আন্তর্জাতিক
জেলে বসেই বিশ্বের ২৪তম শীর্ষ ধনী বাইন্যান্স প্রতিষ্ঠাতা চ্যাংপেং ঝাও
বলা যায়, কারাদণ্ড একপ্রকার আশীর্বাদই হয়ে এসেছে ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ কোম্পানি বাইন্যান্সের প্রতিষ্ঠাতা চ্যাংপেং ঝাওয়ের জন্যে। ইতিমধ্যেই তিনি পরিণত হয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী কয়েদি এবং ক্রিপ্টোজগতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিতে। এরপর এবার কারাবন্দি থাকা অবস্থায়ই তার সম্পদ বেড়েছে হু হু করে।
ফোর্বসের হিসাবে, চ্যাংপেং ঝাওয়ের সম্পদমূল্য এখন ৬১ বিলিয়ন ডলার। এর সুবাদে তিনি পরিণত হয়েছেন বিশ্বের ২৪তম ধনী ব্যক্তিতে। জুলিয়া কচ ও তার পরিবারের পরই বাইন্যান্স প্রতিষ্ঠাতার অবস্থান এখন।
ক্রিপ্টো জগতে ঝাওয়ের পর দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী কয়েনবেজ-এর প্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান আর্মস্ট্রং। দুজনের মধ্যে সম্পদের ব্যবধানটা বিপুল। আর্মস্ট্রংয়ের সম্পদমূল্য এখন ১১ বিলিয়ন ডলার।
চ্যাংপেং ঝাওয়ের এই সম্পদবৃদ্ধি মূলত দুটো কারণে। এক, তার ইকুইটি স্টেকের ৯০ শতাংশই বাইন্যান্সে। সেখানে তার ৩৩ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ রয়েছে। যদিও গত বছরের নভেম্বরে তিনি বাইন্যান্সের সিইওর পদ ছেড়ে দিয়েছেন।
অর্থপাচারবিরোধী মামলায় তিনি দোষ স্বীকার করে নেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে ঝাওয়ের ৪.৩ বিলিয়ন ডলার জরিমানা তার কোম্পানিই পরিশোধ করে দেয়।
এসব ঘটনায় অবশ্য চ্যাংপেং ঝাওয়ের ব্যক্তিগত সম্পদের ওপর তেমন প্রভাব পড়েনি। কারণ তাকে ৫০ মিলিয়ন ডলার জরিমান দিতে হয়েছে।
ঝাও দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যের আকারের দিক থেকে ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জে আধিপত্য বিস্তার করেছে বাইন্যান্স। দ্য ব্লক-এর তথ্যানুসারে, ঝাও বাইন্যান্স ছাড়ার পরের ছয় মাসে মোট স্পট মার্কেটে কোম্পানিটির হিস্যা দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশ। আর তিনি পদ ছাড়ার আগের দুই মাসে এ বাজারে বাইন্যান্সের হিস্যা ছিল গড়ে ৩৮ শতাংশ।
এছাড়া বিএনবি টোকেনের দরও বেড়েছে। চ্যাংপেং ঝাওয়ের কাছে ১৪৭.৫ মিলিয়ন বিএনবি টোকেন রয়েছে। সম্প্রতি বিএনবির দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ ৭১৪ ডলারে পৌঁছে যায়। ফলে এর মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন পৌঁছে যায় ১১০ বিলিয়ন ডলারে।
বিএনবি বা বাইন্যান্স কয়েন ২০১৭ সালে চালু করা হয়। অর্থ উত্তোলনের এই টুল চ্যাংপেং ঝাও চালু করেছিলেন তার নতুন এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করার জন্য। ক্রিপ্টো প্রজেক্ট চালানো ব্যক্তিরা বিএনবির মতো টোকেন তৈরি করেন। এগুলো স্টকের মতোই ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়।
৪৭ বছর বয়সি চ্যাংপেং ঝাও দুইভাবে তার বিএনবি টোকেন সংগ্রহ করেছেন। ২০১৭ সালে বাইন্যান্স চালু করার পর তিনি ও প্রতিষ্ঠাকালীন দল মোট ২০০ মিলিয়ন বিএনবি সাপ্লাই থেকে ৮০ মিলিয়ন টোকেন পান। ফোর্বসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, প্রথম পাওয়া ৮০ মিলিয়ন টোকেনের মধ্যে কোম্পানিটির কাছে আছে ৪৬.২ মিলিয়ন। বাইন্যান্সের ৯০ শতাংশ মালিকানা ঝাওয়ের কাছে থাকা এর মধ্যে ৪১.৫ মিলিয়ন বিএনবি টোকেন পাবেন তিনি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
সম্রাট নেপোলিয়নের ২ পিস্তলের দাম ২১ কোটি ৬০ লাখ টাকা
ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের নিজের দুটি পিস্তল নিলামে বিক্রি হয়েছে। সেখানে পিস্তল দুটির দাম উঠেছে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ইউরো (১৪ লাখ পাউন্ড)। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২১ কোটি ৬০ লাখ ৮৩ হাজার টাকার সমান। জনশ্রুতি আছে, এই পিস্তল দিয়েই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন নেপোলিয়ন। পিস্তলটির সঙ্গে নেপোলিয়নের জীবনের খারাপ অধ্যায়ের সংযোগ থাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (৮ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
জনশ্রুতি আছে, ১৯ শতকের ফরাসি সাম্রাজ্য নেপোলিয়ন এই পিস্তল দিয়ে ‘আত্মহত্যার চেষ্টা’ করেছিলেন। পিস্তল দুটি প্রস্তুত করেছিলেন ফরাসি বন্দুক নির্মাতা লুই-মারিন। বিক্রেতার আশা ছিল, ১২-১৫ লাখ ইউরোতে পিস্তল দুটি বিক্রি হতে পারে। রোববার (৭ জুলাই) ফন্তেনব্ল্যু প্রাসাদের পাশে ওসেনাত নিলাম কেন্দ্রে পিস্তল দুটি আশাতীত মূল্যে বিক্রি করা হয়।
নিলামের আগে ফ্রান্সের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় নেপোলিয়নের ব্যবহৃত দুটি পিস্তেকে জাতীয় সম্পদ ঘোষণা করেন এবং রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে পিস্তল দুটি নিয়ে ফ্রান্স থেকে কেউ বেরোতে পারবেন না। আর যদি বা বের হয়েই থাকেন, তবে সেটা অল্প সময় পর আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে। পরবর্তী ৩০ মাসের মধ্যে ফরাসি সরকারকে নতুন মালিকের কাছ থেকে পিস্তল দুটি কিনে নিতে হবে।
দুটি পিস্তলেই রয়েছে সোনা ও রূপার আস্তরণ। একপাশে খোদাই করা রয়েছে নেপোলিয়নের ছবিও। এর আগে গত বছর নভেম্বরে ১৯ লাখ ইউরোর বিনিময়ে তার ব্যবহৃত একটি ৩ কোণা টুপি বিক্রি করে দেওয়া হয়।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
বিশ্বে চার বছরে ধনীদের দান বেড়েছে ২৫ শতাংশ
বিশ্বের ধনী মানুষের মধ্যে দান করার প্রবণতা বাড়ছে। একসময় সামাজিক নানা খাতে অর্থ দানের জন্য আলোচনায় ছিলেন হাতে গোনা কয়েকজন শীর্ষ ধনী। এখন সেই ধারা বদলাতে শুরু করেছে। অনেক ধনী এগিয়ে এসেছেন দানে। ফলে দানের পরিমাণও বাড়ছে।
বৈশ্বিক সংস্থা ওয়েলথ এক্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্বের ধনীরা ১৯০ বিলিয়ন বা ১৯ হাজার কোটি মার্কিন ডলার দান করেছেন। ২০১৮ সালের তুলনায় এই পরিমাণ অনেকটাই বেশি। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বিশ্বের অতিধনীরা ২৫ শতাংশ বেশি দান করেছেন। ২০১৮ সালে ধনীরা দান করেছিলেন ১৫ হাজার ২০০ কোটি ডলার।
ওয়েলথ এক্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যাঁদের সম্পদমূল্য ৩ কোটি ডলার বা তার চেয়ে বেশি, সেই শ্রেণির মানুষেরা দানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। ২০২২ সালে ধনীরা যত দান করেছেন, তার মধ্যে ৩৮ শতাংশই ছিল এ শ্রেণির ধনীদের দান। সেই তুলনায় বরং বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতিদের দানের প্রবণতা কম। ২০২২ সালে ধনীরা যত দান করেছেন, তার মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ করেছেন বিশ্বের ৩ হাজার ২০০ জন শতকোটিপতি। ফলে দাতব্য সংস্থাগুলোর এই শ্রেণির ধনীদের কাছ থেকে আরও বেশি দানের অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে দানের ক্ষেত্রে আবার এগিয়ে রয়েছেন উত্তর আমেরিকার ধনীরা। ২০২২ সালের ১৯ হাজার কোটি ডলারের প্রায় অর্ধেক বা ৯ হাজার ১০০ কোটি ডলার দান করেছেন উত্তর আমেরিকার ধনীরা। এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ অঞ্চলের ধনীদের সম্পদ অন্যান্য অঞ্চলের ধনীদের তুলনায় বেশি; সেই সঙ্গে তাঁদের দান করার প্রবণতাও বেশি। ইউরোপের ধনীরা করেছেন মোট দানের এক-তৃতীয়াংশ। তবে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ইউরোপের ধনীদের দানের পরিমাণ ২৯ শতাংশ বেড়েছে।
