শিল্প-বাণিজ্য
শুরু হলো পাঁচ দিনের হস্তশিল্প মেলা

নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিকভাবে নারীদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে পাঁচ দিনের হস্তশিল্প মেলা-২০২৪ শুরু হয়েছে। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এ মেলার উদ্বোধন করেন।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুপুরে পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) এ মেলার উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন এবং এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
মেলাটি সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে (সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ৮টা পর্যন্ত)। মেলায় দর্শনার্থীদের বিনামূল্যে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ মেলায় পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা, বেত ও বাঁশজাত পণ্য, তাঁত পণ্য, কারুপণ্য, হ্যান্ডমেইড জুয়েলারি, মৃৎশিল্পজাত পণ্য প্রভৃতি প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া অংশগ্রহণকারী একাধিক প্রতিষ্ঠান (ক্ল্যাসিক্যাল হ্যান্ডমেইড প্রোডাক্টস বিডি লিমিটেড, নাদিয়া জামদানি ওয়েভিং ফ্যাক্টরি, আধুনিকা, টুইংকেল ক্রাফট, কল্পতরু, মা এন্টারপ্রাইজ, প্রকৃতি প্রভৃতি) মেলায় হস্তশিল্পজাত পণ্য প্রস্তুত প্রক্রিয়া উপস্থাপন করে দর্শনার্থীদের প্রত্যক্ষ করার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের ৭৭ হাজার ৩১৭ বর্গফুট আয়তনের হলে প্রায় ১০০টি হস্তশিল্পজাত পণ্য উৎপাদক, সরবরাহকারী ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে স্বল্প মূল্যে সেলস্কিম স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় যেসব প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি), জয়িতা ফাউন্ডেশন, বাংলাক্রাফট (গোল্ডেন গ্রিট, ক্ল্যাসিক্যাল হ্যান্ডমেইড প্রোডাক্টস বিডি লিমিটেড, সুআঁশ, জুট ফিউসন বিডি, আর্টিফ্যাক্ট, লিজা বুটিকস, প্রকৃতি, হীড হ্যান্ডিক্রাফটস, জারিনস ক্রিয়েশন, বুনিসুতা, সাজোয়া টেক্সটাইল, আধুনিকা, আজুরা ফ্যাশন, পানসি জুট অ্যান্ড টেক্সটাইল, কারুপণ্য রংপুর লিমিটেড, বেঙ্গল ব্রেইডেড রাগস লিমিটেড, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড, বাংলাদেশ জুট রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ফন গোল্ডেন হারভেস্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, গ্রীন গোল্ডেন জুটেস্ক, হুর, এশিয়া প্যাসিফিক জোন, ক্লে ইমেজ, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, মা এন্টারপ্রাইজ, ওয়েন্ড (উইমেন এন্টারপ্রেনার্স নেটওর্য়াকিং ফর ডেভলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন্স), জেডএ ট্রেডিং, মিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, অনন্যা সক্স অ্যান্ড ইনার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আসমা বুটিকস, বাবু লেদার, বাংলা লেদার, জে এন ট্রেডিং, জেড এন লেদার কমপ্লেক্স, কুমুদিনী হ্যান্ডিক্রাফট, কল্পতরু, বিডি ক্রিয়েশন, ডিজাইন বাই রুবিনা (সাসটেইনেবল বাংলাদেশ- প্রেজেন্টেড বাই জুট ল্যান্ড বাংলাদেশ, দ্য জুট ফাইবারস বিডি, জুটমার্ট ইন্টারন্যাশনাল) প্রভৃতি অন্যতম।
মেলায় সাধারণ দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কুড়িল বিশ্বরোড হতে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরটিসির ডেডিকেটেড শাটল বাস নিয়মিত মেলার দর্শনার্থীদের আনা-নেওয়ায় নিয়োজিত থাকছে। মেলায় দ্বিতল কার পার্কিং-এ পাঁচ শতাধিক গাড়ি পার্কিং সুবিধা ছাড়াও এক্সিবিশন হলের বাইরে ৬ একর জমিতে বিস্তর পার্কিং এর ব্যবস্থা রয়েছে।
দর্শনার্থীদের সব প্রকার তথ্যপ্রদানের জন্য মেলায় স্থাপন করা হয়েছে একটি তথ্য কেন্দ্র।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে নিয়োগ করা হয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক পরিচ্ছন্নকর্মী। এছাড়া, মেলার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিকরণার্থে মেলা প্রাঙ্গণ সিসিটিভি সার্ভেল্যান্স সিস্টেমের আওতায় আনা হয়েছে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আনসার ও বেসরকারি সিকিউরিটি গার্ড নিয়োজিত আছে। যেকোন ধরনের অগ্নি দুর্ঘটনারোধে মোতায়েন করা হয়েছে ফায়ার ব্রিগেড। মেলায় সুলভ মূল্যে চমৎকার পরিবেশে দর্শনার্থীদের খাবারের কথা বিবেচনায় নিয়ে চারটি ফুড স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ক্ষুদ্র পরিসরে হস্তশিল্প রপ্তানি শুরু হয়। