অর্থনীতি
আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি অনুমোদন

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহিবল-আইএমএফ বাংলাদেশের অনুকূলে ঋণের তৃতীয় কিস্তি বাবদ ১ দশমিক ১১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড় করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে এ অর্থ আইএমএফ থেকে ছাড় করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়াশিংটনের হিসাবে স্থানান্তর করা হবে। এ অর্থ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ-এ যোগ হবে।
সোমবার (২৪ জুন) সংস্থাটির পর্ষদ সভায় এ ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করেছে।
আইএমএফের ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭৬ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার এসেছে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। আর দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে প্রায় ৬৮১ মিলিয়ন ডলার আসে গত বছরের ডিসেম্বরে।
বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের চাপের মুখে পড়ে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন (রিজার্ভ)। বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ে ক্রমাগত চলতি হিসাবের ঘাটতিও বেড়েছিল বাংলাদেশের। ডলারের বিপরীতে টাকা দর অবনমন হতে থাকলে প্রভাব পড়ে জ্বালানির দর ও আমদানিতে।
তখন দ্রুত ক্ষয় হতে থাকা রিজার্ভ বাড়াতে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার সহায়তা নিতে আইএমএফ এর কাছে ৪৭০ কোটি ডলারের এই ঋণ চেয়ে আবেদন করে ২০২২ সালের জুলাইতে। বিভিন্ন ধাপের আলোচনার পর ওই ওই বছরের নভেম্বরে ঋণ চুক্তি অনুমোদন দেয় সংস্থাটি।
পরে ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। এর তিন দিন পর প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করে সংস্থাটি। এর পর গত ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির পরবর্তীগুলোতে সমান অর্থ থাকার কথা ছিল। কিন্তু রিজার্ভ আরও কমে যাওয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তিতে বেশি অর্থ চায় বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কঠিন শর্তের বাস্তাবয়ন ও আগামীতে আরও বড় সংস্কার কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সংস্থাটি তৃতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ডলারের পরিবর্তে ১১১ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিতে সম্মত হয়েছে। তবে মোট ঋণের পরিমাণ এবং মেয়াদ একই থাকবে।
বাংলাদেশের অনুরোধে চতুর্থ কিস্তির জন্য আগামী জুন শেষে নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশশিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে ১৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। অনেক শর্ত পূরণ করার পথে থাকলেও ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর থেকে রিজার্ভের ত্রৈমাসিক কোনো লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। সরকারের অনুরোধে আইএমএফ পরে সংশোধন করে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। বিপিএম ৬ হিসাবে ১৯ দশমিক ৫২ বিলয়ন। সেখান থেকে চলতি দায় বাবদ ৫ দশমিক ২৪ বিলিয়ন বাদ দিলে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার। যা আইএমএফের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য ১৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন থেকে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার কম।

অর্থনীতি
চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন মাশুল কার্যকর, গড়ে খরচ বাড়লো ৪১ শতাংশ

চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন মাশুল নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ গেজেট প্রকাশিত হয়। নতুন এ মাশুল সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে কার্যকর হবে বলে গেজেটে উল্লেখ করা হয়।
প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী, প্রত্যেকবার বন্দর এলাকায় প্রবেশের জন্য প্রতি গ্রজ টনের জন্য পয়েন্ট ৩০৬ ডলার, পোর্ট লিমিটের মধ্যে লাইটার ও ট্যাংকারের ভ্যাসেল ওয়ার্কিং চার্জ ধরা হয়েছে প্রতি গ্রজ টনে পয়েন্ট জিরো ১৭ ডলার। এরসঙ্গে ডেঞ্জারাজ গুডস ভ্যাসেলের ক্ষেত্রে ঘোষিত চার্জের ২৫ শতাংশ, ডেড ভ্যাসেলের জন্য ৫০ শতাংশ, লাইটারেজের জন্য ৫০ শতাংশ, ডিলে/ওভার স্টে চার্জ হিসেবে ৫ শতাংশ অতিরিক্ত মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে।
