অর্থনীতি
ঝুঁকিমুক্ত রিজার্ভ অর্জনে তিন বছর লাগবে: আইএমএফ
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশকে দেওয়া নানান শর্তের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারণের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। এ অবস্থায় সংস্থাটি ডিসেম্বরের মধ্যে রিজার্ভের নতুন লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নিট রিজার্ভ ১৫৩২ কোটি ডলারে উন্নীত করতে হবে।
বর্তমানে নিট রিজার্ভ রয়েছে ১৪৭৯ কোটি ডলার, যা দিয়ে ১ দশমিক ৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। রিজার্ভকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপর্যায়ে উন্নীত করতে হবে। গ্রস রিজার্ভ তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান করতে হলে বাংলাদেশকে আরও দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে। নিট রিজার্ভ তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান করতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আরও তিন বছর। অর্থাৎ ২০২৬ সালের জুনে গ্রস রিজার্ভ এবং ২০২৭ সালের জুনে নিট রিজার্ভ তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান হবে।
বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন ও আইএমএফ-এর শর্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে সোমবার রাতে প্রকাশিত সংস্থাটির এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, আইএমএফ-এর হিসাবে এখন গ্রস রিজার্ভ ১ হাজার ৮৯৯ কোটি ডলার। এ রিজার্ভ দিয়ে ২ দশমিক ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। নিট রিজার্ভ ১ হাজার ৪৭৯ কোটি ডলার, যা দিয়ে ১ দশমিক ৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। অথচ কোনো দেশের রিজার্ভকে নিরাপদ মাত্রায় রাখতে হলে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রাখতে হয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের রিজার্ভ বেশ কম রয়েছে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য মানতে নারাজ। তারা বলেছে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন নিট ও গ্রস দুই হিসাবেই তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের ওপরে রয়েছে। গ্রস হিসাবে এখন রিজার্ভ ২ হাজার ৫২৩ কোটি ডলার ও নিট হিসাবে ১ হাজার ৯৯১ কোটি ডলার, যা দিয়ে সাড়ে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।
আইএমএফ বলেছে, আগামী বছরের জুনের মধ্যে গ্রস রিজার্ভ বেড়ে ২ হাজার ৩২৭ কোটি ডলারে উন্নীত হতে পারে। তখন ওই রিজার্ভ দিয়ে আড়াই মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। একই সময়ে নিট রিজার্ভ বেড়ে ১ হাজার ৯৪৭ কোটি ডলারে উন্নীত হতে পারে। এ রিজার্ভ দিয়ে ২ দশমিক ১ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। গ্রস রিজার্ভ ২০২৬ সালের জুনে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান হবে। ওই সময়ে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়াবে ৩ হাজার ২১৫ কোটি ডলার। নিট রিজার্ভ ২০২৭ সালের জুনে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান হবে। ওই সময়ে রিজার্ভ বেড়ে হবে ৩ হাজার ৭৭৪ কোটি ডলার।
এদিকে আইএমএফ থেকে চলতি জুন পর্যন্ত নিট রিজার্ভ ধারণের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল ১ হাজার ৭৭৮ কোটি ডলার। ওই সময়ে এ লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। রিজার্ভ জুন শেষে ১ হাজার ৬৭৩ কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে।
এদিকে আইএমএফ রিজার্ভের নিম্নমুখী প্রবণতা কমানোর জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে। এজন্য তারা রেমিট্যান্স বাড়াতে বলেছে। কিন্তু রেমিট্যান্স বাড়লেও আগের বৈদেশিক দেনা শোধ করতে গিয়ে বাংলাদেশ রিজার্ভ বাড়াতে পারছে না। এর মধ্যে গত মাসে রপ্তানি আয় বেশ কমে গেছে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
পর্যাপ্ত সরবরাহের পরও অস্থির চালের বাজার
পর্যাপ্ত মজুত ও সরবরাহ থাকার পরেও গত এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রায় সব জাতের চালের দাম বেড়েছে। প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় চালের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। কোরবানির ঈদে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং রাইস মিল বন্ধ থাকায় এই দাম বেড়েছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
আজ শনিবার (২৯ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বিক্রেতারা প্রতিকেজি নাজিরশাইল ৬৫ থেকে ৭৮ টাকা, মিনিকেট চাল ৬২ থেকে ৬৮ টাকা, বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ চাল ৫৪ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি করছেন। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫৪ টাকা এবং মোটা হাইব্রিড চাল প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকায়।
