলছে।
এতের আরও বলা হয়, ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) অনুযায়ী, উভয় দেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পথে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা যৌথভাবে দূর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ সব সময় গঠনমূলক সংলাপ ও সহযোগিতায় বিশ্বাসী। যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিতে যদি কোনো বাধা থাকে তা দূর করতে প্রস্তুত। এ বিষয়ে ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের বাণিজ্য শাখার সঙ্গে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার শুল্ক হার কমানো, সব ধরনের অশুল্ক বাধা দূর করা এবং পারস্পারিক বাণিজ্যকে আরও লাভজনক করতে বিভিন্ন সংস্কারমূলক উদ্যোগ নিয়েছে। এসব উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে: আমদানি নীতির হালনাগাদ, কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজীকরণ, মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ, ট্রেডমার্ক ও পেটেন্ট সুরক্ষা ইত্যাদি।
এছাড়া আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি চুক্তি, মার্কিন অটো নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সয়াবিন, গম, তুলা ইত্যাদি বড় আকারে আমদানির উদ্যোগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাতকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সেবামূলক খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
চিঠিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, তার বিশ্বাস এসব উদ্যোগ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ভারসাম্য আনতে এবং উভয় দেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হবে। প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং তাঁর সরকারসহ বাণিজ্য উপদেষ্টা ব্যক্তিগতভাবে ইউএসটিআর দপ্তরের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক আরও মজবুত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বেশির দেশের পণ্যে এমন শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। যে দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য–ঘাটতি বেশি, সেই দেশের ওপর বেশি হারে শুল্ক আরোপ হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। বাংলাদেশেও সরকারের উচ্চমহল ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ প্রধান উপদেষ্টা ও বাণিজ্য উপদেষ্টা এ বাড়তি শুল্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে দুই চিঠি দেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
শুল্কারোপ ইস্যুতে ট্রাম্পকে প্রধান উপদেষ্টার চিঠি

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ৩৭ শতাংশ শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত চেয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (৭ এপ্রিল) এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চিঠিতে বলা হয়, আমরা আপনাকে আশ্বস্ত করছি, আপনার বাণিজ্য এজেন্ডা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নে সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশে। আপনার ঘোষণার পর আমি আমার উচ্চ প্রতিনিধিকে ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠিয়েছি যাতে ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে আমেরিকান রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো যায়। আমরাই প্রথম দেশ যারা এ ধরনের ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছি।
‘আমরাই প্রথম দেশ যারা রপ্তানির ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য বহু বছরের চুক্তি করেছি। আমাদের কর্মকর্তারা তখন থেকেই বাংলাদেশে আমেরিকান রপ্তানি দ্রুত বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা চিহ্নিত করতে কাজ করছেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা আমাদের বিশদ কার্যক্রম নিয়ে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারে কাজ করবেন।’
চিঠিতে বলা হয়, আমাদের কর্মপরিকল্পনার মূল ফোকাস তুলা, গম, ভুট্টা, সয়াবিনসহ এ জাতীয় মার্কিন পণ্যগুলির আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো, যা মার্কিন কৃষকদের আয় ও জীবিকা নির্বাহে অবদান রাখবে। মার্কিন তুলার বাজারে গতি বাড়াতে আমরা বাংলাদেশে বন্ডেড ওয়্যারহাউজিং (গুদামজাতকরণ) সুবিধা চূড়ান্ত করছি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে।
ড. ইউনূস চিঠিতে বলেন, দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বেশিরভাগ মার্কিন রপ্তানিতে বাংলাদেশের শুল্ক রয়েছে। আমরা উপরোক্ত মার্কিন কৃষিপণ্য ও স্ক্র্যাপ ধাতুর ওপর শূন্য শুল্ক দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা শীর্ষ মার্কিন রপ্তানি পণ্য গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমানোর জন্য কাজ করছি।
‘আমরা এরই মধ্যে বাংলাদেশে স্টারলিংক চালু করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি সম্পন্ন করেছি। ইন্টারনেটের এই গতি বেসামরিক বিমান চলাচল এবং প্রতিরক্ষাসহ বেশ কয়েকটি উন্নত প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশে মার্কিন ব্যবসার জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করবে।’
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
৯ মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১০.৬৩ শতাংশ