বন্দরে জাহাজ প্রবেশের জন্য জাহাজের প্রতি মুভমেন্টের জন্য সর্বনিম্ন পাইলটিং চার্জ ধরা হয়েছে ৮০০ ডলার। তাছাড়া ১০ হাজার গ্রজ টনের উপরের ভ্যাসেলের জন্য প্রতি গ্রজটনে পয়েন্ট জিরো ৮ ডলার চার্জ ধরা হয়েছে। এরসঙ্গে ব্রেকিং জার্নি হলে ঘোষিত চার্জের সঙ্গে ৫০ শতাংশ, ডেড ভ্যাসেলের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ, প্রবেশ বাতিলের জন্য প্রতিবারের জন্য ২০০ ডলার, নাইট নেভিগেশন ভ্যাসেলের জন্য ২৫ শতাংশ, বার্থ শিফটিংয়ের জন্য প্রতি মুভমেন্টে ৮০ ডলার, কর্ণফুলী নদীর বাইরের অংশে পাইলটিংয়ের জন্য ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত মাশুল নির্ধারণ করা হয়।
টাগ ব্যবহারের চার্জ হিসেবে প্রত্যেক মুভমেন্টে প্রতি ২০০টন থেকে ৫ হাজার গ্রজটনের জন্য কর্ণফুলী নদীর মধ্যে ৬১৫ ডলার, বাইরে ১২৩০ ডলার, ৫০০০ টন থেকে ১০ হাজার গ্রজটনের জন্য কর্ণফুলীর মধ্যে ১২৩০ ডলার, বাইরে ২৪৬০ ডলার, ১০হাজার থেকে ২০ হাজার গ্রজটনের জন্য ভেতরে ২০৫০ ডলার, বাইরে ৪১০০ ডলার এবং ২০ হাজার গ্রজটনের ওপরের জন্য ভেতরে ৩৪১৫ ডলার ও বাইরের জন্য ৬৮৩০ ডলার নির্ধারণ করা হয়। এরসঙ্গে ডিজেবল কিংবা ডেব ভ্যাসেলের ক্ষেত্রে মূল চার্জের বাইরে ১০০ শতাংশ. বাতিলের জন্য ৫০ শতাংশ, শিফটিংয়ের জন্য ৫০ শতাংশ, কর্ণফুলী নদীর মধ্যে ৪ ঘণ্টার বেশি সার্ভিসের জন্য ২৫ শতাংশ, কর্ণফুলী নদীর বাইরে ৬ ঘণ্টার বেশি সার্ভিসের জন্য ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত চার্জ ধরা হয়েছে।
জাহাজ বন্দরের জেটিতে বার্থিংয়ের জন্য প্রতি গ্রজটনে প্রতি ঘণ্টায় পয়েন্ট জিরো জিরো ৪ ডলার, প্রতিবারে বার্থিং আনবার্থিংয়ের জন্য ৯৪ পয়েন্ট ৩২ ডলার, সমুদ্রগামী জাহাজের ক্ষেত্রে প্রতি জাহাজে দৈনিক ২২৪ দশমিক ৮৫ ডলার এবং সমুদ্রগামী নন এমন জাহাজের ক্ষেত্রে জাহাজপ্রতি দৈনিক ২২ দশমিক ৪৯ ডলার মাশুল নির্ধারণ করা হয়। এরসঙ্গে নোটিশ করার পর বার্থ ত্যাগ না করলে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ১০০ শতাংশ ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ৩০০ শতাংশ, ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ৪০০ শতাংশ, ৩৬ ঘণ্টার বেশি ডিলে করলে ৯০০ শতাংশ অতিরিক্ত চার্জ নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে শিফটিংয়ের জন্য প্রতিবারে ৪৭ দশমিক ১৬ ডলার মাশুল ধরা হয়।
জাহাজে পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে মেইন সাপ্লাই লাইন থেকে প্রতি ১০০০ লিটারের জন্য ২ দশমিক ৯২ ডলার, বন্দরের লরি দিয়ে (৫ কিলোমিটারের নীচে) প্রতি ১০০০ লিটারের জন্য ৬ পয়েন্ট ২৩ ডলার, ৫ কিলোমিটারের উপরে প্রতি ১০০০ লিটারের জন্য ৮ দশমিক ২৩ ডলার, বন্দরের ওয়াটার বোট ব্যবহার করে কর্ণফুলী নদীর মধ্যে প্রতি ১০০০ লিটারের জন্য ১২ দশমিক ৪৬ ডলার এবং পতেঙ্গা লাইট হাউজ থেকে ৭ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে ১০০০ লিটারের জন্য ১৮ দশমিক ৬৯ ডলার, পতেঙ্গা লাইট হাউজ থেকে ৭ নটিক্যাল মাইলের বাইরে প্রতি ১০০০ লিটারের জন্য ২৪ দশমিক ৯৬ ডলার এবং বন্দরের বাইরের কোন পক্ষ থেকে পানি সরবরাহ নিলে প্রতি ১০০০ লিটারে ওয়াসার দরের ২০ শতাংশ বেশি হারে ওভারহেড চার্জ ধরা হয়েছে।
ওয়েস্ট হ্যান্ডলিং চার্জের ক্ষেত্রে কর্ণফুলী নদীর মধ্যে স্বল্পদূরত্বে প্রতিবারের সেবায় ২৪৫৬ দশমিক ৯৯ ডলার, কর্ণফুলী নদীর বাইরে প্রতিট্রিপের সেবায় ৪০৬৩ দশমিক ১৫ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
বন্দরের ক্রেন ব্যবহারের জন্য (কী গ্যান্ট্রি, মোবাইল হার্বার, একই ধরণের অন্য যন্ত্র) প্রতি মুভমেন্টে পণ্যভর্তি কন্টেইনার প্রতি ২১ ফুটের নীচে ২০ দশমিক ৮০ ডলার, ২১ থেকে ৪০ ফুটের জন্য ৩১ দশমিক ২০ ডলার এবং ৪০ ফুটের উপরের জন্য ৩৫ দশমিক ১০ ডলার, খালি কন্টেইনারের ক্ষেত্রে প্রতি ২১ ফুটের নীচে ১০ দশমিক ৪০ ডলার, ২১ থেকে ৪০ ফুটের জন্য ১৫ দশমিক ৬০ ডলার এবং ৪০ ফুটের উপরের জন্য ১৭ দশমিক ৫৫ ডলার, জেটি ক্রেন ব্যবহারের জন্য ক্রেনপ্রতি প্রতি ৮ ঘণ্টার জন্য ১০ টনের নীচে ৫৮ দশমিক ২৪ ডলার, ১০ থেকে ৪০ টনের জন্য ১৭৪ দশমিক ৭২ ডলার এবং ৪০ টনের উপরে ২৯১ দশমিক ২০ ডলার এবং হ্যাজ কভারের জন্য প্রতিবারে প্রতি প্যানটনে ৩৫ দশমিক ১০ ডলার চার্জ নির্ধারণ করা হয়।
অর্থনীতি
রিজার্ভ বেড়ে ৩০.৫৯ বিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ৩০ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রোববার দিনশেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে হিসাব করলে এই অঙ্ক দাঁড়ায় ২৫ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারে।