ওয়েলথ এক্সের আলট্রা হাইনেট ওর্থ ফিলানথ্রফি ২০২৪-শীর্ষক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের তুলনায় এশিয়ার অতিধনীদের দানের প্রবণতা কম। ২০২২ সালে এশিয়ার অতিধনীদের দানের অংশ ছিল মোট দানের মাত্র ১৩ শতাংশ। যদিও বিশ্বের অতিধনীদের বসবাসের দিক থেকে ইউরোপ এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম অঞ্চল।
ওয়ারেন বাফেট ও ধনীদের দান
বিশ্বের অতিধনীদের দানের প্রসঙ্গ এলেই সবার আগে আসে ওয়ারেন বাফেটের নাম। নিজের সম্পদের বড় অংশ ইতিমধ্যে তিনি দান করে দিয়েছেন। শুধু নিজে দান করেই ক্ষান্ত দিচ্ছেন না তিনি; অন্য ধনীদেরও দান করতে উৎসাহিত করছেন। ২০০৯ সালের মার্চের শুরুতে বিল গেটস বাফেটের শহর ওমাহায় এসেছিলেন। বিমানবন্দরের কাছাকাছি একটি রেস্তোরাঁয় ওয়ারেন বাফেট আর বিল গেটস একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেন। সেটা ছিল নতুন এক আলোচনার সূত্রপাত। এরপর বিল গেটস আর ওয়ারেন বাফেট ২০০৯ সালের ৪ মার্চ যৌথভাবে একটি চিঠি লেখেন আরেক শীর্ষ ধনী ডেভিড রকফেলারকে। চিঠিতে তাঁকে একটি নৈশভোজে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
চিঠি পেয়েই তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হন ডেভিড রকফেলার। এরপর ২৪ মার্চ এই তিনজনের স্বাক্ষরে আরেকটি চিঠি পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের আরও কয়েকজনের কাছে। এরপর বহুল আকাঙ্ক্ষিত নৈশভোজটি অনুষ্ঠিত হয় সে বছরের ৫ মে, রকফেলার ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট হাউসে। এই উদ্যোগে শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন বিল গেটসের তৎকালীন স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ওই সব সেরা ধনী, যাঁরা সম্পদের বড় অংশ ভালো কাজে দান করতে আগ্রহী, তাঁদের নিয়ে যৌথ সিদ্ধান্ত নেওয়া।
ওই নৈশভোজের পরই জনসেবা বা জনহিতকর কাজে দানের বিষয়টি নতুন এক ইতিহাস তৈরি করে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় তহবিল সংগ্রহের কাজটি শুরু হয় এর পর থেকেই। তাঁদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ফোর্বস-এর তালিকায় থাকা ৪০০ মার্কিন ধনীকে উদ্বুদ্ধ করা, যাতে তাঁরা অন্তত অর্জিত সম্পদের অর্ধেক দান করেন। এরপরই ২০১০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হয় একটি নতুন উদ্যোগের, নতুন কর্মসূচির। তার আনুষ্ঠানিক নাম ‘দ্য গিভিং প্লেজ’ বা ‘দানের অঙ্গীকার’।
তবে এমন নয় যে, ওই উদ্যোগের আগে কোটিপতিরা দান করতেন না। ২০০৬ সাল থেকেই ওয়ারেন বাফেট নানা ধরনের জনহিতকর কাজে সম্পদ বিলিয়ে দিতে শুরু করেন। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে বাফেট সহায়তা দিচ্ছেন আগে থেকেই। কিন্তু তাঁদের সম্মিলিত উদ্যোগের ভাবনা থেকে সৃষ্টি হয় দ্য গিভিং প্লেজের। শর্ত এখানে দুটি। সম্পদের পরিমাণ হতে হবে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি আর দান করতে হবে সম্পদের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ। অবশ্য বিল গেটস তাঁর সম্পদের ৯৫ শতাংশ আর ওয়ারেন বাফেট ৯৯ শতাংশ দান করার ঘোষণা দিয়েছেন তারও আগে।
সর্বশেষ ওয়েলথ এক্সের প্রতিবেদন থেকে ধনীদের দান করার প্রবণতা বৃদ্ধির যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে, ধারণা করা যায়, বাফেট ও বিল গেটসের উদ্যোগ তাতে ভালো সাড়া ফেলেছে।
এখনকার ধনীদের প্রবণতা
