অর্থনীতি
আরও ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ পাবেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের আরও ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ দেবে এসএমই ফাউন্ডেশন। একজন উদ্যোক্তা সর্বনিম্ন এক লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। তবে মূলধনী যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন উদ্যোক্তারা।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে চুক্তি সই করেন অংশীদার ১৯টি ব্যাংক ও ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা। বুধবার (১২ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ঋণ দেওয়ার জন্য চুক্তি করা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, দি প্রিমিয়ার ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাকিয়া সুলতানা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আব্দুর রহমান খান।
ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা
১. অগ্রাধিকারভুক্ত এসএমই সাব-সেক্টর, ক্লাস্টারের উদ্যোক্তা এবং ভ্যালু চেইনের আওতাভুক্ত উদ্যোক্তা।
২. রপ্তানি উপযোগী পণ্য এবং আমদানি বিকল্প পণ্য প্রস্তুতকারী উদ্যোক্তা।
৩. আইসিটি ও প্রযুক্তিনির্ভর সৃজনশীল ব্যবসায়ে যুক্ত তরুণ ও নতুন উদ্যোক্তা যারা এখনো ব্যাংক থেকে ঋণ পাননি।
৪. পশ্চাৎপদ অঞ্চল, উপজাতীয় অঞ্চল, শারীরিকভাবে অক্ষম এবং তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তা।
৫. দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত ট্রেডবডি, এসএমই অ্যাসোসিয়েশন, নারী উদ্যোক্তা সংগঠন, নাসিব, উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সুপারিশ করা উদ্যোক্তা।
করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এসএমই ফাউন্ডেশনের অনুকূলে বরাদ্দ ৩০০ কোটি টাকা বিতরণের পর অর্থ বিভাগের পরামর্শে ‘রিভলভিং ফান্ড’ থেকেও এসএমই উদ্যোক্তা, ক্লাস্টার, ক্লায়েন্টেল গ্রুপ, অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বারের সদস্য এবং নারী-উদ্যোক্তাদের মাঝে ২৯৪ কোটি ঋণ বিতরণ করা হয়। অর্থ বিভাগের নতুন পরামর্শ মোতাবেক এই ঋণের সুদহার হবে মাত্র ৬ শতাংশ। এ লক্ষ্যে ২৩টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
অনুষ্ঠানে এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। অংশীদার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে জামানতবিহীন ঋণ বিতরণের বিষয়ে উৎসাহিত করা হবে। তবে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো জামানত গ্রহণ করা হবে না। গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা হবে সর্বোচ্চ ৪ বছর। গ্রাহক-ব্যাংক সম্পর্কের ভিত্তিতে ৬ মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৪৮টি মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে। মোট ঋণের ৩০ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তাদের মাঝে এবং ১০ শতাংশ এসএমই ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করতে হবে।
নারী-উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে মোট ঋণের ৫০ শতাংশ উৎপাদন ও সেবা খাতে এবং বাকি ৫০ শতাংশ ভ্যালুচেইন ও অন্যান্য খাতে বিতরণ করতে হবে। আর পুরুষ উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে মোট ঋণের ৫০ শতাংশ উৎপাদন খাতে, ২৫ শতাংশ সেবা খাতে এবং ২৫ শতাংশ ভ্যালুচেইন ও অন্যান্য খাতে বিতরণ করতে হবে।
তবে অনুৎপাদনশীল খাত যেমন, মুদি দোকান, ওষুধ বিক্রেতা, হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী এবং পরিবেশ দূষণ ঘটায় এমন ব্যবসার অনুকূলে এ কর্মসূচির আওতায় ঋণ দেওয়া হবে না।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও তাঁর স্ত্রী জাসদের সহসভাপতি আফরোজা হকের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে আজ সোমবার এ–সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছে।
নির্দেশনায় বিএফআইইউ জানিয়েছে, ব্যাংকের শাখায় উল্লিখিত ব্যক্তিরা এবং তাঁদের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো হিসাব পরিচালিত হয়ে থাকলে সেসব হিসাবের লেনদেন ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হলো।
লেনদেন স্থগিতের পাশাপাশি উল্লিখিত ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবসংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল (হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী ইত্যাদি) বিএফআইইউতে পাঠানোর জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা ও দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের নেতা হাসানুল হক ইনু ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেওয়া হলো।
জোটের অন্যতম শরিক দল জাসদ। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারে একসময় তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৪-দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে কুষ্টিয়ার একটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে হেরে যান। হাসানুল হক ইনুর স্ত্রী আফরোজা হক একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য ছিলেন।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
আওয়ামী সরকারের আমলে ডলারের দাম বেড়েছে ৭৯ শতাংশ