এর আগে গত সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) কাছে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করায় রিজার্ভ নেমে যায় ৩০ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে। তখন বিপিএম-৬ হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেকটি নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব রয়েছে, যা কেবল আইএমএফকে দেওয়া হয় কিন্তু প্রকাশ করা হয় না।
বিশ্ব মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ রিজার্ভ থাকা প্রয়োজন। সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এখন প্রায় সীমান্তরেখা অতিক্রম করে কিছুটা ভালো অবস্থায় আছে। প্রবাসী আয়, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক ঋণ ও বিনিয়োগ থেকে আসা ডলারই মূলত রিজার্ভ গড়ে তোলে। অন্যদিকে আমদানি ব্যয়, ঋণের সুদ, বিদেশি কর্মীদের পারিশ্রমিক, শিক্ষা ও ভ্রমণ খরচসহ নানা খাতে ডলার ব্যয় হওয়ায় রিজার্ভ হ্রাস পায়।
সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফিরেছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হয়নি, বরং উল্টো বাজার থেকে ডলার কিনেছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং ২ সেপ্টেম্বর আটটি ব্যাংক থেকে ৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে এসেছে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স (প্রায় ৩০ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা)। আগস্টে এসেছে ২৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ২৯ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। এর আগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা ছিল ওই অর্থবছরের রেকর্ড। পুরো ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার— যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই অঙ্ক ছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল- জুলাই: ১৯১.৩৭ কোটি ডলার, আগস্ট: ২২২.১৩ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বর: ২৪০.৪১ কোটি ডলার, অক্টোবর: ২৩৯.৫০ কোটি ডলার, নভেম্বর: ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বর: ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারি: ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারি: ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চ: ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিল: ২৭৫ কোটি ডলার, মে: ২৯৭ কোটি ডলার এবং জুন: ২৮২ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৩ সালের জুন শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর পর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারে। এরপর ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায় এবং একই বছরের অক্টোবরে অতিক্রম করে ৪০ বিলিয়ন ডলার। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও রিজার্ভ রেকর্ড গড়ে ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। তবে পরে ডলার সংকট দেখা দেওয়ায় রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে।
অর্থনীতি
বাণিজ্য ঘাটতি কমলে শুল্ক আরও কমানোর আশ্বাস যুক্তরাষ্ট্রের

বাণিজ্য ঘাটতি কমলে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপ করা পাল্টা শুল্ক কমানোর আশ্বাস দিয়েছে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল।
রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডেন লিঞ্চের নেতৃত্বে সফররত প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপ করা বাড়তি ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরও কিছুটা কমানোর বিষয়ে আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে তিনদিনের সফরে ঢাকায় এসেছে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদলটি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমাদের যে চলমান আলোচনার রয়েছে, সেটার ধারাবাহিকতায় আজকে তাদের টিমের সঙ্গে বসেছি। আমাদের যে অ্যাগ্রিমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক, কান্ট্রি স্পেসিফিক কমিটমেন্ট—এ বিষয়ে যে আলোচনাগুলো চলছিল, আমাদের জয়েন্ট ডিক্লারেশনের রেফারেন্সে আলোচনা করেছি আজকে।
কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যেটি বলেছি- বাণিজ্য ঘাটতি কমার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের শুল্ককে নিম্নমুখী পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। ওনারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। শুল্ক কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখনো শুল্কচুক্তি হয়নি জানিয়ে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, চুক্তি করার লক্ষ্যে এ আলোচনাগুলো হচ্ছে। যে ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, চুক্তিকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার উদ্দেশেই এ আলোচনাগুলো হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা যে পণ্যসম্ভার নিয়ে আলোচনা করেছি, সেই পণ্যগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছি। আমাদের যে (যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে) বিমানসহ বিভিন্ন জিনিস কেনার অঙ্গীকার রয়েছে সেগুলোর অগ্রগতি আমরা পর্যালোচনা করেছি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, অগ্রগতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এটি (বাণিজ্য ঘাটতি) সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে, বাণিজ্য ঘাটতি কমছে। তাতে আমাদের উভয়েরই অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ছে। যে কয়েকটি পণ্যের ওপর ভিত্তি করে আমরা বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা করছি, তার একটি হচ্ছে কৃষিপণ্য, অন্যটি জ্বালানি পণ্য। উভয় পণ্যই এখন সাশ্রয়ী মূল্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিনতে পারছি। তাই আমাদের অগ্রগতি হচ্ছে। এর বাইরেও আমরা প্রচেষ্টায় আছি। পর্যালোচনায় আমাদের অগ্রগতি সন্তোষজনক বলেই আমরা মনে করছি।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তুলার ওপর নির্ভর করে আমরা আমাদের পোশাকশিল্পে আরেকটু অতিরিক্ত শুল্ক আদায়ের চেষ্টা করছি। আমাদের আজকে আলোচনার এটা অন্যতম একটা লক্ষ্য ছিল। আমরা মনে করছি সেক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি আছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। আমরা যদি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারি আমাদের শুল্ক হ্রাসের আরও সম্ভাবনা রয়েছে।
শুল্ক কমানোর বিষয়টি বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর সঙ্গে সংযুক্ত বলেও জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে আমাদের ছয় বিলিয়নের মতো বাণিজ্য ঘাটতি আছে। আগের বারে আমরা কমিটমেন্ট দিয়েছিলাম যে, আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে গম কিনি, সয়াবিন কিনি। তাদের দেশও সারা পৃথিবীতে এগুলো বিক্রি করে। তাদের দেশ থেকে এগুলো আনলে আমরা বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারি, কিছু সুবিধা পেতে পারি। আমরা তাদের জানিয়েছি আমরা যে কমিটমেন্ট করেছিলাম, সেখানে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে। অগ্রগতি হয়েছে তো, গত অর্থবছরে আমরা ৬০০ মিলিয়ন ডলার তুলা কিনেছি। এ বছর দুই মাসেই ২৭৬ মিলিয়ন হয়েছে, গম কিনেছি। বেড়েছে তো। এগুলোই আমরা তাদের বলেছি।
কবে শুল্ক চুক্তি হবে, সে বিষয়ে তারা ফিরে গিয়ে একটা সময় জানাবে বলেও জানান সচিব।
রাশিয়ার চেয়ে বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম কেনা হচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা বলেন, আমেরিকার গম ও রাশিয়ার গমের মধ্যে তুলনামূলকভাবে গুণগত পার্থক্য রয়েছে। আমেরিকার গমের প্রোটিন কনটেন্ট রাশিয়ার গ্রামের প্রোটিন কনটেন্টের চেয়ে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ ভাগ বেশি।
প্রোটিনের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দেশের গমের মূল্যের পার্থক্য হয় বলেও জানান উপদেষ্টা।
যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি বোয়িং-এর থেকে বিমান কেনার বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আজ কেনার অর্ডার দিলাম, সামনের বছর পেয়ে গেলাম এমন ঘটনা ঘটবে না। এটি দীর্ঘমেয়াদে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে।
অর্থনীতি
ফেব্রুয়ারির পর চলে যেতে হবে, মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চাই: অর্থ উপদেষ্টা