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে এ খাতের রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ৩৯ হাজার ডলার। ধীরে ধীরে হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানির পরিমাণ বাড়ে। গত ৫ বছরে বিশ্ব বাজারে গড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের অধিক হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানি হয় যেখানে গড়ে প্রতিবছর প্রায় ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানি হয় বাংলাদেশ থেকে। একক দেশ হিসেবে চীন বৈশ্বিক হস্তশিল্প পণ্য রপ্তানি বাজারের ৫০ শতাংশের অধিক জায়গা দখল করে আছে (ভিয়েতনাম-১১.৩ শতাংশ, নেদারল্যান্ডস-৩.৩ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া-৩.২ শতাংশ, স্পেন-২.৬ শতাংশ, ফ্রান্স-২.২ শতাংশ, ভারত-২.২ শতাংশ, জার্মানী-২.২ শতাংশ, পোল্যান্ড-২.২ শতাংশ, কানাডা-১.৫ শতাংশ, বাংলাদেশ-১.৪ শতাংশ ইত্যাদি) (তথ্যসূত্র: আইটিসি ট্রেড ম্যাপ)। বাংলাদেশের মাটি, হোগলাপাতা, কচুরিপানা, পাট, বাঁশ ও বেতের মতো কাঁচামাল দিয়ে হাতে তৈরি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহ, ইউএসএ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান, তাইওয়ানসহ অর্ধশতাধিক দেশে।

শিল্প-বাণিজ্য
আগামী অর্থবছরে ৭.০৫ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা

আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে পাট চাষের জন্য জমির লক্ষ্যমাত্রা ৭.০৫ লক্ষ হেক্টর। উক্ত জমিতে চাষাবাদের জন্য পাট বীজ প্রয়োজন ৫০০০-৬০০০ টন। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) কৃষি উইং কর্তৃক আয়োজিত ‘বার্ষিক অভ্যন্তরীণ গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা-২০২৫’ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে পাটের মোট উৎপাদন ১৫ লক্ষ মেট্রিক টন, পাটকাঠির মোট উৎপাদন ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন, চারকোলের উৎপাদন ৬ লক্ষ মেট্রিক টন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, পাট নিয়ে অনেক কিছু করার আছে, পাটের সম্ভাবনা কোনদিন শেষ হবে না। “কাঁচা পাট নিয়ে অন্যান্য দেশ কিভাবে কাজ করছে তার উপরেও মার্কেট রিসার্চ এ গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। বদ্ধ চিন্তাধারা থেকে বের হয়ে বিজ্ঞানীদের বিশদভাবে কাজ করতে হবে, কারণ পাট নিয়ে অনেক কিছু করার আছে, পাটের সম্ভাবনা কোনদিন শেষ হবে না। মার্কেট এবং বাস্তবতার নিরিক্ষে গবেষণা করতে হবে। আমাদের সীমাবদ্ধ জমিতে পাটের উৎপাদনকে আরও বাড়ানো যায়, তা নিয়েও কাজ করতে হবে,” বলেন তিনি।
কৃষি সচিব আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এর রিসার্চ সেক্টর এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান একত্রিত হয়ে কাজ করলে পাটের গবেষণা আরও এগিয়ে যাবে। “পাট শুধু অর্থকরী ফসল নয়, পাট বাংলাদেশের গর্ব, বাংলার পরিচিতির মাধ্যম। পৃথিবীর অন্য প্রান্তের দেশ কিউবাও বাংলাদেশ থেকে পাট আমদানি করে দুইটি কারখানা তৈরি করেছে। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পৃথিবীর অনেক দেশ পাট উৎপাদন করতে পারে না সেদেশের পরিবেশের কারণে, সে হিসেবে পাটের জন্য বাংলাদেশ আশীর্বাদপুষ্ট। প্রযুক্তি দিন দিন যেমন পরিবর্তন হচ্ছে, ঠিক তেমনই পাটের প্রযুক্তি দিয়ে পাটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করতে হবে,” বলেন কৃষি সচিব।
সভাপতির বক্তব্যে বিজেআরআইর মহাপরিচালক ড. নার্গীস আক্তার বলেন, পাট কেবল আমাদের সোনালি আঁশ নয়, আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের এক সোনালি অধ্যায়। সূচনালগ্ন হতে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট মোট ৫৭টি জাত ২২৩টি কৃষি প্রযুক্তি এবং ৬৯টি শিল্প ও কারিগরি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। “পাট কৃষিজাত পণ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় চাষিরা কৃষিঋণের মতো পাটঋণ এবং পণ্য রপ্তানিতে সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। সরকার থেকে ২০% নগদ প্রণোদনা পায় চারকোল রপ্তানিকারকরা। বাংলাদেশে প্রায় ৫০ টি চারকোলের কারখানা রয়েছে। বর্তমানে কিছু কারখানা বন্ধ আছে।”
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মানীত অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা অনুবিভাগ) মো. আবু জুবাইর হোসেন বাবলু, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম এবং শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আব্দুল লতিফ।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বিজেআরআই এর প্রজনন বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম মোস্তফা এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজেআরআই এর জেনোম গবেষণা কেন্দ্র এর সমন্বয়ক ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস. এম. মাহবুব আলী।