কোরবানির ঈদের আগে এসব চালের খুচরা দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা কম ছিল।
এদিকে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই চালের দাম বেড়েছে বলে মনে করেন মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সুচনা। তিনি বলেন, ‘মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম ৫০ কেজিতে ১০০ টাকা বেড়েছে, আর বিআর-২৮ চালের দাম ৫০ কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে।’
মিরপুর-১১ কাঁচাবাজারের মকবুল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী কামাল সরদার জানান, দাম আরও বাড়ার আশায় অনেক কৃষক এখন তাদের ফসল বিক্রি করছেন না। এক সপ্তাহ আগে আমরা মণপ্রতি ১৩০০ টাকায় যে ধান কিনেছিলাম এখন তার দাম ১৩৮০ টাকা।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে এয়ার-কার্গো সহজলভ্য করার দাবি ব্যবসায়ীদের
ফল ও শাক-সবজিসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে পর্যাপ্ত এয়ার-কার্গো চান রপ্তানিকারকরা। পাশাপাশি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বিমানের ভাড়া বা ফ্রেইট কস্ট যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার দাবিও জানিয়েছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) এফবিসিসিআইয়ের মতিঝিল কার্যালয়ে ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট অব ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবল বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রথম সভায় সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকরা এসব কথা বলেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির চেয়ারম্যান এবং মনসুর জেনারেল ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনসুর। কমিটির ডিরেক্টর ইন-চার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ডলার সংকট, বাড়তি বিমান ভাড়া, কাস্টমস এবং এইচএস কোড সংক্রান্ত নানা জটিলতার কারণে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। পণ্য আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত সমস্যা দূরীকরণে এফবিসিসিআই এরইমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করেছে বলেও জানান তিনি।
এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, ফল, শাক-সবজিসহ কৃষিপণ্য রপ্তাতিতে শতভাগ স্থানীয় ভ্যালু অ্যাডিশন হয়। সুতরাং এসব পণ্যের রপ্তানি বিঘ্নিত করা যাবে না। রপ্তানি বাড়াতে বিমান ভাড়া, কার্ডো প্রাপ্তি, কাস্টমসসহ সব ধরণের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। পাশাপাশি উপযুক্ত পলিসি এবং নির্ভুল তথ্যভান্ডার গড়ে তোলার ওপর জোর দেন তিনি।
সভায় আলোচনায় অংশ নিয়ে ফল ও শাক-সবজি রপ্তানির জটিলতা দূর করতে বিমান বন্দরে এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন স্ক্যানার (ইডিএস) মেশিনসহ কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির সুপারিশ জানান কমিটির সদস্যরা। পচনশীল কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য প্রয়োজনে ডেডিকেটেড কার্গো ব্যবস্থা চালুর পক্ষেও মত দিয়েছেন তারা। এছাড়া, কৃষকের হাতের নাগালে আধুনিক ওয়্যারহাউজ স্থাপন, উন্নত পরিবহন ও সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, পচনশীল পণ্যের জন্য বিমানবন্দরে বিশেষ ওয়্যারহাউজ স্থাপন, কৃষিপণ্যের জাত এবং গুণগত মান উন্নয়ন, চাষ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা (পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট) উন্নত করা, প্যাকেজিং প্রভৃতি বিষয়ে কৃষক, রপ্তানিকারণসহ অন্যান্য অংশীজনদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব জানানো হয় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হাফেজ হাজী হারুন-অর-রশিদ, মোহাম্মদ ইসহাকুল হোসেন সুইট, মো. আবুল হাশেম, বাংলাদেশ বিমানের কার্গো এক্সপোর্ট বিভাগের ডিজিএম তফাজ্জল হোসেন আকন্দ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী, স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও সদস্যরা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সার্কভুক্ত দেশকে নিজস্ব মুদ্রা বিনিময়ের সুবিধা দেবে ভারত
সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ছাড় দিয়ে ২৫ হাজার কোটি রুপির নতুন কারেন্সি সোয়াপ বা নিজস্ব মুদ্রা বিনিময়ের সংশোধিত কাঠামো চালুর কথা জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। অবশ্য এ জন্য আরবিআইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দ্বিপক্ষীয় সোয়াপ চুক্তি করতে হবে।
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্কভুক্ত দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এই দেশগুলোকে কারেন্সি সোয়াপ সুবিধা দেবে। আগামী তিন বছরের জন্য কাঠামোটি করা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত ঘোষণা দিয়েছে আরবিআই।