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) বাংলাদেশের রপ্তানি খাত প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। এসময়ে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৭ দশমিক ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেখানে পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের ৩৩ দশমিক ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
দেশের রপ্তানি কর্মক্ষমতা নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে৷
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ২০২৫ সালের মার্চ মাসে ৪ দশমিক ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে, যা ২০২৪ সালের মার্চের ৩ দশমিক ৮১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।
প্রথাগতভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত তার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ এই নয় মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি খাত থেকে ৩০ দশমিক ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ বৃদ্ধির প্রতিফলন।
এর মধ্যে শুধু মার্চেই এই খাতে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের মার্চে ছিল ৩ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
তৈরি পোশাক ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি খাত সামগ্রিক রপ্তানি বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে বলে জানিয়েছে এনবিআর।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ভিয়েতনাম থেকে এলো ১২ হাজার ৭০০ টন চাল

ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা আরও ১২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন চাল বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, গত ৩ ফেব্রুয়ারি সম্পাদিত চুক্তির আওতায় জি টু জি ভিত্তিতে (প্যাকেজ-১) ভিয়েতনাম থেকে ১২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন আতপ চাল নিয়ে এমভি এমডি সি জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জাহাজে রক্ষিত চালের নমুনা পরীক্ষা এরইমধ্যে শেষ হয়েছে এবং চাল খালাসের কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জি টু জি চুক্তির আওতায় ভিয়েতনাম থেকে মোট ১ লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে। এরইমধ্যে চুক্তি অনুযায়ী ৬০ হাজার মেট্রিক টন চাল দেশে পৌঁছেছে।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ৯০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন

নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য ৮০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখান থেকে শুধু স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোকে মূলধন জোগান দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫-এর স্টার্টআপ কানেক্ট সেশনের আলোচনায় এ কথা জানান তিনি। এ বিষয়ে শিগগিরই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলেও নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর।
এদিন রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘এমপাওয়ারিং ইনোভেশন কানেক্টিং অপরচ্যুনিটি’ শিরোনামে স্টার্টআপ কানেক্ট সেশনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় চারদিনব্যাপী বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের। দেশি-বিদেশি তরুণ ও উদ্ভাবনী উদ্যোক্তারা অংশ নেন এ সেশনে।
সেশনের মূলপ্রবন্ধে বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর সম্ভাবনা তুলে ধরেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তানভীর আলী। প্রবন্ধে বলা হয়, দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে উদ্ভাবনী স্টার্টআপ উদ্যোগের চাহিদা বাড়ছে। তবে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় দেশে এখনো এই খাতে বিনিয়োগ কম।
বাংলাদেশ ব্যাংক আহসান এইচ মনসুর বলেন, নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে তার অর্থ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।
এরপর বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ব্যবসা করার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স পাওয়াসহ সরকারি লালফিতার দৌরাত্ম্য বেশি। প্রতিবছর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে গিয়ে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়।
তিনি আরও বলেন, ৪০ দেশের ৫ শতাধিক বিদেশি বিনিয়োগকারী এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। এসব বিনিয়োগকারীকে চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘুরিয়ে দেখানো হবে।
বাংলাদেশে উদ্ভাবনী উদ্যোক্তার অভাব নেই বলে মন্তব্য করেন বিডার চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, স্টার্টআপ তহবিলের সংকটে নতুন উদ্যোক্তারা ব্যবসা শুরু করতে পারেন না। এ কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংক ৮০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকার স্টার্টআপ তহবিল গঠন করতে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বার্তা দেন লিংকডইনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। প্যানেল আলোচনায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব এবং আইসিটি সচিব শীশ হায়দার চৌধুরী।