আন্তর্জাতিক
ব্রিকসে আপাতত নতুন সদস্য নয়, যুক্ত হবে অংশীদার রাষ্ট্র

উদীয়মান জাতীয় অর্থনীতির জোট ব্রিকসে এমুহুর্তে আর কোনো নতুন সদস্য নেওয়া হবে না। তবে পূর্ণ সদস্যের পরিবর্তে এ জোটে ‘অংশীদার রাষ্ট্র’ মডেলে ভবিষ্যতে নতুন দেশকে যুক্ত করা হবে। ব্রিকসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সোমবার (১০ জুন) রাশিয়ার মধ্যাঞ্চলীয় নিঝনি নোভগ্রোদ শহরে শুরু হয়েছে ব্রিকসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দুই দিনের এ বৈঠক। জোটের সদস্য হতে আগ্রহী কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশও।
ব্রিকসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ১ জুন বৈঠকে যোগ দিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি লেখেন। যদিও আমন্ত্রিত দেশের প্রতিনিধিরা সরাসরি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে নয়, তাঁদের জন্য নির্ধারিত আলাদা একটি ফোরামে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ নন, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি যোগ দিচ্ছেন।
জানা গেছে, বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পরিবর্তে সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি অংশ নেবেন। কারণ, একই সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সৌদি আরবে পূর্বনির্ধারিত সফর রয়েছে।
ভারতের হিন্দু বিজনেস লাইনের খবরে বলা হয়েছে, ব্রিকসের পরিধি বৃদ্ধির ফলে চীনের প্রভাব বাড়তে থাকবে। চীনের এ প্রভাবের লাগাম টানতে ভারত নতুন করে আরও কয়েকটি দেশকে সদস্যপদ দেওয়ার আগে পাঁচ বছরের বিরতি দিতে বলেছে। ভারতের এমন অবস্থানে সায় আছে ব্রাজিলের।
ব্রিকসের পরিধি বাড়ানোর আগে বিরতি নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের মনোভাবের বিপরীতে চীনের অবস্থান। ৩ জুন বেইজিংয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আলোচনায় চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সুন ওয়েডং বাংলাদেশের ব্রিকসের সদস্য হতে তাঁর দেশের সমর্থনের কথা জানান।
এখন ভারতের এমন মনোভাবের কারণে জোটের সদস্য হতে বাংলাদেশসহ অন্তত ১০টি দেশকে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
ঢাকা ও মস্কোর কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ব্রিকসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশকে একেবারে শেষ মুহূর্তে আমন্ত্রণ জানায় রাশিয়া। এ আমন্ত্রণের জন্য নানামুখী তৎপরতা চালানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পরিবর্তে সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে বৈঠকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তা রাশিয়াকে অসন্তুষ্ট করতে পারে।
ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি ৩ জুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে তাঁর দপ্তরে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি হাছান মাহমুদের হাতে সের্গেই লাভরভের চিঠি তুলে দেন। ওই সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী অন্য কাউকে ব্রিকসের বৈঠকে পাঠানোর বিষয়টি উল্লেখ করেন।
হাছান মাহমুদকে ব্রিকসের বৈঠকে যোগ দিতে সের্গেই লাভরভের চিঠি সম্পর্কে জানতে ঢাকায় রুশ দূতাবাসে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তবে দূতাবাস এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অনীহা প্রকাশ করেছে।
প্রাথমিকভাবে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা এ পাঁচ দেশ ব্রিকস গঠন করেছিল। গত বছরের আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত ব্রিকসের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলনে সৌদি আরব, আর্জেন্টিনা, ইরান, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইথিওপিয়াকে সদস্য হতে আমন্ত্রণ জানায় ব্রিকস। পরে জোটের সদস্য করা হয় আর্জেন্টিনা বাদে বাকি পাঁচ দেশকে।
এসএম

আন্তর্জাতিক
যুক্তরাজ্যে গোপনে সম্পত্তি বিক্রি করে দিচ্ছেন আ.লীগ নেতারা

দেশে শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে দেশ থেকে বিপুল অর্থ বিদেশে পাচারের তদন্ত করছে অন্তর্বর্তী সরকার। ধারণা করা হয়, এর একটি বড় অংশই পাচার হয়েছে যুক্তরাজ্যে। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এর শীর্ষ নেতারা এবং হাসিনার আস্থাভাজন বিভিন্ন ব্যবসায়ী গোষ্ঠীই এই সম্পদ পাচারের মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন।