আরবিআই জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদনক্রমে ২০২৪ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্য সংশোধিত কারেন্সি সোয়াপ চুক্তি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সুবিধা নেওয়ার মাধ্যমে ভারতীয় মুদ্রাকে সমর্থন দিলে সার্কভুক্ত দেশগুলো বিভিন্ন ছাড় পাবে। এ ছাড়া পৃথক সোয়াপ ব্যবস্থার মাধ্যমে মার্কিন ডলার ও ইউরোতে ২০০ কোটি ডলার অদলবদল চুক্তি বজায় রাখবে আরবিআই।
দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা চালু না হওয়া পর্যন্ত সার্কভুক্ত দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা-সংকট ও লেনদেন ভারসাম্যের ঘাটতি মেটাতে ২০১২ সালের নভেম্বরে সার্ক কারেন্সি সোয়াপ চালু করে ভারত। গত বছরের ১১ জুলাই প্রথমবারের মতো ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য শুরু হয় মার্কিন ডলারের পাশাপাশি রুপিতে। প্রথমে রুপিতে শুরু হলেও উভয় দেশের বাণিজ্য ব্যবধান কমে এলে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকায়ও এ বাণিজ্যের সুযোগ রয়েছে।
চার কারণে রুপিতে বাণিজ্য করার বিষয়টি সামনে এনেছে বাংলাদেশ ও ভারত। প্রথমত, ডলার-সংকটে রয়েছে উভয় দেশ। ফলে উভয় দেশ এতে লাভবান হবে। দ্বিতীয়ত, আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকদের দুবার মুদ্রা বিনিময় করার খরচ কমবে। তৃতীয়ত, লেনদেন নিষ্পত্তিতে সময় বাঁচবে। চতুর্থত, অন্য উদ্বৃত্ত মুদ্রা রুপিতে রূপান্তর করে লেনদেন নিষ্পত্তিতে ব্যবহার করা যাবে।
জানা গেছে, টাকা ও রুপিতে উভয় দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করার আলাপ চলছে প্রায় এক দশক ধরে। ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় সম্প্রতি তা আলোর মুখ দেখেছে। কাজটি বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশের দুই ব্যাংক ভারতের দুই ব্যাংকে নস্ট্র হিসাব খুলেছে। এক দেশের এক ব্যাংক অন্য দেশের কোনো ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনের উদ্দেশ্যে হিসাব খুললে সে হিসাবকে নস্ট্র হিসাব বলা হয়ে থাকে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়ায় গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। আজ শুক্রবার (২৮ জুন) সকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
এতে বলা হয়, শুক্রবার চূড়ান্ত হিসাব শেষে দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার পাওয়া গেছে।
রিজার্ভ নিয়ে অবশ্য এরআগেই সুখবর দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার রাতে এক বার্তায় বলা হয়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও অন্যান্য খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়ায় গ্রস রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।
ওই বার্তায় বলা হয়, আইএমএফ থেকে ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার এসেছে। এছাড়াও কোরিয়া, আইবিআরডি, আইডিবি প্রভৃতি থেকে আরও ৯০০ মিলিয়ন ডলার এসেছে। এতে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি হতে পারে। শেষ কর্মদিবসের আগের দিন হওয়ায় এখনও চূড়ান্ত হিসাব করা হয়নি। বৃহস্পতিবার পূর্ণ হিসাব করা হবে। তবে প্রাক্কলিত রিজার্ভের পরিমাণ হতে পারে প্রায় ২৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
গত সোমবার বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তির আওতায় তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন দেয় আইএমএফ। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পেয়েছিল বাংলাদেশ। আর গত ডিসেম্বরে পাওয়া যায় দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার।
এখন তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের ফলে বাংলাদেশ সব মিলিয়ে তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে। ঋণের বাকি প্রায় ২৩৯ কোটি ডলার আরও চার কিস্তিতে পাওয়া যাবে।
করোনার পর থেকেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও অন্যান্য ভোগ্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দ্রুতই কমতে শুরু করে রিজার্ভ।
গত মে মাসে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন- আকু’র ১৬৩ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। যা ছিল গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। সে সময় আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে হয় ১৩ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলারে।
এর আগে, ২০১৪ সালের শুরুর দিকে রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়ানোর পর আর নিচে নামেনি।
গত ১ জুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানিয়েছিলেন, দেশে সাড়ে ৪ মাসের ডলার রিজার্ভ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অর্থনীতির চাপের মধ্যে রয়েছে দেশ। এক সময় আমাদের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন পর্যন্ত গিয়েছিল। সেখান থেকে আমাদের রিজার্ভ কমে এসেছে। যেকোনো দেশে ৩ মাসের রিজার্ভ থাকলেই কোনো সমস্যা হয় না। সেখানে আমাদের প্রায় সাড়ে ৪ মাসের রিজার্ভ রয়েছে। যদি বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আসে ও বিদেশে রপ্তানি বিনিয়োগ বাড়ানো যায় তাহলে সুবিধা হবে।’