বাফেট ও গেটসের মতো ধনীদের অনুসরণে এখনকার প্রজন্ম অর্থাৎ মিলেনিয়াল (জন্ম ১৯৮১-১৯৯৬) ও জেন–জি (জন্ম ১৯৯৭-২০২১) প্রজন্মের মানুষেরা দান করেই ক্ষান্ত দেন না, বরং সেই অর্থ কোন খাতে ও কীভাবে ব্যয় করা হবে, সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গেও যুক্ত থাকেন তাঁরা। মিলেনিয়াল ও জেন–জি প্রজন্মের মানুষেরা দানের প্রভাব, স্বচ্ছতা ও উদ্ভাবনী বিষয়ে বেশ মনোযোগী।
বিষয়টি এমন, তরুণ বয়সী ধনীদের বিশ্বাসের সঙ্গে মেলে, এমন খাতে তাঁরা দান করতে আগ্রহী। সেই সঙ্গে লক্ষ্য অর্জনে নিজেরাই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করতে চায়। অর্থাৎ তরুণ প্রজন্ম একধরনের রূপান্তর ঘটাতে চায়; এখানেই আগের প্রজন্মের সঙ্গে তাদের পার্থক্য।
দাতারা এখন দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আরও গভীর ও অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে চায়। এখন আর তারা দান করেই কাজ শেষ করতে চায় না। এই বাস্তবতায় জনকল্যাণমূলক সংগঠনগুলোর কার্যক্রমেও পরিবর্তন এসেছে। এখন দাতাদের বোঝাতে তারা বিভিন্ন উদ্যোগের গল্প তৈরি করছে; দাতাদের সঙ্গে আগের চেয়ে বেশি যোগাযোগ রাখছে। দীর্ঘ মেয়াদে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে এর বিকল্প নেই বলেই তারা মনে করছে।
ফাউন্ডেশন বেড়েছে
ওয়েলথ এক্সের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বের অতিধনীদের অর্থাৎ যাঁদের সম্পদমূল্য ৩ কোটি ডলার বা তার বেশি, তাদের প্রতি পাঁচজনে একজনের ফাউন্ডেশন আছে। ১০ কোটি ডলারের মালিক, এমন ধনীদের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন আছে প্রায় প্রতি তিনজনে একজনের। এরা অবশ্য মূলত বয়স্ক মানুষ। এদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা কিছুটা বেশি। এই ধনীরা মূলত উত্তরাধিকারসূত্রে পারিবারিক সম্পদ পেয়েছেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
ইতিহাসে উষ্ণতম বছর হতে যাচ্ছে ২০২৪, জুনে ভাঙল রেকর্ড
গত মাস ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম জুন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্লাইমেট চেঞ্জ মনিটরিং সার্ভিস আজ সোমবার এ কথা জানিয়েছে। কিছু বিজ্ঞানী বলছেন, প্রায় প্রতি মাসে অস্বাভাবিক মাত্রায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ২০২৪ হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর।
মাসিক এক বুলেটিনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সি৩এস) জানায়, গত বছরের জুন থেকে এ পর্যন্ত ১৩ মাসের প্রতি মাসেই তাপমাত্রা আগের রেকর্ড ভেঙেছে।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, উষ্ণতম বছর হিসেবে ২০২৩ সালকে ছাড়িয়ে যাবে ২০২৪। এটি হতে যাচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং এল নিনো; উভয়ই চলতি বছরের এ পর্যন্ত তাপমাত্রাকে রেকর্ড উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
বার্কেলি আর্থের গবেষক বিজ্ঞানী জেক হসফাদার বলেন, ‘ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। এর পর থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হতে যাচ্ছে ২০২৪। আমি এখন অনুমান করছি যে উষ্ণতম বছর হওয়ার দিক থেকে ২০২৪ সাল ২০২৩-কে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯৫ শতাংশ।’