অন্যান্যদের মাঝে আরো উপস্থিত ছিলেন, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক ড. বেগম সামিয়া সুলতানা, তুলা উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল আমিন, কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক মো. মসীহুর রহমান, জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমির মহাপরিচালক মো. সাইফুল আজম খান, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী এর পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (গবেষণা অধিশাখা) ড. মো. লুৎফর রহমান, যুগ্মসচিব (আইন অধিশাখা) ড. মো. মোকতার হোসেন, বিজেআরআই এর পরিচালক (জুট-টেক্সটাইল) ড. ফেরদৌস আরা দিলরুবা, পরিচালক (পিটিসি) ড. মাহমুদ আল হোসেন, উক্ত ইনস্টিটিউটের সকল মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) ড. মো. ইয়ারউদ্দিন সরকার, কৃষি সচিবের একান্ত সচিব (উপসচিব) মো. মাকছুদুল ইসলাম, বিজেআরআইর সকল স্তরের বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাবৃন্দ সহ কৃষি সেক্টরের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং কৃষক প্রতিনিধিগণ।
অর্থনীতি
ব্যাংকিং খাত বর্তমানে সংকটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে: ডিসিসিআই সভাপতি

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত বর্তমানে এক সংকটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের খেলাপির কারণে আর্থিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগের ওপর বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। এর ফলে ঋণপ্রাপ্তি কঠিন হয়ে গেছে এবং এসএমই খাতসহ উৎপাদনমুখী ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ছেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ।
শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীর ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে ‘বর্তমান ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ: ঋণগ্রহীতাদের দৃষ্টিকোণ’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (মুদ্রানীতি বিভাগ) ড. মো. এজাজুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিভারস্টোন ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ও ডিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি মো. আশরাফ আহমেদ।
তাসকিন আহমেদ বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ এবছরের জুন পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এটি মোট ঋণের ২৪ শতাংশের বেশি। যা আর্থিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগের ওপর বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। এর ফলে ঋণপ্রাপ্তি কঠিন হয়ে গেছে, এসএমই খাতসহ উৎপাদনমুখী ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ছেন এবং বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭.৫৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে থাকায় নীতি সুদহার ও তারল্য সংকুচিত হয়েছে, ফলে মূলধনের খরচ বেড়েছে। এতে করে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এ অবস্থায় তিনি কয়েকটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ঋণগ্রহীতাদের পুনর্বাসনমূলক উদ্যোগ গ্রহণ, উৎপাদনমুখী খাতে (যেমন এসএমই, কৃষি, সবুজ শিল্প) সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা, সেক্টরভিত্তিক প্রণোদনা এবং গ্যারান্টি স্কিম, ঋণের শর্ত শিথিল করে দীর্ঘ মেয়াদে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া, ঋণ শ্রেণিকরণ সময়সীমা ৬ মাস বাড়ানো এবং ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত খেলাপি আলাদা করে চিহ্নিত করা।
ঢাকা চেম্বার সভাপতি বলেন, ব্যাংকিং খাতের সংস্কার শুধু ঝুঁকির দিক থেকে নয়, ঋণগ্রহীতাদের কথাও মাথায় রেখে করতে হবে। নইলে বিনিয়োগ, উদ্ভাবন ও প্রতিযোগিতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সেমিনারে বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী নেতা ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
কাফি
শিল্প-বাণিজ্য
এমএসএমই দিবস আজ

আন্তর্জাতিক অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এমএসএমই) দিবস আজ। ২০২৫ সালে এ দিবসের প্রতিপাদ্য– টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনের চালিকাশক্তি হিসেবে এমএসএমইর ভূমিকা সম্প্রসারণ।