তবে হাসিনার সরকারের পতনের এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই যুক্তরাজ্যে বসবাসরত সাবেক ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের বিলাসবহুল সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রি ও পুনঃঋণায়নের (রিফাইন্যান্স) প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ব্রিটিশ প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এবং আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-এর এক যৌথ অনুসন্ধানে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরপরই যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি লেনদেনের তৎপরতা বাড়তে শুরু করে। বিশেষ করে বিলাসবহুল এলাকাগুলোর বাড়িঘর ও অ্যাপার্টমেন্ট নিয়ে শুরু হয় অস্বাভাবিক রকমের বিক্রয় ও ফ্রিজিং কার্যক্রম।
২০২৪ সালের মে মাসে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) প্রায় ১ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা মূল্যের একটি অ্যাপার্টমেন্ট জব্দ করে, যার মালিকানা ছিল হাসিনার সাবেক বিনিয়োগ উপদেষ্টা ও বেক্সিমকোর ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান রহমান এবং ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের। এর কিছুদিন পরই সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে থাকা প্রায় ২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকার ৩০০টির বেশি সম্পত্তি জব্দ করা হয়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শুধু গত এক বছরেই যুক্তরাজ্যের জমি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছে অন্তত ২০টি উল্লেখযোগ্য সম্পত্তি লেনদেনের আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহানের নামে নাইটসব্রিজে চারতলা বাড়ি, যেটি প্রথমে হস্তান্তর, পরে বিক্রি করা হয় এক গোপন হিসাবরক্ষকের মালিকানাধীন কোম্পানির কাছে (মূল্য ৭.৩৫ মিলিয়ন পাউন্ড)।
তার ভাই শাফিয়াত সোবহান সারে’র ভার্জিনিয়া ওয়াটারে ৮ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি প্রাসাদোপম ম্যানসনের মালিকানা পরিবর্তন করেন।
সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ভাই আনিসুজ্জামান ২০২৪ সালের জুলাইয়ে রিজেন্টস পার্কে অবস্থিত ১০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের টাউনহাউস বিক্রি করেন এবং আরও তিনটি সম্পত্তির জন্য ‘রিফাইন্যান্স’ আবেদন করেন।
এদিকে, সালমান এফ রহমানের পরিবারের মালিকানাধীন লন্ডনের গ্রোসভেনর স্কয়ারে ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ইতোমধ্যে এনসিএ কর্তৃক ফ্রিজ করা হয়েছে।
তবে এই পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে—বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হচ্ছে এবং তারা যেকোনো তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যতক্ষণ না তদন্ত শেষ হচ্ছে, ততক্ষণ যেন এসব সম্পত্তি বিক্রি, স্থানান্তর বা বন্ধক রাখতে না দেওয়া হয়। গভর্নর মনসুর বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত, অনেকেই ইতোমধ্যে সম্পদ বিক্রির চেষ্টা করছেন। তাই কঠোরভাবে এসব সম্পদ ফ্রিজ করা অত্যন্ত জরুরি।’
ব্রিটেনের সংসদীয় দুর্নীতিবিষয়ক অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের প্রধান জো পাওয়েল বলেন, ‘ইতিহাস বলছে—যদি যথাসময়ে সম্পদ জব্দ করা না হয়, সেগুলো মুহূর্তেই গায়েব হয়ে যায়। লন্ডন যেন দুর্নীতিপরায়ণ ধনীদের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।’
তদন্তে আরও প্রশ্ন তোলা হয়েছে, এই বিপুল সম্পত্তির লেনদেনে যুক্তরাজ্যের আইনজীবী ও পরামর্শদাতারা যথাযথ যাচাইবাছাই করেছেন কি না? তাদের ভূমিকা ও সতর্কতা নিয়ে ইতোমধ্যেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অনুসন্ধান কেবল বাংলাদেশে দুর্নীতির চিত্র উন্মোচন করছে না, বরং আন্তর্জাতিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের নীতি ও দায়িত্ববোধকেও এক কঠিন পরীক্ষার মুখে দাঁড় করিয়েছে।
আন্তর্জাতিক
শুল্কের প্রভাব, মার্কিন পরিবারের ব্যয় বাড়তে পারে ২৪০০ ডলার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক ঘোষণার ফলে মার্কিন ভোক্তাদের ব্যয় বাড়বে। তামা ও বিদেশি পণ্যে নতুন শুল্ক কার্যকর এবং তা স্থায়ী হলে চলতি বছর মার্কিন পরিবারগুলোকে গড়ে অতিরিক্ত ২ হাজার ৪০০ ডলার ব্যয় করতে হতে পারে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ট্রাম্পের বিভিন্ন শুল্কের কারণে মার্কিন ভোক্তাদের ক্ষেত্রে গড় কার্যকর শুল্কহার দাঁড়াবে প্রায় ১৮ শতাংশ, যদি ঘোষিত শুল্ক কার্যকর হয় এবং তা বহাল থাকে। গবেষকেরা বলছেন, এটি হবে ১৯৩৪ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কার্যকর হওয়া সর্বোচ্চ শুল্কহার। খবর ফোর্বস ম্যাগাজিন
গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, এসব শুল্কের ফলে স্বল্প মেয়াদে মার্কিন ভোক্তা মূল্যস্ফীতি হতে পারে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। যার অর্থ হলো ২০২৫ সালে প্রতিটি মার্কিন পরিবার গড়ে বাড়তি দামে পণ্য কিনতে গিয়ে ২ হাজার ৪০০ ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
এ ক্ষতির মধ্যে ফেডারেল রিজার্ভ যদি সুদের হার কমানোর মতো পদক্ষেপ নেবে কি না, তার প্রভাব বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। সুদহার হার কমলে মার্কিন পরিবারের অর্থনীতিতে বাড়তি প্রভাব পড়তে পারে, অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, এই শুল্কনীতির কারণে চলতি বছরে বেকারত্বের হার বাড়তে পারে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। মার্কিন অর্থনীতির মোট উৎপাদন বা জিডিপি শূন্য দশশিক ৭ শতাংশ কমে যেতে পারে। এই শুল্ক দীর্ঘ মেয়াদে বহাল থাকলে জিডিপি প্রতিবছর গড়ে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ কমবে। ফলে প্রতিবছর আনুমানিক ১১০ বিলিয়ন বা ১১ হাজার কোটি ডলারের ক্ষতি হতে পারে।
যদিও নির্মাণ ও কৃষি খাতের ওপর এ শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গবেষকেরা বলছেন, মার্কিন উৎপাদন খাতের ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ট্রাম্পের শুল্ক সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসতে পারে পোশাক, টেক্সটাইল ও জুতার বাজারে। স্বল্প মেয়াদে এসব পণ্যের দাম ৩৭ থেকে ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। যদিও দীর্ঘ মেয়াদে এ মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা হ্রাস পেয়ে ১৮ শতাংশের আশপাশে স্থির হতে পারে।
এ ছাড়া ধাতু, চামড়ার পণ্য ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির দামেও বড় ধরনের ধাক্কা আসতে পারে। স্বল্প মেয়াদে দাম বেড়ে যেতে পারে যথাক্রমে ৪৩, ৩৯ ও ২৬ শতাংশ পর্যন্ত। মোটরযান, ইলেকট্রনিকস ও রাবার-প্লাস্টিকজাত পণ্যের দামও ১১ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
খাদ্যপণ্যে মূল্যবৃদ্ধির চাপ তুলনামূলকভাবে কম হলেও নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে সবজি, ফলমূল ও বাদামজাত পণ্যের দাম গড়ে ৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হওয়ায় কফি ও কমলার রসের মতো জনপ্রিয় খাদ্যপণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে বলে আশঙ্কা।
আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান কেপিএমজির জরিপে দেখা গেছে, ৮৩ শতাংশ ব্যবসায়িক নেতা মনে করছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে আগামী ছয় মাসে পণ্যের দাম বাড়াতে হবে। জরিপে অংশ নেওয়া ৩০০ ব্যবসায়িক নেতা ও করপোরেট নির্বাহীর মধ্যে অর্ধেকের বেশি জানিয়েছেন, শুল্কের কারণে তাঁদের মুনাফার হার ইতিমধ্যে সংকুচিত হয়েছে। যদিও তাঁরা বলছেন, ভোক্তাদের ওপর এখনো পুরোটা প্রভাব পড়েনি।
বর্তমানে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে শুল্ক। প্রায় সব দেশের পণ্য আমদানিতে তিনি শুল্ক আরোপ করেছেন। অর্থনীতিবিদদের বড় একটি অংশ শুরু থেকেই সতর্ক করে আসছেন, শুল্কের কারণে মার্কিন বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে। শেষমেশ তা মন্দার দিকেও ধাবিত হতে পারে।
আন্তর্জাতিক
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে ৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে এক নৈশভোজে বক্তব্য রাখার সময় বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাতে ৫টি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। যদিও তিনি নির্দিষ্ট করে বলেননি কোন দেশের কতটি বিমান ভূপাতিত হয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, বাস্তবে বিমানগুলো আকাশ থেকে নামিয়ে ফেলা হচ্ছিল। আমি মনে করি পাঁচটি জেট গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে।
এপ্রিল মাসে ভারতের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। এরপর থেকেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত শুরু হয় এবং মে মাসে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।
ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, সংঘর্ষের প্রথম দিনে কিছু বিমান হারানোর পর কৌশল পরিবর্তন করে ভারত পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ নেয়।