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের পর চলে যেতে হবে উল্লেখ করে এর আগেই দেশের মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চান বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাল্টিপারপাস হলে ট্যাক্স রিপ্রেজেন্টেটিভ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (টিআরএমএস) সফটওয়্যারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁর এই মনোভাবের কথা জানান অর্থ উপদেষ্টা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি এনবিআর চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসা করলাম সুফল কি আমরা দেখে যেতে পারব? কারণ, আমাদের ফেব্রুয়ারি মাসের পর চলে যেতে হবে, এর আগে কিছুটা দেখে যাব কি না। প্রধান উপদেষ্টা প্রায়ই আমাকে বলেন, কিছু কিছু কন্ট্রিবিউট করে যাই আমরা। কন্ট্রিবিউট মানে বাইরে অনেক বিরাট, এই সেই… অনেকেই চোখেও দেখে না। করলেও দেখে যে কিছুই হচ্ছে না। আজও দেখলাম কোনো একটা পত্রিকায়… নাম বলব না, সবখানে লিখেছেন হতাশা। উনি আশার কথা কিছুই দেখছেন না মনে হয়। আমি জানি না উনি দেখছেন কি না।
তিনি আরও বলেন, অতএব আমরা মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চাই। কারণ, পরে যে সরকার আসবে সময় লাগবে, বুঝতে সময় লাগবে। আর সদিচ্ছার ব্যাপার আছে। এর মধ্যে যদি কিছুটা আশার আলো দেখাতে পারি।
কর আইনজীবীদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, সেবা খাতে অনেক হয়রানি করা হয়। লোকজনকে ঘোরানো হয়। আমি নিজেও অনেক সময়… মাঝে মধ্যে বলে দিই… আরে দিয়ে দাও না। ড্রাইভারকে বলি ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আমাকে বলো টলো না। এগুলো থেকে যাতে মানুষ নিস্তার পায়। একটু সেবা করেন। মানুষ চায় সেবা। ভালো সেবার ক্ষেত্রে কেউ সেবার মূল্য দিতে কৃপণতা করে না।
টিআরএমএস পুরো প্রক্রিয়া দেশে হওয়ায় সবাইকে সাধুবাদ জানিয়ে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এসব কাজে বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করার অভ্যাসটা বেশি হয়ে গেছে। বাইরে থেকে যারা আসে তারা আবার তাদের দেশের সরঞ্জাম বিক্রির চেষ্টা করে।
এ ধরনের কার্যক্রম সবার জন্য মঙ্গলজনক জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে বা কোম্পানি পর্যায়ে ছাড়াও যারা কর সংগ্রহ করবে তাদের জন্য সুবিধা। সংগ্রহ করতে গেলে কত রকমের কাগজপত্রে লিখতে হয়। পরে কিন্তু অনেক থ্যাংকস-লেস হয়।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, আগামী বছর থেকে কর্পোরেট কর দাখিল পুরোপুরি অনলাইনে বাধ্যতামূলক করা হবে। চলতি বছরই তৈরি করা হবে কর অ্যাপস। কর আদায়ের প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশন করা গেলে অডিট সিলেকশন ও অডিট প্রক্রিয়া অটোমেটেড করা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ট্যাক্স ল ইয়ারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট রমিজ উদ্দিন আহমেদ, ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন এবং ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এম নাসিমূল হাই।
অর্থনীতি
শুল্ক ইস্যুতে আলোচনার জন্য ঢাকায় আসছে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদল

তিনদিনের সফরে ঢাকায় আসছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় পা রাখতে যাচ্ছে প্রতিনিধি দলটি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের বিষয়ে আলোচনা করাই তাদের এ সফরের মূল উদ্দেশ্য বলে নিশ্চিত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্বস্ত এক সূত্র।
তিনদিনের এ সফরে মার্কিন প্রতিনিধিদলটিকে নেতৃত্ব দেবেন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ। ঢাকা সফরকালে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদলটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গেও বৈঠক করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের সঙ্গে এর আগে অনুষ্ঠিত আলোচনা থেকে একটি প্রাথমিক খসড়া চুক্তি তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, ঢাকায় সফরের সময় উভয় পক্ষের মধ্যে এই খসড়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা ও দর কষাকষি হবে। আলোচনার পরই চূড়ান্ত রূপ পাবে খসড়াটি।
এর আগে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছিলেন, বর্তমানে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনার অগ্রগতি হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তৈরি খসড়া চুক্তিতে সম্মতি এলে তা সংশোধন করে চূড়ান্ত করা হবে। এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।