আওয়ামী সরকারের আমলে বিগত ১৫ বছরে মূল্যস্ফীতির ভয়াবহ চাপে টাকার মানে ধস নেমেছিল। মার্কিন ডলারের বাজার হয়েছিল লাগামহীন। মুদ্রাবাজার, পুঁজিবাজার ও ডলার বাজার (বৈদেশিক মুদ্রা)- অর্থনীতির এই তিন খাত প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ৬৭ টাকার ডলার ১২০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছায়। সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে দেশ থেকে কোটি কোটি ডলার পাচার ও ব্যাংক ব্যবস্থায় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিরি সৃষ্টি হয়। মুদ্রাবাজারে ভয়াবহ দুর্নীতির কারণে ডজনের বেশি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়। কয়েকটি ব্যাংক মার্জার করতে বাধ্য হয়। শেষ দিকে এ ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার কোনো সরবরাহ ছিল না। ফলে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় সব ধরনের লেনদেন। পুঁজিবাজার থেকেও হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেন হাসিনা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ লোকেরা। যার পুরোটা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। ডলারসংকটের কারণে এলসি বন্ধ করতে হয়েছে। ফলে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ব্যবসা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে।
জানা গেছে, ২০০৮ সালের অক্টোবরে দেশে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ওই বছরের অক্টোবরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার টাকা বৃদ্ধি পায়। এই বৃদ্ধির সূচক আর থামেনি। প্রতিবছর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। বেড়েছে ব্যাংক লুটপাট। ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ঋণ নিয়ে ব্যাংক দেউলিয়া করে দেওয়া হয়েছে। অনিয়ম-জালিয়াতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, লুটপাটে অংশীদারদের হাতে ব্যাংকব্যবস্থা ছেড়ে দেওয়া হয়। তারা নতুন ব্যাংক অনুমোদন দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা লুট করেছে। এর চাপ পড়ে দেশের পুরো অর্থনীতিতে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো লুটপাটের কেন্দ্রে পরিণত করা হয়। ব্যাংকের টাকা লুট করে ডলারে রূপান্তর করে কোটি কোটি ডলার পাচার করে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় প্রতি ডলারের দাম ছিল ৬৭ টাকা। এই দর বেড়ে ২০১১ সাল পর্যন্ত ডলারের বিনিময় হার ওঠানামা করে ৬৯ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। ২০১২ সাল থেকে ডলারের দাম এক লাফে ৭৬ টাকায় পৌঁছায়। ২০১৪ সালে হাসিনা সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ডলার বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। ব্যাংক থেকে নানা জালিয়াতি করে অবাধে ডলার পাচার শুরু হয়। সরকার বিদেশি ঋণ এনে এই ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করে।
টাকার অবমূল্যায়ন করা হয় কয়েক দফা। এতে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি তো হয়নি, বরং তা অর্থ পাচারকারীদের আরও সহায়তা করে। বাড়তে থাকে ডলারের সংকট, সেই সঙ্গে ডলারের দর। ২০১৭ সালের অক্টোবরে ডলারের দর ছিল ৮০ টাকা, ২০২০ সালে ৮৩ টাকা। ২০২১ সালে ৮৫ টাকা। এর পর ২০২২ সালে হাইজাম্প দিয়ে ডলারের দর পৌঁছায় ১০০ টাকা। পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে ওঠে। ডলারের চরম সংকট দেখা যায়। ২০২৩ সালে খোলাবাজারে ডলার দর ১৩০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। এর পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচন নীতির কারণে ডলারের দর কিছুটা কমে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রলিং পদ্ধতি চালু করলে ডলারের দর ১২০ টাকায় ওঠানামা করে।
২০১৬ সালে এসে ব্যাংক খাতে বড় কয়েকটি জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশিত হয়। সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংকের কেলেঙ্কারি। দুই ঘটনায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা সামনে আসে। এতে ব্যাংক খাতে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। এই জালিয়াতির পুরো টাকা ডলারে রূপান্তর করে দুবাই, সিঙ্গাপুর পাচার করার বিষয়টি প্রকাশ পায়। দেশের মূল্যস্ফীতির ভয়াবহ সংকটে পড়ে দেশের অর্থনীতি। সরকার এই নৈরাজ্য ঠেকানোর পরিবর্তে আরও উৎসাহিত করার পদক্ষেপ নেয়। ব্যাংকের নেতৃত্বে এনে বসানো হয় হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের। যাদের বিরুদ্ধে বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগ ছিল তাদের হাতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন ব্যাংকগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়। মিথ্যা ঘোষণায় এলসি করে রপ্তানি দেখানো হলেও সেই মূল্য দেশে না এনে বিদেশে পাচার করা হয়। এতে টাকার মান কমতে কমতে গিয়ে একেবারে তলানিতে ঠেকে।
টাকার মান কমতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। ২০১০ সালে জানুয়ারি মাসে দেশে সোনার (২২ ক্যারট) ভরি ছিল ৩২ হাজার ৮৯২ টাকা। ২০২৪ সালে জানুয়ারিতে এসে ভরি দাঁড়ায় ১ লাখ ১২ হাজার ৪৪০ টাকা। অর্থাৎ ১৫ বছরে টাকার অবমূল্যায়ন সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়িয়েছে ভয়াবহভাবে। ২০১০ সালে যে মোটা চালের কেজি ছিল ২৪ থেকে ২৬ টাকা। এখন সেটা ৬০ টাকার ওপর। ২০১০ সালে গরুর মাংসের কেজি ছিল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। ২০২৩ সালে গরুর মাংসের কেজি হয় ৮০০ টাকার ওপর। বিগত সরকার নতুন টাকা ছাপিয়ে ঋণ নিয়ে উন্নয়ন বাজেটে ব্যবহার করে দেশের অর্থনীতিকে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়।