ভারত দাবি করেছে, তারাও পাকিস্তানের একাধিক বিমান ভূপাতিত করেছে। যদিও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে। তবে তারা স্বীকার করেছে যে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি বিমান ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেটিই ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ থামানোর মূল কারণ।
ভারত বর্তমানে এশিয়ায় চীনের প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। তবে পাকিস্তান ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের জোটভুক্ত দেশ, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সম্পর্ক কিছুটা জটিল।
আন্তর্জাতিক
অনুপ্রবেশকারীদের জায়গা ভারতে নেই: মোদি

পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে শুক্রবার রাজ্যে নির্বাচনী সভা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাজ্যের শিল্পশহর দুর্গাপুরে বিজেপির ‘পরিবর্তন সংকল্প সভা’য় অংশ নিয়ে তৃণমূল সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে মোদি বলেন, বাংলা পরিবর্তন চায়, দুর্নীতিমুক্ত সরকার চায়, বিজেপিকে চায়।
তিনি বলেন, কেউ বাংলায় কথা বলুক কিংবা না বলুক, ভারতীয় নন এমন অনুপ্রবেশকারীদের যেভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তা অব্যাহত থাকবে। অনুপ্রবেশকারীদের জায়গা নেই।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃণমূল সরকারের সময় ফুরিয়ে এসেছে। বাংলায় এবার বিজেপির সরকার গঠন করতে হবে। আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯৪টি আসনে নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে আজকের সভায় তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনার ডাক দেন তিনি।
রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ও নারীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মোদি। তৃণমূলকে সমর্থন না দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে একবার সরকার গঠনের সুযোগ দিতে রাজ্যবাসীর প্রতি আহ্বান জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, একসময় গোটা দেশের মানুষ কাজের জন্য বাংলায় আসত। আজ এই বাংলার মানুষই কাজের খোঁজে অন্য রাজ্যে যায়। বিজেপি ক্ষমতায় এলে আবার সেই দিন ফিরবে।
বিজেপি সবসময় বাংলা ভাষাকে সম্মান জানিয়েছে দাবি করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের সব বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বাংলা ভাষা সম্মানের সঙ্গে স্বীকৃত। তাই বিজেপিই এই বাংলাকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে পারবে।
উল্লেখ্য, আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন। সেই ভোটের আগেই নরেন্দ্র মোদির সভা দিয়ে বিজেপি ভোট প্রচার শুরু করল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আন্তর্জাতিক
পরিকল্পিতভাবে গাজার সব ভবন ধ্বংস করে দিচ্ছে ইসরায়েল: বিবিসি

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হাজার হাজার বেসামরিক ভবন পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করছে বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে স্যাটেলাইট চিত্র, যাচাই করা ভিডিও ফুটেজ ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণে। মার্চ মাসে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি প্রত্যাহারের পর থেকে এই ধ্বংসযজ্ঞ চলছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সম্প্রতি প্রকাশিত স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে, গাজার বহু শহর ও উপশহরের অধিকাংশই এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এসব এলাকায় একসময় হাজার হাজার মানুষের বসবাস ছিল। ইসরায়েল দাবি করছে, এই এলাকাগুলো বর্তমানে তাদের ‘অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণে’ রয়েছে।
পরিকল্পিতভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে স্কুল, হাসপাতাল ও আবাসিক ভবন
বিবিসির যাচাই করা ফুটেজে দেখা গেছে, বিশাল বিস্ফোরণের মাধ্যমে ভবন ধসে পড়ছে, বাতাসে উড়ছে ধুলো ও ধ্বংসাবশেষ। শুধু যে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে, তা নয় বরং অক্ষত ভবনগুলোকেও ইচ্ছা করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই তালিকায় রয়েছে গাজার স্কুল, হাসপাতাল, টাওয়ার ব্লক, এমনকি শিশুদের জন্য পরিচালিত আশ্রয়কেন্দ্রও।