বিশ্বজুড়ে পরিবর্তিত জলবায়ু এরই মধ্যে ভয়ানক পরিণতি ঢেকে এনেছে। গত মাসে পবিত্র হজ পালনের সময় ভয়াবহ গরমে এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। নয়াদিল্লিতে লম্বা সময় ধরে নজিরবিহীন তাপপ্রবাহ চলছে। অতিরিক্ত গরমে সেখানে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গ্রিসেও এ বছর গরমের কারণে বেশ কয়েকজন পর্যটক মারা যান।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গ্র্যানথাম ইনস্টিটিউটের জলবায়ুবিজ্ঞানী ফ্রেডেরিক ওটো বলেন, ২০২৪ সাল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হওয়ার সর্বোচ্চ সম্ভাবনা আছে। তিনি আরও বলেন, ‘এল নিনো একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। এটি আসবে আর যাবে। আমরা এল নিনো রুখতে পারব না, তবে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লা পোড়ানো বন্ধ করতে পারি।’
এল নিনো এমন একটি প্রাকৃতিক ঘটনা, যা পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের পানির উপরিভাগকে উষ্ণ করে তোলে। এর ফলে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় এল নিনোর প্রভাব কিছুটা কমেছে। পৃথিবী আবহাওয়া এখন এল নিনো ও লা নিনার মাঝামাঝি অবস্থায় আছে। এ বছরের শেষ দিকে লা নিনা শুরু হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ। আর এটি হয় জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের কারণে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমানোর প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত বিশ্বের দেশগুলো সম্মিলিতভাবে এই নিঃসরণ কমাতে ব্যর্থ হয়েছে, যা তাপমাত্রাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
গত জুন পর্যন্ত ১২ মাসে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ছিল আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত যে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, তার তুলনায় এই তাপমাত্রা ১ দশমিক ৬৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্যের লক্ষ্যে ইরান-রাশিয়ার মধ্যে চুক্তি
নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্যের লক্ষ্যে রাশিয়ার সঙ্গে প্রথম দ্বিপক্ষীয় আর্থিক চুক্তি করেছে ইরান। পার্স টুডের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
রানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মোহাম্মদ রেজা ফারজিনের বরাত দিয়ে পার্স টুডে জানিয়েছে- সেন্ট পিটার্সবার্গে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সাথে বৈঠকের পর জাতীয় মুদ্রায় বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে তারল্য সরবরাহের জন্য একটি দ্বিপক্ষীয় আর্থিক চুক্তি সই হয়েছে।
ফারজিন বলেন, শিগগিরই ইরানি স্বর্ণ এবং মুদ্রা বিনিময় সেন্টারে অফশোর রিয়ালের ভিত্তিতে লেনদেনের জন্য অবকাঠামো উদ্বোধন করা হবে এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক ও ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করা হবে।
ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, আর্থিক চুক্তির ভিত্তিতে দুই দেশের স্থানীয় মুদ্রা অর্থাৎ রিয়াল ও রুবলের সাহায্যে লেনদেন হবে এবং অন্য কোনো মুদ্রা ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে না। এটি দেশের বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে একটা বড় অগ্রগতি এবং এর ফলে স্থানীয় মুদ্রাকে অন্য মুদ্রায় পরিবর্তন করার কারণে সৃষ্ট অনেক ঝুঁকি দূর হবে। ইরানি ও রুশ ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে আর্থিক ও ব্যাংকিং সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে ফারজিন বলেন, দুই পক্ষের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ইরানের শেতাব নেটওয়ার্কের সাথে রাশিয়ান মির কার্ড পেমেন্ট নেটওয়ার্কের সংযোগের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপটি এই মাসের শেষের দিকে শেষ হবে এবং ইরানের নাগরিকরা আগামী মাস থেকে তা ব্যবহার করতে পারবে। ইরানি নাগরিকরা রাশিয়ার এটিএম বুথগুলো থেকে রুবল গ্রহণ করতে পারবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