অর্থনীতিতে ছোট ও মাঝারি উদ্যোগের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে এবং সচেতনতা তৈরিতে বিশ্বজুড়ে ২৭ জুন পালন করা হয় এ দিবস। ২০১৭ সালে জাতিসংঘ ২৭ জুনকে এমএসএমই দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
বাংলাদেশে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক এমএসএমই দিবস পালন করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে মূল আয়োজন করে এসএমই ফাউন্ডেশন। এছাড়া বেসরকারি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ দিবস পালন করে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, এবার এমএসএমই দিবস দুটি বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন সামনে রেখে উদযাপিত হচ্ছে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্পেনের সেভিলায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন’ শীর্ষক চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এছাড়া কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে সামাজিক উন্নয়ন-বিষয়ক দ্বিতীয় বিশ্ব সম্মেলন।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ব্যবসার ৯০ শতাংশ, কর্মসংস্থানের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ এবং জিডিপিতে ৫০ শতাংশ অবদান এমএসএমই খাতের। বিশ্বজুড়ে কর্মক্ষম দরিদ্র, নারী, যুবক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার উন্নয়নের মেরুদণ্ড হিসেবে ভূমিকা রাখছে এমএসএমই খাত।
শিল্প-বাণিজ্য
গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড পেলো পিএইচপি শীপ ব্রেকিং এন্ড রিসাইকেলিং ইন্ডাস্ট্রিজ

গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড বা পরিবেশবান্ধব কারখানা পুরস্কার পেয়েছে পিএইচপি শীপ ব্রেকিংএন্ড রিসাইকেলিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা অধিদপ্তর আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথিদের হাত থেকে এ পুরস্কার নেন পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবায় একুশে পদক পাওয়া সূফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ও পিএইচপি শীপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম রিংকু।
উল্লেখ্য, এ বছর গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ৩০টি প্রতিষ্ঠান। পরিবেশবান্ধব কার্যপদ্ধতি, জ্বালানি দক্ষতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং কর্মপরিবেশে উৎকর্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
নিট তৈরি পোশাক খাত থেকে পুরস্কার পেয়েছে নরসিংদীর পলাশের চরকা টেক্সটাইল, গাজীপুরের কালিয়াকৈরের ইকোটেক্স ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ফকির ফ্যাশন। ওভেন তৈরি পোশাক খাত থেকে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার তারাসিমা অ্যাপারেলস, গাজীপুরের জিরানী বাজারের আউকু টেক্স ও ময়মনসিংহের স্কয়ার ফ্যাশন পুরস্কার পেয়েছে।
বস্ত্র খাতের চারটি প্রতিষ্ঠান এবার পরিবেশবান্ধব কারখানার পুরস্কার পেয়েছে। সেগুলো হচ্ছে মানিকগঞ্জের চরকান্দার আকিজ টেক্সটাইল মিলস, হবিগঞ্জের মাধবপুরের পাইওনিয়ার ডেনিম, চট্টগ্রাম চান্দগাঁওয়ের কেডিএস টেক্সটাইল মিলস ও পটিয়ার ফোর এইচ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং। অটোমোবাইল খাতের একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান পুরস্কার পেয়েছে। সেটি হলো চট্টগ্রামের নাসিরাবাদের সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ।
ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক পণ্য প্রস্তুতকারক খাতের তিনটি প্রতিষ্ঠান পুরস্কার পাচ্ছে। সেগুলো হলো নরসিংদীর শাষপুরে অবস্থিত ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস, নরসিংদীর শিবপুরের ফেয়ার ইলেকট্রনিকস ও গাজীপুরের কালিয়াকৈরের ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ।
সরঞ্জাম ও সংযোগশিল্প খাত থেকে একমাত্র পুরস্কার পেয়েছে ঢাকার ধামরাইয়ের আদজি ট্রিমস। খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে পুরস্কার পাচ্ছে ধামরাইয়ের আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ও হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের হবিগঞ্জ অ্যাগ্রো। চা–শিল্প থেকে পুরস্কার পেয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের জেরিন চা-বাগান ও মির্জাপুর চা-বাগান।