এদিকে, বাংলাদেশ ২০২২ সালের জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ঋণের আবেদন করে। ওই আবেদনের ছয় মাস পর গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৩৮টি শর্তে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ।
বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) এই তিন আলাদা কর্মসূচির আওতায় ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ।
ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ জানায়, শর্তপূরণ সাপেক্ষে ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাত কিস্তিতে ঋণের এ অর্থ দেয়া হবে।
এরই মধ্যে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পেয়েছিল বাংলাদেশ। আর গত ডিসেম্বরে পেয়েছিল দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। এখন তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের ফলে বাংলাদেশ সব মিলিয়ে তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে। ঋণের বাকি প্রায় ২৩৯ কোটি ডলার আর চার কিস্তিতে পাওয়া যাবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ঢাকার ৯৫ শতাংশ বাড়িঘর অনুমোদনহীন: গণপূর্তমন্ত্রী
ঢাকার প্রায় ৯৫ শতাংশ বাড়িঘর অনুমোদনহীন বলে মন্তব্য করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। একই সঙ্গে প্রকৃতি ধ্বংসের দায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জাতীয় পার্টির ওপর চাপিয়ে দিলে হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে (বিআইআইএসএস) ‘টেকসই শহর তৈরি: বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ ও বাধা’- শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
স্থপতি ইকবাল হাবিবের বরাত দিয়ে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরের প্রায় ৯৫ শতাংশ বাড়িঘর অনুমোদনহীন। অনুমোদনহীন বাড়িঘরগুলোকে যেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অনুমোদনের আওতায় আনা যায়, এজন্য একটি কমিটি আছে।
পরিবেশ রক্ষায় রাজনীতিবিদ ও আমলাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দেখছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এক জায়গা থেকে সব পরিকল্পনা হওয়া উচিত। সেটা না হলেও অন্তত সমন্বয় থাকা উচিত। আমাদের সবাইকে দেশপ্রেমের জায়গা থেকে বিষয়গুলো দেখা উচিত।
উবায়দুল মোকতাদির বলেন, প্রকৃতি ধ্বংসের দায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জাতীয় পার্টির ওপর চাপিয়ে দিলে হবে না। এ কাজটি আমরা সবাই মিলে করেছি। আমরা সবাই মিলে যে দুষ্কর্মটা করেছি, সেই দুষ্কর্ম থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে। নিজেদের দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করতে হবে।
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ঢাকাই বাংলাদেশ নয়, ঢাকার বাইরেও বাংলাদেশ আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা যারা ঢাকায় থাকি, তারা ঢাকার বাইরে বাংলাদেশ আছে, সেটা বুঝতে চায় না। এমনকি যারা গ্রামে থাকে তারাও মনে করে ঢাকায় চলে যাওয়া ভালো, ওটাই বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, নগরায়ণকে শুধু বিল্ডিং তোলা এবং কিছু মানুষের বসবাসের সুবিধা ও জীবন-জীবিকার সঙ্গে যুক্ত করলে চলবে না। নগরায়ণের সঙ্গে এখন প্রকৃতির বিস্তৃতির কথাও খেয়াল রাখতে হবে। ইকো-ফ্রেন্ডলি একটি অবস্থান তৈরি করতে হবে।
প্রকৃতি ধ্বংস করে নগরায়ণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, নগরায়ণ করতে গিয়ে প্রকৃতির কথা খেয়াল রাখা হচ্ছে না। নগরায়ণের ক্ষেত্রে শুধু বিল্ডিং তুললেই হবে না, আরো অনেক কিছু দেখতে হবে। আমরা নগরায়ণের নামে বুড়িগঙ্গাকে শেষ করে দিয়েছি। শুধু বুড়িগঙ্গা নয়, পুরো পানি ব্যবস্থাটাই আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি। এটাকে কীভাবে উদ্ধার করা যায়, সেটাকেও নগরায়ণের পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা চিন্তা করতে হবে।
প্রতিদিন কৃষিজমি নগরায়ণের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা নগরায়ণ করতে গিয়ে যত কৃষি জমি আছে, যত জলাশয় আছে, সব তো ধ্বংস করে দিয়েছি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা খুবই কঠিন। তাই বলে বসে থাকলে চলবে না। আমাদের এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এজন্য মহাপরিকল্পনা দরকার।
সেমিনারে বক্তারা নগরায়ণের ফলে উদ্ভূত সমস্যাদি মোকাবিলায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং অন্যান্য মহানগরের ক্ষেত্রে গৃহীত সর্বোত্তম কার্যপদ্ধতিগুলো থেকে শিক্ষালাভের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়নের প্রসারের জন্য পরামর্শ দেন।