ক্রমবর্ধমান ব্যয় ও দুর্বল চাহিদার কারণে দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যবসা প্রভাবিত হয়েছে। দেশের ব্যবসা পরিস্থিতি নিয়ে ২৫টিরও বেশি খাতের বহুজাতিক, স্থানীয় বড় কোম্পানি, স্টার্টআপ ও এসএমই খাতের ১৬৭টি কোম্পানি নিয়ে একটি জরিপে বলা হয়েছে, টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন ছাড়াও আর্থিক অনিয়ম, উচ্চখেলাপি, নগদ ঘাটতি ও সঞ্চয় হ্রাসের ফলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং কর্মক্ষম নগদ প্রবাহের ঘাটতি কোম্পানিগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিদেশি মুদ্রার বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করায় অনেক বেসরকারি কোম্পানিও বর্তমানে ক্ষতির সম্মুখীন। ডলারের বিপরীতে টাকার তীব্র অবমূল্যায়নের পাশাপাশি বিলম্বিত এলসি পেমেন্ট সেটেলমেন্টের কারণে এ ধরনের ক্ষতি বাড়ছে বলে খাত-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে যেসব কোম্পানির বিদেশি ঋণ রয়েছে এবং উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামাল বেশির ভাগই আমদানিনির্ভর।
জানতে চাইলে, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ডলারের এই উচ্চ দরের কারণে দেশের মূল্যস্ফীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কঠিন করে তুলেছে। ভোক্তাদের এই দুর্গতির এখনো পরিবর্তন হয়নি। যারা বড় খেলাপি তাদের সুবিধা হয়েছে। তাদের মূল্যস্ফীতে কোনো সমস্যা হয়নি। হয়েছে দেশের অর্থনীতির, দেশের সাধারণ মানুষের।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সাবেক মেয়র তাপসের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার স্ত্রী আফরিন তাপস শিউলি ও ছেলে শেখ ফজলে নাশওয়ান এবং তাদের ব্যক্তি মালিকানাধীন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়ে অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ হয়েছে।
সোমবার (৭ অক্টোবর) বিএফআইইউ’র সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। হিসাব জব্দ করা ব্যক্তির ও তার ব্যক্তি মালিকানা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট স্থগিত থাকবে। আগামী ৩০ দিন এসব হিসাবে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবে না। প্রয়োজনে লেনদেন স্থগিত করার এ সময় বাড়ানো হবে।
লেনদেন স্থগিত করার এ নির্দেশের ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা সংশ্লিষ্ট ধারা প্রযোজ্য হবে বলে বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে ফজলে নূর তাপসের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেওয়া হয়েছে।
বিএফআইইউর নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, যেসব হিসাব স্থগিত করা হয়েছে তাদের হিসাবসংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী যাবতীয় তথ্য চিঠি দেওয়ার তারিখ থেকে ২ কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউতে পাঠাতে হবে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সাবেক আইনমন্ত্রীর দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক
দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ সোমবার (৭ অক্টোবর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম।
সূত্র জানায়, তাদের দুজনের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রকল্পে অনিয়মসহ দেশে-বিদেশে বিপুল অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের তথ্য আমলে নেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমের বিরদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। আনিসুল হক মন্ত্রী থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। নিজ নামে কসবা, ত্রিশাল এবং পূর্বাচলে ৬.৮০ একর জমি কিনেছেন। সিটিজেন ও এক্সিম ব্যাংকে তার শেয়ারের পরিমাণ ৪০ কোটি ১০ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্র, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা এবং অন্যান্য বিনিয়োগ ২৩ কোটি ২৬ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮৪ টাকা, এবং ৪টি গাড়ি ও একটি মোটরসাইকেল রয়েছে তার।
এছাড়া অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমের নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে অঢেল সম্পদ রয়েছে। তৌফিকা করিম সিটিজেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন বিধায় তার মাধ্যমে আনিসুল হক কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করতেন। তিনি নিম্ন আদালতের অধিকাংশ কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নিতেন। সাবেক আইনমন্ত্রীর সব দুর্নীতির সঙ্গে তৌফিকা করিমের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ১০ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির জন্য সারা দেশে টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। সোমবার (৭ অক্টোবর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রতি জেলায় টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও সদস্য হিসেবে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক দায়িত্ব পালন করবেন।
দশ সদস্যের টাস্কফোর্সের অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বা উপযুক্ত প্রতিনিধি, জেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা বা উপযুক্ত প্রতিনিধি, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বা উপযুক্ত প্রতিনিধি, কৃষি বিপণন কর্মকর্তা/সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা, ক্যাবের প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দুজন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর বাজার পরিস্থিতি ও সরবরাহ চেইন তদারক ও পর্যালোচনার জন্য জেলা পর্যায়ে এ ‘বিশেষ টাস্কফোর্স’ গঠন করা হলো।
এমআই