মালয়েশিয়ান পাম অয়েলের দাম কমেছে
আন্তর্জাতিক বাজারে মালয়েশিয়ার পাম অয়েলের দাম কমেছে। শুক্রবার বুরসা মালয়েশিয়া ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জে পাম অয়েলের সেপ্টেম্বরের সরবরাহ চুক্তি মূল্য দশমিক ৬৬ শতাংশ বা ২৭ রিঙ্গিত কমেছে। এতে তেলপণ্যটির চুক্তি মূল্য দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ৪ হাজার ৪০ রিঙ্গিত বা ৮৫৮ ডলার ৩০ সেন্ট।
তবে সপ্তাহের শেষে দাম কিছুটা কমলেও টানা দুই সপ্তাহ ধরে ভালো সময় পার করছে পাম অয়েলের বাজার। সর্বশেষ লেনদেন হওয়া সপ্তাহে তেলপণ্যটির চুক্তি মূল্য ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়েছে। মুম্বাইভিত্তিক ভোজ্যতেল বিক্রেতা কোম্পানি সানভিন গ্রুপের গবেষণাপ্রধান অনিলকুমার বাগানি বলেন, মালয়েশিয়ায় মঙ্গলবার ছুটির দিন। একে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা পাম অয়েল বিক্রি বাড়িয়ে দিয়েছেন, যাতে দ্রুত মুনাফা অর্জন করতে পারেন। ফলে সপ্তাহ শেষে দাম কিছুটা কমেছে।
মঙ্গলবার ছুটির দিন উপলক্ষে মালয়েশিয়ায় পাম অয়েলের লেনদেন বন্ধ থাকবে। বুধবার থেকে আবারো বেচাকেনা শুরু হবে।
এদিকে বুরসা মালয়েশিয়া ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জের সঙ্গে অন্য মার্কেটগুলোয়ও পাম অয়েলের দাম কমেছে। ডালিয়ান কমিডিটি এক্সচেঞ্জে পাম অয়েলের ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তি মূল্য ১ শতাংশ ও সয়াবিন তেলের চুক্তি মূল্য দশমিক ৯৭ শতাংশ কমেছে। শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে ছুটির দিন উপলক্ষে লেনদেন বন্ধ ছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েল অন্য ভোজ্যতেলগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। ফলে অন্য ভোজ্যতেলের দামের ওঠানামায় পাম অয়েলের দামও প্রভাবিত হয়।
রয়টার্সের এক জরিপে দেখা যায়, রফতানি কমার কারণে জুনে মালয়েশিয়ায় পাম অয়েল মজুদ টানা তৃতীয় মাসের মতো বেড়েছে। দেশটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাম অয়েল উৎপাদক দেশ। গত মাসে দেশটিতে পাম অয়েল উৎপাদনও কমে গেছে। জরিপের তথ্য বলছে, গত মাসে দেশটিতে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন পাম অয়েল মজুদ ছিল, যা মে মাসের মজুদের চেয়ে ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। আগামী বুধবার জুনের পাম অয়েল বেচাকেনার পূর্ণ বিবরণী প্রকাশ করবে মালয়েশিয়ান পাম অয়েল বোর্ড।
এদিকে মালয়েশিয়ায় গত শুক্রবার জ্বালানি তেলের দাম চতুর্থ সপ্তাহের মতো বেড়েছে। গ্রীষ্ম মৌসুমে চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা ও সরবরাহ নিয়ে শঙ্কার কারণে দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির দাম বাড়ছে। সাধারণত জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে বায়ো-ডিজেল তৈরিতে পাম অয়েলের ব্যবহার বাড়ে। ফলে পাম অয়েলের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
প্রসঙ্গত, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া বিশ্বের শীর্ষ পাম অয়েল উৎপাদক। সিংহভাগ সরবরাহই আসে এ দুই দেশ থেকে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয় পাম অয়েলের। বিপুল সরবরাহ ও প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য তেলের তুলনায় সাশ্রয়ী হওয়ায় ব্যবসায়ীদের কাছে এর কদর বেশি।