চামড়াশিল্প (তৈরি পণ্য) খাতের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে ময়মনসিংহের ভালুকার সুনিভার্স ফুটওয়্যার। এ ছাড়া পাট খাতে রংপুরের রবার্টগঞ্জের কারুপণ্য রংপুর, টাইলস অ্যান্ড সিরামিক খাতে গাজীপুরের শ্রীপুরের এক্স সিরামিক পুরস্কার পেয়েছে।
এ ছাড়া প্রসাধন খাতে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় রিমার্ক এইচবি ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের স্কয়ার টয়লেট্রিজ পুরস্কার পেয়েছে। ওষুধ খাতে একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস।
জাহাজভাঙা ও জাহাজ নির্মাণ খাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পিএইচপি শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ, খুলনার লবণচরার খুলনা শিপইয়ার্ড ও সীতাকুণ্ডের কেআর শিপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ড পরিবেশবান্ধব শিল্প হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে। এ ছাড়া সিমেন্ট খাতে গাজীপুরের কালীগঞ্জের সেভেন সার্কেল ও ইস্পাত খাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএসআরএম স্টিলস এবার পুরস্কার পেয়েছে।
পুরস্কার হিসেবে ট্রফি, সনদ ও এক লাখ টাকা পেয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
শিল্প-বাণিজ্য
জুলাই থেকে আমদানি-রপ্তানির সব সনদ অনলাইনে জমা বাধ্যতামূলক

আগামী জুলাই থেকেই আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের ছাড়ের জন্য সব ধরনের সনদ অনলাইনে জমা দিতে হবে। ৩০ জুনের পর থেকে পণ্যের চালান শুল্কায়নের জন্য ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ও পারমিট ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে গ্রহণ করা হবে না।
আজ বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এ-সংক্রান্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এতে বলা হয়েছে, ‘৩০ জুনের পর থেকে আমদানি ও রপ্তানি পণ্য চালান শুল্কায়নের ক্ষেত্রে ১৯টি সংস্থার ইস্যু করা সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ও পারমিট (সিএলপি) অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডোর (বিএসডব্লিউ) মাধ্যমে দাখিল বাধ্যতামূলক করা হলো। ওই তারিখের পর কোনো ধরনের ম্যানুয়াল সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ও পারমিট গ্রহণ করা হবে না।’
এনবিআর জানিয়েছে, সংস্থাটির অধীনে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের আওতায় বিএসডব্লিউ সিস্টেম ইতিমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। বিএসডব্লিউ মূলত একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যা ব্যবহার করে একজন আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক পণ্য খালাসের জন্য প্রযোজ্য সব ধরনের সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ও পারমিটের (সিএলপি) জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিএলপি সংগ্রহ করতে পারবেন। সিএলপি গ্রহণের আগে বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (বিআইএন) ব্যবহার করে বিএসডব্লিউ সিস্টেমে নিবন্ধন করতে হবে।
এনবিআর মনে করছে, এই সিস্টেম ব্যবহারের ফলে একটি কমন প্ল্যাটফর্মে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের জন্য প্রযোজ্য সার্টিফিকেট, লাইসেন্স এবং পারমিট-সংক্রান্ত সব কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা কর্তৃক যুগপৎভাবে অনলাইনে সম্পন্ন করা হবে; সরকারি কাজে ব্যক্তিগত যোগাযোগ (হিউম্যান ইন্টারেকশন) না থাকায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে; পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে সময় ও ব্যয় হ্রাস পাবে; দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন বিএসডব্লিউ হতে ইতোমধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ও পারমিটের সংখ্যা অদ্য ১৯ জুন তারিখে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ২ অতিক্রম করেছে। সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ও পারমিট সমূহের ৮৫.৭৬ শতাংশ একঘণ্টার কম সময়ে এবং ৯৪.৬৮ শতাংশ একদিনের কম সময়ে স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় ইস্যু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ও পারমিট ইস্যুকারী ১৯টি সংস্থার (ডিজিডিএ, ইপিবি, ডিওইএক্স,বিএনএসিডব্লিউসি, বিজিজেডএ, বিইপিজেডএ, ডিওই, বিএসটিআই, বিএইআরএ, বিএইসি, সিএএবি, বিটিআরসি, ডিওএফ, ডিএলএস, পিকিউডব্লিউ, বিআইডিএ, বিজিএমইএ, বিএকেএমইএ, বিএকএমইএ, সিসিআইঅ্যান্ডই) ক্ষেত্রে ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ও পারমিট বিএসডব্লিউ সিস্টেমের মাধ্যমে দাখিল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এসএম