রাফাহ শহরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত টেল আল-সুলতান এলাকায় অবস্থিত একমাত্র মাতৃসদন হাসপাতাল ও অনাথ শিশুদের যত্নকেন্দ্রসহ প্রায় সব অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, এই এলাকার অধিকাংশ ভবন আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। তবে জুলাইয়ের মাঝামাঝি নাগাদ পুরো এলাকা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। কেবল একটি হাসপাতাল এখনো টিকে আছে।
এছাড়া রাফাহ’র সৌদিপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় ইসরায়েলি বুলডোজার ও ট্যাংকের উপস্থিতি দেখা গেছে। ভিডিওতে ধরা পড়েছে, রাস্তার পাশে খননযন্ত্র দিয়ে ভবন গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা।
টেল আল-সুলতান এলাকার বাসিন্দা মুয়াতাজ ইউসুফ আহমেদ আল-আবসি বলেন, যুদ্ধ শুরুর মাত্র এক বছর আগে আমি আমার নতুন ঘরে উঠেছিলাম। ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। এখন আমার সেই ঘর নেই, কোনো আশ্রয়ও নেই।
কৃষি শহরও রেহাই পায়নি
গাজা সীমান্ত থেকে মাত্র ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কৃষিনির্ভর শহর খুজা’আতেও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। টমেটো, গম ও জলপাই চাষের জন্য বিখ্যাত এই শহরের ১২০০টিরও বেশি ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, ধ্বংস করা ভবনগুলো ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’র অংশ।
পাশের শহর আবাসান আল-কবিরা, যেখানে যুদ্ধের আগে প্রায় ২৭ হাজার মানুষের বাস ছিল, সেখানেও মে ও জুলাইয়ের মধ্যে মাত্র ৩৮ দিনে একটি বিশাল এলাকা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।
‘নিরাপত্তা করিডোর’ ও ‘বাফার জোন’ তৈরির অভিযোগ
ইসরায়েল গাজার বিভিন্ন অংশকে বিভক্ত করে নিরাপত্তা করিডোর তৈরি করছে, আর এসব করিডোর বরাবর ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস এলাকায় পূর্ব ও পশ্চিম অংশকে আলাদা করতে এক বিশাল করিডোর নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়া কিজান আবু রাশওয়ান নামক একটি গ্রামে, যা ইসরায়েলি সীমান্ত থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে- ১৭ মে’র পর থেকে প্রায় সব ভবন ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এক ভিডিওতে দেখা গেছে, একত্রে থাকা বেশ কয়েকটি টাওয়ার ব্লক একযোগে বিস্ফোরণের মাধ্যমে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের অবস্থান ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রশ্ন
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বিবিসির প্রশ্নের উত্তরে জানায়, তারা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কাজ করছে ও হামাস মূলত বেসামরিক এলাকায় তাদের সামরিক স্থাপনা গোপন করে রাখে। সেনাবাহিনী কেবল তখনই ভবন ধ্বংস করে, যখন তা সামরিক প্রয়োজনে একান্ত জরুরি হয়ে ওঠে।
তবে মানবাধিকার আইনজীবীরা বলছেন, ইসরায়েলের এই ধ্বংসযজ্ঞ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও বিশেষ করে চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
জেরুজালেমভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবিক আইন সংস্থা ডায়াকোনিয়ার সিনিয়র আইনি বিশ্লেষক ইইতান ডায়মন্ড বলেন, আবশ্যিক সামরিক প্রয়োজন ছাড়া এ ধরনের পরিকল্পিত ধ্বংস আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি। ভবিষ্যতে ব্যবহার হতে পারে- এই আশঙ্কায় কোনো স্থাপনা ধ্বংস করা আইনত বৈধ নয়।
‘মানবিক শহর’ না ‘ঘেটো’?
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ রাফাহ শহরের ধ্বংসাবশেষের ওপর ছয় লাখ ফিলিস্তিনিকে স্থানান্তর করে একটি তথাকথিত ‘মানবিক শহর’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট এই পরিকল্পনাকে ‘একটি ঘেটোর মতো’ আখ্যা দিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন।
‘ঘেটো’ শব্দটি সাধারণত শহরের এমন একটি এলাকাকে বোঝায় যেখানে কোনো একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ, বিশেষ করে সামাজিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক কারণে একত্র বসবাস করে। এটি প্রায়শই দরিদ্র এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়।
ধ্বংস যেন শেষ হচ্ছে না
সম্প্রতি ইসরায়েলি মিডিয়া জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন করে ডজনখানেক ডি-৯ বুলডোজার ইসরায়েল সেনাবাহিনীর হাতে পৌঁছেছে, যা আগে বাইডেন প্রশাসনের অধীনে স্থগিত ছিল। সেইসঙ্গে মে মাস থেকে ইসরায়েলি ফেসবুক গ্রুপগুলোতে গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে ভবন ভাঙার জন্য কন্ট্রাক্টর নিয়োগের বিজ্ঞাপনও লক্ষ্য করা গেছে।
এ বিষয়ে একজন নিয়োগকারীর মন্তব্য চাইলে তিনি কটূ ভাষায় উত্তর দেন, তোমরা আর গাজা- দুজনই ধ্বংস হও।
সূত্র: বিবিসি